#The_Terrible_Lover
#অদ্রিতা_জান্নাত
#পর্ব__১৬
প্রায় বিশ মিনিট পর গন্তব্যস্থলে পৌঁছালাম ৷ ভাড়া মিটিয়ে একপ্রকার দৌঁড়ে ভিতরে এলাম ৷ আশেপাশে তাকিয়ে ওদেরকে খুঁজতে লাগলাম ৷ একটা দূরের টেবিলে পাশাপাশি বসে আছে ৷ ওরা আমাকে দেখেছে তাই হাতের ইশারায় তাদের কাছে যেতে বললো ৷
আমি তাড়াতাড়ি গিয়ে নিধিকে জড়িয়ে ধরে বললাম,,,
কাশফিয়া : কতদিন পর দেখলাম তোকে!
নিধি : আমিও ৷ নে বস এখানে ৷
ওদের সামনের একটা চেয়ারে বসলাম ৷ তারপর বললাম,,,
কাশফিয়া : সরি সরি ৷ দেরি হয়ে গেল আসতে ৷
জয় : সমস্যা নেই ৷ একটু আগেই এসেছি আমরা ৷
কাশফিয়া : তো নিধি, ভাইয়া কেমন আছেন আপনারা?
জয় : আলহামদুলিল্লাহ তুমি?
কাশফিয়া : এইতো আছি ৷
জয় : তো কি খাবে বলো? এখানে তো কফি ছাড়া কিছুই নেই ৷
কাশফিয়া : না না কিছু লাগবে না আমার ৷
জয় : আরে বলো না ৷
কাশফিয়া : যেটা খাওয়াবেন ভাইয়া ৷ তবে আজ নয় অন্য এক দিন ৷
জয় : আচ্ছা ঠিক আছে ৷ কিসের জন্য ডেকেছো আমায়?
কাশফিয়া : আসলে ভাইয়া কিছু কথা জানার আছে আমার ৷
জয় : কি রকম কথা?
কাশফিয়া : আরিহানের ব্যাপারে ৷
জয় : মানে?
কাশফিয়া : ভাইয়া আমি সব সত্যিটা জানতে চাই ৷ প্লিজ না করবেন না ৷ যা জানেন সবটা আমায় বলবেন প্লিজ ৷
জয় : আরিহানের ব্যাপারে কি জানতে চাও? বুঝতেছি না ৷
কাশফিয়া : সায়ান আর আরিহানের মা বাবার সম্পর্কে৷
আমার কথাটা শুনে ওনার মুখটা চুপসে গেলো ৷ নিধির হাত ধরে উঠে বললো,,,
জয় : চলো নিধি ৷
কাশফিয়া : ভাইয়া প্লিজ যাবেন না ৷ আমার কথাটা তো শুনুন ৷
জয় : সরি এই বিষয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না আমি ৷
নিধি : কেন পারবে না? ওকে সবটা বলো জয় ৷
জয় : কারন আছে তাই পারবো না ৷ অন্য কথা থাকলে বলো ৷
কাশফিয়া : কি কারন ভাইয়া আমি কি জানতে পারি না?
জয় ভাইয়া চুপ করে রইলেন ৷
কাশফিয়া : প্লিজ বলুন ৷ আমার জানা খুব দরকার ৷
জয় : কিসের জন্য দরকার?
কাশফিয়া : আমি আরিহানের স্ত্রী ৷ ওনার সম্পর্কে জানার অধিকার আছে আমার ৷
জয় : আরিহানকে নিজের স্বামী মানো তুমি?
মাথা নিচু করে চুপ করে রইলাম ৷ এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবো আমি? এর উত্তর তো আমার কাছেই নেই ৷
জয় : কি হলো বলো?
কাশফিয়া : কি এমন কথা যেটা বলতে চাচ্ছেন না ৷ কি এমন কারণ? আমি কি জানতে পারি না? জানলে কি কোনো ভুল করবো আমি? কেন বলছেন না এসব আমাকে?…আচ্ছা লাগবে না ৷ আসছি আমি ৷
উঠে চলে যেতে নিলেই নিধি হাত ধরলো ৷ সামনে এসে বললো,,,,
নিধি : তুই অনেক বদলে গেছিস রে?
ওর কথাটা ঠিক বুঝলাম না ৷ হঠাৎ এরকম কথার মানে কি?
আমাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে নিধি জয়কে বললো,,,,,
নিধি : যা জানো সবটা বলো ৷ আমিও জানতে চাই ৷
জয় : নিধি তুমি…
নিধি : সবটা আজ বলবে? নাকি আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো কোনটা?
জয় : নিধি?
নিধি : সবটা ক্লিয়ার করো কাশফিয়ার কাছে ৷
জয় ভাইয়া চুপ করে রইলেন ৷
নিধি : জয় প্লিজ সবটা বলো ৷
জয় : ঠিক আছে বলছি ৷ তবে সবার মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করো না ৷ শুধু আমাকে একটা কথা বলো ৷ কাশফিয়া সায়ানকে চিনে কিভাবে?
কাশফিয়া : সায়ান আমার ফুপাতো ভাই ৷ ভাইয়া আজ আমাকে সবটা বলুন প্লিজ ৷ যা হবার হবে ৷ সবটা খুলে বলুন ৷
জয় ভাইয়া নিজের মধ্যে একটা শ্বাস নিয়ে বলা শুরু করলেন,,,,,,,,,,,
জয় : আরিহান, সায়ান আর আমি আমরা তিনজন কলেজ লাইফের বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম ৷ আরিহানের সাথে আমার আগে থেকেই পরিচয় ছিল ৷ কিন্তু সায়ানের সাথে আমাদের কলেজেই প্রথম পরিচয় হয়েছে ৷ আমরা তিনজন যা করতাম সবসময় একসাথে করতাম ৷ কিন্তু মাঝখান থেকে যে সায়ান এরকম একটা কাজ করবে ভাবতেও পারি নি ৷
কাশফিয়া : ককি কাজ?
জয় : সায়ান একজন ড্রাগ ডিলার!!
কাশফিয়া : কিইইইহ?? এএএটা কি করে হতে পারে?
জয় : এটাই হয়েছে ৷ কলেজে আমাদের পরিক্ষা চলছিল তখন ৷ সায়ানের পরিক্ষা অনেক আগেই শেষ হয়ে যায় ৷ তাই ও তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় ৷ আমার পরিক্ষা শেষ হলে আমিও বের হই ৷ বাকি রয়ে যায় আরিহান ৷ ওকে তাড়াতাড়ি বের হতে বলে আমি করিডোর দিয়ে হাটতে হাটতে ব্লিডিংয়ের পিছন সাইডে চলে যাই ৷
আমাদের কলেজের পেছনে ছোট্ট একটা পার্ক ছিল ৷ বেশি কেউ যায় না ওখানে ৷ আমাদের পরিক্ষার হল ছিল দুই তলায় ৷ দুই তলা থেকে সায়ানকে স্পষ্ট দেখতে পেয়েছি আমি ৷ ওই পিছনের পার্কটাতে সায়ান আর আরেকটা মেয়ে ছিল ৷
সায়ান মেয়েটার হাতে একটা প্যাকেট দিচ্ছিল ৷ প্যাকেটের ভেতরে সাদা সাদা কি যেন ছিল ৷ সন্দেহ হয়েছিল ওকে আমার ৷ তাই ও যখন মেয়েটার হাতে প্যাকেটটা দিচ্ছিল তখন আমি একটা ছবি তুলে নেই ৷ আর সেটা আরিহানকেও দেখাই ৷ ও হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছিল ৷ ওইদিন আমরা কেউ সায়ানের সাথে কথা বলি নি ৷
পরেরদিন আমরা কয়েকজন টিচার আর প্রফেসরকে নিয়ে সায়ানের ব্যাগ চেক করি ৷ আর প্রায় ৫/৬ প্যাকেট ড্রাগস পাই ৷ তখনি আমরা শিউর হই ওটা ড্রাগস ছিলো ৷ সায়ান ওর ব্যাগ রেখে বাহিরে গিয়েছিল তখন ৷
যখন ফিরে দেখলো আমাদের হাতে ড্রাগসের প্যাকেট ৷ তখন পালাতে গিয়েও পারলো না ৷ কারণ আরিহান ধরে ফেলেছিল ওকে ৷ ওর গালে ওকে চড় মেরে তখন বলেছিল,,,,
আরিহান : সায়ান তুই এটা কিভাবে করলি? তোকে তো নিজের বন্ধু কম ভাই ভেবেছিলাম আমি ৷ আর সেই তুই এসব বেআইনি কাজে জড়িত? ছিহ!! এটা কি করে পারলি ৷ বিশ্বাসের এই মর্যাদা দিলি ৷ কলেজের স্টুডেন্টের কাছে তুই শেষমেষ ড্রাগস বিক্রি করছিস ৷
বলেই আরেকগালে আরিহান থাপ্পর দিলো সায়ানকে ৷ সেই দিন ওভাবেই ওদের মধ্যে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ৷ আর সায়ানকে ওই কলেজ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল ৷ এরপর আমাদের মধ্যে প্রায় দুইমাস যোগাযোগ হয়নি ৷ দুইমাস পর আমি আর আরিহান রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিলাম ৷ তখনি একটা ছেলের সঙ্গে ধাক্কা লাগলো আরিহানের ৷ আরিহান আর আমি পিছনে তাকিয়ে দেখি সায়ান ৷ ওকে দেখে আমরা চলে যেতে নিবো ৷ তখনি পেছন থেকে সায়ান আমাদের ডেকে বললো,,,,
সায়ান : আরিহান একটু দাঁড়া ৷ আআমার কথাটা একটু শুনে যা ৷ (কিছুক্ষন থেমে) আমি জানি তোরা রেগে আছিস আমার উপরে ৷ কিন্তু ভুল বুঝছিস আমাকে ৷ আমি এই কাজটা করছি ঠিক আছে কিন্তু সেটা বাধ্য হয়ে করতে হচ্ছে আমাকে ৷ আমাদের সব বন্ধুত্বের সম্পর্ক নাহয় একটা ভুল বোঝাবুঝির মাধ্যমে শেষ হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু এক সময় তো তোদের বন্ধু ছিলাম আমি ৷ সেই বন্ধু হিসেবে আমার এই একটা কথাই রাখিস ৷ আমার এই কাজের কথা আমার, তোদের পরিবার কিংবা বাহিরের কেউ যেন জানতে না পারে ৷ অন্তত এই কথাটা রাখ ৷
বলেই সেদিন সায়ান চলে গিয়েছিল ৷ আরিহান আমাকে সেদিন স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছিল এসব কথা কাউকে বলতে না ৷ দরকার হলে সায়ান বলবে আমরা না ৷ সেই থেকে আমরা এসব বিষয় কাউকে বলি নি ৷ তবে আজ তোমাদের বললাম ৷””
কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে থামলো জয় ভাইয়া ৷ এসব কথা শুনে নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না আমি ৷ সত্যিই কি সবটা সত্যি? মনের মধ্যে এখনো প্রশ্নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে ৷ মাথাটা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ৷ তবে কি সায়ানকে আমি অন্ধ বিশ্বাস করে ফেলেছি? জয় ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ধরা গলায় বললাম,,,,,,
কাশফিয়া : ককয় বছর আগের কথা এটা?
জয় : প্রায় ৮/৭ বছর হবে ৷
কাশফিয়া : সায়ান এখন কোথায় আছে? জানেন কি?
জয় : আরিহান সায়ানকে ওর কাছে আটকে রেখেছিল ৷ কিন্তু একদিন কোনোভাবে সায়ান সেখান থেকে পালিয়ে যায় ৷ আরিহান খুঁজেছে ওকে কিন্তু পায় নি ৷ কোথায় আছে সেটা এখনো জানি না ৷
কাশফিয়া : বুঝলাম ৷ আর আরিহানের এতো রাগ কেন তার মা বাবার প্রতি?
গ্লাস থেকে পানি খেয়ে গলা ভিজিয়ে নিলেন জয় ভাইয়া ৷ তারপর বলতে লাগলেন,,,,,
জয় : আরিহানের বাবারা দুই ভাই ছিলেন ৷ আরিহানের বাবা বড় ৷ ছোট থাকতে আরিহান প্রায় তার চাচা চাচীর কাছে গিয়ে গল্প করতো মজা করতো ৷ আরিহানের চাচাতো বোন নাম ছিল আফিয়া ৷ আফিয়া আরিহানের থেকে ২ বছরের ছোট ৷ আরিহানের বয়স যখন ৭ তখন আফিয়ার বয়স ছিল ৫ ৷
ওই ৫ বছরের ছোট মেয়ে আফিয়ার মা বাবা একটা গাড়ি অ্যাকসিডেন্টে মারা যান ৷ সেই থেকে আফিয়াকে আরিহানের মা নিজের কাছে রাখতেন ৷ আফিয়াকে আরিহানের মা চোখে হারাতেন ৷ নিজের ছেলেকেও এতটা ভালোবাসা দেননি ৷ যতটা আফিয়া পেয়েছে ৷ ছোট বেলা থেকেই আরিহানের মায়ের একটা শখ ছিল যে সে লন্ডন গিয়ে ইংরেজি প্রফেসর হবে ৷
কিন্তু তার বিয়ের পর শখটা পূরণ করা হয়ে উঠে নি ৷ তার এই শখটা তার মনে আবার জেগে ওঠে আফিয়াকে দেখে ৷ আরিহানের বাবার কাছে বলে সে নাকি লন্ডন যেতে চায় আফিয়াকে নিয়ে ৷ তার সাথে সাথে সে নাকি আফিয়াকে ইংরেজিতে পারদর্শী করতে চান ৷
আরিহানের বাবা সোজাসুজি না করে দিয়েছিল ৷ কিন্তু আরিহানের মা জেদি ছিলেন ৷ যা চাই তা ওনার চাই ই চাই ৷ ওনার জেদ এতোটাই ছিল যে নিজের সম্পর্ক ভেঙ্গে দিয়ে যেতে চেয়েছিলেন ৷
এতোটুকু বলেই থামলেন ৷ তারপর আবার বলেতে শুরু করলেন,,,,,
জয় : তারপর আরিহানের মা নিজেই ফ্লাইটের টিকিট বুক করেন আর সেদিনই আফিয়াকে নিয়ে লন্ডন চলে যান নিজের শখ পূরন করতে ওই ছোট্ট আরিহানকে ছেড়ে ৷ প্রথম প্রথম আরিহান প্রচুর ভেঙ্গে পরেছিল ৷ যে তার মা তাকে একটুও ভালো বাসে না ৷ অন্য একটা মেয়েকে বেশি ভালোবাসে ৷ ওই ৭ বয়সেই ওর মধ্যে ওর মাকে নিয়ে রাগ জমে যায় ৷ আর সেটা সময়ের সাথে সাথে তীব্র হয় ৷ ওই বাড়ি ছেড়ে ও ওর চাচীর বাড়িতে চলে আসে ওই বয়সেই ৷ আরিহানের চাচা চাচী ওকে অনেক আদর করতো তাই ৷ আরিহান তখন থেকেই একা একা ওই বাড়িতে থাকতে শুরু করে ইভেন এখনো থাকে ৷
কাশফিয়া : বর্তমানে আমরা যেই বাড়িতে আছি সেটাই কি সেই বাড়িটা?
জয় : হুম ৷
কাশফিয়া : ওনার মা ওনার সঙ্গে কখনো দেখা করতে আসেন নি?
জয় : নাহ ৷ এখনো সে তার দেবরের মেয়েকে নিয়ে লন্ডনেই আছে ৷ মাঝেমাঝে আরিহানকে ফোন দিয়ে এটা ওটা জিজ্ঞেস করে যেটা আরিহানের বিরক্ত লাগে ৷ ও অনেক কথা শোনায় বাট ওর মায়ের গায়ে লাগে না ৷ ওই বয়সে আরিহানকে ফেলে চলে যাওয়ায় ওর রাগ ওর মায়ের প্রতি ৷ আর ওর বাবা কেন ওর মাকে আটকায় নেই সেটার রাগ ওর বাবার প্রতি ৷ তবে ওর মায়ের প্রতি রাগটা বেশিই ৷ তাই ওর সামনে কেউ ওর মা বাবার নাম নিলে ওর রাগ উঠে যায় ৷ আর সব কাজ উল্টা পাল্টা করে ফেলে ৷ এতোটাই রাগ হয় যে ও নিজের মধ্যেই থাকে না তখন ৷
কাশফিয়া : একজন মা কি করে তার সন্তানকে এভাবে ফেলে চলে যেতে পারে?
জয় : সেটা আমারও ঠিক জানা নেই ৷
কাশফিয়া : আপনি এসব কিভাবে জানলেন? কারন তখন তো আপনিও ছোট ছিলেন ৷
জয় : আমার বাবা আরিহানের বাবার বেস্টফ্রেন্ড ছিলো ৷ তাই আরিহানের বাবা আমার বাবাকে সব কিছু শেয়ার করতো ৷ এটাও বলেছে ৷ আর আমি বাবার থেকে জানতে পারি এগুলা ৷
কাশফিয়া : আরিহানের বাবা কোথায় থাকে জানেন ভাইয়া?
জয় : হুম ৷ কেন?
কাশফিয়া : আমাকে একটু নিয়ে যাবেন সেখানে? আমি যেতে চাইছি ৷
জয় : ওখানে হঠাৎ এখন এইসময়ে?
কাশফিয়া : হুম ভাইয়া প্লিজ নিয়ে চলুন আমাকে ৷
জয় : আচ্ছা চলো ৷ দেখা যাক কি হয় ৷
কাশফিয়া : হুম ৷
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,