#অদ্ভুত_সুখানুভূতি
#সাদিয়া_আহমেদ_রোজ
#পর্ব_০৬_০৭
নীলয় ফিরে এসে দেখে রোজ পায়ের ওপর পা তুলে বসে গানটা ( বন্দুক ) নেড়েচেড়ে দেখছে।
নীলয় : কি রে সারাজীবনই তো বন্দুক বন্দুক করে গেলি,, একটু এদিক ওদিকও নজর দে। ওই ছেলেটা কিন্তু সবার মতো না তুই চাইলে আমি ওর সাথে তোর জুটি বেধে দিতে পারি।
রোজ : তুই ঠিকই বলেছি ও সবার মতো না। সবার থেকে বেশি রহস্যময়। তবে আমার সাথে জুটি বাধার মতো না, আমার গান এর টার্গেট হওয়ার মতো। আর এই মিশনের প্রথম শুট টা তোকে দিয়ে শুরু করার আগে চোখের সামনে থেকে সড়।
নীলয় : এজন্যই বলে ভালো কাজের দাম নেই। ভালো করতে এসে মেঘ আমি দুইটাই উপরে যাওয়ার টিকিট বুক করে ফেলতেছি।
রোজ : বাইক বের কর। হোস্টেলে ছেড়ে দিবি আমাকে। আর শোন মেহেক আপুর সমস্যা কি সেটাও জানার চেষ্টা করবি। যদি না পারিস তো গুলি করে খুলি উড়ায় দিবো।
নীলয় : ওইটাই খালি পারিস। তোকে লাইসেন্স দিসে কোন হারামি,, এমন রগচটা মেয়ের হাতে গান মানায়য়য়
রোজ : কিহ..?
নীলয় : মানায়। একমাত্র তোর হাতেই মানায়। তোর সাথে ফ্রেন্ডসিপ করাই ভুল হইছে,, তোর কিউট কিউট মুখ দেখলে কিছু বলতে সাহসও পাই না। বিয়েশাদী করে শশুড়বাড়ি যাবি তারও উপায় নাই। ঘাড়ের ওপর চড়ে বসেছিস…
রোজ : ওটা তোর সৌভাগ্য। এবার চল। তোর জন্য সিক্রেট DR এজেন্সিতে কথা বলেছি। তোর ফিটনেস দেখে তোকে বাঁছাই করবে ওরা তবে আরো একবছর পর। এই একবছর তোকে সব রকমের ক্রাইম থেকে দূরে থাকতে হবে।
নীলয় : এই বয়সে এতো জ্ঞান। বুড়ি হলে তোর নাতি নাতনিরা তোর ধারেকাছেও আসবে না। এতো জ্ঞানী নানি দাদি কেউ চায় না বুঝলি।
নীলয়ের কথায় উদাস হয়ে গেলো রোজ। নীলয় বাইকে করে রোজকে পৌছে দিলো। পরদিন কলেজে আসতেই রোজ জানতে পারে সাঞ্জানার বড় আপু কুহু এসেছে কলেজে। রোজের মাথায় রাগ উঠে গেলো এটা শুনে।
রোজ : এই মেয়েটার জন্য আমার বুবুন মারা গেছে। ওকে আমি কখনো ক্ষমা করবো না আর না শাস্তি দেওয়া থেকে পিছপা হবো। তৈরি হও কোয়েল মাহমুদ কুহু, রোজ এসেছে তার প্রতিশোধ নিতে। তোমাদের এক এক জনকে গর্ত থেকে টেনে বাইরে নিয়ে এসে শেষ করবো আমি। আর আমাকে যে আটকাতে আসবে তার জীবনের শেষদিন হবে আমারই সামনে।
রোজ ক্লাসে না গিয়ে ক্যাম্পাসেই বসে থাকলো। মেঘ নিজের ক্লাসের জানালায় দাড়িয়ে নোটিস করছে রোজকে। রোজ ফোনে কারোর সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে আর অস্থির হয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
মেঘ : ও কি করছে ওখানে,, এমন অস্থির অস্থির ভাব কেন.? কার সাথে কথা বলছে.?
মেঘ দ্রুতগতিতে নিচে নেমে আসলো। আর রোজের কাছে গেলো।
মেঘ : কি হয়েছে.?
রোজ মেঘের গলা শুনে তাড়াতাড়ি ফোন নিচে নামিয়ে ফেলে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। মেঘ রোজের এমন ভয়ার্ত চেহারা দেখে অবাক হলো।
রোজ : আসলে আমার,, আমার কষ্ট হচ্ছে। আপনাকে অনেক্ষন দেখিনি
মেঘ : তাই.? তো এখন আমি তোমার সামনেই আছি। মনে ভরে দেখো। একি তুমিমি ঘামছো কেন.?
রোজ : গরম। গরম লাগছে তাই। আসুন বসে কথা বলি। আচ্ছা কুহু কে.?
মেঘ : সাঞ্জানার আপু । তুমি চেনো ওকে.?
রোজ : নাহ। কলেজে এসেই শুনলাম ওর নাম। আচ্ছা আপনারা কি করেন.? যে আপনাদের এতো পপুলারিটি ক্রিয়েট হয়ে যায়।
মেঘ : কিছুই না। ফুচকা খাবে.? কলেজ গেটে একজন কাকু ফুচকা নিয়ে আসে, অনেক সুন্দর লাগে।
রোজ : আপনি খান..?? ছেলেরা ফুচকা খাওয়ার সময় এতো অস্থির হয় জানা ছিলো না আমার। হি হি। চলুন খেয়ে আসি। কিন্তু আমার কাছে তো টাকা নেই।
মেঘ : আমাকে কি তোমার রাস্তার ফকির মনে হয়.? তোমার কাছে টাকা চেয়েছি আমি.? তুমি শুধু আমার সামনে দাড়িয়ে খাবে কোনো কথা ছাড়া।
রোজ : আপনার টাকায় কেন খাবো.? আমি কারোর দয়া বা করুনা গ্রহণ করিনা। ( এতো নাছড়বান্দা। এমনিতে সবসময় মেঁপে মেঁপে কথা বলে আর এখন পক পক করে মাথা খাচ্ছে। )
মেঘ আর কিছু না বলে রোজের হাত ধরে দরজার দিকে হাটতে লাগলো। কলেজের সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। রোজ একবার ছাদের দিকে তাকালো,, কেউ একজন রোজের চাহুনি দেখে সড়ে যাচ্ছে।
রোজ : ( আমার কেন মনে হচ্ছে ওখানে কেউ ছিলো। আমার সিক্সথ সেন্স অলঅয়েজ ঠিক হয়। ওখানে যে ছিলো সে আমার ওপর নজর না রাখলেও মেঘের ওপর রাখে। কে এই মেঘ আর কে সে.? ) আপনার এক্স আছে নাকি.?
মেঘ : নাহহ
রোজ : কাউকে ভালোবাসতেন.?
মেঘ : নাহহ।
রোজ : ছ্যাকা দিসেন কয়জনকে.? মানে রিজেক্ট করছেন কয়জনকে.?
মেঘ : হিসাবের বাইরে।
রোজ : আমার পেছনে পড়ে আছেন কেন.?
মেঘ : তোমাকে জানার জন্য।
রোজ : ( বেচারা,, সবটা বলেই দিলো। তবে তোমার এই জানার ইচ্ছাটা কখনে পূরণ হবে না। ) জি.? বুঝলাম না
মেঘ : ভালোবাসি তোমাকে। আর যাকে ভালোবাসি তাকে জানার, চেনার আগ্রহ থাকবে না.?
উত্তর না দিয়ে রোজ ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকাতেই দেখলো একটা গাড়ি এসে ওদের পেছনে থেমেছে। মেঘও একনজর কালো গাড়িটার দিকে তাকালো
রোজ : বেশি খাবো না। আর ঝাল কমিয়ে বলবেন প্লিজ। আমি ঝাল খেতে পারিনা। ( ওপস শিট সেদিন খেয়েছিলাম ) আবব সেদিন চিলি সস খেয়ে ঝাল লেগেছিলো অনেক।
মেঘ : ঠিক আছে।
মেঘ দুই প্লেট ফুচকা এনে রোজের হাতে একপ্লেট দিয়ে নিজে খেতে লাগলো,, রোজও চুপচাপ খাচ্ছে। মিনিট পাঁচেক পর মেঘ পাশে তাকাতেই দেখলো রোজ নেই,, মেঘ চারিদিকে ভালো করে দেখলো কোথাও রোজ নেই,,
মেঘ : গেলো কোথায় ও.?
।
।
।
গাড়িয়ে বসে একটা গান খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে রোজ। রোজের পাশে বসে আছে DR চিফ পিয়াল এহমেদ খান। যে সম্পর্কে রোজের মামা। রোজের যখন পাঁচ বছর বয়স তখন রোজের বুবুন অর্থাৎ সম্রাটের বোন আভিরা / ইরার মার্ডার হয়। আর সেটা রোজ নিজের চোখে দেখেছে। এরপর থেকেই রোজ ওয়াদা করে ও ওর বুবুনের হত্যাকারীদের কিছুতেই ছাড়বে না। এবিষয়ে পিয়াল আর সম্রাট যথেষ্ট সাপোর্ট করেছে রোজকে। পিয়াল রোজকে সেসকল ট্রেনিং দিয়েছে যা একজন ছেলে নিয়ে থাকে ,, নিজেকে তৈরি করার জন্য রোজ এপর্যন্ত কম কষ্ট করেনি,, এই ছোট বয়সেই ও চারটা মিশনে কাজ করেছে “র” এজেন্সির হয়ে। ৬টা মার্ডার করেছে,, ১৫জনকে জেলে আর ৪জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছে নিজের বুদ্ধির জোরে।
রোজ : মামামনি কলেজ থেকে কোনো এভিডেন্স পাইনি। তবে কুহু সাঞ্জানার বোন এটা জেনেছি। আমার এই মিশনে আমি তোমাদের কোনো হেল্প চাইনা তবে
পিয়াল : কি মামনি.? বুলেট লাগবে.? নাকি নিউ গান.?
রোজ : ওসব কিছু না। আমি আগে জানতে চাই সেদিন ঠিক কি হয়েছিলো। এটা সিউর আমি যে ছেলেটা ওদেরই কোনো আত্নীয়,, তাই ওদের কারোর সাহায্যই আমার প্রয়োজন,, আর
পিয়াল : এতো ঘাবড়ে যাচ্ছো কেন.? তুমি তো এমন নও,, এনিথিং রং…? হেজিটেট না হয়ে ডিরেক্ট বলো।
রোজ : ওদের মধ্যে একজন আরাভ,, ছেলেটা ভালো। আর আপিলা ওকে ভালোবাসে। ছেলেটা আপিলাকে বিয়ে করতে চায়।। আজ কালের মধ্যে বাড়িতে যাওয়ার প্লানিং করছে।
পিয়াল :ওরা জানে তুমি ওবাড়ির মেয়ে..??
রোজ : নাহহ। আর আমি জানাতেও চাইনা। ওরা জেনে গেলে আমার কাজের প্রবলেম হবে। তুমি প্লিজ বাড়ি গিয়ে সবটা সামলে নাও। তুমি ছাড়া বাড়িতে কেউ আমার ব্যাপারটা সামলাতে পারবে না।
পিয়াল : এই ব্যাপার..? এই সামান্য কারনে নার্ভাস হওয়ার মতো মেয়ে তো তুমি না।সত্যি করে বলো
রোজ : মেঘ নামে একটা ছেলে আছে,, ওকে দেখলেই মনে হয় হাজারটা রহস্য সাথে নিয়ে ঘোরে,, মিস্ট্রিয়াস বয়। কম কথা বলে, সবার সাথে মেশে না।তবে ইদানিং আমি যেখানেই এভিডেন্স কালেক্ট করতে যাই ও সেখানেই পৌছে যায়। একে তো ডিস্টার্ব করে তার উপর আবার ভালোবাসার ফালতু ড্রামা করে আমার ২৪টা বাজিয়ে দেয়।
পিয়াল : ওহহহ।
রোজ : শুধু ওহহ.? এর সলুশন কি.?
পিয়াল : রহস্যভেদ করতে তুমি ভালোবাসো তাই রহস্য নিয়ে তুমিই নাড়াচাড়া করো। তোমার মতো বুদ্ধি তো আমার নেই তাই এটায় কি সলুশন হতে পারে জানা নেই আমার। আচ্ছা ছেলেটার পুরো নাম কি.? ( রোজ কি মেঘালয়ের কথা বলছে.? যদি এমন হয় তাহলে তো খুব ভালোই হবে। রোজের জীবনটা আবার আগের মতো হয়ে যাবে। )
রোজ : ওনার নামমমম,, কি জানি নামটা… হ্যা, মেঘালয় আহমেদ রৌদ্র। অনার্স সেকেন্ড ইয়ারের স্টুডেন্ট। নিরামিষ গম্ভির টাইপের। ন্যাকামি করে অনেক। আর হ্যা একটু কেয়ারিং টাইপেরও আছে তবে লজ্জাশরম কম। ( বেদ্দবটা আমাকে ফার্মেসি দেখাচ্ছিলো বদের হাড্ডি )
পিয়াল : সিরিয়াস কেস। ( যাক এখন নিশ্চিত হলাম যে কলেজে তুমি সেফ থাকবে। তুমি জানো না মেঘ কে.? ও আসলেই মিস্ট্রিয়াস বয়। কখনো এ সাজে কখনো ও সাজে থাকে। তবে তুমি ওকে বুঝতে পারলে তোমাদের দুজনের জন্যই ভালো। আর তোমাদের এই ড্রামাটা সত্যি হলে পৃথিবিতে সব থেকে খুশি আমি হবো। ) তোমাকেই হ্যান্ডেল করতে হবে মামনি।
রোজ : আমার ফুচকা খাওয়া হলো না। তুমি এখন আমাকে ফুচকা খাওয়াও। আর রাতে আমরা একসাথে ডিনার করবো।
পিয়াল : তুমি কি এখন আমাদের অফিসে যাবা.?
রোজ : হ্যা। সব আংকেলদের সাথে আর ভাইয়াদের সাথে দেখা করে আসবো আজ। আচ্ছা তোমাদের ওখানে আমি ছাড়া কোনো মেয়ে নাই কেন.?
পিয়াল : র এজেন্সে প্রতিটি এজেন্টকে পরখ করে দেখা হয়। অনেক মেয়েরা কাজে পারলেও বুদ্ধিতে পারে না। অনেকে বুদ্ধিতে পারলেও কাজে পারে না। সেজন্য এখন কোনো মেয়ে নেই। তবে আগে ছিলো কিন্তু সবাই মারা গেছে।
রোজ : ওহহহ।
পিয়াল : হ্যা। তবে এবার মন রহস্যভেদ করার পাশাপাশি পড়াশুনাতেও দিতে হবে। টপার হতে হবে কিন্তু।
রোজ : জীবনের খেলাতেই হেরে গেছি পড়াশোনায় জিতটা না হয় পরে বুঝবো। আম্মু চলে যাওয়ার পর থেকে আজ অবধি কুশান চৌধুরি আমাকে মেয়ে বলে ভাবে নি,, পরিবারের কেউ আমাকে ভালোবাসে নি,, আমি কিছু করলে কেউ কখনো খুশি হয়নি,, এমনকি বুবুনের মৃত্যুর কারন টাও নাকি আমি,, সেদিন যখন ছেলেটা বুবুনকে ফিজিক্যালি,, হাহ। সেদিন আমি কেন সবাইকে ডাকিনি,, বিশ্বাস করো মামামনি আমাকে সত্যিই কেউ পেছন থেকে মেরেছিলো,, আমার মুখ চেপে ধরেছিলো।
পিয়াল : একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলে নাহ.? কেন তোমাকে আমরা আমাদের এজেন্সিতে নিয়েছি.? কারন তুমি বাকি বাচ্চাদের মতো ছিলে না। তুমি অনেকটা জেদি আর লক্ষ্যস্থীর মেয়ে ছিলে,, চোখের সামনে নিজের বড় বোনের ধর্ষণ আর মৃত্যু দেখে নিজেকে সামলানো অতটাও সহজ না পাঁচ বছরের একটা বাচ্চার জন্য। এ পর্যন্ত যে তুমি এতোটা স্ট্রাগেল করে এসেছো তার পুরো ক্রেডিটটাই তোমার। আর তোমার এতোদিনের পরিশ্রমে বিফলে যেতে দিও না,,
রোজ : ওদের আমি নিজ হাতে মারবো মামামনি। আর মৃত্যুর আগে ওদের এতো কষ্ট দিবো যে ওরাই নিজেদের মৃত্যু হাত পেতে ভিক্ষা চাইবে। এটা রোজের পাক্কা প্রমিজ। আর রোজ নিজের করা প্রতিটা প্রমিজ জীবন দিয়ে হলেও রাখে।
।
।
।
কিছুদিন পর
রোজ আর নীলয় রাস্তা দিয়ে কথা বলতে বলতে যাচ্ছে এমন সময় কিছু ছেলে এসে রোজকে ইনডাইরেক্টলি টিজ করতে থাকে। রোজকে সরাসরি কিছু বলেনি দেখে ওরাও কিছু বলেনি। কিন্তু হঠাৎ করে একটা ছেলে রোজের কাধ বরাবর ধাক্কা দিয়ে রোজকে ফেলে দেয়। সাথে সাথে বাকিরা এসে রোজের হাত, পিঠ ধরে উঠাতে থাকে। নীলয় এসে ওদের ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়,, নীলয়ের একাজে ওরা ক্ষেপে গিয়ে নীলয়কে মারতে লাগলো। রোজ উঠে গায়ের ধুলা ঝেড়ে ওদের দিকে এগোতেই দেখলো মেঘ কানে ফোন হাতে ওদের দিকেই আসছে। তবে এখনো ও রোজদের দেখে নি।
রোজ ওদের দিকে এগোতেই ওদের ধাক্কায় রোজ রাস্তায় পড়ে যায়। আর রাস্তার কর্নারে থাকা একটা পাথরে লেগে ওর কপাল কেটে যায়।
রোজ : আহহহহ
ছেলেগুলো রক্ত দেখে পালিয়ে যায়। মেঘ রোজকে এভাবে দেখে দৌড়ে ওর কাছে আসে।
মেঘ : রোজ? কি হলো তোমার.? কতটা কেটে গেছে, রক্ত পড়ছে।
রোজ : পড়ে গেছি।
নীলয় : মিথ্যা বলছিস কেন..?
রোজ : কিহ,, নাহ মানে আমি মরে যাচ্ছি আর তুই
মেঘ : চুপপপপ। আর একবার মরার কথা বললে মেরেই ফেলবো। কোনো কথা বলবে না। নীলয় আমার ফোনটা নাও আর আরাভকে কল করে বলো গাড়ি নিয়ে আসতে। এখুনি তোমাাদের হসপিটালাইজ করতে হবে।
নীলয় : আমার লাগবে না।
মেঘ : ঠিক আছে তবে একটু ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিও।
রোজ : আমিও ঠিক আছি।
মেঘ : সেটা আমি বুঝবো। তুমি চুপ করো। আর শোনো এখন থেকে ঠিক করে খাওয়া দাওয়া করবে। এভাবে বাতাসের ধাক্কায় পড়ে গিয়ে মাথা ফাটানো স্টুপিডের কাজ।
রোজ : না আমি ঠিক আছি। কাটা ছেড়ার অভ্যাস আছে আমার। নীলয় চল আমরা যাই।
রোজ উঠে দাড়াতেই মেঘ রেগে রোজকে কোলে তুলে নিলো। আচমকা মেঘের এমন আচরণে রোজ ভয় পেয়ে যায়। নীলয় চোখ বড় বড় করে দেখছে আর আল্লাহকে ডাকছে যেন রোজ শান্ত থাকে।
রোজ : আরে আরে কি করছেন এসব,,, আমাকে নামান। লোকজন দেখছে
মেঘ : তাতে আমার কিছু আসে যায় না
রোজ : আমার আসে যায়। এবার নামান। প্লিজ নামিয়ে দিন। ( অদ্ভুত তো এমন হাব ভাব করছে যেন আমি এর বউ লাগি,, নেহাৎ সেদিন ভুলবশত বলে ফেলেছি, প্রেমের নাটক করে আমাকে জানবে সেটা তো ভালো কথা কিন্তু কোলে তোলা ঘাড়ে তোলার কি দরকার.. সবাই তাকিয়ে আছে। অবশ্য আমি ওনার থেকে এক কদম এগিয়ে,, আচ্ছা এখনই এই অবস্থা সত্যি জানলে তো নিভির কথামতো লাভ টর্চার করে শেষ করে দেবে আমাকে। আল্লাহ বাঁচিও।)
মেঘ : চুপ থাকো,, এখন তো শুধু কোলে নিয়েছি বেশি লাফালাফি করলে রাস্তায় দাড় করিয়ে ডিপলি লিপকিস করবো।
রোজ : ছি!! অসভ্য,, নির্লজ্জ। সবার সামনে তো ধোয়া তুলসি পাতা সাজেন। মানুষ জানে আপনি চরিত্রহীন?
মেঘ : সবার জানার দরকার নেই।শুধু তুমি জানলেই হবে। কারন ভালোবেসেছি শুধু তোমায়। সবাইকে না । আর টেনশন নিও না আমি একটু হলেও রোম্যান্টিক আছি। নাহলে বউ টিকিয়ে রাখবো কিভাবে..?
রোজ : আমাকে ছেড়ে দিন,,, এতোদিন ধরে বলছি আমি আপনার ধারেকাছেও থাকতে চাইনা।
মেঘ : আমার কাছেই সারাজীবন থাকতে হবে তোমাকে,, আমার থেকে দুরে যাওয়ার চিন্তা মাথাতেও এনো না,, তাহলে জোর করতে বাধ্য হবো। আর মেঘ যদি কারোর ওপর জোর দেখায় তাহলে তার খুব একটা ভালো হয়না।
রোজ : গাড়ির কাছে চলে এসেছি এবার তো নামান। ( এ কি বলছে এসব.? ও তো নাটক করছে তাহলে এতো ইমোশন দিয়ে কথা বলার কি দরকার। সত্যিই কি ভালোবাসে আমাকে..? না না কি ভাবছি এসব। আমাকে আপিলা, দাভাই,মামামনি, নীলয়,নিভি এরা পাঁচজন ছাড়া কেউ ভালো বাসে না।আমি যে অপয়া যার জীবনে থাকি সেই চলে যায় প্রথমে আম্মু তারপর বুবুন।আমার জন্যই তো মারা গেছে ওরা। বাঁচাতে পারিনি ওদের। আমি শুধু মামামনির কথা রাখতে গিয়ে মেঘরোদ্দুরের ক্ষতি করবো.? আমি তো ওনাকে সত্যিইই )
মেঘ : আরাভ তুই নীলয়কে নিয়ে বাইকে বা অন্য গাড়িতে আয়।আমি রোজকে নিয়ে যাচ্ছি।
মেঘ রোজকে গাড়িতে বসিয়ে নিজে ড্রাইভিং সিটে বসে। রোজের কপালের রক্ত জমে গেছে,, মেঘ একটা পেইনকিলার রোজের হাতে দিলো,, মেঘের গাড়ি বলতে এই এক সুবিধা এখানে অলঅয়েজ সবরকমের মেডিসিন থাকে। রোজ মেডিসিনটা খেয়ে মেঘের দিকে তাকালো,,
মেঘ : কিছু বলবে.?
রোজ : আমি সেদিন মিথ্যা বলেছিলাম। আমি আপনাকে ভালেবাসি না।
মেঘ : আরাভদের সাথে তোমার যেদিন ঝামেলা হয় সেদিন তুমি বাইকে ছিলে.? ( রোজ মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো )
রোজ : আজ আপনার কথাগুলো কেয়ারিং গুলো অন্যরকম লেগেছে। মনে হয়েছে আপনি আপনার হৃদয়ের খুব গভীর থেকে কথাগুলো বলেছেন। যখন মরে যাওয়ার কথা বলেছিলাম তখন আপনি আমাকে বকেছিলেন। জানেন আপনার কন্ঠটা বারবার কেঁপে উঠছিলো অজানা ভয়ে। জানি না আপনি সত্যি ভালোবাসেন কিনা আমাকে। তবে মিথ্যা বলবো না আমি আপনাকে কেন কাওকেই কখনো ভালোবাসতে পারবো না কারন আমি ছেলেদের বিশ্বাস করিনা । আমার জীবনের যে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমি এসেছি সেটা পূরণ করেই চলে যাবো।
মেঘ : বাচ্চা মেয়ে. তোমার নাক টিপলে এখনো দুধ বের হবে….তুমি ভালোবাসার মানে বুঝবে কিভাবে.? আর তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে ভালোবেসেছি তোমার ভালোবাসা পাবো বলে.? ভালোবাসা দেওয়ার জিনিস, নেওয়ার জিনিস নয়।কেউ যদি ভালোবাসা দেওয়ার চেয়ে ভালোবাসা পাওয়াতে বেশি সুখ পায়, তাহলে সে এখনো ভালোবাসার গভীরে যেতে পারে নি।আর আমি সেই গভীরে যেতে চাই।অনুভব করতে চাই নিজের সবটুকু দিয়ে। ভালোবাসার সাথে প্রত্যাশার কোনো সম্পর্ক নাই। সত্যিকারের ভালোবাসা শুধু ভালোবাসার মানুষটিকে সুখী করতে চায়, তার থেকে কোনো প্রতিদান আশা করে না। তুমি সুখি থাকলেই আমি সুখি। আর আমি নিজে তোমাকে খুশি রাখতে সুখি রাখতে চাই।
রোজ মুখ ভেঙচি দিয়ে বাইরের দিকে তাকালো
রোজ : আপনার সাথে কথা বলাই বেকার। আর হ্যা বাইকে আমি ছিলাম ঠিকই তবে বাইক আমার না। আর আগ বাড়িয়ে কাউকে এসব বলার দরকার নাই। আচ্ছা আমি যদি আপনার জন্য মেয়ে খুজে দেই… সুন্দরি সুশ্রী গুনবতী মেয়ে..??
মেঘ : তোমার সতীন আনতে চাইলে আনতেই পারো। তবে আমার প্রথম বিয়েটা তোমার সাথেই হবে। আর বাসর টাও। তারপর অন্য মেয়েকে চাইলে এনো।
রোজ : লুচ্চা ব্যাটা।
মেঘ রোজকে একটানে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো। রোজের পেটের দিকে হাত রেখে শক্ত করে জরিয়ে ধরে গাড়ি স্টার্ট করলো,, রোজ মেঘের কান্ডে হতবাক। কোনো শব্দ বের হচ্ছে না ওর মুখ দিয়ে। মেঘ গাড়িটা একটা নিরিবিলি জায়গায় এনে থামালো। দুই সাইজে ঘন বন দেখে রোজের হাত পা ভয়ে ঠান্ডা হয়ে গেলো। মেঘ রোজকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি লক করে ওকে আবার কোলে তুলে নিয়ে জঙ্গলের মাঝের একটা রাস্তা দিয়ে হাটা শুরু করলো,,রোজের চোখ বুজে আসলো। মেঘ রোজের অবস্থা দেখে মুচকি হাসে।
#পর্ব_০৭
রোজের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন মেঘ রোজের ঠিক মাথার কাছে বসা। রোজ চোখ মেলে তাকাতেই ভয়ে চিল্লিয়ে ওঠে। কপাল বরাবর ছাদে টাইলসের তৈরি মেঘের একটা বড় ছবি। মেঘের স্থীর চোখ রোজের বুকের ভেতরটা কাঁপিয়ে তুললো।
মেঘ : তিন ঘন্টা ধরে ঘুমাচ্ছো। আমাকে বসিয়ে রেখে এভাবে শোধ নিলে.?
রোজ : তো বসে ছিলেন কেন.? আর এটা কোন জায়গায়.?
মেঘ : তো কি চাও আমিও তোমার সাথে তোমার পাশে শুয়ে,,,
রোজ : স্টপপপপপ। আমি বলতে চেয়েছি বসে বসে যখন বিরক্ত হচ্ছিলেন তখন অন্য কোথাও যেয়ে মন ফুরফুরে করে নিলেই হতো।
মেঘ : বিরক্ত হয়েছি তবে তুমি জেগে গেছো বলে। তোমার ঘুমন্ত মুখটা আমার কাছে সব থেকে বেশি ভালো লাগে। যাক সেসব তোমাকে কিছু দেখাতে চাই,, তোমার ভালো লাগবে হয়তো।
মেঘ রঙিন কাগজে মোড়ানো দুইটা বড় বক্স এনে রোজের সামনে দিলো।
রোজ : কি এগুলো.?
মেঘ : খুলে দেখো।
রোজ ভয়ে ভয়ে কাগজ খুলতেই ওর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। রোজেরই ছবি তবে স্কেচ করা। প্রথমটা বাইকের গ্লাসে থাকা একজোড়া চোখ আর দ্বিতীয়টা পানির বোতল হাতে নিয়ে চোখ আধবোজা রোজ।
রোজ : ওয়াও। এগুলো আমি.?
মেঘ : হুম
রোজ : কে বানিয়েছে.? অনেক সুন্দর স্কেচ।
মেঘ রোজের কথা ঠোট চেপে হাসলো। রোজ ছবি দুটো খুটে খুটে দেখছে। মেঘ ফ্রেস হয়ে চেঞ্জ করে নিলো।
মেঘ : চলো তোমাকে বাড়িটা ঘুরিয়ে দেখাই। এটা আমার দাদাজানের *শখের ভিলা* এই জঙ্গলের একেবারে মাঝে বানানো এই তিনতলা বাংলোটা। ছোটবেলায় আমরা পিকনিক করার জন্য মাঝে মাঝে এসেছি এখানে। তবে এখন কেউ আসে না।
রোজ : এগুলো কি.?
মেঘ : মূর্তি। দাদাজান এসব স্টাচু পছন্দ করতো তাই বানিয়েছিলো কয়েকটা।
রোজ : ঘরগুলো দেখতে একই রকম। বাইরেটা দেখবো। [ ভুতুরে টাইপের একই রকমের ঘর অসহ্য,,, ]
মেঘ : তুমি যাও আমি তোমার জন্য কিছু খাবার বানাই। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। ফিরতে পারবো না আজ।
রোজ : কিহ…?? তাহলে থাকবো কোথায়.?
মেঘ : এখানেই।
রোজ : আমি বাড়ি যাবো। এখানে জঙ্গলের মাঝে রাত কাটাতে পারবো না। এই ভুতের বাড়ির মতো দেখতে ঘরে কিছুতেই থাকবো না। গা ঘিন ঘিন করে উঠছে।
মেঘ : এবাড়ির একটা রেওয়াজ আছে,, যে বা যারা সন্ধ্যার পর এখান থেকে বাইরে যায় তার মিলাদ তিন দিনের মধ্যে দিতে হয় না হলে তার লাশও খুজে পাওয়া যায় না। [ মজা করে বললো ]
মেঘের কথায় অলমোস্ট রোজ কেঁদে ফেলেছে,, রোজ বরাবরই অন্ধকার ভালোবাসতো কিন্তু সেদিনের পর থেকে অন্ধকার ওর জীবনের কাল হয়ে দাড়িয়েছে,, হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেলো। রোজ পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে কপাল বেয়ে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। রোজের চোখের সামনে সেদিনের দৃশ্য ভাসতে লাগলো ছেলেটা ইরার জামা টেনে ছিড়ে ফেলছে,, নখ দিয়ে ইরার শরীরের আঁচড় দিচ্ছে,, অন্ধকার ঘরে মোমের টিমটিম আলোয় জ্বলজ্বল করছে ইরার বিধ্বস্ত চেহারা,, ছেলেটা বিশ্রিভাবে হাসছে আর ইরার সাথে জোর করে শারিরীক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে
রোজ : বুবুননননননননন।
চিৎকার দিয়ে সেন্সলেস হয়ে পড়ে যায় রোজ। মেঘ চার্জার লাইট এনে রোজকে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায়। মেঘ রোজকে তুলে নিজের রুমে নিয়ে যায়। তারপর কারেন্টের মিটার ঠিক করতে চলে যায়।। মিটার ঠিক হতেই মেঘ অস্থির হয়ে ছুটে আসে রোজের কাছে।
মেঘ : রোজ.? রোজ কি হলো তোমার,, সরি রোজ আমি মজা করছিলাম। আমার দিকে তাকাও রোজ দেখো তোমার মেঘরোদ্দুর এসেছে। বক বক করছি আমাকে চুপ থাকতে বলো,, আমাকে বকা দাও তবুও চোখ খোলো
মেঘ পানি এনে রোজের চোখে মুখে ছিটালো
মেঘ : রোজ দেখো কোথাও কিছু নেই,, আমি আছি তোমার সাথে। তোমার কোনো ভয় নেই। আমি তোমার কিছু হতে দিবো না কখনো। আমি অলঅয়েজ তোমার সাথে থাকবো। তুমি একবার তাকাও আমার দিকে।
মেঘ রোজের এমন অবস্থা দেখে নিজেও কেঁদে ফেললো। মেঘ রোজের হাত নিজের মাথায় ঠেকিয়া বিরবির করছে এমন সময় রোজ চোখ মেলে তাকালো। রোজের সাথে প্রায়ই এমন হয় তাই ও এসবে অভ্যস্ত তবে মেঘকে এভাবে কাঁদতে দেখে ওর বুকের ভেতরটা মোচর দিয়ে ওঠে।
রোজ : শুনুন।
রোজের গলা শুনতেই মেঘ বাঘের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো রোজের দিকে। রোজ এমন চাহুনিতে ভয় পেয়ে যায়। মেঘ রোজের হাত ছেড়ে স্থির হয়ে বসে রোজের দিকে তাকালো। রোজও উঠে বসলো। মেঘের চোখ বেয়ে এখনো পানি পড়ছে।
রোজ : আমি ঠিক আছি। আপনি আর কাঁদবেন না।
মেঘ কিছু না বলেই উঠে গেলো। রোজও মেঘের পিছু পিছু হাটছে।
রোজ : আপনি কাঁদছেন কেন.? প্লিজ কাঁদবেন না। আপনার কান্না আমার ভালো লাগে না। আরে দাড়ান এভাবে হাটছেন কেন পায়ে কয়টা চাকা লাগাইছেন.? দাড়ান না হলে কিন্তু আমি করিডোর থেকে লাফ দিবো।
মেঘ পিছনে ঘুরে তাকাতেই রোজ মেঘের দিকে এগিয়ে গেলো।
রোজ : আমি কি মরে গেছি.? এভাবে মরা কান্না করার মানে কি..?? মেয়েরাও আপনার মতো এতো কাঁদে না। কাঁদুনি ব্যাটা চলুন কিছু খেয়ে নেই ঘুমাতে হবে তো।
মেঘ : তুমি বসো আমি খাবার আনছি। আর কোনো দরকার হলে আমাকে বলবে,, অন্ধকার আর ভুতে ভয় পাও এটা আগে বললেই পারতে। আমার আরো সাবধান হওয়া উচিত ছিলো,, তোমার কিছু হলে আমি কিভাবে বাঁচতাম..? আল্লাহ যেন তোমার আগে আমাকে
রোজ : সাট আপপপপ। যা মুখে আসছে তাই বলছেন,,, এতো সাহস কে দিয়েছে আপনাকে.?
মেঘ : তো কি বলবো.? তুমি আমাকে ভালোবাসো না কিন্তু আমি বাসি। প্রথম দেখাতেই আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার প্রতিটা হৃদয়স্পন্দন অনুভব করি আমি,, তোমার প্রতিটা কষ্ট আমাকে মৃত্যুর চেয়েও বেশি যন্ত্রনা দেয়।সেটা বোঝো তুমি.? আমাকে তুমি যাই বলো না কেন আমি তোমাকেই ভালোবেসে যাবো কারন এতোদিন ধরে শুধু ভালোবেসেছি তোমাকে কিছু পাওয়ার আশা রাখিনি।
রোজ : আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে হবে না। ছেলেরা এমন হয় আপনাকে না দেখলে জানতেই পারতাম না। আগের মেঘ আর এখনকার মেঘ দেখছি টোটালি চেঞ্জড। চলুন খেয়ে নেই,, আমার মাথা ব্যাথা করছে।
মেঘ আর রোজ একসাথে খেয়ে নিলো। মেঘ ভাত আর ডিম ভাজি করেছে। তাও ডিম অর্ধেক পোড়া আর ভাত গলে সুজির মতো হয়ে গেছে।
রোজ : ইই কি বানিয়েছেন.? আমাকে বললে আমিই কিছু বানাতাম। বোঝাই যাচ্ছে আপনার বউ এর কপালে অনেক দুঃখ আছে।
মেঘ : খাবে না.? তাহলে আবার কিছু বানিয়ে আনি নুডুলস খাবা.?
রোজ : উহু এটাই ঠিক আছে। খাইয়ে দিন।
মেঘ : আমি.?
রোজ : নাহ লোক ভাড়া করে আনেন তারা খাইয়ে দিক আমাকে। যাকে ভালোবাসেন তাকে খাওয়াতে পারবেন না.?
মেঘ : দিচ্ছি। কিন্তু পুড়ে গেছে
রোজ : যাক তাতে তোর কি.? খাইয়ে দিতে বলছি চুপচাপ খাইয়ে দে।
মেঘ রোজকে খাইয়ে বিছানা গোছাতে লাগলো। রোজ সোফায় বসে সবটা দেখছে আর হাসছে।
মেঘ : যাও ঘুমিয়ে পড়ো।
রোজ : সোফায় ঘুমাবো। আপনি ওখানে ঘুমান।
মেঘ : কিন্তু
রোজ : আবার কিন্তু,,,, যা গিয়ে ওখানে ঘুমা। আর লাইট জ্বালানো থাক।
মেঘ : লাইট জ্বালানো থাকলে আমার ঘুম আসে না।
রোজ : অফ করলে আমি ভয় পাই,,, তাহলে আমার কি হবে,, ওই আপনি আমাকে ভয় পাচ্ছেন.? হি হি
রোজ উঠে বিছানায় শুয়ে পড়লো। মেঘ দাড়িয়ে ভাবছে কি করবে। রোজ একবার উকি দিয়ে বললো,,
রোজ : আমাকে যদি বিয়ে করেন তাহলে বিছানার এক কোনায় জায়গা দিতে রাজি আমি। মামামনি বলছিলো আপনি ভালো ছেলে
মেঘ : মামামনি মানে.?
রোজ : পিয়াল এহমেদ খান।
মেঘ : ফুফা.? মানে ফুপির বর.? তোমার মামা.? কিন্তু ফুফার বোনের তো দুইটা মেয়ে একটা আলিজা আর
রোজ : সিটাদিয়া চিটৌধুরি রিটোজ ওরফে সাদিয়া চৌধুরি রোজ।আমারই নাম। আমাদের বিয়ের প্রপোজাল পাঠিয়েছিল আপনাদের বাড়ি,, আপনি না করে দিসেন কেন.? এই ভালোবাসার নমুনা.?
মেঘ : তুমিই সাদিয়া.?
রোজ : আপনার ফোনটা দিন
রোজ মেঘের ফোন নিয়ে পিয়ালকে ফোন দিলো।
– হ্যালো মামামনি আমি রোজ।
– এটা তো মেঘের নাম্বার তুমি কোথায় পেলে.?
– সেদিন তো তোমার রহস্যময় মেঘের রহস্য আমি ভেদ করে ফেলেছি। আর আজ,, প্রথমে তোমাদের মেঘ আমাকে তুলে আনছে এখন একসাথে থাকতে চাচ্ছে অথচ বিয়ে করতে চায় না। তুমি এর সাথে আমার বিয়ে দিসো কেন.?
– সে কি মেঘ তো তোমাকে ভালোবাসে।
– মিথ্যা কথা।
মেঘ : বিয়ে দিসে মানে.??
– আরে মেঘ তুমিও আছো.? এসব কি শুনছি আমি.? তুমি আমার ভাগ্নিকে তুলে নিয়ে গেছো.?
– আমি তুলে আনিনি
– মামামনি আমাকে কোলে তুলে আনছে। আমার সেন্স ছিলো না এখন দেখছি ভুতের বাড়িতে আনছে।
– আংকেল বিয়ে দিসো মানে.?
– তোমাকে না জানিয়েই রোজ আর তোমার রেজিস্ট্রি করে ফেলেছি আমি আর তোমার বাবা। তুমি জানতে চেয়েছিলে আমাদের এজেন্সির সেই মেয়েটা কে.? আমি বলিনি কারন তুমি তার পরিচয় জানলে সে নিজের কাজ করতে পারতো না
– সেই মেয়েটা রোজ.?
[ গল্পের আসল লেখিকা সাদিয়া আহমেদ রোজ ]
– হুম আমার কেবিনে তোমার ছবি দেখে নিয়েছিলো রোজ। তারপর আমি সব সত্যিটা ওকে বলি। আর বিয়ের প্লানিং এর সবটাই রোজ জানে। ও শুধু তোমাকে পরীক্ষা করে দেখছিলো তুমি ওকে ভালোবাসো কিনা
– তুমি রাখো আজ রোজের একদিন কি আমার একদিন
– নাহহহ মামামনি মেঘ আমার দিকে তেড়ে আসতেছে। মারবে মনে হচ্ছে কেমন ঘরে বিয়া দিলা যে মার খাওয়া লাগতেছে।
পিয়াল উচ্চস্বর হেসে ফোন রেখে দিলো।
মেঘ : আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো অথচ আমি জানলাম না.? তার ওপর তুমি ডিআর এজেন্ট এটাও লুকিয়ে গেলে এখন এতোগুলো মিথ্যা বললে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই না..?
রোজ : আমি মজা করছিলাম। এভাবে এগিয়ে আসছেন কেন.? ভুল করেছি। ছোট মানুষ ভুল করলে মাফ করে দিতে হয় জানেন না.?
মেঘ : বিয়ে হলে বাসর হয় এটা তুমি জানো না.?
রোজ : বা বা বা বা বা স স স
মেঘ : বাসর। বা বা স স না
রোজ : মামামনি ওয়াজ কিডিং। কোনো বিয়ে হয়নি। বিয়ে না হলে বাসর হয়.?
মেঘ : সমস্যা নেই আজ বিয়ে ছাড়াই বাসর হবে।
রোজ : এমন বলতে পারেন না আপনি। এটা ঠিক না। আমি আপনার বউ হই আমার কথা আপনাকে শুনতেই হবে।
মেঘ রোজের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।
মেঘ : মাথা টিপে দাও আর পুরো ঘটনা বলো নাহলে বাসরের জন্য তৈরি হও। আমি অনেক এক্সাইটেড আজ বিয়ে হয়ে গেছে,, তুমি আমার বউ,, আমরা এক ঘরে এক বিছানায় আছি। সব থেকে বড় কথা তোমাকে হারানোর ভয় এখন ০.০১% বাসর হয়ে গেলে সেটাও থাকবে না
রোজ : আসলেই লুচ্চা।
মেঘ : কি বললে.?
রোজ : মেঘলা কে.?
মেঘ : আমাদের অফিসের ম্যানেজারের মেয়ে। কেন কিছু বলেছে তোমাকে.?
রোজ : আপনার জানু হয়.? সে নিজেকে আপনার কলিজা বলে দাবি করে,, আমাকে হুমকি দেয় আপনার থেকে দূরে সরে যাওয়ার জন্য। আপনাদের মাঝে নাকি সব হয়ে গেছে..??
মেঘ : এসব বলেছে.?
রোজ : হুহ। ও বলছিলো আপনি নাকি আমাকে টেস্ট করে আমাকে ছেড়ে দিবেন তাই আগেই বিয়েটা করে নিয়েছি।
মেঘ : আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করো নি.?
রোজ : উহু।
কথাটা শুনে মেঘ উঠে আরেক দিক ফিরে শুয়ে পড়লো বালিশে। রোজ উঠে মেঘের পিঠের ওপর বসলো,,
রোজ : আমার ঘুম আসছে না।
মেঘ :…………….
রোজ : শুনছেন.? আমার মাথা ব্যাথা করছে…
মেঘ :……………
রোজ : আমার দায়িত্ব নিতে ভয় পাচ্ছেন…? নিতে হবে না। আমার দায়িত্ব আমি নিজেই নিতে পারবো।
মেঘ ঘুরে কাত হয়ে শুয়ে পড়লো। রোজ পাশে বসে মেঘের পিঠে চিমটি দিচ্ছে। অন্যদিকে মেঘ লাইটের দিকে একবার তাকাচ্ছে একবার মেঝের দিকে তাকাচ্ছে।রোজ মুখ ভেঙচি দিয়ে বললো,,
রোজ : নিজেরে কি বিশ্বসুন্দর ভাবেন.? ঢং করেন হ্যা..?? আপনার পেছনে মেঘলা ঘুরলে আমার পেছনেও মেঘ রোদ একসাথে ঘোরে।
মেঘ এবার রোজের দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো। রোজ উঠে লাইট অফ করে দিলো।
রোজ : ভালো করে ঘুমান। আমার সাথে কথা বলার দরকার নাই। মামামনি এমন ছেলের সাথে বিয়ে দিলো যে আমাকে ভালোইবাসে না মুখেই খালি ফটর ফটর।
হঠাৎ টাং করে বিকট একটা আওয়াজ হলো মেঘ ভয় পেয়ে ফোনের ফ্লাশ অন করলো। রোজ উপরের তারাবাতি জরিয়ে নিচে পড়ে আছে। মেঘ উঠে এসে রোজের গা থেকে তারাবাতি ছাড়িয়ে আবার গিয়ে শুয়ে পড়লো। রোজও আস্তে আস্তে মেঘের পাশে গিয়ে দাড়ালো।
মেঘ : ঘুমিয়ে পড়ো।
রোজ : আপনি আমার সাথে ঠিক করে কথা বলছেন না কেন.? রাগ করেছেন..?? এতো রাগ আমার ওপর। আপনি জানেন ছোট থেকে আমি একা বড় হয়েছি কেউ আমাকে ভালোবাসতো না। যখন আমার সবার আদরে থাকার সময় ছিলো, পুতুল নিয়ে খেলার সময় ছিলো তখন আমি কেঁদে কেঁদে বালিশ ভেজাতাম। বন্দুক আর ছুরি দিয়ে মানুষ মারা শিখতাম। নীলয় আর নিভির সাথে ছাড়া কারোর সাথে কথা অবধি বলতাম না। কোনো বন্ধু বানাতাম না যদি সে আমাকে ভুল বোঝে বা আমার ওপর রেগে যায় সে ভয়ে। মামামনি আমাকে কাঁদতে মানা করেছে কিন্তু তবুও আমার শুধু কান্না আসছে। আপনি আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন। মামামনি বলেছিলো আপনি আমাকে সবার থেকে বেশি ভালোবাসবেন।আমার বন্ধু হবেন কিন্তু আমি কিছু বললেই শুধু রেগে যান। আমাকে ভালোবাসা যায় না তাইনা..?? আমি অনেক খারাপ.?
মেঘ : ঘুমাও।
রোজ এবার রেগে ফোনটা ছুড়ে মারলো। তারপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো মেঘ উঠে লাইট জ্বালালো। রোজ মেঝেতে বসে হাটুর মাঝে মাথা ঢুকিয়ে গুটিসুটি মেরে কাঁদছে।
মেঘ : কেঁদে লাভ নেই।
রোজ : জানি। আমাকে তো কেউ সহ্যই করতে পারে না। কিন্তু যখন মরে যাবো তখন বুঝবেন রোজ নামের খারাপ মেয়েটা আপনাকে কত ভালোবাসতো
মেঘ : বেঁচে থাকতে বোঝাতে পারছো না। মরে গিয়ে কি বোঝাবে.?
রোজ : তাহলে আপনি চান আমি মারা যাই..? অকে ফাইন।
রোজ খাটের নিচ থেকে বন্দুক উঠিয়ে ট্রিগার টানলো। বিকালে গান টা নিচে পড়ে গেছিলো মেঘের সেটা খেয়ালই নেই,, মেঘ রোজকে এভাবে দেখে শিউরে ওঠে। মেঘের রোজের হাত থেকে গান কেড়ে নিলো আর রোজকে সজোরে থাপ্পড় মারলো।
মেঘ : মাথায় বুদ্ধি নাই..?? এই বুদ্ধি নিয়ে এজেন্ট হয়েছো.? কোনটা রাগ, কোনটা অভিমান, কোনটি মজা, কোনটা সত্যি বুঝতে পারো না.? যাও গিয়ে শুয়ে পড়ো নাহলে কিন্তু
রোজ আগের মতোই বসে আছে। মেঘ রেগে ওখান থেকে ফোনটা নিয়ে চলে যায়।
– হ্যালো আংকেল.?
– হ্যা মেঘ বলো।
– রোজের কি কোনো সমস্যা আছে.? মানে হুট করে বাচ্চাদের মতো করছে নিজেকে শুট করার চেষ্টা করছে,, ও ওবাড়ির ছোট মেয়ে সবার আদরের কিন্তু আজ উল্টা পাল্টা বলছে। প্রথমে ভেবেছিলাম মজা করছে কিন্তু এখন আবার কান্নাকাটিও করছে।
– ওকে নিয়ে যা ভেবেছো ও তেমন কিছুই পায়নি মেঘ। বুবু মারা যাবার পর অনেক কষ্টে বড় হয়েছে।সেসব কাল বলবো তোমাকে তুমি শুধু ওকে দেখে রাখো। ও কিন্তু যখন তখন নিজের ক্ষতি করে দিতে পারে।
– এমন করছে কেন.?
– সেটাই তো। তুমি কি রাগারাগি করেছো.? বকেছো.?
– কথা বলিনি।
– মেয়েটা তোমাকে ভালোবাসে মেঘ। ও নিজের কাছের মানুষদের কাছ থেকে কখনোই ইগনোরেন্স মেনে পারে না। জেদি অনেক।আমি সবদিক ভেবে তোমার ফুপি তোমার মাবাবার সাথে আলোচনা করেই তোমাদের বিয়ের ডিসিশন নিয়েছিলাম। ওর সব দায়িত্ব এখন তোমার। আমি বলছি না ওকে নিজের ফার্স্ট প্রায়রিটি হিসাবে দেখতে তবে নিজের ভাগ্নিকে একটু সুখি হতে দেখার জন্য তোমার কাছে অনুরোধ করছি ওকে কখনো কষ্ট দিও না। ওকে ওই ট্রোমা থেকে বের করার চেষ্টা করো। আমি জানি এটা যদি কেউ পারে তাহলে সেটা একমাত্র তুমি।
– আমি ওকে ভালোবাসি আংকেল। ওকে কষ্ট দেওয়ার কথা মাথাতেও আনতে পারিনা আমি। আমি শুধু চেয়েছি আমার জন্য যাতে ও নিজেকে না বদলায় আর নিজের মনের কথা মুখ ফুটে বলুক।
– সাবধান ও কিন্তু কথায় কথায় কামড় দেয়
– মাঝে মাঝে ভাবি তুমি আংকেল হলে কিভাবে ? যখন তখন লজ্জায় ফেলে দাও
– ভালোবাসা বৎস। তোমার ফুপির শেখানো ভালোবাসার ফল।বয়স বাড়ছে তবে মনটা তোমাদের থেকেও বেশি ইয়াং বুঝেছো.?
– রাখছি আমি। দেখি তোমার ভাগ্নি কি করে।
– আচ্ছা।
মেঘ রুমে এসে রোজের কাছে গেলো।
মেঘ : সরি।
রোজ : আপনার সাথে কথা বলবো না। আপনি রেগে যাবেন আর কুশান চৌধুরির মতো মারবেন আমাকে। একটু আগেও মেরেছেন।
মেঘ : নাহহ আর কখনো মারবো না। কিন্তু এখন তো রাত হয়ে গেছে । ঘুমাতে হবে না.?
রোজ : ঘুমাবো না। এভাবেই বসে থাকবো।কেউ চায় না আমাকে।আমি খুব খারাপ।
মেঘ : হ্যা তো। আর আমিও খুব খারাপ। দেখলে না তোমাকে মারলাম। এখন তো আমারও ঘুম আসছে না। কেউ যদি আমাকে ঘুমাতে সাহায্য করতো তাহলে ভালো হতো। আসলে কি জানো ? না ঘুমালে আমার প্রচুর মাথা ব্যাথা করে।অনেক কষ্ট হয়।
রোজ : কষ্ট হয়.? আপনার কষ্ট হলে তো আমারও কষ্ট হবে। আমি আপনাকে সাহায্য করবো।
মেঘ : আচ্ছা ঠিক আছে।
চলবে..??
[