#অনুতাপ
#সপ্তত্রিংশ_প্রহর #Yasira_Abisha (#Fatha)
রাত প্রায় ৩ঃ৩৫ দিকে মেঘার জ্ঞ্যান ফিরে, মেঘা তড়িঘড়ি করে ফোনটা হাতে নিয়ে রুহিকে কল দেয়।
বেশ কিছুক্ষন ধরে রুহির ফোন ভাইব্রেট করছে ইরাদ তাকিয়ে দেখে ৫বার কল এসেছে স্ক্রিনে আপু লিখা ইরাদ বুঝে ওর বোন কল দিয়েছে। তবে এখন রুহিকে ফোনটা দেওয়া ঠিক হবেনা। এইজন্য সে ফোনটা নিয়ে ঘর থেকে বেড় হয়ে ব্যালকনিতে আসে এবং কলটা রিসিভ করে,
অপর পাশ থেকে মেঘা তখন বলতে শুরু করে
– রুহি তুই আমাদের না জানিয়ে কিভাবে বিয়ে করলি? থাক করে যখন ফেলেছিস এখনো কোনো কিছু হয়নি তেমন, কেউ কিছুই জানেনা কিছুই হবে না তুই বাসায় ফিরে আয় তাড়াতাড়ি। এই ছেলেকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি। এর সাথে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না তোর সংসার করা।
মেঘার আওয়াজ শুনে ইরাদের এতো চেনা লাগছে, আর মনে হচ্ছে মেয়েটা মেঘা কি না?
– কে বলছেন?
– ইরাদ আমি মেঘা বলছি,
– মেঘা?
– তুমি এতো ছোটোলোকি কাজ কিভাবে করতে পারলে ইরাদ? আমার ছোট বোনকে কিভাবে বিয়ে করলে তুমি? তুমি এইভাবে আমার থেকে প্রতিশোধ নিলে?
-রুহি তোমার বোন?
– ইরাদ এমন ভং ধরো না যে তুমি কিছুই জানো না। তুমি এসব ইচ্ছা করেই করেছো। তুমি রুহিকে ফিরে আসতে দাও, ও তোমার সাথে থাকবে না।
– আমি কিছুই ইচ্ছে করে করিনি। আর রুহি আমাকে কেনোই বা ডিভোর্স দিবে?
– তুমি কি ভাবছো আমার বোনকে আমি তোমার সাথে থাকতে দিবো? তুমি এতো নিচু কাজ কিভাবে করলে ইরাদ?
– ব্যাস মেঘা। অনেক বলেছো তুমি আর অনেক শুনেছি আমি। তোমার কাছে কি মনে হয় বলো তো? বিয়ে কোনো ছেলেখেলা? যে তুমি বলবে আর ভেঙে যাবে? বিয়ে আল্লাহ পাকের অশেষ রহমত যা বললেই ভেঙে যায় না। আর রুহি তোমার বোন হওয়া স্বত্তেও সে অনেক ম্যাচয়র, আমি এতোটুকু বিশ্বাস রাখি সে আমাকে ছেড়ে যাবে না কোনোদিন ইনশাআল্লাহ। আর হ্যা প্রতিশোধের কথা বলছিলে তুমি আমাকে তাই না? প্রতিশোধ মানুষ তার ওপরে নেয় যার প্রতি ভালোবাসা থাকে মনের কোণে কোথাও না কোথাও তাকে না পাওয়ার বেদনা থাকে। তবে তোমার প্রতি আমার তিল পরিমাণ কোনো অনুভূতি এখন আর অবশিষ্ট নেই। হ্যাঁ বিগত তিন বছর আগেও তোমার প্রতি আমার একটা অনুভূতি ছিলো। আমি কষ্ট পেতাম যেদিন রুহি আমাকে তার ভালোবাসার কথা জানায় তোমাকে আমার দেওয়া শাড়িটা পরে সে এসেছিলো তখন আমি কিছু সময়ের জন্য থমকে গিয়ে ছিলাম। আমি নিজের অতীতের ছায়ায় রুহিকে মেনে নিতে পারছিলাম না, সেদিন আমি পারি নি। কারণ তখন ও মনের কোথাও তোমার রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলো ছিলো কিন্তু এখন আর কিছুই নেই। কারণ রাগ, জেদ, ক্ষোভ, দুঃখ, অনুশোচনা, না পাওয়ার বেদনা এসব কিছু মিলেই মানুষের মনে প্রতিশোধের চেতনা জাগ্রত হয় কিন্তু তোমার প্রতি আমার একটাও অনুভূতি কাজ করে না। শুধু কাজ করে একটাই জিনিস তা হলো অনুতাপ, কেনো আমি তোমার সাথে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলাম আর কেনই বা রুহি আমার জীবনে এতো পরে এলো৷ এর চেয়ে বেশি কিছুই কাজ করে না তোমার জন্য মেঘা।
অপর পাশ থেকে ইরাদের এই কথা গুলো শুনে মেঘার মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। খুবই অপমানিত লাগলো তাই কিছু না বলেই মেঘা ফোনটা কেটে দিলো। শরীরটা এমনিতেই ক্লান্ত লাগছে তার ওপরে এমন কিছু আজকে শুনতে হবে মেঘা কল্পনাতেও ভাবেনি। কি থেকে কি হয়ে গেলো এসব? মেঘা ধীরে ধীরে তিন বছর আগের সব কথা মনে করতে শুরু করলো। রাস্তায় রুহিকে দেখা ওর বান্ধুবীর ফোন কল আসা। রুহির সাথে ইরাদের আরো আগেই একসাথে রেসোর্টে যাওয়া। রুহিকে ইরাদের স্ত্রী ভাবা। মেঘার অপমান, এরপর ইরাদকে প্রপোজ করতে রুহিকে সাহায্য করা সব কিছু এক এক করে মেঘার মাথায় ঘুড়তে লাগলো৷ সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগলো যে মেঘার আগমন ইরাদের জীবনে একটা অনুতাপের বিষয়? ইরাদ মেঘাকে নিয়ে অনুতাপ করে? মেঘা সহ্য করতে না পেরে বাথরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে অনেকক্ষন পানির নিচে দাঁড়িয়ে থাকে। কোনোভাবে নিজের মাথাটা ঠান্ডা করার প্রচেষ্টা চালাতে থাকে ও।
.
এদিকে রুহি মেঘার বোন। ব্যাপারটা ইরাদের কাছে এবার ক্লিয়ার হয় তার মানে সোবহান সাহেবের মেয়েই মেঘা আর মেঘা রুহির খালাতো বোন হয়। যেই ভদ্রলোকটা এসেছিলেন মেঘার সাথে ইরাদের বিয়ের পরে তাদের বাসায় উনি রুহির বাবা ছিলেন। রুহির আচার-আচরণ, হাত নাড়া অনেক কিছুই মেঘার সাথে কেনো মিলে এখন ইরাদ বুঝতে পারছে। কোনো দিন ও মেঘার কোনো ছায়া জীবনে আর চায়নি ইরাদ। তবে আজ কেনো এমন কিছু হয়ে গেলো? ইরাদ নিস্তেজ হয়ে বারান্দায় বসে পরে, পুরো পরিবেশ একদম নিস্তব্ধ, শো শো বাতাস বইছে বাইরে আর এদিকে ইরাদের মনের ভেতরটা খুব বেশি শুণ্য লাগছে। কেনো এমন হলো? রুহি কেনো মেঘার বোন হলো? রুহিকে ইরাদ চেনে, যে মেয়েটা এতো গুলো বছর কাটিয়ে দিলো ইরাদকে দূর ভালোবেসে, তবুও অন্য কিছুই ভাবেনি ইরাদকে ছেড়ে। সে মেয়ে কোনোদিন আর যাই হোক ইরাদকে ফেলে যাবে না। তবুও কেনোই বা নিয়তির এই লিখা ছিলো? আর রুহির ওপরে কতটা চাপ পড়বে যখন ও এসব কিছু জানতে পারবে? রুহি এমনিতেই টেনশনে আছে আর এসব কিছু শুনলে মেয়েটা পুরোপুরি ভেতর থেকে শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু রুহির জানতে হবে এই সম্পর্কে, না জানলে যে একটা ধোকা হয়ে যাবে? ইরাদ চায় না রুহিকে ধোকা দিতে। রুহি যদি এসব কিছু জানার পরে ইরাদকে ডিভোর্স দিয়েও দেয় তাতেও ইরাদের কষ্ট নেই। কারণ ইরাদ তো রুহিকে কোনো ক্রমেই দুঃখী দেখতে চায়না।
এদিকে মেঘার মা সাহারা বেগম রুহির বাবাকে ফোন করে সবটা খুলে বললেন,
– ভাই এটা কি থেকে কি হয়ে গেলো?
– আমিও তাই ভাবছি, এমনটা হওয়া উচিত হয় নি।
– আমি কালকে আসছি।
– রুহি নাকি কালকে চিটাগং যাবে আপনার দভাই বললো।
– তাহলে রুহি এলে আমি কথা বলছি
– যেভাবেই হোক রুহিকে ছাড়িয়ে নিতেই হবে।
– আমি ব্যাপারটা দেখছি।
রুহির বাবার আসলেই কিছু বলার নেই মেয়ের বিয়ে মানেই একটা বাবার জন্য খুশির সংবাদ কিন্তু আজকে রুহির বাবার নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে। ইরাদ ছেলে ভালো এটা জানে উনি কিন্তু বড় মেয়ের প্রাক্তন ছোটো মেয়ের বর্তমান স্বামী। যতই হোক না কেনো এটা কিভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব? হ্যাঁ এটা সত্যি এই ব্যাপারটা কেউই জানেনা তবুও তো ইরাদ আর মেঘা সামনাসামনি পড়লে ব্যাপারটা কতো বিব্রতকর হবে? সবটা ভেবেই উনি বসে আছেন। আজকে রুহির মা রুজিনার কথা খুব মনে পড়ছে উনার। মেয়ের মা থাকলে হয়তো সবকিছু খুব সুন্দরভাবে সামলে নিতে পারতেন উনি।
পেছন থেকে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে ইরাদের ধ্যান ভেঙে যায়, পেছনে ইরাদ তাকিয়ে দেখে রুহি দাড়িয়ে আছে।
– কি হলো এখানে বসে আছেন কেনো?
– কিছু হয় নি এমনি বসে আছি আকাশ দেখছি।
রুহি এবার ইরাদকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদী কন্ঠে বলে,
– আমাকে দেখতে ভালো লাগছে না বুঝি? তাই আকাশ দেখতে হবে আজকের রাতেও?
ইরাদ রুহির হাতটা টেনে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে কোলে বসিয়ে বলে,
– না এমনটা নয় একদমি, আমার তো আমার ঘরের চাঁদটা দেখতেই সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে। আর কিছু লাগে না সত্যি কথা। আমার মায়াবতীই সবচেয়ে সুন্দর। রুহি খিলখিল করে হেসে উঠে। মেয়েটার হাসিতে একপ্রকার প্রশান্তি আছে যা ইরাদের ঝড়তোলা হৃদয়ের মধ্যে শান্তি অনুভব করতে বাধ্য করে।
– তাহলে এখানে কি করছেন?
– আমার মোবাইলটা পাচ্ছিলাম না তাই আপনারটা নিয়ে কল দিবো করে ভাবছিলাম তাই একটু আগেই এখানে এসেছিলাম এরপর ভাবলাম পরিবেশটা বেশ শান্ত তাই কিছুক্ষন বসার কথা ভাবলাম।
– আপনার ফোন সোফার মধ্যে রাখা, নিয়ে আসি।
বলেই রুহি ইরাদের কোল থেকে উঠে যাবে এমন সময় ইরাদ রুহিকে আরো কাছে টেনে এনে বললো,
– এখন লাগবেনা লক্ষি, আপনি কাছে থাকলে আর কিচ্ছু দরকার হয় না আমার।
রুহি ইরাদকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আমারো। অনেক ভালোবাসি মাই হাসব্যেন্ড।
রুহিকে খোলা চুলে অপরূপ লাগছে, লাল শাড়িতে যেনো চোখ সরানো যাচ্ছে না রুহির চেহারা থেকে।
ইরাদের স্পর্শ রুহির মনের গহীনে গিয়ে লাগে, রুহির উনমুক্ত কোমড় জড়িয়ে ধরে। রুহি কেপে উঠে, চোখ বুঝে রুহি ইরাদের ঘাড়ে গলায় ভালোবাসার পরশ বসিয়ে দেয়। ইরাদের থেকে রুহি নিজেকে কোনোভাবেই দূরে রাখতে পারেনা, রুহি নিজেও জানে ও ইরাদকে অসম্ভব পরিমানে ভালোবাসে কিন্তু কেনো এতো বেশি ভালোবাসে আজ ও এই ব্যাপারটা বুঝে উঠতে পারে না ও। তবে এই মুহুর্ত গুলো সুন্দরভাবে ইরাদের সাথে কাটিয়ে দিতে চায় ও। জীবনের সবগুলো ইচ্ছে, ভালোলাগা ভালোবাসা সব ইরাদের সাথে সাজিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে রুহির।
ইরাদ আস্তে করে রুহির ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। এমন সময় ভোর হয়ে আসে আর চারিদিকে আযান শুরু হয়ে যায়। রুহি আস্তে করে ইরাদকে ছাড়িয়ে বলে,
– আযান হচ্ছে।
– হ্যাঁ ভোর হয়ে গেলো। ফ্রেশ হয়ে নেন নামাজ পড়ি।
– হুম
ইরাদ রুহিকে ছেড়ে দেয় এরপএ ভাবতে শুরু করে আসলে রুহি সবটা জানুক এরপর নাহয় সম্পর্কটা আগে বাড়াবো। রুহি যদি নাই থাকতে চায় আমার সাথে? থাক ওর ডিসিশন নাহয় ওকেই নিতে দিবো? আজকে চিটাগং গিয়ে ওকে সবটা জানিয়ে দিবো।
নামাজ শেষ করে নাস্তা করে নিলো ইরাদ রুহি, কিছুক্ষণ পরই ওরা বেড় হয়ে গেলো চিটাগং এর উদ্দ্যেশ নিয়ে। এদিকে রুহির বাবাও রুহির ওয়েট করছে, মেয়ে আসলে তার সাথেই কথা বলতে হবে। আর এদিকে এসব সম্পর্কে অজানা রুহি হাসিখুশি মন নিয়ে যাচ্ছে চিটাগং এ। হাজার চেষ্টা করেও ইরাদ নিজেকে হাসিখুশি রাখতে পারছে না। আজকের দিনটা কি বয়ে এনেছে ওদের জন্য তা ওরা কেউই জানে না।
(চলবে…)