# Real_Love♥
# Oniya_Chowdhury
Part:17
.
.
ফ্লাট থেকে সরাসরি রেস্টুরেন্টে গিয়ে সেখানকার সব ফর্মালিটিজ পালন করতে করতে রাত সাড়ে সাতটার মতো বেজে গিয়েছিলো।ইফাজ ওর সব ফ্রেন্ডদের বিদায় দিয়ে আমাকে নিয়ে সোজা গাড়িতে বসলো।আমার সিটবেল্টটা লাগিয়ে দিয়ে নিজের সিটবেল্ট লাগালো।
.
ইফাজ অনেক দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছিলো।মনে হচ্ছিলো এই বুঝি গাড়িটা স্লিপ খেয়ে উল্টে যাবে।আমার অবশ্য ভালোই লাগছিলো।আমি ইফাজকে এসিটা অফ করে জানালাটা খুলে দিতে বললাম।উনি আমার কথামতো তাই করলেন।রাস্তায় ওতোটা জ্যাম নেই।দু একটা গাড়ি কিছুক্ষণ পর পর আমাদের ক্রস করে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে।আমি বামহাতের কনুই জানালার উপর রেখে মুখটা সামান্য বের করে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া লাগাচ্ছিলাম।হঠাৎ করে আমার চুল খুলে গেলো।আমি ডানহাতটা চুলে রেখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখলাম উনি আমার চুলের ক্লিপটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন।আমি কিছুই বললাম না।আমি হাতটা ভেতরে এনে জানালার সাথে হেলান দিয়ে ঢাকা শহরের রাতের বেলার ঠান্ডা হাওয়া উপভোগ করছি।উনিও চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন।আমি আড়চোখে উনার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছি।
.
প্রায় বিশমিনিট পর আমরা বাসায় পৌছালাম।উনি গাড়ি থেকে নেমে আমার সাইডের দরজা খুলে আমাকে নামালেন।এবার উনি এ্যাপার্টমেন্টের একদম সামনে গাড়ি থামিয়েছেন।উনি গাড়ি লক করে আসলেন ততক্ষণে আমি হাটা শুরু করে দিয়েছে।উনি একপ্রকার দৌড়ে এসে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরলেন।হঠাৎ এরকম করাতে আমি ভয় পেয়ে গেলাম।ভাবলাম কে না কে ধরেছে।উনি আমার কোমড় জড়িয়ে ধরেই লিফ্টের ভেতর ঢুকে পরলেন।
.
আমি উনার কোমড়ে রাখা হাতটা একপ্রকার জোড় করে কোমড় থেকে ছাড়িয়ে ওই হাতের আঙ্গুলের মাঝে আমার আঙ্গুল গুজেঁ দিয়ে উনার কাধের সাথে হেলান দিয়ে দাড়ালাম।উনি অন্যহাত দিয়ে আমার সামনের চুলগুলো সড়িয়ে দিলেন।
.
আমি উনাকে সামান্য ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– একটা কথা বলি?
– ……
– কি হলো?বলি?
– …….
– উফ্!বললাম কিন্তু?
– ……
– ওকে!পারমিশনের দরকার নেই!
– এটাই তো!অলওয়েজ আমার পারমিশন নিয়ে কেনো কথা বলতে হবে!
– ওকে!আর কখনো চাইবো না।
– গুড!এখন বলো কি কথা!
আমি উনার বামহাত টেনে সামনে এনে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম,
– দেখুন,এখন মাত্র আটটা বাজে।
– হুম তো?
আমি মাত্রই বলতে যাবো তখনই লিফ্ট খুলে গেলো।আমি ছোটআম্মুর কাছ থেকে আমাদের ফ্লাটের ডুব্লিকেট চাবিটা নিয়ে ফ্লাটের মেইনডোর খুলে ভেতরে ঢুকলাম।উনি আমার পেছন পেছন ভেতরে ঢুকলেন।আমি উনাকে ড্রইংরুমে বসিয়ে রেখে মাত্রই আমার বেডরুমের দিকে পা বাড়াবো সেই মুহূর্তে উনি আমার হাত ধরে হেচঁকা টান দিয়ে উনার সামনে দাড় করিয়ে বললেন,
– তখন কি যেনো বলছিলে?
.
ওহ্,আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করে বললাম,
– দেখুন,মাত্র বাজেঁ আটটা।ট্রেন ছাড়বে সাড়ে এগোরাটায়,রাইট?
– হুম,তো?
– আমাদের হাতে আরো আড়াইঘন্টা টাইম আছে,হুম?
– হুম!
– তারমানে আমি যদি আধাঘন্টার মতো ঘুমিয়ে থাকি তাহলে তো মনে হচ্ছে না আমরা ট্রেন মিস করবো!কারন দুইঘন্টা কিন্তু অনেক সময়।
– পাগল হয়ে গেছো নাকি তুমি?
– প্লিজ! আচ্ছা,আধাঘন্টা না যাস্ট পনেরো মিনিট ঘুমোবো।এখন যদি আমি না ঘুমাই তাহলে নিশ্চিত ট্রেনের মধ্যে আমি ঘুমিয়ে পরবো।
– তো?সমস্যা কি?ঘুমিয়ে গেলে তো আমি আছি!
আমি মাথাটা নিচু করে বললাম,
– আমি ঘুমিয়ে গেলেই তো আপনি আমাকে ইচ্ছামতো দেখবেন।আজ ট্রেনে আপনি ঘুমাবেন আমি আপনাকে দেখবো!
উনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বেডরুমে একপ্রকার জোড় করে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,
– তুমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছো।……….কথাটা বলেই আমাকে ছেড়ে উনি আমার বেডের উপর আধশোয়া অবস্থায় শুয়ে ফোন বের করে ফোন দেখছেন।আমি উনার কান্ড দেখে বললাম,
– আপনি এখানে কেনো শুয়ে পড়লেন?
– তুমি যাতে ঘুমোতে না পারো তার জন্য।এখন বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি শাড়িটা চেঞ্জ করে রেডি হয়ে নাও।
.
উফ্!কেনো যে বলতে গেলাম!তখন চুপচাপ রুমে ঢুকে রুম লক করে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পরতাম!
.
আমি আর কথা না বাড়িয়ে আলমারি থেকে উনার হোয়াইট পাঞ্জাবির সাথে ম্যাচ করে আমি হোয়াইট কালারের লংকামিজ,হোয়াইট কালার চুড়িদার পায়জামা,ওড়না আর টাওয়ালটা বের করে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবো তখনই উনি বলে উঠলেন,
– টাওয়াল নিচ্ছো কেনো?তুমি কি এখন শাওয়ার নিবে?
– হুম।
উনি চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– আমাদের হাতে একদম সময় নেই।এটা শাওয়ার নেওয়ার টাইম না।তুমি যাওয়ার পর করো প্লিজ এখন যাস্ট হাতমুখটা ধুয়েই চলে আসো।
– নাহ্!আমার অনেক টায়ার্ড লাগছে এখনই আমাকে শাওয়ার নিতে হবে!
.
আমার কথা শুনে উনি তড়িঘড়ি করে বেড থেকে উঠে আমাকে আটকানোর জন্য আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে ঢুকে দরজাটা লক করে দিলাম।উনি দরজা নক করছে আর বলছে,
– হিয়া!সিরিয়াসলি একদম টাইম নেই!
আমি ওয়াশরুম থেকেই চিৎকার করে বললাম,
– বেশি সময় লাগবে না।
– অনলি ফাইভ মিনিট!এর ভেতরে যদি বের না হও আমি কিন্তু ওয়াশরুমের দরজা ভেঙ্গে তোমাকে বের করবো।সে তুমি যেই অবস্থাতেই থাকো না কেনো!পানিশম্যান্ট বাধ্যতামূলক!
.
হঠাৎ উনার এই ধরনের কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।উনার মুখে কিচ্ছু আটকায় না।অসভ্য একটা!
.
উনি অলরেডি এক,দুই গোনা শুরু করে দিয়েছেন।আমি তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে সবকিছু চেঞ্জ করে দরজা খুলতে খুলতে উনার পাচঁ বলা শেষ হয়ে গিয়েছে।পাচঁ এর পর যদি গোনাটা কন্টিনিউ করতেন তাহলে এতক্ষণে ত্রিশ গোনা হয়ে যেতো।দরজা ধাক্কানো অলরেডি দশবার হয়ে গেছে!
.
উনার দরজা ধাক্কানোর শব্দে ভয়ে দরজা খোলার সাহস পাচ্ছি না!বুকের ভেতর ধুকধুক করছে।কিছু করবেন নাতো?
.
– হিয়া….
হঠাৎ উনার ডাক শুনে ভয়ে আস্তে আস্তে দরজা খুললাম।একটু ফাঁকা করে দেখলাম উনি উল্টো ঘুরে দুইহাত দিয়ে চুল বারবার উপরে উঠাচ্ছেন।ভাব দেখে মনে হচ্ছে অসম্ভব রেগে আছেন!উনার সামনেই বেড ছিলো!
আমি আস্তে করে ওয়াশরুম থেকে পা টিপে টিপে বের হয়ে শাড়ি বেডের উপর রেখে একলাফে বেডের উপর দিয়ে লাফিয়ে বেডের অপজিট সাইডে চলে আসলাম।উনি আমার কান্ড দেখে অবাক হয়ে বললেন,
– হিয়া!এটা কি ঠিক করেছো?আধাঘন্টার মতো তুমি ওয়াশরুমেই কাটিয়ে দিলে!
আমি ভয়ে কান ধরে বললাম,
– সরি!আর কখনোই এতো লেট করবো না।
উনি বেড ঘুরে আমার দিকে এগিয়ে আসতেই আমি চিৎকার দিয়ে বললাম,
– সরি!প্লিজ!আমি ভয় পাচ্ছি তো!
আমার কথা উনি না শুনে আমার দিকে আসতে লাগলেন।উনি আমার জায়গায় আসতেই আমি বেডের উপর দিয়ে লাফিয়ে উনার অপজিটে চলে আসলাম।
উনি রেগে চোখ বড় বড় করে আঙ্গুলের ইশারায় বললেন,
– হিয়া!এক পা ও নড়বে না।ওখানেই দাড়িয়ে থাকবে।
– পানিশমেন্ট দিবেন নাতো?
– নাহ্!
– সত্যি?
– হুম!
উনার চোখ বড় বড় করে আগানো দেখে আমি ভয়ে এক পা বেডের উপর তুলবো সেই মুহূর্তে উনি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,
– বললাম না, না নড়তে!
উনার ধমক শুনে ভয়ে কুকঁড়ে গেলাম!উনি বেড ঘুরে আমার দিকে আসতেই আমি ভয়ে চোখ দুটো শক্ত করে বন্ধ করে মাথা নিচু করে দুইহাত দিয়ে কান চেপে ধরলাম।
.
উনি আমার একদম কাছে আছেন আমি টের পাচ্ছি।উফ্!কখন যে কি করে বসেন!হাতপা ভয়ে কাপছেঁ!উনি কিছু করছেন না দেখে আরো বেশি ভয় পাচ্ছি!চোখ খোলার ও সাহস পাচ্ছি না!আমি সাহস নিয়ে একচোখ মিটমিট করে খুলে দেখলাম উনি আমার সামনে নেই!আমি মাথা ঘুরিয়ে পেছনে তাকানোর আগেই আমার কানে কেউ ফুঁ দিলো!
ভয়ে আমি চিৎকার দিয়ে দৌড়ে বেডরুম থেকে বের হবো সেই মুহূর্তে কেউ আমার কোমড় ধরে টান দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
– আমি তো জানতাম ই না আমার বউটা যে এতো ভীতু!
আমি আস্তে করে পেছনে তাকালাম!উনি শয়তানি হাসি ঠোটেঁ নিয়ে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে!
.
উনার এরকম হাসি দেখে আমার ভয় আরো বেড়ে গেলো!শরীরের ভেতর কেমন কেমন যেনো লাগছে!গা শিঁউরে শিঁউরে উঠছে!নিশ্চয় ভয়ে!
.
উনি ডানহাতে আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে বামহাতটা আমার সামনে ধরে হ্যান্ডওয়াচের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– দেখো তো!এগারোটা বাজঁতে আর কতক্ষণ বাকি?
আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম আটটা চল্লিশ বাজে!আমি উনাকে বললাম,
– জানিনা!
– মাইর দিবো একটা!
– আমি ঘড়ি দেখতে পারি না!
– কিহ্!
– সত্যি….
– এ্যাহ্! আসছে!উনি নাকি ঘড়ি দেখতে পারেন না!এখন আমি একটু রোম্যান্স শুরু করি তখন বলবে,দেখুন আমাদের একদম সময় নেই।এগুলো পরেও করতে পারবেন এখন চলুন!
.
উফ্!উনার কথা শুনে রাগে শরীর পুড়ে যাচ্ছে!বজ্জাত একটা!আন্টি ঠিকই বলে আসলেই বজ্জাত!
.
উনি স্বাভাবিকভাবেই পেছন থেকে আমার গালে চুমো খেয়ে বললেন,
– খুব রোম্যান্স করতে ইচ্ছে করছে।
আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে কথাটা বলেই আমার ঘাড়ে চুমো খেতে যাবেন সেইমুহূর্তে আমি অস্পষ্টস্বরে বললাম,
– এখন সত্যিই টাইম নেই এসব করার!
.
আমার কথা শুনে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন।হাসতে হাসতেই বললেন,
– জানতাম,তুমি এই কথাটাই বলবে!
.
আমি একপ্রকার জোড় করে উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে টাওয়ালটা নিয়ে চুল মুছতে মুছতে রুমের বাহিরে চলে এলাম।আম্মুর রুমে এসে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে বসে বসে চুল শুকাচ্ছি।
.
উনি আমার রুমেই আছেন।একা একা কি করছেন কে জানে?
.
আমি হেয়ার ড্রায়ারটা রেখে আম্মুর রুম থেকে বের হয়ে আমার রুমের সামনে যেয়ে রুমের ভেতর একটু উঁকি দিলাম!উনার দিকে চোখ পরতেই চোখ বড় বড় করে ফেললাম!উনি কি যত্ন সহকারে আমার শাড়িটা ভাঁজ করে আলমারিতে রেখে দিলেন!ওয়াশরুমের দরজা লাইট সব অফ করে দিলেন!সবকিছুর প্রতিই উনার কি নিখুঁত কেয়ার!আমি তো শাড়িটা ঠিকঠাক মতো না রেখেই বেরিয়ে পরতাম।
.
উনার সাথে চোখাচোখি হতেই আমি এমন ভাব ধরে রুমে ঢুকলাম মনে হলো রুমে ঢোকার উদ্দেশ্যেই আমি এসেছি।আমাকে দেখে উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
– আবার রুমে ঢুকছো কেনো?রুমে আর কোনো কাজ নেই।সবকিছু গুছিয়ে রেখেছি।এখন চলো।
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?এখনই!
– হুম……বলেই আমার হাত ধরে মেইনডোরের বাহিরে এনে মেইনডোর লক করে চাবিটা আমার হাতে দিয়ে বললেন,
– যাও,দিয়ে এসো!
আমি হা করে কিছুক্ষণ উনার দিকে তাকিয়ে থেকে চাবিটা নিয়ে ছোটআম্মুর কাছে দিয়ে এলাম।
.
আসার সময় সবাইকে বিদায় দিয়ে এলাম।চাচ্চুরা উনাকে মাথায় হাত দিয়ে দোআ করলেন,জড়িয়ে ধরলেন,বোনগুলোর মাথায় উনি হাত দিয়ে আদর করে বিদায় নিলেন।আমিও বোনগুলোকে জড়িয়ে ধরে বিদায় নিলাম।
.
লিফ্টের ভেতর ঢুকে উনি আমার ওড়নাটা দিয়ে আমার মাথা ঢেকে দিলেন!আমার সামনের চুলগুলো কানের পিঠে দিয়ে ওড়নাটা সামনের দিকে একটু টেনে দিলেন!তারপর উনার দুইহাত দিয়ে আমার দুইগাল ধরে কপালে একটা চুমো দিয়ে বললেন,
– একদম পারফেক্ট লাগছে!
.
আমি এতক্ষণ অবাক চোখে উনার দিকে তাকিয়ে রোবটের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনার কান্ড দেখছিলাম!
.
.
(চলবে)