Your_love_is_my_Addiction পর্ব ১৩+১৪

#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৩
.
টেবিলে চুপচাপ বসে আছে ইচ্ছে। সে একটু অন্যমনস্ক হয়ে আছে। মূলত সে গতকাল রাতের ঘটনা মনে করার চেষ্টা করে চলেছে। আয়াশের ওয়াইনের গ্লাসে ড্রাগস মিশিয়ে দিয়েছিল সে। আর সেটাই আয়াশ খেয়েছিল তার সামনে। আর শোভনের কথা অনুযায়ী ড্রাগসটা খাওয়ার পর গভীর ঘুমে তলিয়ে যাওয়ার কথা ছিল আয়াশের। তাহলে আয়াশের সাথে সে কীভাবে গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে গেল? আর তারই বা কী হয়েছিল? সে নিজে কেন ঘুমিয়ে পড়েছিল? তার এতটুকুই মনে আছে যে তার মাথা হঠাৎ করে ভীষণ ভারি হয়ে আসছিল। চোখ দু’টো খুলতেও সমস্যা হচ্ছিল। কিন্তু কেন? এসব কেন এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না সে। দু’হাতে মাথা চেপে ধরে বসে রইলো ইচ্ছে। ভীষণ মাথাব্যাথা করছে তার।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার সময় ইচ্ছেকে মাথা চেপে ডাইনিং টেবিলে বসে থাকতে দেখে একটুও অবাক হলো না আয়াশ। উল্টো সে হাসলো। পুরো বাড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নিচে নেমে এলো সে। ইচ্ছের পাশে চেয়ার টেনে বসে লিজাকে ডেকে বললো,
-“দু’টো কফি নিয়ে এসো। একটা একটু বেশি কড়া করে বানাবে।”
-“ওকে স্যার।”

লিজা কিচেনে চলে গেল। ইচ্ছে এখনো একইভাবে বসে আছে। বাঁকা হেসে টেবিলের উপর থেকে ম্যাগাজিন নিয়ে পড়তে লাগলো সে। কিছুক্ষণ বাদেই কেউ একজন বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,
-“গুড মর্নিং মিস্টার খান।”

আয়াশ পাশে তাকিয়ে লোকটিকে দেখে হেসে আবারও ইচ্ছের দিকে তাকালো। লোকটির গলার আওয়াজ শুনে চমকে উঠলো ইচ্ছে। তৎক্ষনাৎ মাথা থেকে হাত সরিয়ে চোখ মেলে সামনে তাকালো সে। মাথায় যেন বজ্রপাত হলো তার। ভয়ে শরীর কেঁপে উঠলো। আয়াশের দিকে একবার তাকিয়ে ভীত চোখে আবারও ওই লোকটির দিকে তাকালো ইচ্ছে। আগুন্তক ব্যক্তিটি ইচ্ছের চেহারার অভিব্যক্তি দেখে হাসলো। আয়াশ চেয়ার ছেড়ে উঠে গিয়ে লোকটির সাথে হাত মিলিয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করলো।
-“মিস্টার রায়হান! হ্যাভ এ সিট।”
-“থ্যাংক ইউ।”
ইচ্ছে শুকনো ঢোক গিলে বিরবির করে বললো,
-“শোভন জামিল রায়হান! এখানে কী করছেন উনি?”
ইচ্ছের কথা শুনতে না পেলেও সে যে কিছু বলেছে তা বুঝতে পেরে আয়াশ বললো,
-“শুনতে পাইনি কী বললে?”
-“নন..না..নাহ! কিছু বলিনি আমি।”

কথাটা বলে জোরপূর্বক হাসলো ইচ্ছে। শোভনের সাথে চোখাচোখি হলো তার। ইচ্ছে চোখের ইশারাতেই শোভনকে জিজ্ঞেস করলো সে এখানে কী করছে? কিন্তু তার প্রশ্নের কোনো জবাব দিল না শোভন। ইচ্ছের ভীষণ রাগ হলো। পরক্ষণেই তার মনে প্রশ্ন জাগলো শোভন কি আদৌও তাকে চিনতে পেরেছে? কিন্তু না চিনতে পারারও তো কোনো কারণ নেই। ইচ্ছের কাছে সবকিছু কেমন যেন ধোঁয়াশা মনে হচ্ছে। সে তাড়াতাড়ি পানির গ্লাসটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেয়ে নিলো। আয়াশ আড়চোখে তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। এই পরিস্থিতি থেকে নিজেকে বাঁচাতে ইচ্ছে বললো,
-“আমার কলেজের জন্য লেইট হয়ে যাচ্ছে।”
-“এখনো অনেক সময় আছে। তাই নিশ্চিন্তে বসে আগে ব্রেকফাস্ট করে নাও। তারপর কলেজে যাবে।”
-“কিন্তু….”
-“আর কোনো কিন্তু নয়।”

চুপ হয়ে গেল ইচ্ছে। শোভনের দিকে আড়চোখে একবার তাকিয়ে মাথানিচু করে ফেললো সে। আয়াশ আর শোভন একে অপরের সাথে কথা বলতে লাগলো। ইচ্ছের সাথে শোভনকে পরিচয় করিয়ে দিল আয়াশ। তার দু’জনেই ইতস্তত করে জোর করে মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে একে অপরের সাথে কুশলাদি বিনিময় করলো। আয়াশ শুধু ওদের দু’জনকে একনজর দেখে নিলো। লিজা এসে কফি আর ব্রেকফাস্ট সার্ভ করে দিল টেবিলে। ইচ্ছে আজ কোনো রকম অনীহা দেখালো না খাবারের প্রতি। কফিটা খেয়ে তাড়াতাড়ি খাবার ঠুসতে লাগলো। এর মাঝে শোভন আর আয়াশের কথাবার্তা শুনে অনেক বেশি অবাক হলো ইচ্ছে। শোভন আর আয়াশ পুরোনো বন্ধু? বিস্মিত হয়ে ইচ্ছে শোভনের দিকে তাকালো। শোভন মাথানিচু করে বসে আছে। ইচ্ছে খানিকটা রাগ দেখিয়ে আয়াশের উদ্দেশ্যে বললো,
-“আমি কলেজে যাচ্ছি, আপনি কী যাবেন আমার সাথে?”
আয়াশ কিছুটা হেসে বললো,
-“আজ আমার পক্ষে যাওয়া সম্ভব নয় সুইটহার্ট। বাইরে মুহিব দাঁড়িয়ে আছে গাড়ি নিয়ে। তুমি আজ ওর সাথে চলে যাও।”

ইচ্ছে এবার একটু না অনেকটাই অবাক হলো। আয়াশকে আজ কেমন যেন অন্যরকম মনে হচ্ছে। আজ ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই সবকিছু অদ্ভুত লাগছে তার কাছে। কেন জানে না তার মন বলছে কিছু একটা হতে চলেছে। সেই কিছু একটা ভালো না খারাপ তা জানে না। আয়াশের দিকে অপলক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল ইচ্ছে। দরজা দিয়ে বের হতে যাবে, এমন সময় কে যেন ওর হাত টেনে ধরলো পেছন থেকে। ইচ্ছে পেছনে তাকিয়ে দেখে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো ইচ্ছে। আয়াশ বাঁকা হেসে বললো,
-“আমি আজ তোমার সাথে যাচ্ছি না তার মানে এই নয় যে আমি আমার মর্নিং কিস নিবো না।”
ইচ্ছে অবাক হয়ে বললো,
-“কিন্তু এখানে অনেকেই আছে।”
-“অনেকেই আছে!”
ভ্রু কুঁচকে ফেললো ফেললো আয়াশ। ইচ্ছে চোখ দু’টো ছোট ছোট করে বললো,
-“এতগুলো মেইড আপনার চোখে পড়ছে না?”
-“হু কেয়ার্স! আমার কোনো সমস্যা নেই।”
-“কিন্তু আমার আছে।”

ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থেকে আয়াশ মেইডদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই তারা সবাই চলে গেল ওখান থেকে। যেহেতু ডাইনিং রুম উল্টো দিকে তাই ওরা শোভনকে দেখতে পেলেও শোভন ওদের দেখতে পাচ্ছে না। আয়াশ ইচ্ছের কোমড় জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিলো তাকে। ইচ্ছে আজ চোখ মেলাতে পারছে না আয়াশের সাথে। শোভনকে এখানে দেখার পর থেকেই তার ভেতরে ভয় কাজ করছে। যদি তারা দু’জন একে অপরের পুরোনো বন্ধু হয়ে থাকে তাহলে শোভন কেন ইচ্ছেকে আয়াশের ক্ষতি করার জন্য সাপোর্ট করছিল? এই একটা কথাই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ইচ্ছের মাথায়। এসব চিন্তার মাঝেই ইচ্ছে চোখ বন্ধ করে আয়াশের পিঠ খামছে ধরলো। আয়াশ নিবিড়ভাবে চুমু খেয়ে চলেছে তাকে। বেশ কিছুক্ষণ পর ইচ্ছেকে ছেড়ে এক আঙুল দিয়ে তার ঠোঁট মুছে দিল আয়াশ।
-“এবার সত্যিই তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে। সাবধানে যাবে আর মনে রেখো তুমি যতই ভাবো না কেন আমি তোমার সাথে নেই, কিন্তু আমি সবসময়ই তোমার সাথে থাকি।”
ইচ্ছের চোখের দিকে তাকিয়ে আবারও দৃঢ় আওয়াজে সে বললো,
-“ঠিক তোমার সাথেই থাকি আমি যা তুমি নিজেও জানো না। তাই কিছু করার আগে বা বলার আগে হাজারবার ভেবে নিবে।”
আয়াশের কথার মানে বুঝলো না ইচ্ছে। আয়াশ তার সেই সব সময়কার বাঁকা হাসিটা দিয়ে বললো,
-“আই হ্যাভ এ সারপ্রাইজ ফর ইউ।”
ইচ্ছে জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে হাসলো আয়াশ। বললো,
-“বললে তো আর সারপ্রাইজ থাকবে না। সো! এখন কলেজে যাও। সারপ্রাইজটা তুমি ঠিক সময় মতো পেয়ে যাবে। এত অধৈর্য্য হলে তো চলবে না তাই না মিসেস খান!”
-“(….)”
-“যাও যাও কলেজে যাও। টাটাহ সুইটহার্ট, হ্যাভ এ গুড ডে।”
-“(….)”

আয়াশ ঠেলে ইচ্ছেকে পাঠিয়ে দিল কলেজের জন্য। ইচ্ছে যেতে যেতে একবার পেছনে তাকিয়ে দেখলো আয়াশ তার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। সেই হাসি দেখে ইচ্ছের ভয় লাগলো। কেন যেন তার মনে হতে লাগলো তার সাথে খারাপ কিছু হতে চলেছে। চোখ বন্ধ করে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়ির দিকে চলে গেল সে।
ইচ্ছের কাছে আরও একটা ব্যাপার খুবই অদ্ভুত লাগলো। আজ মুহিব তার সাথে একটা কথাও বলে নি। খুবই চুপচাপ হয়ে বসে আছে সে। ইচ্ছে একবার ভাবলো মুহিবকে সে জিজ্ঞেস করবে যে কী হয়েছে? কিন্তু পরক্ষণেই আবার ভাবলো ওদের ব্যক্তিগত ব্যাপারে তার নাক না গলানোই ভালো। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তার খুব ভয় হতে লাগলো। এই ভয়টা শোভনের জন্য নয়, নিজের জন্য পাচ্ছে ইচ্ছে। কে জানে কী লেখা আছে তার কপালে।
পুরো ক্লাসে সে শুধু আয়াশের বলা কথাগুলো ভেবে গিয়েছে। গতকাল রাতের কথা নিয়ে সে আর ভাবছে না। যদি আয়াশের সাথে তার কিছু হয়েও থাকে তবুও তাতে ভুল কিছু নেই। আয়াশ এখন তার হাজবেন্ড তাই তাদের ভেতরে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে থাকলে তা অবশ্যই ভুল নয়। ইচ্ছে শুধু আয়াশের বলা, ‘মনে রেখো তুমি যতই ভাবো না কেন আমি তোমার সাথে নেই, কিন্তু আমি সবসময়ই তোমার সাথে থাকি। ঠিক তোমার সাথেই থাকি আমি যা তুমি নিজেও জানো না। তাই কিছু করার আগে বা বলার আগে হাজারবার ভেবে নিবে’ এই কথাগুলো ভেবে চলেছে। এই কথাগুলো দ্বারা কী বোঝাতে চাইছিল আয়াশ? এসব ভাবার মাঝেই কেঁপে উঠলো ইচ্ছে হঠাৎ তার মাথায় একটা কথা এলো। ‘তবে কী আয়াশ জেনে গিয়েছে যে সে শোভনের সাথে হাত মিলিয়ে আয়াশকে ধ্বংস করতে চাইছিল। আর এই জন্যই কী আয়াশ ওই কথাগুলো বলেছে?’ ভয়ে রীতিমতো কাঁপতে লাগলো ইচ্ছে। গলা শুকিয়ে আসতে লাগলো তার। শরীরটা অবশ হয়ে আসতে চাইছে। সে আর বসে থাকতে পারলো না। ক্লাসের মাঝেই উঠে দাঁড়িয়ে ব্যাগ নিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল সে।

মুহিব গম্ভীর ভাব নিয়ে বসেছিল মাঠে। ইচ্ছেকে দৌড়ে এদিকে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো সে। হাত ঘড়িতে সময় দেখে নিলো সে। ইচ্ছে তার কাছে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
-“মুহিব বাড়ি চলো।”
-“তোমার ক্লাস শেষ হয়েছে?”
-“না আমি ক্লাস করব না এখন। তুমি বাড়ি চলো এখুনি।”
-“কিন্তু তোমার ক্লাস শেষ না হওয়া পর্যন্ত কলেজ থেকে তোমার বা আমার বের হওয়া নিষেধ।”
-“মুহিব প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর। বাড়ি চলো তাড়াতাড়ি।”
-“ভাইয়ের আদেশ অমান্য করতে পারবো না আমি। তাই বলছি চুপচাপ ক্লাসে যাও।”
-“মুহিব….”
-“ক্লাসে যাও!”

ইচ্ছেকে ধমকে উঠলো মুহিব। তার চেহারায় রাগের ছাপ স্পষ্ট হয়ে আছে। ভয়ে কাঁপতে লাগলো ইচ্ছে। তা দেখে আর কিছু না বলে ইচ্ছের হাত ধরে ক্লাসের দিকে যেতে লাগলো মুহিব। ক্লাস টিচারের অনুমতি না নিয়েই ক্লাসে ঢুকে ইচ্ছেকে তার জায়গায় বসিয়ে দিল সে। ক্লাস টিচার রেগে গিয়ে বললেন,
-“কী হচ্ছে কী এসব?”
মুহিব এমনভাবে রেগে তার দিকে তাকালো যে ক্লাস টিচার ভয়ে চুপসে গেলেন। মুহিব ইচ্ছেকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“তুমি ক্লাস কর আর যদি কেউ কিছু বলে বা কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমি বাইরে আছি আমাকে বলবে।”

ইচ্ছে কোনো কথা না বলে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে রইলো মুহিবের দিকে। মুহিব ইচ্ছের দিক থেকে চোখ সরিয়ে বেরিয়ে গেল ক্লাসরুম থেকে। ক্লাসের সবাই ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে আছে। ইচ্ছে দু’হাতে নিজের মুখ ঢেকে বসে রইলো। চিন্তায় চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। এখন আবার মুহিবের ব্যবহার দেখে আরও বেশি খারাপ লাগছে ইচ্ছের। এবার সে নিশ্চিত কিছু একটা তো হয়েছে। আর সেই কিছু একটার মেইন কালপ্রিট যে সে নিজে তাও বুঝতে পারছে ইচ্ছে।
#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৪
.
গাড়িতে বসে বেশ কয়েকবার মুহিবকে জিজ্ঞেস করেছে ইচ্ছে যে কিছু হয়েছে কি-না! তার সাথে এমন ব্যবহার কেন করছে মুহিব? কিন্তু এসবের কোনো জবাব মুহিব তাকে দেয় নি। ইচ্ছের নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। সে মনে মনে একটা নামই উচ্চারণ করলো। আয়াশ! এই লোকটার বিরুদ্ধে যাওয়ার কথা চিন্তা করা উচিৎ হয় নি তার। সে ভালো মতো জানতো আয়াশ কে বা কী। তারপরও সে আয়াশের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। এবার তার কী অবস্থা হতে চলেছে তা ভাবতেই পুরো শরীর কাঁপতে লাগলো ইচ্ছের। পরক্ষণেই তার মনে পড়লো আয়াশ তাকে বলেছিল তার জন্য একটা সারপ্রাইজ রেখেছে সে। কী সেই সারপ্রাইজ? ভাবতে লাগলো ইচ্ছে।
মুহিব গাড়ির লুকিং গ্লাসের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। ও বেশ কিছুক্ষণ যাবৎ খেয়াল করছে একটা গাড়ি ওদের পিছু নিচ্ছে। কিন্তু গাড়িতে থাকা কারও চেহারাই দেখা যাচ্ছে না। মুহিব বুঝতে পারলো কোনো বিপদ হতে চলেছে। পেছনে বসে থাকা ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে দেখলো সে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে বসে আছে। তাই পাশে তাকিয়ে রাসেলকে ইশারা করে বললো লুকিং গ্লাসের দিকে তাকাতে। মুহিবের ইশারা অনুযায়ী লুকিং গ্লাসের দিকে দেখে রাসেল নিজেও কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। না এই ভয়টা নিজের জন্য নয় ইচ্ছের জন্য পাচ্ছে সে।
মুহিব দ্রুত ফোন বের করে আয়াশকে কল দিল। কিন্তু আয়াশ ফোন রিসিভ করলো না। তাই সে দেরি না করে তৎক্ষনাৎ এখানকার পরিস্থিতির কথা জানিয়ে একটা ম্যাসেজ করলো আয়াশকে। ঠিক সেই মূহুর্তে বিকট একটা শব্দে চারপাশ থমকে গেল। মুহিবদের গাড়িটাকে পেছন থেকে একটা ট্রাক এসে খুব জোরে ধাক্কা মারায় গাড়িটা উল্টে কিছুটা দূরে গিয়ে পড়েছে। মাথায় বেশ গুরুতর আঘাত পেয়েছে রাসেল। মুহিবও ভালোই ব্যাথা পেয়েছে। ইচ্ছে পেছনের সিটে বসে থাকায় আঘাতটা কম পেয়েছে। এমন সময় পর পর দু’টো গাড়ি এসে থামলো ওদের গাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে কতগুলো লোক বের হয়ে এসে মুহিবদের গাড়ির পেছনের দরজা ভেঙে ফেললো। তারা গাড়ির ভেতর থেকে টেনে বের করলো ইচ্ছেকে। মুহিব চোখ জোড়া পিটপিট করে খুলে দেখছে সবটা। কিছু বলতে চাইছে ও কিন্তু পারছে না। শরীরে এক ফোঁটা শক্তি নেই ওর। একটা সময় লোকগুলো ইচ্ছেকে নিয়ে চলে গেল। মুহিবও সেখানেই নিজের জ্ঞান হারালো।
আয়াশ নিজের রুমের রকিং চেয়ারে বসে আছে। হাতে রয়েছে হুইস্কির গ্লাস। চোখজোড়া রক্তলাল হয়ে আছে তার। নিজের রাগটাকে সংবরণ করার চেষ্টা করছে সে। ইচ্ছের প্রতি তার ভালোবাসাগুলো তো মিথ্যে ছিল না। তবে কেন তার ইচ্ছেময়ী তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার কথা ভাবলো? এসব ভাবার মাঝেই একজন গার্ড হন্তদন্ত হয়ে আয়াশের রুমে ঢুকলো। আয়াশ অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার দিকে।
-“স্যরি বস। কিন্তু একটা জরুরি খবর দেওয়ার আছে।”
-“এই মূহুর্তে আমি কিচ্ছু শুনতে চাইছি না।”
-“এখন যদি আমি আপনাকে খবরটা না দিই তাহলে আপনি পরে আমাকে খুন করে ফেলবেন।”
-“বললাম তো আমি কিছু শুনতে চাইছি না। চলে যা এখান থেকে।”
-“কিন্তু বস ব্যাপারটা ম্যাডাম আর মুহিব ভাইকে নিয়ে।”
এবার আয়াশ চমকে উঠলো। নিজেকে শান্ত করে গার্ডকে জিজ্ঞেস করলো ল,
-“কী হয়েছে?”
-“ম্যাডাম আর মুহিব ভাই যেই গাড়িতে ছিলেন গাড়িটার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। মুহিব ভাই আর রাসেল ভাই গুরুতর ভাবে আঘাত পেয়েছেন। আর….”
মাথায় যেন বাজ পড়লো আয়াশের। সে উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বললো,
-“আর! ইচ্ছেময়ী কেমন আছে? কোথায় ও?”
-“স্যরি বস কিন্তু ম্যাডামকে পাওয়া যাচ্ছে না। ম্যাডামের ব্যাগ গাড়িতেই ছিল। মুহিব ভাই আর রাসেল ভাইকে হসপিটালে নেওয়া হয়েছে।”

আয়াশ আর এক মূহুর্তও দাঁড়িয়ে না থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে বেরিয়ে গেল রুম থেকে। ভয়ে, রাগে তার শরীর কাঁপছে। এতটুকু সময়ের ভেতরে এসব কী হয়ে গেল? নিচে নেমে গাড়িতে উঠতে উঠতে নিজের ফোনটা বের করলো সে। মুহিবের কল আর ম্যাসেজ দেখে নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো তার। সে যদি তখন মুহিবের কলটা ইগনর না করতো তাহলে হয়তো এসব কিছুই হতো না। আয়াশ ড্রাইভারকে হসপিটালে যেতে বললো।
হসপিটালে ঢুকতেই সবাই আয়াশকে দেখে মাথা নিচু করে সরে দাঁড়ালো। আয়াশের গার্ডরা তাকে মুহিব আর রাসেলের কেবিনের দিকে নিয়ে গেল। কেবিনের ভেতরে ঢুকে দাঁড়িয়ে গেল আয়াশ। পাশাপাশি দু’টো বেডে শুয়ে আছে মুহিব আর রাসেল। মুহিবের কপালে, হাতে আর পায়ে ব্যান্ডেজ করা। আর রাসেলের সম্পূর্ণ মাথায় ব্যান্ডেজ করা, সাথে হাতেও ব্যান্ডেজ রয়েছে। আয়াশের সবথেকে কাছের মানুষ এই দু’জন। মুহিব তার নিজের ছোট ভাই। খুব ছোটবেলায় ওদের মা মারা যায়। বাবা একা ওদের ঠিকমতো সময় দিতে পারতেন না। আয়াশের সবকিছু বোঝার বয়স ছিল তখন। তাই সে নিজেই সবসময় মুহিবের সাথে সাথে থাকতো। তাকে সকল বিপদ-আপদ থেকে আগলে রাখতো। এক কথায় বলতে গেলে তার প্রাণ তার ভাই। আর আজ তার গাফলতির জন্য তার ভাই হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। অপরদিকে রাসেল তার নিজের ভাই না হলেও আপন ভাইয়ের চেয়ে কোনো অংশে কম মনে করে না সে রাসেলকে। সেই ছোট থেকেই রাসেল ওদের সাথে থাকে। তাই মুহিবের মতো রাসেলকেও সে নিজের আরেক ছোট ভাই মনে করে। এই দু’জন ছিল তার সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ভরসার মানুষ। আজ তার দুই ভাইকে এভাবে আঘাত পেয়ে পড়ে থাকতে দেখে তার কলিজাটা ছিঁড়ে যাচ্ছে। আয়াশ তাদের কাছে যেয়ে তাদের দু’জনের মাথায় হাত বুলিয়ে বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে।
আয়াশের মনে মনে এখন একটাই চিন্তা, তার ইচ্ছেময়ী কেমন আছে? কী করছে সে? সে সুস্থ আছে তো! এসব ভেবেই আয়াশ তার এক গার্ডকে বললো যেভাবেই হোক এই কাজ কে করেছে আর ইচ্ছেময়ী কোথায় তা খুঁজে বের করতে। আয়াশের আদেশ পাওয়ার সাথে সাথেই তার গার্ডরা কাজে লেগে পড়লো। একটু পরেই ডক্টর এলেন আয়াশের সাথে দেখা করতে। আয়াশ তখন করিডোরে বসে দু’হাতে নিজের মুখ চেপে ধরে রেখেছে।
-“স্যার!”
আয়াশ মাথা তুলে ডক্টরের দিকে তাকালো। ডক্টর বললেন,
-“আপনার ভাই মুহিবের জ্ঞান ফিরেছে। উনি আপনার সাথে কথা বলতে চাইছেন।”
আয়াশ প্রায় সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো। কেবিনে ঢুকতে গেলে পেছন থেকে ডক্টর বললেন,
-“প্লিজ উনাকে বেশি কথা বলতে নিষেধ করবেন। নাহলে উনার সমস্যা হবে। এমনিতেই প্রচুর আঘাত পেয়েছেন উনি।”

কিছু বললো না আয়াশ। চুপ করে কেবিনে ঢুকে গেল। মুহিব চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। আয়াশ এসে মুহিবের মাথায় হাত রাখতেই চোখ মেললো সে। মুহিব তার হাত উঠিয়ে আয়াশের হাত ধরার চেষ্টা করলো কিন্তু পারলো না। আয়াশ তা বুঝতে পেরে নিজেই মুহিবের হাত ধরলো। মুহিবের চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।
-“ভা..ভাই!”
-“কোনো কথা বলিস না এখন, বিশ্রাম কর।”
-“ভাই ইচ্ছে…”

ইচ্ছের নাম শুনতেই চোখ দু’টো বন্ধ করে ফেললো আয়াশ। কষ্টে তার বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার ইচ্ছেময়ীর খবর না জানতে পেরে। কিন্তু এই কথাটা সে প্রকাশ করতে চায় না। কিন্তু মুহিব তার ভাইকে বুঝে। তাই এবারেও সে তার ভাইয়ের মনের খবর বুঝতে পারলো। সে বললো,
-“ভাই আমি ওদের দেখেছি।”
-“কাদের?”
-“যারা ইচ্ছেকে তুলে নিয়ে গিয়েছে আমি ওদের দেখেছি।”

মুহিব সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললো আয়াশকে সবটা শুনে আয়াশ থমকে গেল। রাগে তার চোয়াল জোড়া শক্ত হয়ে গেল। কাউকে ছাড়বে না সে। সবাইকে শেষ করে দিবে। মুহিব তার ভাইয়ের রাগটা বুঝতে পেরে বললো,
-“নিজের রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করো ভাই। পরে কাজে লাগবে। এখন আপাতত ওদের খোঁজ নাও ওরা কোথায় আছে। তাহলেই ইচ্ছেকে খুঁজে পাওয়া যাবে। মেয়েটার জ্ঞান ছিল না তখন যখন ওরা ওকে নিয়ে গিয়েছে।”
-“তুই চিন্তা করিস না। বিশ্রাম নে তুই। আমি দেখছি বাকিটা। ওদের সবাইকে এর জন্য অনেক বড় মাশুল দিতে হবে। আমার ভাই আর স্ত্রীর ক্ষতি করার চেষ্টা করেছে ওরা। এত সহজে ওদের ছেড়ে দিব না আমি। আমার ইচ্ছেময়ীর কিচ্ছু হতে দিব না আমি।”

চলবে….

“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
চলবে….

“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here