#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_09
–“আরে বক্সটা কই গেলো টেবিলের উপরই তো রেখেছিলাম?
ইরিন চিন্তিত হয়ে টেবিলের আশপাশ পুরো রুম চেক করতে থাকে। কিন্তু কোথাও বক্সটা না পেয়ে ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে। কি ব্যাপার ঘরের মধ্যেই তো বক্সটা রাখলাম কিন্তু হুট করে উধাও হয়ে গেলো। এটা কোনো কথা? মাথায় হাত দিয়ে বলতে লাগলো।
তখনই ইরিন খেয়াল করলো নিজের বেড রুমের দিকে। সেখানে বেডের উপর বক্সটা দেখে চমকে দাঁড়িয়ে যায়। আর ভাবতে লাগে এই বক্সটা তো আমি দরজা খুলে হাতে নিয়ে ঠিক টেবিলের উপর রেখেছিলাম তাহলে বেড রুমের বেডের উপর কিভাবে গেলো??
ইরিন কিছুটা ঘাবড়ে যায়। সে ধীর পায়ে হেঁটে তার রুমের এসে বেডের উপর থেকে বক্সটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে আসলো। বক্সটা দেখে মনে মনে বললো।
–“কি হতে পারে এর মধ্যে? অদ্ভুত দেখতে বক্সটা। আমি আমার জীবনে সব ধরনের বক্স দেখলাম কিন্তু এই টাইপ অলৌকিক নকশার বক্স দেখি নি। নাকি কোনো চোর মিউজিয়াম থেকে চুরি করে আমার দরজার সামনে রাখলো। চোখজোড়া বড় করে অবাক হয়ে ভাবতে লাগছিলো।
ইরিন বক্সটা খুলার জন্যে এর তালাহীন জায়গায় হাত দিতেই বক্সটা আকাশে উড়তে লাগে। এ দেখে সে হতভম্বের মতো হা করে বক্সটার দিকে তাকিয়ে থাকে।
বক্সটা হুট করে কথা বলতে লাগে।
–“তুমি হলে আমার (বক্সটার) কাজানার একমাএ উপায়। কিন্তু আমি খুলে যাবো তখনই যখন তুমি পারবে খুঁজতে সেই চাবি যা হবে মনের খোড়াঁক। পারবে কি তুমি?
বক্সের এসব কথা শুনে ইরিন ঠাই মেরে দাঁড়িয়ে ডাব ডাব করে বক্সের দিকে তাকিয়ে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বললো।
–“আ…..আপনি কথা কিভাবে বলতেছেন? জট করে সাহস জুটিয়ে ইরিন বলে ফেললো।
বক্স শুনে হু হু হু করে হাসতে লাগলো আকাশে উড়ে উড়ে। সে নিজের আসল রুপ দেখালো ইরিনের রুমে থাকা আয়নার মধ্যে এসে। ইরিনকে ডাকতে লাগলো।
ইরিন সেখানে এসে যা দেখলো তা দেখার জন্যে সে প্রস্তুত ছিলো না। তার এখন ইচ্ছা করছে নিজেকে পাবনার হসপিটালে ভর্তি করাতে। এই ছোট বয়সে তার মাথার উপর কিরকম ঝড় আসতেছে। সে নিজেও জানে না।
–“কি ব্যাপার তুমি তো জিন্দা মানুষ আয়নার মধ্যে দেখা যাচ্ছো । কিন্তু সামনে বক্স কেনো?
আয়নার কাছে এসে হাত দিয়ে দেখিয়ে বক্সের রুপে মানুষের প্রতিবিম্বের সাথে কথা বলতে লাগলো।
–“জ্বী আমি আপনার এক গুপ্তচর। তাই আপনার দরজায় আসলাম। আমাকে আপনিই পুনরায় মানুষে আনতে পারবেন। তাছাড়া আমি এভাবেই থাকবো। উদাস হয়ে তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে ফ্লোরে পড়তে লাগলো।
ইরিন বক্সটার চোখের পানিগুলো দেখে অবাক। সব পানিই ফ্লোরে চিকচিক করছে। এক এক পানির পরিমাণ দুই তিন লিটার হবে। সে ধীরে তার হাতটা বক্সটার মাথায় দিয়ে হাত বুলিয়ে দে। বক্সটা সান্ত্বনা পেয়ে চুপ হয়ে যায়। সাথে সাথে ফ্লোরে পড়া চোখের পানিগুলো কেনডি বলের মতো হয়ে যায়। এ দেখে আরেক দফা অবাক হয়ে বক্সকে জিগ্গেস করে।
–“আরে এগুলো কেনডি বল কেনো হলো?
–“এগুলো আমার শরীরের সাথে জড়িত। এই বলগুলো কেউ খেলে একমাস ঘুম থেকে জেগে উঠতে পারবে না। এগুলো উঠিয়ে তোমার কাছে রেখে দাও । কোনো একসময় কাজে আসবে। এগুলো কে তুমি যেকোনো ভাবে ব্যবহার করতে পারবে।
ইরিন বক্সটার কথা মতো সবগুলো উঠিয়ে এক ছোট কাপের মধ্যে রেখে ফ্রিজে ঢুকিয়ে রাখলো। কারণ কেনডি বল।
_________________
সিরাত ক্যাফের মধ্যে ডিল ফাইনাল করে সামনের সপ্তাহের ফাংশনে সবাইকে আসার জন্যে আমন্ত্রণ করে গাড়ি নিয়ে নিজের বাসার দিকে যেতে লাগলো। আর মিটিং টা শেষ হতে প্রায় রাত হয়ে যায়।
–“উফফ খুব লেইট হয়ে গেলো। রাতের বারোটা বাজবে। এখনো বাসায় যায় নি। আর ফোন ও তো চেক করা হলো না।
সিরাত এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাছে আরেক হাত দিয়ে ফোন বের করতে যেয়ে হুট করে মনে পড়লো তার আম্মুর বলা কথাটা।
–“বাবা যতো যাই হোক গাড়ি চালানোর সময় কখনো ফোন ইউজ করতে নেই। কারণ বিপদ কাউকে বলে আসে না।
সিরাত মুচকি হেসে দুই হাত দিয়েই গাড়ি চালাতে লাগলো। কিন্তু সে তো জানতো না যে বিপদ ফোন ছাড়া অন্যভাবেও সামনে হাজির হতে পারে।
কিছুক্ষণ পর সিরাত মেইন রোডের দিকে এসে গাড়ি থামালো। কারণ ট্রাফিক লাইট পড়লো। সে আশে পাশে খেয়াল করে দেখলো কোনো মানুষজন নেই। পুরো রাস্তা ফাঁকা। সে ঘড়ির দিকে দেখে অবাক হয়ে যায়।
–“এখনো বারোটাও বাজে নি। তাও এই রাস্তার সব দোকানপাট বন্ধ ? আমার জানা মতে সব জায়গার দোকানপাট তো এতো জলদি বন্ধ হওয়ার কথা নাহ। এখানে কেনো করলো?
হুট করেই মেইন রোডের সব লাইট অফ হয়ে যায়। এমনকি ট্রাফিক লাইট টাও ডিপ ডিপ করতে করতেই ব্লাস্ট হয়ে যায়। সিরাত তড়িঘড়ি গাড়িটা পিছে নিয়ে নে। সে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলতে লাগে।
–“এটা কি ছিলো? হঠাৎ করে এরকম হওয়ার কারণ? মনে হয় কোনো জায়গায় তারের সংযোগের আগুন লেগেছে। যার কারণে ট্রাফিক লাইটটা ব্লাস্ট হলো।
সে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে উপরে তাকিয়ে দেখে ট্রাফিক লাইট পুরোটা জ্বলে পুড়ে গেছে। সে চার পাঁচ না ভেবে গাড়ি স্টাট দিলো। মাঝপথেই তার গাড়ি থেমে গেলো। এতে সিরাত গাড়ি বার বার স্টাট করার চেষ্টা করতে থাকে কিন্তু কোনো ফল আসলো না। সে এবার বিরক্ত হয়ে গাড়ি থেকে বের হয়ে চেক করতে লাগে।
সে সব টায়ার চেক করার পর তার ড্রাইভিং সিটের বাম পাশের টায়ারটা খেয়াল করলো। সে ঝুঁকে টায়ার এর উপর নিজের ফোন বের করে ফ্লাশলাইট অন করে দেখে তার সেই টায়ারের মধ্যে কোথার থেকে যেনো ছোট ধারালো স্ক্রু ঢুকে গেলো যার কারণে টায়ারটার হাওয়া বের হয়ে যায়। সে রেগে জোরে গাড়ির ডোর এ পান্স মারে।
সে আশপাশ তাকিয়ে দেখে পুরো নিস্তব্ধ পরিবেশ। সে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে ফোন বের করতেই সেখানে কল আসে।
সে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আননোন নাম্বার থেকে কল আসতেছে।
সিরাত ফোনটা কানে ধরে –“হ্যালো?
–“……………ভ্যাবলেশনহীন সাউন্ড।
–“Hello! Is someone say something or not? গম্ভীর কণ্ঠে সে সাউন্ডটা শুনে বললো।
–“………….ভ্যাবলেশনহীন সাউন্ডটা বেড়ে যাতে লাগে।
সিরাত সাউন্ডটা শুনতে পেয়ে ভাবতে লাগে। এই সাউন্ড তো আমার আশে পাশের কোনো এক জায়গা থেকে আসতেছে। সে কানে ফোন ধরেই চোখজোড়া ছোট করে আশপাশে তাকাতে থাকে। কিন্তু কোনো মানুষের ছিটেফোঁটাও নজরে আসলো না।
তখনই সিরাতের নাকে এক বিকুট গন্ধ আসতে লাগে। সে গন্ধটা কে অনুভব করতে লাগে তখনই তার ব্রেনে এক অদৃশ্য ছবি ফুটে উঠে।
–“আমি আসছি আমি আসছিই হাহাহাহা। শয়তানি হাসি দিয়ে তলোয়ার চালালো একজনের শরীরের উপর।
সিরাত জট করে চোখজোড়া খুলে নিজেকে দেখতে লাগে। তার কপালে ঘাম এসে জমাট বাধঁলো। সে টিস্যু বের করে ঘামগুলো মুছে তা ডাস্টবিনে ফেলে দে। কিন্তু সে খেয়াল করলো না টিস্যু টা বাতাসের ছোঁয়ায় ছিটকে পাহাড়ি জায়গায় গিয়ে এক গাছের সাথে লেগে গেলো।
সিরাত ফোন বের করে তার বাসায় কল দেওয়ার জন্যে তখনই রেনা কল দিলো। সে কল ধরতেই অপরপাশ থেকে রেনা চিৎকার দিয়ে বলতে শুরু করে।
–“ভাই তুই খুব খারাপ খারাপ মানে খারাপ? মুখ ফুলিয়ে বেডের উপর বসে বললো।
সিরাত ব্যবলাকান্তের মতো হয়ে বললো –“আমি কি করেছি? আর তোর কি হলো? এভাবে রিয়েক্ট করতেছিস যেনো আমি তোর বিয়ে ঠিক করছি।
–“ওও রে মোর খোদা মহারাজা ভুলে গেছে তাহলে। নিজেই আমার জন্যে শ্বশুরবাড়ি অর্ডার করছিস। এখন নিজেই মুখ ফিরিয়ে নিসছিস। তরে একবার সামনে পাই বেধারাম পিঠাবো। রেগে ফসতে ফসতে বললো।
–“আমি কবে বললাম আর আমি ঠিক করছি তো আমিই কেনো জানি না। মনে মনে নিজেকে বলতে লাগে।
রেনা সিরাত এর কোনো আওয়াজ না পেয়ে হ্যালো ভাইয়া আছিস? নাকি উড়ে গেছিস পিশাচরাজ এর মতো।
বাকি কথা বলতে গিয়ে রেনা চুপ হয়ে যায় মিস্টার তফজ্জাল হোসেনকে দেখে। উনি ইশারা করে রেনাকে চুপ থাকতে বলে।
সিরাত পিশাচরাজ কথাটা শুনে মনে মনে বলতে লাগে।
–“পিশাচরাজ এটা কোথাও তো শুনেছি মতো লাগছে। কিন্তু কোথায় শুনেছি। Uff what happened with me? Looks like im not human im………who i am?
–“আরে ভাই ফান করছি সিরিয়াসলি কেন নিতাছিস তুই বল তুই কোথায়? আমতা আমতা করে হাসার ট্রাই করে কথা ঘুরানো চেষ্টা করে।
–“পিশাচরাজ কে? গম্ভীরতা ভাব করে রেনাকে সিরিয়াস কণ্ঠে জিগ্গেস করতে লাগে।
–“ঐ গাধা পিশাচ নাহ নাগিন….নাগিন….. নাগিন গিন গিন গিন হিহিহি। এটা বলছিলাম। তুইও না আজকাল কানে বেশি শুনতেছিস। এতো শুনাও ভালো না বুঝছিস।
–“ঐ বেটকি মাছের শুটকি মাছ বেশি বকবক শিখছিস আজকাল। চুপ থাক আর আমি কানে বেশি শুনি তাই না? তুই নিজে কানে শুনিস না। চোখ ঘুরিয়ে ভাব করে বলে।
–“ঐ ভাই বলে দিচ্ছি একদম ঝগড়া লাগাতে আসবি না আমিও কিন্তু পাকনা বুঝছিস। ভাব মেরে বেডের উপর বসে বললো।
–“হয়ছে তোর কথা এখন ড্রাইভারকে বল গাড়ি নিয়ে আমার এড্রেস দেবো সেখানে আসতে । কা……
বাকি কথা না শুনেই রেনা দুষ্টুমির ভাব করে বলে–“কেন রে তুই কি ছোটবাচ্চা যে তোরে ড্রপ করতে ড্রাইভার পাঠাতে হবে।
–“বেশি বুঝা গাধামীর লক্ষণ। Just like my lovely sister Rena. মুচকি হেসে চোখ ঘুরিয়ে বলে।
রেনা কে কিছু বলতে না দিয়ে মিস্টার তফজ্জাল তার হাত থেকে কল কেড়ে নিয়ে সিরাতকে বলে..
–“বাবা ড্রাইভার যাচ্ছে তুই এড্রেস সেন্ড কর।
কল কেটে তিনি রেনার দিকে রাগী দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে বলে –“আজ যদি তোর দুষ্টামির কারণে সিরাত পিশাচরাজ সম্পর্কে বিশেষ কোনো কথা জানতে চাইতো। তখন সব কথা বের হয়ে যেতো।
রেনা সরি বলে মিস্টার তফজ্জালকে জড়িয়ে ধরে। উনিও মেয়েকে জড়িয়ে তার কপালে চুমা দিয়ে বলে –“একমাএ তুই আর সিরাতকে নিয়েই তো আমার আর তোর আম্মুর জীবন।
_________________
ইরিন বক্সটার সামনে বসে বলে–“কেনডি বলগুলো তোমার কথা মতো রেখেছি এখন?
বক্সটা ইরিন এর দিকে তাকিয়ে বলে–“তুমি কতোক্ষণ ধরে এভাবে বসে আছো কিছু জানো?
ইরিন ভ্রু কুঁচকে বলে–“কেন?
–“রাতের কয়টা বাজে যেনো? বনীতার ভান করে বক্সটা উড়ে ঘড়ির কাছে এসে দাঁড়িয়ে গেলো।
ইরিন দেখে হুট করে দাঁড়িয়ে বলে–“আমি এতোক্ষণ ধরে তোমাকে দেখার মধ্যেই কাটাছিলাম। O M A আমাকে কেউ মেরে ফেলো। শহীদ হতে মন চাচ্ছে।
–“আমার কি দোষ তুমিই তো এভাবে চেয়ে ছিলে আমার দিকে !
–“আচ্ছা আচ্ছা আর বলতে হবে না তবে এটা বলো চাবিটা পাবো কোথায়? চোখজোড়া সরু করে মগ্ন ভাব করে বলে।
–“একটা ধাঁধা বলবো সেটার মধ্যেই সব উওর আর উওরের মাঝেই তুমি এমন একজনকে পাবা যে কিনা হবে মনের খোড়াকঁ। বলো ধাঁধাটা শুনতে রাজি?
ইরিন কিছুক্ষণ ভাবতে লাগে আমি কি হ্যাঁ বলবো নাকি না। কি এমন ধাঁধা বলবে! যদি না শুনি তাহলে এই নিরহ মানুষটা এভাবে বক্সের আকৃতি নিয়ে থেকে যাবে।
ইরিন বক্সটার দিকে তাকিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো–“ওকে আমি রাজি বলো।
#My vampire lover comes again
#এসেছি ফিরে তোমারই ডার্ক প্রিন্স
#লেখিকা_তামান্না
#পার্ট_10
সিরাত অনেকক্ষণ গাড়ির মধ্যে হেলান দিয়ে জিমুতে থাকে। ফোন বের করে এফবি তে লগ ইন করে নিউজ ফিড দেখছে। তখন ইরিন এর আইডি দেখে মনে মনে বলে।
–”ম্যাডাম এতো রাতে না ঘুমিয়ে কি জাগনা আছে? বফ তফ আছে মনে হচ্ছে।
ইরিন এর আইডিতে রিকু পাঠিয়ে ফোন রেখে দিলো।
গাড়িতে নক নক করায় সিরাত ঘাবড়ে যায়। এ সময় কে এলো সে হুট করে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বাইরে দেখে অবাক হয়ে যায়। কেউই বাইরে নেই অথচ কিছুক্ষণ আগে তার গাড়ির গ্লাসে নক নক করা হয়েছিলো।
সিরাত গাড়ি থেকে নেমে আশপাশে তাকাতে লাগে। কিন্তু কাউকে না পেয়ে সে গাড়ির দরজা ওপেন করবে ওমনেই তার চোখ পড়ে পাশে পাহাড়ি জায়গায় এক কালো হুডি পরা লোকের দিকে। সে গাড়ির দরজা অফ করে সে দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে ডাক দিতে লাগে।
–“Hey young man! Please help me! My car…..
বাকিটুকু বলার আগেই সে দেখতে পেলো লোকটা পিছিয়ে যাচ্ছে আর জোরে জোরে কান্না করতে লাগে। সিরাত ভাবলো হয়তো সে কোনো বিপদে পড়েছে। সে
হুডি পরা লোকটাকে থামতে বললো আর তার দিকে এগিয়ে যেতে লাগে। কিন্তু সে যতোই লোকটার কাছে যাচ্ছে লোকটা ততোই পিছে যাচ্ছে।
পরক্ষণেই লোকটা উধাও হয়ে যায়। সিরাত এ দেখে সাথে সাথে দাঁড়িয়ে আশেপাশে ঘুরে দেখে সে জঙ্গলে ডুকে পরেছে।
সে তাজব হয়ে বলতে লাগে।
–“লোকটা হঠাৎ করে কোথায় গেলো? এখনই তো এখানে ছিলো। যাই হোক এখন ড্রাইভার আসবে আমি রিটার্ন দেই।
সে পিছে ফিরে তাকাতেই লোকটা কে দেখতে পাই।
সে লোকটার কিছুটা পাশে এসে বলতে লাগে।
–“ওহ আপনি ঠিক আছেন কিছু হয়েছে কি? ভ্রু কুঁচকে লোকটার দিকে তাকিয়ে বললো।
লোকটা নিজের মাথা থেকে কাপড় সরিয়ে সিরাতের দিকে তাকালো। সিরাত দেখতে পেলো লোকটার চোখজোড়া লালবর্ণ হয়ে আছে। যেনো সে পিপাসার্ত। কোনো শিকারী খুঁজে বেড়াচ্ছে। সে সিরাত এর দিকে তাকিয়ে বললো।
–“আমি ব্লাড চাই।
–“ওয়াইট? কি চান!
–“আমি পিপাসিত খাবার চাইইইইই চিৎকার দিয়ে।
সিরাত স্বাভাবিকভাবেই লোকটার চিৎকার শুনছে আর কথাগুলো শুনলো। সে দুইহাত বুকের উপর গুজে পাশে থাকা গাছের সাথে বা বাহুডোর ঠেসে দাঁড়িয়ে বললো।
–“এখানে ব্লাড পাবেন কোথায়? আর আপনি মানুষ হয়ে ব্লাড খাবেন। তাজব ব্যাপার কোনো শিকারী পেয়েছেন কি?
লোকটা সিরাতের ডোন্ট কেয়ার ভাব এর মতো কথাগুলো শুনে রেগে বললো।
–“হে মানুষজাতি। তুই এই হবি আমার খাদ্য। তোকে দিয়েই আমার পিপাসা মিটাবো।
তার কথাগুলো শুনে সিরাত ডোন্ট কেয়ার ভাব করে তার পাশ কাটিয়ে হাটঁতে শুরু করলো। লোকটা পিছে ফিরে তার কাধেঁ হাত রাখলো। ওমনেই সিরাত চোখ বন্ধ করে ফেলে।
____________________
বক্সটা ইরিন এর রাজি হওয়ার কথা শুনে খুশিতে উড়তে লাগলো। আর জোরে জোরে চিৎকার করে বললো।
–“আপ্পি আমি মুক্ত হবো স্বাধীন হবো এই আকৃতি থেকে ফিরে পাবো নিজের আকৃতি।
বক্সটা মানে বক্সের রুপে মানুষটার খুশি দেখে ইরিন এর চোখে পানি এসে গেলো। বক্সটা খেয়াল করলো ইরিন ফুঁফিয়ে কান্না করছে। বক্সটা থেমে তার কাধেঁর পাশে এসে উড়ানো অবস্থায় বলে।
–“আপ্পি কান্না করছো কেনো আমি কি কোনো ভুল করেছি? যদি করে থাকি আইম রিয়েলি সরি।
–“আরে না না তুমি কিছু করো নি। আজ পর্যন্ত লাইফে কেউ বোন বা আপ্পি বলে সম্বন্ধ করে নি। তুমিই প্রথম যে আমাকে আপ্পি বলে বোন বানিয়েছো।
বক্সটা নাড়াচাড়া করে টেডি স্মাইল করে বলে–“তুমি আমার আপ্পিই। তোমাকে রক্ষা করার জন্যেই তো সে আমাকে পাঠিয়েছে।
ইরিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে–“কে পাঠিয়েছে?
বক্সটা এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলে–“এই কথাটা এখন না পরে বলবো। আগে ধাধাঁ অনুযায়ী কাজটা করো সেই কাজেই হয়তো তুমি তার নাম খুঁজে পাবে।
ইরিন উদাস ফেস করে বক্সটার দিকে তাকিয়ে বলে–“এটাও না বললে ওইটাও না বললে ধাঁধাটাই বলো।
বক্সটা মুচকি হেসে বলে–“সাত সাগর ঘিরে এক পাহাড় রহিবে,,তুমি যাবে সেখানে আগুনের লাভা পাড় করে,,ফুটন্ত গরম পানি হবে যাহার পানাহার,,মিটাবে তৃপ্তি তোমারই ঠান্ডা আবাশ,,হবে এক গহীন গুপ্তধন,, খুলা হবে দরজাটা যাবে,, সেখানে নিয়ে এক ধারালো কাঁচের ছুরি যার আঘাতে বিক্ষত হবে হাজারো রক্তশূচি প্রাণী,,দরজা বেধ করিয়া পাবে এক অদ্ভুত বীরযোদ্ধা যাহা হবে তোমারই মনের খোড়াঁক।
শেষ এটাই তোমার ধাঁধা।
ইরিন হা করে বক্সটার পুরো কথা শুনে ব্যবলাকান্তের মতো হয়ে বললো।
–“আমি টপার তবে নিউটন আইনস্টাইন নাহ। এদের মতো বিখ্যাত টপার হয় নি যে, তুমি আমাকে এতো বড় ধাঁধা শুনালে। মাথায় একহাত দিয়ে ধপাস করে বেডে বসে গেলো।
আমি যদি এদের মতো হতাম তাহলে এখনই তোমার ধাঁধা অনুযায়ী কাজ করে ফেলতে পারতাম। তবে আমি খুব সামান্য টপার।
বক্সটা বিরবির করে বলে–” এখন হয়তো আপনার থেকে শুনে জটিল লাগছে। কিন্তু পরে এই ধাঁধার মানেটা আপনি ঠিকই বের করে ফেলবেন সাহেবা। আপনি নিজেও জানেন না আপনি কে ! তাই তো অদৃশ্য মায়ারাণী যে কিনা আপনার রক্ষার্থে সবক্ষণ প্রস্তুত থাকে উনার কথামতো চলে এলাম আপনার আঙ্গিনায় আমাদের সাহেবা। মুচকি হেসে।
ইরিন বক্সটা কে কি যেনো বিরবির করতে দেখে জট করে বললো।
–“আমাকে এতো বড় বিভান্তে ফেলে তুমি নিজেই বির বির করে যাচ্ছো। কিছু তো করো? না হলে তোমার থেকে সারাজীবন এভাবে বক্স হয়ে থাকতে হবে আর আমি জানতেই পারবো না আমার সাথে এসব অলৌকিক কান্ড হওয়ার কারণ কি?
বসা থেকে উঠে জানালার কাছে এসে চিন্তিত হয়ে।
বক্সটা চোখ ঘুরিয়ে টেডি স্মাইল দিয়ে বলে–“আপনি কি গাধী?
ইরিন ভ্রু কুঁচকে রাগী লুকে তাকিয়ে বলে–“কি বললে?
–“আব না মানে বলছিলাম কি আপনি কি একা এই ধাঁধা সমাধান করবেন? নাহ আমিও প্রতিটা মুহুর্ত আপনার সাথে থাকবো। আপনাকে হেল্প করবো। কিন্তু হেল্পটা হবে সীমিত পুরোপুরি হেল্প নয়।
–“পুরোপুরি নাহ তার মানে ক্লু দিবে এক এক রাস্তায়?
–“ইয়েস এই তো বুঝে গেলেন সাহেবা। বক্স এই কথাটা কিছুটা জোরে বলে উঠলো।
ইরিন সাহেবা শব্দটা শুনে বলে–“এটা কে? সাহেবা ওয়ার্ডটা তো কোনো বইয়ে পড়েছি মনে হচ্ছে।
বক্সটা ইরিনের ধ্যান ফেরানোর জন্যে জট করে কথাটা ঘুরিয়ে বলে–“নাহ আপ্পি আপনি মেয়ে তো তাই হুট করে সাহেবা বললাম। আসলে এই নামের কিছুই নেই।
ইরিন তাও অন্যকিছু বলতে যাবে তার আগেই বক্সটা বলে–“আরে আরে অনেক টাইম হলো ঘুমিয়ে যাও। চলো চলো।
বলতে বলতে বক্সটা ঘুমিয়ে পড়ে সাথে উড়া থেকে জট করে নিচে বেডের উপর নেতিয়ে পড়লো। ইরিন বক্সটা হাতে নিয়ে ড্রয়ায়ের উপর রেখে ফোনটা চার্জ এ দিয়ে শুয়ে পড়ে।
_______________
মিসেস ইয়ামিত নিজের রুমটা ঠিকভাবে গুছিয়ে রাখছিল। তখন তার চোখ পড়ে ড্রয়ারে থাকা চিঠিটার উপর। সে ঐরাতে চিঠিটার মধ্যে কোনো লেখা দেখিনি। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই চিঠির মধ্যে লেখা দেখতে পেয়ে সে কাপড়গুলো বেডে রেখে তেড়ে এসে চিঠিটা হাতে নিয়ে বেডের উপর বসে পড়তে শুরু করে।
সেখানে লেখাগুলো ছিল এমন–“আমার ছেলে পিশাচরাজ সে যেকোনো দিন বা রাত এ পিশাচে পরিণত হয়ে যেতে পারে। সে পুর্নজন্ম নিয়েছে। আপনাদের অবশ্যই বলেছি শ্রেয় -র খেয়াল রাখতে। তবে তার পিশাচে পরিণত হলেই আমাদের রাজ প্রজা পুনরায় প্রাণপণ হয়ে উঠবে। কিন্তু এখন আপনাদের করণীয় সাহেবা কে খুঁজা। যে পারবে শ্রেয়কে পিশাচে পরিণত হলেও এক বীর পিশাচরাজ বানাতে যে নিরীহ মানুষকে নই পশুকে আক্রমণ করে নিজের পিপাসা মিটায়। যদি সাহেবা কে পাওয়া না যায় তাহলে পিশাচরাজ নরপিশাচে পরিপূর্ণ হবে। যতো শীঘ্রই সম্ভব সাহেবা খুঁজোন। আর সাহেবাকে চেনার একমাএ উপায় তার বা হাতের মধ্যে এক তারার নকশা আকৃতি তিল হবে। সেই তারা কোনো সামান্য তারা নই। সেটা হলো সাত আসমানের এক অবিশেষ রেখা যেটা খুব বিশুদ্ধ পবিএ। দুই দিন সময় । আমি আবারো ফিরে আসবো তবে সেটা পরে। এখন খুঁজেন সাহেবা কে খুঁজেন।
হঠাৎ চিঠিটা উধাও হয়ে গেলো। মিসেস ইয়ামিত চিন্তিত হয়ে দুই হাত মোনাজাতের মতো করে বিরবির করে বলে–“ইয়া আল্লাহ সহায় হন সাহেবা কে কোথায় আছে তাকে আমাদের মাঝে এনে দেন। তাকে খুব প্রয়োজন নিজের ছেলেকে বাঁচানোর উপায়টা পাওয়ায় দেন আল্লাহ পাওয়ায় দেন। দুইদিন সময় আল্লাহ এই সময় এর মাঝে চোখের সামনে রাস্তা দেখান ইয়া আল্লাহ আমিন।
উনার চোখ থেকে টপ টপ করে অশ্রু ঝড়তে লাগলো। উনি দুইহাত দিয়ে দোয়া পড়ে নিজের ফুঁ দিয়ে মোনাজাত শেষ করলো।
মিসেস ইয়ামিত বের হতেই রেনা উনার সামনে আসে। সে তার আম্মুকে এভাবে গোমড়া মুখ দেখে জিগ্গেস করে।
–“আম্মু কিছু হয়েছে??
–“না মা কিছু হয় নি তুই কি কিছু বলতে এসেছিলি?
–“হ্যা আসলে পিশাচরাজ…..
বাকিটুকু বলার আগেই মিসেস ইয়ামিত রাগী সুরে বলে–“আগেও বলেছি আজও বলছি পরে যাতে এই পিশাচরাজ এর কথা মুখে না আসে। গট ইট?
–“ওকে মম।
রেনা জিদ করে নিজের রুমে চলে গেলো। মিসেস ইয়ামিত হাফ ছেড়ে কিচেনের দিকে যান।
এদিকে সিরাত……….
……………চলবে………..
……….চলবে…….