অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই পর্ব ২

#অনুরাগে_অনুভাবে_শুধু_তুই

#পর্ব-০২
#লেখনী- সুরাইয়া ইসলাম সানজি

আলাইনা অফিস রুমের সামনে পা রাখতেই পা পিচলে পড়ে যায়।

এই তো কিছুখন আগেই অফিসের পিয়ন কাকা আলাইনাকে বলে গেলো- “ম্যাম আয়াত স্যার হের কেবিনে এহনি যাইতে কইছে।”
,
কবিনের সামনে পা রাখতেই পড়ে গেলো। নিচে তাকিয়ে দেখে কলার খোসা পড়ে আছে। সামনের দিকে তাকাতেই আলাইনা দেখে বাকা হেসে আয়াত তার দিকে তাকিয়ে আছে।
এই কাজটা যে তাকে তাড়ানোর জন্য আয়াত করছে তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে আলাইনা।

—মিস আলাইনা আমাদের অফিসে দিন কানা রেখে মাইনে দিবো না। দিন দুপুরে ইদুরের মতো আমার কেবিনের সামনে এসে নৃত্য দেখানোর দরকার নেই। আমরা এখানে কাজ করিয়ে মাইনে দেয়, নিত্য দেখে নয়। কাজ করতে চাইলে মন দিয়ে করবেন নয়তো চার বছরের কন্টাক্ট পেপার রেখে চলে যাবেন।
,
,
আলাইনা বেশ বুঝতে পারছে তাকে তার কথাই ফিরিয়ে দিচ্ছি,অফিস থেকে নিজ থেকেই তাকে চলে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে আয়াত। তবে আলাইনাও হার মানার পাএী নয়।
হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে হাতের কনুইয়ের দিকের কিছুটা অংশ ছিলে গেছে তবে সে এখন ব্যাথা প্রকাশ করে নিজের দুর্বলতা দেখাতে চায় না।

–আসলে স্যার আমি ইদুরের মতো নৃত্য করছিনা। বরং কোন ছাগল যেনো অফিস নোংরা করে কলার খোসা ফেলছে ওটাই তুলছি।

______________________________

কিছুখন থেকে বেশ কয়েকবার চা নিয়ে যাচ্ছে আলাইনা। আয়াত কোনো না কোনো অজুহাতে ফেলে দিচ্ছে, হয়তো চা ঠান্ডা হয়ে গেছে, নয়তো অনেক গরম, নয়তো চিনি বেশি হইছে,বা চিনি কম হইছে নানা অজুহাতে নিচে ফেলছে আল আলাইনা নিচের চা মুছে আবার চা তৈরি করে আনছে।

আলাইনার ধরনাই ঠিক এখান থেকে তাড়ানোর জন্য আয়াতের এমন অত্যাচার প্রতিদিন করবে। আর তা সহ্য করার জন্য আলাইনা প্রস্তুত।
,
,
আলাইনা এবার এক ফ্লাক্স গরম পানি আর সাথে চিনি আর টি-ব্যাগ নিয়ে আয়াতে কেবিনে যায়। এবার যে অজুহাতই দেয় না কেনো বসে বসেই বানিয়ে দিতে পারবে। ক্যান্টিন থেকে অফিসরুম আর দৌড়াদৌড়ি করতে হবেনা।

আয়াত এবার আর চা বানিয়ে দিতে বলেনা, আলাইনা বেশ বিরক্ত নিয়ে পাশের সোফায় বসে পরে। বেশ রাগ লাগছে তার এতোক্ষন তো চা ঠিকমতো হচ্ছেনা বলে চিল্লাচিল্লি করছিলো এখন তাহলে কি চায়ের কথা ভুলে গেছে?
,
,
অনেকক্ষন থেকে আয়াত আলাইনার কোনো শব্দ না পেয়ে সামনে তাকাতেই দেখে আলাইনা সোফার উপরে দু পা তুলে ছোট বাচ্চাদের মতো আধবসা অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে। হাতে খুব শক্ত করে ধরা গরম পানির ফ্লাক্স। অনেকক্ষন থেকে দৌড়াদৌড়ির কারনে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরছে বোধহয়।

এই মুহুর্তে আয়াতের আর আলাইনাকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে করছেনা। সোফার পাশে গিয়ে হাটু ভাজ করে বসে আলতো হাতে আলাইনাকে সোজা করে শুইয়ে দেয়, হাত থেকে ফ্লাক্সটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে বরাবরের মতো ফোন বের করে কিছু ছবি মোবাইলে বন্ধি করে নেয়।

ফোনের ওয়ালপেপারে আলাইনার পুরানো একটা ছবি দেখে ডুব দেয় অতীতে,,,,,

______________________________

অতীত,,,,,
৩ বছর আগে,,,,,

ভার্সিটির ক্যাম্পাসে বসে আয়াত, আদ্রিল, শুভ্র আর আবির এক্সাম শেষ তাই কোথায় ঘুরতে যাবে এটা নিয়ে কথা বলছে।
কথার এক পর্যায়ে আদ্রিল বলে- চলনা দোস্ত গ্রামে যায়, গ্রামের লেডি গুলো রিয়েল বিউটি হয়। এরা আটা ময়দার আড়ালে নিজেদের ডাকে না, ন্যাচারাল হয়। আর সহজ সরলও এদের সাথে জমিয়ে প্রেম করা যাবে।

আদ্রিল কথায় কপাট রাগ দেখিয়ে আবির বলে- তোর মাথায় কি শুধু মেয়েদের কথায় ঘুরে। আর তাছাড়া গ্রামে আমাদের পোষাবে না অন্য কোথাও যাওয়া যাক।
,
আয়াতের দিকে সবাই তাকিয়ে আছে মূলত আয়াতের কথায় শেষ সিদ্ধান্ত।
–আমরা এবারের সফরে গ্রামেই যাবো। এখন শীত কাল ইউ নো ফ্রেন্ডস শীতে গ্রামের পরিবেশ সব দৃশ্যকে হার মানায়।
,

[আয়াত,আদ্রিল,শুভ্র আর আবির ভার্সিটির যেমন মেধাবী স্টুডেন্ট তেমনই সুদর্শন। আদ্রিল মেয়ে দেখলেই ফাজলামি শুরু তবে যতটা সম্ভব আয়াতের চোখ এরিয়ে। যতোই হোক আয়াতের বেস্টফ্রেন্ড তবু আয়াত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবেই হোক না তাতে বেস্টফ্রেন্ড।
আর শুভ্র আর আবির দুজনেই রাস্তায় বের হলে কোনো না কোনো ঝামেলায় জড়াবেই আর সব সমস্যা থেকে আয়াত বের করে আনবে।

আরিয়ান চৌধুরী আয়াত নাম শুনলেই ভার্সিটি কাপে তবে প্রত্যেক গল্পের মতো ভয়ে নয় মুগ্ধতায়। কথায়,কাজে গুনে আয়াত প্রত্যেকটি মানুষের মনে দাগ কেটে নিয়েছে।
ভার্সিটির সব অনুষ্ঠান আয়াত ছাড়া যেনো অসম্পূর্ণ, যে কোনো সমস্যার সলিওশন আয়াত। আদ্রিল,শুভ্র,আবির যেমনই হোক না কেনো এই তিন জন আয়াতের কলিজা। তাদের জন্য সব করতে পারে।

আয়াতে বাবা-মা আর ছোট বোন কানাডা থাকে, ছোট বেলায় আয়াত মা বাবার সাথে থাকলেও যখন বড় হয় তখন থেকেই নিজ দেশে থাকছে দাদির সাথে। কানাডায় নিজেদের ব্যবসা হওয়ার তা ছেড়ে আর নিজের বাড়িতে আসতে পারেনি।
তবে দূর থেকে আয়াতের বাবা আজান চৌধুরী ছেলে আর নিজের মায়ের জন্য কোনো কমতি রাখেনি। মাঝে মাঝে এসে দেখে যায়।]
,
,
,
ফুরফুরে বাতাস, হালকা হালকা শীত পরছে যদিও শহরে এ সময়টায় শীত বোঝা যায় না।

কাল রাতেই সবাই এই গ্রামে আসে। মূলত আয়াতের দাদা বাড়ি এখানেই। আয়াতদের পুরোনো একটা বাংলোই পৌছায় রাত ১১ টায়। শহর থেকে আসতে আসতে ক্লান্ত হওয়ায় রাতে খেয়ে ঘুমিয়েছে এখন সকাল ৯ টা কারো ওঠার নাম নেই।
,
আয়াত সেই সকালে ওঠে ক্যামেরা হাতে নিয়ে শীতের পোশাকে নিজেকে ঝড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে।
মাঠে সবুজের সমাহার, মাঝ খান থেকে আকাবাকা রাস্তা। ছবি তুলতে তুলতেই হঠাৎ করেই ক্যামেরায় বন্ধি হয় একটা ছবি। ক্যামেরার ভিতর একটা হাস্য উজ্জল মেয়ের দিকে তাকিয়ে থেকে বেশ কিছুখন।
পরক্ষনেই সামনে তাকাতেই দেখে কেউ নেই। চমকে ওঠে চারদিক খুজতে এই ছবির মালিক কে।
,
,
পাশ থেকে হাসির শব্দ কানে যেতেই দেখে একটা মহিলার পাশে আর একটা মেয়ে কথা বলতে বলতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটাকে দেখে আয়াতের তাদের মতোই মনে হচ্ছে গ্রামের সবুজতা দেখতে এসেছে আর পাশের মহিলাটা তাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলছে।

আয়াত সুযোগ বুঝে মেয়েটার আরো কিছু ছবি তুলে নেয়। কিছুখনের মাঝেই দূরে সবুজের মাঝে হারিয়ে যায় মেয়েটি।
আয়াতের এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে কবিরা যত কবিতা রচনা করছেন তার থেকে অধিক কবিতা নিজে রচিত করতে পারতো এই মেয়েটিকে সামনে বসিয়ে রেখে।
,
,
,
এভাবে প্রত্যেক দিন সকাল সকাল ওঠে ক্যামেরার মেয়েটিকে বন্ধি করতে আয়াতের নেশা হয়ে গেলো। অথচ আজও মেয়েটার নামই জানে না।

সকাল সকাল গ্রামের মেইন রাস্তার দোকানে বসে চা খাচ্ছে আয়াত।
হঠাৎ ই কারোর চিৎকার চেচামেচিতে আওয়াজে এগিয়ে গিয়ে দেখে তার কবিতার সেই মেয়েটি কারো সাথে ঝগড়া করছে।
ঝগড়ার মূল কারন কিছু ফুল মাটিতে পড়ে ছিলো আর কয়েকটা ছেলে সেগুলো পা দিয়ে পিসছে।

যদিও এসব আয়াতে কাছে মেয়েটির ন্যাকামি মনে হচ্ছে কিন্তু এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে মেয়েটার এমন ন্যাকামি দেখতে সে হাজার বছর অপেক্ষা করতে পারবে।
ঝগড়ার এক পর্যায়ে মধ্য বয়সি একটা ছেলে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর যেটুকু ফুল ঝুড়িতে ছিলো সেগুলো ফেলে পা দিয়ে পিসতে থাকে।
,
,
আয়াতের এবার বেশ রাগ লাগে আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে ছেলেটাকে মারতে শুরু করে, মারার এক পর্যায়ে সব গুলো ছেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

আয়াত তারাতাড়ি করে মেয়েটির পাশে বসে মেয়েটিকে তুলে দেখে হাতের কনুই কিছুটা ছিলে গেছে আয়াত অস্থির হয়ে ফু দিতে থাকে। এক মুহুর্তের জন্য আয়াতের মনে হচ্ছে পৃথিবীতে কনুই ছিলে গেলে যতটা কষ্টো হয় তা হয়তো পৃথিবীর অন্য কোনো ব্যাথায় হয় না।
,
মেয়েটিকে তার বাড়িতে পৌছে দেয়। আয়াতদের বাংলোর ঠিক ওল্টো দিকে তাদের বাড়ি।

আয়াত আজ নিজেই নিজেকে চিনতে পারছেনা, যে আয়াত কারো গায়ে হাত না তুলে বুজিয়ে বলত সেই আয়াত ফালতু কারনে কি করে একটা ছেলের গায়ে হাত তুলল। আচ্ছা নিজেকে যখন নিজের কাছে অপরিচিত মনে হয় সেটাই কি প্রেমের লক্ষন। ভাবতেই আয়াতের মুখে হাসির রেখা ফুটে ওঠছে।
,
,

মেয়েটিকে বাড়ি পৌছে দিয়ে ফিরে আসার সময় মিষ্টি একটা একটা কন্ঠে আয়াত ধমকে দাড়ায়, এ কন্ঠের সাথে যেনো সে শত বছরের পরিচিত।

—আয়াত সাহেব, আয়াত সাহেব ওই মালাটা আপনার জন্য।

আয়াত পিছে ফিরে মেয়েটিকে দেখে খানিকটা অবাক হয়, আচ্ছা মেয়েটাকে তো তার নাম বলেনি তবে কি করে জানলো? আর ফুল গুলোও বা কোথা থেকে আসলো সে তো ফুল কুড়াতে গেছিলো তবে মালাটা কখন গাঁথলো?

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here