#অন্তরালে_ভালবাসা
৬
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি
দেখতে দেখতে এসএসসি পরিক্ষা চলে এলো। অহিন, রাফিন পড়ালেখা নিয়ে তুমুল ব্যাস্ত তখন।আরিশার সাথে অহিনের প্রায় খুনসুঁটি হয়।আর তাদের দুজনের মাঝে সব ঝগড়া মিটিয়ে দেয় রাফিন।অহিনের মনে আরিশার জন্য তখন শুধু মায়া ছিলো। ভালবাসা শব্দটার সাথে অহিন তখন পরিচিত নয়।ঝগড়া, আর আরিশার মারামারি তো আছেই।আরিশা সবসময় অহিনের গায়ে হাত তুলে।অদ্ভুত ব্যাপার হচ্ছে এই কাজটা শুধু অহিনের সাথেই করে আরিশা।রাফিনের সাথে কখনও করে না।
এর মধ্যে ক্লাসে স্যার সবাইকে বলে দেয়।প্রাক্টিক্যাল খাতাগুলো রেডি করে নিতে।এতেই আরিশা পড়ে বিপদে।কারণ সে প্রাক্টিক্যাল খাতা আঁকতে একদম পছন্দ করে না।পারে না এমন নয়।বেস ভালো লাগে না আরিশার।
অনেকেই অহিনের কাছে খাতা নিয়ে আসে এঁকে দিতে।কিন্তু অহিন দুই একজনের খাতা নেয়।এমন সময় আরিশার মাথায় কি চলে বুঝা যায় না।
হঠাৎ করে এসে অহিনকে বলে আমার খাতাটা করে দাও তো?
অহিন কপাল কুঞ্চিত করে বলে আমি পারবো না।আমার পরিক্ষার পড়া আছে।
আরিশা কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলে,করে দিবা নাকি পেন্সিল দিয়ে,,,,,এতুটুকু বলার পর অহিন আরিশাকে বলতে না দিয়ে বলে,,কি হুম চোখ গেলে দিবা তাই না?
কই দেখি কত সাহস, আজ একটু মহারানীর সাহস দেখতে চাই।সবসময় তো চাপা শুনি।বলেই অহিন মাথার চুল গুলো আঙুল দিয়ে আঁচড়ানোর ভান করে!
আরিশা বলে,কম্পাসের আর পেন্সিলের গুতো খেয়ে এখনো মনে হয় আমার সাহসের অভাব আছে?বলেই ঠোঁট বাকিয়ে ভেংচি কাটে আরিশা!
অহিন টেবিল থেকে বের হয়ে আরিশার সামনে এসে অদ্ভুত কান্ড করে বসে যা এখানের কেউই আশা করেনি।
অহিন আরিশাকে ঘুরিয়ে আরিশার পেছন দিক থেকে হাত মুছড়ে ধরে অহিন।
আরিশা ব্যাথায় আহ!বলে শব্দ করে।আরিশা পাঁচ ফিট দুই ইঞ্চি হওয়ায় অহিনের বুক বারবার হয়।অহিন বলে এবার বলেন মহারানী আপনার কি আর্জি?আমি শুনতে চাই।আরিশা বলে আমায় ছাড়ো নয়তো এখন পেটে ছুড়ি চালিয়ে দিবো।
অহিন আরেকটু জোরে মোছড়ে ধরে আরিশার হাত বলে, তো মহারানী আপনি আপনার কাজ সম্পন্ন করুন।
অহিন ঠাট্টার সুরে বললেও আরিশা সত্যি অহিনে পেটে পেছন থেকে কিছু একটা ঢুকিয়ে দেয়।অহিন ব্যাথায় ছেড়ে দেয় আরিশাকে।
আরিশা হাতের দিকে অহিন তাকিয়ে দেখে আরিশার হাতে একটা পেন্সিল। অহিন অবাক হয় খুব অবাক!এই মেয়ে সবসময় পেন্সিল নিয়ে ঘুরে নাকি অদ্ভুত!
অহিন বলে” ডাকাত মেয়ে কোথাকার””
সবসময় হাতে পেন্সিল নয়তো কাটা কম্পাস কিছু একটা থাকেই। এই রাফিন শুনে রাখ আজ আমি থানায় জিডি করে আসবো বলা যায় না কোনদিন এই মেয়ে আমার বুকে ছুড়ি বসিয়ে দেয়।
আর আমি মরে যাই!
(অহিন কি জানতো সেদিন সেই মেয়ে সত্যি সত্যি একদিন তার বুকে ছুড়ি চালিয়ে দিবে।যে ছুড়ি দেখা যায় না।ছোয়া যায় না।যার নাম মায়ার ছুড়ি।
আর সেই ছুড়ির আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হবে অহিনের হৃদয়! যে ক্ষত অহিনের রাতের ঘুম কেড়ে নেবে।জীবনের আনন্দ কেড়ে নেবে!সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুকে কেড়ে নেবে! এই মায়ার ছুড়ি আসলেই বাস্তবিক ছুড়ির চেয়ে আলাদা যা শুধু হৃদয়ের রক্তক্ষরণ ঘটায়!জীবন্ত মানুষকে মৃত বানিয়ে দেয়!)
আরিশা তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে বলে,আমি ডাকাত তাই না?হুম?আর তুমি কি হু?এখন আমার যদি হাতটা ভেঙে যেতো তাহলে যে আমার বিয়ে হতো না।সেটা কে দেখতো হু?
আমি সবার আগে তোমার নামে মামলা করবো।অসভ্য ছেলে কোথাকার পর পুরুষ হয়ে আমাকে টার্চ করেছো।
উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসে।এই মেয়ে এখনো এসএসসি দিলো না।সে দেখে বিয়ের স্বপ্ন!
অহিনের মনে হলো তখন মেয়েটা অদ্ভুত! আসলেই অদ্ভুত! অন্যরকম অদ্ভুত!
রাফিন দুজনের কান্ড দেখে হেসে খুন হয়ে যাচ্ছে।রাফিন বলে তোদের দুজনকে চিড়িয়াখানায় রাখার মত!মানুষ তোদের দেখে বিনোদন নেবে!বলেই আবার হাসে রাফিন!
ঠিক সেই সময় দুটো চোখ রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে চোখে মুখে বিস্ময়ের ভাব নিয়ে অদ্ভুতভাবে।
সেই মুহুর্তে মনে হলো আরিশার ইশ হাসিটা তো জোশ!
এতোদিন খেয়াল না করলেও আজ আরিশা খেয়াল করে দেখলো।উজ্জ্বল শ্যামলা রঙের ছেলেটির চোখ দুটোয় কি বিষন মায়া।আর একটু খেয়াল করে দেখলো ছেলেটার পাখির ন্যায় চিকন দুটি ঠোঁটে কিছু একটা আছে। যার কারনে তার হাসিটা এতো বেশী সুন্দর লাগছে!
সোজা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে উড়ছে।
আরিশার বেস ভালো লাগলো ছেলেটিকে তাছাড়া ছেলেটি অহিনের মত এতো ঝগড়াটে না।
সেদিনের মত তারা চলে যায় বাড়ি। রিফান আরিশার খাতা গুলো নিয়ে যায় এঁকে দিবে বলে।সাথে আরিশার নাম্বারটা ও কারণ যদি কোন প্রয়োজন হয় যেন কল দিতে পারে।
আরিশার খাতাগুলো নিয়ে যাওয়ার পর আরিশার সাথে কয়েকবার কল দিয়ে কথা বলে রিফান।কথা বলতে বলতে মোটামুটি তারা বন্ধু হয়ে যায়।
রিফান সেই প্রথম অহিনের কাছ থেকে এই কথাটা লুকিয়ে রাখে।রিফান মনে করে অহিন যদি জানে রিফান আরিশার সাথে কথা বলে তাহলে অহিন খুব কষ্ট পাবে।তাছাড়া রাগ করবে।তাই আর রিফান অহিনকে আরিশার কথা কিছুই বলে না।
পরিক্ষা চলে আসে।কোচিং আসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অহিনের সাথে আরিশার কথা হয় না।দেখা ও হয় না।কিন্তু রিফানের সাথে আরিশার কথা হয়।
সবাই খুব ভালোভাবেই পরিক্ষা দেয়।
অহিনের দুরন্তপনা দিন দিন কমতে থাকে।প্রায়ই হাতের কাটা দাগটার দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছু একটা ভাবে।কেনো যেন মায়া লাগে এই দাগটা।কিন্তু কেনো বা এই দাগ এতো ভালো লাগে?দাগ দেয়ার মালিকের প্রতি তার কি অনুভূতি বা কি এসব কিছুই সে বুঝতে পারে না।তবে এইটুকু বুঝে যে সে মিস করে ওই ভাগিনী মেয়েটিকে।তার পেন্সিল, কম্পাস,চোখ রাঙানো সব কিছুকে মিস করে।
ততদিনে রিফানের মনে আরিশার প্রতি একটু একটু করে ভালবাসার জন্ম হয়।আর রিফান তা খুব ভালো করে বুঝতে পারে।রিফান বুঝতে পারে এই মেয়েটিকে তার চাই।খুব করে চাই।জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চাই!
পরিক্ষা ফলাফল দেয়ার পর রিফান আরিশা যে কলেজে ভর্তি হয় সে কলেজের জন্য তার আর অহিনের জন্য এপ্লাই করে।অহিন এই বিষয় নিয়ে কিছুই বলে না।কারণ রিফান যে কলেজে যাবে।সে একই কলেজে অহিন ও যাবে।
কলেজের প্রথম দিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে। আরিশা যখনই কলেজে ঢুকে তখনই কেউ একজন পেছন থেকে বলে এই ভাগিনী কেমন আছো?
আরিশা অহিনের দিকে তাকিয়ে স্মিত হেসে বলে,আরে তুমি।অনেকদিন পর দেখা।বাই দ্যা রাস্তা তুমি আমার পেন্সিল আর কাটা কম্পাস মিস করছো বলে পেছন পেছন চলে আসোনি তো?
অহিন বলে তা ঠিক বলতে পারছিনা।তবে এটা বলতে পারি যে কেউ ইচ্ছে করে বাঘের খোয়াড়ে ঢুকে না।অহিন হাসে সুন্দর সেই হাসি।যে হাসিতে চোখ হাসে!
রাফিন বলে এখন আর যেনো কোন ঝগড়া না দেখি তোমাদের। বন্ধু হয়ে যাও দুজন।
অহিন বলে তাহলে এই মেয়ে প্রতিদিন আমার উপর নানা যন্ত্রের প্রয়োগ ঘটাবে।দরকার নাই বাপু।শেষে আমার বিয়ে হবে না!
রিফান আরিশা হাসে।আরিশা বুঝে অহিন আরিশাকে দুষ্টুমি করে এসব কথা বলে।
সেই থেকে নতুন এক পথ চলা শুরু হয় তিনজনের। এক শক্ত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে জড়িয়ে যায় তারা।একই সাথে কলেজে আসা যাওয়া। সারাক্ষণ একে অপরকে টেক্সট করা।সব মিলিয়ে সুন্দর একটা সম্পর্ক হয় তাদের।
রিফান তখন আরিশাকে ভালবাসার কথা বলার সুযোগ খুজে।কিন্ত সাহস করে উঠতে পারে না।তাই আর বলা হয়ে ওঠে না।
///////////////////////////////////////////////////////////////////
বর্তমান
আরিশার বাবা মা এসেছে আরিশাকে দেখতে।অহিন তার সব কিছু দিয়ে চেষ্টা করছে রিফানকে খুজতে।কিন্তু কোন খোঁজ পাচ্ছেই না।তারপর ও অহিন দমে নেই।
অফিসের কাজে ব্যাস্ত থাকতে হয়।আরিশা আগের থেকে কিছুটা স্বাভাবিক আচরণ করে অহিনের পরিবারের সবার সাথে।
আরিশার বাবা মা আরিশার ঘরে এসে বসে,আরিশার বাবা আরিশার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে মারে কিছু কথা বলবো যদি তুই রাখিস?
আরিশা বলে, অবশ্যই বলো বাবা?
আরিশার বাবা বলেন,মা রে আমরা তোকে সুখি দেখতে চাই।তাই রিফানের সাথে তোর বিয়ে ঠিক করেছিলাম।কিন্তু ভাগ্য তোকে এখানে নিয়ে এসেছে।তোর উচিত এই পরিবারকে আপন করে নেয়া।অহিনকে আপন করে নেয়া।আমি জানি এটা তোর জন্য কঠিন তবে এটাও জানি অসম্ভব কিছু নয়।কারণ মানুষ চাইলে সব পারে।
“তুই যাকে ভালবাসিস তাকে পাওয়ার মাঝে অবশ্যই সুখ আছে।কিন্তু যে তোকে ভালবাসে তার চেয়ে সুখি তোকে কেউ করতে পারবে না।”
যে নেই তার জন্য অপেক্ষা করে কি হবে?অহিনের সাথে তুই ভালো থাকবি।তুই একটু চেষ্টা করে দেখ মা আমি বাবা হয়ে তোর কাছে অনুরোধ করছি।
জীবন কোন খেলা নারে মা!সমাজ সংসার বলে একটা কথা আছে।মানুষ তোকে ভালো চোখে দেখবে না।বরং তুই এখানে মানিয়ে নেয়।এতে সবার ভালো।
আরিশা বলে আমি রিফানকে ভালবাসি বাবা।তাহলে কি করে অহিনকে ঠকাতে পারি?
আরিশার মা বলেন,অহিন তোর বন্ধু তোর জীবনের কিছুই তার অজানা নয়।তাই একে ঠকানো বলে না।যদি অহিন কিছু না জানতো তবে সেটাকে ঠকানো বলা হতো!
তাই আমরা চাই তুই একবার চেষ্টা করে দেখ মা।
আরিশা কিছুই বলতে পারে না।উত্তরে শুধু কাঁদে।
কি করে একজনকে ভালবেসে, অন্যজনের সাথে সংসার করা যায়?এটা আদৌ কি উচিত হবে?
আসলেই কি সব এতোটা সোজা।ভালবাসা কি এতো সহজে পরিবর্তন করা যায়?
আর অহিন সে কি মেনে নিবে আরিশাকে?যেখানে সে জানে আরিশা তাকে ভালবাসে না।
আরিশা মনে মনে ঠিক করে নেয় অহিনের সাথে এই নিয়ে কথা বলবে।
জীবন কোথায় নিয়ে যাবে তিন বন্ধুকে।কে কাকে পাবে?
এমন না হয় যে কেউই কাউকে না পায়।
এক বুক যন্ত্রনা নিয়ে বাঁচতে হয় সবাইকে!
#অন্তরালে_ভালবাসা
৭
#প্রজ্ঞা_জামান_দৃঢ়তা_হঠাৎ_বৃষ্টি
আরিশার বাবা মা চলে যাওয়ার পর আরিশা দরজা বন্ধ করে ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ারের নিচে বসে অনেকক্ষণ ধরে কান্না করে।এই পৃথিবীটাই এখন অসহ্য লাগে তার।রাফিনের ভালবাসা কি করে ভুলে যাবে আরিশা।কি করেই বা নতুন করে অন্যকাউকে মেনে নিবে!জীবনের এই মুহূর্তে এসে আরিশার মনে হলো এখন বুঝি মরে গেলেই ভালো হয়।মরে গেলেই সব ঠিক হয়ে যেতো।
মনে পড়ে যায় আরিশার রাফিনের সাথে কাটানো দিনগুলো যেদিন গুলো ছিলো তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিন! রাফিন প্রথম যেদিন ভালবাসার কথা বলে আরিশা কিছু না বলে চলে আসে।
রাফিন অনেক দিন ধরে আরিশাকে বলবে বলবে করে বলতে পারে না।কারণ ততদিনে তাদের বন্ধুত্বটা অনেকখানি গভীর হয়ে গেছে।কিন্তু রাফিন আরিশাকে যে খুব ভালবেসে ফেলেছে সেটাও সে এড়িয়ে যেতে পারছেনা।
ভালবেসে ভালবাসার মানুষকে তা না বলতে পারার যে কি কষ্ট সেটা শুধু ভুক্তভোগীরাই জানে।আর সেই মানুষটি যদি সবসময় চোখের সামনে থাকে তাহলে তো আরও নয়।রাফিনের মনে প্রানে তখন শুধু আরিশা। আরিশার পাগলামি। রাগ জেদ সব কেনো যেনো ভালো লাগে রাফিনের।কলেজ থেকে বাড়িতে এসেও সারাক্ষণ আরিশার সাথে কথা বলতে চাইতো।চারপাশে শুধু ছিলো আরিশা,আরিশা, আর আরিশা!
এই অদ্ভুত এক রোগে আক্রান্ত হয়ে যায় রাফিন।নিজেকে সামলাতে তার কষ্ট হয়ে যায়।ভালবাসলে বুঝি এমনই হয়!
অন্যদিকে অহিন ও ততদিনে বুঝতে পারে তার মনের অনুভূতি। এমন এক অনুভূতির সাথে সে পরিচিত নয়।আগে আরিশার দেয়া ক্ষত গুলো সব তার কাছে বিরক্ত ছিলো। আরিশাকে চরম পর্যায়ে জেদি মেয়ে ভাবতো।কিন্তু এখন মনে হয় এই জেদ টাই কেনো যেন ভালো লাগে।বরং বন্ধু হওয়ার পরে যেভাবে কমে গেছে আরিশার জেদ সেটা মিস করতে শুরু করে অহিন।
আজকাল আরিশার প্রথম দিকের করা কাজগুলো সারাক্ষণ ভেবে বেড়ায় অহিন।ভাবে আর আনমনে নিজে নিজেই হেসে উঠে! অজান্তেই চোখ যায় হাতে হওয়া দাগ গুলোর দিকে।পরম যত্নে হাত বুলায় সে দাগে।মাঝে মাঝে বুকের সাথে লেপ্টে ধরে চোখ বন্ধ করে আরিশাকে অনুভব করার চেষ্টা করে অহিন।
সবসময় একটা পেন্সিল হাতে নিয়ে চোখের সামনে ধরে ঘুরাতে থাকে অহিন!এক সময়ের বিরক্তিকর পেন্সিল এখন অসম্ভব ভালো লাগে!কি অদ্ভুত মানুষের জীবন! কি অদ্ভুত প্রেম!যা মানুষের ভালো লাগার কথা না।প্রেমে পড়লে তাও ভালো লাগে!
এই রোগ কঠিন রোগ!যা ডক্তার সারাতে পারে না!
পৃথিবীর সকল মানুষ কোন না কোনভাবেই এই রোগে আক্রান্ত!
এই দুই বন্ধু কখনও কি জানতো জীবন কত কঠিনভাবে তাদের সামনে দাড় করাবে!
রাফিন অহিনকে সব কথা বললেও আরিশার কথা বলতে পারে না।বলতে চায়নি এমন না। বলতে গিয়েও কোন এক বাধার জন্য বলতে পারে না।
কিন্তু অহিন ঠিকই রাফিনকে বলে দেয় তার ভালবাসার কথা।
অহিন,রাফিন কলেজে এসে ক্যাম্পাসে বসে আছে।আরিশা তখনও আসেনি কলেজে।কল দিয়েছে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবে।
অহিন তখন কোন রকম সংকোচ ছাড়া রাফিনকে বলে “”দোস্ত আই থিংক আই এম ইন লাভ ”
রাফিন অবাক আর খুশী একসাথেই হয়।রাফিন বলে দোস্ত সত্যি বলতেছিস!এতোদিন কেনো বললি না?
অহিন বলে আরে আমি সিউর ছিলাম না দোস্ত। প্রথম দিকে ভেবেছি এটা শুধু ভালো লাগা।এখন বুঝতে পারলাম ভালো লাগা থেকে আরও বেশী কিছু!
অহিন বলে তো বল সেই লাকি গার্লকে?যে আমার বন্ধুর মন কেড়েছে?
অহিন বলতে যাবে এমন সময় আরিশা এসে পেছন থেকে পেন্সিল দিয়ে গুতো দেয় অহিনকে।
অহিন আহ বলে শব্দ করে।তারপর মৃদু হাসে!এই হাসিতে প্রান আছে!কিছু একটা আলাদা আছে যা সহজেই বুঝা যায়!
আরিশাকে দেখে আর অহিন বলতে পারেনি সেদিন তার ভালবাসার মানুষের নাম।হয়তো এটাই তাদের ভাগ্য ছিলো! নয়তো সব বলতে পারলো শুধু এটা কেনো পারলো না!
রিফান আরিশাকে বলতে যাবে অহিন প্রেমে পড়ছে।কিন্তু অহিন ইশারায় রাফিনকে বারন করে দেয়।ইশারায় বুঝায় পরে বলবে।
রাফিন সেদিন আর কিছু বলেনি আরিশাকে।
ভাগ্যের পরিহাসে তাদের জন্য অন্য কিছু লেখা ছিলো তাই আর সেদিন এই বিষয় নিয়ে কোন কথা বলেনি। অহিন সেদিন বাসায় গিয়ে ঠিক করে আরিশাকে ভালবাসার কথা বলে দিবে আগামীকাল। মনে মনে অনেক কথা সাজায় অহিন আরিশাকে বলার জন্যে।কেনো যেন এসব ভাবতেই নার্ভাস ফিল করে অহিন।তাই কয়েকবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে প্রাক্টিস করে অহিন কিভাবে আরিশাকে বলবে।এসব ভেবেই হাসে নিজে নিজে অহিন।
অন্যদিকে রাফিনও ঠিক করে ফেলে আরিশাকে যেভাবেই হোক কাল কলেজে গিয়েই বলবে ভালবাসার কথা কিন্তু কিভাবে বলবে?মনে অনেক প্রশ্ন আসে আরিশা কিভাবে নিবে এই বিষয়টা।
রাফিন অনেক ভেবে একটা চিঠি লিখে নেয়।সেই চিঠিতে তার মনের সব কথা লিখে। আরিশাকে কতদিন ধরে ভালবাসে কি ভালো লাগে সব কিছু লিখে।রাফিনের একটা বড় গুন হচ্ছে গুছিয়ে বলা আর গুছিয়ে লেখা।তাই সেই চিঠিটা এতোটাই সুন্দর করে লেখা হয়েছিলো যে কোন মেয়ে প্রেমে পড়তে বাধ্য!
এদিকে অহিন সারারাত ঘুমাতে পারেনি নানা রকম চিন্তা করে।কালকের দিনটি কেমন হবে?আরিশা কি ভালবাসবে তাকে!
অদ্ভুত ভাবেএ সেদিন ভোর রাতে অহিনের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে।
সাজেদা বেগম ছেলের এমন জ্বর দেখে ভয় পেয়ে যান।অহিনের খুব কষ্ট হতে থাকে।জ্বরের মাত্রা এতোটাই বেড়েছিলো যে অহিনের সমস্ত শরীর লাল বর্ন ধারণ করলো। সকাল হতেই দেখা গেলো অহিনের পুরো শরীরে ফক্স উঠেছে।
জ্বর ফক্সের অত্যাচারে অহিনের আরিশাকে আর কিছুই বলা হয়ে ওঠে না।
অহিন তখন খুবই অসুস্থ হয়ে পড়ে।তারপর ও অহিনের ম্নে প্রানে আরিশা মিশে গেছে।
সেদিন কলেজে যেতে পারলো না অহিন।কিন্তু রাফিন আরিশা গেলো।আর রাফিন সেদিন আরিশার ব্যাগে চিঠিটা ঢুকিয়ে দেয়।তারপর ভাবতে থাকে আরিশা কি বলবে।অদ্ভুত ব্যাপার হলো আরিশা চিঠিটা পড়ে কলেজ থেকে বাড়ি চলে যায় রাফিনকে কিছু না বলে।রাফিন ভয়ে শেষ হয়ে যায়।আরিশাক কি তবে রাগ করলো? তবে কি এবার বন্ধুত্ব গুলো ভেঙে যাবে।
আরিশা বাড়ি গিয়ে কয়েকবার চিঠিটি পড়ে।এই যুগে কেউ কাউকে চিঠি দিয়ে ভালবাসার প্রস্তাব দেয়।এটা ভাবতেই কেমন ভালো লাগে আরিশার কাছে।বরাবরই নতুন কিছু আরিশার কাছে পছন্দ। আরিশার এমন প্রস্তাব খুব ভালো লাগে।ভালবাসা কি খুব ভালোভাবে বুঝতে না পারলে আরিশার কেনো যেনো সব ভালো লাগতে শুরু করে।
তাই এই যুগে এই উপায়ে ভালবাসার প্রস্তাব গ্রহণ করে নেয় আরিশা।
তারপর থেকে শুরু হয় তাদের প্রেম কাহানী!রাফিন আর আরিশা দুজনে সারাক্ষণ কল চ্যাট নিয়ে ব্যাস্ত থাকে।দুজনের সম্পর্ক আস্তে আস্তে গাঢ় হয়।
দিন বাড়তে বাড়তে আরিশা রাফিনের উপর নির্ভর হয়ে ওঠে।এতোটাই নির্ভর যে রাফিন ছাড়া কিছুই বুঝে না আরিশা।
অন্যদিকে অহিনের ভাগ্য তার সহায় হয়নি বলে বলা হয়ে ওঠে না তার ভালবাসার কথা।১৫দিন পরে অহিন সুস্থ হয়।রাফিনের সাথে আরিশা গিয়ে অহিনকে দেখে আসে।কিন্তু রাফিন প্রতিদিনই যায় অহিনকে দেখতে।অহিনকে আরিশার কথা কিছুই বলে না। সুস্থ হয়ে গেলে বলবে বলে।
অহিন সুস্থ হয়ে যেদিন কলেজে আসে সেদিন মনে অনেক আশা নিয়ে আসে আজ আরিশাকে বলবে তার ভালবাসার কথা।আরিশাকে বলতে না পারার কষ্ট থেকে মুক্তি পাবে।
তখন রাফিন কল দিয়ে অহিনকে বলে,তুই তাড়াতাড়ি রেস্টুরেন্টে চলে আয়।অহিন রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখে আরিশা রাফিনের হাত ধরে বসে আছে। রাফিনের কাঁধে আরিশার মাথা।এই দৃশ্য দেখেই অহিনের বুকের ভেতর ভয়ের সৃষ্টি করে। ধীর পায়ে অহিন এগিয়ে যায় বন্ধুদের দিকে।মন কোন এক আশংকায় অশান্ত হয়ে যায়।অহিনের পুরো শরীর ঘামতে থাকে।কেমন যেনো নার্ভাস হয়ে যায়।মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়।তারপর ও যথা সসম্ভব হাসি রেখে মুখে ভেতরে যায়।
আরিশা বলে তোর কি অবস্থা অহিন? এখন শরীর কেমন?
হুম ভালো।অহিন উত্তর দেয়।
আরিশা আবার বলে কেমন যেনো দেখাচ্ছে তোকে। কোন সমস্যা?
আরে না কি সমস্যা হবে।অনেকদিন অসুস্থ থাকায় তাই হয়তো এমন দেখাচ্ছে।
রাফিন বলে দোস্ত তোরে না বলে আমরা একটা কাজ করে ফেলছি।দোস্ত প্লিজ মাফ করে দিস?
অহিনের মনের শংকা আরও বাড়তে থাকে।হাত দিয়ে বারবার মুখের ঘাম মুছে। অহিন বলে কি হয়েছে বল না?
রাফিন বলতে গিয়েও বলতে পারে না।আরিশা বলে অহিন আমাদের বন্ধু তুই তাকে বলতে এতো ভয় কেনো পাচ্ছিস বলতো?
আরিশা খুব দ্রুত বলে, আমরা প্রেম করছি মামা!
অহিনের কথাটা বুঝতে সময় লাগে।এই কথা কানে যেতেই মুখের রঙ পালটে যায়।কেমন বিষন্ন লাগে অহিনকে।অহিন হাসার ভান করে বলে সত্যি দোস্ত কনগ্রেচুলেশন দোস্ত!অহিন রাফিনকে জড়িয়ে ধরে বলে।আজ অহিনের চোখের পানি বাধা মানছে না।মনে হচ্ছে বুকের ভেতরে কেউ ছুরি চালিয়ে দিয়েছে।সেই ছুরি বুকের ভেতরে রেখে ঘুরাচ্ছে।আর সেই ছুরির আঘাতে মনের ভেতর অসহ্য যন্ত্রনা শুরু হয়।মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ কুচিকুচি করছে।অহিন নিজের কান্না আড়াল করতে যত দ্রুত সম্ভব কাজ আছে বলে বেড়িয়ে যায় রেস্টুরেন্ট থেকে।আরিশা রাফিন একটু অবাক হয় অহিনের এমন আচরণ দেখে।
অহিন তখন বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে রাস্তায় হাটতে থাকে।না চাইতেও চোখে বারবার পানি চলে আসছে।হাতের উল্টো পিঠে যতদ্রুত সম্ভব চোখের পানি মুছে।
বাসায় পৌঁছে অহিন দরজা বন্ধ করে দেয়।পাগলের মত কাঁদতে থাকে।জীবনে কখনও অহিন এতো কান্না করেনি।প্রয়োজনের আগে জীবনে সব পেয়েছে অহিন।তাই কোনদিন না পাওয়ার যন্ত্রণায় কাঁদতে হয় নি তাকে।কিন্তু আজ এতোটাই কান্না করছে যে সারাজীবনের কান্না পুষিয়ে যাচ্ছে।আজ একদিনের জন্য না এই কান্না সে ভালবাসার দামে কিনে নিয়েছে সারাজীবনের জন্য।
জীবন এই খেলাটা না খেললেও পারতো। আরিশা যদি অন্যকাউকে ভালবাসতো সেতো অহিনের সামনে থাকতো না।কিন্তু রাফিনকে ভালবাসে মানে তাদের প্রতিটি ভালবাসার সাক্ষী হতে হবে অহিনকে।আজ থেকে শুরু হলো বন্ধু হওয়ার অপরাধের শাস্তি।
এখন ওদের থেকে দূরে সরতে ও পারবে না।তাহলে বুঝে যাবে তারা।তাই অহিন ঠিক করে ভালবাসা শুধু পাওয়ায় হয় না। দেয়ায় ও হয়।ভালবাসা মানেই তো ত্যাগ আজ না হয় বন্ধুত্বের জন্য ভালবাসা ত্যাগ করে দিলো সে।সারাজীবন রাফিনের সব বিপদের থেকেছে অহিন।আজ না হয় তার ভালবাসাটুকু দান করে দিলো। আরিশা যাকে ভালবাসে তার সাথে সুখি হোক।
ভালো থাকুক ভালবাসা!
ভালো থাকুক বন্ধুত্ব!
চলবে,,,
চলবে,,,