#অনুভূতিরা_শীর্ষে 💗
#লেখনিতে_সুমাইয়া_ইসলাম_মিম
#পর্ব_১২
.
যাও একটু একটু এই সাদাদ নামক ব্যাক্তিটাকে কম ভয় পেতে শুরু করলাম উনিতো রীতিমত আমাকে এসে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে আমি ওনাকে ভয় পাই! সাদাদ ভাই আবারও বললেন,
–কি? বলো! এভোয়েড কেন করছো?
এবার বেশ সাহস জুগিয়ে বললাম,
–কালকে যা ধমকানো ধমকিয়েছেন তারপর আপনাকে এভোয়েড করবো না তো কি আপনার কোলে চড়ে ঘুড়বো?
উনি আমার উত্তরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। পরক্ষনে বাঁকা হেসে বললেন,
–আমার কিন্তু আপত্তি নেই! চড়বে নাকি কোলে?
আমি মুখ কুঁচকে বললাম,
–ছিঃ!
উনি এবার বেশ সিরিয়াসভাবে বললেন,
–তোমার সাহায্য চাই!
আমি অবাক চোখে ওনার দিকে তাকালাম। আমার সাহায্য উনি চায়? বিষয়টা গোলমেলে। উনি হয়তো আমার চোখের ভাষা বুঝতে পেরেছেন তাই আবার বলল,
–আজ একটু আমার সাথে বাইরে যাবে? খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।
আমি একটু ভয় পেলাম। আমার সাথে কি কথা? কালকের ওই বিষয়টার জন্য আবার আমাকে শাস্তি দিবে না তো? কিন্তু ওখানে তো আমার দোষ ছিলো না। কিন্তু উনি তো আমাকেই দোষী মনে করেন! আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম,
–আপনি কালকের বিষয় নিয়ে কথা বলবেন তাইনা। কিন্তু বিশ্বাস করুন উনি সত্যিই আমার সাথে মিসবিহেভ করছিলেন। আমি এতোটা হ্যারাস কখনো হইনি। আমি আপনাকে প্রুভ ও দেখাতে পারি। এই দেখুন!
বলেই হাতটা এগিয়ে দিলাম। আমার হাতে আঙুলের কালশিটে দাগ দেখে কেমন যেন আতকে উঠলেন। পরক্ষনে উনার চোখ দুটো ক্রমান্বয় লাল হতে লাগলো। উনি আলতোভাবে আমার হাতটা ধরলেন। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি উনার হাতটা হালকা হালকা কাঁপছে। আমার ও তেমন খেয়াল ছিলো না। উনি হাতটা যখন ধরলো আমি ব্যাথাকাতুর শব্দ করতেই হাতটা ঘুরিয়ে দেখলেন কেটে যাওয়ার দাগ। কালকেই চুড়ি ভেঙে কাঁচ ঢুকে যাওয়ার ফলে এই দাগটা। এখনো কাঁচা! উনি চমকে বললেন,
–হাত কাটলো কিভাবে?
আমি আমতাআমতা করতে লাগলাম।
–আসলে ওটা একটা এক্সিডেন্ট। কাল চুড়ি খুলতে গিয়ে ভেঙে ঢুকে গেছে।
উনি তৎক্ষণাত আফসোসের সুরে বললেন,
–আহ! আমারই ভুল! কেন যে কাঁচের চুড়ি দিতে গেলাম!
আমি চমকে উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,
–আপনি দিয়েছেন মানে?
উনি থতমত খেয়ে আমার হাতটা ছেড়ে বললেন,
–কিছুনা! তুমি তৈরি হয়ে থেকো। এমনিতেও তো রুবাইয়ার সাথে তুমি যাচ্ছো। আমাদের বাড়িতে গিয়েই তোমাকে নিয়ে বের হবো। কিন্তু ভুলেও কাউকে বলবে না, ঠিক আছে?
আমি দ্রুত মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বললাম। উনি চলে যাচ্ছেন। কিন্তু পরক্ষনে আমার মাথায় এলো উনি কাউকে বলতে কেন মানা করলো? আচ্ছা উনি আমাকে মেরে টেরে ফেলবে না তো? কিন্তু কেন মারবে আমি তো কিছু করি নি। আচ্ছা উনি আমাকে নিয়ে যাবেনই বা কোথায়? এতো এতো প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। আবার মনে হলো আমার তো একা থাকাটা সেফ না। তাই দ্রুত সাদাদ ভাইয়ের পিছু পিছু যেতে লাগলাম।
.
আমিও আপুর সাথেই যাবো কিন্তু তাও আজ বোনের জন্য এতো এতো কান্না পাচ্ছে যা বুঝানো যাবে না। আমার আবার এক সমস্যা আছে! কান্নার সময় কিভাবে যেন ঠোঁট উলটে যায়। আজও তার ব্যাতিক্রম নয়। আপু আম্মু বাবাকে ধরে কান্না করছে কিন্তু আমার কান্না দেখে সবাই হেসে দিল। এটা কোন কথা? আমি কান্না করছি দুঃখের ঠেলায় আর এরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। আপুও হাসছে! আমি মুখ ফুলিয়ে বললাম,
–যার জন্য আমি কান্না করি সেই দাঁত কেলিয়ে হাসছে। হুহ! আমি আর কান্নাই করবো না। আমার মেকআপ ও নষ্ট হওয়ার চান্স নেই।
এই কথার পর সেখানে হাসির রোল পড়ে গেলো। এমনকি গোমড়া মুখো সাদাদ রহমান সাদও মুচকি হাসছে ঠোঁট চেপে!
.
আপুর সাথে তার শ্বশুরবাড়ি পৌছালাম। বাড়িটা মূলত সাদাদ ভাইদের কিন্তু সাদাদ ভাইয়ের ফুপা মারা যাওয়ার পর সাদাদ ভাইয়ের বাবা তার বোন আর ভাগ্নে কে এখানে এনে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই আরফান ভাইয়া আর সাদাদ ভাই এক সাথে মানুষ হয়েছে। এদিকে মা হারা সাদাদ আর সাদিয়াও ফুপুকে পেয়ে যথেষ্ট খুশি কিন্তু ফুপি মহিলা লোক বেশি সুবিধার না। আসলে ওনার নেচারটাই কেমন যেন! আমরা দুই বোন কিন্তু আপুকে সে চোখে হারায় আর আমাকে দুই চোক্ষে দেখতে পারে না। আল্লাহই জানে কারণটা কি? বাড়ির মূল ফটকে পা রাখতেই সবার হইচই শুরু হয়ে গেল। এমনকি পা মচকা নিয়ে সাদিয়া আপুও বসে নেই। সে ও এদিক সেদিক সামলাচ্ছে। আমি আপুর সাথেই দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু বুঝতে পারছি না সাদাদ ভাই কেন দাঁড়িয়ে আছে? একবার খেয়াল করলাম সাদিয়া আপু কিছু একটা ইশারা করলেন তারপর থেকেই উনি খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছে এখানে। আপুকে নিয়ে বাড়ির ভিতরে গিয়ে আগে কিসব রীতি পালন করলেন। এইসব রীতি ঢাকা শহরে দেখা যায় না বললেই চলে। কিন্তু আপুর শাশুড়ির ইচ্ছে তাই এগুলো পালন করলো। আমিও আপুর সাথে এই বাড়িতে প্রবেশ করলাম। বাড়িটা ডুপ্লেক্স বাড়ি। একদম নিজস্ব, ভাড়া দেয় না। উপর নিচ এতো রুম সবগুলোই তাদের। বাড়ির পাশে রাস্তা দিয়ে পিছনে গ্যারেজ। বাড়িটার আশেপাশে সুন্দর বাগান আছে। যদিও এইগুলো লক্ষ্য করেছি সকাল বেলা। রাতেও খুব সুন্দর দেখা যায়। লাইটিং করা তাই।
সবাই আপুকে নিয়ে ব্যস্ত। আমিও বসে বসে সব দেখছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম সাদিয়া আপু পা দিয়ে ঠিক ভাবে হাটতে পারছে না তবুও কাজ করছে। আমার ভীষন খারাপ লাগলো। আমি এগিয়ে গিয়ে আপুকে বললাম,
–আপু!
সাদিয়া আপু ফিরে আমাকে দেখতে পেয়ে মুচকি হেসে বলল,
-কিছু দরকার সুবহা?
আমি হালকা মন খারাপ করে বললাম,
–তোমার পায়ের ব্যাথা কতটুকু আছে?
আপু হঠাৎ পায়ের দিকে লক্ষ্য করে বলল,
-ও কিছু না ঠিক হয়ে যাবে।
আমি একটা শ্বাস ফেলে বললাম,
–স্প্রে টা কোথায়?
আপু হেসে বলল,
-আরে ঠিক হয়ে যাবে তুমি টেনশন করো না। যাও ওখানে বসো গিয়ে।
আমিও নাছোড়বান্দা। আপুকে টেনে একটা সোফায় বসিয়ে দিলাম। একটা পিচ্চিকে বললাম ফার্স্টএইড বক্সটা নিয়ে আসতে। ছেলেটা এক দৌড়ে নিয়ে এলো। আমি বক্স খুঁজে ওষুধটা পেলাম না। পরক্ষনে মনে পড়লো আমার কাছেই তো জেলটা আছে। ব্যাগ থেকে ক্লোফেনাক জেলটা নিয়ে আপুর পায়ে মালিশ করে দিলাম। আশ্চর্যজনক হলেও আপু পায়ের ব্যাথাটা তৎক্ষণাত কম হলো। আপু বারবার মানা করছিল কিন্তু যখন দেখলো ব্যাথাটা যথেষ্ট কমে এসেছে, নিজেই অবাক হয়ে বলল,
-কি জাদু আছে গো সুবহা তোমার হাতে? ব্যাথাটা অনেকটা কমে গেছে।
আমি মুচকি হেসে বললাম,
–পায়ে ব্যাথা পেলে কখনো দৌড়ঝাপ করবে না। রেস্ট করবে, দেখবে পায়ে ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে। আর এই দেখো সোজা ডিরেকশনে পা মালিশ করতে হয়। তার উলটো হলে পায়ের ব্যাথা কমার বদলে আরো বেড়ে যাবে তাই এটাও একটা ভালো টেকনিক।
আপু হেসে দিলেন। কিন্তু রুবাপুর শাশুড়ি আমাকে দেখে মুখ ভেংচিয়ে বলল,
-ঢং যত! হুহ!
আমি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলাম। একেতো এখানকার মেহমান আর দ্বিতীয়ত উনি আপুর শাশুড়ি তাই চেয়েও কিছু বলতে পারলাম না।
.
অনেকক্ষন ধরে সাদাদ ভাইকে দেখলাম না। উনি হয়তো ভুলেই গেছে আমাকে যেন কোথায় নিয়ে যাবেন। মনে মনে খুশি হয়েছিলাম যে ভালোই হলো উনি ভুলে গেছেন। এমনিতেও এই রাজনীতিবিদদের আমি ভুলক্রমেও বিশ্বাস করি না। এতোদিন তো এড়িয়ে চলতাম কিন্তু এখন তো তাও সম্ভব হবে না। আল্লাহ! বাঁচাইয়ো। কিন্তু ভাগ্য বলেও একটা জিনিস আছে যেটা বরাবরই আমার খারাপ। হঠাৎ ফোনে মেসেজ আসলো,
” চুপ করে বাইরের গেটে চলে আসো। আমি আছি এখানে! -সাদাদ”
হাহ! উনি কোথায় আমাকে সরি বলে রিকুয়েস্ট করবে তা না। ক্ষমতা দেখাচ্ছে! যেতে বলল নাকি থ্রেট দিলো সেটা বোধগম্য হলো না।
,
,
,
চলবে……………….❤️