More than love পর্ব -১৮ ও শেষ

#More_than_love
#মেঘলা_আহমেদ
পর্বসংখ্যা-১৮

-” রুহি তোমার মা কে আমি খুব ভালোবাসতাম।‌ কিন্তু দিন দিন সে কেমন যেন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছিলো। খি/টখি/টে মেজাজের। তাকে এতো ভালোবাসতাম যে এসব আমায় কষ্ট দিতো।‌ একদিন কিভাবে যেন জানতে পারলাম পৃথিবীর ইয়াসমিন এর কথা।‌ সেও একজন সাইন্টিস্ট।‌ তারপর তার সম্পর্কে বিভিন্ন খোঁজ নিলাম। সেও মনোকষ্টে ছিলো। তার স্বামী তাকে সময় কম দিতো। সারাদিন হসপিটালে থাকতো। আমরা যোগাযোগ করি একেঅপরের সাথে। তারপর সিদ্ধান্ত নেই তোমার মা কে পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেবো আর রোজার মা কে এখানে নিয়ে আসবো। তারপর অনেক গবেষনা করে রোজার মা ঐ মেশিন আবিষ্কার করে। এসে পড়ে আলফাতে। কিন্তু বাঁধ সাধলো তোমার মা। ভ্যানিশ হয়ে গেল দুজনে। রোজা ভিতু স্বভাবের ছিল। কিন্তু তুমি তো তেমন ছিলে না। তাই কৌশল এ তোমাকে দূরে পাঠিয়ে দিলাম। তাও অতীতে গিয়ে। যাতে ফিরতে না পারো। ঐ ডায়েরি আংটি সবই আজগুবি ছিল। তুমি বিশ্বাস করে নিয়েছিলে।

সবাই বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেছে রুহির বাবার কথায়। কি সব বলছে উনি। অদ্ভুত! রুহি বাবাকে জিজ্ঞেস করে-

-” তাহলে আমার মা কোথায়?

রুহির বাবা সবার মুখের দিকে তাকায়। তারপর থমথমে গলায় বলে-

-” তাদের দুজন কে উৎসর্গ করা হয়েছে মহাকাশে গবেষণা করার জন্য। তাদের থেকে তৈরি হয়েছে শতশত ক্লো/ন। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি কখনো চাইনি এসব। আমি আইন ভেঙে তোমাকে আর সাইমন কে অন্য ইউনিভার্স এ পাঠিয়েছি তাই ওদের কথা শুনতে হয়েছে। আর তোমরা পৃথিবীতে যা দেখেছো এসব তোমার মায়ের ইমেজ ছিল। শুধু স্বান্তনার জন্য। ওদের কোথায় কি করা হয়েছে জানিনা। তবে তার জন্য আমি পেয়েছি নাম যশ খ্যাতি। আমি অনেক বড় সাইন্টিস্ট হয়ে গেছি। হাহা ভালোয় ভালোয় বলছি আমাকে খোলো নয়ত ফল খারাপ হবে।

রোজা রেগে এগিয়ে যায় রুহির বাবার দিকে। রোদ্দুর তাকে ধরে ফেলে। রোজ ছটফট করে বলে-

-” ছাড়ো আমায়। উনি আমার মা কে কি করেছে তা বলতেই হবে উনার।

রোদ্দুর রোজাকে শান্ত করার জন্য বলে-

-” কুল হও। আচ্ছা আপনি যে রোবট পাঠিয়েছিলেন রুহির সাথে সে কি বলেছিল রোজা বাবাকে। যাতে সে রুহিকে মেনে নিয়েছিল!

রুহির বাবা মৃদু হেসে বলে-

-” সেই রোবটের মাধ্যমে আমি তার সাথে কথা বলেছি। সে জানে এসব। আমি বলেছিলাম রুহি কে না মেনে নিলে রোজাকে ও শে/ষ করে হবে। তাই সে ভয়ে সব মেনেছে। ঘটনাটা এমন ভাবে ঘটেছে যে সবার কাছে ওটা স্বাভাবিক।

রুহি ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে। তার সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেছে। তা মা নাকি নেই। তাহলে কেন সে এখানে এলো। থেকে গেলেই তো পারতো আলফায়! তখনি গলা খাঁকারি দেয় রুহির বাবা। হেসে বলে-

-” একটা কথা জানলে অবাক হবে যে তোমরা সবাই আলফা গ্রহের সম্পদ। এখন নিজে থেকেই ফিরে এলো নিজের গ্রহে। আসলে মূল কথা কি জানো?

চারজনেই অধিক আগ্রহ নিয়ে তাকায় রুহির বাবার দিকে। সে মজা পেয়ে বলে-

-” তোমরা সবাই ক্লোন! তোমাদের বিভিন্ন কাজের জন্য পাঠানো হয়েছে পৃথিবীতে! তারপর কাজ শেষ হলে আর ফিরিয়ে আনা হয়নি‌। মাঝে মাঝে অতীতের স্মৃতি দেখতে তোমরা তাই না। যেগুলো কখনো হয়নি সেগুলোও দেখতে।

রোদ্দুর তাৎক্ষণিক মাথা নাড়িয়ে বলে-

-” হ্যা আমি রোজাকে দেখতাম। কিন্তু তখন ও ছোট ছিল। আমি বড় রোজাকে দেখতাম। ভাবতাম এ কে? কিন্তু পরে ও বড় হলে দেখি ও রোজা! আর রুহিকে দেখে আরো অবাক হয়েছিলাম আমি!

সাইমন বিষ্ময়ে হতভম্ব হয়ে বলে-

-” আমিও মাঝে মাঝে দেখতাম তবে এখন আর দেখিনা।

আয়মান মৃদু হেসে বলে-

-” তুমি যা দেখতে তার বাস্তব রূপ দেখে নিয়েছো। তাই হয়তো আর তোমার মস্তিষ্ক ওটা ভাবে না। তো কেমন লাগছে নিজেদের আসল পরিচয় জেনে?

সবাই চুপ রোজা নীরবতা ভেঙে বলে-

-” আমরা‌ ক্লোন কিন্তু কিভাবে?‌ হলো এসব কিভাবে পৃথিবীতে গেলাম?

রুহির বাবা হেসে বলে-

-‘ তোমাদের আরো কপি আছে অনেক ক্লোন। ওইগুলো বিভিন্ন কাজ করছে। তোমাদের মত মানুষ ছিলো আগে। তারা মা/রা যাওয়ার পরেই তাদের দিয়ে ক্লো/ন করা হয়েছে। আর অনেক নিবিড়ভাবে তাদের কে পৃথিবীতে রেখে আসা হয়েছে‌। যাতে কেউ বুঝতে না পারে। তাদের সদ্য জন্ম নেয়া শিশুই মনে করে। ইশ তোমাদের কি কপাল দেখলে! সব জেনে গেলে। অথচ এমন অনেকেই আছেন যারা নিজেদের মানুষ মনে করে তারা আসলে ক্লোন!

রূহির ধৈর্য্যের সীমা ভেঙে যায়। সে পাশ থেকে একটা ভারী বস্তু নিয়ে যায় তার বাবাকে মা/রতে। কিন্তু এবার ও তাঁকে আটকে দেয়া হয়।‌ তখনি বাসার মধ্যে কিছু মানুষজন ঢোকে। এসেই তাদের চারজন কে ঘিরে ধরে। রুহি অবাক হয়ে তাকায় সাইন্টিস্ট আয়মানের দিকে। কারন এ মানুষ টাও তার বাবা নয়! সে তো তাকে বানিয়েছে শুধু! আয়মান কে দুজন খুলে দেয়। সে দাঁড়িয়ে হাত ঝেড়ে বলে-

-” কি ভেবেছিলে আমি বোকা?‌ তোমাদের তো আগেই দেখেছি। তাই ধরার জন্য এদের আসতে বলেছিলাম। তোমরা আইন ভঙ্গ করেছো। রুহি তোমাকে আমি মেয়ের মত ভালোবেসেছি। কখনো জানতে দেইনি আমি তোমাকে আমরা তোমার কেউ না! ইচ্ছা ছিল কখনো জানতে দেবো না আমি তোমাকে। কিন্তু যা করলে না বলে পারছিনা। আমার দুই মেয়ে হয়েছিল কিন্তু একজন ম/রা হয়। ইয়াসমিন কে স্বান্তনা দেয়ার জন্য তোমাকে নিয়ে আসি। এবং বলি এই তো দুই মেয়ে। তুমি তোমার নানীমার ক্লোন!‌ তাই‌ তো রোজা মানে আমার মেয়ের মতোই চেহারা তোমার। যমজ বলাই যায়। করুনা করেছিলাম কিন্তু কি করলে তুমি? আ/ঘা/ত করলে! ওদের নিয়ে চলো। ওরা আইন ভঙ্গ করেছে শাস্তি হবে ওদের!

রুহি আর শুনতে পারছিলো না। কান চেপে ধরে সে। রোদ্দুর রোজা সাইমন ও তার মতোই হতভম্ব! তাদের চারজন কে বেঁ/ধে রাখা হয়েছে। চারজনের মুখেই রা নেই‌। কি করবে বুঝতে পারছেনা তাঁরা। এই আলফা গ্রহে থাকার চেয়ে তাদের পৃথিবীতে ফিরে যাওয়াই উত্তম! কিন্তু ছাড়া পাবে কিভাবে? সাইন্টিস্ট আয়মান এসে বসে তাদের সামনে। তারপর হেসে বলে-

-‘ বলো কিভাবে মা/রবো তোমাদের? গু/লি করেই মা/রি! যে মগজ দিয়ে আমার জন্য ষ/ড়যন্ত্র করেছিলে, সেটাই উ/ড়িয়ে দিবো?

রুহি চিৎকার করে বলে-

-” আমি আর সহ্য করতে পারছিনা তোমার নি/ষ্ঠুরতা। আমাকে আগে মা/রো। দেখতে পারছিনা এসব আর।

আয়মান মজা পেয়ে হাসে। তারপর গম্ভীর হয়ে বলে –

-” এই কালো শার্ট পড়া সাইমন কে আগে মা/র!

রুহি কেঁদে উঠে বলে-

-” ওকে আমি আমার নিজের চেয়েও ভালোবাসি। দয়া করে ওকে কিছু করোনা। আমি সইতে পারবো না।

আয়মান হেসেই যাচ্ছে। তার খুবই মজা লাগছে এসব করতে! একজন লোক সাইমনের মাথায় গা/ন তাকে করে‌। সাইমন রুহির দিকে তাকিয়ে বলে-

-” রুহি!‌ একটা কথা শোনো! যখন মানুষ ছিলাম তখন ও তোমাকেই ভালোবাসতাম। এখন ক্লোন হয়েও তোমাকেই ভালোবাসি! আমাদের পথটা এটুকুই ছিলো গো। ভালোবাসি খুব।

রুহি চোখ থেকে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। রোজা এসব দেখে রোদ্দুরের দিকে তাকায়। রোদ্দুর ও তার দিকে তাকিয়ে আছে। রোজা রোদ্দুর কে বলে-

-” ভালোবাসি আমিও তোমাকে খুব।

রোদ্দুরের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। রোজা মিনতি করে বলে আয়মান কে-

-” আমাদের একসাথে মা/রুন। অনুরোধ একটাই। একজনের সামনে অন্যজনের মৃ/ত্যু সহ্য হবে না। এই অনুরোধ রাখুন।

আয়মান চোখ মুখ গম্ভীর করে বলে-

-” আচ্ছা শেষ ইচ্ছা পুরন করাই যায়।

তার কথায় চারজন চারদিকে যায়। রুহি, রোজা, রোদ্দুর, সামনের পেছনে দাঁড়ায় তারা। মাথায় গা/ন তাকে করে। ট্রি/গারে আঙুল রাখে। চারজনই চোখ বন্ধ করে ফেলে। সবাই তার ভালোবাসা অনুভব করতে ব্যস্ত। চারজন একসাথে বলে-

-” এই মৃ/ত্যু আমাদের হাজারবার হোক! তবুও আমরা বারবার ভালোবাসব! আমরা বারবার ফিরে আসবো!

জোড়ে গু/লির শব্দ হয়‌। তারপর নিরব চারপাশ! রোজা রুহি সাইমন রোদ্দুর সবাই চোখ মেলে তাকায়। তাদের পেছন থেকে সবাই সরে গেছে। গুলির শব্দ হয়েছে ফাঁকা আকাশে। কে গু/লি করলো। সামনে তাকাতেই তারা সাইন্টিস্ট আয়মানের র/ক্তা/ক্ত দেহ দেখতে পায়। একেঅপরের দিকে হতভম্ব হয়ে তাকায় তারা। তাদের হাতের বাঁধন মুক্ত করে দেয় একজন। তারপর চারদিকে একটি কথাই প্রতিধ্বনিত হয়-

-” আজ থেকে সকল ক্লোন রা মুক্ত। তারা স্বাধীন হয়ে বাচবে। কিন্তু আর কোন ক্লোন বানানো হবেনা। সবাই স্বাধীন আজ থেকে।

চারজনেই খুশি হয় আওয়াজ শুনে। আহ কি সুন্দর কথা। রোজা শক্ত করে রোদ্দুরের হাত ধরে। সাইমন ও রুহির হাত ধরে শক্ত করে। তারা হেঁটে যায় সেই রাস্তায় কিক্যানোর কাছে। রুহি আবার এক্টিভ করে কিক্যানো কে। যান্ত্রিক কিক্যানো বলে ওঠে-

-” কিকা কিকা। স্বাগতম। কিক্যানো ব্যাক!

তাঁরা উঠে বসে কিক্যানো তে। আলফা গ্রহের অনেকেই দেখতে তাদের। তারা একে অপরের দিকে তাকায়। সাইমন আর রোদ্দুর মৃদু হেসে রোজা আর রুহিকে বলে –

-” I love you ! Will you stay with me?

রোজা আর রুহি মৃদু হেসে জবাব দেয় –

-” Love you more than love. I want stay with you!

চারজনের ঠোঁটেই তৃপ্তির হাসি ফোটে। কিক্যানো তখন রোবটিক ভয়েস এ বলে-

-” তৈরি হন তৃতীয় যাত্রার জন্য। আমরা আলফা গ্রহ ত্যাগ করবো।

তখনি একটা সাদা আলোর মধ্যে চলে যায় মেশিন। চারজন একসাথে বলে ওঠে-

-” বিদায় আলফা গ্রহ!

#সমাপ্ত

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here