অনেক সাধনার পরে পর্ব -৪২+৪৩

#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[৪২]

আমরা ঠিক এমন একটা সমাজে বসবাস করি, যেই সমাজের মানুষ গুলো প্রতিহিংসায় ম’রে। তারা কেউ কারোর ভালো দেখতে পারে না। হামলে পরে কিভাবে অন্যদের হেনস্তা করতে পারবে ভেবে। নিখুঁতের মাঝে খুঁজে খুঁজে খুঁত বের করা তাদের স্বভাব। অন্যের সুখ দেখে ইর্ষান্বিত হয়ে কটুকথা শুনাতেও তারা পিছপা হয় না। কথায় আছে ‘হাতে নয়, ভাতে মা’রে!’ তবে তাদের ক্ষেত্রে এই কথাটির যথাযথ এভাবে হবে ‘ভাতে নয়, কথায় মা’রে!’ শরিরে একশত চাবুকের ঘা পরলে যতোটা যন্ত্রনা হয়। তার থেকেও শতগুণ বেশি যন্ত্রনার শিকার হতে হয় প্রতিবেশী নামক অসুস্থ মস্তিষ্কের মানুষদের কাছ থেকে। এরা কখনো ভালো হবার নয়। যুগে যুগে ঠিক এমনি হয়ে এসেছে। আজও এমন হবে।

বিয়ের কার্ড হাতে পাওয়ার পর থেকেই মোটামুটি আলোচনায় চলে এসেছে। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু টা হলো মিতালীর মতো মোটা মেয়েটাকে বিয়ে করছে কে? সকলে যার-পর-নাই অবাক। প্রকাণ্ড রকমের বিস্মিত হয়ে রীতিমতো কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছে। জামাই টা কে দেখার জন্য আগ্রহ বেড়েছে সবার। ‘এতোদিনে মাইয়া বিয়া দিতাছে জুলফিকার। দেখো গিয়ে জামাই হয়তো বিয়াইত্তা, হাত-পা ভাঙ্গা; নাইলে এমন মোটা মাইয়ারে কেউ বিয়া করবো?’ মহিলাদের এমন কথাবার্তার কিছু অংশ পরেপরে মিতালীদের পরিবারের লোকদের কানে এসেছে। কিন্তু কেউ সেই দিলে বিন্দুমাত্র পাত্তা দিচ্ছে না। সমাজে চলতে গেলে নানান কথার সম্মুখীন হতেই হবে। এতো কিছুর গুরুত্ব দিতে গেলে সুখশান্তি বলে কিছুই থাকবে না জীবনে। তাই এইসব কটুকথা কেউ কানে না নিয়ে নিজেদের মতো বিয়ের আয়োজন সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।

বিয়ের একদিন আগেই মিতালীদের আত্মীয়স্বজনরা চলে এসেছে। সকল কাজিনদের নিয়ে ভীষণ রকমের আনন্দময় সময় কাটছে মিতালী ও শেফালীর। দীর্ঘসময় পর এক হলো তারা। কথার ছলে ছলে মিতালীকে নানান ভাবে লজ্জায় ফেলছে মেয়েরা।
.
গায়ের হলুদের আয়োজন জমজমাট ভাবে হয়েছে। চারপাশে ইলাস্টিকের হলুদ-লাল সংমিশ্রনের ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। মিটমিট করে জ্বলছে ছোট ছোট রঙবেরঙের বাত্তি গুলো। হলুদের ডেকুরেশনের প্ল্যানিং টা শেফালী করেছে। ডেকুরেশনের লোক গুলোর সাথে থেকে দেখিয়ে দিয়েছে কিভাবে কি সাজাবে, কোথায় কি লাগাবে। মূলত পুরো কাজটা শেফালী তার মন মতো সাজিয়েছে সবটা। যদিও তার এখন একটাই আফসোস হচ্ছে। সেটা হচ্ছে তার বুবুর বিয়ের লেহেঙ্গাটা নিজে ডিজাইন করে দিতে পারলো না। যদিও এঅ আফসোস সাময়িক সময়ের জন্য। মন খারাপ করে সময় নষ্ট করার মেয়ে শেফালী না। ব্যস্ততার মাঝেও আনন্দ করেছে সবার সাথে। শেফালীর এমন মনোবল, এভাবে দায়িত্ব পালন করতে দেখে জুলফিকারের মন ভরে গেলেন। দুই মেয়ের পাশাপাশি একটা ছেলের অভাববোধ করতেন তারা। এখন শেফালীকে দেখে তার ছেলের অভাবের কষ্ট কিছুটা দূর হলো। মন ভরে দোয়া করলেন মেয়ের জন্য।
.

কাচা ফুলের সজ্জিত হয়ে হলুদের স্টেজে বসে আছে মিতালী। চোখেমুখে তার লাবণ্যতা। দুই হাত ভর্তি চুড়ি। পরনে কাচা হলুদ রঙের শাড়ি। চারপাশে মেহমানের ভরপুর। মিতালীর আত্মীয় সকলের ঠোঁটে সন্তুষ্টির হাসি। অন্যরা আর যায় করুক, তারা কখনো মিতালীকে অবহেলা করেনি। নিজের মেয়ের মতোই যথেষ্ট আদর যত্ন করেছে। কাজিনরা তো রীতিমতো লাফালাফি শুরু করেছে। তাদের কাজিনদের মাঝে এই প্রথম কোনো বিয়ে হচ্ছে। বংশের বড় মেয়ে বলে কথা।

অংকুরের পরিবার থেকে সুপ্তি বেগম, রাকিব, ওবাইদুর ও মনিরা সহ অংকুরের অন্য কাজিনরা হলুদ ও যাবতীয় তথ্যাদি নিয়ে এসেছে। বরপক্ষ আসায় হৈহোল্লুর পরে গেলো। স্টেজের মাঝে মিতালী। প্রথমে আমেনা ও জুলফিকার তাকে হলুদ লাগালেন। তারপর মিষ্টি খাইয়ে দিলেন। আমেনা মেয়ের মাথায় এক হাত রেখে দোয়া করলেন। মিতালী খেয়াল করলো মায়ের চোখে পানি। ক্ষুন্ন হলো মন। ঠোঁট উলটে এগিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল শক্ত করে। জড়িয়ে ধরলো বাবাকে। জুলফিকার ও আমেনা গিফটের ছোট একটা প্যাকেটে হাতে দিয়ে নেমে গেলেন স্টেজ থেকে। তারপর আসলেন জুলেখা ও সুপ্তি বেগম। জুলেখা নাতনীর গালে হলুদ লাগাতে লাগাতে কেঁদে ফেললেন। কতোই না কথা শুনিয়েছে নাতনীকে। কোনো প্রতিত্তুর করে নি। কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি দাদীর সাথে। আজ সেই মেয়েটার গায়ের হলুদ। কাল অন্য ঘরে চলে যাবে। নিজের মন কে কিছুটেই শান্ত রাখতে পারছেন না। মিতালী দাদীর চোখের পানি মুছে জড়িয়ে ধরলো। শান্ত্বনা দিলো কিছুক্ষন। জুলেখা তার হাতের দুটো বালা থেকে একটা মিতালীর হাতে পরিয়ে দিলেন। অরেকটা রাখলেন শেফালীর জন্য। তারপর নেমে গেলেন স্টেজ থেকে। সুপ্তি বেগম পুত্রবধূর গালে হলুদ লাগিয়ে উপহার দিয়ে নামলেন। তারপর আসলো মনিরা ও ওবাইদুর। দুইজনই হলুদ লাগালো। ওবাইদুর নেমে গেলেও নামলো না মনিরা। বান্ধুবির পাশে বসে রইলো। মিতালীর কানের কাছে মুখ এনএ ফিশফিশ করে বলল,

‘কবে থেকে চলছে এইসব?’

মিতালী বুঝতে না পেরে মনিরার দিকে একটু মাথা ঝুকে বলল, ‘কি বুঝলাম না।’

‘আমার দেবরের সাথে কবে থেকে প্রেম চলছে?’

হকচকিয়ে গেলো মিতালী। চোখ তীক্ষ্ণ করে বলে উঠলো, ‘কিসব যাতা বলছিস। সর এখান থেকে।’

মনিরা ভাব নিয়ে বলল, ‘আমি তো ভেবেছিলাম আমার বিয়েতেই বুঝি তোদের দেখা। কিন্তু না। ওবাইদুর বলেছে বহু আগে থেকেই নাকি আপনারা কাহিনী করে রাখছেন। যাক ভালো। আজ থেকে আমরা দুইজন জা হলাম। বেবি? আমার তো এটো এতো খুশি লাগতেছে।’

শেষের কথা গুলো মিতালীর হাত ধরে প্রফুল্লিত হয়ে বলল মনিরা। আলতো শব্দ করে হেসে ফেললো মিতালী। তখুনি রাকিব ডাকলো মনিরাকে, ‘ভাবি? আপনি কি একাই হলুদ লাগাবেন? আমাদের সুযোগ দিবেন না?’

মনিরার শাড়ির কুঁচি ধরে উঠে দাঁড়াল। স্টেজ থেকে নামতে নামতে বলল, ‘কি করবো বলেন? জা পেয়ে আমি বিরাট খুশি। তাই তো নামতে ইচ্ছে করছে না।’

মনিরার পর শেফালী হলুদ দিয়ে আসলো। মিতালীর এক গালে আলতোভাবে হলুদ লাগিয়ে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে। এতোটাই শক্ত করে ধরেছে যেন ছেড়ে দিলে হারিয়ে যাবে। মিতালী বুঝলো বোনের মন ভালো নেই। মিতালী শেফালীকে ছাড়িয়ে শেফালীর দুই গালে আদুরে হাত রাখলো। দেখলো শেফালী নিঃশব্দে কাঁদছে। চোখ দুটো লাল হয়ে পানিতে টলটল করছে। দূর থেকে শেফালীর কান্না দেখলো রাকিব। বুকের বাম পাশে ব্যাথা অনুভব করলো সে। মেয়েটাকে কাঁদতে এই প্রথম দেখছে। ভালো লাগছে না একদম।

মিতালী শেফালী কে বুঝাতে লাগলো। বলল, ‘এভাবে কাঁদছিস কেন? মেক’আপ নষ্ট হয়ে যাবে পাগল। কাঁদিস না। শেফালী? বুবুর কথা শুনবি না?’

শেফালী মাথা উপর নিচ দুলালো। নাক টেনে চোখের পানি মুছলো। মিষ্টি করে হাসি দিয়ে আবারো জড়িয়ে ধরলো। তারপর স্টেজ থেকে নেমে একটু দূরে একা দাঁড়াল। অতঃপর এক এক করে মিতালীর অন্যান্য কাজিনরা তাকে হলুদ লাগিয়ে দিতে লাগলো। আনন্দ করতে লাগলো সবাই।

শেফালীর ভীষণ কান্না পাচ্ছে। বুবু কাল চলে যাবে? আর পাশাপাশি থাকা হবে না। বাসায় আসলে বুবুর হাসি মুখখানি দেখা হবে না। ভাবতেই গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। আশেপাশে তাকালো একবার। এতো এতো মানুষের ভরপুর এখানে। তাই লেহেঙ্গা হাল্কা উঠিয়ে হলুদের স্টেজ থেকে বেড়িয়ে বাহিরে আসলো। জায়গা টা নির্জন। আশেপাশে মানুষ নেই। অন্ধকার পরিবেশ। সেন্টারের ভিতরে ও বাহিরে থাকা আলোতে এই খালি নির্জন জায়গাটা আবছায়া আলোকিত হয়ে আছে। সেখানেই দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে শেফালী। কান্না কিছুতেই থামাতে পারছে না। দুই হাতে মুখ ঢেকে কান্না করছে অনবরত।

স্টেজ থেকে নামার পর থেকেই রাকিব শেফালীকে দেখছিলো। সেন্টার থেকে বেড়িয়ে যেতে দেখে সন্দেহ হলো তার। কোথায় যাচ্ছে মেয়েটা? পিছু নিলো। বাহিরে অন্ধকারে এসে শেফালীকে এভাবে কাঁদতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেলো। কি করবে, কি বলবে কিছুই বুঝে আসলো না তার। তবুও চুপচাপ এগিয়ে আসলো শেফালীর কাছে। পিছন থেকেই আলতো গলায় ডাকলো, ‘শেফালী?’

রাকিবের ডাক কর্ণগোচর হলে কান্না থামালো শেফালী। মুখ থেকে হাত সরিয়ে ধীরে ধীরে পিছু ফিরে তাকালো। চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। গাল ও নাক দুটো একইভাবে রক্তিম। শেফালী রাকিবকে দেখে যেন আরো ভেঙ্গে পরলো। হঠাৎ-ই রাকিবকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে অঝরে কেঁদে উঠলো। শেফালীর এহেন কান্ডে প্রকাণ্ড রকমের বিস্মিত হলো রাকিব। অসাড় হলো শরির। বুকের বা পাশটা ভাড়ি হলো শেফালীর কান্নার শব্দে। বিষণ্ণবদন চোখেমুখে শেফালীকে নিজেও জড়িয়ে ধরলো। এক হাত মাথায় রেখে শান্ত্বনা দিলো, ‘ক্ল্যাম ডাউন শেফালী। এভাবে কেউ কাঁদে?’

ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো শেফালী। আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো রাকিবকে। কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলতে লাগলো, ‘আমি বুবুকে অনেক ভালোবাসি। বুবুকে ছাড়া কখনো থাকি নি। দুজনের রুম আলাদা হলেও মাঝ রাতে বুবুর পাশে ঘুমিয়েছি। সময়ে অসময়ে বুবুকে পাশে পেয়েছি। সব সমস্যা সমাধানে বুবু সাহায্য করেছে। আজ বুবুর গায়ের হলুদ। কাল বিয়ে। চলে যাবে বুবু। এটা আমি মানতে পারছি নাহ।’

দীর্ঘশ্বাস ফেললো রাকিব। শেফালীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, ‘এটা স্বাভাবিক। সৃষ্টির শুরু থেকেই এমনটাই ঘটে এসেছে। একদিন বাবা-মা কে ছেড়ে শ্বশুর বাড়িতে যেতেই হয়। সেখানে নিজের বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে হয়। মিতালীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হবে না। শ্বশুরবাড়ি না, ওটা হবে মিতালীর সংসার। এটা তুমি বুঝোই। তাহলে এভাবে বাচ্চাদের মতো কাঁদছ কেন? তোমাকেও তো যেতে হবে। তখন কি করবে?’

শেফালী রাকিবকে জড়িয়ে ধরেই মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বুঝালো। মুখেও বললো, ‘নাহ্। আমি বিয়েই করবো না।’

মৃদু আওয়াজে হেসে ফেললো রাকিব। শেফালীর মাথায় তার অগোচরে আলতো চুমু খেয়ে বলল, ‘দেখা যাক। এবার কান্না থামাও। নাকি কান্না করার উছিলায় আরো জড়িয়ে ধরে থাকতে চাও?’

এতোক্ষণে স্বজ্ঞানে আসলো শেফালী। নিজের অবস্থান টের পেতেই রাকিবের বাহুডোর থেকে চটজলদি ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। নিজের এমন কর্মকান্ডে লজ্জা পেলো ভীষণ। কান্নারত চোখেমুখে লাজুকলতা ভর করলো। এভাবে জড়িয়ে ধরাতে বড্ড লজ্জাবোধ করলো শেফালী। হাত ধরা অব্ধি ঠিক আছে। কিন্তু আজ? সে নিজেই জড়িয়ে ধরলো? ছিঃ! সামনে দাঁড়িয়ে থাকার মতো অস্বস্তিতে আর থাকতে পারলো না। হলদে লেহেঙ্গা হালকা উঠিয়ে দৌড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো।

শেফালীকে এভাবে দৌড়ে যেতে দেখে শব্দ করে হেসে উঠলো রাকিব। লম্বা একটা শ্বাস ফেলে পকেটে দুই হাত রেখে দাঁড়াল। শেফালীর গায়ের ঘ্রাণ একদম পাগল করে দেবার মতো। মেয়েটা এতোক্ষণ তাকে জড়িয়ে ধরেছিল? ভাবতেই অদ্ভুত ভালোলাগা কাজ করলো মনে। আনমনে মুচকি হাসলো।
#অনেক_সাধনার_পরে
#মাইশাতুল_মিহির

[৪৩]

দৌড়ে আসায় হাঁপিয়ে উঠেছে শেফালী। জোড়ে জোড়ে নিশ্বাস নিচ্ছে। কিছুসময় আগে ঘটে যাওয়া ঘটনায় সে হতভম্ব। ভীষণ লজ্জিত। ইশ লোকটা কি ভাবলো? এভাবে জড়িয়ে ধরা উচিত হয়নি। এমন বেহায়া কর্মকান্ডের কারণে নিজেকে নিজে শখানেক গালি দিয়ে দিলো ইচ্ছে মতো। তারপর লম্বা দম ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। ধীর পাশে ঠোঁটে হাসি টেনে স্টেজের সামনে এসে তারই সমবয়সী ফুফাতো বোন মুনিয়ার পাশে দাঁড়ালো। শেফালীকে দেখে মুনিয়া প্রশ্ন করলো, ‘কিরে? কখন থেকে তোকে খুঁজছি। কোথায় ছিলি এতোক্ষণ?’

শেফালী আড় চোখে আশেপাশে তাকিয়ে ভালো ভাবে প্রখর করলো একবার। না! লোকটা কে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। ফুঁশ করে স্বস্তির নিশ্বাস ছুঁড়লো একটা। তারপর মুনিয়ার প্রশ্নের উত্তর দিলো, ‘সেফটিপিন খুলে গিয়েছিলো। সেটাই লাগাতে ওয়াশরুমে গিয়েছিলাম।’

ঠোঁট দুটো সরু করে গোলাকৃতি করলো মুনিয়া। কথায় টান দিয়ে রশালো গলায় বললো, ‘ওওওহ আচ্ছা! ওয়াশরুম টা বুঝি সেন্টারের বাহিরে? আর সেফটিপিন লাগানোর মানুষটা বুঝি বেয়াই সাহেব?’

চোখ দুটো বিস্ময়ে ছানাবড়া হয়ে গেলো শেফালীর। অবাক চোখে তাকালো মুনিয়ার দিকে। এই মেয়ে কিভাবে জানলো? এবার পুরো দুনিয়া রটিয়ে দিবে। শেফালী কে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুনিয়া ভাব নিয়ে বলল, ‘হয়েছে হয়েছে। আমি কাউকে বলবো না। যাইহোক, দুলাভাই কিন্তু সেই বোইন। তোর সাথে মানিয়েছে।’

প্রতিত্তুর করলো না। নিশ্চুপ থেকে মুচকি হাসলো। অন্য সময় হলে এই কথাটার জন্য মুনিয়ার চুল ছি’ড়ে ফেলতো শেফালী। কিন্তু আজ কেন জানি রাগ উঠলো না। উলটো মুনিয়ার এমন কথায় ভালোলাগা কাজ করলো মনে।
.

হলুদের অনুষ্ঠান প্রায় শেষপ্রান্তে। খাওয়া দাওয়া শেষে মেহমানরা এক এক করে বিদায় জানিয়ে চলে যাচ্ছে। সাথে চলে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সুপ্তি বেগম। মিতালীর পরিবারের সবার সাথে আলাপ করছে এই মুহূর্তে।

রাকিব ও ওবাইদুর তাদের থেকে দূরে দাঁড়িয়ে মিতালীর কাজিন সুমন ও রায়াজের সাথে কথা বলছে। কথায় মশগুল থাকলেও চোখ দুটো তার অন্য কাউকে খুঁজচ্ছে। মেয়েটা ভারী অদ্ভুত। তখনের পর থেকে এখন অব্ধি সামনে আসে নি। তাকে দেখলেই পালায় পালায় করেছে। এই ধানিলঙ্কা এতো লজ্জা পায়? আগে জানা ছিলো না তো। হাসি পেলো তার। কিন্তু হাসলো না।

রায়াজ কাজিনদের মধ্যে সবচেয়ে বড়। সেই সুবাধে সবাই তার কথার সম্মান করে। একটু গম্ভীর টাইপ। কিছুটা রাগ চটা। তবে অকারণে রাগার অভ্যেস নেই। বোনদের প্রতি একটু বেশি সিরিয়াস। আদর আহ্লাদও করে সবচেয়ে বেশি। তাই সবাই রায়াজ ভাই বলতে পাগল। রাকিবের সাথে কথার মাঝে রায়াজ খেয়াল করলো তার মোবাইল বন্ধ। আশেপাশে তাকিয়ে একটু দূরে শেফালীকে দেখে ডাক দিলো, ‘ওইইই শেলী? এখানে আয়।’

মানুষটা কে দেখলো না শেফালী। কিন্তু ‘শেলী’ ডাক শুনে বুঝে গেলো কে ডাকছে। রাগ শরিরে তিরতির করে বেড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চিবিয়ে রায়াজের সামনে আসলো। বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো, ‘সমস্যা কি ভাই? মাথায় কি কয়দিন পর পর ডাব পরে? আমার নাম শেফালী। শেলী শেলী করো কেন?’

শেফালী বিরক্তির কন্ঠ শুনে রায়াজ তার মাথায় গা’ট্টা মা’রলো একটা। তারপর মোবাইল ও গাড়ির চাবি শেফালীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘তোরে শেলী বলে ডাকতেই ভাল্লাগে। আমার মোবাইলে চার্জ নাই। গাড়িতে পাওয়ার ব্যাঙ্ক আছে। চার্জ দিয়ে আয়। মুনিয়া কে নিয়ে যা সাথে।’

শেফালী মোবাইল হাতে নিয়ে দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল, ‘পাসওয়ার্ড টা বলো একটু।’

‘থা’প্রা’বো ধরে। যা।’

মুখ কালো করে ফেললো শেফালী। আড় চোখে একবার রাকিবের দিকে তাকিয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করলো। রাকিব এক হাত পকেটে রেখে চুপচাপ দেখছিলো সব। রায়াজের সাথে কথা বলে ভালোই লেগেছিলো তার। কিন্তু এখন আর ভালো লাগছে না। শেফালীকে স্পর্শ করার পর রাগ হলো প্রচুর। অন্য ছেলে কেন শেফালীর মাথায় হাত দিবে? শেফালীও কিছু বলল না? ভীষণ রাগ হলো রায়াজের উপর। কিন্তু প্রতিক্রিয়া দেখালো না। চুপচাপ সাবলীল ভাবে আলাপ চালিয়ে গেলো কিছুসময়। অতঃপর সকলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুপ্তি বেগম ও অন্যান্য সদস্যদের নিয়ে চলে গেলো।

.

হলুদ শেষে এবার মেহেদি দেবার পালা। ঘড়ির কাটা বারোটা ত্রিশের ঘরে। মধ্যরাত্রি! কিন্তু ঘুম নেই কারোর চোখে। আড্ডায় ব্যস্ত সব ভাইবোন। বড়রা অন্যান্য কাজ সামলাতে ব্যস্ত। হৈহোল্লুরে পরিপূর্ণ বাড়ি। বিছানায় মিতালীকে ঘিরে বসে আছে জারা ও মুনিয়া। বাকিরা ফ্লোরে, সোফায়, বেতের মোড়ায় বসে আছে। জারা মিতালীর হাতে মেহেদি পরিয়ে দিচ্ছে। মহা আড্ডা আনন্দে ব্যস্ত সবাই। ছেলে ও মেয়েদের মাঝে গানের কলি খেলা চলছে। যেই টিম পয়েন্টে বেশি পাবে তাদের কে ফুচকা ট্রিট দিবে অপর টিম। দীর্ঘক্ষণ খেলার পর মেয়েদের দল জিতলো। হারলো ছেলেরা। অতঃপর বউভাতের দিন মিতালীকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। তার পরের দিন সবাইকে ফুচকা ট্রিট দিবে বলে ঠিক করলো ছেলেরা। নিজেদের আনন্দে মিতালী বাদ যাবে কেন? এমনি ভাবে হাসাহাসিতে পুরো রাত্রী কাটলো সবার। আড্ডার এক পর্যায়ে ছেলেদের দল ঘুমানোর জন্য বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মিতালীর পাশে রইলো শুধু মেয়েরা। জারা, মুনিয়া, তাহমিনাহ ও শেফালী।

মিতালীর হাতে মেহেদি দেওয়া শেষ অনেক আগেই। মেহেদি দেওয়া শেষে জারা যেন হাঁফ ছেঁড়ে বাঁচলো। দুই হাতের চার পিঠে মেহেদি দিতে দিতে তার হাত দুটো অবশ হয়ে গেছে। এই কারণে অন্য মেয়েরা পার্লার থেকে মেহেদি দিয়ে এসেছে। যার কারণে জারার উপর চাপ কম পরেছে।

ঘুমানোর প্রস্তুতি নিলো সবাই। দুইজন থাকবে বিছানায়, আর তিন জন থাকবে ফ্লোরে। যেহেতু মিতালীর বিয়ে তাই তাকে সম্মান সহিত উপরেই থাকতে দেওয়া হয়েছে। মিতালী ওয়াশরুমে গেলো হাতের মেহেদি পরিষ্কার করতে আর নিজেও ফ্রেশ হতে। অন্যরা বিছানা গুছাচ্ছে। তখুনি মোবাইল বেজে উঠলো। ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো চারজন। কার ফোন এসেছে? সবাই নিজেদের মোবাইল বের করে দেখতে দেখতে কল বেজে কেটে গেলো। তাদের মোবাইলে কল আসেনি। কিছুসময় পর আবারো কল আসলো। আওয়াজ টা টেবিল থেকে আসছে। তাহমিনাহ স্টাডি টেবিলের বইয়ের নিচে মিতালীর মোবাইলটা পেলো। দেখলো অংকুরের কল। অন্যরা জানতে চাইলো কে কল দিয়েছে। তাহমিনাহ হাতের ইশারায় চুপ থাকতে বললো সবাইকে। তারপর বিছানার উপর বসে কল রিসিভ করে স্পিকারে দিলো। বাকি তিনজন আগ্রহভরে এগিয়ে এসে তার পাশে বসলো।

কল রিসিভ করার পরপর অপর পাশ থেকে অংকুরের পুরুষনালীর কন্ঠ ভেসে আসলো, ‘হ্যালো?’

ঠোঁট টিপে হাসলো সবাই। কেউ প্রতিত্তুর করলো না। অংকুর কোনো প্রকার সাড়াশব্দ না পেয়ে আবারো বললো, ‘মিলি? আর ইউ দেয়ার?’

তাহমিনাহ মিতালী সাজার ভান ধরে ছোট করে উত্তর দিলো, ‘হুম!’

‘কথা বলছো না কেন? সারাদিন এতো কল দিলাম রিসিভ করলে না যে?’

জারা কন্ঠটা একদম মিতালীর মতো করতে চেয়ে লাজুক হেসে বলল, ‘আসলে সারাদিন তোমার কথা ভাবছিলাম। এতোটাই বিমোহিত ছিলাম যে কল ধরতে ভুলেই গিয়েছিলাম।’ বলা শেষেই সকলে মুখে হাত রেখে নিঃশব্দে হাসতে লাগলো।

আপনা আপনি কপালে ভাজ পরলো অংকুরের। কন্ঠ যতোই মিতালীর মতো করে বলার চেষ্টা করুক না কেন অংকুর বুঝবেই বুঝবে। তাছাড়া মিতালী কখনো তাকে তুমি করে বলে না। এরা কারা? নিশ্চয় মিতালীর কাজিন। মেয়েদের ফা’জ’লামো ভালোই বুঝলো অংকুর। তাই নিজেও মজা নিলো একটু, ‘ওওহ আচ্ছা। কিন্তু তোমার কন্ঠ এতো মোটা মোটা লাগছে কেন?’

জারা থমথমে খেলো এমন কথা শুনে। অন্যরা ঠোঁট চেপে হাসলো। কিন্তু শেফালী আওয়াজ করে হেসে উঠলো। তাকে শব্দ করে হাসতে দেখে তাহমিনাহ চোখ পাকালো। শেফালী হাসি শব্দ একটু কমিয়ে বললো, ‘আমার জিমিকে এতো সহজে বোকা বানানো যাবে না।’

শেফালীর কথাটা সম্পূর্ণ রুপে স্পষ্ট অংকুরের কানে আসলো। মৃদু হাসলো অংকুর। তারপর বলল, ‘কেমন আছো তোমরা সবাই?’

তাহমিনাহ উত্তর দিলো, ‘জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?’

‘আলহামদুলিল্লাহ। তোমাদের বোন কোথায়? ঘুমিয়ে গেছে?’

মুনিয়া দুষ্টু হেসে বললো, ‘কি ব্রো? বিয়ের আগেই বউ পাগল হলেন দেখছি। এতোদিন তো বউয়ের সাথেই কথা বললেন। এবার নাহয় আমাদের সাথেও কথা বলেন।’

‘আগে বউ ফিট করে নেই তারপর শালীদের ব্যাপারে ভাববো।’

জারা দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো, ‘সব ছেলেরা তো বউয়ের সাথে শালী ফ্রি চায়। আপনি আবার এই চান্স টা মিস করছেন না তো।’

অংকুর বললো, ‘বউকে বাগে আনতে পারলে শালীরা এমনিই আমার গান গাইবে।’

অংকুরের এমন কথায় ঠোঁট যুগল গোল করে সুর তুললো সবাই ‘ওওওহো’। তাহমিনাহ চিত্তবিকার ভাবে বললো, ‘বউয়ের বোনরা যদি বউকে আটকে রাখে বিয়ে করবেন কি করে! সুতরাং বউ চাইলে আগে শালীদের বাগে নিতে হবে।’

‘তাই নাকি! তা শালীদের বাগে আনতে কি করা লাগবে এই অসহায় দুলাভাইকে? একটু ক্লিয়ার করে বলো তো শুনি!’

অংকুরের কথা শুনে চকচকিয়ে তাকালো সবাই। একে অপরের দিকে বিস্মিত চোখে তাকিয়ে প্রকাণ্ড রকমের খুশি হলো। আগ্রহ নিয়ে শুনতে লাগলো তারা। তাহমিনাহ আবারো বলল, ‘ক্লিয়ার কেনো করতে হবে? আপনি তো সব বিষয়ে ভীষণ এক্সপার্ট শুনেছি।’

অংকুর বলল, ‘না মানে, জীবনে প্রথম বিয়ে করছি তো! তাই এই ব্যপারে একটু কাঁচা আরকি।’

তাহমিনাহ বলল, ‘এই কাজে আমি আপনাকে হেল্প করতে পারি! যদি বউ চান তাহলে যা আবদার করবো তাই রাখতে হবে কিন্তু।’

‘আচ্ছা সে দেখা যাবে, এখন তোমরা শালিরা মিলে আমার একটা উপকার করো তো।’

উপকারের কথা বলায় ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকালো তাহমিনাহ। তখন জারা বলে উঠলো, ‘উপকার? কি উপকার? আমরা আপনার কি উপকার করতে পারি? বোকা বানানোর ফন্দি ফিকির করছেন না তো?’

‘না না। ওতো ভয় পেতে হবে না। তোমরা জাস্ট কিউট করে লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে একটু উচ্চস্বরে হাসো। প্লিজ।’

চারজনের মুখ আপনা আপনি কিঞ্চিৎ পরিমান ফাঁক হয়ে গেলো। হতভম্ব হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। লজ্জা লজ্জা ভাব নিবে কেন? তাহমিনাহ বুঝলো কারণ টা। ঠোঁট টিপে হাসলো নিরবে। মুনিয়া তাহমিনার কাছ থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে তাদের থেকে একটু দূরে সরালো। তারপর বাকি তিনজনের কানে ফিশফিশ করে কিছু একটা বললো। মুনিয়ার এমন কথা শুনে চারজন উচ্চহাসিতে মেতে উঠলো তাৎক্ষনাৎ। হাসি তাদের থামছে না। তখুনি ওয়াশরুমের দরজা খুলার ঠক শব্দ হলো। শব্দ করে হাসি থামিয়ে দিলো চারজন। হাসির শব্দ কমলেও হাসি থামলো না কারোর। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে নিরবে হাসতে লাগলো তারা। জারা হাসি ধরে রাখতে না পেরে মুখে দুই হাত দিয়ে হাসি থামানোর চেষ্টা করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মুনিয়া বিছানায় শুয়ে কাথা মুড়ি দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পরলো। শেফালী আর তাহমিনাহ ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হেসে জায়গা থ মেরে বসে রইলো। তাদের এমন কর্মকান্ডে অবাক হলো মিতালী। টাওয়াল টা চেয়ারে মেলে ভ্রুঁ জোড়া কুঁচকে তাকালো। এভাবে হাসছিলো কেন তারা? তাহমিনার হাতে নিজের মোবাইল দেখে সন্দেহ বাড়লো আরো। এগিয়ে এসে তাহমিনার কাছ থেকে এক প্রকার ছিনিয়ে নিলো মোবাইলটা। স্কিনে অংকুরের নাম দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো। তীক্ষ্ণ চোখে তাহমিনার দিকে তাকিয়ে ধমকে উঠলো, ‘কল দিয়েছিলি নাকি রিসিভ করেছিস?’

শেফালী অবুঝের ভান ধরে বললো, ‘তাহমিনাহ আপু রিসিভ করেছে।’

তাহমিনাহ কাটমট চোখে শেফালীর দিকে তাকালো। অর্থাৎ তার নাম বলাতে কাঁচা চিবিয়ে খাবে শেফালীকে। মিতালীর দিকে তাকিয়ে ক্যাবলা মার্কা হাসি দিলো তাহমিনাহ। তারপর বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, ‘আমার ঘুম পাইছে রে শেফু। তাড়াতাড়ি আয় ঘুমাতে।’

শেফালী ডাক পেয়ে চটজলদি বিছানা থেকে নেমে ফ্লোর বেডে গিয়ে শুয়ে পরলো। মিতালীর নজর এড়াতে লাইট বন্ধ করে ড্রিমলাইট অন করে শেফালীর পাশে শুয়ে পরলো তাহমিনাহ। মিতালী দাঁতে দাঁত ঘর্ষণ করে তাকালো মোবাইলের দিকে। বারান্দায় গিয়ে রেলিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে মোবাইল কানে ঠেকিয়ে বলল, ‘কি কথা হচ্ছিলো এতোক্ষণ?’

মিতালীর ঝাঁঝালো গলা শুনে মোবাইলের অপরপাশ থেকে অংকুর ঠোঁট কামড়ে হাসলো। তারপর বলল, ‘মোবাইল নিয়ে এলে কেন? কথা তো এখনো শেষ হয়নি। খুব ভালো জমিয়ে আড্ডা হচ্ছিলো আমাদের।’

মোবাইলটা শক্ত করে ধরলো মিতালী। রাগ উঠলো শরিরে। ঝাঁঝ মেশালো গলায় বলে উঠলো, ‘মেয়েদের সাথে এতো কথা কিসের? তাও আবার হেসে হেসে। কি কথা বলছিলেন যে ওরা এভাবে হাসছিলো? বলেন।’

‘ওটা আমাদের পারসোনাল ব্যাপার। এখনো কথা শেষ হয়নি। ওরা পাশে আছে? তাহলে দাও কথা বলি।’

মিতালী শক্ত গলায় ‘অসভ্য’ বলে লাইন কেটে দিলো। রাগ উঠলো শরিরে। সবচেয়ে বেশি রাগ লাগলো তাহমিনার সাথে এতো কথা বলায়। তাহমিনাহ তার সমবয়সী। শেফালী, মুনিয়া আর জারা নাহয় একটু ছোট। তাছাড়া ওয়াশরুম থেকে এসে তাহমিনার হাতে মোবাইল দেখেছে। আবার শেফালী বললো তাহমিনার রিসিভ করেছে। যেহেতু মিতালী রিসিভ করেনি সেহেতু তাহমিনার সাথে এতো কথা কিসের? তাও এভাবে হেসে হেসে। কল কেটে দিতে পারতো না অংকুর? ক্ষুন্ন হলো মিতালীর মন। বিষন্নতায় ছেঁয়ে এলো হৃদয়। শরিরে রাগ নিয়েই রুমে এসে জারার পাশে শুয়ে পরলো।

চলমান…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here