Your_love_is_my_Addiction পর্ব ১৯+২০+শেষ

#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৯
.
গম্ভীরভাবে সোফায় বসে আছে আয়াশ। তার সামনের সোফায় শোভন বসে আছে। ইচ্ছে উপরে দাঁড়িয়ে রেলিং এ একহাত রেখে আয়াশকে দেখছে একবার আবার শোভনকে দেখছে। আয়াশের চেহারার কাঠিন্য ভাব দেখে কিছুটা চিন্তিত হলো ইচ্ছে। শোভন অনেক্ক্ষণ চুপ করে বসে থেকে অবশেষে কথা বললো।
-“প্রথমেই আমি নিজের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইছি। আমার উচিৎ ছিল আমার বোনের কেসটাকে ভালোভাবে ইনভেস্টিগেট করানো। তাহলে হয়তো এরকম সমস্যার মধ্যে আমাদের পড়তেই হতো না। আমাকে বলা হয়েছিল আপনিই আমার বোনকে রে..রেপ করে খুন করেছেন। আর এখানে ব্যাপারটা আমার একমাত্র বোনের ছিল, যাকে আমি সবথেকে বেশি ভালোবাসতাম। তাই অন্য কোনো চিন্তা-ভাবনা না করেই তোমাকে ধ্বংস করার চিন্তায় নেমে গিয়েছিলাম। সত্যি বলতে আপনার ওয়াইফ মিসেস ইচ্ছেময়ী খান এর এখানে কোনো দোষ ছিল না। উনি অত্যন্ত বোকা প্রকৃতির একটি মেয়ে তাই উনি না বুঝে শুনে আমার কথায় সায় দিয়েছিলেন। এখন তো সবই ক্লিয়ার! আমি আপনাকে আসল কারণও বলে দিয়েছি যে কেন আপনাকে আমি ধ্বংস করতে চেয়েছিলাম। প্লিজ এবার আমার ফিয়ন্সেকে ছেড়ে দিন।”
-“আপনার ফিয়ন্সেকে ইতোমধ্যেই তার নিজের বাড়িতে সেফলি পৌঁছে দিয়েছে আমার লোকেরা। আশা করছি পরবর্তীতে না জেনে শুনে এরকম কোনো কাজ করবেন না। আপনি আপনার জায়গা থেকে সঠিক ছিলেন বলে আপনাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি। কিন্তু মনে রাখবেন এটাই আপনার জন্য প্রথম এবং শেষ সুযোগ। আমি আয়াশ খান। আমার নজর এড়িয়ে এই শহরে কোনো কিছু করাই সম্ভব নয়। আর এটা তো স্বয়ং আমাকেই ধ্বংস করার প্ল্যানিং ছিল। যাই হোক এবার আপনি আসতে পারেন। কিছুদিন পর আপনার বিয়ে। তার জন্য শুভ কামনা রইলো।”
-“ধন্যবাদ। অবশ্যই আপনি আর আপনার ওয়াইফ আমার বিয়েতে আমন্ত্রিত। আশা করি আপনারা দু’জনই আসবেন।”
-“সিয়্যর বলতে পারছি না, তবে চেষ্টা করব।”
-“ঠিক আছে। তাহলে আমি আজ উঠছি।”
-“জ্বি।”

শোভন বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতেই আয়াশ উপরে তাকালো। ইচ্ছেকে দেখে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না সে। সে এমন একটা ভাব করলো যেন ইচ্ছেকে সে চিনেই না। প্রচন্ড অবাক হলো ইচ্ছে। এই কিছুক্ষণ আগেই তো লোকটা ঠিক ছিল! তাহলে হঠাৎ করে কী হলো তার? ভাবতে লাগলো ইচ্ছে। আয়াশ সোফা ছেড়ে উঠে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেই ইচ্ছে নিজের রুমে চলে গেল।
রাতে বাড়ি ফিরে আয়াশ সবার প্রথমে ইচ্ছের রুমে গেল। ইচ্ছে তখন একটা উপন্যাস পড়ছিল বিছানায় বসে। আয়াশ রুমে ঢুকতেই তাকে দেখে ঠিক হয়ে বসলো ইচ্ছে। আয়াশের চোখজোড়া দেখে কেমন যেন লাল মনে হচ্ছে। কিন্তু কেন? ইচ্ছে বিছানা ছেড়ে উঠে আয়াশের কাছে যেতেই আয়াশ তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাত ধরে একটা কাগজ তার হাতে রাখলো। অবাক হয়ে গেল ইচ্ছে। সে কোনো কথা না বলে কাগজটা মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলো। কাগজটা পড়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো তার। সে কী ভুল দেখছে চোখে! বিশ্বাস করতে না পেরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো সে আয়াশের দিকে। তার দৃষ্টিজোড়া ছলছল করছে। যেন এক্ষুণি চোখের পানি উপচে পড়বে। আয়াশ অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমার মনে হয় আমাদের আলাদা হয়ে যাওয়া উচিৎ। কারণ আমি তোমার জন্য রাইট চয়েজ নই। ইনফ্যাক্ট আমি তো তোমার চয়েজই নই। বিয়েটা আমি তোমাকে জোর করেই করেছিলাম। এতদিন তোমার সাথে যা যা করেছি তার জন্য আমি দুঃখিত। তুমি আমাকে ঘৃণা কর জেনেও এতদিন তোমাকে আমি নিজের কাছে রেখেছি শুধুমাত্র তোমাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য। তোমার এখন আর কোনো বিপদ হবে না। তাই তুমি এখন মুক্ত। আজ থেকে নিজের ইচ্ছেমতো বাঁচতে পারবে তুমি। আমি ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিয়েছি। তুমিও সাইন করে দিও। তোমার জন্য তোমার কলেজের পাশেই একটা ফ্ল্যাট খালি করে রেখেছি। তুমি চাইলে সেখানেই উঠতে পারো আগামীকাল থেকে। আর যদি এখানে থাকতে চাও তবে থাকতে পারো। আমার কোনো সমস্যা নেই।”

কথাগুলো বলেই আয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইচ্ছে থম মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো ইচ্ছের। ঝাপসা চোখে ডিভোর্স পেপারের দিকে তাকাতেই আয়াশের সাইনটা চোখে পড়লো তার। এবার সে হাঁটু গেঁড়ে নিচে বসে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। এমনটা তো সে চায় নি। সে তো এখন আয়াশের সাথেই নিজের জীবনটা সাজাতে চেয়েছিল। চেয়েছিল আয়াশের ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে। তাহলে এটা কী হলো? কেন করলো আয়াশ এমনটা? তবে কী আয়াশ এখন আর তাকে ভালোবাসে না! অবশ্য সে যা করেছে আয়াশের সাথে, এখন তো আয়াশের উচিৎ তাকে ঘৃণা করা। কিন্তু ইচ্ছে মানতে পারছে না বিষয়টা। ইচ্ছের তো এখন আয়াশ ছাড়া আর কেউ নেই। তাহলে সে কোথায় যাবে এখন? একা একা কীভাবে থাকবে সে? ইচ্ছের কান্নার আওয়াজ শুনে বাসার কাজের লোকগুলো তার রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। বেশ কিছুক্ষণ সেভাবে কান্না করার পর ইচ্ছে দরজার দিকে তাকিয়ে কাজের লোকদের দেখে উঠে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিল।
পাশের রুমে রকিং চেয়ারে বসে আছে আয়াশ। তার চোখের কোণে পানি জমে রয়েছে। এতক্ষণ সে ইচ্ছের কান্নার আওয়াজ শুনছিল। ইচ্ছেকে কষ্ট দিয়ে ও নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু শাস্তি তো ইচ্ছেকে পেতেই হবে। এখন আর কান্নার আওয়াজ আসছে না। আয়াশ আর বসে থাকতে না পেরে জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। তার এখন লম্বা শাওয়ারের প্রয়োজন।
ডিনার টাইমে মুহিব আর আয়াশ ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। বাসার এক মেইড খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে ওদের। আয়াশ বারবার সিঁড়ির দিকে তাকাচ্ছে। ইচ্ছের অপেক্ষায় বসে আছে সে। কিন্তু ইচ্ছেকে আসতে না দেখে এক সার্ভেন্টকে উপরে পাঠালো আয়াশ, তাকে ডেকে নিয়ে আসার জন্য। কিছুক্ষণ পর নিচে এসে সার্ভেন্ট জানালো যে ইচ্ছে কিছু খাবে না এখন। কথাটা শোনা মাত্রই আয়াশ রেগে গেল। কিন্তু কিছু বললো না সে। টেবিলে একটা ঘুষি মেরে আয়াশ নিজেও না খেয়ে উপরে চলে গেল।
মুহিব কাটা চামচ দিয়ে মাংসের টুকরো মুখে দিতে দিতে তাকিয়ে রইলো আয়াশের যাওয়ার দিকে। মনে মনে বললো, ‘ইচ্ছেকে শাস্তি দিয়ে ভাই নিজেও ভালো নেই। কিন্তু আমার ভাই তো একটা আজব চিড়িয়া। ইচ্ছের কষ্ট নিজে সহ্য করতে পারবে না জেনেও সে ইচ্ছেকে কষ্ট দিচ্ছে, আর নিজেও কষ্ট পাচ্ছে। এটাকে ভালোবাসা বলে! এই ধরনের ভালোবাসা এই প্রথম দেখলাম। যা বুঝলাম, ইচ্ছে এখন অনুতপ্ত। আর সে ভাইয়ের সাথেই নিজের বাকি জীবনটা কাটাতে চাইছে। তাহলে এখন আমার কী কিছু করা উচিৎ? ভাই আর ইচ্ছের ভেতরে খুব শিঘ্রই সব ঠিক করে দেওয়া উচিৎ আমার। হুমম…. স্যরি ভাই কিন্তু ইচ্ছেকে এই শাস্তি পেতে দিব না আমি। কারণ এতে তুমি আরও কষ্ট পাবে। তাই আজই তোমাদের ভেতরে সব ঠিক করে দিব আমি।’
রাত বাজে সাড়ে বারোটা। আয়াশ নিজের রুমে পায়চারী করছে। ইচ্ছের জন্য চিন্তিত সে। ইচ্ছের কোনো সাড়াশব্দই সে পাচ্ছে না। মেয়েটা কী খুব বেশি কষ্ট পেয়েছে? নিজের ক্ষতি করার মতো সাহস ইচ্ছের নেই। তাই এদিক দিয়ে মনে মনে সে নিশ্চিন্ত। কিন্তু রাতেই কিছুই খায় নি ইচ্ছে। মেয়েটা তো না খেয়ে থাকতে পারে না। তবে আজ না খেয়ে আছে কীভাবে? আচ্ছা! ইচ্ছে ঠিক আছে তো! অসুস্থ হয়ে পড়ে নি তো মেয়েটা! এসব চিন্তা করছে আর পায়চারী করছে আয়াশ।
মুহিব রুমে উঁকি দিয়ে আয়াশকে একবার ভালোভাবে দেখে নিলো। তারপর জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিয়ে রুমের ভেতরে ঢুকলো সে। মুহিবকে দেখে পায়চারী করা থামিয়ে দিল আয়াশ। মুহিবকে দেখে ভীষণ চিন্তিত মনে হলো আয়াশের। সে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করলো,
-“তুই এখানে কী করিস?”
-“ভাই প্লিজ ইচ্ছেকে আটকাও।”
ঘাবড়ে গেল আয়াশ। জিজ্ঞেস করলো,
-“কী হয়েছে ইচ্ছেময়ীর?”
-“ভা..ভাই! ইচ্ছে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। আমি বেলকনি দিয়ে ওকে দেখে আটকাতে গিয়েছিলাম ওকে। কিন্তু ও আমার কোনো কথা না শুনেনি। ও বলেছে তুমি আর ওকে ভালোবাসো না, তাই ও আর এখানে থাকবে না। অনেক চেষ্টা করেও আটকাতে পারিনি আমি ওকে।”

কথাটা শোনা মাত্রই আয়াশের বুকের ভেতরটা চিনচিন করে উঠলো। এত রাতে মেয়েটা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল? এত সাহস হলো কী করে ইচ্ছের? রেগে কিছু না বলে এক দৌড়ে বেরিয়ে গেল আয়াশ। আয়াশ যেতেই দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগলো মুহিব। এবার তার প্ল্যান সাকসেসফুল করার পালা।
#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২০
.
আয়াশ তন্নতন্ন করে খুঁজে চলেছে তার ইচ্ছেময়ীকে। মেয়েটা এতটুকু সময়ের ভেতরে গেল কোথায়? আশেপাশের সব জায়গায় খুঁজে ফেলেছে আয়াশ। কিন্তু কোথাও ইচ্ছেকে খুঁজে পেলো না সে। ভয়ে তার হাত-পা রীতিমতো কাঁপছে। বারবার তার মাথায় একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো ক্ষতি হয়ে যায় নি তো ইচ্ছেময়ীর? দু’ঘন্টার মতো হয়ে এসেছে। ইচ্ছের পরিচিত সব জায়গায় ইচ্ছেকে খুঁজে ফেলেছে আয়াশ। যতটা না রাগ লাগছে, তার থেকে দ্বিগুণ বেশি কষ্ট হচ্ছে তার। তার মনে হচ্ছে কেউ যেন তার শ্বাস আটকে রেখেছে। চোখ দু’টো জলে ভরে আছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করার পরও যখন সে ইচ্ছেকে খুঁজে পেলো না তখন গার্ডদের কল করলো সে।
-“এই মূহুর্তে পুরো ব্যাঙ্গালোর সিটিতে লোক লাগিয়ে দাও। ইচ্ছেময়ী যেখানেই থাকুক না কেন ওকে আমার চাই। চাই মানে চাই। বুঝেছো তুমি!”
ওপাশ থেকে গার্ড মনে হয় আয়াশের কথা কিছুই বুঝতে পারলো না। সে কিছুটা অবাক সুরে বললো,
-“কিন্তু স্যার, ম্যাডাম তো তার নিজের রুমেই আছেন।”
কথাটা শোনা মাত্রই হতভম্ব হয়ে গেল আয়াশ। সে বললো,
-“ইচ্ছেময়ী নিজের রুমে আছে! ও বাইরে বের হয় নি?”
-“না তো! আমি তো বাড়ির সামনেই ছিলাম। ম্যাডাম বাড়ি থেকে বের হয় নি। ইনফ্যাক্ট এই মাত্রই ম্যাডামকে দেখলাম ছাদের দিকে যেতে।”
-“তাহলে মুহিব যে বললো ইচ্ছেময়ী বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছে!”
-“স্যার আমার মনে হয় মুহিব ভাই মজা করেছে আপনার সাথে।”

আয়াশ আর কিছু না বলে ফোনটা তৎক্ষনাৎ কেটে দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিল। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। কী ধরনের মজা ছিল এটা? মুহিব তার সাথে কী করে এরকমটা করতে পারলো? আর সে-ও বেকুবের মতো কী করে ইচ্ছের রুমে না গিয়ে এভাবে বেরিয়ে পড়তে পারলো বাইরে? আজকে মুহিবের কপালে শনি আছে। এই ভেবে যতটা সম্ভব গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল আয়াশ।
ছাদে ঢুকে অবাক হয়ে গেল ইচ্ছে। সেদিন আয়াশ তাদের ফার্স্ট নাইট পালন করার জন্য যেভাবে ছাদ সাজিয়ে ছিল, আজও ঠিক একই ভাবে সম্পূর্ণ ছাদ ডেকোরেট করা। কিন্তু কেন? বুঝতে পারলো না সে। সে তো নিজের কষ্টগুলোকে এই খোলা আকাশের মাঝে বিলিয়ে দেওয়ার জন্য ছাদে এসেছিল। কিন্তু কে জানতো ছাদে এসে তাকে এসব দেখতে হবে! ইচ্ছে ঘাড় ঘুরিয়ে চারপাশটা একবার ভালো করে দেখে নিলো। নাহ্! কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না সে। ছাদের ডেকোরেশনের দিকে আবার তাকাতেই তার চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। সেদিনের সময়টা চাইলেও সে ভুলতে পারবে না। আয়াশ কী তবে সেই রাতের কথা ভুলে গিয়েছে? না-কি তার কিছু মনেই নেই! হঠাৎ কাঁধের উপর কারও হাতের স্পর্শ পেয়ে পেছন ঘুরলো সে। মুহিবকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভীষণ অবাক হলো সে। একহাতে নিজের চোখেরজল মুছে নিলো ইচ্ছে।
বাড়িতে ঢুকেই মুহিবকে খুঁজতে লাগলো আয়াশ। তাকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে চলে গেল সে। ছাদে এসেই আয়াশ চমকে উঠলো। সম্পূর্ণ ছাদ কালো গোলাপ দিয়ে সাজানো। ঠিক যেমনটা সে নিজের বিয়ের দিন রাতে সাজিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এসবের মানে কী? আর কে-ই বা সাজালো এই ছাদ! আয়াশ ছাদের চারপাশে চোখ বুলাতে গেলেই ওর চোখ আটকে গেল ছাদের কোণে দাঁড়িয়ে থাকা এক আবছা অবয়বের দিকে। ওই অবয়বটি যে তার ইচ্ছেময়ীর তা বুঝতে সময় লাগলো না আয়াশের। এতক্ষণ এই মেয়েটার জন্য সে পুরো শহরে পাগলের মতো দৌড়াদৌড়ি করছিল। আর এই মেয়েটা এখানে দাঁড়িয়ে চন্দ্র বিলাস করছে! আয়াশ আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না। ছুটে গিয়ে পেছন থেকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তার ইচ্ছেময়ীকে।
হঠাৎ আক্রমণে ঘাবড়ে গেল ইচ্ছে। পরে যখন বুঝতে পারলো যে তার পেছনের ব্যক্তিটা আয়াশ, তখন সে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। দাঁত দিয়ে নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে নিজের কান্না আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো সে। একটু আগে মুহিবের কাছ থেকে সে পুরো ব্যাপারটা জেনেছে। আয়াশের উপরে তার যতটা না রাগ হচ্ছে, তার থেকে দ্বিগুণ বেশি অভিমান কাজ করছে।
ইচ্ছের চুলের ভেতর মুখ গুঁজে আয়াশ বিরস গলায় বললো,
-“ইউ আর মাই অ্যাম্বিশান অ্যান্ড ইয়্যর লাভ ইজ মাই অ্যাডিকশান।”
ইচ্ছে নিজের কান্না চেপে বললো,
-“হ্যা, তাই তো ডিভোর্স দিয়ে দিতে চাইছিলেন।”
এতক্ষণে হুঁশ ফিরলো আয়াশের। সে কিছু বলতে যাবে তার আগেই মুহিব ছাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“ভাই শোনো একদম আমার কাছে আসবে না। যেখানে আছো সেখানেই দাঁড়াও আর আমার কথাগুলো শোনো। তুমি ইচ্ছেকে ভালোবাসো। আর ইচ্ছেও তোমাকে ভালোবাসে। বহু আগে থেকেই ও তোমাকে ভালোবাসে কিন্তু কিছু ভুল বুঝাবুঝির জন্য ও তোমায় ঘৃণা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু যাদের জুটি ওপরওয়ালা আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল, তারা আলাদা হবে কী করে? তাই ও তোমায় হাজার ঘৃণা করা সত্ত্বেও ও তোমার হয়েছে। ইচ্ছে তো এখন নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে তাই না! তোমারও তাহলে উচিৎ ওকে ক্ষমা করে দেওয়া। ভাই! তোমাকে বুঝতে হবে যে ও তোমার ভালোবাসা। তাই ওকে কষ্ট দিয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই হয় না। ভালোবাসলে ক্ষমা করতে জানতে হয় ভাই। ও নাহয় একটা ভুল করেছেই! তুমি ওকে ক্ষমা করে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নাও। এতে ক্ষতি কী! প্লিজ ভাই সব ভুলে যাও। এসব শাস্তি-টাস্তি দেওয়ার চিন্তা বন্ধ কর। বেচারি এমনিতেই সেই কখন থেকে কেঁদেই চলেছে। এবার তো কোমায় চলে যাবে। নিজেদের ভেতরে সব মিটমাট করে নাও। আর আজকের এই সারপ্রাইজটা আমার পক্ষ থেকে তোমাদের বিয়ের গিফট। সেদিন তো তোমাদের ফার্স্ট নাইট হয় নি। তাই আজকে পালন করে নাও। আমি কিন্তু খুব শীঘ্রই মামাই হতে চাই। আশা করি আমাকে নিরাশ করবে না তোমরা। বেস্ট অফ লাক ভাই অ্যান্ড ভাবী।”

ইচ্ছে দু’চোখ বড় বড় করে তাকালো মুহিবের দিকে। মুহিব হেসে ছাদের দরজা লাগিয়ে দিয়ে দৌড়ে চলে গেল। বিস্ময় এখনো কাটেনি ইচ্ছের। এদিকে আয়াশ মুহিবের কথা শুনে হাসতে হাসতে শেষ। ইচ্ছের বিস্মিত চেহারা দেখে মুচকি হাসলো আয়াশ। কিছু না বলে টেবিলের উপর থেকে শ্যাম্পেন এর বোতলটা নিয়ে গ্লাসে কিছুটা ঢেলে খেতে লাগলো সে। ইচ্ছে আয়াশের দিকে একধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আবারও উল্টো ঘুরে আকাশের দিকে তাকালো। হালকা মৃদু বাতাস বইছে চারিপাশে। নিস্তব্ধ পরিবেশটা যেন কিছু বলতে চাইছে তাদের। আয়াশ অপলক দৃষ্টিতে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থেকে পুরো বোতল শ্যাম্পেন সে একাই শেষ করে ফেললো। খালি বোতলটা নামিয়ে রেখে ইচ্ছের কাছে গিয়ে আবারও ইচ্ছেকে পেছন থেকে জাপ্টে জড়িয়ে ধরলো আয়াশ। ইচ্ছের কাঁধে ছোট ছোট কয়েকটা চুমু খেয়ে তাকে নিজের দিকে ফেরালো। মাথা নিচু করে রেখেছে ইচ্ছে।
-“আই লাভ ইউ ইচ্ছেময়ী।”

কথাটা কানে পৌঁছাতেই তড়িৎ গতিতে মুখ তুলে আয়াশের দিকে তাকালো ইচ্ছে। তার চোখ দু’টো জলে ভিজে উঠেছে। আয়াশ মুচকি হেসে আবারও বললো,
-“আই লাভ ইউ।”

ইচ্ছে এবার আয়াশের বুকে মাথা রেখে তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিল। এত কিছুর পরও যে আয়াশ এখনো তাকে ভালোবাসি বলবে ভাবতেই পারে নি ইচ্ছে। আয়াশের সাথে করা বিশ্বাসঘাতকতার জন্য ভীষণ অনুতপ্ত সে। এই জীবন থাকতে আর কোনো দিনও আয়াশকে ভুল বুঝার মতো পাপ সে আর করবে না। এখন থেকে সে আগে আয়াশের সম্পূর্ণ কথা শুনবে, তারপর ডিসিশন নিবে। ইচ্ছেকে নিজের বুকের মাঝ থেকে উঠিয়ে তার চোখের পানি মুছে দিল আয়াশ।
-“তুমি যা চাইবে আমি তাই তোমাকে এনে দিব। শুধু আমার সাথে আর কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করার চেষ্টা কর না ইচ্ছেময়ী। আমি যতটা ভালোবাসতে জানি, ঠিক ততটা ঘৃণাও করতে জানি। কিন্তু তোমাকে ঘৃণা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। যদি আর কোনোদিনও আমাকে ধোঁকা দেয়ার চেষ্টা কর তাহলে সেদিনই এই পৃথিবীতে তোমার শেষ দিন হবে। ভেবো না যে তোমায় মেরে আমি বেঁচে থাকবো। তোমায় মেরে আমি নিজেও মরে যাব। কারণ তোমায় ছাড়া বেঁচে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।”

আয়াশের এই শান্তস্বরের হুমকি শুনে এবার আর ভয় পেলো না ইচ্ছে। কারণ সে এবার আয়াশের ব্যাপারে নিশ্চিত। আয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে ইচ্ছে বললো,
-“আমি আর যাই করি না কেন, আপনার সাথে আর কখনো বিশ্বাসঘাতকা করার চেষ্টা করব না। আপনি এই শেষবার আমায় বিশ্বাস করতে পারেন। নিরাশ হবেন না আশা করি।”
মুচকি হেসে ইচ্ছের কপালে চুমু দিল আয়াশ। ইচ্ছেমৃদু কণ্ঠে তার নাম ধরে ডেকে উঠলো।
-“আয়াশ!”
-“হু!”
-“আমি আপনাকে ভালোবাসি।”

হাসলো আয়াশ। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে ইচ্ছের দিকে। সত্যি আজ ইচ্ছের চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা দেখতে পাচ্ছে আয়াশ। আজ সে প্রচন্ড খুশি। অবশেষে তার ইচ্ছেময়ী তাকে ভালোবাসি কথাটা বলেছে। আয়াশ কিছু না বলে তাকে জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খেলো। ইচ্ছেও আজ ভীষণভাবে চাইছে আয়াশকে নিজের করে পেতে। এতদিন তো সে ভুল ধারণা নিয়ে বসে ছিল যে সেদিন রাতে আয়াশের সাথে তার সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আজ মুহিব তার ধারণা ভুল প্রমাণ করলো। আয়াশ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইচ্ছের দিকে। ইচ্ছে আয়াশের চোখে চোখ রেখে তার গলা জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু খেতে লাগলো। আয়াশ বুঝতে পারলো ইচ্ছে কী চায়। সে কখনোই তার ইচ্ছেময়ীর কোনো ইচ্ছে অপূর্ণ রাখবে না। তাই সে ইচ্ছেকে চুমু খেতে খেতেই কোলে তুলে নিয়ে চিলেকোঠার ঘরের দিকে পা বাড়ালো। আজকের রাতটা তারা ছাদের চিলেকোঠার ঘরে কাটাবে।

-“নো ওয়ে ভাই! আমি এখন কোনোমতেই বিয়ে করব না।”
-“কেন তোর ভেতরে কী কোনো সমস্যা আছে?”
-“ভাই! একদম এসব উল্টো পাল্টা কথা বলবে না। আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না। একটু বুঝার চেষ্টা কর।”
-“কেন বিয়ে করতে পারবি না? সেটা তো বলবি!”
-“আছে কোনো একটা কারণ। কিন্তু আমি এখন বিয়ে করতে পারবো না।”
-“তুই কী কাউকে পছন্দ করিস! বা ভালোবাসিস কাউকে?”

আয়াশের কথা শুনে চুপসে গেল মুহিব। কী বলবে সে এখন? মুহিবের অসহায় চেহারা দেখে মিটিমিটি হাসছে আয়াশ। হাসি চাপিয়ে গলা ঝেড়ে আয়াশ বললো,
-“আমি চেয়েছিলাম অহনার সাথে তোর বিয়ে দিতে। কিন্তু তুই তো রাজি না। তাহলে রাসেলের সাথেই অহনার বিয়ে হবে। রাসেলও তো আনার ভাই। ওরও তো বিয়ের বয়স হয়েছে না-কি!”

অহনার নাম শুনে চমকে উঠলো মুহিব। বিস্ফোরিত চোখে নিজের ভাইয়ের দিকে তাকালো সে। এতক্ষণ তার ভাই অহনার সাথে বিয়ের কথা বলছিল! গত দেড় বছর ধরে সে ভালোবেসে আসছে অহনাকে। তারা রিলেশনশিপেও আছে। অহনা যদি একবার জানে যে সে তাকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়েছে তাহলে তো ওকে জানেই মেরে ফেলবে। মুহিব কিছু বলতে যাবে তার আগেই অহনা রাগে গজগজ করতে করতে বাড়িতে ঢুকলো। আয়াশকে দেখে মুচকি হেসে ‘হ্যালো’ বলে মুহিবের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চিল্লিয়ে বললো,
-“কুত্তা তুই আমাকে বিয়ে করতে রিজেক্ট করছিস! আমাকে! অহনাকে তুই রিজেক্ট করিস কোন সাহসে? শালা আমার সাথে রিলেশনে থাকতে পারবি, প্রেম করতে পারবি আর বিয়ে করার কথা বললে সেটা করতে পারবি না! মগের মুল্লুক পাইছিস! তোকে আমি আজকে খুন করব হারামি। আমি আগেই বুঝতে পারছিলাম তুই সুবিধার না। তুই একটা চিটার। তুই কী ভাবছিস আমার সাথে চিটারি করে তুই পার পেয়ে যাবি? কখনো না। এখন দেখ আমি তোকে কীভাবে হেনস্তা করি। আয়াশ ভাই আপনি রাসেলকে ডাকেন তো! আজকেই কুত্তাকে লাথি মেরে ওর ভাই রাসেলকে আমি বিয়ে করব। তারপর ওর ভাবী হয়ে ওর সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করে ওর কাছ থেকে বদলা নিবো আমার সাথে চিটারি করার জন্য।”

অহনা কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নিজেই সবটা বলে যাচ্ছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। মুহিব অসহায় হয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারায় অহনাকে বুঝানোর চেষ্টা করছে কিন্তু অহনা মুহিবের কথা শুনতে নারাজ। এদিকে আয়াশের পেট ফেটে হাসি আসছে মুহিবের অবস্থা দেখে। রাসেল সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো। মুহিব আর অহনার অবস্থা দেখে অবাক হলো সে। রাসেলকে দেখে অহনা দৌড়ে এসে তার হাত ধরে বললো,
-“চলো আমার সাথে। আজকেই আমি তোমাকে বিয়ে করব। এই শয়তানটাকে একটা শিক্ষা দিতেই হবে আজকে। তুমি এখনি আমাকে বিয়ে করবে চলো।”

রাসেল যেন অহনার কথা শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। আয়াশ এদিকে ওদের দেখে সোফায় বসে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। রাসেলের কিছু বলার আগেই একটি মেয়ে হুংকার দিয়ে বললো,
-“তোর সাহস কত বড় তুই আমার বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চাস! ওই কে’রে তুই? হাত ছাড় বলতিসি। নাহলে আজকে এখানেই তোকে জিন্দা কবর দিব।”

পিউকে এখানে দেখে ভয়ে জমে গেল। এই মেয়ে এখানে কেন! একহাতে কপালের ঘাম মুছে আয়াশের দিকে তাকালো রাসেল। আয়াশ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। এবার যেন রাসেলের প্রাণ পাখিটাই উড়ে যাবে। জোর করে হাসার চেষ্টা করে অহনার থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পিউকে ধমকে উঠলো রাসেল।
-“এই মেয়ে এই! একদম বাজে কথা বলবে না। আমি তোমার বয়ফ্রেন্ড হলাম কবে থেকে? হ্যা!”
পিউ মিষ্টি হেসে বললো,
-“যেদিন তোমায় রাস্তায় মারামারি করতে দেখেছি সেদিনই তোমাকে আমি আমার বয়ফ্রেন্ড বানিয়ে নিয়েছি।”
-“মানে কি! আমি কতবার তোমাকে বলেছি যে আমি তোমাকে ভালোবাসি না! কথাটা কি কানে যায় না!”
-“তুমি ভালো না বাসলে না বাসবে। তোমাকে তো কেউ জোর করে নি। আমার একার ভালোবাসাই আমাদের দু’জনের জন্য যথেষ্ট।”
-“ধুর ছেমরি! আর তুমি এখানে কী করছো? আমার বাড়ির ঠিকানা জানলে কী করে?”
-“খান ভিলা এই শহরে একটাই আছে। গ্যাংস্টার আয়াশ খানও এই শহরে একটাই আছে। আর আয়াশ খানের ভাই রাসেল খানও এই শহরে একটাই আছে।”
-“তুমি…”
-“আররে আয়াশ ভাইয়া! ভালো আছেন আপনি?”

রাসেলকে থামিয়ে দিয়ে আয়াশের উদ্দেশ্যে বললো পিউ। এতক্ষণ আয়াশ, অহনা আর মুহিব দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রাসেল আর পিউ এর কথোপকথন শুনছে। পিউ এর কথায় মুচকি হেসে আয়াশ বললো,
-“ভালো আছি তুমি কেমন আছো পিউ?”
-“এই তো ভালো আছি। আপনি আমাদের বাসায় যান না কেন এখন? পাপা আপনার কথা কত বলে।”
-“আসলে ইচ্ছেময়ীর শরীরটা ভালো না। তাই এখন বাসাতেই থাকি বেশিরভাগ সময়।”
-“কেন কী হয়েছে ভাবীর?”
-“ওর প্রেগন্যান্সির সাত মাস চলছে তো তাই একটু উইক হয়ে পড়েছে।”
-“চিন্তা করবেন না। বেবিটা হলেই ভাবী আবারও সুস্থ হয়ে যাবে।”
-“হুম। তা তোমার পাপা কোথায়? উনাকেও তো আমি ডেকেছিলাম।”
-“পাপা চলে আসবে একটু পরেই।”
রাসেল মাথা চুলকে আয়াশের উদ্দেশ্যে বললো,
-“ভাই! তুমি ওকে চিনো?”
-“হ্যা। ও মিজান আঙ্কেলের মেয়ে। আর সবথেকে বড় কথা হলো ও অহনার কাজিন।”

কথাটা শুনে মুহিব আর রাসেল একে অপরের দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালো। পিউ অহনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-“তুই মুহিবকে পেয়েছিস না! ওকে নিয়েই থাক। আমার রাসেলের দিকে তাকালে আমি তোর চোখ গেলে দিব বজ্জাত মেয়ে।”

মুখ ভেঙালো অহনা। ভেংচি দিয়ে মুহিবের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সে। ইচ্ছে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে বললো,
-“তোমরা নিজেদের ভেতরে ঝগড়া কেন করছো?”
ইচ্ছেকে নিচে নামতে দেখে তাকে ধমকে উঠলো আয়াশ। বললো,
-“তোমাকে না কতবার বলেছি নিচে নামতে চাইলে আমাকে বলবে। আমি তোমাকে নিয়ে আসবো। একা একা সিঁড়ি ওঠানামা করাটা তোমার জন্য সেফ নয়। কেন বুঝো না তুমি! আমার বকা খেতে কি খুব ভালো লাগে?”
আয়াশ সিঁড়ি বেয়ে ইচ্ছের কাছে এসে ওকে ধরে সাবধানে নিচে নিয়ে এলো। ইচ্ছে মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-“আমি কোনো বাচ্চা না। আমি নিজের খেয়াল রাখতে পারি।”
-“কত যে নিজের খেয়াল রাখো তা তো আমি জানি। বসো এখানে। লাফালাফি করবে না একদম। নাহলে….”
-“আরেহ্! আমি লক্ষ্মী মেয়ের মতো বসে থাকবো তো! প্রমিস।”

আয়াশের ভয়ে জোর করে হেসে একদমে কথাগুলো বললো ইচ্ছে। মুচকি হাসলো আয়াশ। ইচ্ছে পিউ, রাসেল, মুহিব আর অহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আয়াশ তোমাদেরকে ইচ্ছে করে কনফিউজড করেছে। আমি বলছি আসল ঘটনা। মুহিব যে অহনাকে ভালোবাসে তা আয়াশ অনেক আগে থেকেই জানে। আর ওদের রিলেশনের ব্যাপারটাও জানে। অহনার বাবার সাথে কথা বলে আয়াশ ওদের দু’জনের বিয়ে পাকা করে ফেলেছে একেবারে। অহনা তুমি কিছু মনে কর না। আসলে আয়াশ একটু মজা নেওয়ার জন্য তোমার বাবাকে দিয়ে তোমাকে মিথ্যে কথা বলিয়েছে যাতে তুমি এসে মুহিবকে বকাঝকা কর। কারণ মুহিব আয়াশকে নিজে কিছু জানায় নি। আর তাই আয়াশ একটু রাগ ছিল ওর উপর।”
মুহিব নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে অহনার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“এখন বুঝলে তো! আই জাস্ট লাভ ইউ বেবি।”
-“ঢং!”

কথাটা বলেই অহনা এসে ইচ্ছের পাশে বসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। মুহিব আয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়াশ ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথে সাথে গলা ঝেড়ে নিলো ও। জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললো,
-“স্যরি ভাই। আসলে আমি বলতেই চাইছিলাম তোমাকে। কিন্তু তার আগেই তুমি এই কাহিনী করলে।”
-“দেড় বছর রিলেশন করার পর তুই আমাকে বলতে চেয়েছিলি না!”
-“স্যরি ভাই।”
-“এখন তোর শাস্তি হলো আজকেই তোকে অহনাকে বিয়ে করতে হবে।”
মুহিব দাঁত কেলিয়ে বললো,
-“আমি এই শাস্তি মাথা পেতে নিতে রাজি।”
ইচ্ছে আর অহনা হেসে দিল। পিউ মুখ গোমড়া করে বললো,
-“আয়াশ ভাই আমারও একটা ব্যবস্থা করে দাও। তোমার এই আহাম্মক ভাই তো আমাকে ভালোবাসবে না বলে পণ করে বসে আছে। নিয়ে বাইশ বার রিজেক্ট করলো ও আমাকে।”
-“রাসেল!”
রাসেল আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“বলো ভাই।”
-“পিউকে বিয়ে করবি না তুই!”
-“ভাই এই মেয়ে অনেক ডেঞ্জারাস। আমি ওকে বিয়ে করব না।”
-“করবি না বিয়ে?”
-“না।”
-“আবার বল কী বললি!”

রাসেল আয়াশের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়াশ ভ্রু কুঁচকে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আয়াশের ভ্রু কুঁচকানো মানেই বিপদ সংকেত। রাসেল থতমত খেয়ে কাঁদো কাঁদো চেহারা বানিয়ে বললো,
-“ভাই এটা ঠিক না।”
-“বিয়ে করবি কি-না!”
-“করব তো! তুমি এমন কর কেন?”

আয়াশের ভয়ে রাসেল পিউকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে গেল। মুচকি হাসলো আয়াশ। রাসেলের কথা শুনে খুশি হয়ে তাকে সবার সামনে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে তার গালে চুমু খেলো পিউ। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে পিউ এর দিকে তাকালো রাসেল। উপস্থিত সকলে মুখ টিপে হাসছে।
অবশেষে গন্টাখানেকের মধ্যেই মুহিব-অহনা আর রাসেল-পিউ এর বিয়ের কার্যক্রম সম্পন্ন হলো। মুহিব, অহনা, রাসেল, পিউ কেউই জানতো না আজই তাদের বিয়ে হয়ে যাবে। বিয়ে সম্পন্ন হতেই রাতের ডিনার করে নিলো সকলে। অহনা আর পিউ এট ফ্যামিলি ডিনার করে ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। আয়াশ এক এক করে রাসেল-পিউ আর মুহিব-অহনাকে নিজেদের রুমে যেতে বলে ইচ্ছেকে নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো।
আয়াশ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে ইচ্ছে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চকলেট খাচ্ছে। মুচকি হাসলো আয়াশ। সে তাওয়ালটা রেখে ইচ্ছেকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে তার ঘাড়ে চুমু খেলো। তারপর ইচ্ছের সামনে দাঁড়িয়ে তার কপালে আলতো চুমু খেলো। ইচ্ছে কিছু না বলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছে। এখন এসবে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে ইচ্ছে। তাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে সে। আয়াশ হাঁটু মুড়ে নিচে বসে ইচ্ছের পেটে আলতো চুমু খেয়ে বললো,
-“আমার প্রিন্স কেমন আছে? পাপা তোমাকে ভীষণ মিস করছি। তাড়াতাড়ি চলে এসো আমাদের কাছে। আর তোমার মাম্মাকেও তোমার পাপা এখন আর মনভরে আদর করতে পারছে না। তুমি তাড়াতাড়ি আসলে তবেই না তোমার পাপা তোমার মাম্মাকে আদর করতে পারবে! লাভ ইউ বাচ্চাটা।”

আয়াশের কথা শুনে হেসে কুটিকুটি হয়ে যাচ্ছে ইচ্ছে। আজ নতুন নয় এসব। যেদিন থেকে বাচ্চার খবর জানতে পেরেছে সেদিন থেকেই আয়াশ তার এই ধরনের পাগলামিগুলো শুরু করেছে। অবশ্য ইচ্ছের কাছে ভালোই লাগে এসব। আয়াশ উঠে দাঁড়িয়ে প্রগাঢ় চুমু খেলো ইচ্ছের ঠোঁটে। তারপর নেশাযুক্ত কণ্ঠে বললো,
-“ইউ আর মাই অ্যাম্বিশান অ্যান্ড ইয়্যর লাভ ইজ মাই অ্যাডিকশান। আই লাভ ইউ ইচ্ছেময়ী।”
-“আই লাভ ইউ ঠু।”
আয়াশের বুকে মাথা রাখলো ইচ্ছে। দু’হাতে ইচ্ছেকে জড়িয়ে ধরলো আয়াশ। তাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে রইলো তাদের অনাগত সন্তান আরিশ খান।

(সমাপ্ত)

“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”

নোটঃ গল্পটা একদম কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই লিখেছিলাম। তারপরও আপনারা এই গল্পকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। তার জন্য আপনাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ আর ভালোবাসা। ইনশাহ্আল্লাহ্ খুব শীঘ্রই আবার নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হব আপনাদের জন্য।
চলবে….

“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here