More than love পর্ব -১৭

#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা-[১৭]

চার্জার লাইটের আলোয় আলোকিত চারপাশ। বিদ্যুত থাকতেও কেন এই লাইট তা জানা নেই রোজা রুহির। তবে তারা বিরক্ত সাইমন আর রোদ্দুরের কাজে। অনেক বছর পর কাঙ্ক্ষিত মানুষটির কথা শুনে রুহি হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে। এটাই কি তার সেই বাবা? কিরকম চাহনি। এই চাহনিতে সে কোন স্নেহের ছোঁয়া দেখছে না আগের মতো। শুধু হিং স্রতা সেই চোখে। সবাইকে চুপ থাকতে দেখে রোদ্দুর মুখ খোলে। শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-

-” আমরা হাত পা নিয়ে এসেছি। তাতে কি হয়েছে? আপনার সাথে কোন শ/ত্রুতা আছে আমাদের? না নেই তো‌।‌

রোজা রোদ্দুরের হাত ধরে চুপ হতে বলে। রুহি তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে-

-” মা কোথায় বাবা? তাঁকে তো দেখছিনা?

রুপির বাবা আয়মান চোখ বড় বড় করে তা দিকে তাকায়। অবিশ্বাস্য কন্ঠে জিজ্ঞেস করে-

-” কি বলছো এসব? তোমার মা‌ তো ভ্যানিস হয়ে গেছে। তা তো তুমি জানোই।‌ তাহলে আমাকে জিজ্ঞেস করছো কেন?

রুহি থমকায়।‌ সবার দিকে একবার তাকিয়ে নেয়। ঢোক গিলে প্রশ্ন করে-

-“‌ মিথ্যা আমি দেখেছি আমার মা আর রোজার মা ডেল্টা স্লিপিং পটে ছিল। আপনি তাকে লুকিয়ে রেখেছেন বলুন কোথায় রেখেছেন?

আয়মান চারদিকে তাকায়। সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার শরীর থেকে ঘাম ঝড়ছে। সে পকেটে কিছু একটায় চা/প দেয়। সেটা দেখে রোদ্দুর আর সাইমন হেসে ওঠে। ওদের হাসি দেখে আয়মান ওদের দিকে তাকায়।‌ আশ্চর্য হয়ে বলে-

-” তোমরা হাসছো কেন? কি ব্যাপার।

রোজা রা রুহি ও তাকিয়ে আছে ওদের দিকে। সাইমন আর রোদ্দুর তখন ও হাসছে। আয়মানের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। অধৈর্য হয়ে বলে-

-” কি ব্যাপার? বলো! হাসছো কেনো?

রোদ্দুর আর সাইমন একে অপরের সাথে দৃষ্টি বিনিময় করে বলে-

-” পকেটে কিসে ক্লিক করছেন?

আয়মান অবাক হয়ে তাকায়। রোদ্দুর আবারো হেসে বলে-

-” আমরা অতটা বোকা নই। আপনি অনেক বড় একজন সাইন্টিস্ট হতেই পারেন। তবে আমরাও বোকা না। কারন আমরা ধারনা করেছিলাম নিজের সি/কি/উরিটির জন্য আপনার কাছে অনেক প্রযুক্তিই থাকতে পারে। তাইতো আপনার বাসার মেইন ইলেকট্রিসিটি অফ করে দিয়েছি। আপনিও বো/কা ধরতে পারেন নি এসব। আপনার ওসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস এখন আর কাজ করবেনা। নতুন কিছু চিন্তা করুন। আর লে জার গা/নগুলো কিন্তু অনেক সুন্দর। সবগুলোই একসাথে নিরাপদ জায়গায় রেখে দিয়েছি।

বলেই হাসতে থাকে রোদ্দুর। রোজা আর রুহি অবাক হয়ে তাকায়। এই ছেলে দুইটা যে এত কিছু করতে পারে তা তাদের ভাবনায় ছিলো না। রোজা তো মুখ ফসকে বলেই ফেলে-

-” পেটে পেটে তোমাদের এই ছিলো? এই জন্যই আমাদের পাহাড়ায় রেখে গিয়েছিলে বাড়িটা ঘুরতে?

সাইমন মাথা নাড়িয়ে বলে-

-” এক্সাকলি বেইব।

রোজা আর রুহি চোখ ক/টমট করে তাকায় সাইমনের দিকে। রুহির‌ তাকানো দেখে সাইমন ঢোক গিলে বলে-

-” আরে ফান করছি রুহি। প্লিজ ভুলে যাও।

রোদ্দুর হাতে তালি দিয়ে ওদের মনযোগ আকর্ষণ করে। এরপর গলা খাঁকারি দিয়ে বলে-

-” তো মাই ডু/প্লিকেট শ্বশুরমশাই। শ্বাশুড়ি আম্মা কোথায় আমার।‌ মানে দুই ইয়াসমিন কে কোথায় রেখেছেন?

আয়মান নিচের দিকে তাকিয়ে বলে-

-” জানিনা আমি।

রুহি রেগে বলে-

-“বলো বলছি বাবা। নইলে কিন্তু!

আয়মান স্বাভাবিক ভাবেই বলে-

-” নইলে কিন্তু কি? আমাকে মে/রে ফেলবি?‌ মে/রে ফেল তবে। কিন্তু আমার টিমের কাছে ঐ সিস্টেম কিক্যানোই পৌঁছে দেবে।

ওরা চারজনেই অবাক হয়ে বলে-

-” হোয়াট কিক্যানো?

আয়মান ভি/লেন মার্কা হাসি দিয়ে বলে-

-” হ্যা কিক্যানো। এত বছর ধরে যে প্রজেক্ট এ কাজ করেছি আর কয়েক মিনিট পড়েই তা সফল হয়ে যাবে। এরপর ম/রলেও আমার আফসোস নেই।

রুহি তার বাবার সামনে গিয়ে বলে-

-” কিক্যানো কেন ওর সিস্টেম সম্পর্কে অন্যজনকে জানাবে? আমি তো ওকে ওভাবে প্রোগ্রামিং করিনি।

রুহির বাবা হেসে বলে+

-” তুমি কি করেছো তা জানি না। অনেক ধূ/র্ততার সাথেই করেছো। তবে আমি কিক্যানো থেকে একটু আগে তোমাদের নামতে দেখেছি। তোমরা আসার পরেই আমি ওর মধ্যে যাই‌। তারপর ওর সিস্টেম পাঠিয়ে দেই আমার গ্রুপ মেম্বারদের কাছে। তিনঘন্টা হতে আর মাত্র কিছুক্ষণ বাকি। দেখি তোমরা কি করতে পারো। আর তোমার মায়েদের খোঁজ কখনোই পাবেনা।

বলেই রুহির বাবা হাসতে থাকে। রুহি প্রায় পা/গলের মতো অবস্থা।‌ তার অবস্থা দেখে তার বাবা হাসছে। তখন রোজা কিছু একটা ভেবে বলে-

-” আচ্ছা কিক্যানো কে প্রোগামিং তো তুই করেছিস তাইনা?

রুহি মাথা নাড়িয়ে বলে-

-” হ্যা আমিই করেছি। ও আমার সব কমান্ড শুনবে। এমনভাবেই প্রোগামিং করেছি ওকে।

তখন রোদ্দুর বলে ওঠে-

-“‌গ্রেট তোমার সকল কমান্ড শুনবে। মানে বুঝতে পারছো?

রুহি কিছুক্ষন ভাবতেই তার চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। তারপর হেসে বলে –

-” ওহ গড। তাহলে তো ওকে আমি বললেই ও কাজ প্রসেসিং অফ করে দেবে।

ওদের ফিসফাস দেখে আয়মান বিরক্ত হয়ে বলে-

-” এই বাচ্চারা কি ফিসফাস করছো?

ওরা তার দিকে ফেরে। একে অপরের দিকে তাকিয়ে হেসে নেয়।‌ রুহি হাতে লাগানো ডিভাইস এর সামনে মুখ নিয়ে বলে-

-” কিক্যানো। শুনতে পাচ্ছো?

জবাব আসেনা। তা দেখে হেসে ওঠে আয়মান। তবুও রুহি হাল ছাড়ার পাত্রী নয়। সে আবারো ডাকে কিক্যানো কে-

-” কিক্যানো শুনতে পাচ্ছো?

সবাই অধীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে। শুধু কিক্যানোর আওয়াজ শোনার জন্য। সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ভেসে আসে রোবটিক আওয়াজ।

-” ইয়েস! কিক্যানো কানেক্টেড। কিকা কিকা। বলুন কি করে সাহায্য করতে পারি?

কিক্যানোর কথা শুনে ওরা খুশি হয়।‌ কিন্তু আয়মান অবাক হয়ে তাকায়। কোন কাজ প্রসেসিং চলাকালীন কি করে কিক্যানো জবাব দিলো? রুহি খুশিমনে বলে-

-” তোমার বর্তমান কাজটা বন্ধ করো। প্রসেসিং অফ করো‌।

কিক্যানো রোবটিক আওয়াজ এ বলে+

-” পসিবল না। হাফ টাইমের পর কোন কাজ কিক্যানো অফ করতে পারে না। তিনঘন্টা হতে কয়েক মিনিট বাকি!

চারজনের মুখ চুপসে যায়।‌ আয়মান হেসে দেয় আবারো। তখনি সাইমন বলে-

-” রুহি তুমি ওকে সাট ডা/উন করে দাও।‌ ওর কি/লকোড তৈরি করেছো নিশ্চয়ই?

রুহির মুখের আঁধার সরে যায়। চোখদুটো ঝলমল করে ওঠে। সাইমনের দিকে ফিরে সে সাইমনের‌ গলা জড়িয়ে ধরে। ডানগালে ঠোঁট ছুঁড়িয়ে বলে-

-” উফফ এইজন্যই তোমাকে‌ এতো ভালো লাগে। সঠিক সময় সঠিক বুদ্ধি।

রোজা আর রোদ্দুর গলা খাঁকারি দিয়ে ওঠে। রুহি লজ্জা পেয়ে ছেড়ে দেয়। তারপর কিক্যানো কে কি/লকোড দেয়। কিক্যানো প্রথমে নিচ্ছিলো না কি/লকোড। তিনবারের বার রুহি সফল হয়‌। প্রসেসিং বন্ধ করে সাট ডাউন হয়ে যায় কিক্যানো। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে চারজন। যাক তারা একটা কাজ করলো।‌ কিন্তু তাদের মা? রুহি ঘুরে দাঁড়ায়। তার বাবার চোখে অসহায়ত্ব। এতবছরের পরিশ্রম ব্যর্থ হওয়ার জন্য হতাশা। তাতে গুরুত্ব দেয়না কেউ। রুহি সামনে একটা চেয়ার পেতে বসে বলে –

-” এসব বন্ধ হলো। কিন্তু এখন আমরা সত্যিটা জানতে চাই। আমাদের সব সত্যি কথা বলতে হবে।

আয়মান চোখ তুলে তাকায়। ধীর গলায় বলে-

-” কি জানতে চাও?

রুহি পেছনে তিনজনের দিকে তাকায়। এরপর ঢোক গিলে বলে-

-” কেন এত ছ/ল/চা/তুরি? এত লু/কোচু/রি? এত মিথ্যা কেন? কেন এমন বি/শ্বাস/ঘা/তকতা? কেন এমন করলে? জবাব দাও। তোমার উদ্দেশ্য কি ছিলো? মায়েদের কেন গায়েব করলে? আমাকে এতবছর দুরে রেখে কি লাভ পেলে?

আয়মান ঢোক গেলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে-

-” ছোটবেলা থেকেই অনেক ইচ্ছা বড় সাইন্টিস্ট হবো। সবার চেয়ে উপরে থাকবো। টাইম মেশিন আসার পর আমার আগ্রহ আরো বাড়ে। বিভিন্ন সময়ে ভ্রমন করে জ্ঞানার্জন করতে লাগলাম। তখনি জীবনে এলো তোমার মা‌। তারপর জানতে পারলাম ইউনিভার্স সম্পর্কে। যে প্যারালাল ইউনিভার্স ভ্রমনের জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে বিজ্ঞানিরা। লেগে গেলাম এই তথ্য উদঘাটন এর পেছনে। তোমরা দুই বোন জন্ম নিলে‌। সংসার ভালোই চলছিল। আমার গবেষণা ও আমি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপর!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here