অন্তর দহন পর্ব-১৭+১৮

#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___১৭

শহরের শেষ মাথায় একটা নিরিবিলি পরিবেশে অনেক সৌন্দর্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘সেতারা’ নামের একটি রিসোর্ট। চারপাশে খোলা মাঠ। লোকজনের হৈচৈ তেমন নেই বললেই চলে। হাইওয়ে রোডের একদমই পাশে রিসোর্টটি।বেশ শান্ত আর মনোরম পরিবেশ চারিদিকে।গাড়িটা তার সামনে গিয়ে হর্ন দিতেই দারোয়ান এসে গেইট খুলে দিলো।স্পন্দন গাড়ি ভেতরে নিয়ে থামিয়ে নেমে পড়লো। এরপর চন্দ্রের পাশের দরজা খুলে নামতে বললো। চন্দ্র নেমে দাঁড়াতেই স্পন্দন চন্দ্রের হাতটা ধরে ভেতরে একটা গার্ডেনের মতো জায়গায় নিয়ে এলো। ওরা আসতেই চারপাশে আলো গুলো জ্বলে উঠলো। চন্দ্র এদিকে ওদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে পুরোটা। এরপর বললো,

__ইশ্ কত্তো সুন্দর এটা স্পন্দন।

__পছন্দ হয়েছে চন্দ্র?

__ভীষণ পছন্দ হয়েছে স্পন্দন।

স্পন্দন চন্দ্রের হাত ধরে আরেক পাশে নিয়ে গেলো।করিডোরের পাশেই একটা কৃত্রিম ফুয়ারা।তার চারপাশে অনেক সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। চন্দ্র মুগ্ধ হয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে।স্পন্দন কখন যে ওর হাত ছেড়ে দিয়ে সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছে তা চন্দ্র খেয়াল করে নি। খেয়াল হতেই চন্দ্র তাকিয়ে দেখে স্পন্দন একতোড়া গোলাপ ফুল আর একটা আংটি নিয়ে চন্দ্রের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। এরপর স্পন্দন বললো,

__আমাকে তোমার মতো করে ভালোবাসবে চন্দ্র? আমার হাতটা ধরে সারাজীবন আমার পাশে পায়ে পা ফেলে হাঁটবে চন্দ্র?এই অগোছালো ছন্নছাড়া স্পন্দনকে সারাজীবন গুছিয়ে রাখবে চন্দ্র?

চন্দ্র মুগ্ধতা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোণে জল চিকচিক করছে চন্দ্রের। এমন ভাবে স্পন্দন যে কখনো চন্দ্রকে ভালোবাসার কথা বলবে সেটা যেনো ও ভাবতেই পারেনি।স্পন্দনের চোখ দুটো ও ছলছল করছে।খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে আছে চোখের চাহনি। চন্দ্র মাথা নেড়ে হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে স্পন্দনের হাতের সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,

__আপনাকে চন্দ্র চন্দ্রের মতো করেই সারাজীবন ভালোবাসবে স্পন্দন। আপনার হাতে হাত রেখে পায়ে পা মিলিয়ে সারাজীবন আপনার পাশে থাকবে চন্দ্র। আপনার জীবনের সবটুকু দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিয়ে আপনাকে চন্দ্র আগলে রাখবে সারাজীবন।

স্পন্দন খুশিতে কেঁদে ফেললো। চন্দ্র ও তাই।স্পন্দন চন্দ্রের হাতে আংটি পরিয়ে দিয়ে ফুলটা চন্দ্রের হাতে দিলো। চন্দ্রের হাত ধরে উঠে দাঁড়িয়েই চন্দ্রকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো স্পন্দন। চন্দ্র স্পন্দনের বুকে মাথা রেখে বললো,

__ভালোবাসি স্পন্দন।

__ভালোবাসি চন্দ্র। তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে কখনো দূরে যেওনা চন্দ্র।

এরপর কিছু সময় নীরব সবকিছু। দুজন দুজনের বুকের শব্দ গুলো মন দিয়ে শুনতে লাগলো।এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে যাচ্ছে দুজনের মধ্যে। এরপর লেকের পাশে চন্দ্র স্পন্দনের কাঁধে মাথা রেখে আঙ্গুলের ভাঁজে আঙ্গুল দিয়ে বসলো।স্পন্দন বললো,

__কি থেকে কি হয়ে গেলো। তাইনা চন্দ্র

__হুম।

__আমি কখনো ভাবিনি আমার চন্দ্রকে এতটা ভালোবাসবো।এতোটা পাগলামি করবো চন্দ্রের জন্য।

__আমিও ভাবিনি এই রাগী গোমরামুখো স্পন্দনকে এতোটা ভালোবাসবো স্পন্দন।

__আমি কখনো মনের কথা মুখে বলতে পারি না চন্দ্র।এই যে তোমাকে এটুকু বলতে আমার শরীরের ঘাম ছুটে যাচ্ছিলো চন্দ্র।

স্পন্দনের কথা শুনে চন্দ্র খিলখিল করে হেসে উঠলো। সেদিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে স্পন্দন বললো,

__তোমার চোখের দিকে তাকালে কেমন মায়াবী লাগে সবকিছু। শরীর থেকে একটা হীম শিতল ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায় হৃদয় জুড়ে। চারপাশের সৌন্দর্যের সাথে পাল্লা দিয়ে তোমার সৌন্দর্যে ভেসে যাই আমি। তুমি আসেপাশে থাকলে মনে হয় আমার ভেতরে মাত্রাতিরিক্ত মাদকতা কাজ করে। আমি যেনো একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাই। তোমার নেশায় আসক্ত হয়ে যাই।এই আসক্তিতে ক্লান্তি নেই।আছে শুধু হারানোর ভয়।মনে হয় এতো সুখ এতো ভালোবাসা সইবে তো আমার? আমি শুধু তোমার ভালোবাসার অন্তর দহনে জ্বলে পুড়ে যাই চন্দ্র। তোমার মধ্যেই আমার হকল সুখের পরিব্যাপ্তি শুরু হয়, আবার শেষ ও হয়। আমি শুধু তোমাকে আর তোমাকেই ভালোবাসতে চাই চন্দ্র।

চন্দ্র মুগ্ধ হয়ে স্পন্দনের কথাগুলো শুনছে।কি এক অনাবিল শান্তি অনুভব হচ্ছে ভেতরে ভেতরে তা বলে বোঝাতে পারছেনা চন্দ্র। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এসেছে ধরায়। জোছনার আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ। সাথে বাড়তি সৌন্দর্য ছড়িয়ে দিচ্ছে চন্দ্রের হাস্যোজ্বল মুখটা।রাতে ডিনার করে বাসায় ফিরেছে চন্দ্র আর স্পন্দন। চন্দ্র বেলকনিতে গিয়ে স্পন্দধনের পাশে গুটিসুটি দিয়ে বসে আছে স্পন্দন।স্পন্দন বললো,

__যতো তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি।ততোই হারিয়ে ফেলার ভয়ে গুটিয়ে যাচ্ছি চন্দ্র।

__এতো হারিয়ে ফেলার ভয় কেনো?

__আমি যে তোমাকে ছাড়া নিঃশ্বাস নিতে পারিনা চন্দ্র। আমার সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগে চন্দ্র। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে তখন।

__আপনি এসব বলবেন না স্পন্দন। চন্দ্র আছে তো আপনার পাশে সব সময়। তবুও এতো ভয় পান কেনো স্পন্দন?

__জানিনা চন্দ্র।ভয় হয়। ভীষণ ভয়।

চন্দ্র এবার পেছনে ফিরে স্পন্দনের চোখে চোখ রেখে বললো,

__আপনি যদি কোনো অপরাধ না করে থাকেন তাহলে চন্দ্রকে হারিয়ে ফেলার ভয় কখনো পাবেন না স্পন্দন। চন্দ্র আপনার সাথে থাকার কথা দিয়েছে।আর তার কথা সে রাখবে স্পন্দন।ভয় পাবেন না আপনি।

স্পন্দনের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। চন্দ্র তাড়াতাড়ি করে বিষয়টা সামলে নিতে বললো,

__ঘুমাতে চলেন স্পন্দন। অনেক রাত হয়ে গেছে।

চন্দ্রকে বুকে নিয়ে শুয়ে আছে স্পন্দন। চন্দ্রর বলা কথাটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। চন্দ্র কিছু আঁচ করতে পারেনি তো। আবরার চৌধুরীর লোক সৈয়দ মির্জার লোক সেজে যে কথা গুলো চন্দ্রকে বলেছে তাতে কি চন্দ্র আমাকেও সন্দেহ করছে?এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেছে স্পন্দন। চন্দ্র সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে স্পন্দন পাশে নেই।ওয়াশরুম ফাঁকা।এতো সকালে কোথায় গেছে তা ভেবে বেলকনিতে পা দিতেই দেখলো নিচে বড় আব্বুর সাথে কথা বলছে স্পন্দন। দূর থেকে কিছু কানে না আসলেও দুজনের মধ্যে কথা শুনে মনে হচ্ছে রেগে আছে দুজনেই। চন্দ্র তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে এলো।ওর চোখ বাগানের দিকে।বড় আম্মু বললো,

__কিরে চন্দ্র কলেজ নেই আজকে?

__আছে বড় আম্মু।

__এখানে কি।গোসল করে আয়। আমার নাস্তা রেডি হয়ে গেছে প্রায়।স্পন্দন উঠেছে?

__হু।

__কি হয়েছে তোর?চোখ মুখ এমন লাগছে কেনো দেখতে?

__কিছু না বড় আম্মু।

চন্দ্র তাড়াতাড়ি করে উঠে এলো।প্রায় সাথে সাথেই স্পন্দন ও এসেছে। চন্দ্র ভুত দেখার মতো চমকে উঠে বললো,

__আরে আপনি এখানে?আমি আরও ভাবলাম সকাল সকাল কোথায় গেছেন আবার।

স্পন্দনের মুখ থমথমে। গম্ভীর মুখে বললো,

__আমি রেডি হয়ে নিচে আসছি। তুমি রেডি হয়ে নাও চন্দ্র।

চন্দ্র এতো সময় কেমন যেনো নিঃশ্বাস আটকে ছিলো।কি এমন হলো যে স্পন্দন আজকে আবার এতো রেগে আছে?নাহ্ আজকে আর স্পন্দনকে বেশি খেপানো ঠিক হবেনা। পাশের রুমে গিয়ে গোসল সেরে রেডি হয়ে নিলো চন্দ্র। গাড়িতে কোনো কথাই বলেনি আজকে স্পন্দন। নামিয়ে দেওয়ার সময় শুধু বলে গেছে,

__আমি না আসা পর্যন্ত কলেজ থেকে বের হবে না।

__জ্বী আচ্ছা।

চন্দ্রকে ক্লাসে অন্যমনষ্ক হতে দেখে রাত বললো,

__কি হয়েছে তোর? জামাইয়ের প্রেমের ডোজ কি বেশি পরেছে নাকি?তাই এমন মুখ ফুলিয়ে আছিস মনে হয়।

__কিছু হয়নি। আমি আজকে ক্লাস করবো না রাত। আমি আব্বুর অফিসে যাবো দেখা করতে। তুই একটু সামলে নিস এদিকে।স্পন্দন আসার আগেই আমি ফিরে আসবো।

__কিন্তু হঠাৎ?

__পরে বলবো।আসছি আমি।

চন্দ্র কলেজ থেকে রিকশা নিয়ে বেরিয়ে গেছে।ও জানেই না স্পন্দনের লোক ওর পেছনে সব সময়ই আছে।সেও গাড়ি নিয়ে ওর পেছনে যেতে যেতে স্পন্দনকে ফোন করে বললো,

__স্যার?ম্যাম রিকশায় করে সৈয়দ আশরাফ সাহেবের অফিসে এসেছে। মাত্র ভেতরে গেছে।

__তুমি পেছনে থাকো।বিপদ দেখলে সাথে সাথে আমাকে জানাবে আর ব্যবস্থা নিবে।

__জ্বী স্যার।

স্পন্দন তীব্র দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে।কি এমন হলো যে চন্দ্র আমাকে না জানিয়ে কলেজ থেকে মেজো আব্বুর সাথে দেখা করতে গেছে।

__আব্বু?

__চন্দ্র মা তুই এখানে? সত্যি সত্যি তুই এসেছিস? আমি তো ভাবতেই পারছিনা চন্দ্র।

__বড় আব্বুর সাথে স্পন্দনের এতো ঝামেলা কি নিয়ে আব্বু?

__আমি জানিনা।

__সত্যি করে বলো আব্বু। আমার মন বলছে তুমি সবকিছু জানো।

__আমি কিছু জানিনা।তবে তুই কি এগুলো শুনতেই এখানে এসেছিস?যদি তাই হয় তাহলে বেরিয়ে যা এখান থেকে। ওদের সম্পর্কে আমার কাছ থেকে তুই কিছুই জানতে পারবি না চন্দ্র।

__কিন্তু কেনো আব্বু?

__আমি চাইনা তুই ওদের এই ঝামেলায় নিজেকে জড়িয়ে নিস। আর তার জন্যেই আমি তোকে আনতে চেয়েছিলাম নিজের কাছে। আমি জানতাম এমন কিছু তোর সামনে আসবে যা তোকে ওদের মধ্যে ঢুকতে বাধ্য করবে।আর আমি বাবা হিসেবে সেটা চাইনা।

__তোমার চাওয়া না চাওয়ায় আর কিছু আসে যায় না চন্দ্রর। আমার স্পন্দনের দিকে কেউ যদি চোখ তুলেও তাকায় এই চন্দ্র কি করবে তা তুমি ভাবতে পারবে না আব্বু।সে যেই হোক না কেনো।

চন্দ্র বেরিয়ে গেলো অফিস থেকে। আবার রিকশা করে কলেজের দিকে আসতে লাগলো।চিন্তা স্পন্দন কলেজে আসার আগেই পৌঁছাতে হবে ওকে।

#চলবে,,,,,,

লেখায় ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। গল্প পড়ে লাইক কমেন্ট করে লেখিকাকে লেখায় উৎসাহিত করুন। মূল্যবান মতামত দিয়ে ভুল গুলো তুলে ধরুন।#অন্তর_দহন
#লেখনিতে_আরুহি_অহি

পর্ব___১৮

চন্দ্র কলেজ গেইট এর কাছে পৌঁছানোর আগেই একটা প্রাইভেট কার এসে থামলো। চন্দ্রকে টেনে হেঁচড়ে নামিয়ে গাড়িতে উঠাতেই পেছন থেকে দেখে নিলো স্পন্দনের লোক। কিন্তু কিছু করার আগেই গাড়িটা সীমানার বাইরে চলে গেছে।মিশাল সাথে সাথে ফোন করলো স্পন্দনকে।বললো,

__স্যার এদিকে বিপদ হয়ে গেছে।

__কি হয়েছে মিশাল?

__ম্যামকে তুলে নিয়ে গেছে।গাড়ির নম্বর তুলে রেখেছি ফোনে। আমি পেছনেই আছি।

__মুখ দেখতে পেয়েছো?

__এতো দ্রুত কাজ করেছে যে আমার মাথা কাজ করছিল না।সরি স্যার। আমি থাকতে এমনটা হবে তা আমি ভাবতেই পারিনি।

__ঠিকানা মেসেজ করে দাও। আমি আসছি।

__জ্বী স্যার।

মিশালের মেসেজ পেয়ে লোকেশন অন করে স্পন্দন গাড়ি নিয়ে ছুটলো।

চন্দ্রকে অজ্ঞান করে চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে।একটু পরেই ভারী বুটের ধপধপ শব্দ শুনে লোকগুলো রুমের দরজা খুলে দিলো। লোকটি এসে থমথমে গলায় বললো,

__জ্ঞান ফেরানোর ব্যবস্থা করো।

চন্দ্রের চোখেমুখে পানি দিতেই চন্দ্র চোখ পিটপিট করে তাকালো। মুখের সামনে একটা ভয়ংকর চেহারার মানুষকে ঝুঁকে থাকতে দেখে চন্দ্র ভয়ে আঁতকে উঠলো। লোকটি গমগমে কন্ঠে বললো,

__হ্যালো মিসেস্ স্পন্দন। আপনার মতো সুন্দরীকে এভাবে বেঁধে রাখার জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত মিসেস্ স্পন্দন।

__ক্ কে আপনি?

লোকটি হা হা করে হাসতে লাগলো।বললো,

__আপনি তো আবার চেনেন না আমাকে মিসেস স্পন্দন। আমি আবরার চৌধুরী।হৃদির একমাত্র ভাই। মাহতাব চৌধুরীর ছেলে।

__আমাকে এখানে কেনো এনেছেন?

__আরে আপনাদের বিয়েতে তো আমাকে দাওয়াত দেয়নি স্পন্দন মির্জা।তাই বাধ্য হয়ে আপনাকে বিয়ের উপহার দিতে এখানে নিয়ে আসা।

চন্দ্র হাত পায়ের বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করছে।তা দেখে আবরার চৌধুরী বললো,

__আহ্ মিসেস স্পন্দন মির্জা । এভাবে ছটফট করলে যে আপনার কষ্ট হবে। আর আপনার কষ্ট দেখে যে আমার বুকটা ফেটে যাবে।

__কেনো এনেছেন এখানে?

__আবরার চৌধুরীর সাথে কেউ উঁচু গলায় কথা বলে না মিসেস স্পন্দন।সো আওয়াজ নিচে।

__আপনি জানেন না আমাকে এখানে তুলে এনে নিজের কত বড় বিপদ ডেকে এনেছেন।

__হু’মকি?তাও আবরার চৌধুরীকে? সাহসের তারিফ করতে হবে আপনার মিসেস স্পন্দন। আপনার স্বামীর কুকীর্তি সম্পর্কে জানতে ইচ্ছে করে না?

__স্পন্দন কখনো খারাপ কাজ করতে পারে না।এসব বলে আমাকে ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই আবরার চৌধুরী।

__আরে খুব ভালোবাসেন বুঝি স্বামীকে?

__হ্যাঁ খুব ভালোবাসি। কিন্তু সেই কইফিয়েত আমি আপনার মত লোকের কাছে দিবো না।

রাগে আবরার চৌধুরীর মুখ লাল হয়ে গেছে।মনে হচ্ছে চন্দ্রকে গিলে ফেলবে এখনি। চন্দ্র এখনো বাঁধন খোলার জন্য ছটফট করতে লাগলো।

__আপনি কার হয়ে সাফাই গাইছেন?যে আমার বোনের খু’নী? কতটুকু চেনেন আপনি স্পন্দন মির্জাকে?

__আমার স্পন্দন কখনো কাউকে খু’ন করতে পারে না। আপনি মিথ্যা বলছেন আবরার চৌধুরী।

__ওহ্ রিয়েলি মিসেস স্পন্দন? আপনি জানেন আপনার স্পন্দন আমার ফুলের মতো নিষ্পাপ বোনটাকে খু’ন করেছে?

__আমি বিশ্বাস করি না।স্পন্দন এমন কাজ কখনোই করতে পারে না।

আবরার চৌধুরী তেড়ে এসে চন্দ্রর মুখটা শক্ত করে চেপে ধরলো।বললো,

__আমার একটা মাত্র বোন ছিলো হৃদি।তাকে নির্মমভাবে ঠকিয়েছে আপনার স্বামী। আমি আপনার অনেক বকবক সহ্য করেছি এতো সময়। কিন্তু আর নয়।আপনাকে মে’রে এখানেই পুঁ’তে রেখে দেবো মিসেস স্পন্দন।

চন্দ্র চেয়েও কিছু বলতে পারছেনা।মুখটা শক্ত করে চেপে রেখেছে আবরার চৌধুরী।ব্যথায় কুকিয়ে উঠলো চন্দ্র।তা দেখে আবরার চৌধুরী আরেকটা কুৎসিত হাসি হেসে বললো,

__আরো আরো ছটফট করেন মিসেস স্পন্দন। আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে আপনাকে এভাবে ছটফট করতে দেখে তা বলে বোঝাতে পারবো না মিসেস স্পন্দন। ঠিক এভাবেই ছটফট করতো আমার ছোট্ট বোনটা। আমার বারণ করা সত্তেও ঐ স্পন্দনের সাথে কথা বলতো।তার সাথে দেখা করতো। আমি বন্ধ করেছিলাম বলে আমাকে সহ্য করতে পারতো না।অথচ যে বোন আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসতো সেই বোন ঐ স্পন্দনের জন্য আমার সাথে এতো কিছু করেছে। কষ্ট হয়। ভীষণ কষ্ট।যতটা কষ্ট আমি পেয়েছি তার দ্বিগুণ কষ্ট আমি স্পনদনকে কড়ায় গন্ডায় মিটিয়ে দিবো।এটা আমার নিজের প্রতি নিজের প্রতিশ্রুতি।

চন্দ্রের মুখটা ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো আবরার চৌধুরী। চন্দ্রের চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।এতো জোরে চেপে ধরেছিলো আবরার চৌধুরী যনো মুখের হার ভেঙে ভেতরে ঢুকে যাবে।ব্যথা যন্ত্রণায় ভীষণ কষ্ট হচ্ছে চন্দ্রের। তবুও সাহস করে বলে উঠলো,

__আপনি কি চান আবরার চৌধুরী?

__আমি চাই স্পন্দনের ধ্বংস। আমি চাই সৈয়দ মির্জা আমার পায়ে পড়ে ছেলের প্রাণ ভিক্ষার জন্য কান্নাকাটি করুক।ছটফট করতে থাকুক ।আর বুঝুক প্রিয় মানুষ হারিয়ে গেলে তাদের আপনজনের ঠিক কতটা কষ্ট হয়।

__আপনি ভুলে যাচ্ছেন যে স্পন্দন আপনার বোনকে ভালোবাসতো।তার কষ্ট হয় এমন কোনো কাজ স্পন্দন কোনোদিন করবে না। এগুলো আপনার মনের ভুল।

__মনের ভুল?কোনটা মনের ভুল? আমার বাবাকে যখন নির্মম ভাবে অপমান অপদস্থ করেছিলো ঐ সৈয়দ মির্জা সেটা ?সেটা মনে রাখা আমার মনের ভুল?বলুন?

__বড় আব্বু কেনো এমন করেছিলেন তা আমি জানি না। কিন্তু তার জন্য আপনি স্পন্দনকে কেনো কষ্ট দিবেন?

__কেনো দেবো না? আমি আজ অনাথ।। আমার হাসিখুশি পরিবারের সবাই আমাকে একা ফেলে চলে গেছে ঐ সৈয়দ মির্জা আর তার ছেলের জন্য। আমি জীবনেও তাদের ক্ষমা করবো না। আমার প্রতিশোধ চাই। আমি এর প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।

__কি নিয়ে প্রতিশোধ নিবি আবরার চৌধুরী?

__স্পন্দন তুই? তুই এখানে আসলি কি করে?

__কি ভেবেছিলি আবরার? আমার চন্দ্রকে তুই তুলে নিয়ে আসবি আর আমি হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবো?

__এসেই যখন পড়েছিস তখন নিজের চোখেই দেখে নে তোর ভালোবাসার চন্দ্রকে কিভাবে একটু একটু করে যন্ত্রণা দিতে দিতে শেষ করে দেই।

__আবরার?মুখে লাগাম টেনে কথা বল। না হলে স্পন্দন তোর এমন অবস্থা করবে যা তুই ভাবতেও পারবি না।

আবরার চৌধুরী এবার চন্দ্রের গলায় একটা চা’কু চেপে ধরে বললো,

__আর একপা এগোলেই তোর বউকে এখানেই শেষ করে দিবো স্পন্দন।

স্পন্দন মুচকি মুচকি হাসছে আর এগোতে এগোতে বললো,

__আমার চন্দ্রের গায়ে যদি একটা আঁচড় পড়ে তবে ভুলে যাবো তুই হৃদির ভাই। সেদিন হৃদির জন্য তুই বেঁচে গেছিস। আজকে আর তা পারবি না আবরার।

__তোকে কিন্তু এগোতে মানা করেছি স্পন্দন।পিছিয়ে যা। পিছিয়ে যা বলছি।

__চন্দ্রকে ছেড়ে দে আবরার।

__না।

__আমি শেষ বারের মতো বলছি আবরার চন্দ্রকে ছেড়ে দে। বাঁচতে চাস তো চন্দ্রকে ছেড়ে দে বলছি।

আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই পুলিশের গুলি এসে লাগলো আবরারের হাতে।হাত থেকে ছু’ড়িও পড়ে গেলো। চন্দ্র ভয়ে একটা চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলো। পুলিশের লোক এসে আবরার চৌধুরীর সবাইকে ধরে বাইরে নিয়ে যেতে লাগলো।স্পন্দন ছুটে এসে চন্দ্রর হাত পায়ের বাঁধন খুলে ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে।মিশাল এগিয়ে এসে বললো,

__স্যার ওদেরকে পুলিশ এরেস্ট করে নিয়েছে।ম্যামকে হাসপাতালে নিতে হবে। আমি ড্রাইভারকে গাড়ি বের করতে বলেছি।আর কোনো বিপদের সম্ভাবনা নেই। আপনি ম্যামকে নিয়ে আসুন।

স্পন্দন চন্দ্রের হাত ধরে বসে আছে হাসপাতালে।বাড়ির সবাই এসেছে খবর পেয়ে।স্পন্দন এ পর্যন্ত একটা কথাও বলেনি কারো সাথে।একটু পরেই চন্দ্রের জ্ঞান ফিরলো।স্পন্দনকে দেখেই হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।স্পন্দন ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো,

__এই তো আমি চন্দ্র।আর কোনো ভয় নেই। তোমার স্পন্দন এসে গেছে তো। এবার শান্ত হও চন্দ্র।

__ঐ ঐ লোকটা,,,,

__কিছু হবে না চন্দ্র। আমি আছি তো। একদমই ঠিক আছি।একটু শান্ত হয়ে থাকো প্লিজ। তোমার শরীর খারাপ করেছে। উত্তেজিত হলে আরো খারাপ করবে।

ডাক্তার ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে দিলেন।আপাতত এতেই শান্ত থাকবে চন্দ্র। অতিরিক্ত শকে এমন হয়েছে।স্পন্দন বাইরে এসে বললো,

__চন্দ্র ঠিক আছে। ঘুমাচ্ছে এখন।

__ঠিক কি হয়েছিল ওর সাথে স্পন্দন?

__ছোট আব্বু আসলে চন্দ্রকে আবরার চৌধুরী তুলে নিয়ে যায় আপনার অফিস থেকে বের হবার পর।

__আমি জানতাম তোমাদের এই শত্রুতার জন্যে আমার মেয়েটাকেই কষ্ট পেতে হবে।তাইতো চাইছি ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে।এখনো বলবে তোমার কাছে ও ভালো থাকবে? নিরাপদ থাকবে?

স্পন্দন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে চন্দ্রের বাবার দিকে এরপর বললো,

__চন্দ্র যদি কোথাও থাকে তাহলে স্পন্দনের সাথেই থাকবে।স্পন্দন বেঁচে থাকতে চন্দ্রের কিছুই হতে দেবে না।

__হতে দেবে না?পেরেছো আটকাতে?

__আপনার ভাইকে জিজ্ঞেস করুন ছোট আব্বু।সে চাইলে না আজকে চন্দ্রের এতো বড় বিপদ হতো না আমার চরিত্রের উপর দাগ পড়তো।তাই এসব বাদ দিয়ে এটা শুনে রাখুন স্পন্দনকে ভালো রাখতে চন্দ্রকে চাই।আর চন্দ্রকে ভালোবেসে আগলে রাখবে যে সেটাও এই স্পন্দন।তাই ভবিষ্যতে এসব কথা আমার সামনে দ্বিতীয় বার বলবেন না।

#চলবে,,,,,,,

লেখায় ভুল ত্রুটি মার্জনীয়। গল্প পড়ে ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here