What a হাসবেন্ড পর্ব -২১

#What_a_হাসবেন্ড
#Tamanna_Tabassum(লেখনীতে)
#পর্ব-২১
ওনার এইধরনের কথা শুনে আমি আর কিছু বললাম না। উনি এই মেয়ের পক্ষ নিলেন। কী এমন দেখেছেন কে জানে! ”
.
আরও কতগুলো পৃষ্ঠা উলটানোর পর মুন আরও কিছু লেখা পেলো। ও আবারও পড়তে আরম্ভ করলো।
.
” আমি আবারও ওই রাস্তায় গেলাম। বাসায় এই আলুর জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। সবকিছুতে আলু। এইবার শীতে আব্বু এক বস্তা নতুন আলু নিয়ে আসছে। এখন আম্মু প্রতিদিন আলুরদম করে। হৃদি, আব্বু, আম্মু এই আলুরদম দিয়েই ভাত খায়। আলু আমিও খাই, কিন্তু এরা যেইভাবে খাচ্ছে এতে আমার আলুর থেকে মন একেবারে উঠে গেসে৷ আলু দেখলেই মেজা’জ খা’রাপ হয়৷ আজ তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ওই রাস্তায় যাবো। গেলামও আমি। গিয়ে দেখলাম সেই আগের ঝালমুড়িওয়ালা এখনো আছে। প্রথমে চিনতে একটু অসুবিধে হয়েছিলো আমার। তাকে বললাম বেশি করে আলু দিয়ে যেন ঝালমুড়ি বানিয়ে দেয়। উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঝালমুড়ি বানাতে শুরু করলেন। বললাম ঝালমুড়ি এখনো ১০ টাকা আছে? নাকি দাম বেড়েছে?
উনি আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললেন না, বাড়েনি। আমি টাকা দিয়ে খেতে শুরু করলাম। দেখলাম নাহ খারা’প না। খেতে খেতে একটা পর্যায়ে আমার ঝালমুড়ি খুব ভালো লেগে গেলো। বেছে বেছে আলু খাচ্ছি, ঝালমুড়ির আলু আসলেই মজা। খেতে ভালোই লাগছে। খাওয়া শেষ করে বললাম আরেক প্যাকেট দিতে। উনি দিলেন। আমি খেলাম।
ঝালমুড়িটা আমার এতোই ভালো লেগে গেলো যে দাঁড়িয়ে আমি প্রায় ৭ প্যাকেটের বেশি খেয়ে ফেললাম। আসার সময় ঝালমুড়িওয়ালা কে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ আচ্ছা! একটা মেয়ে আপনার কাছে আসতো না প্রতিদিন? মেয়েটা কোথায় থাকে? ‘
-‘ কার কথা বলছো? ‘
-‘ ওই যে মুন নামের একটা মেয়ে ‘
-‘ হ্যাঁ, আসতো তো। এখন বেশি একটা আসে না। তুমি কে? ‘
-‘ আমাকে চিনবেন না। ‘
বলেই এসে পড়লাম। রাস্তাঘাট সবকিছু নতুন এখানকার, অনেকদিন আসিনি তাই চিনতে অনেক অসুবিধে হলো। আমি এই রাস্তা দিয়েই তো কলেজে যেতাম। সাথে আমার বন্ধুরাও থাকতো। কাধে ব্যাগ, হাতে বই অন্যরকম বেশভূষা নিয়ে চলতাম। দিনগুলি সুন্দর ছিলো। অতীত সত্যিই সুন্দর!
.
এরপর আর কিছু লেখা নেই। কয়েকটা পৃষ্ঠা উল্টানোর পর মুন আরও কিছু লেখা পেলো। হৃদয় মাঝখানে এত গুলো পৃষ্ঠা বাদ কেন রেখেছে? এভাবে বাদ দিয়ে ডাইরি প্রায় শেষ করে ফেলেছে। শেষে কয়েকটা আছে সেগুলোতে কোনো লেখা নেই। এসব কিছু ভাবতে ভাবতে ও আবারও পড়তে আরম্ভ করলো,,
.
” দরকারি কিছু কাগজপত্র আনার জন্য আমাদের কলেজে গিয়েছিলাম। সেখানে আমার সাথে কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটলো। মুন নামের ওই মেয়েটার সাথে আমার আবারও দেখা হলো। দেখা হয়েছে এটা বড় কোনো বিষয় না, দেখা হতেই পারে। কিন্তু আজ এটা কী হলো? এটা হওয়া কী ঠিক হয়েছে?
কিছু কিছু অনুভূতি খুবই খারা’প। এইসব অনুভূতিকে প্রশ্রয় দিতে নেই। মেয়েটার দিকে তাকানোটা আমার ভুল ছিলো। ”
.
পরের পৃষ্ঠায় খুব ছোট ছোট করে লিখা আছে,,,
.
” তুমসে মহাব্বাত হে হা
তুমসে মহাব্বাত হে হা
বাস তুমসে হা বাস তুমসে হায়ায়া……….
মেয়েটা আর কেউ না, এটা সেই মুন। আজ প্রায় অনেকদিন যাবত আমি ওকে ফলোও করছি। বলেছিলাম আমার মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে, হ্যাঁ। আসলেই আমার মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সবথেকে অবাক করার বিষয় হলো এই মেয়েটা অন্য একটা ছেলেকে পছন্দ করে, কথাটা জানতে পেরে কেমন যেন মনটা খারাপ হয়ে গেছিলো। ও অন্য কাউকে পছন্দ করে তা জানা সত্ত্বেও আমি ওদের ভার্সিটিতে যেতাম। ওকে দেখতাম। ক্যান্টিনে বসে থাকতাম। জানতে পারলাম ও যেই ছেলেকে পছন্দ করে সেই ছেলের নাম সাগর। ছেলেটা দেখতে সুন্দর আছে। ভালোও অনেক তাই হয়তো পছন্দ করে। আচ্ছা! ছেলেটা কী মুনকে পছন্দ করে?
.
পরের পৃষ্ঠায়,,,,
মেয়েটার কাজ দেখে আমি শুধু অবাকই হই। সেই প্রথম থেকে অবাক হয়ে আসছি। এখনো অবাক হই। ওকে দেখে অবাক হই নি এমন কোনো দিন নেই। ও যখন সাগরের সাথে কথা বলতো তখন আমি ওদের আশেপাশেই থাকতাম। হাতে একটা বই নিয়ে এমন ভাব করতাম যেন আমি খুবই ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। এইজন্য অনেকে এসে আমার সাথে ভাব জমাতেও চাইতো। আমি কাউকে পাত্তা দিতাম না। যেই জন্য আসি সেটাই হচ্ছে না এরমধ্যে এরা আবার কোথা এসে জায়গা দখল করছে। সাগরের সাথে ও কথা বলতে বলতে হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো সাগর কেমন মেয়ে পছন্দ করে। বেডা ছেলে কেলাতে কেলাতে বলেও দিলো। এমনিই তো নাচুনি বুড়ি এরমধ্যে দিসে আবার ঢোলের বা’রি। মুন সুযোগ পেলেই এখন শাড়ী পড়ে ভার্সিটিতে আসে। দেখতে খা’রাপ লাগে না। সুন্দরই লাগে। ভার্সিটিতে এসেই ব্যাঙের মতো লাফাতে থাকে। ওর এইসব দেখে মুখ টিপে হাসি আমি। জায়গাটা আমার রুম হলে জোরে হেসে দিতাম। ভদ্রভাবে একটা মেয়ে ভার্সিটিতে ঢুকেই ব্যাঙের মতো লাফাতে শুরু করলো, ব্যাপার টা কেমন লাগবে? তুই শাড়ী পরেছিস তুই ভদ্রমতো থাক তোর লাফালাফি করার দরকার আছে? বান্দ’র কোথাকার!
যাই হোক ওকে এই লাফালাফিতেই সুন্দর লাগে, চুপচাপ থাকলে মনে হয় শেওড়া গাছের পে’ত্নী’টা উঠে আসছে, এখন মানুষের মাঝে চুপচাপ বসে আছে।
শাড়ী পরে এসেই ছবি তুলবে। ওর একটা বান্ধুবি আছে, তাকে বলবে ছবি তুলে দিতে। বেচারি এতো এতো ছবি তুলে যখন জিজ্ঞেস করতো কেমন হয়েছে তখন ও বলতো, ‘একটাও সুন্দর হয় নাই ‘
এরপর মেয়েটা রেগে চলে যেতো। এরপর মুন বন্ধুবির রাগ ভাঙ্গানোর জন্য বান্ধুবির পেছন পেছন ঘুরতো। সবকিছু ভালোই লাগতো। কিন্তু যখন ও ওই সাগর ছেলেটার সাথে থাকতো তখন একদম ভালো লাগতো না। বাজে লাগতো। ওই ছেলেটার থেকে ওর দূরে থাকার উচিৎ।
.
আজ ওকে একদম চুপচাপ দেখলাম। সাগরের কাছেও গেলো না। শাড়ী পড়েও আসে নি। কেমন যেন চিন্তা হলো, মেয়েটার হলো কী? সেদিন অনেকক্ষণ ওর আশেপাশে ঘুরঘুর করেও জানতে পারিনি। এর কিছুদিন পর ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি সাগর সবার সামনে একটা মেয়েকে প্রোপোজ করছে। আমি দেখে ভীষণ অবাক হলাম। দূরে দেখলাম মুন দাঁড়িয়ে ওদের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তারমানে মুন সাগরকে ওর মনের কথা জানায়নি?
এতোদিন কী এমনিই ব্যাঙের মতো লাফিয়েছে তাহলে!
.
পরবর্তী পৃষ্ঠায় লেখা,,,
.
আজ সকালে সাহস করে বোনকে বললাম সমস্ত কথা। এখন ও আম্মুর কাছে বললেই হলো। আম্মু এরপর আব্বুর কাছে বললে কিছু একটা সম্ভাবনা আছে।
হৃদি আম্মুকে বলার পর আম্মু আব্বুকে বলল। এর কয়েকদিন পর মুনদের বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠালো। মুনের বাবা সাথে আমার সবার প্রথমে কথা হলো। খুব গম্ভীর মানুষ উনি। তাহলে ওনার মেয়ে এমন তিড়িংবিড়িং করে কেন?
মুনের বাবার কথার ধরনে বুঝলাম উনি আমাকে পছন্দ করেছেন। পরেরদিন ঠিক হলো আমি, আম্মু আর হৃদি ওদের বাসায় যাবো। আমরা গেলাম।
সেখানেও আমি অবাক হলাম। দরজা খুলেই ওকে দেখে আমরা সবাই চমকে গেলাম। ও নিচু হয়ে আছে। এরপর নিচু হতে হতে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ওর মা তারাতাড়ি ওকে ধরে উঠালো। আমরা বসলাম। অন্যরুম থেকে কয়েকটা মেয়ে উঁকি দিয়ে আমাদের দেখছিলো। আমার বোন জিজ্ঞেস করলো ওরা কে? হঠাৎ একটা ছোট বাচ্চা কোথা থেকে যেন এসে বলল বিয়ে ভাঙ্গার জন্য মুন মেয়েগুলোকে এনেছে। পরিবেশ মুহুর্তেই ভয়ং’ক’র হয়ে গেলো৷ সবকিছু স্বাভাবিক হওয়ার পর আম্মু ওর নাম জিজ্ঞেস করলো। ও নাম বলে পালটা আম্মুর নাম জিজ্ঞেস করলো। আমরা তিনজনই অবাক হলাম। বুঝলাম বিয়ে ভাঙ্গার জন্য এইসব করতেছে। মাথার মধ্যে এইসব বুদ্ধি ওর আসে কীভাবে?
.
এরপর আমাদের একদিন দেখা করতে বলা হলো। রেস্টুরেন্টে যাচ্ছিলাম। ওমা! রাস্তার ও-ই পাড়ে দেখি লাল সবুজ কী জানি দেখা যায়। মানুষজনদেরও ভীড়! গিয়ে দেখলাম মুন কীসব পড়ে এসেছে। ওকে দেখে আমি অজ্ঞান হয়ে যেতে নিসিলাম। আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমার দিকে ওই গানটা গাইতে গাইতে এগিয়ে আসছে ” আমি রুও নগরের রাজকণ্যা রুপের জাদু এনেছি”
বাবাগো বাবা! এইটা জাদু আনছে? নাকি ডাইনী কোনো জায়গা থেকে উঠে আসছে? ওকে দেখে কিছুক্ষণ জন্য পুরা দুনিয়া টা আমার কাছে উলটা লাগছে। হঠাৎ ও পেছনে তাকালো। আমিও একটু কাছে গেলাম। দেখলাম সাগর দাঁড়িয়ে আছে। বুঝলাম ও লজ্জা পেয়েছে। ভীষণ লজ্জা পেয়েছে।

চলবে…..
( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here