অচেনা শহর পর্ব ১৬

#অচেনা_শহর💖
#সিজন(২)
#লেখিকা:–তানজিনা আক্তার মিষ্টি
#পর্ব:–[১৬]

স্নেহা তাকাও আমার দিকে। তুমি তোমার ভাইকে কোথায় দেখেছো? তার সাথে কি তোমার দেখা হয়েছে?

আমি সকাল থেকে বলে যাচ্ছি। মে ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবে। তাই রেডি হয়ে বসে আছে।

আদ্রর দিকে তাকিয়ে বললাম,,,
হ্যাঁ আমি যে অফিসে জব নিয়েছিলাম। ভাইয়া ওই অফিসের বস ছিল।

আমার কথা শুনে আদ্র দাঁড়িয়ে পরলো আর বললো হোয়াট?আদ্রর চিৎকার শুনে আমি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পরলাম।

অবাক হয়ে,,,,কি হয়েছে? আপনি চিৎকার করলেন কেন?

কিছু না। বিকেলে যাবো তাহলো ওই অফিসে। কিন্তু ওইটা তোমার ভাইয়ের কি করে হয় সেটা আমি বুঝতে পারছি না‌?
চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল।

কেন কি হয়েছে ?
অবাক হয়ে আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম।

ওইটা তো মাইশার বাবার অফিস।

আদ্রর কথা শুনে আমি চমকে উঠলাম।

মাইশা আপুদের।

হুম।

অসম্ভব আপনি জানেন না ওইটায় তো ভাইয়াই ছিলো আমার সাথে কথা হয়েছে ভাইয়ার।

কবে।

আমি বিছানায় বসে আদ্রকে সব বললাম। চোখে আমার জল চিকচিক করছে কতো দিন পর ভাই কে দেখেছিলাম আমি কাঁদতে কাঁদতে আদ্রকে সব বললাম। আদ্র আমার পাশে দাঁড়িয়েছিল। আমাকে এমন ফ্যাসফ্যাস করে কাঁদতে দেখে বিরক্ত হয়ে আমার পাশে বসলো। আমার দু গালে নিজের দু হাত রেখে মাথা উঁচু করালো আমি ঝাপসা চোখে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।

এটা তো ভালো কথা এত কাঁদার কি আছে? এতদিন পর তুমি তোমার ভাইয়াকে দেখেছো মান-অভিমানের পালা কি শেষ হয়েছে?
বলতে বলতে আদ্ব আমার চোখের পানি মুছে দিল।

না তা কখনো সম্ভব না।

মানে তুমি বলতে চাইছো তুমি তোমার ভাইয়াকে কখনো ক্ষমা করবে না বাইরে মেনে নেবে না।

আমি মাথা নেড়ে হ্যাঁ বললাম।

তুমি দিনদিন খুব মিথ্যা বলছো স্নেহা?

আদ্রর কথা শুনে আমি বিস্মিত হয়ে দিকে তাকিয়ে আছি।

আমি কি মিথ্যা বললাম?

এই যে বললা তোমার ভাইকে ক্ষমা করতে পারবে না।

পারবে নাই তো ভাইয়া যা করেছে তারপর তাকে আমি কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। তাকে শুধুই আমি ঘৃণা করি।

সত্যি শুধু ঘৃণা করো ভালোবাসো না।

সাথে সাথে উত্তর দিতে পারল না চুপ করে আছি। সত্যি কি ভাইয়া কি শুধু ঘৃণা করি ভালো কি বাসি না। দম বন্ধ হ‌ওয়া কষ্ট হচ্ছে। ভাইয়া কে আমি তো ভালোবাসি এখনো। খুব ভালোবাসি ভাইয়াকে যখন অফিসে দেখলাম আমার একটুও ঘৃনা রাগ আসে ছিল না। মন চাইছিল দৌড়ে গিয়ে ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কান্না করি।
আপন মানুষ এত অন্যায় করলেও কেন তাদের ঘৃণা করতে পারিনা। কেন তাদের জন্য বুকের ভেতর কষ্টে ফেটে যায়। কেন তাদের ভুলে থাকতে পারিনা?

কি হলো ভাইয়ের কথা ভাবছো তাইনা? সে তো কাল রাত থেকে ভেবেই যাচ্ছ কত চোখের জল ফেললে তার জন্য। তবুও বলবে তাকে তুমি ভালোবাসো না।এখনো তার জন্য রেডি হয়ে বসে আছো কিনা কি স্বপ্নে দেখেছো তাই?

আপন মানুষগুলো কেন আমাদের এত কষ্ট দেয় বলতে পারেন? কেন তাদের ভুলে থাকতে পারিনা।
বলতেই ফুঁপিয়ে কাঁদছে লাগলাম।

উফফ আবার শুরু করলে।এমন করে কাঁদলে কিন্তু নিয়ে যাব না তোমার ভাইয়ের কাছে। কান্না অফ করো।

আমি অফ করছি না খুব কান্না পাচ্ছে আমার। কিন্তু আদ্রর জন্য কাঁদতে পারলাম না ও আমার কান্না থামিয়েই ছারলো।
আমি আদ্রকে এক হাতে জরিয়ে বুকে মাথা রাখলাম আর বললাম,

আপনি মায়ের কথা বলেননি আর।

নাহ।

আমি আদ্রর বুকে থেকে মাথা তুলে বললাম,,

কেন?

তাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি।

ওই বাসায় যাবেন না।

না।
নিলিপ্ত ভঙ্গিতে বলল আদ্র।

আদ্র কথা শুনে আমি চমকে মাথা তুলে ফেললাম।
কি সব বলছেন যাবেন না মানে? যাবেন না কেন?

যেখানে আমার বউয়ের জায়গা হয় নাই সেখানে আমি কি করে যাব?

আমার জন্য নিজের পরিবারকে ছাড়বেন?

আদ্র কিছু বলল না চুপ করে আছে।

আমি আদ্রর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম ও কষ্ট পাচ্ছে। সবাই তার পরিবারকে খুব ভালোবাসে আমি চাইনা আমার জন্য আদ্র নিজের পরিবারকে হারাক। আদ্রর মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে। ও যে ওর পরিবারকে কতটা মিস করে ওর মুখ দেখলেই বোঝা যায়।

আমি আদ্রর হাত আঁকড়ে ধরে বললাম,,
আদ্র‌ আপনি আমার জন্য নিজের পরিবারকে নিজে থেকে দূড়ে রাইখেন না। পরিবার সবার জন্য কি সেইটা আমি বুঝি? আমার জন্য যদি আপনি পরিবার ছাড়েন তাহলে আমি নিজেকে কখনো ক্ষমা করতে পারবোনা। কেউ তো আমাকে পছন্দই করেনা সেখানে আমি না থাকাই ভালো আপনি বরঞ্চ আপনার পরিবার নিয়ে….

কথার মাঝে আদ্র আমার হাত ছাড়িয়ে নিল।
আবার তোমাকে ছাড়ার কথা বলবে।সবসময় অযৌক্তিক কথা বলো কেন আর কে বলেছে আমি আমার পরিবার ছেড়ে দিয়েছি। আমি না তোমাকে ছাড়বো আর না আমার পরিবারকে।তাদেরকে ভুল বোঝানো হয়েছে সেই ভুলটা যে বুঝিয়েছে
সেই ভাঙ্গাবে তার পর আমি আবার আমার পরিবারে ফিরে যাব। যেখানে আমার বাবা-মা আর আমার বউ থাকবে আমার সাথে।

আমি আদ্র দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।
তখনই হুড়মুড় করে জাইন এসে ঢুকলো আমাদের রুমে। আমি তখন আদ্র হাত টেনে ধরে ছিলাম কারণ আদ্র আমার উপর রাগ করে আছে। তখনই জাইন আশায় তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দাঁড়িয়ে পরি।

আদ্র ব্রো একা একা আর ভালো লাগেনা ক্লান্ত হয়ে গেলাম।এবার আমাকে একটু বাইরের দিকে চক্কর দিতে হবে দেখি কোন গার্লফ্রেন্ড বানাতে পারি কিনা। তোমরা দুজন তো আর আমার দিকে নজর দাও না এদিকে আমি এক কোনায় পড়ে আছি একা আমারও তো একজন সঙ্গী দরকার।

আদ্র বললো কোথায় যাবি?

দেখি কোথায় যাওয়া যায়।

চল আমরাও যাই একা সমস্যা হবে না তোর।

না না তোমাকে নিয়ে ভাবীর চোখে আমি অপরাধী হতে চাই না। তুমি বরং ভাবির সাথে থাকো আর রোমান্স করো। আমি একা গিয়ে দুটো হয়ে আসবো নি।

বলে জাইয়েন চলে গেল।

আমি এগিয়ে এসে আজকে বললাম আপনি রাগ করেছেন আমার উপর?
মুখটা ছোট্ট করে বললাম।

ফট করে আদ্র আমার কোমর জড়িয়ে ধরলো। আমি চোখ বড় বড় করে আদ্রর দিকে তাকিয়ে আছি।
কি করছেন কি?

রোমান্স করছি দেখলেনা। জাইন কি বলে গেল ওর কথাটা তো রাখতে হবে তাইনা।

আপনি না আমার উপর রাগ করলেন।
অবাক হয়ে ছোটানো চেষ্টা করতে বললাম।

রাগ করলে রোমান্স করতে হয় বেশি বেশি।

বলতে বলতে আদ্র ফট করে আমার ঠোটের উপর শুকনো একটা চুমু খেলো। ঠোঁটের ওপর আদ্রর স্পর্শ পেয়ে আমি বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম। আমি ফ্রিজ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি মুখের ভেতর যেন হাতুড়ি পেটা হচ্ছে।
____________

বাইরে এসে জাইন ভাবল কোথায় যাওয়া যায়।
একা একা কি কিছু ভালো লাগে ধুর। আদ্রর গাড়ি তে ওঠে স্টার দিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল।কিছূ দূরে এসে গাড়ি থামিয়ে ভাবল কি করা যায়? তখনই কারো কথা মনে পড়ে ফোন নিল দুই তিনবার ভেবে তার নাম্বারে ডায়াল করলো। নাম্বার রিং হচ্ছে কিন্তু রিসিভ হলো না। ঘড়িতে টাইম দেখে নিল। তারপর ঠোটে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে নিজের গন্তব্যে ছুটলো।

টিফিন টাইমে আশা নিজের ফ্রেন্ড এর সাথে কলেজের বাইরে এলো। তখনই গেটের বাইরে সে একজন কে দেখেই থমকে গেল। তার দিকে চোখ সরে পাশে তাকালো না ভাই আসেনি তাহলে এই লোকটা এখানে কি করছে?
জাইন আশাকে দেখেই ঠোঁটে হাসি ফুটিয়ে তুলল তারপর বড় বড় পা ফেলে আশার সামনে এসে দাড়াল।

হাই,

জাইন এগিয়ে সেই হাই বললো আশা অবাক হয়ে জাইনের দিকে তাকিয়ে আছে আশার ফ্রেন্ড ও।

আপনি এখানে কি করছেন? ভাইয়া তো আসেনি?

কি আর করব তোমার সাথে আড্ডা দিতে এলাম?

কি?

তোমার ভাই তোমাকে আমার সাথে যেতে বলেছে তাই নিতে এলাম আমারও তো তোমার সাথে আড্ডা দেওয়ার ইচ্ছে নাই।

ভাই আমাকে যেতে বলেছে কোথায়?
অবাক হয়ে বলল আশা।

হ্যাঁ বলতো তোমার ভাই যেখানে থাকে সেখানে। যাবে কিনা বল?

ভাইয়া নিজে না এসে আপনাকে কেন পাঠালো?

বোকা মেয়ে তোমার ভাই কিভাবে সেতো তার বউ নিয়ে বিজি।

আপনি সবসময় কথা বলেন কেন ভাবি কি ভাইয়ার কাছে।

তো কার কাছে থাকবে আমার কাছে।

আপনি খুব বাজে লোক তো।আমি কি বলেছি আপনার কাছে থাকবে? সব সময় রং কথা বলা।
আশার রাগ নিয়ে বলল লোকটা সব কথায় তেরাম কি করে? ফাজিল লোক একটা!

হুট করে জাইন আশার গাল টেনে ধরে বললো,,
সো সুইট রাগলে তোমাকে জাক্কাস লাগে।

জাইনের কথা শুনে আশা ভ্যাবাচ্যাকা খেলো। স্তব্ধ হয়ে জাইনের দিকে তাকিয়ে আছে।
জাইন হাত সরিয়ে নিতেই নিজেই নিজের গালে স্পর্শ করে জাইনের দিকে তাকাল,,,
অসভ্য লোক আপনি আমার গালে হাত দিলেন কেন?

তুমি রাগলে কেন?

আমারই ইচ্ছে হয়েছে। আমি রাগছি আপনি আমার গালে হাত দিবেন কেন?

তুমি রাগলে বলেই তো আমার হাতটা তোমার গালে চলে গেল।এটা আমার দোষ কোথায় তুমি রাখলে তো তোমার গালটা লাল হয়ে যায় আর আমার হাতটা….

আপনি একটা অসভ্য লোক চলে যান আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না। এই সাথী চলতো।

বলে আশা রেঘে গিয়ে সাথীর হাত ধরে চলে যেতে চাইলো। জাইন একপ্রকার লাফিয়ে ওদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো,,

আরে তোমার ভাই তো তোমাকে যেতে বলেছে যাবেনা।

না আপনার সাথে আমি কোথাও যাবো না আপনার মত অসভ্য লোকের সাথে আমি কোথাও যেতে চাই না।

~~চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here