#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_04
ইরিন একা রুমের মধ্যে নামাজ পড়ছে। মেয়ে বলতে এখানে সে ছাড়া অন্যকেউ নেই। সে দরজার একপাশে জায়গা দেখে নামাজ পড়ছে। রুমের তাপমাএা মোটামুটি সহনীয়। এখানের কোনো ধরনের আধুনিক এসি নেই। তবে জানালা আছে বড় আকারের যেখান দিয়ে আলো প্রবেশ করে আর হালকা খোলা যাতে রুমটা ঠান্ডাময় হয়।
ইরিন সিজদা করছে খুব মনোযোগ সহকারে। যখন সালাম ফেরানোর জন্যে সে প্রথমে ডানদিকে চোখ বন্ধ অবস্থায় মুখ ফেরাতে লাগলো তখনই কারো নিশ্বাস যেনো তার মুখের উপর পড়ে। ইরিন বুঝতে পারে কেউ যেনো তার পাশে বসা। সে চোখ খুলে নি বন্ধ রেখেই বাম পাশে সালাম ফেরিয়ে আস্তে করে চোখ খুলে মনে মনে আল্লাহর নাম নিয়ে ডানপাশে মুখ ফেরাতেই অবাক।
ইরিনের চোখজোড়া গোল হয়ে যায়। সে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত লক্ষ করে বলে—” এই রোজনীগন্ধা ফুলের গাছ এখানে কিভাবে এলো? (আশ্চর্য হয়ে ) এই টা তো আমি দরজার বাইরে দেখেছিলাম। ভেতরে কে রেখে গেলো? আমি তো নামাজরত অবস্থায় কারো পায়ের সাউন্ড পাইনি। তাহলে এটা কি করে সম্ভব? (কিছুটা ভয়ে পেয়ে যায়) একবার কি টার্চ করে দেখবো?(ভেবে)
ইরিন কেঁপে কেঁপে ফুলের কাছে এসে টার্চ করার জন্যে হাত আগাতে লাগলো। সে আড়চোখে আশপাশ তাকিয়ে ফুলের দিকে এসে পড়ে। কিন্তু তখনও কেউ যেনো তাকে আড়ালে দেখে যাচ্ছিলো।
ইরিন রোজনীগন্ধা ফুলের কিছুটা কাছে আসতেই ফুলের ঘ্রাণ তার নাক অবধি পৌঁছাতে থাকে। এতে তার মাথা ধীরে ধীরে ঘুরতে থাকে। সে দুইহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে মনে মনে বলে।
ইরিন—“এ কি হচ্ছে হঠাৎ এতো মাথা ব্যথা করছে কেনো? লাগছে কেউ যেনো ক্লোরোফর্ম আমার নাকে ইউজ করলো। না না(ঢোলতে ঢোলতে ) আমার থেকে কোনোভাবে নিজের কেবিনে যেতে হবে খুব ঘুম পাচ্ছে।
সে পাশ ঘুরে চলে যেতে লাগলেই হঠাৎ কে যেনো বাতাসের বেগে তার পাশ কেটে গেলো। ইরিন ভয়ে ফুলটার কাছে এসে যায়। এতে সে মুখ ঘুরিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে দেখে ফুলগুলো লালবর্ণ ধারণ করতে লাগলো। সব পাতা হলুদে আর ফুলগুলো লাল হতে লাগলো। আচমকা এমন হওয়ায় সে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে ভয়ে এক-দুইবার শুকনো ঢোক গিললো।
সে একহাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে দরজা খোলার চেষ্টা করতে লাগে। সে সামনে দরজার দিকে তাকিয়ে থেকে আরেক নজর পিছে ফিরে দেখে ফুলের গাছটার সব পাতা একএ হতে লাগলো যেনো সব মিলিয়ে এক লম্বা ঝুলন্ত হাত হবে। ইরিন কিছুই বুঝতে পারছে না এ হচ্ছে তা কি তার সাথে।
এদিকে…..
।
।
।
।
।
সিরাত কেবিনের মধ্যে বসে গোলাকৃতি বক্স হাতের মধ্যে নিয়ে সেটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে কিন্তু তার মনে চলছে অন্যকথা। সে বক্সটা ঘুরাছে আর ভাবছে।
সিরাত—” ইরিনের মাঝে এমন কি আছে যা আমাকে তার দিকে টানে? একে তো কখনও দেখি নি এই প্রথম দেখলাম তাও কেনো এমন লাগে যেনো আমি তাকে অনেক আগ থেকে চিনি !
বক্সটা রেখে দুইহাত এক করে নিজের থুতনির মধ্যে রেখে সামনের দিকে দৃষ্টি রাখে।
—“না আমি একে চিনি না আমার একে কষ্ট দিতে হবে ব্যসস। আর কিছু নয়। আমাকে অপমানিত করলো আমারই অফিসে এসে।
—“তাই তো মিস ইরিন এর হাওয়া টাইড করার জন্যে মেনেজারকে মেসেজ করে বলে দিয়ে ছিলাম যাতে আমার কথা এখন না বলে। সো আমার কথামতো তুমি এখন আমার এসিস্টেন্ট। বাই দ্যা ওয়ে মিস ইরিন গেলো কোথায় নামাজে গেলো এখনো আসলো না?
ইরিন এর কেবিনের দিকে তাকিয়ে দেখে কেবিন খালি।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে নামাজের টাইম তো শেষ এই মেয়েটা এখনো নামাজের রুম থেকে আসলো না কেনো? ( কিছুটা চিন্তিত হয়ে ) যেয়ে দেখবো কি?(ঠোঁট উল্টিয়ে দুই আঙুল দিয়ে কপাল চুলকিয়ে) যেয়ে দেখি !
সিরাত তড়িঘড়ি করে কেবিন থেকে বের হওয়ার জন্যে কেবিনের দরজা খুলে বাইরে পা রাখে তখনই তার কানের মধ্যে কিছু সাউন্ড আসতে থাকে(ভ্যাবলেশনহীন সাউন্ড) এতে সিরাত চোখ কুচঁকে বন্ধ করে ফেলে।
সিরাত চোখ বন্ধ করতেই তার চোখের সামনে কিছু জাপসা চিএ ভেসে উঠতে লাগলো।
কার যেনো তার খুব প্রয়োজন? কে যেনো কারো পিছে আছে। সব জাপসা কালোবর্ণ হওয়ায় সিরাত ঠিকমতো উপলব্ধি করতে পারছে না এতে তার মাথায় প্রচুর পরিমাণে ধাক্কা লাগতে থাকে (নিজের দুইহাত মাথায় চেপে ধরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে)।
—“কন্ট্রোল সিরাত কন্ট্রোল কেন হচ্ছে এমন? এসবের জন্যে কি কোনো মারাত্মক রোগ দায়ী? আমি কি কোনো রোগের স্বীকার হচ্ছি! ইয়া আল্লাহ রাস্তা দেখাও(এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কেবিন থেকে বের হয়ে সামনের দিকে যেয়ে পানির ফ্রিল্টার থেকে গ্লাসে ঠান্ডা পানি ঢেলে খেয়ে নামাজের রুমের দিকে হাঁটতে শুরু করে)
এদিকে…….
।
।
।
।
ইরিন দরজার সাথে পিঠ ঠেসে লেগে যায় আর সামনের দিকে দুলতে দুলতে নিভু চোখজোড়া দিয়ে তাকায়। ফুলের সেই গাছটা এক পরিপূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত হলো।
ইরিন ভয়ে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে—” কে… কে আপনি? আ….আমার থ…থে…থেকে কি চান?
পাতার পরিপূর্ণ সেই মানুষটা ইরিনের খুব কাছে আসতেই ইরিন ভয়ে চিৎকার দেয়।
সিরাত দরজার কাছে আসতেই কারো চিৎকার শুনতে পেয়ে বললো।
—” আরে চিৎকারের সাউন্ড কোথার থেকে আসলো? ( আশপাশ তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করে)
তখন আবারো চিৎকার শুনতে সিরাত মুখ ঘুরিয়ে সেই দিকেই শকড কারণ চিৎকার আসতেছে নামাজের রুম থেকে। এ দেখে সিরাত ঘাবড়ে যেয়ে বলতে লাগলো।
—“নামাজের রুম থেকে চিৎকার তার মানে ইরিন…..সিরাত দেরি না করে দৌড়ে নামাজের রুমে এসে দরজা খুলার চেষ্টা করে কিন্তু দরজা খুলছে না দেখে সিরাত রেগে যায় আর বলে উঠে।
—“এটা কিভাবে সম্ভব? (চিন্তিত প্লাস রেগে) এই রুমের চাবি থাকে আমার কাছে! তাহলে রুমটা লক হলো কি করে? ইরিন ইরিন ইরিনননন ( চিৎকার করে তাকে ডাকে তবে রুমের ভেতর থেকে ইরিনের চিৎকার আসতেই থাকে)
সিরাত হাত সরিয়ে কিছুটা পিছে এসে জোরে দৌড়ে এসে দরজা ধাক্কাতে থাকে।
দরজার ভেতরে ইরিন দুইহাত মাথায় চেপে গুটিশুটি মেরে ফ্লোরে বসে চিৎকার করছিলো। সিরাত একপর্যায়ে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আচমকা লকটা খুলে যায়। সে ভেতরে এসে আশেপাশে তাকিয়ে ইরিনকে খুঁজতে লাগে তখনই তার নজর পরে দরজার পাশে ইরিন ফ্লোরে বসে আছে মুখখানি ঢেকে।
সিরাত এসে ফ্লোরে হাটু গেড়ে বসে ইরিনকে টার্চ করে। ইরিন আচমকা কারো স্পর্শ পেয়ে আহহহহহহহ। সে তার মুখ চেপে ধরে বলে—“আমি সিরাত অন্যকেউ নয় রিলেক্স আমি কুল ওকে কুল।
ইরিন নিজের মাথা উপর-নিচ নাড়িয়ে হ্যা জানায়। সিরাত আস্তে আস্তে তার মুখ থেকে হাত সরিয়ে তাকে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে তার বাহুজোড়া চেপে ধরে চিন্তিত হয়ে গম্ভীর কণ্ঠে রেগে বলে—” কি হয়ে ছিলো তোমার এভাবে চিৎকার দিয়েছো কেনো? কে এসে ছিলো এখানে?
ইরিন কিসের আনর্স দেবে ভেবে পাচ্ছে না। সে কিছু বলবে তার আগেই জ্ঞান হারিয়ে ঢোলে পড়ে সিরাতের বুকে। সিরাতও বুঝতে পেরে আর কিছু জিগ্গেস করলো না তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে রুম থেকে বের হবে তখনই তার কানে আবারো সেই ভ্যাবলেশনহীন সাউন্ড আসতে থাকে সে পিছে ঘুরে তাকাতেই কে যেনো তড়িঘড়ি করে অদৃশ্য হয়ে যায়। সিরাতের মাথায় আবারো সেই অস্পষ্ট সিন আসতে চাইলেও সে নিজের মাথা ঝাকুনি দিয়ে ইরিনকে নিয়ে বের হয়ে নিজের কেবিনে নিয়ে আসে।
তারা চলে যেতেই সেই পাতার মানুষটা দেওয়ালে লাগানো সবুজ ফ্রেম এর উপর এঁটে ছিলো। সে পানির মতো গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে এসে একএিত হয়ে মানুষে রুপান্তরিত হয়ে তার চোখজোড়া খুলতেই সামনে থাকা নিজের প্রতিবিম্ব দেখে শয়তানি হাসি দে আর বলে।
—“আমি আমার কাজ করার জন্যেই এলাম। সাতবছর এ যা পাই নি তা এই বছর অবশ্যই পাবো।
#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_05
সিরাত ইরিনকে নামাজের রুম থেকে অজ্ঞান অবস্থায় কোলে উঠিয়ে নিজের কেবিনে এনে সোফায় শুয়ে দেয়। তাদের এভাবে আসতে দেখে কিছু স্টাফ এসে ভিড় জমায় সিরাতের কেবিনের সামনে। কিছু মেয়ে তো জ্বলে পুড়ে যাচ্ছিলো। তারা কেবিনের মধ্যে আসার জন্যে হৈ-হুল্লা শুরু করে দিলো।
সিরাত ইরিনের অজ্ঞান অবস্থা দেখে খুবই চিন্তিত সাথে রেগে আছে। সে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজের রাগ দমন করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কেবিনের বাইরে ভিড়ের সাউন্ড তার মাথায় রাগের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে। সে রাগতেই আচমকা তার চোখের মণিগুলো লালচে হয়ে গেলো। যা সে নিজেও জানে না।
সিরাত তার রাগী চোখে মেনেজারের দিকে তাকায়। তিনি তার বসের চোখের দিকে তাকাতেই ভয়ে কাঁপতে শুরু করে দেয় সে ভাবতে লাগে।
—“স্যারের চোখের মণিগুলো লালবর্ণ কিভাবে হয়? বসের এই অভ্যাস অফিসে জয়েন করার পর থেকেই দেখে যাচ্ছি। একবার রাগলেই উনার চোখের মণি পরিবর্তন হয়ে যায়। কিন্তু এ বিষয়ে কি তিনি জানেন না!(চিন্তিত হয়ে)। মনে হয়ে চোখের কোনো প্রবলেম হতে পারে।
সিরাত মেনেজারকে অন্যমনস্ক দেখে আরো রেগে যায়। সে এবার কঠোর গলায় দাঁড়িয়ে বলে।
সিরাত—“এখানে কি কোনো ফাংশন চলছে? সবাই ভিড় জমাচ্ছো কেনো? যার যার কাজে চলে যাও!
রাগী লুকে কেবিনের বাইরের দিকে তাকিয়ে বললো।
মেনেজারের ধ্যান ফিরে সিরাতের কঠোর গলায়। সব স্টাফ সিরাত এর কঠোর গলা শুনে ভয়ে নিজেদের কাজে চলে যায়। মেনেজার সাহেব তিনি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন। সিরাত নিজের শার্টের কলার ঠিক করে মেনেজারের দিকে তাকিয়ে বলে।
সিরাত—” আমার চোখের গবেষণা না করে তাড়াতাড়ি একগ্লাস পানি আর আমাদের দুইজনের জন্যে লান্সের ব্যবস্থা করেন । ইরিনের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে যেতে বলে।
মেনেজার হতভম্ভ হয়ে সিরাতের কাছে এসে জিগ্গেস করে—“স্যার আপনি কিভাবে জানলেন আমি মনের মধ্যে কি ভাবছিলাম?(আশ্চর্য হয়ে )
সিরাত শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে কথা ঘুরানোর চেষ্টা করে বলে—“আপনি মনের মধ্যে নয়। আপনি এমনভাবে বলছিলেন যা কমবেশি মানুষ শুনতেই পাবে। এখন যেতে পারেন।
মেনেজার সিরাতের কথায় নিজেই ভাবে হয়তো এটাই সত্য। তিনি কেবিন থেকে বের হয়ে তাড়াতাড়ি পানি আর লান্স নিয়ে আসলেন।
সিরাত পানির গ্লাস থেকে কয়েক ফুট পানি ছিটকে দেয় ইরিনের মুখে। তার মুখে পানি পড়তেই সে নিভু নিভু চোখভাবে খুলে ধীরে ধীরে উঠে বসে সোফার মধ্যে হেলান দিলো। একহাত দিয়ে কপালে হাত দিয়ে চাপতে থাকে। সে মুখ উপরে তুলতেই সিরাতকে নিজের খুব কাছে পায়।
সিরাত ইরিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে—” লান্স করে নাও। তুমি টায়ার্ড হয়ে গিয়েছো।
ইরিন পুরো রুম দেখে ধপ করে দাঁড়িয়ে সিরাতকে জিগ্গেস করে—” আমি আপনার কেবিনে কেনো?
আমার থেকে তো আমার কেবিনে থাকার কথা!
সিরাত চোখ ঘুরিয়ে এটিটিউট লুক দেখিয়ে বলে —“এক অবহেলা নিরহ নারী নামাজের রুমে অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিল। উনাকে কোলে করেই এখানে নিয়ে আসা। এর বেশি কিছুই না। থার্ড লো ক্লাস গার্ল( বলে সে নিজের সিটে গিয়ে বসে লেপটপ অন করে চালাতে লাগে)
ইরিন সিরাতের এটিটিউট লুকের উপর রেগে ছাই হয়ে যাচ্ছে। সে মনে মনে সিরাতের চৌদ্দ গোষ্ঠী উজার করে করতে করতে তার রুম থেকে বের হতে পা বাড়ালেই সিরাত ডাক দেয়।
ইরিন নিজের নাম শুনতে পেয়ে পিছে ঘুরে তাকাতেই দেখে সিরাত লেপটপের দিকে দৃষ্ট রেখে বলে।
সিরাত—“ট্রি টেবিলে তোমার জন্যে লান্স রাখা আছে। নিয়ে খেয়ে নাও।
ইরিন বিড়বিড় করে—“বজ্জাত উগান্ডা উহ!
সিরাত ভ্রু কুঁচকে ইরিনের দিকে তাকিয়ে বলে—“ওয়াট? (চোখজোড়া ছোট করে )
ইরিন ভেবাচ্যাকা খেয়ে নিজের মাথা ডান-বাম নাড়িয়ে না জানিয়ে জট করে লান্সের পেকেট হাতে নিয়ে ভো দৌড় দেয় নিজের কেবিনের দিকে।
সিরাত লেপটপের দিকে নজর দিয়ে মুচকি হেসে অফিসের সিসিটিভি ফটেজ ওপেন করে যোহরের টাইমের রেকর্ড প্লে করে। কিন্তু আশ্চর্য এর ব্যাপার তখনকার সময়ের কোনো কিছুই রেকর্ড হয়নি। শুধু ইরিন এর নামাজের রুমে ঢোকার রেকর্ড দেখানো হচ্ছে।
সিরাত লেপটপ অফ করে দিয়ে বাসায় যাবার জন্যে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
______________
ইরিন নিজের কেবিনে এসে কিছুক্ষণ হাপাঁতে থাকে । এরপর ধপ করে নিজের চেয়ারে বসে তাড়াতাড়ি লান্সের পেকেট খুলে খেতে লেগে যায়।
ইরিন খেয়ে খেয়ে ভাবার চেষ্টা করছে নামাজের টাইমে তার সাথে হলোটা কি? কিন্তু তার মাথায় এই মুহুর্তে চিকেন বিরিয়ানী ছাড়া কিছুই আসছে না।
কারণ কিছুক্ষণ আগে সিরাত মেনেজারকে দিয়ে স্যালেড বা ডায়েটফুড খাবার আনায় নি। সে ইরিনের পছন্দের খাবার চিকেন বিরিয়ানী আনতে বলে।
মেনেজার সিরাত এর কথা মতো খাবার নিয়ে এনে রাখে। তিনি সিরাতকেও এক পেকেট দিলো। সে খাবারটা নিবে কিনা ভাবতে থাকে। মেনেজার সিরাতকে কিছু বলতে না দেখে বলে….
—“স্যার এখানে রাখলাম খেয়ে নিয়েন( মুচকি হেসে)
সিরাত উনার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের মাথা নাড়ায়। তিনি বের হয়ে গেলে সিরাত মনে মনে বলে….
—“কিভাবে পারে আমেরিকান হয়ে এতো শুদ্ধ বাংলা বলতে?(আশ্চর্য হয়ে )। আমার যে কি হবে?(উদাস ফেস করে দুই হাত পেন্টের পকেটে গুজে)
______________
ইরিন পুরো লান্স পেকেট শেষ করে পেকেটটা ডাস্টবিনে ফেলে ওয়াশরুমে হ্যান্ড ওয়াশ করতে যায়। সে হ্যান্ড ওয়াশ করে আড়চোখে আয়নার দিকে তাকাতেই এক ভয়ানক গাড় সবুজ রঙের পাতা মোড়ানো একজন মানুষের মতো কাউকে দেখতে পেয়ে ভয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সে সাথে সাথে আবার আয়নার মধ্যে দেখে সেখানেও কেউ নেই।
ইরিন এমন ভয়ানক ফেসের মানুষ কে দেখে কিছুটা অবাক সাথে ভয় পেয়ে যায়। সে পানির টিউব অফ করে বেরিয়ে নিজের চেয়ারে বসে পড়ে।
ওয়াশরুমে আয়নার মধ্যে আবার সেই পাতার অদৃশ্য শক্তি ভেসে উঠে। সে নিজেকে দেখে শয়তানি হেসে পানির মতো গড়িয়ে অদৃশ্য হয়ে পড়ে।
ইরিন এ ব্যাপারে ভাবতে চাইলেও সে নিজেকে শক্ত করে স্বাভাবিক করে ফেলে আর নিজেকে এই বলতে লাগলো—” ইটস যাস্ট ইমাজিনেশন নাথিং এলস। এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে লেপটপ অন করে আজকের ডিটেলসগুলো সব সেভ করে নিজের পেনড্রাইভ এ ট্রান্সফার করে নে। লেপটপে কাজ করা শেষ হলে পেনড্রাইভ ব্যাগে ঢুকিয়ে সব গুজগাজ করে কেবিন থেকে বের হয়ে কেবিনের ডোর লক করে দেয়।
সে অফিস থেকে বাস টপের কাছে এসে দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু তখন শুধু দুইজন লোক বসে সিগারেট খাচ্ছিলো।
ইরিন তাদের দিকে না তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে সাথে বির বির করে নিজেকে গালি দিতে লাগে—” শালী আজ এতো লেইট হয়ে গেলো বুঝতেই পারলাম না। মাগরিবের টাইমও পেড়িয়ে গেলো( উদাস হয়ে ভয়ে কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে)
বসে থাকা দুইজন লোক সিগারেট খেয়ে ইরিনের দিকে নেশার মতো লক্ষ করেই যাচ্ছে। ইরিন এর পিছনের সাইড থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে। তাদের মধ্যে একজন তার পাশে বসে থাকা লোককে ইশারা করে বলে।
প্রথমজন—“এ ভাই দেখ না মালটা কি সস্তা মনে হচ্ছে!(শয়তানি হেসে)
দ্বিতীয়জন তার কথায় নিজের মাথা নাড়িয়ে দাঁড়িয়ে যায়। তারা দুইজন ইরিনের কাছে এসে বলে—“এ মেয়ে কত টাকা নিবি?
ইরিন কে এমন প্রশ্ন করায় সে ঘাবড়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ভয়ার্ত ফেস করে ফেলে । সে তাদের দিকে তাকিয়ে বলে—” কি…….কি কিসের জন্যে টা….টাকা নেবো? চোখজোড়া বড় করে এক ঢোক গিলে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বললো।
দুইজন লোক একসাথে হেসে প্রথমজন বলে—“বাচ্চা নাকি? বুঝিস না রাত কাটনোর জন্যে কতো নিবি বল? এতো মজার মাল টারে কিভাবে হাতছাড়া করবো(দ্বিতীয়জনের দিকে তাকিয়ে অট্টহাসি দিয়ে)
ইরিন তাদের হাবভাব বুঝতে পারলো। সে আশপাশ ভালো করে দেখতে থাকে। কেউ আসে কিনা যার থেকে হেল্প চাইবে। কিন্তু কেউই নেই। সে প্রচুর পরিমাণে আল্লাহুর নাম স্মরণ করতে থাকে।
তারা ইরিন এর দিকে ধীর পায়ে এগিয়ে আসতে থাকে। সে তাদের এগিয়ে আসা দেখে এক পা দুই পা করে পিছাতে থাকে। তারা ইরিনের খুব কাছে চলে আসায় সে হিচকে চোখ বন্ধ করে ফেলে।
দুইজন লোক শয়তানি হাসি দিয়ে তার কাছে এসে প্রথমজন যখনই ইরিন এর ঘাড়ে স্কাপের উপর হাত রাখতে গেলো ওমনেই তার হাত সেখানে থেমে জোরে মুচড়ে গেলো। সে চিৎকার করলেও তার সাউন্ড ইরিন তো কি অন্য কেউ শুনতেই পেলো না। প্রথমজনের হাত খুব জোরে মুচড়া খাওয়ায় তার বাহুজোড়া হাড্ডি থেকে আলাদা হয়ে ভেঙ্গে পড়ে। সাথে ব্লাড ফ্লোরে পড়তে গেলে তা ফ্লোর টার্চ করলো না। তার আগে ব্লাডগুলো সেখান থেকে অদৃশ্য হয়ে গেলো। হঠাৎ পাশে থাকা গাছের মধ্যে থেকে এক হাত বেরিয়ে এসে প্রথমজনকে টান দিয়ে তোলে নেয়।
দ্বিতীয়জন দেখে পালানোর চেষ্টা করে কিছুটা দূরে যেতেই তার পা থেমে যায়। সে আর আগাতে পারে না। হঠাৎ করে সেই গাছের এক বড় কাটাযুক্ত লতা বেরিয়ে এসে তার গলা জড়িয়ে ঝেঁকে ধরতেই পুরু গলায় কাটা ডুকে ফাঁকা হয়ে ব্লাড বেরিয়ে যেতে লাগে আর তখনই সে মারা যায়। সে মারা যেতেই তাকে হিচকে টান দেয়। এতে লোকটা জট করে গাছের ভেতরে ঢুকে যায়।
ইরিন অনুভব করে কারো পায়ের সাউন্ড ভেসে আসছে না। সে একচোখ খুলে দেখে কেউই নেই। তখনই সাথে সাথে দুই চোখ খুলে একবার কুচলিয়ে নিজেকে বলে—“আমাকে ভয় পেলো মনে হয় !(এটিটিউট ভাব করে) ইরিন বলে কথা হাহ ! আমাকে ইউজ করতে আসছিলো। এদের চৌদ্দ গৌষ্টী রে তো (বাকিটা বলতে গিয়ে থেমে যায়) ধুর খারাপ ভাষা বলবো না(চোখ ঘুরিয়ে)
বাসার দিকে হাঁটা দেয়।
গাছের ভেতর থেকে সেই ক্যাটিনে বসে থাকা অদৃশ্য অচেনা মেয়েটা বেরিয়ে এসে মুচকি হেসে বলে—“তোমার কিছু হবে না। তোমার দিকে নজরদারির একটায় শাস্তি মৃত্যুদন্ড(রাগে চোখজোড়া গাড় বাদামী বর্ণ ধারণ করে)
তখন সে নিজের হাত উপরে তুলে সেই হাতে কিছু একটা আনার জন্যে মন্ত্র পড়ে—“আমি চাই তুই এখনই চলে আস আমার হাতের মুঠিতে”। সাথে সাথে ব্লাডের বক্স তার হাতে চলে আসলো।
সে ব্লাডের বক্সটা দেখে টেডি স্মাইল দিয়ে লাশ দুটো কে একএে নিয়ে সাগরের কাছে অদৃশ্য হয়ে এসে পড়ে। সেখানে আকাশের উড়া অবস্থায় নিচে পানির মধ্যে ফেলে দেয়। আস্তে আস্তে দুইজনের লাশ পানির গভীরে তলিয়ে গেলো।
অদৃশ্য অচেনা মেয়েটি তাদের দেহ ভেসে উঠতে না দেখে শয়তানি হেসে বলে—“তোদের দেহ কেউ খুঁজেও পাবে না। তোরা সারাজীবনের জন্যে পানির তলে গেটে কঙ্কাল হয়ে যাবি। কারণ তোদের দেহে ভেসে উঠার মতো কোনো শক্তিই রইলো না সব ব্লাড আমার (বক্সের দিকে তাকিয়ে) বক্সের মধ্যে।
সে টেডি স্মাইল দিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেলো।
……….চলবে……..
[