#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_৬ (বাসররাত!)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ (অনু)
নববধূ সেজে বসে আছি। বাইরে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। সেই সাথে অশ্রুপাত ঘটছে আমার চক্ষুদ্বয়েও। কয়েক মুহূর্তেই আমি বিবাহিতা নারী হয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ আগেও তো এমন কিছু কল্পনায় ছিলো না আমার।
কিয়ৎক্ষণ পূর্বে—
“একটু বাদেই আমাদের বিয়ে। নিজে থেকে রেডি হয়ে যাও। নয়তো তোমাকে প্রস্তুত করতে খুব ভালো করেই জানি আমি।”
কথাটা শুনতেই আমার মাথায় বজ্রাঘাত পড়লো। কি বলছেন উনি? বিয়ে! বিয়ে কি কোনো ছেলেখেলা নাকি? তার উপর এই লোকটির নাম পর্যন্ত জানিনা আমি।
“মজা করছেন নিশ্চয়ই!”
“মজা করার মুডে নেই। জলদি রেডি হও। কাজী এসে গিয়েছে।”
আমি দু’কদম পিছে চলে গেলাম।
তেজ মিশ্রিত আওয়াজে বললাম,“আমি এই বিয়ে করবো না।”
হালকা হাসলেন।
কিছুক্ষণ পর ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা বের করতে করতে বললেন,“এভাবে যে মানবে না তা ভালো করেই জানি। দেখো এটা!”
ফোনটা আমার সামনে ধরলেন। আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেলো। বুকটা ধুক করে উঠলো। বাবা, ছোটমা, আপুকে বেঁধে রাখা। আমি ঘৃণার চোখে তাকালাম উনার পানে। তাতে মনে হয়না তেমন কোনো পরিবর্তন এলো।
হাসিটা কমিয়ে বললেন,“বিয়ে করবে নাকি এদের ওপারে পাঠাবো? বিয়ে করবে?”
শেষোক্ত কথাটায় তেজ ছিলো। দমে গেলাম আমি। আমার জন্য ওদের ক্ষতি চাইনা।
সাথেসাথে ব্যক্ত করলাম,“করবো। করবো বিয়ে।”
হাসলেন খানিকটা।
আমার দিকে মৃদু ঝুঁকে বললেন,“রেডি কি নিজে হয়ে নেবে নাকি আমি হেল্প করবো? যদি তুমি বলো তো করতেই পারি। মাইন্ড করবো না।”
“আমি রেডি হচ্ছি।”
লোকটি “গুড” বলেই চলে গেলো। এরপর বিয়ে। প্রতিটি মুহূর্ত আমার দমবন্ধ হয়ে আসছিলো। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গিয়েছিলো। পাথরের ন্যায় বসে ছিলাম। যা হচ্ছিলো তার কোনো কথা কানে যাচ্ছিলো না। খেয়ালে একটাই কথা, আমি কি তবে নিজের কাছ থেকে হারিয়ে যাবো? কবুল বলতে বলা হলো যখন, তখন আমার গলা জড়িয়ে গেলো। বলতেই পারছিলাম না। কবুল! খুব সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে ভারী একটি শব্দ। এই একটি শব্দ বলার সাথে সাথেই আমার দুনিয়া পাল্টে গেলো। হয়ে গেলাম, সম্পূর্ণ অজানা একজনের অর্ধাঙ্গিনী।
কারো উপস্থিতির আভাস পেয়ে চোখ তুলে তাকালাম। সেই লোকটি, যে খানিকক্ষণ আগেই আমার স্বামী নামক উপাধিটি পেয়েছে। গুটিয়ে গেলাম আমি। জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি। লোকটি আমার থেকে কিছুটা দূরে, বিছানায় বসলেন।
“আমি আরহান আফসাদ খান। খান ইন্ডাস্ট্রির ওনার। বাড়িতে তোমার একজন শাশুড়ি মা আর একজন ননদ আছে। তবে এখনি ঐবাড়িতে নিয়ে যেতে পারবোনা।”
উনার এটুকু পরিচয়ে আমার ভয় কমেনি। আরো বেড়েছে। আমাকে বিয়ে করার পেছনের কারণটা কি? আমিতো উনাদের মতো হাই সোসাইটি থেকে বিলং করিনা। দেখতেও আহামরি সুন্দরী না। তবে?
আমার প্রশ্নবিদ্ধ চাহনির দরুন উনার ঠোঁটের কোন ঘেঁষে হাসি ছড়িয়ে পড়লো।
পুনরায় বলা শুরু করলো,“এক বছর আগে দেখেছি তোমায়। মস্তিষ্কের প্রতিটি নিউরনে নিউরনে তুমিনামক আসক্তি ছড়িয়ে গেলো। ভাবনা জুড়ে তোমার বিস্তার হলো। তোমাকে ভাবতে ভালো লাগতো, কল্পনায় শান্তি আসতো। কিন্তু আমার অনুভূতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলাম আমি। দ্বিতীয়বার, কোনো এক পূর্ণিমার গভীর রজনীতে দেখা পেলাম। তুমি চন্দ্র বিলাসে ব্যাস্ত। পুনরায় তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন বুনা শুরু করলাম। কখনো নিজেকে কারোর কাছে এক্সপ্লেইন করিনি। আমার অর্ধাঙ্গিনী তুমি। সবটা জানার অধিকার তোমার আছে। আর হ্যাঁ! প্রতি রাতে তোমার কাছে আমিই যেতাম।”
উনার শেষোক্ত কথাটি শুনে চকিতে তাকালাম। ইনিই আমার ছায়ামানব? এক মিনিট! কি বললাম আমি? “আমার ছায়ামানব”? এতো সহজে “আমার” বলে ফেললাম?
এরই মধ্যে, আরহান আমাকে ফ্রেশ হয়ে চেঞ্জ করে নিতে বলে বললেন,“আমার একটা কাজে বেরোতে হবে, ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিবে। সার্ভেন্ট এসে খাবার দিয়ে যাবে। আমি দেরি করবো না। আর মনে রেখো একটা কথা, তোমার পরিবারের সবাই কিন্তু আমার হাতেই আছে।”
চলে গেলেন আরহান।
যাওয়ার আগে আমাকে আরো একটা কথা বলে গেলেন, “আজ থেকে আমার সবকিছুতে তোমার অর্ধেক ভাগ আছে। কাবার্ড এ তোমার জন্য অনেকগুলো শাড়ি রাখা আছে। পছন্দমত একটা বের করে নাও। আমি বের হলেই ফ্রেশ হয়ে নিও। এতো ভারী শাড়ি-গহনায় ঝামেলা হচ্ছে তোমার।”
উনি চলে যেতেই, উঠে দাঁড়ালাম। এগিয়ে গিয়ে কাবার্ড খুলতেই দেখলাম, অর্ধেকটা শাড়িতে ভরা। সবগুলো কি সুন্দর! এখান থেকে একটা ছাই রঙ্গা শাড়ি তুলে নিলাম। ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে, একপলক নিজেকে দেখে নিলাম। চেহারায় উজ্জ্বলতা এসেছে। আমার হিসাবমতে মুখখানা মলিন থাকার কথা। তা হলো না কেনো?
কিছুক্ষণ পূর্বে উনাকে নিয়ে মনের গভীরে যেই সুপ্ত অনুভুতি জেগে উঠেছিলো, তা মুহূর্তেই নিভে গেলো। লোকটা খুব খারাপ। নয়তো ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে কেনো করতে যাবে? মনের মধ্যে এক আকাশ সমান রাগ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। হয়তো এটা রাগ, নয়তো অভিমান!
________________
“নিশা! তোর ভাইকে কল দে তো, কই আছে ছেলেটা? কাল থেকে দেখিনি, আজ দুপুরে খেতে আসবে না?” নিশাকে উদ্দেশ্য করে আরহানের মা এই কথাটি বললেন।
আরহান শত ব্যস্ততার মাঝেও লাঞ্চটা পরিবারের সাথেই করে। আরহানের মায়ের একটাই কথা, ছেলে তার এমন ছিলো না। সময় ও পরিস্থিতি বাধ্য করেছে।
নিশা মায়ের কথার প্রেক্ষিতে বললো,“ভাইয়াকে কল দিচ্ছি, দাঁড়াও।”
নিশা কল দেওয়ার আগেই সেখানে রুদ্রের আগমন ঘটলো। মিষ্টি হেসে আরহানের মাকে সালাম দিলো।
আরহানের মা সালামের জবাব দিয়েই বললেন,“আরে রুদ্র! এখন এলি? এই মাকে তো মনেই পড়ে না তোর!”
“না মামনি, এরকম না। কাজের প্রেশার অনেক বেশি তো।”
কথাটা বলার এক ফাঁকে নিশার দিকে তাকালো। মনটা বড্ড খারাপ জিনিস। নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে বেশি টানে। এই টানেই তো আবারও এই বাড়িতে চলে এলো রুদ্র। ভালোবাসার মানুষটির দেখা না পেয়ে হাজারো জনম কেটে যায় সহজেই। কিন্তু একবার তার দেখা পেয়ে গেলে, অবাধ্য চক্ষুদ্বয় তাকে বার বার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। ভাবনায় দিবারাত্রি শুধু সে’ই বসত করে। মন-মস্তিষ্ক সবটাই জুড়ে শুধু সেই একজনেরই নাম নেচে বেড়ায়।তেমনটাই হচ্ছে রুদ্রের সাথে। এতদিন নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রেখেও আজ আর পারছে না। তাই তো নিশার আঙিনায় রুদ্রের আগমন ঘটলো।
টুকটাক কথা বলে আরহানের মা কিচেনে চলে গেলো, কিছু খাবার তৈরির উদ্দেশ্যে। রুদ্র একটা জরুরি কথা বলতে চেয়েছিল আরহানের মাকে।
কিন্তু উনি বললেন,“এসে শুনবো।”
ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে আছে নিশা। প্রিয়মানুষটির আগমনের সাথে মনে এমন আনন্দ আসে কেনো?? নিশার উঠে যেতে ইচ্ছে হচ্ছে। কিন্তু সে তো পাথর হয়ে বসে আছে। নড়তেও পারছে না। রুদ্র একপলক নিশাকে দেখে, ঠিক সামনের সোফায় বসে পড়লো।
হালকা কেশে মনোযোগ আকর্ষণ করেই বলে উঠলো,“কেমন আছো নিশা?”
সর্বাঙ্গে এক অন্যরকম শিহরণ খেলে গেলো। প্রিয়মানুষটির মুখে নিজের নাম শুনতে পারা বুঝি এতোটাই সুখের?
নিশা তাকালো এই শ্যামপুরুষের মুখে পানে। চোখে চোখে মিলন হতেই চোখ নামিয়ে নিলো।
মাথা নিচু করে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো, “জ’জি ভালো, আপনি?”
“হুঁ, ভালো।”
নার্ভাস শুধু নিশা না, রুদ্রও। নিশা আড়চোখে বারবার দেখে যাচ্ছে। আর রুদ্র! সে তো চোখ অন্যদিকে সরাচ্ছেই না। আঁখি পল্লব ফেলতেও ভয় পাচ্ছে, যেনো এই এক পলক না দেখলে অনেকটা কম পড়ে যাবে। এদের দুজনের কথাটা শব্দে না, হচ্ছে নয়নে। হচ্ছে মনে।
ফোনের রিংটোনের সাউন্ডে হকচকিয়ে উঠলো নিশা। ফোন হাতে নিতেই দেখলো, তার ভাইয়ার কল। উঠে কল রিসিভ করে কিচেনে চলে গেলো।
মনে মনে নিজ মনকে বলছে,“যাক বাঁচলাম। এখানে থাকলে আর কিছুক্ষনেই দম বন্ধ হয়ে যেতো।”
“কিছু বলার ছিলো। মায়ের কাছে যা। আর স্পিকারে দে।”
আরহানের একসাথে এতোগুলো কথা বলায় নিশা বিস্মিত হলো।
তার ভাইতো অনেক বছর আগেই “দ্যা ওয়ান লাইনার” ট্যাগটা পেয়েছে।
এতোগুলো লাইন বললো যে? নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু।
ভাবনায় মশগুল নিশা ভাবনা হতে বের হয়ে বললো,“মায়ের কাছেই আছি। আর স্পিকারেও দিচ্ছি। বলো এবার।”
“একটা মেয়েকে পছন্দ করি। কিছু প্রবলেম ছিলো বলে এতোদিন বিয়ে করিনি, আজকে বিয়ে না করলে প্রবলেম হতো। তাই আমি বিয়ে করে নিয়েছি।”
ছেলের মুখে এমন কথা হজম করতে পারছে না আরহানের মা। হাতে থাকা খুন্তিটা পড়ে গেলো। নিশা পানি খাচ্ছিলো, ও বিষম খেলো। যেই ছেলেকে বিয়ের জন্য এতো প্রেশার দেওয়ার পরও মুখ দিয়ে টু শব্দ বের করতে পারেনি, সেই ছেলে নিজে থেকে বিয়ে করে নিয়েছে। প্রথমে বিস্মিত হলেও ভীষণ খুশি তারা। ছেলে যাকেই বিয়ে করুক, করেছে তো। এই অনেক!
খুশিতে উল্লাসিত কন্ঠে আরহানের মা বললেন,“বউ নিয়ে বাড়ি আয় বাবা।”
নিশাও বললো,“হ্যাঁ ভাইয়া। ভাবিকে নিয়ে এসো না।”
আরহান কণ্ঠস্বর গম্ভীর করে বললেন,“এখন আনা সম্ভব নয়। আর কিছুদিন আমিও ওর সাথেই আমাদের ফার্মহাউজে থাকবো। চিন্তা করোনা তোমরা। খুব শীঘ্রই নিয়ে আসবো ওকে।”
কল কেটে দিলো আরহান। আরহানের মা আর নিশা একবার দুজন দুজনের দিকে তাকালো। পরপর খুব জোরে হেসে জড়িয়ে ধরলো একে অপরকে। আরহানের মা ফ্রিজ থেকে মিষ্টির প্যাকেট বের করে নিলেন। নিশাকে খাইয়ে দিলো। নিশাও ওর মাকে খাওয়ালো। আরহানের মা এরপর মিষ্টি নিয়ে ড্রইং রুমে চলে গেলো।
রুদ্রকে খাইয়ে দিয়ে বললো,“আমার আরহান বিয়ে করে নিয়েছে বাবা। কি যে খুশি আমি! বলে বোঝাতে পারবো না।”
রুদ্র ঠোঁট প্রসারিত করে হেসে বললো,“এই খবরটা বলতেই এসেছিলাম।”
পুরো পরিবারে খুশির জোয়ার নেমেছে। পরিবারে নতুন সদস্যের আগমন ঘটেছে। এ যে কতোটা খুশির! এই পরিবারকে না দেখলে বোঝাই যাবে না।
____________________
বেডরুমে বসে ড্রিংক করছে তৃষ্ণা। এটা তৃষ্ণার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু আজ যে তার নেশা হচ্ছে না। প্রথম কোনো নারী, তৃষ্ণার মনে এমন ভাবে প্রভাব ফেললো। কি আছে ঐ নারীতে?
গ্লাস হাতে নিয়ে একবার গভীর দৃষ্টিতে তাকালো।
হালকা আওয়াজে বলে উঠলো,“এর নেশার চেয়েও বেশি নেশাক্ত আপনি, নয়নতারা। হয়তো এই কিছু সময়েই আমি আপনাতে আসক্ত হয়ে পড়েছি।”
এক চুমুকে পুরোটা শেষ করলো। মিনিট খানেক বাদেই তৃষ্ণার ফোনে কল এলো। দুদিন আগে তৃষ্ণার বিশ্বস্ত কর্মচারী, সায়েদের মৃত্যুতে একটু লোকসান হয়েছিলো। তবে খুব একটা সমস্যা হয়নি। লোকের অভাব আছে নাকি?
কলটা দিয়েছে তার নতুন কর্মচারী। সায়েদের জায়গায় রাখা হয়েছে। নাম আশিক। বাচ্চা ছেলে, বয়স বেশি হলে উনিশ হবে। তবে এসব বিষয়ে খুব পটু।
তৃষ্ণা কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,“স্যার, মাইয়াটার খবর পাইসি।”
তৃষ্ণা রেগে গেলো। হাতের গ্লাসটি জোরে মেঝেতে ফেলে বললো,“কল হার ম্যাম!”
আশিক ভয় পেয়ে গেলো। কম্পনরত ধীর কণ্ঠে আঞ্চলিক ভাষায় বললো,“জী স্যার, ম্যামের খবর পাইসি।”
তৃষ্ণা মৃদু হাসলো। বললো,“ডিটেইলস বলতে থাকো।”
“নাম, অর্শীয়া বীনি। অনার্স করতাছে। থার্ড ইয়ারে এইবার। মা মারা গ্যাছে পাঁচ বছর বয়সে। হ্যার বাবা, একটা মহিলারে বিয়া কইরা আনে, ম্যামরে দেখাশোনা করার লাইগা। হেই মহিলার আবার আগের ঘরে মাইয়া আসিলো। মধ্যবিত্ত ঘরের মাইয়া হেতী। আইজকা হ্যাগো বাইত গেসিলাম। কিন্তু…”
এই “কিন্তু” শব্দটার জন্য তৃষ্ণার কপাল কুচকে এলো। জিজ্ঞেস করলো,“কিন্তু কি?”
“স্যার, আইজকা পুরা বাইত্তে কাউরে খুইজা পাইনাই। কেউ আসিলো না। আশেপাশে খোঁজ লাগাইসি, তাও কিছু পাইলাম না। বাইতে তালা মারাও আসিলো না।”
তৃষ্ণা চিল্লিয়ে উঠলো,“হোয়াট?”
____________________________
গভীর রাত। বাইরে বৃষ্টির তেজ ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে, কমছে। আমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছি। আমার জীবনটা এই কোন মোড়ে এসে থমকে গেলো? খেই হারানো নৌকার মতো হয়ে গিয়েছি আমি। কোথায় যাবো? এখানে থাকতে ইচ্ছে হয় না। কিন্তু যেতেও মন সায় দেয় না। এরকম একজন রহস্যময় ছায়ামানবের সাথে থাকতে ভয় লাগে। আবার যেতেও পারবো না, পরিবারের সবাই যে বন্দী তার হাতেই। এতকাল পর জীবনের সুখ নামক অনুভূতির সাক্ষাৎ পেলাম। পরক্ষনেই মনে হয়, উনি কিডন্যাপ করেছেন আমাকে সহ আমার পুরো পরিবারকে, ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছেন। লোকটি বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, আবার খারাপ বলে আখ্যায়িত করতেও। কি করবো আমি? মন মস্তিষ্কের এই খেলায় জিতবে কে?
গাড়ির শব্দে ধ্যান ভাঙলো। গেট দিয়ে আরহানের গাড়ি প্রবেশ করছে। আমি রুমে গেলাম না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলাম, যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কিছুক্ষণ বাদে আরহান রুমে প্রবেশ করলেন। আমাকে রুমে না পেয়ে সোজা ব্যালকনিতে চলে এলেন। একটা আটকে আসা শ্বাস ফেললেন।
বললেন,“ভেবেছি, চলে গিয়েছো।”
আমি উত্তর দিলাম না। আরহান আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। আকাশ পানে নজর বন্দী আমার আর আরহানের নজর তার শুকতারার উপর। আকাশে নয়, পাশে।
আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,“খেয়েছো?”
মৃদু কন্ঠে “হুঁ” বললাম।
“আমিও খেয়েই এসেছি।”
পুনরায় আরহান “এসো” বলে রুমে গেলেন।
আমি গিয়ে বিছানায় বসলাম।
আরহান কাবার্ড এর সামনে গেলেন। একটা এনভেলাপ বের করে আমার সামনে এগিয়ে এলেন। আমার পাশে বসে সযত্নে আমার হাতটি ধরলেন। শরীরে এক অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেলো। এই স্পর্শ বড্ড চেনা, বড্ড আকাঙ্খিত। আমি চেয়েও হাত ছাড়িয়ে নিতে পারছি না।
আরহান আমার কম্পনরত হাতটি তুলে ধরে, কিছুক্ষণ আগের আনা এনভেলাপটি দিয়ে বললেন,“এতে দেনমোহরের টাকা আছে। এই টাকাটা আজ থেকে বছর দশেক আগের। হাতখরচের টাকা জমিয়ে রেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, আমার ভবিষ্যত বউ যখন জানবে, তার স্বামীর জমানো টাকা এটা, অনেক বেশিই খুশি হবে। সেজন্য আরো উৎসাহিত হয়ে, টাকাটা জমিয়েছিলাম। খুব একটা নেই, তবে যা আছে, সবটা তোমার নামেই বরাদ্দ ছিলো এতো বছর আগ থেকেই। আশা রাখছি, ফিরিয়ে দেবে না।”
আমার কি যেনো হলো, আর ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। আরহান মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে গেলেন।
আরহানের ওয়াশরুমে যেতেই আমি উঠে দাঁড়ালাম। এনভেলাপের দিকে এক পলক তাকালাম। আমার জন্য যত্নে ছিলো? ভাবতেই আনমনে অধরকোনে সূক্ষ্ম এক হাসির রেখা তৈরি হলো। এনভেলাপটি হাতে তুলে নিলাম। পাশের ড্রয়ারে রেখে দিলাম।
মুহূর্তেই মাথায় এলো,“আজ আমাদের বাসররাত!”
চলবে..?
[]