অদ্ভুত আসক্তি পর্ব -০৪+৫

#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_৪ (ভিলেনের আগমন নাকি হিরোর?)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ (অনু)

চলমান গাড়ি এসে থামলো বিশাল বড় এক ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। চারিদিকে গার্ডস। আরহানের বাড়ি এটা। গাড়ি থেকে আরহান নামলো।
রুদ্র এখানে থাকে না। বাড়ির পাশেই স্টাফ কোয়ার্টার আছে। রুদ্র সেখানেই থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নিজস্ব দুনিয়া বলতে স্যার, কাজ আর অব্যক্ত এক ভালোবাসা রয়েছে তার।

রুদ্র কোয়ার্টারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গাড়ি স্টার্ট দিলো। আরহান থামিয়ে দিলো। থেকে যেতে বললো। রুদ্রের অস্বস্তি হচ্ছে এখানে থাকার কথা শুনতেই। তবুও তার স্যারের কথা ফেলতে পারলো না।

আরহান ধীরকণ্ঠে “কাম” বলে বাড়ির ভেতরের দিকে পা বাড়ালো।
রুদ্র আরহানকে অনুসরণ করে বাড়িতে ঢুকলো।

বাড়িতে ঢুকতেই রুদ্রের নজর গেলো ড্রয়িং রুমে থাকা এক অপ্সরীর দিকে। সোফায় বসে আছে। নজর তার টিভিতে। উপভোগ করছে কার্টুন। নিষ্পাপ মুখশ্রীতে রয়েছে একরাশ মায়া। আর এই মুখখানা দেখেই রুদ্রের হৃদপিন্ড থমকে গেলো। চারিপাশ ভুলে তাকিয়ে রইলো এই মোহময়ী নারীর দিকে। নিজ মনকে একাজে প্রায়ই নিষেধাজ্ঞা জানায় রুদ্র। কিন্তু মন কি আর কথা শোনে?

“ভাইয়া! চলে এসেছো?”

নিশার সুরেলা কণ্ঠে ধ্যান ভাঙলো। রুদ্রের খেয়ালে এলো, এইমাত্র সে নিজের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলো। নিশাকে দেখলে কেনো যে রুদ্রের হৃদপিন্ড অসুস্থ হয়ে যায়!

আরহান নিশার কথার উত্তরে হালকা আওয়াজে “হুঁ” বলে রুমে চলে গেলো।

নিশা জানে তার ভাইয়া এরকমই। তাই কিছু মনে করলো না। তবে অন্য কেউ হলে, নিশ্চয়ই অপমানিত বোধ করতো।

ছোট্ট একটা শ্বাস ফেলে চোখ ঘুরালো দরজার দিকে। চোখ দুটো স্থির হয়ে গেলো। সামনে দাড়িয়ে আছে এক সুঠাম দেহের অধিকারী পুরুষ। শ্যাম বর্না পুরুষ বোধ হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দেখতে হয়! দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো নিশা। রুদ্র একটা চাঁদ। তাকে দেখতে পারবে, কল্পনায় স্বপ্ন বুনতে পারবে, তবে ছুঁতে পারবে না। সেই সাধ্যি নেই নিশার। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। রুদ্রও প্রস্থান করলো।

আরহান নিজের রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে নিলো। গোডাউনেই চেঞ্জ করে সব রক্ত শরীর থেকে ধুয়ে এসেছিলো। তাই বাড়ির কেউ এটা দেখেনি। আরহানের এই সিক্রেট গুলো তার মা-বোন জানে না।

রাত বাজে বারোটা। আরহানের এখন বেরোতে হবে। উদ্দেশ্য তার শুকতারা। সে তার শুকতারাকে না দেখে থাকতে পারে না। সম্ভব হলে, খুব আগেই নিজের কাছে নিয়ে আসতো। কিন্তু বাঁধা হয়ে মাঝে ছিলো তৃষ্ণা।
আরহানের সবচেয়ে বড় শত্রু। আরহানের এর আগেও অনেক শত্রু হয়েছে, তবে কখনো কাউকে নিয়ে এতোটা বিপাকে পড়তে হয়নি। খুব চালাক এই তৃষ্ণা। নীলাভ চক্ষুদ্বয়ের অধিকারী। অধর জুড়ে রয়েছে নেশাক্ত এক হাসি। সমগ্র চেহারা মাদকতায় ভরপুর। আসক্তি তার নারী। যখন যেই নারীকে ভালো লেগেছে, সেই নারী নিজ থেকে তাকে সাড়া দিয়েছে। গান এবং গান(বন্দুক) দুটোতেই সেরা তৃষ্ণা। আর তার ডানহাত ছিলো এই গুপ্তচর। যাকে দিয়ে আরহানের সব খবরাখবর নিতো। একে শেষ করে দিয়েছে আরহান। এখন তৃষ্ণা দুর্বল।
আরহানেরতো একমাত্র ভয় তার শুকতারা কে নিয়ে। আর এই তৃষ্ণা আরহানকে হারাতে যেকোনো লেভেলে নামতে পারে। কোনো ভাবে আরহানের উইক পয়েন্ট যদি ধরে ফেলে! তাই লুকিয়ে রাতের বেলায় তার শুকতারাকে দেখতে যায়। যেমনটি এখন বেরোচ্ছে।

​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​
________________________
রাতের গভীরতা বেড়ে গিয়েছে। নিস্তব্ধ রাত্রিতে কারো পায়ের ঠকঠক শব্দ ভেসে এলো আমার শ্রবণ ইন্দ্রীয়তে। গভীর ঘুমে মগ্ন আমি। তবুও এই শব্দ শুনতে পারছি। আঁখি পল্লব মেলতে অক্ষম। প্রতিরাতের মতো এবারেও। ছায়ামানব এগিয়ে এসে হাঁটু মুড়ে বসলো মেঝেতে।
এই ছায়ামানবতো আরহানই। প্রতিবারের মতো আমার ডান হাতটি নিজের হাতে নিলো। হাতের পিঠে এঁকে দিলো, উষ্ণ পরশ। গভীর নয়নে দেখে যাচ্ছে তার শুকতারাকে।
এ দেখায় এতো শান্তি! যেদিন প্রথম দেখেছিলো, সেদিন থেকে আমাকে দেখলেই আরহানের এমনটি লাগে।
আজ থেকে বছর খানেক আগেই তো দেখেছে। এয়ারপোর্ট থেকে ব্যাক করার পর, যখন আরহানের গাড়ি জ্যামে আটকে গিয়েছিলো, তখন ফুটপাত ধরে হেঁটে চলছিলো এক মেয়ে। তাকে দেখেই তো আরহান থমকে গিয়েছিল। এক মায়াবিনীর মায়াজালে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সেই দিনটি কি আরহান ভুলতে পারে? মনে আছে প্রতিটি মুহূর্ত। এখনও ভাবতে গেলে সব জীবন্ত লাগে।
সেদিন সেই মায়াবিনীর হৃদয় ছিলো ভীষণ ভারাক্রান্ত। একলা পথে গোমড়া মুখশ্রী নিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। পরনে সুতির থ্রিপিস। ওড়নাটা মাথায় দেওয়া। সামনে ছিলো এক কৃষ্ণচূড়া গাছ। মাথাটা খানিক উঁচু করলো। রক্তলাল কৃষ্ণচূড়া দেখে তার ভারাক্রান্ত হৃদয়, নিমিষেই খুশির ঝলকানি দিয়ে উঠলো। আহা! জীবন নাই বা সুন্দর হলো। প্রকৃতি কি সুন্দর!
প্রাণখুলে হেসে উঠলো মেয়েটি। আর আরহান সেই হাসিটি রাস্তার পাশে গাড়িতে বসে তৎক্ষনাৎ মুঠোফোনে বন্দী করে নিলো।
এরপর কয়েক রাত নিদ্রাহীন কেটেছে। ব্যাস্ত নগরীতে নির্ঘুম থেকে আরহান তার শুকতারাকে নিয়ে বুনেছে অজস্র স্বপ্ন। তবে নিজের মনের অনুভুতি সম্পর্কে অজ্ঞাত ছিলো আরহান। বুঝতে পেরেছিলো দ্বিতীয় দেখায়। এইতো কিছু মাস আগেই। গভীর রজনীতে, ছাদের একপাশে রেলিং ধরে দাড়িয়ে ছিলো সেই মেয়েটি। চোখ দুটো নিক্ষিপ্ত ছিলো ঐ অন্ধকারাচ্ছন্ন আকাশপানে। সেদিন দ্বিতীয় বারের মতো আরহানের হৃদপিন্ড থমকে যায়। তাও একই মানুষের জন্য।
মনের কোঠায় সেই মেয়েটির জন্য “শুকতারা” সম্বোধনটি বরাদ্দ হয়ে যায়। সে বার আরহান তার মনের সুপ্ত অনুভুতি সম্পর্কে অবগত হয়েছিলো। কিন্তু, তৃষ্ণা….

আরহান মস্তিষ্কের পুরনো স্মৃতিচারণ আপাদত বন্ধ করলো। নেশাক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো তার শুকতারার দিকে। ঘর্মাক্ত মুখশ্রী, টানা টানা নেত্র, আলগা হওয়া অধরযুগল, ফুলো কপোল সব মিলিয়ে আরহানের একটাই কথা বলতে ইচ্ছে হয়,“আমার প্রতিটি নির্ঘুম রাত ধন্য, তোমার এরূপ দেখার সৌভাগ্য পেয়েছি…”

আলতো ভাবে হাত স্পর্শ করলো তার শুকতারার ঠিক কানের নিচে।বৃদ্ধাঙ্গুল গালে কিছু এঁকে বেড়াচ্ছে। আরহানের স্থির দৃষ্টি তার শুকতারার নেত্রযুগল থেকে সরে অবলোকন করলো গলার নিচে। এই কালচে তিলে। অপর হাত এনে ছুঁয়ে দিলো এই নেশাক্ত তিলকটির উপর।

মৃদু ধারালো স্বরে উচ্চরিত হলো,“সেদিন ভার্সিটিতে যাওয়ার সময়, তোমার এই তিলের দিকে একটা শু*য়ো*রে*র নজর পড়েছিলো। তাকে তো সরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু রাগ দমছিলো না। তাই তোমার সাথে ওমন করেছিলাম। আর তোমার সাথে যে এরকম হচ্ছিলো বাড়ির ভেতরে, তা আমার জানা ছিলো না। দুঃখিত..!”
​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​

__________________________
মেঘলা আকাশ দুড়ুম দুড়ুম আওয়াজ করেই চলছে। অন্ধকার হয়ে আছে চারিপাশ। বর্ষণের এই আমেজে এমনটা প্রায়শই ঘটে। আকাশ ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়লো ফোঁটা ফোঁটা পানি। ধীরে ধীরে এই ধারাপতনের জোর বেড়েই চলেছে। হয়তো প্রতিটি ফোঁটা একটি অপরটির সাথে অঘোষিত প্রতিযোগিতা শুরু করেছে, কে আগে নিজেকে এই ধরণীতে বুকে মাখতে পারবে। নিকষ কালো আকাশের বদন পাল্টে গেলো নিমিষেই। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে অনেকটা। বৃষ্টির তেজ থাকলেও, অন্ধকারের রেশমাত্র নেই আর।আমি সকালে ঘুম থেকে উঠেই এখানে দাড়িয়ে আছি। খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গিয়েছে আজ। দেখতে দেখতে আরো একটি সপ্তাহ চলে গেলো।
প্রতিরাতে ছায়ামানবকে অনুভব করি। কিন্তু সমস্যা সেই একই, দেখতে পারি না। সেদিন মীরা আপুকে জিজ্ঞেসও করেছিলাম, ঐ ঘটনার ব্যাপারে। আপু বলতে নারাজ। যে সেই কাজটি করেছে, সে যেনো আপুর মুখ তালা মেরে চাবি নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। আপুকে আর সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করিনি।
তিনদিন পর ছোটমা চলে এসেছিলো। আঘাত খুব একটা পায়নি ভেবেছিলাম। কিন্তু আমার ভাবনা ভুল হয়ে গেলো। ছোটমা এখন কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। হাটতে পারে, তবে কুঁজো হয়ে। ডান হাত পুরোটাই ভেঙ্গে গিয়েছে। মারাত্মক আঘাত!

গত এক সপ্তাহ ধরে ভার্সিটিতে যাওয়া হয়না আমার। ছোটমা, আপু দুজনেই অসুস্থ ছিলো। প্রতিটি কাজে নির্ভরশীল আমার উপর। আপুর হাত অনেকটা ঠিক হয়েছে। তবে ছোটমা এখনও একা চলতে পারে না। আশ্চর্যের কথা হচ্ছে, যেই ছোটমা আমাকে এক বেলা কটূক্তি না করতে পারলে শান্তি পেতো না সেই ছোটমা বাড়ি ফেরার পর থেকে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। খারাপ ব্যবহার করবে কি করে! অজ্ঞাত কোনো কারণবশত ছোটমা আমার সাথে কথা বলতেই ভয় পাচ্ছে। আর আপুও কোনরকম বাজে আচরণ করছে না।

আজ ভার্সিটিতে যাবো। রান্না বান্না সেরে নিলাম। ছোটমাকে খাইয়ে দিলাম। আপুর হাত অনেকটা সেরেছে বিধায় নিজ হাতেই খেতে পারে।

​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​
____________________
আজ ভার্সিটিতে নবীন বরণ। থার্ড ইয়ারে আমরা। সেজন্য প্রায় সব দায়িত্ত্ব আমাদের। প্ল্যান অনুযায়ী শাড়ি পরতে হবে। আমি রাজি ছিলাম না। শাড়িও ছিলো না আমার।
কিন্তু রুশী বললো,“আমার শাড়ি পরার ভীষণ ইচ্ছে জেগেছে। তবে তুই না পরলে আমিও পরবো না।”

রুশীর জোরাজোরিতে আর নাকোচ করার সাধ্য হলো না। এদিকে শাড়ি নেই বলে, অয়ন আর রুশী মিলে একটা লাল পাড়ের কালো শাড়ি কিনে দিয়েছে আমায়। সাথে ম্যাচিং অর্নামেন্টস।

সকালে উঠে শাড়ির প্যাচ দিতে গিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে আমার। কিভাবে পরে? জানিনা তো আমি। বহুত মুশকিলে, ঘণ্টা দুইয়েক সময় লাগিয়ে হালকা পাতলা ভাবে শাড়ি জড়িয়ে নিলাম। আঁচল ছেড়ে দিলাম। হাঁটু লম্বা চুলগুলো মুক্ত রাখলাম। মুখে আহামরি কিছু দিলাম না। একটু খানি কাজল লাগালাম। রুশী বলে, আমার কাজল কালো চোখ নাকি ভীষণ নজর কাড়া। কানে রুশীর দেওয়া সিলভার ঝুমকা পরলাম। ব্যাস! এতেই হয়ে গিয়েছে।

ভার্সিটিতে যাওয়ার আগেই রুশীর কল এলো। ওর আজকে আমাকে পিক করতে আসার কথা ছিলো।
কল রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো, “ঠিক আর কয় ঘন্টা লাগবে মহারানীর? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছি। তোকে না বলেছি কখন বেরোতে হবে? দেড় ঘণ্টা লেট তুই। কই তুই? আর পাঁচ মিনিট টাইম দিচ্ছি। এখন না এলে আজ যাবোই না আমি।”

কথাটা শেষ করেই ফোন কেটে দিলো। আমার কাছ থেকে কিছু শোনার অপেক্ষা করলো না। আমিও ফটাফট আরেকবার নিজেকে আয়নায় দেখে নিলাম। নাহ্! খুব একটা বাজে দেখাচ্ছে না!

বাড়ি থেকে বেরোতেই বাইরে রুশীর গাড়ি দেখা গেলো। আমি এগিয়ে গেলাম। পেছনে মুখ গোমড়া করে অন্যদিকে ঘুরে বসে আছে। পরনে আকাশী রঙ্গা এক শাড়ি। ফর্সা দেহে এমন শাড়ি খুবই মানানসই। আর তা যেনো রুশীকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

আমি ভেতরে ঢুকে বসলাম। আমি ঢুকতেই গাড়ি স্টার্ট দিলো ড্রাইভার। রুশী আমার আসার আভাস পেয়ে গাল দুটো আরো ফুলিয়ে বসলো। খানিকটা হেসে দিলাম।

“আমাকে কেমন দেখাচ্ছে বলবি না?”

আমার কথায় তাকালো না, ফুলো গালে বাচ্চামো স্বরে বললো,“কতক্ষন অপেক্ষা করিয়েছিস! কথা নেই তোর সাথে। যা!”

আমি মিটিমিটি হেসেই যাচ্ছি। এতে ওর রাগ বাড়ছে বৈ কমছে না। আমি এই মিষ্টি মেয়েটিকে দেখছি। আমার বোন। হ্যাঁ! আমার বোন এটা। আমার চুপ হয়ে যাওয়া দেখে রুশী আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো। আর চোখ সরালো না। রাগ সব জানালা দিয়ে বাইরে ছুড়ে মারলো।
উল্লাসিত কন্ঠে বলল,“বীনু! তোকে কি সুন্দর লাগছে! আমি ছেলে হলে এখনি তোকে কিডন্যাপ করতাম।”

আমি ফিক করে হেসে ফেললাম ওর কথায়।
​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​
__________________
চারিদিকে উৎসবমুখর পরিবেশ। পুরো ভার্সিটি সজ্জিত হয়েছে নতুন আমেজে। আমি আর রুশী ক্যাম্পাসে এসে খুঁজে চলেছি অয়নকে। পুরো ক্যাম্পাস আধঘন্টা ধরে খুঁজলাম। কোথাও নেই। হাপিয়ে উঠলাম দুজনেই। একেতো শাড়ি পরেছি, তার উপর শাড়ি পরে দৌড়াচ্ছি। উফ!

ফাইনালি স্টেজের পেছনে দেখা মিললো। কাজে ব্যাস্ত আছে অয়ন। পরনে ব্লু মিক্সড সাদা পাঞ্জাবি। রুশীর দিকে তাকালাম এক পলক। তার স্থির দৃষ্টি সামনে দাড়িয়ে থাকা এই সুদর্শন পুরুষটির উপর। চোখে ভালোবাসার এক সাগর রয়েছে। মনে কি রয়েছে?

আমি হাত নেড়ে অয়নের দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। অয়ন মুখে হাসি ফোটালো এদিকে তাকিয়ে। আমি রুশীর হাত ধরলাম। এগিয়ে যাচ্ছি অয়নের দিকে। অয়ন রুশীকে দেখে প্রশস্তিত হাসি সংকোচিত করলো। মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইলো এই শুভ্র রঙ্গা মেঘ পরীর দিকে। আঁখি পল্লব মেলতে যেনো ভুলে গিয়েছে। কোনো পুরুষের কাছে তার ভালোবাসার নারী, নিশ্চয়ই ভুবন ভোলানো সৌন্দর্যের অধিকারিণী।

এদের দুজনের এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমার নিজেকে কাবাবে হাড্ডি মনে হচ্ছে। ইশ! এরা যেনো শতজনমের চক্ষু তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।

“আজ স্পেশাল গেস্ট হিসেবে কে আসবে জানিস?”—পাশ থেকে ফাইনাল ইয়ারের একটা আপুর আওয়াজে ধ্যান ভাঙলো আমার। আপুটি তার একজন ফ্রেন্ডকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বলছে। না চাইতেও এদের কথোপকথন আমার কর্নে ভেসে আসছে।

সামনের মেয়েটি বললো,“তুই জানিস না কে আসবে?”

মেয়েটির “না” বোধক ইঙ্গিতের প্রেক্ষিতে বলে উঠলো,,“তৃষ্ণা।”

নামটি শুনতেই অপর মেয়েটির মুখের আদল বদলে গেলো। শুধু মেয়েটি না। পাশে দাড়িয়ে থাকা সবাই উত্তেজিত হয়ে পড়লো।
আমি কিছু বুঝতে না পেরে তাদেরই একজনকে জিজ্ঞেস করে বসলাম,“তৃষ্ণা কে আপু?”

তারা যেনো আমার কথাটি শুনে তব্ধা খেয়ে গেলো। সবগুলোর মুখ “হা” আকার হয়ে গেলো। আমি অবুঝ নয়নে চেয়ে রইলাম।
একটা আপু বলেই বসলো,“সিরিয়াসলি তুমি তৃষ্ণা কে চেনো না?”

আমি মাথা দুইদিকে নাড়িয়ে না ইশারা করলাম।
একজন আপু নিজেকে শান্ত করেও উত্তেজিত কন্ঠে বলল,“তৃষ্ণা হচ্ছে আমাদের সবার ক্রাশ। আমরা যখন ফ্রেশার ছিলাম, তখন ফাইনাল ইয়ারে ছিলো। বর্তমানে নামকরা সিঙ্গার। মানা যায়, তুমি সিনিয়র তৃষ্ণাকে চেনো না। কিন্তু সত্যিকি সিঙ্গার তৃষ্ণাকে চেনো না?”

আমি পুনরায় “না” ইশারা করলাম।
গান শোনা হয়না আমার। কি করে শুনবো? সে সময় আছে?

একটা আপু বললো,“তার নীল চোখ! উফ! হাজারও মেয়ের খুন হয়েছে…”

অন্য একজন আপু বললো,“তার হাসিটা কি সুন্দর! কতো মেয়ে পাগল হয়েছে..”

পাশের আরো একজন বললো,“পার্সোনালিটি দেখেছিস! পুরোটাই ক্রাশ ম্যাটেরিয়াল।”

আমি প্রস্থান করলাম। একটা ছেলেকে নিয়ে এতো বলার কি আছে? আমার পিছে পিছে রুশী ও অয়নও এলো। এতোদিন আমি শুধু গেস করেছিলাম, অয়নের মনে রুশীর জন্য ফিলিংস আছে। আজ বুঝে নিলাম, দুজনের মনেই দুজনকে নিয়ে অনেক বেশি কিছুই আছে।

কিছুটা দূরে নজর যেতেই দেখলাম একটা মেয়ে কাঁদো কাঁদো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে গেলাম মেয়েটির কাছে। গ্রীন স্যুট পরা মেয়েটিকে শ্যামবর্ণবিশিষ্ট রূপবতী বলা চলে। মুখশ্রীতে ঘনকালো আঁধার। কেনো?
পাশে দাড়িয়ে কাঁধে হাত রাখলাম। মেয়েটি কেঁপে উঠলো। আমার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো। কি মায়ায় ভরা চাহনি! হৃদযন্ত্র ধুক করে উঠলো আমার। দুবার নিশ্বাস ছাড়লাম।
তৃতীয়বার নিশ্বাস নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,“কি হয়েছে? আমাকে বলতে পারো। আমি তোমার বোনের মতোই।”

মেয়েটির বিষন্ন নয়নের কার্নিশে দু ফোঁটা অশ্রু জমা হয়ে উঠলো।

ভার হৃদয় থেকে উচ্চারিত হলো,“আপু!”

আমি “হুঁ” বলায় মেয়েটির অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম,“কি হয়েছে?”

মেয়েটি বললো,“ঐ ছেলেটি ডিস্টার্ব করছিলো আপু।”

“কোন ছেলেটি?”

মেয়েটি হাত দিয়ে কিছুটা দূরে, বাইকে বসে থাকা একটা ছেলেকে ইশারা করে দেখলো। ছেলেটি আমাদের ব্যাচের। অন্য ডিপার্টমেন্টের। তবে যতটুকু জানি, ভীষণ উচ্ছল।

মেয়েটির হাত ধরে বললাম,“চলো, আমার সাথে চলো।”

আসার পথে জিজ্ঞেস করলাম,“নাম কি তোমার?”

“দীপ্তি”

তখনই কানে একটা গান এলো। যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। থেমে গেলাম।

“চুরায়া হি কিউ যাব ওয়ো তোড়না হি থা?
দিলভী ওয়ো টুটা হ্যায় যো মেরে পাস নেহি
দিখায়া হি কিউ যাব মুহ মোড়না হি থা?
সিনে মে হাওয়া তো হ্যায় পার ওয়ো সা‌‌স নেহি হ্যায়

মেরে পাস নেহি হ্যায় কই সাথ নেহি হ্যায়
যো বাতা দে মুঝে বাত ইয়ে খাস নেহি
দিল উদাস সেহি হ্যায় কই আস নেহি হ্যায়
পাগলী আখো কি নামী ইয়ে বারসাত নেহি

ম্যায় ভি না জানে কাহা খো গেয়া থা
জিন্দেগি মুঝসে খাফা হো গ্যায়ী
জিস দিন কি ইস দিল নে খুদসে মোহাব্বত
তো জিন্দেগি ভি মুঝসে ফিদা হো গ্যায়ি

মেরে পাস নেহি হ্যায় কই সাথ নেহি হ্যায়
অর না হ্যায় আব কিসিকা ইন্তেজার কাহি
তেরে বারে মে না সৌচু অ্যায়সা রাত নেহি হ্যায়
পার তু তোরে দিল মেরা তেরি ঔকাত নেহি

অঙ্খো মে ধুঁয়া থা ম্যায়নে দেখাহি নেহি
খুশি পিছে হি থি খারী দাবে ইয়ে হাসি
দিল ভি বোলা, সুন বাওয়ারে আখিও কি দুশমান
না ম্যায় কাভি টুটা থা না খোয়া থা কাভি

তেরে পাস ইয়েহি হুঁ ইয়ে আওয়াজ ম্যায় হি হুঁ
ইয়ে কাহানি তেরি মেরি হ্যায় ইয়ে জামানে কি নেহি
ম্যায় ধারাক্তা রাহু, তু ভি ইউ হাসতা রাহে
দুনিয়া জায়ে সালি ভার মে কই পারওয়া হি নেহি
এক রাত জাগা মে ম্যায়নে দেখা থা সাওয়েরা ”

আওয়াজে অন্য কিছু ছিলো। হারিয়ে গিয়েছিলাম গানটিতে। চারিদিকে সবাই চিল্লিয়ে উঠলো। মেয়েদের কণ্ঠ বেশি শোনা যাচ্ছে। সবার মুখে একটাই শব্দ। তৃষ্ণা..!
​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​#অদ্ভুত_আসক্তি
#পর্ব_৫ (পাত্রী বীনি, তবে পাত্র কে?)
#নবনীতা_শেখ

ভর সন্ধ্যেতে এই উৎসবমুখর পরিবেশে চারিপাশে শুধু একটাই নাম ভেসে আসছে। “তৃষ্ণা!”

এতক্ষণ গানটিতে এতটাই ডুবে গিয়েছিলাম যে আর খেয়াল আসেনি গানটি কোত্থেকে আসছে। চোখ তুলে তাকিয়ে দেখি, আমার সামনের সবগুলো ঘোর লাগানো নয়নে আমার পেছনে দেখছে। দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে তাকালাম। স্টেজের উপর ব্ল্যাক শার্ট আর জিন্স পরা এক যুবক। কি সুন্দর দেখতে!

হঠাৎ সামনের এই যুবকটির দৃষ্টির সাথে আমার দৃষ্টির মিলন ঘটলো। মাদকতায় ভরা নীলাভ চক্ষুদ্বয়। আমি সেখান থেকে তৎক্ষনাৎ প্রস্থান ঘটালাম।

কিছুদুর এগোতেই রুশী আর অয়নকে চোখে পড়লো ওদের কাছেই এগিয়ে গেলাম।
আমি যেতেই রুশী আমাকে বললো,“চল, ফুচকা খাবো।”

“আমি খাবো না রে।”

“প্লিজ…”

রুশীর এমন ডাকে সাড়া না দিয়ে থাকতে পারলাম না। অয়ন নাক ছিটকালো। এসব অয়নের পছন্দ না।
বিরক্তির সহিত বললো,“তোরা মেয়ে জাত কি এসব উল্টা-পাল্টা খাওয়া ছাড়া শান্তিতে বাঁচতে পারিস না?”

রুশী চেঁতে উঠলো। হাজার হোক, ফুচকা ভীষণ প্রিয় ওর। এই নিয়ে খোটা বাক্য শুনতে নারাজ।
হালকা তেজ মিশ্রিত কন্ঠে বললো,“এই তোকে জোর করেছি আমি? আসতে ইচ্ছে হলে আয়, নয়তো ভাগ। তবুও উল্টা পাল্টা বকবি না।”

অয়ন মুহুর্তেই নিভে গেলো। আমাদের ছাড়তে পারবে না, অগত্যা কথা বন্ধ করে চুপ হয়ে আমাদের সাথেই এলো।

তিনজন চললাম ফুচকার স্টলে।
যেতেই রুশী ফুচকা মামাকে উদ্দেশ্য করে বললো, “মামা! দুই প্লেট ফুচকা দিন তো। দুটোতেই প্রচুর ঝাল দেবেন।”

মামা মৃদু হেসে “আইচ্ছা আম্মা” বলে ফুচকা বানানোতে মনোযোগ দিলো।

আমি ভ্রু কিঞ্চিৎ বাঁকালাম। অয়নের একটা কল আসায় একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। ও রুশীর ঝাল নেওয়ার কাহিনী শোনেনি। শুনলে হয়তো খেতে দিতো না।
রুশী আমাকে নিয়ে পাশের বেঞ্চিতে বসতেই আমি বলে উঠলাম,“এতো ঝাল খাবি তুই? তুই না বেশি ঝাল সহ্য করতে পারিস না?”

রুশী ডান হাতটি মুখের সামনে এনে হেসে দিলো। অয়ন তন্মধ্যে কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে। রুশীর হাসির সাথে চুড়ির রিনিঝিনি আওয়াজটা সোজা গিয়ে বিঁধলো, পাশে দাড়িয়ে থাকা সুদর্শন পুরুষটির বুকে। জীবনের সেরা সৌন্দর্যপূর্ন দৃশ্য উপভোগ করছে সে। আঁখি পল্লব ফেলতে ভুলে গিয়েছে। স্থির দৃষ্টিতে দেখে যাচ্ছে এই মোহময়ী নারীকে।

রুশী ওষ্ঠদ্বয়ে হাসির রেখা বজায় রেখেই বললো, “বা রে! ফুচকা খাবো, ঝাল ছাড়া? তা হয় নাকি?”

আমি কিছু বলতে যাবো, তার আগেই মামা দুটো ফুচকার প্লেট এগিয়ে দিলো আমাদের দিকে। প্লেট দুটো হাতে তুলে নিলাম। অয়নের এসবে বড্ড সমস্যা, তাই সে খাবে না। রুশী তাও ওকে একবার সাধলো। নাকচ করতেই রুশী মুখ বাঁকালো। আমার ঝাল পছন্দ খুব, সইতেও পারি ঝাল। তাই সমস্যা নেই।

রুশী মুখ বড় করে পুরো একটা ফুচকা মুখে পুরে নিলো। কিন্তু, মনে হচ্ছে ঝালটা একটু বেশিই লেগে গিয়েছে।
আমি আস্তে করে বললাম,“সমস্যা হলে খাস না কিন্তু।”

রুশী জোরপূর্বক এক হাসি দিলো। তার ফর্সা মুখমণ্ডল লাল হয়ে গিয়েছে। পুনরায় ফুচকা মুখে দিলো। অয়ন আমাদের থেকে কিঞ্চিৎ দূরে দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো তার দেখার ঘোর এখনও কাটেনি। দ্বিতীয়বার ফুচকা মুখে দিতেই রুশীর চোখ ভিজে এলো। ঝালে আর খেতে না পেরে গলায় আটকে গেলো। দম বন্ধ হয়ে আসছে প্রায়।
নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টায় মুখটা “হা” আকৃতির করে ফেলেছে। আমি ফুচকা ফেলে ওর দিকে তাকালাম। ধুক করে উঠলো আমার বুক, মুহূর্তেই কি অবস্থা করে ফেলেছে নিজের। ইতিমধ্যে অয়ন আমাদের সামনে এসে হাজির। রুশীর এই অবস্থা ওর মনে কি প্রভাব ফেলছে তা আমার বোধগম্য নয় অস্থির হয়ে আছে সে। যেনো রুশীর নিশ্বাসের সাথে তার নিজের দমও আটকে আছে।

হাঁটু মুড়ে বসে রুশীর গালে হালকা থাপড়িয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলছে,“এএই! ক’কী হয়েছে তোর? ওমন করছিস কেনো?”

আমি অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললাম,“পানি নিয়ে আয় ফাস্ট!”

অয়ন উঠে ফুচকার স্টলে গেলো। মামাকে জিজ্ঞেস করতেই বললো, পানি তো ফুরিয়ে গিয়েছে। অয়নের অবস্থা রুশীর চেয়েও নাজেহাল। দৌড়িয়ে গেলো কোথাও একটা। মিনিট দুইয়েকের মধ্যেই পানি নিয়ে হাজির। সাথে আইস্ক্রিম। রুশীকে পানি খাওয়ালাম। এখন শ্বাস নেওয়ার গতি স্বাভাবিক হয়েছে তবে ঝাল কমেনি। অয়ন রুশীর হাতে আইস্ক্রিম দিলো।
রুশী খেতে খেতে খানিকটা স্বাভাবিক হলো। অয়নের দিকে তাকালাম আমি। চোখ মুখের কি অবস্থা! পুরো চোখ রক্তলাল হয়ে আছে। ফর্সা মুখশ্রী রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। চুলগুলো এলোমেলো। কি বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে!

রুশীর পুরোপুরি ঠিক হতেই ওকে নিয়ে দাঁড় করলো। পাশের গাছটির সাথে ধাক্কা দিয়ে বাহুতে চেপে ধরে চিৎকার করে বলে উঠলো,“তুই ঝাল খেয়েছিস কোন সাহসে?”

রুশী অয়নের এই ক্রোধের সাথে পূর্বপরিচিত। জানে এখন কি হতে যাচ্ছে।

তবুও তুতলিয়ে বললো, “য’যা হ’হবার হয়েছে, ক’কিছু বলিস না প্লিজ।”

রাগের তেজ বেড়ে গিয়েছে অয়নের। ছেড়ে দিলো রুশীকে। পাশের বেঞ্চিতে একটা লাথি দিলো। বড় বড় পা ফেলে চলে গেলো সেখান থেকে। রুশী ওখানেই দাঁড়িয়ে দম ফেলছে। অয়ন খুবই শান্ত ও চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে। কিন্তু রেগে গেলে পুরো উল্টে যায় ও। আমি রুশীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। রুশী ভয় পাচ্ছে। অয়ন এতো রেগে আছে। কোথাও কোনো গন্ডগোল পাঁচটি কাবে না তো?

আমি রুশীকে নিয়ে ভার্সিটির পেছনের দিকটায় গেলাম। একজনের তীক্ষ্ণ নজর যে আমারই উপর অবলোকন করছে, তা হতে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত আমি।

​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​​
________________________
“স্যার! আপনাকে এতো বার কল করি করছিলাম।”

রুদ্রের বলা কথার প্রেক্ষিতে আরহান বললো, “আ’ওয়াজ আউট অফ কভারেজ..”

রুদ্র অস্থির ভঙ্গিতে বললো, “অনেক বড় এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে এদিকে স্যার।”

“হোয়াট! কী হয়েছে? ইজ শি ওকে?”

“স্যার, ম্যাম তো ঠিক আছে। তবে..”

“ক্লিয়ারলি বলো কি হয়েছে।”

“তৃষ্ণার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে।

“দ্যাট’স আ গুড থিং..”

রুদ্র জিভ দিয়ে ঠোঁট খানিকটা ভিজিয়ে বললো,“স্যার ঘটনা এটা না। ঘটনা হচ্ছে, তৃষ্ণা ম্যাম এর ভার্সিটিতে আছে।”

আরহান চিল্লিয়ে বলে উঠলো,“হোয়াট? ওখানে কি করছে?”

আরহানের চিল্লানো স্বরে রুদ্রের ভয় বেড়ে গেলো। এরপরের কথাটা বললে কি যে হবে! কিন্তু বলতে তো হবেই।

“আজ ম্যাম এর ভার্সিটিতে নবীন বরণ অনুষ্ঠান ছিলো। সেখানেই স্পেশাল গেস্ট হয়ে এসেছে।”

আরহান বুঝলো সেখানে তৃষ্ণার আসার কারণটা। এতক্ষণ দমটা আটকে এসেছিলো, একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে নিজেকে শান্ত করলো। যাক! তার শুকতারার খবর পায়নি তৃষ্ণা।

রুদ্র ফটাফট একটা শ্বাস নিয়ে চোখ বুজে একটানে বলে ফেললো,“তৃষ্ণা, ম্যাম এর দিকে তাকিয়ে আছে প্রায় ঘন্টা খানেক।”

আরহান চুপ মেরে গেলো। যা করার জলদি করতে হবে তাকে।

রুদ্রকে “ওকে,স্টে উইথ ইউর ম্যাম..” বলেই আরহান কল কেটে দিলো।

তার মাথায় এখন অন্য কিছু ঘুরছে। এতো চেষ্টা করে তার শুকতারা থেকে নিজেকে আলাদা রেখে কি লাভ হলো? যার থেকে বাঁচানোর জন্য গভীর রাতে গিয়ে তার শুকতারাকে দেখে চক্ষু তৃষ্ণা মেটাতো, আজ তারই নেশাক্ত নজর থেকে বাঁচাতে অক্ষম আরহান। এখন একটাই উপায়..

_________________
ক্যাম্পাসের একদম পেছনের দিকটায় রয়েছে একটা বকুল ফুল গাছ। সেখানেই মুখশ্রী গম্ভীর ভাব করে বসে আছে রুশী। ঠিক পাশেই আমিও আছি। ভীষণ চিন্তিত আমরা। আমাদের দুজনেরই ভাবনার মূল কারণ অয়ন। সেই যে গেলো, আর খুঁজে পেলাম না। কল ও দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকবার।
প্রতিবারই ওপাশ থেকে একটা মেয়েলি কণ্ঠে ভেসে আসে,“দুঃখিত! কাঙ্ক্ষিত নম্বরটিতে এই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।”

রুশী খুবই নরম ও মিশুক প্রকৃতির হওয়া সত্বেও এই মুহূর্তে তার খুব করে ইচ্ছে হচ্ছে, ফোনের ওপাশের ঐ মেয়েটিকে ধরে দু’চারটে গালি শুনিয়ে দিতে। কিন্তু ওর ডিকশনারিতে তো গালি নেই। রুশী এবার মাথা উঁচু করে আমার দিকে তাকালো। চোখ দুটো ছলছল করছে। ঠোঁট চেপে রেখেছে। হয়তো কান্না হজম করার ব্যার্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ও পারলো না। কার্নিশ বেয়ে দু’ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আমি তড়িঘড়ি করে রুশীর দু’গালে নিজের হাত রাখলাম।
অতি সন্তর্পনে অশ্রুকণা মুছে দিয়ে মৃদু আওয়াজে বলে উঠলাম,“পাগলী কাঁদছিস কেনো?”

রুশী কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠলো,“তার ক্রোধে আমার সহস্র ক্ষতি মানতে রাজি আছি। তবে সে হীনা, তার অবহেলা মরণ যন্ত্রণা সম..”

“এতো ভালবাসিস?”

কান্না থেমে গেলো। স্থির নয়নে আমার দিকে তাকালো। চোখ দুটোতে অবিশ্বাস। হয়তো বিস্ময়।

“এটা বুঝি ভালোবাসা?”

“হুঁ”

একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
আকাশের দিকে চোখ তুলে বললো,“ওকে ভালোবাসি কিনা জানা নেই। তবে ওর জন্য বুকটা খুব পোড়ে আমার।”

“অয়নকে বলবি না এই ব্যাপারটা?”

“যেদিন এই ভালোবাসার সম্পূর্ণ অনুভূতির সাথে পরিচিত হবো, সেদিন অবশ্যই বলবো।”

“দেখিস! দেরি যেনো না হয়ে যায়।”

রুশীর আর কিছু বলার আগেই আমার ফোন বেজে উঠলো। আমাদের একটা ফ্রেন্ডের নম্বর। নেহা।
রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নেহার অস্থির কন্ঠে শোনা গেলো,“তোরা কোথায়?”

“ক্যাম্পাসেই আছি। কেনো কি হয়েছে?”

“স্টেজের এদিকে আয়, ফাস্ট। ঝামেলা হচ্ছে খুব।”

আমি “আচ্ছা আসছি” বলেই কল কেটে দিলাম।
রুশীকে নিয়ে স্টেজের দিকে এগোলাম। জানিনা কি হচ্ছে। তবে চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। গিয়ে দেখি অয়ন একটা ছেলেকে বেধড়ক পেটাচ্ছে। অয়নও মার খাচ্ছে। ইতিমধ্যে অয়নের সাদা পাঞ্জাবি রক্তাক্ত হয়ে গিয়েছে। রুশী অয়নকে এই অবস্থায় দেখে স্থির হয়ে গিয়েছে। অয়ন এমন না। আমি রুশীকে ডাকলাম। ও আর এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে এগিয়ে গেলো। অয়নকে ছাড়িয়ে আনতে যেতেই অয়ন রুশীকে আক্রমণ করতে যায়। কিন্তু কিছু করার আগেই থেমে যায়।

মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বুলি আওড়াচ্ছে,“ওর সাহস কি করে হয়? কোন সাহসে ও আমার জানকে নিয়ে উল্টা পাল্টা কথা বলে? আমার কলিজায় হাত দেওয়ার সাহস কে দিয়েছে ওকে? আজ তো ওকে আমি..”

কথাটি শেষ করেই পুনরায় মারতে যায় ছেলেটিকে। আমি আর রুশী মিলে ধরে ফেলি। পুরো ক্যাম্পাসের নজর এখন আমাদের দিকেই। অয়নকে নিয়ে পাশের এক ফার্মেসিতে যাই। অনেকটা জোর খাটিয়েই আনতে হয়েছে। অয়ন এখনও রাগে ফুসছে। ওর সামনে এখন কিছু বলা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মারা। রুশী চুপিসারে অশ্রুপাত করছে। আমিও নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করতে ব্যাস্ত।

শুরু থেকে এই অবধি কারো গভীর নজর এদিকেই ছিলো।
সে তৃষ্ণার্ত নয়নে তাকিয়ে বলছে,“প্রথম দেখায় আমার অস্থির নয়ন যাকে দেখে থমকে গেলো, প্রহর ভুলে গেলো, এক আসক্তির সন্ধ্যান পেলো সে নিশ্চয়ই আমার নয়নের তারা। আমার নয়নতারা।”

পকেট থেকে ফোন বের করে একটা নম্বর ডায়াল করে কল লাগালো। ওপাশ থেকে রিসিভ হতেই বললো,“একটা ছবি পাঠাচ্ছি, এ টু জেড ইনফরমেশন চাই আমার।”

“ওকে বস।”

কল কেটে দিলো। ঠোঁট বাঁকিয়ে হালকা হাসলো।

___________________
ভর সন্ধ্যে, সূর্য ঢলে পড়েছে বেশক্ষানিক আগেই। বাড়ির রাস্তা ধরে হেঁটে যাচ্ছি আমি। রুশী আসতে চেয়েছিলো, কিন্তু আমি মানা করে দিয়েছি। ভার্সিটি থেকে ওর বাড়ি, আমার বাড়ির ঠিক উল্টো রাস্তায়। আমাকে ড্রপ করতে এলে ওর বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যেতো। এই রাস্তাটা ঠিক হয়েছে কয়েকদিন আগেই। মানুষজনের যাতায়াত কম না।

কিছুটা এগোতেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখলাম। ভীষণ পছন্দ এই গাছটি আমার। মাঝে সাঝেই এখানে বসা হয়। এগিয়ে গেলাম। পাশেই একটা বেঞ্চ আছে। বসে পড়লাম সেখানে। হালকা বাতাস আর মাথার উপর কৃষ্ণচূড়া ফুলের আবরণ। ব্যাপারটা দারুন!

মাথাটা খানিক উঁচু করে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম ঐ দূর আকাশপানে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে প্রকৃতির এই সৌন্দর্য দেখে গেলাম।

মিনিট দশেক যেতেই চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললাম। প্রকৃতি সবাইকে একই সাথে দুটো উপহার দেয়। একটা ভালো, অন্যটা খারাপ। হয়তো সবসময় খারাপটা সামনে থাকে আর ভালোটা আড়ালে। সবাই আত্মবিশ্বাসী নয়। তাই আগে থেকেই ভেবে নেয়, তার সাথে খারাপটাই হবে। গ্রহণ করে যন্ত্রণার কাগজে মুড়ে রাখা একটা কষ্ট নামক উপহার। আর ভালোটা? সে তো পড়ে থাকে মস্তিষ্কের এক কোণে। ভাবলেই না আসবে! ভাবেটা কে? যেটুকু সময় আফসোস করে বেড়াই আমরা, সেটুকুকে কাজে লাগিয়ে জীবনে সুখ খুঁজলেও অনেক আগেই পেয়ে যেতাম।

আমি আমার এটুকু জীবনে বাস্তবতা অনেক ভালো করে জেনেছি, বুঝেছি। জীবনের সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছি সেদিন, যেদিন ছোটমা আমার নামে বাবার কাছে মিথ্যে বললো, আর আমার বাবা আমাকে ভুল বুঝলো। নিজেকে এক্সপ্লেইন করেছিলাম, বাবা আমাকে অবিশ্বাস করলো। এতো ছোট বয়সে মাথার উপর কারো ভরসার হাত পাইনি, সেদিন থেকে দুনিয়াদারি শিখে নিয়েছি। প্রতিটি মানুষের যে দুটো মুখোশ থাকে, একটা দুনিয়াকে দেখায়, একটা কিছু মানুষের সামনে, আর নিজের চেহারা গোপন রাখে, তা জেনে নিয়েছি। তবুও থেকে গিয়েছি এখানেই, হাজার হোক, এরাই যে আমার আপনজন। আত্মার না হোক, রক্তের তো।

পরপর দুটো গভীর নিঃশ্বাস ফেললাম। বুকটা অনেক ভার হয়ে আছে। নিশ্বাস এতো ভারী লাগছে কেনো? কষ্টের পরিমাণ কি খুব বেশি হয়ে গেলো? শুনেছি মাত্রাধিক কষ্টে মরণ ঘনিয়ে আসে। আমারও কি তাই হবে? কিন্তু আমি তো বাঁচতে চাই। ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করে আমার।

হঠাৎ একটা কালো গাড়ি এসে থামলো আমার সামনে। কোনো কিছু ঠাহর করার আগেই কিছু একটা স্প্রে করলো। আর আমি ঢলে পড়লাম কারো বাহুর বন্ধনে। অনুভব করলাম খুব চেনা স্পর্শ। লোকটির দিকে ঠিক মতো তাকাতে পারলাম না। সব অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। চোখ দুটো বুজে এলো।

_____________________
পিটপিট করে চোখ মেলাতেই সকালের মৃদু আলো চোখে পড়ছে। পুরোপুরি ভাবে তাকাতেই নিজেকে সম্পূর্ণ এক নতুন জায়গায় আবিষ্কার করলাম। তড়িঘড়ি করে উঠে বসে চারিপাশটা একবার পরখ করে নিলাম। মানতেই হবে! যে এখানে থাকে, তার রুচি ভীষণ সুন্দর এবং শালীন। কিন্তু আমি এখানে কি করে এলাম? কাল রাতে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচেই তো ছিলাম। তবে এখানে কি করে?
আর ভাবতে পারছি না আমি মাথা ভার হয়ে আছে ভীষণ।চোখ দুটো বন্ধ করে নিলাম।

মিনিট দুয়েক বাদে উঠে দাঁড়ালাম। উদ্দেশ্য একটাই। জলদি পালাতে হবে এখান থেকে।

যে আমাকে এখানে কিডন্যাপ করে এনেছে, সে নিশ্চয় ভালো কিছু করবে বলে আনেনি। ব্যালকনিতে চলে গেলাম। দোতলায় আছি আমি। লাফানো যাবে না। কিন্তু কিভাবে যাবো?

এসব ভাবনায় ছিলাম আমি। হুট করে দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে চকিতে আওয়াজের উৎসের দিকে তাকালাম। অ্যাশ টি-শার্ট পরা এক পুরুষ। সুদর্শন পুরুষ বলা যায়।

“উঠে পড়েছো তবে?”

ভয় জেঁকে ধরলো। কে উনি? চিনিনা আমি। কোনোদিন দেখিনি। হাতের ট্রে টা বেড সাইড টেবিলে রেখে আমার দিকে তাকালো।
আমি কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করলাম, “ক’কে আ’আপনি?”

লোকটি হালকা হাসলো। বড্ড ভয়ংকর এই হাসিটা। কে জানে, হয়তো এই হাসিতেই খুন হয়েছে অজস্র নারী।

“তোমার চাঁদ।”

লোকটির কথায় বিস্মিত হলাম। কে উনি?
উনি আবারও বললেন,“সব ভাবনা পরে হবে। এখন ফ্রেশ হয়ে এসো। ব্রেকফাস্ট করতে হবে।”

আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। বলে লাভ হতো না বলেই বলতে পারলাম না। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি লোকটি এখানেই বসে আছে। আমাকে এসে পাশে বসতে বললো। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি। উনি পুনরায় মাথা নিচু করে ঠোঁট কামড়ে হাসলেন। কয়েক সেকেন্ড বাদেই উনি আমার দিকে তাকালেন। চোখাচোখি হয়ে গেলো। যেনো থমকে গেলো এই দুনিয়া। আছে শুধু এই চাঁদ আর আমি, আমি কি?

“তোমার কোনো ক্ষতি করার হলে আগেই করে নিতাম। এখন খেয়ে ধন্য করুন মহারানী। নয়তো পালানোর শক্তিটাও পাবেন না।”

কথায় কেমন যেনো একটা নেশা আছে। কথায় নাকি আওয়াজে জানা নেই। কাল রাত থেকে না খেয়ে আছি। তাই আর না করিনি। বেডে গিয়ে বসলাম। লোকটি আমার থেকে একটু দূরেই বসে আছে। খাবারের প্লেটটা আমার হাতে দিলো। আমি নিঃশব্দে নিয়ে খাওয়া শুরু করলাম। অনেকটা খাওয়া হয়েছে। আর পারছি না। খাওয়া থামিয়ে উনার দিকে তাকালাম।

মৃদু হেসে “আচ্ছা” বলে প্লেটটি নিলো।

আমি ওয়াশরুমে চলে গেলাম, হাত ধুতে। ভাবনায় একটাই কথা, এখান থেকে পালাতে হবে। লোকটাকে খারাপ মনে হলো না। কিন্তু ভালো হলে কি আর তুলে আনতে পারতো?

ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই আমার চোখ কুঁচকে এলো। লোকটি আমার এঁটো খাবার খাচ্ছে! একবার চোখ তুলে আমার দিকে তাকিয়ে আবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। যেনো কিছুই হয়নি। নিঃশব্দে খাওয়া শেষ করে প্লেটটি নিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করলো।
যাওয়ার আগে মিষ্টি হেসে বলে গেলেন,“পালানোর চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।”

লোকটি চলে যেতেই আমি বিছানায় গিয়ে বসলাম। যা হচ্ছে, সবটাই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আচ্ছা বাড়ির সবাই ঠিক আছে তো? রাতে তো রান্না করিনি। কি খেয়েছে ওরা? টেনশন হচ্ছে ওদের জন্য।

আমার এই টেনশনের মাঝেই আবারও লোকটির আগমন ঘটলো। হাতে একটা প্যাকেট।
রুমে ঢুকে প্যাকেটটি আমার হাতে দিয়েই বললো,“ফটাফট রেডি হয়ে নাও।”

আমি প্যাকেট খুললাম। ভেতরে একটা লাল বেনারসি আর কিছু অর্নামেন্টস দেখতেই চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এলো। ভীষণ অবাক হলাম। কি চাচ্ছেন উনি?

শাড়ীটা হাতে নিয়ে উনার দিকে অবিশ্বাস্য চাহনি নিক্ষেপ করতেই উনি বললেন,“একটু বাদেই আমাদের বিয়ে। নিজে থেকে রেডি হয়ে যাও। নয়তো তোমাকে প্রস্তুত কিভাবে করতে হয় তা খুব ভালো করেই জানি আমি।”

চলবে..!

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here