#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৭
.
আয়াশ একহাতে নিজের চুল টানছে বসে বসে। ইচ্ছের অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। এই পর্যন্ত দুই ব্যাগ রক্ত দেওয়া হয়েছে ইচ্ছেকে। তিন নম্বর রক্তের ব্যাগ চলছে। কেন আজ ইচ্ছেকে একা ছেড়ে দিয়েছিল আয়াশ? এই কথাটা বারবার নিজেকে জিজ্ঞেস করছে আয়াশ। আজকে ইচ্ছের এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায়ী করছে সে। ওদিকে মুহিব আর রাসেলও ভীষণ অসুস্থ। সবদিক একসাথে একা হাতে সামলানো কষ্টদায়ক হয়ে উঠেছে আয়াশের কাছে। বেশ কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে বললেন, “ম্যাডাম এখন অনেকটাই ঠিক আছেন। তবে এখনো উনি ভীষণ অসুস্থ। উনার খেয়াল রাখবেন ঠিকমতো। ম্যাডামকে এখন কোনো প্রকার স্ট্রেস দিবেন না। যতটা সম্ভব তাকে হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন। উনি যেন কোনো কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে। এমনিতেই উনার ব্রেইনে অনেক চাপ পড়েছে যা বুঝলাম। আবার যদি উনার ব্রেইনে চাপ পড়ে তাহলে হয়তো উনার কোনো বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। আরও একটা কথা! উনি মনে হয় ধোঁয়ার ভেতরে আটকে ছিলেন অনেক্ক্ষণ। তাই উনার ফুসফুসেও সমস্যা হয়েছে। উনাকে কোনোভাবেই উত্তেজিত করবেন না। নাহলে ব্যাপারটা উনার জন্য খুবই খারাপ হবে। আশা করছি আপনি বুঝতে পারছেন আমার কথাগুলো।”
আয়াশ কিছু না বলে শুধু নিজের মাথা নাড়লো। তা দেখে ডাক্তার বললেন, “আপনি চাইলে ম্যাডামের সাথে দেখা করতে পারেন।”
আয়াশ নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে ইচ্ছের কেবিনের ভেতরে ঢুকে গেল। দু’জন নার্স মেডিসিন ঠিকঠাক করছিলেন। আয়াশকে দেখে উনারা মাথা নিচু করে বেরিয়ে গেলেন কেবিন থেকে। ইচ্ছের দিকে কিছুক্ষণ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আয়াশ তার পাশে এসে বসলো। ইচ্ছের চোখ দু’টো এখনো বন্ধ। কড়া ঘুমের ওষুধের কারণে এখন ঘুমোচ্ছে সে। আয়াশ তার হাতজোড়া নিজের হাতের মাঝে নিয়ে চুমু খেলো তার হাতে। বললো, “আ’ম স্যরি ইচ্ছেময়ী। আমি তোমায় প্রোটেক্ট করতে পারিনি। আমি যদি আজ তোমার সাথে তোমার কলেজে যেতাম তাহলে আজ তোমার, মুহিবের বা রাসেলের কোনো ক্ষতিই হতো না। তোমরা কেউ আঘাত পেতে না। সব দোষ আমার। আ’ম স্যরি সুইটহার্ট।”
আয়াশের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। এই প্রথম গ্যাংস্টার আয়াশ খান তার দূর্বলতা প্রকাশ করছে। নিজের বাবার মৃত্যুতেও সে কাঁদে নি। নিজেকে যথেষ্ট শক্ত রেখেছিল সে তখন। কিন্তু আজ! আজ চেয়েও নিজেকে শক্ত করতে পারছে না আয়াশ। তার সবথেকে বড় দূর্বলতা হলো তার ইচ্ছেময়ী। আর আজ সেই ইচ্ছেময়ীই তার অসাবধানতার জন্য শয্যাশায়ী হয়ে আছে। ইচ্ছের হাতে আবারও চুমু খেয়ে তার হাতজোড়া খুব সাবধানে তার পেটের উপর নামিয়ে রাখলো আয়াশ। ইচ্ছের কপালে, গালে আর ঠোঁটে গভীর চুমু খেয়ে সে বেরিয়ে গেল কেবিন থেকে কড়া পাহারায় রেখেছে সে ইচ্ছে, মুহিব আর রাসেলকে। আয়াশ ইচ্ছের কেবিন থেকে বেরিয়ে গিয়ে সোজা নিজের পুরোনো গোডাউনে চলে গেল।
দু’টো চেয়ারে রায়ান আর রুজাইনাকে বসিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। তাদের গায়ে এক নাগাড়ে বিরতিহীনভাবে বরফওয়ালা ঠান্ডা পানি পড়ছে উপর থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে এসে উপস্থিত হয় আয়াশ। রাগে তার কপালের রগ ফুলে নীল হয়ে আছে। আয়াশ আসতেই একজন গার্ড আয়াশকে বসার জন্য চেয়ার এনে দিল। রাজার মতো ভাব নিয়ে চেয়ারে বসলো সে। তার দৃষ্টিজোড়া সামনে রায়ান আর রুজাইনার দিকে নিবদ্ধ হয়ে আছে। এই মূহুর্তে যে সে কী পরিমাণ রেগে আছে তা কেউ আন্দাজ করতে পারবে না। আয়াশ পায়ের উপর পা তুলে বসে গার্ডদের ইশারা করতেই তারা পানির কল বন্ধ করে দিল। রায়ান আর রুজাইনার চোখ-মুখ লাল টকটকে হয়ে গিয়েছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ওরা দু’জন। আয়াশ এক হাত তার কপালে রেখে স্লাইড করতে করতে বললো, “কীভাবে মারলে তোদের মৃত্যু সবথেকে বেশি ভয়ানক হবে বল তো!”
রায়ান আকুতিভরা কণ্ঠে বললো, “আয়াশ প্লিজ ছেড়ে দাও আমাদের। এরকম ভুল আমরা দ্বিতীয়বার করব না।”
-“দ্বিতীয়বার একই ভুল করার সুযোগ আমি তোদের দিলে তো! তোরা যদি আমার উপর হামলা করতি তাহলেও আমি তোদের কিছুটা হলেও ছাড় দিতাম। কিন্তু তোরা তো আমার জানের দিকে হাত বাড়িয়েছিস। আমার ইচ্ছেময়ীকে মেরে ফেলতে চেয়েছিস তোরা। আর আমি এতটাও দয়ালু নই যে কেউ আমার জানের দিকে হাত বাড়াতে চেয়েছে জেনেও তাকে আমি ছেড়ে দিব। মরতে তোদের হবেই তা-ও আবার আমার হাতেই।”
কথাটা বলেই উঠে দাঁড়ালো আয়াশ। একজন গার্ড একটা ধারালো ছুরি নিয়ে এগিয়ে এলো তার দিকে। আয়াশ গার্ডের হাত থেকে ছুরিটা নিয়ে দেখতে দেখতে এগিয়ে গেল ওদের দু’জনের দিকে। রায়ানের দিকে ঝুঁকে সে বললো, “যেই মৃত্যু তোরা আমার ইচ্ছেময়ীকে দিতে চেয়েছিলি, সেই মৃত্যু এখন আমি তোদের দিব।”
ভয়ে কেঁপে উঠলো রুজাইনা আর রায়ান। ওরা বারবার আয়াশের কাছে মিনতি করতে লাগলো ওদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আয়াশ ওদের কথায় কর্ণপাত করলো না। রায়ান আর রুজাইনার হাতের রগ কেটে দিল ছুরি দিয়ে। ব্যাথায় আর্তনাদ করতে লাগলো ওরা। চেয়ারে বসে ছটফট করছে দু’জন। ছুরিটা ফেলে দিয়ে আয়াশ বললো,
-“মৃত্যুর স্বাদ কেমন লাগে দেখ। আমার জানের দিকে হাত বাড়ানোর ফল এটা।”
আয়াশ ওদের থেকে চোখ সরিয়ে গার্ডদের দিকে তাকাতেই ওরা মাথা নাড়ালো। আয়াশও আর কিছু না বলে বেরিয়ে গেল গোডাউন থেকে। ও গোডাউন থেকে বের হতেই আগুন লেগে গেল গোডাউনে। সেদিকে এক নজর তাকিয়ে গাড়িতে বসে হসপিটালের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেল সে।
প্রায় মাঝরাতের দিকে জ্ঞান ফিরলো ইচ্ছের। পিটপিট করে চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে সে। সে যে এখনো জীবিত আছে এই কথা বিশ্বাস হতে চাইলো না তার। ভীষণ পানি তেষ্টা পেয়েছে ওর। উঠে বসার শক্তিটুকুও নেই শরীরে। তবুও চেষ্টা করলো উঠে বসার। সাথে সাথেই কেউ একজন ওকে ধরলো সাহায্য করার জন্য। ইচ্ছে মাথা উঁচু করে পাশে তাকিয়ে দেখে আয়াশ দাঁড়িয়ে আছে গম্ভীর চেহারা নিয়ে। ইচ্ছেকে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কেমন লাগছে এখন?”
-“ভালো।”
-“কিছু লাগবে?”
-“পানি খাবো।”
আয়াশ কিছু না বলে চুপ করে পাশের টেবিল থেকে পানি নিয়ে ইচ্ছের মুখের সামনে ধরলো। ইচ্ছে কোনো আপত্তি না জানিয়ে আয়াশের হাত থেকেই পানি খেয়ে নিলো। পানি খাওয়া শেষ হতেই গ্লাসটা আবার টেবিলে নামিয়ে রেখে দিল আয়াশ। বেশ কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করলো ওরা দু’জন। ইচ্ছে নিজের কাজের জন্য বেশ লজ্জিত। আয়াশের সাথে চোখ মেলাতে পারছে না সে। আয়াশ হয়তো ইচ্ছের অবস্থাটা বুঝতে পারলো। তাই সে বললো, “অন্য কোনো কিছু নিয়ে এখন চিন্তা করার দরকার নেই। এখন শুধু বিশ্রাম নিবে তুমি। তোমার শরীর প্রচন্ড দূর্বল।”
ইচ্ছে মুখ তুলে আয়াশের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “রায়ান আর রুজাইনাকে কী করেছেন?”
আয়াশ ইচ্ছের চোখের দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ওরা যেখানে থাকার যোগ্য ওদের সেখানেই পাঠিয়ে দিয়েছি।”
ইচ্ছে আয়াশের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো আয়াশের কথার মানে। তাই সে আবারও মাথা নিচু করে ফেললো। আবারও কিছুক্ষণ নীরবতা চললো রুম জুড়ে। মাথা নিচু রেখেই ইচ্ছে বললো, “আমার বাবাইকে কোথায় রেখেছেন? আমি তাকে শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি। এখন একবার বাবাইকে দেখতে চাই আমি।”
-“এই অবস্থায় কোথাও যাওয়া ঠিক হবে না তোমার। আগে তুমি সুস্থ হয়ে নাও তারপর নিয়ে যাব।”
এই বিষয়ে আর কিছু বললো না ইচ্ছে। ওর গলা ধরে আসছে। একটা শুকনো ঢোক গিলে আয়াশের দিকে না তাকিয়েই সে বললো, “আ’ম স্যরি। স্যরি ফর এভরিথিং।”
ইচ্ছের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো, “এখন আর কথা বলতে হবে না, বিশ্রাম কর।”
আয়াশ ইচ্ছেকে ধরে শুইয়ে দিল বালিশে। তারপর ইচ্ছের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো সে। পরম আবেশে চোখ বুঁজে নিলো ইচ্ছে। এক সময় ঘুমিয়ে গেল সে। আয়াশ অপলক দৃষ্টিতে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো, “আয়াশ খান কখনো বিশ্বাসঘাতকদের এত সহজে ছেড়ে দেয় না। শাস্তি তোমাকেও পেতে হবে সুইটহার্ট। শুধু একটু সুস্থ হয়ে নাও তারপর দেখো কী করি। এরপর থেকে আর কখনো বিশ্বাসঘাতকতা করা তো দূরে থাক, আমার কাছ থেকে কোনো কথা লুকোতেও ভয় পাবে।”
#Your_love_is_my_Addiction
#Season_2
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৮
.
বিছানায় শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে ইচ্ছে। আজ এক সপ্তাহ হয়েছে সে হসপিটাল থেকে ফিরেছে। গতকাল আয়াশের সাথে গিয়ে তার বাবার কবর দেখে এসেছে সে। এই ক’দিন আয়াশ তার কাছ থেকে পাঁচ মিনিটের জন্যও দূরে যায় নি। সব সময় তার সাথে ছায়ার মতো লেগে ছিল। আয়াশের সাথে চোখ মিলাতেও এখন লজ্জা লাগে ইচ্ছের। এতকিছু করার পরও কীভাবে সে চোখ মিলাবে আয়াশের সাথে? লজ্জায় আর ভয়ে এই ক’দিন বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া আয়াশের সাথে কথা বলে নি ইচ্ছে। আয়াশও তাকো সেভাবে ঘাটায় নি। রাসেল আর মুহিবকেও বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। মুহিব প্রায় পুরোপুরি সুস্থ হলেও রাসেল এখনো কিছুটা অসুস্থ।
ইচ্ছে চোখ বন্ধ করে এতদিন ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাবছে। তার জন্য তার বাবাই এর আত্মত্যাগ, তার সাথে করা রুজাইনা আর রায়ানের বিশ্বাসঘাতকতার কথা ভেবে ভীষণ কান্না পাচ্ছে এই মূহুর্তে তার। বন্ধুত্বের উপর থেকে চিরতরে বিশ্বাস হারিয়ে ফেললো সে। যেই লোকটা তার পাশে সবসময় ছায়ার মতো ছিল, তাকে আগলে রেখেছিল সবরকম বিপদে-আপদে, তাকে কিছু না বলে একতরফা ভালোবেসে গিয়েছে, সেই তাকেই কি-না ও এত ঘৃণা করেছে! সেই আয়াশকে সে ধ্বংস করতে চেয়েছিল! ক্ষতি করতে চেয়েছিল তার! এই মূহুর্তে নিজেকে পৃথিবীর সবথেকে নিকৃষ্টতম ব্যক্তি বলে মনে হচ্ছে ইচ্ছের। কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। এতদিন এই লোকটাকে ভালোবেসেও ঘৃণা করে গিয়েছে সে। আর প্রতিদানে লোকটা তাকে শুধু ভালোবাসাই দিয়ে গিয়েছে। তাতেই তো বুঝা যায় এই আয়াশ খান তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।
‘আমি একটা শেষ সুযোগ চাই আপনাকে ভালোবাসার জন্য। আপনি কী আমায় সেই সুযোগটা দিবেন আয়াশ? আমি জানি আপনি যতই আমায় ভালোবাসুন না কেন মনে মনে আমার করা কাজের ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন আপনি। আপনি আমায় যে-কোনো শাস্তি দিতে পারেন, আমি মাথা পেতে নিবো। কিন্তু একটা শেষ সুযোগ তো আমায় দেওয়াই যায় তাই না! মানুষ মাত্রই তো ভুল। আমিও সেই ভুলটা করেছি। আমার উচিৎ ছিল আপনাকে পুরো ব্যাপারটা এক্সপ্লেইন করতে দেওয়া। কিন্তু আমি আপনাকে সেই সুযোগটা দিই নি। ক্ষমা করবেন আমায়। স্যরি আয়াশ।’ মনে মনে কথাগুলো বলে ইচ্ছে একটা ছোট শ্বাস ফেললো। আয়াশ এতদিন তার খেয়াল রাখলেও খুব দরকার ছাড়া তার সাথে কথা বলে নি। তবে কী আয়াশ রেগে আছে? আর তাই কথা বলছে না! ভাবছে ইচ্ছে।
মুহিব বিছানায় শুয়ে শুয়ে ফোন ঘাটছিল। আয়াশ তার রুমে এসে তার পাশে বসলো। মুহিব তার ভাইকে দেখে উঠে বসলো। হেসে বললো,
-“রাসেলের কাছে গিয়েছিলে?”
-“হুম। ওর ঠিক হতে আরও সময় লাগবে।”
-“আঘাত তো ও-ই সবথেকে বেশি পেয়েছে। তাই ওর তো সময় একটু বেশি লাগবেই।”
-“তুই ঠিক আছিস এখন?”
-“একদম ফিট।”
মুহিব কিছুক্ষণ চুপ থেকে আয়াশের দিকে তাকিয়ে বললো, “ভাই তুমি কী ইচ্ছেকে ক্ষমা করে দিয়েছো?”
-“আয়াশ খানের সাথে কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করতে চাইলে তাকে আয়াশ খান শাস্তি না দিয়ে ছাড়ে না। আমার এই নীতি সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ইচ্ছেময়ীও একই কাজ করেছে। বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমাকে। তাই শাস্তি ওকেও পেতে হবে।”
-“কিন্তু ভাই আমি একটা জিনিস এখনো বুঝতে পারলাম না। তুমি কী করে জানলে যে ইচ্ছে শোভনের সাথে হাত মিলিয়েছে তোমাকে ধ্বংস করার জন্য?”
-“ওই মেয়েটা বাইরের কোনো মেয়ে নয় মুহিব। ও আমার ইচ্ছেময়ী। ওকে সবসময় নিজের চোখে চোখে রেখেছি আমি। আমি জানতাম ও আমাকে পছন্দ করে না। তাই ওকে দিয়ে আমি ভরসা সহজে পেতাম না। যে-কোনো সময় ওর বিপদ হতে পারে ভেবে ওর হাতের ঘড়িতে আমি মাইক্রোচিপ সেট করে দিয়েছিলাম। ও যখন যার সাথে কথা বলতো সবটাই আমি শুনতাম। ওই ঘড়িটা ইচ্ছেময়ীর বাবার দেওয়া ছিল। তাই ইচ্ছে কখনো ঘড়িটাকে নিজের থেকে আলাদা হতে দেয় না। তাই ও যেদিন থেকে আবার কলেজে যাওয়া শুরু করেছিল সেদিনই আমি ওর ঘড়িটার ভেতরে মাইক্রোচিপ সেট করে দিয়েছিলাম।”
-“তার মানে তুমি শুরু থেকেই শোভন আর ইচ্ছের ব্যাপারটা জানতে!”
-“হ্যা। কিন্তু আমি দেখতে চাইছিলাম ইচ্ছেময়ী শেষ পর্যন্ত কী করে। আমি ভেবেছিলাম ও হয়তো আমার ভালোবাসাটা বুঝবে আর শোভনকে বলবে যে ও আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে রাজি নয়। কিন্তু ও তা করে নি। আমার বিশ্বাস, ভরসা নিমিষেই ভেঙে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল আমার ইচ্ছেময়ী। সেদিন রাতে ও আমার ওয়াইনে ড্রাগস মিশিয়ে দিতে চেয়েছিল শোভনের কথায়। ও তো আর জানতো না যে আমি ওর প্ল্যান আগে থেকেই জানতাম। যেই মূহুর্তে শোভনের গার্ড ছাদে ড্রাগস এ মোড়ানো কাগজটা রেখে গিয়েছিল, ঠিক সেই মূহুর্তেই আমি ছাদে যেয়ে প্যাকেটটা চেঞ্জ করে দিয়েছিলাম। ড্রাগস এর প্যাকেটটা নিয়ে সেখানে স্যুগার পাউডার একটা কাগজে মুড়িয়ে রেখে দিয়েছিলাম। যেই ড্রাগস আমার খাওয়ার কথা ছিল, সেই ড্রাগস ইচ্ছেময়ী খেয়েছে। ওর চাউমিনের সাথে সেদিন রাতে আমি ড্রাগস মিশিয়ে দিয়েছিলাম। যার ফলে ও চিলেকোঠার ঘরে যাওয়ার কিছু সময় পরেই ঘুমিয়ে যায়। ওর সাথে আমার এখনো পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক তৈরি হয় নি। কিন্তু এই কথাগুলো ইচ্ছেময়ী জানে না।”
মুহিব ওর ভাইয়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এই মানুষটা ইচ্ছেকে এত ভালোবাসে আর ইচ্ছে তার ভালোবাসাটা বুঝলো না! মুহিবের ভীষণ খারাপ লাগছে তার ভাইয়ের জন্য। কিন্তু ইচ্ছের শাস্তি পাওয়া দরকার। ও ভুল করেছে তার মাশুল ওকে দিতেই হবে। আয়াশ খান যে কেউ না-কি যে তাকে চাইলেই কষ্ট দেওয়া যায়! আয়াশ খান হলো ব্যাঙ্গালোর সিটির কিং। দ্যা গ্যাংস্টার আয়াশ খান সে। ইচ্ছেময়ী! তুমি ভুল মানুষকে ফুসলিয়েছো। এবার ভোগ কর এর পরিণাম। মুহিব মনে মনে কথাগুলো ভেবে এক দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
বিকেলে ইচ্ছে রুম থেকে বের হলো। আজ সারাদিন আয়াশকে দেখে নি সে। মনটা ভীষণ আকুপাকু করছে একটা বার আয়াশকে দেখার জন্য। লোকটা যে কোথায় গিয়েছে কে জানে! ইচ্ছে আশেপাশে দেখতে দেখতে আয়াশের রুমের সামনে গিয়ে ভেতরে উঁকি দিল। আয়াশ তখন সবেমাত্র গোসল সেরে বের হয়েছে। হাত দিয়ে চুলগুলো ঝাড়তে ঝাড়তে ড্রেসিং টেবিলের দিকে এগিয়ে গেল সে। আয়াশকে খালি গায়ে দেখে হা করে তার দিকে তাকিয়ে রইলো ইচ্ছে। চোখ দিয়েই যেন গিলে খাচ্ছে তাকে। শরীরে বডি স্প্রে লাগাতে গিয়ে আয়নায় তাকিয়ে পেছনে ইচ্ছেকে উঁকি দিতে দেখে থেমে গেল আয়াশ। বডি স্প্রে রেখে পেছনে ঘুরলো আয়াশ। সাথে সাথে ইচ্ছে দৌড় লাগাতে গেলে আয়াশ বললো,
-“স্টপ দেয়ার!”
থেমে গেল ইচ্ছে। মাথা নিচু রেখে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। আয়াশ তার কাছে এসে পা থেকে মাথা পর্যন্ত তাকে একবার দেখে নিলো। তারপর ইচ্ছের হাত ধরে টেনে ওকে রুমে ঢুকিয়ে দরজা লাগিয়ে দিল।
দেয়ালের সাথে মিশে দাঁড়িয়ে আছে ইচ্ছে। ঠিক তার সামনেই আয়াশ তার কোমড়ে একহাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। ইচ্ছে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে বারবার আড়চোখে আয়াশকে দেখছে। আয়াশ ইচ্ছের দিকে ঝুঁকে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
-“কী করছিলে তুমি আমার রুমের সামনে?”
-“আমি এমনি… মানে আপ..আপনাকে খুঁজছিলাম।”
কিছুটা তোতলিয়ে আয়াশের প্রশ্নের জবাব দিল ইচ্ছে। আরও একটু ইচ্ছের দিকে ঝুঁকে আয়াশ আবার প্রশ্ন করলো,
-“কেন?”
-“আপনি আজ সারাদিন আমার রুমে আসেন নি তাই।”
-“মিস করছিলে আমাকে?”
মুখ নিচু রেখেই ইচ্ছে মাথা ঝাঁকালো। নিঃশব্দে হাসলো আয়াশ। এক আঙুল দিয়ে ইচ্ছের মুখটা উপরে তুলে তার দিকে তাকিয়ে রইলো আয়াশ। ইচ্ছে চোখ চেপে বন্ধ করে রেখেছে। বুড়ো আঙুল দিয়ে ইচ্ছের ঠোঁটে স্লাইড করে এক হাত ইচ্ছের গাল হয়ে কানের নিচ পর্যন্ত রেখে ইচ্ছের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট আঁকড়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো সে। ইচ্ছেও দু’হাতে আয়াশকে নিজের সাথে চেপে জড়িয়ে ধরে আয়াশের সাথে তাল মিলিয়ে চুমু খেতে লাগলো। এতদিন নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য আয়াশকে চুমু খেলেও, আজ ইচ্ছে প্রথমবার মন থেকে আয়াশকে চুমু খাচ্ছে। আয়াশের স্পর্শগুলো মন ভরে উপভোগ করছে ইচ্ছে। ইচ্ছের স্পর্শগুলো আজ এত গভীর দেখে যেন আয়াশ নিজেও আরও মরিয়া হয়ে গেল। সে নিমিষেই ভুলে গেল ইচ্ছের করা বিশ্বাসঘাতকতার কথা। পাগলের মতো চুমু খেতে লাগলো সে ইচ্ছেকে। দু’জনেই যেন আজ প্রতিযোগিতায় নেমেছে যে কে কাকে কত বেশি চুমু খেতে পারে।
চলবে….
“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”
চলবে….
“ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।”