real love পর্ব ৩০,৩১

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part:30+31
.
.
ইয়াশের রুমে ঢুকেই আমি অবাক হয়ে চারপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিলাম!বিভিন্ন শেপের বিভিন্ন কালারের ভিন্ন ভিন্ন বেলুন পুরো ফ্লোরে ছড়িয়ে পড়ে আছে!রুমে বিভিন্ন কালারের লাইট একবার জ্বলছে একবার নিভছে!দেয়ালে আমার আর ইয়াশের বিভিন্ন মোমেন্টের ছবি লাগানো!ইয়াশ চোখবাধা অবস্থায় বেডের উপর বসে আছে!হাতে একটা বেলুন নিয়ে!কানে হেডফোন লাগানো!হয়তোবা গান শুনছে!
ইফাজ আমাকে হাতের ইশারায় এখানেই দাড়িয়ে থাকতে বললেন!উনি কয়েক কদম আগানোর পর হঠাৎ আমার কাছে এসে কপালে একটা চুমো খেয়ে ইয়াশের কাছে যেয়ে বাধনটা খুলে দিলো!ইয়াশ সাথে সাথেই চোখ বন্ধ করেই বলে উঠলো “ভাইয়া আমার গিফ্ট এনেছো?”
.
ইয়াশ হাসতে হাসতে চোখ খোলার সাথে সাথেই ওর চোখ আমার উপর পরলো!আমাকে দেখতে পেয়েই ইয়াশ চোখ বড় বড় করে চিৎকার দিয়ে “ভাবি” বলে একপ্রকার লাফিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলো!ইফাজ দ্রুত এসে আমার কোল থেকে মাহিনকে নিলো!আর একটু হলে তিনজনসহ পড়ে যেতাম!ইয়াশ এমনভাবে আমার কাছে ছুটে এসেছে যে ওর পায়ের নিচে যতগুলো বেলুন পরছিলো সবগুলো ফটফট করে ফুটে গেলো!
.
আমি ইয়াশকে পাঁচকোল করে তুলে নিয়ে কপালে একটা চুমো দিলাম!ইয়াশ আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার গালে একটা চুমো খেয়ে বললো,
– সেই কবে তোমাকে দেখেছিলাম!কথাটা বলেই আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজলো!
অনেক্ষণ ইয়াশ ওভাবেই ছিলো!হঠাৎ ঘাড়ে ভেঁজা কিছু অনুভব হলো!আমি দ্রুত ইয়াশের মুখটা আমার সামনে ধরতেই দেখলাম ইয়াশ কান্না করছে!
– ইয়াশ,সোনা!…কান্না করছো কেনো?দেখো এইযে আমি!আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাবো না!
আমি ইয়াশকে বেডের উপর বসিয়ে ওর সামনে হাটুগেড়ে বসলাম!ইফাজ বেডের উপর শুয়ে মাহিনকে বুকের উপর নিয়ে পিঠে হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াচ্ছে!ইয়াশ কান্না করছে বাট উনার কোনো রিয়েকশন-ই নেই!
.
আমি ইয়াশের চোখের পানি মুছে দিয়ে ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে একদম আস্তে আস্তে ফিসফিস করে বললাম,
– ভাবি আর কোত্থাও যাবে না!প্রমিস!
– সত্যিই তো?
– হুম!
ইয়াশ আমাকে ছেড়ে আমার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে আন্টি আঙ্কেলের রুমে নিয়ে এলো!আঙ্কেল ঘুমোচ্ছিলেন!
.
ইয়াশের কান্ড দেখে আমি ইয়াশের হাত টেনে ধরে বললাম,
– এখানে কেনো?
ইয়াশ কোনো উত্তর না দিয়ে আঙ্কেলের কানের কাছে প্রচন্ড জোরে চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো,
– আব্বুউউউ…..
আঙ্কেল ধড়ফড় করে উঠে বললেন,
– হ্যা…হ্যা…কি…কি হয়েছে?
আমি দ্রুত মাথায় কাপড় দিলাম!আঙ্কেলের কান্ড দেখে আমার প্রচন্ড হাসি পেলো!তবুও চুপচাপ থাকলাম!
.
আমি আঙ্কেলকে সালাম দিলাম!আঙ্কেল চশমাটা চোখে পরে বললেন,
– আরে মা…তুমি কখন এলে?
– একটু আগেই এসেছি আঙ্কেল!
– বসো…বসো!
.
ইয়াশ আঙ্কেলের সামনে আঙ্গুল তুলে বলতে লাগলো,
– তুমি বলেছিলে না,পরেরবার ভাবি আসলে আমাদের বাসায় এনে রাখবে?
ইয়াশের কথা শুনে আঙ্কেল করুণ চোখে ইয়াশের দিকে তাকিয়ে বললেন,
– হুম!এই যে এনেছি তো!
– ভাইয়া তো আর রেখে আসবে না?
– না,একদম না!
– এইবার যদি ভাইয়া নিয়ে যায়!ভাইয়াকে আমি মেরে ফেলবো,হুম!
ইয়াশের কথা শুনে আঙ্কেলের মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো!আঙ্কেলের হাসি পেলো না তবুও হাসার চেষ্টা করলেন!
.
ইয়াশ আঙ্কেলকে আর কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমাকে নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে ওর রুমে চলে এলো!ইফাজ চোখ বন্ধ করে আছে হয়তোবা ঘুমিয়ে পরেছে!মাহিন ইফাজের বুকের উপরই ঘুমিয়ে পরেছে!
আমি বেডে যেয়ে চুপচাপ বসে পরলাম!ইয়াশ ইফাজের রুমে গেলো ল্যাপটপ আনতে!হঠাৎ আমার শাড়ির আঁচলে টান পরলো!আমি পাশফিরে তাকিয়ে দেখলাম উনি আচঁল ধরে টানছেন!
– টিয়াপাখি!আজ আর তোমার রেহাই নেই!ইয়াশ বিয়ে দিয়েই ছাড়বে!আহ্….কাল বাসর করার জন্য রেডি থেকো!
আমি উনার হাতে একটা থাপ্পড় দিয়ে শাড়ির আঁচলটা উনার হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলাম!
ইয়াশ একহাতে ল্যাপটপ আর অন্যহাতে কেক নিয়ে রুমে ঢুকলো!ল্যাপটপটা বেডসাইড টেবিলে রেখে কেকটা বেডের একদম মাঝখানে রাখলো!আমাকে বেডের উপর পা তুলে বসতে বললো!ইয়াশের কথামতো আমি পা তুলে বসলাম!ইয়াশ নাইফ নিয়ে এসে আমার সামনে বসে নাইফের উপর আমার হাত রাখতে বললো!আমি ইয়াশের হাতের উপর আমার হাত রেখে উইশ করতে করতে কেকটা কাটলাম!
.
একটুকরো কেক তুলে ইয়াশকে খাইয়ে দিলাম!ইয়াশও আমাকে খাইয়ে দিলো!
আমি আরেকটুকরো কেক তুলে ইফাজের মুখের সামনে ধরে বললাম,
– দেখি…হা করুন!
– আমি কেক খাই না!
– কিহ্!
– সিরিয়াসলি খাই না!
– ঢং……
বলেই আমি একহাত দিয়ে উনার গাল চেপে ধরে পুরো কেকটুকু মুখে পুড়ে দিলাম!
উনি খেতে খেতে বললেন,
– এটাই তো চেয়েছিলাম,ইয়াশের ভাবি আমাকে জোর করুক সবকিছু নিয়ে!
উনার কথাটা শুনে আমি অবাক হয়ে অন্যদিকে তাকালাম!ইয়াশ অনেকখানি কেক নিয়ে ইফাজকে খাইয়ে দিলো!
.
.
সন্ধ্যের দিকে আমি আপুর রুমে বসে বসে আপুর সাথে গল্প করছিলাম!ইয়াশ আর মাহিন সাইডেই খেলছিলো!হঠাৎ ইফাজ রুমে ঢুকে পরলো!আমার পাশে বসে উনি আপুর হাত ধরে সামনে টান দিয়ে তিনজনের মাথা একসাথে করে ফিসফিস করে বললেন,
– আব্বু আমার শ্বশুর-শ্বাশুরীকে ফোন করে ডেকেছেন!উনাদের বর্তমানে এই বাড়িতে একটা গোপন স্থানে লুকিয়ে রাখা হয়েছে!আব্বু তাদেরকে দেখাতে চায় হিয়ার জন্য ইয়াশ ঠিক কতটা পাগল!আব্বু অনেক বুঝানোর পরও নাকি আমার শ্বশুরআব্বা বুঝতে চাননি।যারজন্য এই প্লান করা হয়েছে!
.
ইফাজের কথা শুনে আমি আর আপু দুইজনই অবাক হয়ে একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম!
উনি দ্রুত আমার পাশ থেকে উঠে আমার হাত টেনে নিচে নামিয়ে জোরে জোরে ইয়াশকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললেন,
– হিয়া…দেরি হয়ে যাচ্ছে!তাড়াতাড়ি চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসতে হবে!
ইয়াশ লাফ দিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ইয়াশের হাতে মারতে মারতে বললো,
– ভাইয়া ছাড়ো!আব্বুকে বলে দিবো কিন্তু!
ইফাজ ইয়াশের কথায় পাত্তা না দিয়ে আমাকে হাত ধরে আপুর রুম থেকে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলো!ইয়াশ ইচ্ছামতো ইফাজকে মারছে!আমার হাত টেনে ইয়াশ আমাকে উপরে উঠানোর চেষ্টা করছে!
ইফাজ আমাকে নিচে নামাতে নামাতে আস্তে করে বললো,
– শাড়ির দিকে খেয়াল রেখো!

Part: 31
.
ইফাজ আমাকে সিঁড়ি দিয়ে নামাতেই পারছে না!তবুও চেষ্টা করে গেলো!একপর্যায়ে ড্রইংরুমের সোফার কাছে আমাকে আনতেই ইয়াশ ইফাজকে খাঁমচাতে শুরু করলো!আঙ্কেল সোফায় বসে ঢং করে পেপার পড়ছিলো!আন্টি,মনি আর আপু কিচেনে লুকিয়ে লুকিয়ে ইয়াশের কান্ড দেখছিলো আর হাসছিলো!
.
ইয়াশ ইফাজকে থামাতেই পারছে না!ইয়াশ দ্রুত মেইনডোরের সামনে দাড়িয়ে পরলো!দুইদিকে হাত প্রসারিত করে চিৎকার করে আঙ্কেলকে ডাকতে লাগলো!আঙ্কেল কোনো পাত্তাই দিচ্ছেন না!পেপার থেকে চোখ সরাচ্ছেন-ই না!ইফাজ ইয়াশের সামনে দাড়িয়ে বললো,
– ইয়াশ,সরে দাড়াও!ভাবির দেরি হয়ে যাচ্ছে!
ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো!আমি আর সহ্য করতে পারলাম না!আমি নিজের হাত ইফাজের হাতের মুঠো থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইয়াশের সামনে বসে ইয়াশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম!ইয়াশ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে!
.
ইফাজ তবুও এক্টিং করা বন্ধ করলো না।উনি ইয়াশের কাছ থেকে আমাকে ছাড়িয়ে নিতেই ইয়াশ দৌড়ে আঙ্কেলের কাছে যেয়ে আঙ্কেলের হাত থেকে পেপারটা নিয়ে টেনে টেনে ছিঁড়তে লাগলো আর আঙ্কেলের মুখের উপর ঢিল মারতে শুরু করলো!
.
আমি উনার হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ইয়াশের কাছে যেয়ে ইয়াশকে পাঁচকোল করে তুলে নিয়ে ইয়াশের রুমে চলে এলাম!ইয়াশ আমাকে জড়িয়ে ধরেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে আর জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলছে!
আমি ওকে কোলে নিয়েই বেডের উপর বসে বেডসাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে ওর মুখের সামনে গ্লাসটা ধরতেই এক নিশ্বাসে সবটুকু পানি শেষ করলো!
গ্লাসটা রেখে দিয়ে আমি ইয়াশকে বুকের সাথে কিছুক্ষণ চেপে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করলাম!ইয়াশ চোখ বন্ধ করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে!আমি ইয়াশকে নিয়ে বেডের উপর পা তুলে উঠে বসলাম!
.
প্রায় অনেক্ষণ ইয়াশের কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না!ঘুমিয়ে পরলো নাকি?আমি ইয়াশের গালে হাত দিয়ে ইয়াশকে ডাকার সাথে সাথেই ইয়াশ মিটমিট করে চোখ খুললো!আস্তে করে আমার কোল থেকে নেমে বালিশের উপর শুয়ে পরলো!পাশের বালিশে হাত রেখে ইশারায় আমাকে পাশের বালিশটাতে শুতে বললো!আমি ইয়াশের পাশে শোয়ার সাথে সাথেই আমাকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলো!আমিও ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে ইয়াশের মাথায় হাত বুলাতে লাগলাম!
.
.
প্রায় দেড়ঘন্টা পর ইফাজ আমাকে ডাকতেই আমি চোখ খুললাম।ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ ঘুমোচ্ছে।ওর সাথে সাথে আমি যে কখন ঘুমিয়ে পরেছি খেয়াল-ই করিনি।
আমি উনার দিকে তাকাতেই উনি আমাকে ইশারায় উঠে আসতে বললেন।আমি ইশারায় উনাকে বুঝালাম “সম্ভব না!”
ইয়াশ আমাকে অনেক শক্ত করে ধরে ঘুমোচ্ছিলো!আমার কোমড় থেকে হাতটা ছাড়াতে গেলেই উঠে পড়তো সিওর!আমি উনাকে রুম থেকে ইশারায় চলে যেতে বলে চোখ আবার বন্ধ করলাম!
হঠাৎ উনি আমার বন্ধ চোখে একটা চুমো খেয়ে বললেন,
– আন্টি আঙ্কেল তোমাকে নিয়ে যেতে চাচ্ছিলো!তাই ডাকতে আসলাম!আমাদের বিয়ের কথাবার্তা চলছে!শ্বশুরমশাই আমার দোটানায় পরেছেন!আমার এই বাবুবউটাকে এই পিচ্চি বয়সে আমার কাছে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন!
কথাগুলো বলেই উনি দুষ্টুহাসি দিলেন!আমি দ্রুত উনার থেকে চোখ সরিয়ে নিলাম!ইয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইয়াশ অঘোরে ঘুমোচ্ছে।
হঠাৎ উনি আমার কোমড় থেকে ইয়াশের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন!আমি দ্রুত উনার হাতটা চেপে ধরে বললাম,
– উঠে গেলে ঝামেলা হবে কিন্তু!
– সাবধানে করছি তো!
উনি অনেক সাবধানে হাতটা সরাতেই ইয়াশ নড়ে উঠলো!আমি দ্রুত ইয়াশকে আগের মতো জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরলাম!ইয়াশও ঘুমের ঘোরে আগের ন্যায় জড়িয়ে ধরলো!
.
আমার কান্ড দেখে উনি অবাক হয়ে কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে হতাশ হয়ে রুম থেকে চলে গেলেন!যাওয়ার সময় বলে গেলেন,
– এদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ইয়াশের স্কুল টাইমে আমাকে বাসর করতে হবে!ইম্পসিবল…!!!
উনার কথাটা শুনে আমার প্রচন্ড হাসি পেলো!আমি শব্দহীনভাবে কিছুক্ষণ হাসলাম!
.
কিছুক্ষণ পর আন্টি আর আপু রুমে ঢুকে ইয়াশকে কোনোরকমে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আমার জায়গায় আপু শুয়ে পরলো!
আপুর কান্ড দেখে আমি তো অবাক! আন্টি আমার হাত ধরে আস্তে করে বেড থেকে নামিয়ে বললেন,
– ইয়াশকে বুঝানো হবে তুমি চিটাগাং চলে গিয়েছো!
আন্টির কথা শুনে আমি অবাক কন্ঠে আন্টিকে বললাম,
– আন্টি….আমার কিন্তু ভয় করছে!
– আর কিছুদিন এভাবে কষ্ট করতে হবে!তোমার বাবা এখনই তোমাকে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন না!
আন্টির কথাটা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো!আজ ইয়াশের কান্না দেখেও আব্বু আমার পড়াশোনা থেকে মন সরাতে পারছে না!আমাকে অনার্স পাশ করিয়েই ছাড়বে!ওহ্ মাই গড….আরো চার বছর!কোনোভাবেই সম্ভব নয়।বাসায় যেয়ে আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।
.
আন্টি আমাকে ড্রইংরুমে নিয়ে আসলেন।আব্বু আম্মু ড্রইংরুমেই বসে ছিলো।আঙ্কেলও ছিলেন সাথে।আমাকে দেখেই আব্বু আম্মু উঠে দাড়ালো!আম্মু আমার কাছে এসে আন্টির সাথে ভালোমন্দ কথা বলে বিদায় নিলেন।আব্বু আর আঙ্কেল হ্যান্ডশেক করে দুজন হাটতে শুরু করলেন।আমি আন্টিকে সালাম দিয়ে আম্মুর সাথে চলে এলাম।
.
ইফাজকে একটাবারও দেখতে পেলাম না।
মেইনডোরের বাহিরে এসে আমি আম্মুকে আস্তে করে বললাম,
– আমাকে আগে বিয়ে দিলে সমস্যা কি হতো?দেখলেই তো তখন কি অবস্থা করছিলো ইয়াশ!এখন যদি ইয়াশ ঘুম থেকে উঠে আমাকে দেখতে না পায়,বুঝতে পারছো তো কি হবে?
আম্মু অসহায়ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোর বাবাকে কি বিয়ের কথাটা পাঁকা করে যেতে বলবো?আমারও মনটা কেমন যেনো করছে!মনে হচ্ছে কিছু একটা ভুল করে রেখে এসেছি!
.
আম্মুর কথা শুনে আমি উৎফুল্ল কন্ঠে আম্মুকে বললাম,
– ডাকবো আব্বুকে?
– ডাক….
আম্মুর পারমিশন পেয়ে আমি আর একমুহূর্তও অপেক্ষা না করে পেছন থেকে আব্বুকে ডাকলাম।আমার ডাকে আব্বু আঙ্কেল দুজনই পেছন ফিরে তাকালো!আমি দ্রুত আব্বুর কাছে যেয়ে বললাম,
– আব্বু,আম্মু তোমার সাথে কিছু কথা বলবে!
আব্বু আম্মুর কাছে চলে গেলো।আমি আঙ্কেলের কাছে যেয়ে দুষ্টুমি করে বললাম,
– আঙ্কেল,ইয়াশ ঘুম থেকে উঠার পর কি করবে?
আঙ্কেল ভীত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– জানিনা মা!তবে আমাকে যে আজ শেষ করবে এটা শিওর আমি!ভাবছি আর বাড়িতেই ফিরবো না!ওরাই সামলাক ও’কে!
আঙ্কেলের কথা শুনে আমার হাসি পেলো!আমি হেসেই বললাম,
– কাউকে সামলাতে হবে না আঙ্কেল!আমি আম্মুর সাথে কথা বলেছি,আম্মু চাচ্ছে বিয়েটা আগেই হোক!ডিসিশন আবার চেঞ্জ হতে পারে!আম্মু আব্বুকে বুঝালে ঠিক বুঝবে!
.
আমার কথাটা শুনে আঙ্কেল চোখ বড় বড় করে বললেন,
– বাঁচালে মা!আমি তো এতক্ষণ কি রেখে কি ভেবেছি ভাবতে পারবে না!চারটা বছর কম কথা না!
আঙ্কেল কথা বলতে বলতেই আমার হাতে টোকা দিয়ে হাত ইশারায় ছাদের দিকে তাকাতে বললেন!
আমি ছাদের দিকে তাকাতেই দেখলাম ইফাজ উল্টো ঘুরে দাড়িয়ে আছেন।আঙ্কেল উনার দিকে তাকিয়ে থেকে বলতে লাগলেন,
– যখন বেয়াই বললেন অনার্স কমপ্লিট করার আগে তোমার বিয়ে দেবেন না!তখনই ও সোফা ছেড়ে উঠে উপরে চলে গিয়েছিলো!
আমি আঙ্কেলের কথাগুলো শুনছি আর হা করে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!
.
কিছুক্ষণ পর আব্বু এসে সরাসরি আঙ্কেলকে জড়িয়ে ধরে সরি বললো!আব্বুর কান্ড দেখে তো আমি রীতিমতো অবাক!আম্মু দূরে দাড়িয়ে হাসছে!আমি আম্মুর কাছে যেয়ে বললাম,
– আব্বু রাজি?
আম্মু হাসতে হাসতে বললো,
– হুম!
আমি আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমো খেয়ে ইশারায় ছাদের দিকে তাকাতে বললাম!আম্মু ছাদের দিকে তাকিয়েই বললো,
– ইফাজ না?
– হুম!উনাকে খবরটা দিয়ে আসি?
– যা……
.
আমি দ্রুত বাড়িতে ঢুকে আশেপাশে তাকালাম।আন্টিকে দেখতে পেলাম না!আন্টি মনে হয় এতক্ষণে ইয়াশকে নিয়ে চিন্তা করতে করতে শেষ!আমি দ্রুত উপরে উঠে ইয়াশের রুমে ঢুকতেই দেখলাম আন্টি আর আপু দুইজন ইয়াশের দুইপাশে শুয়ে আছে।আমি পা টিপে টিপে আন্টির কাছে যেতেই আন্টি আমাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন!আন্টির কানের কাছে যেয়ে আমি ফিসফিস করে বললাম,
– আব্বু আম্মু নিচে ওয়েট করছে!বিয়ের কথা পাঁকা করতে আবার ব্যাক করলো!
আমার কথাটা শুনে আন্টি হতভম্ব হয়ে বেড ছেড়ে নেমে দ্রুত নিচে চলে গেলেন!আমি ছাদের
দিকে পা বাড়ালাম!
.
উনি রেলিং এর সাথে হেলান দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে ছিলেন!উনার মুখোমুখি ছাদের দরজাটা ছিলো!তবুও উনি দরজার দিকে তাকালেন না!হয়তোবা এখনো আমাকে দেখেন-ই নি!
আমি বুকে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ জোরে জোরে নিশ্বাস নিলাম!তারপর আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে উনার দিকে এগোতে থাকলাম!উনি তবুও তাকাচ্ছেন না!এতো কাছে চলে এসেছি তারপরও উনার চোখ পরছেই না আমার দিকে!আর কয়েক কদম এগুলেই উনার একদম কাছে চলে যাবো!উনি একধ্যানে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন!
.
আমি আরেক পা মাত্রই বাড়াবো সেই মুহূর্তে উনি দৌড়ে এসে আমাকে পুরো নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন!আমি চমকে উঠে সাথে সাথেই জোরে একটা চিৎকার দিলাম!উনি দ্রুত আমার মুখ চেপে ধরলেন!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here