real love পর্ব ২৯

#Real_Love♥
#Oniya_Chowdhury
Part:29
.
.
উনি পুরো স্তব্ধ!না কোনো কথা বলছেন! আর না চোখের পলক ফেলছেন!আমি লজ্জায় মাথানিচু করে বললাম,
– আমি ব্যাথা পাবো দেখে আম্মু ঢিলে করে বেধে দিয়েছিলো!কিন্তু এখন দেখছি শাড়িটায় বোধহয় খুলে যাবে!
.
আমি শাড়ির কুচির কাছে আমার হাতের তালু দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখেছিলাম!উনি আমার হাতটা সরাতেই আমি আঁৎকে উঠে বললাম,
– আমি একাই পারবো!
উনি হাতটা না সরিয়ে বললেন,
– পারবে না একা!
– পারবো!
– ওকে…..
বলেই উনি হাতটা সরিয়ে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বললেন,
– দশমিনিট দিলাম!
.
আমি দ্রুত শাড়ীর কুচিগুলো বের করে একহাত দিয়ে ধরে রাখলাম!আমার আর একটা হাত বাকি!কিভাবে কি করবো একহাত দিয়ে?নাড়টা খুলে শক্ত করে বাধবো কিভাবে?মাথা কাজ করছে না!আমি আস্তে করে শাড়ির কুচিগুলো কোলের মধ্যে রেখে পেটিকটের নাড়টা যেই খুলে শক্ত করে বাধতে যাবো পিচ্ছিল শাড়ি হওয়াতে কুচিগুলো পিচঁলে নিচে পড়ে গেলো!আমি একগিট দিয়েই দ্রুত কুঁচিগুলো তুলে ঠিক করার আগেই উনি জানালা দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– দশমিনিট শে……ওহ্ মাই গড!!!অর্ধেক শাড়িখোলা অলরেডি শেষ!
আমি নিরুপায় হয়ে লজ্জামাখা মুখে উনার দিকে তাকালাম!উনি এসে সিটে বসে বললেন,
– দাও!বাকি অর্ধেক আমি খুলে দিচ্ছি!
হঠাৎ উনার মুখে এরকম কথা শুনে লজ্জায় আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে!অসভ্য ছেলে!মুখে কিছু আটকায় না!
.
উনি আমার হাত থেকে এলোমেলো কুঁচিগুলো ধরে বললেন,
– নাও!আগে আসলটা ঠিক করো!
উনার কথা শুনে আমি মাথা নিচু করে বললাম,
– সামনে তাকান!
আমার কথা শুনে উনি বললেন,
– সামনেই তো তাকিয়ে আছি!
– উফ্!ওইদিকে তাকাতে বলেছি!
.
উনি গাড়ির সামনের দিকে তাকালেন!আমি দ্রুত পেটিকটের নাড়টা শক্ত করে গিট দিলাম!বেশি টাইট হয়ে গেলো মনে হচ্ছে!থাকুক,এইরকম ভারি শাড়িগুলোর সাথে এভাবেই গিট দেওয়া উচিৎ!
.
– এবার তাকান!
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– ভালো করে গিট দিয়েছো তো?রাস্তার মধ্যে খুলে গেলে কিন্তু কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে!
কথাটা বলেই উনি দুষ্টুহাসি দিলেন!
আমি চোখ রাঙ্গিয়ে উনার হাত থেকে কুঁচিগুলো যেই নিতে যাবো উনি হাত সরিয়ে বললেন,
– পারবে না!
বলেই উনি নিজে কুঁচিগুলো সমানভাবে ঠিক করতে করতে বললেন,
– পুরুষ মানুষ বলে কি ভেবেছো মেয়েদের কোনোকিছু সম্পর্কে ধারণা নেই?
আমি কিছুই বললাম না!উনি আবার বললেন,
– হাত মাত্র দুটো!সে কিনা আমাকে নামিয়ে দিয়ে পেটিকোট,শাড়ি একসাথে ব্যালেন্স করে ঠিক করবে!ভাবা যায়?
আমি চুপচাপ উনার কথাগুলো গিলছি!কিচ্ছু বলতে পারছি না!
.
উনি কুঁচিগুলো একসাথে করে বললেন,
– নাও!
আমি উনার হাত থেকে কুঁচিগুলো নিয়ে গুজতে লাগলাম!
নাহ্,গিটটা সত্যিই টাইট হয়ে গেছে!কুঁচিগুলো ভেতরে ঢুকাতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে!
.
আমি আঁচলটা ঠিক করে ঠিকঠাক হয়ে বসলাম!উনি সিটের সাথে হেলান দিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে থাকলেন!
উনি এভাবে চোখ বন্ধ করে কি ভাবছেন আল্লাহ্ই ভালো জানেন!
.
আমি সিটের সাথে হেলান দিয়ে উনার দিকে তাকিয়ে আছি!অনেক্ষণ হয়ে গেলো তবুও চোখ খুলছেন না!আমি আমার ফোনের ক্যামেরা অন করে উনার একটা পিক তুলে নিলাম!ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলেনি বলে উনি টের পাননি কিছু!
আমি ফোনটা সামনে রেখে দিয়ে উনাকে আস্তে করে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
– এভাবে চোখ বন্ধ করে আছেন কেনো?
উনি চোখ খুলে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– এমনি!
– ওহ্!
.
উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন!অনেক স্প্রিডে গাড়ি চালাচ্ছেন!আমি উনার কান্ড দেখে ধমক দিয়ে বললাম,
– এতো স্প্রিডে কেনো গাড়ি চালাচ্ছেন? এক্সসিডেন্ট হয়ে গেলে তখন কি করবেন?
– কি আর করবো!মরে যাবো!
হঠাৎ উনার এরকম কথা শুনে আমি উনার শার্টের কলার ধরে আমার দিকে টান দিতেই উনি গাড়ি ব্রেক করলেন!
আমি সাথে সাথেই ছেড়ে দিলাম!এমনভাবে তাকালেন আমার দিকে ভয় পেয়ে গিয়েছি!
.
– কি হলো?ছাড়লে কেনো?
– মরার কথা আর কখনো বলবেন না!আর গাড়ি আস্তে চালান!
উনি আমার কথা শুনে সামান্য হেসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে একটা গান প্লে করলেন!
.
তুমি আমার এমন-ই একজন
যারে একজনমে ভালোবেসে
ভরবে না এ-মন
একজনমের ভালোবাসা
একজনমের কাছে আসা
একটি চোখের পলক পরতে
লাগে যতক্ষণ…..
.
ভীষন বিরক্ত লাগছিলো গানটা শুনতে!এইরকম একটা মোমেন্টে এরকম একটা স্যাডমুডের সং তাও আবার আদিমযুগের!পায় কোত্থেকে উনি?
গানটা এখনও চলছে!আমি কান চেপে ধরে বসে আছি!উনি আমার হাত টেনে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছেন!
আমি খুবই নরমস্বরে উনাকে জিঙ্গেস করলাম,
– আপনার কি মন খারাপ?
উনি আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন,
– হুম!
– কেনো?
– এখনো ব্যাচেলর বলে!
উনার কথাটা শুনেই আমি কেঁশে উঠলাম!
আমি কিছুটা বিরক্ত নিয়ে বললাম,
– গানটা প্লিজ বন্ধ করুন!বিরক্ত লাগছে খুব!
– আমার তো ভালোই লাগছে!বুঝলে, আদিমযুগের গানগুলোতে অন্যরকম একটা রোম্যান্টিকতার ছোয়া থাকে!যেটা সবাই বোঝে না!এই যে তুমি যেমন বুঝতে পারছো না!
কথাটা বলেই উনি আমার হাতটা উনার বুকে চেপে ধরলেন!আমি বামহাত দিয়ে গানটা অফ করলাম!
.
উনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
– বলো তো,আমরা কোথায় যাচ্ছি?
– জানি নাতো!
– আমরা যাচ্ছি ইয়াশকে সারপ্রাইজ দিতে!
– কিসের সারপ্রাইজ!
– আমি ইয়াশকে কথা দিয়েছিলাম ওর বার্থডেতে আমি ওকে ওর সবথেকে পছন্দের গিফ্টটা এনে দেবো!তুমি-ই হলে আমার দেওয়া ইয়াশের জন্য বেস্ট গিফ্ট!ইয়াশের কাল বার্থডে ছিলো!তোমাকে কালই নিয়ে আসতাম বাট তুমি রেজাল্ট নিয়ে অনেক টেনশনে ছিলে যারজন্য তোমাকে বলি নি!ইয়াশ কাল অবশ্য রাগ করেছিলো আমি কোনো গিফ্ট দেই নি!বাট কাল কথা দিয়েছিলাম আজ মাষ্ট ওর গিফ্ট ওকে দেবো!
.
উনার কথাটা শুনে আমি চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম!উনাকে খুন করতে ইচ্ছে করছে এইমুহূর্তে!ইয়াশের কাল বার্থডে ছিলো অথচ এই কথাটা উনি আমাকে কাল বলেন নি!খারাপ দেখেছি উনার মতো এতো খারাপ জীবনে দেখিনি!অসভ্য একটা!
উনি নিজেও জানেন আমি ইয়াশকে কতটা ভালোবাসি তারপরও এরকম একটা কাজ করলেন!একটা গিফ্ট পর্যন্ত নেই আমার সাথে!
নিজের চুল নিজেরই টেনে ছিঁড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে!আমি রাগে আমার হাতটা উনার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে জানালার দিকে ঘেষে বসলাম!
.
উনি আমার ডানহাত ধরে উনার দিকে ঘুরানোর চেষ্টা করলেন!কিন্তু আমি একটুও নড়লাম না!
– দেখি,তাকাও এদিকে!
আমি উনার হাতটা আমার হাতের উপর থেকে সরিয়ে শাড়ির আঁচলটা মাথায় দিয়ে মুখটা ঢেকে সিটের সাথে হেলান দিয়ে অন্যপাশ হয়ে বসে রইলাম!
.
আমার কান্ড দেখে উনি শব্দ করে হাসছেন!আমি তবুও তাকাচ্ছি না!
উনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন,
– টিয়াপাখি, তোমার তো সুঁড়সুঁড়ি অনেক,তাই না?
উনার কথাটা শুনে আমি উনার দিকে তাকানোর সাথে সাথেই আমার দিকে আগানো উনার বামহাতটা দ্রুত ধরে ফেললাম!
আমার কান্ড দেখে উনি হো হো করে হেসে উঠলেন!
.
.
গাড়ি গেইট দিয়ে ঢুকিয়ে উনাদের বাড়ির সামনে থামালেন!
উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে নামিয়ে বললেন,
– চলো!
বলেই আমার কোমড় জড়িয়ে ধরে হাটতে শুরু করলেন!আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করলে উনি সুঁড়সুঁড়ি দিয়ে আমাকে থামাচ্ছেন!
.
মেইনডোরের সামনে অনেকক্ষণ চুপচাপ দাড়িয়ে থেকে কলিংবেল চাপলেন!মনি মেইনডোর খোলার সাথে সাথেই উনি আমাকে ছেড়ে সোজা হয়ে দাড়ালেন!উনি মনিকে ইশারায় কিছু একটা বললেন!মনি আমাদের বাহিরে দাড় করিয়ে রেখে দ্রুত ভেতরে চলে গেলো!প্রায় পাচঁমিনিট পর আবার ব্যাক করে বললো,
– ডান!
ইফাজ আমার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে ঢুকলো!আপুকে দেখলাম বাবুকে নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছেন! আমাকে দেখে আপু করে উঠে এসে বললেন,
– কত্তদিন পর দেখলাম তোমাকে!কেমন আছো?
– জ্বী ভালো!
আমি আপুর কোল থেকে বাবুকে নিয়ে বললাম,
– ইয়াশ কোথায়?
পাশ থেকে ইফাজ উত্তর দিলো,
– উপরে রুমে চোখ বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে!
আমি অবাক হয়ে বললাম,
– মানে?চোখ কেনো বেধে রেখেছেন?
– ও’কে সারপ্রাইজ দেবো বলে!তোমাকে ওর সামনে দাড় করিয়ে রেখে পেছন থেকে আমি বাধন খুলে দেবো!রুমে একটা ক্যামেরা লাগানো হয়েছে!ইয়াশের এ্যাক্সাইটমেন্টের রিয়েকশনটা ক্যামেরা বন্দী করা হবে!ইয়াশ নিশ্চয় এতক্ষণে ছটফট করা শুরু করেছে, চলো তাড়াতাড়ি!
উনার কথাগুলো শেষ হওয়ার পর আপু হাসতে হাসতে কিচেনে চলে গেলেন আন্টির কাছে!আমি দ্রুত ইয়াশের কাছে যাওয়ার জন্য বাবুকে কোলে করে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতেই শাড়ির কুঁচিতে পা পড়লো!পাশ থেকে উনি আস্তে করে শাড়ির কুঁচিগুলো হালকা উপরে তুলে ধরে বললেন,
– আবার শাড়ি খুলে ফেলার মতলব করছো নাকি!এবার খুলে ফেললে কিন্তু আমার মানসম্মান থাকবে না!নাও ধরেছি!আস্তে আস্তে উঠো!
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here