#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা-[১০]
রোদ্দুর লিপি কে নিয়ে রোজা দের বাসার সামনে নামে। রিকশা থেকে নামতেই সাইমন কে দেখতে পায় সে। ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে একটু দাঁড়ায়। সাইমন এদিকেই আসছে। রোদ্দুর তাকে দেখে বলে-
-” এখন এখনে কেন এসেছো? রোজা কে বিরক্ত করবে না বলে দিলাম।
সাইমন মলিন হেসে বলে-
-” আমি রোজা নয় রুহির সাথে দেখা করতে এসেছি।
রোদ্দুর অবাক হয়ে যায় সাইমনের কথায়। যে ছেলেটা কাল রোজার পিছনে ঘুরতো। আজ সে রুহির কাছে কেন এসেছে? রোদ্দুর একবার সাইমনের সারা শরীরে চোখ বুলিয়ে নেয়। শ্যামলা গড়নের ছেলেটি কে শুভ্র রঙে বেশ সুদর্শন লাগছে। রোদ্দুর মিষ্টি হেসে বলল-
-” আচ্ছা চলো তাহলে। আমিও যাব।
দুজনে মিলে রোজাদের বাসার সামনে দাঁড়ায়। লিপি কলিংবেল বাজিয়ে দেয়। কাঁথা মু/ড়ি দিয়ে রোজা আর রুহি ঘুমাচ্ছে। তাদের হুশ নেই। রুহি বেশি রাত করে ঘুমিয়েছে আবার। মেরুন গিয়ে দরজা খুলে দেয়। রোদ্দুর কে দেখে মৃদু হাসে সে। সাইমনের দিকে তাকিয়ে বলে-
-” রোদ্দুর বাবা এটা কে? তোমার বন্ধু?
রোদ্দুর আরচোখে সাইমনের দিকে তাকায়। সাইমন ও রোদ্দুরের দিকে তাকিয়ে আছে। সে মেরুনের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে-
-” জ্বী জ্বী আন্টি। ও আমার বন্ধু। একা আসতে কেমন জানি লাগছিলো। শত হলেও হবু শ্বশুর বাড়ি। আমারো তো লজ্জা করে তাইনা।
বলেই লজ্জা পাওয়ার ভাব করে রোদ্দুর। মেরুন, সাইমন আর লিপি সবাই একসাথে হেসে ওঠে। মেরুন দরজা থেকে সরে ভেতরে যায়। পিছনে পিছনে রোদ্দুর আর সাইমন ও ঢোকে। মেরুন হাঁটতে হাঁটতে বলে-
-” হবু শ্বশুর বাড়ি বলছো যে, হবু বউ কি বিয়েটা করবে?
রোদ্দুর লিপি কে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। সোফায় বসে বলে-
-” বউ কেন বউয়ের চৌদ্দ গুষ্টি বিয়ে করবে।
মেরুন চোখ বড় বড় করে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। তা দেখে রোদ্দুর হালকা কেশে বলে-
-” আরে মানে ঐ তোমার আদরের ভাইয়ের মেয়েই করবে। তোমারা তো আনন্দ করবে।
সাইমন আশেপাশে তাকিয়ে বলে-
-” আচ্ছা আমার হবু ভাবি কোথায়?
মেরুন দোতলার দিকে তাকিয়ে বলে-
-” উপরে আছে। ঘুমাচ্ছে মনে হয়।
রোদ্দুর উঠে দাঁড়িয়ে বলে-
-” আমি আমার বউয়ের কাছে যাই। আর বন্ধু আমার শালীর কাছে যাও। ওখানে লিপিকেও নিয়ে যাও। আমার বউকে একটু বোঝাব। বাচ্চা টা ঝা/মেলা করবে।
মেরুন আপত্তি না করে বলে –
-” হ্যা তোমার বউকে জিজ্ঞেস করো। বিয়ে করবে কি না?
লিপি খুশি হয়ে বলে-
-” ইয়েএ আমি রুহি আন্টির কাছে যাব।
সাইমন আকাশের চাঁদ হাতে পেল যেন। রোদ্দুর তার কাজটাকে সহজ করে দিয়েছে। সে মেরুন কে জিজ্ঞেস করলো-
-” আচ্ছা আন্টি ঘরটা দেখিয়ে দিন।
মেরুন হাত দিয়ে দেখিয়ে বলে-
-” ডান দিকের টা রোজার, আর বাম দিকের টা রুহির ঘর। তোমারা গিয়ে বসো আমি নাস্তা নিয়ে আসছি। সাইমন লিপি কে কোলে নিয়ে, রুহির ঘরের দিকে পা বাড়ায়। রোদ্দুর আগেই রোজার ঘরে চলে গিয়েছে অলরেডি। রোজা বিছানায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছে। রোদ্দুর পাশে গিয়ে বসে। রোজার গাঁয়ে হালকা চা/পড়ে বলে-
-” এই রোজ উঠো। ব্ল্যাক রোজ উঠো। আর কত ঘুমাবে?
রোজা নড়েচড়ে ওঠে। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকায়। সামনে রোদ্দুর কে দেখেই একপ্রকার লা/ফিয়ে ওঠে। বুকে থুথু দিয়ে বলে-
-” এইভাবে ভুতের মত, ভোরবেলা কোত্থেকে উদয় হলেন? এমনভাবে কারো ঘরে নক না করে কেউ ঢোকে। সামান্য কমনসেন্স নেই।
রোদ্দুর একটা বালিশ কোলের মধ্যে নিয়ে, তাতে থুতনি ঠেকিয়ে বলে-
-” না নেই। হবু বউয়ের ঘরে আসতে কিসের নক করবো। আমার বউয়ের ঘরে এটা। তুমি কথা বলো না তো।
রোজা রোদ্দুর কে অনুকরণ করে বলে-
-” এড আইছে হবু বউউউউ! ঢং যতসব।
রোদ্দুর রোজার দিকে চোখ মুখ কুঁচকে তাকিয়ে বলে-
-” ছিহ ঘুম থেকে উঠছো, চুলের অবস্থা পে/ত্নীদের মতো বারোটা বাজছে। দাঁত ব্রাশ করোনাই। যাও একটাও কথা বলবা না। শাকচু/ন্নী কোথাকার। এখনি ফ্রেশ হয়ে চুল ঠিক করো। কি বিচ্ছিরি দেখাচ্ছে।
রোজা হা হয়ে যায় রোদ্দুরের কথা শুনে। এ ছেলে কি বলছে এসব। রোদ্দুর রোজার মাথায় গাট্টি মে/রে বলে-
-” কি ভাবছো?
রোজা রেগে বালিশ ছুঁড়ে মেরে বলে-
-” ভাবছি আমার ফা/টা কপাল। আপনি নাকি আমার জামাই হবেন। অন্য মেয়েদের জামাই বউকে ঘুম থেকে উঠলে বলে -” আহা কি সুন্দর লাগছে ফোলা ফোলা চোখে, ঘুমন্ত মুখটা কি নিষ্পাপ, সদ্য ঘুম থেকে উঠলে তোমাকে ফুলপরীর মতো লাগে। আর আপনি আমায় কি সব উপাধি দিলেন। আপনাকে তো আমি শু/লে চ/ড়াবো। হাড়ে হাড়ে সয়/তান একটা। আল্লাহ শেষমেষ এই অপদার্থ আমার জামাই হবে। আমায় উঠিয়ে নাও উঠিয়ে নাও। রোজারে এই দিন কপালে ছিল।
রোদ্দুর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-
-” তুমি তো দুই লেভেল উপরে। সবার জামাই প্রশংসা করে, তাই বলে আমিও কি প্রশংসা করবো? আমি কি সবার মতো নাকি? তাদের মধ্যে আর আমার মধ্যে পার্থক্য এইটাই বুঝলে। অকাজে সারাদিন বউয়ের প্রশংসা আমি করিনা। যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
রোজা বিছানা থেকে নেমে বলে-
-” আমি জানি এইসব ঐ ছেলেদের অ/ভিশা/পের ফল।
রোদ্দুর ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে-
-” কাদের?
রোজা দুই হাত কোমড়ে রেখে রোদ্দুরের দিকে ঘুরে বলে-
-” কাদের আবার। যাদের প্রপোজাল দিনে রাতে রিজেক্ট করেছি তাদের। ওরা অভিশাপ দেয়ায় আপনের মতো একখান জামাই মোর কফালে (কপালে) জোটছে। এহন কি করার।
রোদ্দুর চোখ পাকিয়ে তাকাতেই রোজা ভোঁ দৌড় দেয় ওয়াশরুমে।
______________________
সাইমন রুহির রুমের সামনে সেই থেকে দাঁড়িয়ে আছে। তার ভয় করছে ঢুকতে কেন জানি। লিপি বিরক্ত হয়ে বলে-
-” কি হলো চলো ভেতরে। তখন থেকে দাঁড়িয়ে আছো।
সাইমন ভয়ে ভয়ে ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। রুহি বিছানায় নেই। লিপি কে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। দুজনে বিছানায় বসতেই রুহি ওয়াসরুম থেকে বের হয়। সাইমন আর লিপি কে দেখে চমকে বলে-
-” কি ব্যাপার তোমারা এখানে?
লিপি গালে হাত দিয়ে বলে-
-” আন্টি এটা আমার চাচ্চুর বন্ধু। তুমি একে চেনো?
রুহি তোয়ালে টা চেয়ারে রেখে লিপি কে কোলে নেয়। গালে চুমু দিয়ে বলে-
-” মামনি তুমি তো বড় হয়ে গেছো। আচ্ছা একটা কাজ করো তোমার মিসের কাছে যাও। ওর কাছে অনেক চকলেট আছে।
লিপি চকলেট এর কথা শুনেই রুহির কোল থেকে নেমে যায়। এক দৌড়ে রোজার রুমের দিকে যেতে থাকে। লিপি বেড়িয়ে গেলেই রুহি দরজা লাগিয়ে দেয়। সাইমনের পাশে বসে বলে –
-” বলো এখনে কিভাবে আসলে? মেরুন কিছু জিজ্ঞেস করেনি। আর রোদ ভাই তোমার বন্ধু হলো কিভাবে?
সাইমন হেসে বলে-
-” এতগুলো প্রশ্ন? আচ্ছা বলছি- এখানে হেটে হেটে এসেছি।
রুহি বিরক্ত হয়ে বলে-
-” হেটে আসছো এটা জানি।
সাইমন হেসে বলে –
-“বাড়ির সামনে রোদ্দুরের সাথে দেখা, তারপর:
তারপর সাইমন সেদিন বাজারে দেখা হওয়া তারপর আজকের সব ঘটনা বলে। সব শুনে রুহি বলে-
-” তো আজকে কেন এসেছো আমার কাছে?
সাইমন মাথা নিচু করে বলে-
-” আমি সব জানতে চাই রুহি। আমি সত্যিই আর স্বপ্নে দেখিনি আজকে। প্লিজ তুমি আমাকে সবকিছু খুলে বলো। আমি নাহলে পাগল হয়ে যাবো।
রুহি হালকা হাসে। মাথা সাইমনের সামনে নিয়ে বলে-
-” বিশ্বাস হলো আমার কথা?
সাইমন মাথা তুলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে –
-” বিশ্বাস না করে উপায় নেই। তোমার সব কথা মিলে গেছে। আমি কেন সবাই বিশ্বাস করবে।
রুহি দাঁড়ায়। কিছুক্ষণ ভেবে বলে-
-” তাহলে নিজেকে প্রস্তুত করে নাও সব শোনার জন্য। আর আমাকে অবিশ্বাস করলে তুমিই এই পৃথিবীতে আটকে পড়বে।
সাইমন ঢোক গিলে। না জানি সে কি শুনতে চলেছে!
#চলবে