My First Crush পর্ব -০৬

#My_First_Crush
#পর্ব-০৬
Writer: ইশরাত জাহান সুপ্তি

উইকেন্ডে এবার আমরা দাদীমার বাড়িতে এসেছি। এমনিতে পূর্বে রাইয়ান প্রতি উইকেন্ডেই দাদীমাকে দেখতে আসতো। বিয়ের পর ব্যস্ততার কারণে দু তিন উইকেন্ড তা আর হয়ে উঠতে পারেনি। তাই এবার আর যত কাজই থাকুক রাইয়ান আর মিস করেনি। দাদীমা বিশেষ করে বলে দিয়েছেন আমাকেও যেন সাথে করে নিয়ে আসা হয়। এই বৃদ্ধ নারীকে আমার সবসময়ই খুব আকর্ষণীয় লাগতো। তার ব্যক্তিত্ব খুবই প্রখর। খুব অল্প বয়সেই বিয়ে করে স্বামীর সাথে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন। নিজ দেশের প্রতি গভীর টান থাকা সত্ত্বেও জীবনের গ্যাড়াকলে পড়ে তাদের আর ফিরে যাওয়া হয়নি। থেকে যেতে হয়েছে এখানেই।
নিজ সংস্কৃতি ও মাতৃভাষার প্রতি তার ভালোবাসা অনবদ্য। তাই তো নিজ বাড়ির সদস্যদের মধ্যে তিনি বাংলা ভাষার নিয়মিত চর্চা রেখেছেন। তার কঠোর নির্দেশ বাড়ির মধ্যে অবশ্যই বাংলা ভাষাতেই কথা বলতে হবে। তিনি প্রতিদিন বিকেলে হাঁটতে বের হতেন। তার অসাধারণ ব্যক্তিত্বের জন্যই হয়তো বিয়ের আগে যখনই তাকে দেখতাম তার সাথে কথা বলতে যেতাম। এতো এতো ইংরেজের ভিড়ে আমার সাথে বাংলা ভাষায় কথা বলতে পেরে তিনিও যেন একটু হাঁফ ছেড়ে স্বস্তিতে খোশ গল্পে মজতেন। কিন্তু তখনও আমি ভাবতে পারিনি এভাবে আলাপে আলাপেই তিনি একদিন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিবেন। অবশ্যই সেই মুহুর্তটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে অকল্পনীয় ও অভাবনীয়। একইসাথে স্বপ্নীল ও সুন্দর। আমার জীবনের সবচাইতে সুন্দর বিষয়টি ঘটানোর জন্য এই অসাধারণ বৃদ্ধ নারীর কাছে আমি চিরজীবনের জন্য কৃতজ্ঞ।

আজ আমি একটা অফ হোয়াইট কালারের ফ্রক পরে এসেছি। সাথে এনেছি নিজের হাতে বানানো নরম তুলতুলে চিকেন বান, দাদীমার জন্য। দাদীমা আমাকে দেখে ভীষণ খুশি হলেন। জড়িয়ে ধরে আমার শরীরের অবস্থা কেমন জিজ্ঞেস করলেন। আমিও হাসিমুখেই সব প্রশ্নের উত্তর দিলাম। দাদীমার সাথে কথা শেষে আমি বের হলাম বাইরে, আমার নেইবারহুডে। এখানে সবকিছুই কত সুন্দর! যা ওখানে থাকতে আমি খুব মিস করি। ইটগাথা সরু রাস্তা আঁকাবাঁকা হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা রংবেরঙের কাঠের বাড়িগুলোর মধ্যে দিয়ে চলে গেছে। প্রতিটি বাড়ির গার্ডেনেই ফুলগাছের সাথে সাথে দু তিনটে করে বড় বড় গাছ ডালপালা মেলে দাঁড়িয়ে আছে। নীল আকাশের সাথে তাদের সুন্দর সমন্বয় নজর কাড়ে। রাস্তার দু পাশে যতদূর চোখ যায় সবুজ ঘাসের সমারোহ। সবকিছু একদম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে আসে। মন ভালো হয়। আমি একে একে আমার সব নেইবারদের সাথে দেখা করলাম। মি. পিটার, মিসেস স্যাজে প্রত্যেকেই আমাকে দেখে অত্যন্ত খুশি হলেন। আমার হালচাল জিজ্ঞেস করলেন। সবশেষে আমি গেলাম আমার নিজ বাড়িতে। কাঠের গেট খুলে বাড়ির আঙিনায় পা ফেলতেই আমার মন নাড়া দিয়ে উঠলো। ব্যাগ থেকে চাবি বের করে তালা খুলে আমি আমার ছোট্ট কাঠের বাড়িটার ভেতরে প্রবেশ করলাম। লিভিং এরিয়ায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমি হঠাৎ স্মৃতিমুখর হয়ে পড়লাম। বাবা মার জন্য হুট করে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেলো। আজ যদি বাবা মা থাকতো তাহলে আমার বিয়ে হয়েছে দেখে কতো খুশি হতো! হয়তো এই মুহুর্তে এই বাড়িতে একটা অন্যরকমই পরিবেশ তৈরি হয়ে যেতো। অনেকক্ষণ যাবৎ সোফায় বসে বাবা মার ছবিগুলো দেখে আমি আমার রুমে গেলাম। রুমে গিয়ে জানালার দিকে চোখ যেতেই আমার মুখে মৃদু হাসি ফুটে উঠলো। আমি যেন দেখতে লাগলাম একটি কিশোরী মেয়ে কিভাবে আগ্রহ ও উৎফুল্লতার সাথে জানালা দিয়ে বাইরে উঁকিঝুকি মারছে। সেই অনুসরণে আমিও ধীরে ধীরে জানালার দিকে এগিয়ে গেলাম। রাইয়ানের রুমের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো। একসময়ে আমার রোজকার কর্মকাণ্ডের মধ্যে যেটি ছিল একটি। রাইয়ান এই…এই রাস্তা দিয়েই হেঁটে যাচ্ছে, রাইয়ান রুমের লাইট অন করলো, এই অফ করলো, রাইয়ান এটা করলো, রাইয়ান ওটা করলো….যাকে দূর থেকে এতোটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতাম আর আজ আমি সেই মানুষটারই স্ত্রী। আমার প্রতিটা সকাল হয় তার মুখ দেখেই। হঠাৎ পরিবর্তনের এতো বড় গ্যাপ ভাবতেই লাজুকতার হাসিতে আমার মুখ নিচে নেমে গেলো।

দিনটা যেন খুব দ্রুত কেটে গেলো। রাতে দাদীমা আমাদের এখানেই থেকে যেতে বললেন। আমাদের থাকার ব্যবস্থা করা হলো রাইয়ানের পুরনো রুমেই। ডিনার শেষে রুমে ঢুকতেই একটা সুন্দর ঘ্রাণ নাকে ভেসে এলো। খুব করে এয়ারফ্রেশনার স্প্রে করা হয়েছে। বিছানার চাদর থেকে শুরু করে বালিশের কভার সব নতুন। আমি রুমের চারপাশে দৃষ্টি বুলাতে লাগলাম। রুমে একটাই বেড আর সবথেকে বড় কথা কোন সোফা নেই। আপাতত সেদিকে আমার ভাবনা গেলো না। আমার নজর গেলো রাইয়ানের পড়ার টেবিলটার দিকে। কারণ আমি বাইরে থেকে যেই জানালাটা দেখতাম সেটা পড়ার টেবিলের সামনেই। টেবিলের কাছে গিয়ে আমি পায়ে ভর দিয়ে একটু উঁচু হয়ে দাঁড়িয়ে বাইরেটা দেখতে লাগলাম। নাহ! আমার বাড়িটা তো এখান থেকে তেমনভাবে নজরেই পরে না। তার মানে আমিও রাইয়ানের নজরে কখনোই পরিনি। এমন সময় দরজা খুলে রাইয়ান এলো ভেতরে। শব্দে চমকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই আমার হাতে লেগে টেবিলের উপরের ছবির স্যান্ডটা পড়ে গেলো। আমি সেটা ঠিক করে রাখতে গিয়ে দেখলাম সেখানে একজন মধ্যবয়স্ক পুরুষের ছবি। যার সাথে রাইয়ানের চেহারার অনেক মিল। আমাকে কৌতূহলী হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাইয়ান বলল, ‘আমার বাবা।’
আমি ‘ও’ বলে আবারও ছবিটার দিকে তাকালাম। রাইয়ানের মা ছোট বেলাতেই মারা গেছেন। কিন্তু রাইয়ানের বাবাকে নিয়ে কখনোই কিছু শুনতে পাইনি। তাকে এই বাসায় কখনো আসতেও দেখা যায়নি। রাইয়ানের বাবার বিষয়টি কেমন যেন একটু রহস্যজনক।

টেবিলের নিচে একটা সফট পান্ডা টয় পায়ের কাছে ঠেকলো। সেটাকে হাতে নিয়ে বললাম,
‘পুতুলটা তো অনেক কিউট। তোমার?’
রাইয়ান ঈষৎ মলিন স্বরে বলল, ‘আমার ছোটবেলার।’
রাইয়ানের হাতে একটা পুরনো ম্যাগাজিন। সে দাঁড়িয়ে ছিল বেডের সামনেই। আমিও পুতুলটা জায়গামতো রেখে দিয়ে রাইয়ানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাইয়ান ম্যাগাজিনটা হাত দিয়ে একটা ঝাঁড়া দিয়ে ভেতরটা খুলতেই একটা তেলাপোকা উড়ে এলো। আকস্মিকতায় মুখে জোরে শব্দ করে আমাকে ধরেই বিছানায় বসে পড়লো রাইয়ান। সঙ্গে সঙ্গে আমার কাঁধে হাত রেখে পেছনে চলে গিয়ে নিজেকে আড়াল করে বলল,
‘হৃদি এটাকে তাড়াও। প্লিজ তাড়াও।’
আমি তখন পুরো থ। তেলাপোকাটি আমার সামনে মেঝেতেই পরে ছিল। আমি পা নাড়িয়ে হুস শব্দ করতেই উড়ে চলে গেলো। আমি রাইয়ানকে বললাম,
‘চলে গেছে।’
আস্তে আস্তে মাথা তুলে দেখলো রাইয়ান। আমার পেছন থেকে বেরিয়ে পাশে বসে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর আমার দিকে চোখ পড়তেই তার হুঁশ হলো যে তার এক হাত এখনো আমার কাঁধ জড়িয়ে আছে। ঝটপট তার হাত সরিয়ে নিলো সে। পুনরায় মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘তেলাপোকা কতো ভয়ংকর হয় না দেখতে!’
রাইয়ান তেলাপোকা ভয় পায়! ভাবতেই আমার পেট ফেটে হাসি বের হতে চাইলো। কিন্তু সেই হাসিকে সংযত করার আপ্রাণ চেষ্টা করে আমি ঠোঁট চেপে হেসে বললাম, ‘হুম, খুবই ভয়ংকর।’
রাইয়ান আমার মুখের ভাব বুঝতে পেরে সন্দিগ্ধ চোখে তাকালো। আর আমি হাসতে লাগলাম৷ অস্বস্তিতে পরে গেলো বেচারা। ইতস্তত করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমার অফিসের অনেক কাজ বাকি আছে। আমি স্টাডি রুমে যাচ্ছি।’
কোনমতে কথাগুলো বলে একপ্রকার পালিয়ে বেরালো রাইয়ান। আর আমি বিছানায় শুয়ে পড়ে এবার জোরে জোরে হাসতে লাগলাম আর উপলব্ধি করলাম এরকম ভয়ংকর আমাদের চারপাশে কখনো কখনো থাকা দরকার। একটু বেশিই দরকার।
___________________________________________________

দাদীমা রোজ ভোর হবার আগেই ঘুম থেকে উঠেন। নামাজ আদায় করে এরপর তসবিহ হাতে নিয়ে বাড়ির মধ্যেই কিছুক্ষণ হেঁটে বেড়ান তিনি। আজও যখন নিত্যদিনকার রুটিন অনুসরণ করছিলেন তখন স্টাডি রুমের পাশ দিয়ে যাবার সময় তিনি দেখলেন রাইয়ান সেখানেই টেবিলের উপর মাথা রেখা ঘুমিয়ে আছে। দাদীমা চুপচাপ সেখান থেকে চলে এলেন। রাইয়ানের ঘুম ভাঙলো তারও অনেকসময় পর। ফ্রেশ হয়ে চায়ের কাপ হাতে নিচে নেমে দেখলো দাদীমা রকিং চেয়ারে বসে পত্রিকা পড়ছে। চোখে তার ভারী চশমা। রাইয়ান বলল, ‘শুভ সকাল দাদীমা।’
দাদীমা চশমার আড়াল থেকে একনজর রাইয়ানকে দেখে পুনরায় পত্রিকায় নজর দিয়ে বললেন,
‘শুভ সকাল। তারপর তোমার অফিস কেমন চলছে? আজকাল মনে হচ্ছে কাজের চাপ একটু বেশিই। ব্যস্ত থাকো খুব?’
‘এই একটু।’
‘তোমরা দুজন বাসায় ঠিকঠাক ভাবে সবকিছু গুছিয়ে নিতে পেরেছো?’
রাইয়ান আস্তে করে বলল, ‘হুম।’
রাইয়ান চায়ের কাপে এক চুমুক দিলো। দাদীমা বলতে লাগলেন, ‘তোমাদের এতদিন হয়ে গেলো বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এখনো ঠিক সেরকমটা লাগে না।’
রাইয়ান ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলো। কোনমতে হেসে বলল, ‘মানে?’
‘মানে তোমাদেরকে দেখে ঠিক মনে হয় না তোমরা স্বামী স্ত্রী। মনে হয় যেন কোন দূর সম্পর্কের আত্মীয়।’
তৎক্ষনাৎ রাইয়ান কি বলবে ভেবে পেলো না। মাঝখানে ডি’সোজা দাদীমার ওষুধ নিয়ে আসায় কথা কাটা পড়ে গেলো। কিন্তু রাইয়ানের মন থেকে চিন্তা দূর হলো না। দাদীমা কি তবে কিছুটা আঁচ করতে পেরেছেন?

বিশাল বড় নাস্তার টেবিলে বসে আছে শুধু রাইয়ান আর হৃদিই। ডি’সোজা নাস্তা পরিবেশন করে দিচ্ছে। দাদীমা আরো আগেই নাস্তা করে ফেলায় খাবার টেবিলে শুধু তারা দুজনই আছে। দুজনে বসেছে আজ পাশাপাশি। হৃদি ন্যাপকিন কোলের উপর ভাঁজ করে ঠিকঠাক করে নিচ্ছে। আর অপদিকে রাইয়ান তখনও গভীর ভাবনায় মগ্ন। দাদীমা যদি ঘূনাক্ষরেও টের পেয়ে যায় রাইয়ানের মনে কি চলছে তবে অনেক বড় ঝামেলা হয়ে যাবে। হৃদি প্লেট উল্টে ঠিক করার সময় তার হাতে লেগে কাটা চামচ তাদের দুজনের চেয়ারের মাঝখানে পড়ে যায়। রাইয়ানও সেটা দেখে তুলতে গেলে রাইয়ান আর হৃদি একসাথেই চামচের গায়ে হাত বাড়িয়ে ফেলে। ফলে হাতের সাথে হাত আর মাথার সাথে মাথা লেগে দুজনেই পুরো স্থির হয়ে আটকে যায়। আড়চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়েও নেয় একবার। ডি’সোজা ওদের অবস্থা দেখে ফিক করে হেসে ফেলে। হাসির শব্দ শুনে হৃদি তাড়াতাড়ি উঠে বসে। রাইয়ান চামচটা উঠিয়ে হৃদির প্লেটের পাশে রেখে ডি’সোজার দিকে তাকায় একবার। ডি’সোজা এখনো হাসছে। রাইয়ানের চোখে চোখ পড়লে মুখ চেপে সেখান থেকে চলে যায়।
হৃদি খাওয়া শুরু করে। নাস্তার সব আইটেমেই অনেক সুস্বাদু। হৃদির পুরো মনোযোগ এখন খাওয়ায় নিমজ্জিত। অপরদিকে রাইয়ানের খাওয়া ঠিকভাবে হয়ে উঠছে না। এখনও দাদীমার কথাই মাথায় ঘুরছে তার। খাওয়ার মাঝে হঠাৎ রাইয়ানের ফোনে একটা নোটিফিকেশন এলে সে খাওয়া ছেড়ে উঠতে যায়। হৃদি স্যান্ডউইচ মুখে পুরতে পুরতে জিজ্ঞেস করে,
‘আর খাবে না?’
রাইয়ান বলল, ‘না। আমার পেট ভরে গেছে। যেতে হবে।’
হৃদি মাথা নেড়ে সায় মিলিয়ে পুনরায় খাওয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। রাইয়ান ফোন নিয়ে চেয়ার থেকে সরতেই যাবে ঠিক তখনই দরজা দিয়ে দেখলো দাদীমা তাদের মুখোমুখি পথ দিয়েই যাচ্ছেন। রাইয়ান পাশে তাকিয়ে ‘আমি যাই’ বলেই হুট করে হৃদির চুলে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। যাওয়ার পথে দাদীমা এক পলকে তা দেখেই স্মিত হেসে নিজের মতো চলে গেলেন। রাইয়ানও একটু স্বস্তি পেয়ে সেখান চলে গেলো। শুধু ভুলিয়ে দিয়ে গেলো আরেকজনের খাবার চিবানো।

হৃদি যখন মাথায় হাত দিয়ে ব্লাশ করে কি হলো কি হলো ভাবতে ব্যস্ত, ঠিক তখনই ডি’সোজা এসে জানালো দাদীমার কিছু বান্ধবীরা এসেছেন হৃদিকে দেখতে। হৃদি কোনমতে নিজেকে সামলে লিভিং এরিয়ায় এসে দাঁড়াতেই পেছন থেকে রাইয়ান হাসিমুখে এসে হৃদির কাঁধে হাত রেখে সকলের সাথে পরিচয় করানোর উদ্দেশ্য বলল,
‘মাই ওয়াইফ।’
হৃদি অবাক সুখকর বিস্ময়ের সাথে পাশে দাঁড়ানো রাইয়ানের মুখের দিকে তাকালো। রাইয়ানের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তার শরীরটা যেন মোমের মতো গলে যাবার মতো অবস্থা। ঠোঁটের লাজুক হাসি চেপে নিজেকে স্বাভাবিক দেখানোর কঠিন চেষ্টা করে হৃদি থেমে থেমে মাথা তুলে তাকালো মেহমানদের দিকে। আর এসবের মধ্যে সবথেকে বেশি নিশ্চিন্ত বোধ করলেন দাদীমা। মনের শঙ্কা কিছুটা হলেও দূর হলো তার।
___________________________________________________

অনেকক্ষণ যাবৎ হৃদির ফোনটা বেজে যাচ্ছে। রুমে প্রবেশ করে রাইয়ান বুঝতে পারলো শব্দটা হৃদির পার্স থেকে আসছে। ধরবে না ধরবে ভাবতে ভাবতে একসময় ফোন রিসিভ করেই নিলো রাইয়ান। ওপাশ থেকে জেরিন তারস্বরে বলে উঠলো,
‘হৃদি, কোথায় ছিলি? কতক্ষণ ধরে ফোন করছি তোকে?’
রাইয়ান বলল, ‘আমি রাইয়ান। হৃদি নেই। হয়তো ভুলে পার্স ফেলে রেখে গেছে।’
জেরিন চিন্তিত গলায় বলল, ‘ওহ নো! হৃদি তো নিশ্চয়ই এতক্ষণ সাপ্লিমেন্ট কেনার জন্য পাশের শহরে চলে গেছে। এখন কিভাবে কন্ট্রাক্ট করি ওর সাথে!’
রাইয়ান বলার মতো কিছু পেলো না। হঠাৎ কিছু মনে পরায় জেরিন উৎসুক গলায় বলে উঠলো,
‘হৃদি পার্স ফেলে গেছে তার মানে তো নিশ্চয়ই মনে হয় চাবিটাও রেখে গেছে। একটু দেখবে প্লিজ!’
রাইয়ান পার্সে ভালোমতো খুঁজে দেখলো আসলেই একটা চাবি আছে। ফোনে বলল,
‘হুম আছে।’
‘তুমি কি এখনো তোমার দাদীমার বাড়িতে আছো?’
‘হ্যাঁ।’
‘আচ্ছা রাইয়ান একটু শোনো, তুমি প্লিজ চাবিটা নিয়ে হৃদির বাড়িতে যেতে পারবে?’
রাইয়ান অবাক স্বরে বলল, ‘আমি?’
‘হ্যাঁ, প্লিজ একটু যাও। এখানে কফিশপে পরিদর্শক অফিস থেকে লোক এসেছে। কফিশপের কিছু জরুরী ডকুমেন্ট হৃদির বাড়িতে আছে। সেগুলো দেখাতে হবে। তারা দাঁড়িয়ে আছে। আমার গিয়ে আনারও সময় নেই। তুমি প্লিজ প্লিজ একটু পাঠিয়ে দাও।’
ইতস্তত করে করে রাইয়ান একসময় রাজি হলো। এর আগে কখনো হৃদির বাসায় যায়নি রাইয়ান। বাড়ির সামনে গিয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো। বাড়িটা খুব বেশি বড় নয়, ছোট তবুও খুব সুন্দর পরিপাটি করে গোছানো। দেয়ালে হৃদির কিশোরী বয়সের কিছু ছবি টাঙানো। রাইয়ান চারপাশে একটু চোখ বুলিয়ে হৃদির বেডরুমে ঢুকলো। জেরিনের কথামতো হৃদির বিছানার পাশের ড্রয়ারেই ডকুমেন্টের ফাইলটি পেলো রাইয়ান। ফাইল হাতে নিয়ে বের হবার জন্য ঘুরে পেছনের দেয়ালটিতে চোখ পড়তেই বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলো রাইয়ান। পেছনের দেয়ালের অনেকখানি অংশে ট্রি ফটো ফ্রেম জুড়ে শুধু রাইয়ানের ছবি। রাইয়ানের ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে শুরু করে গ্রাজুয়েশনের ছবি সহ আরও অনেক অনেক ছবি জায়গা পেয়েছে সেখানে। হতবাক রাইয়ান এক মুহুর্তের জন্য বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। তার এতো এতো ছবি হৃদি তার কাছে রেখে দিয়েছে কেন? তবে কি হৃদি তাকে বিয়ের আগে থেকেই পছন্দ করে?

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here