#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৫
অদ্রিতার কথা শুনে রাগে আরিয়ানের চোখ – মুখ লাল হয়ে গেছে। সে অদ্রিতার দুইবাহু জোরে চেপে ধরে রেগেই বলে,এখন তোর থেকে আমাকে ঠিক ভুল শিখতে হবে নাকি।কি মনে করিস্ তুই নিজেকে? কোন সাহসে তুই আমাকে এতগুলো কথা শুনালি।তোর সাহস কি করে হলো রাইশাকে নিয়ে বাজে কথা বলার?রক্ষিতা সে হতে যাবে কেন?রক্ষিতা যদি কেউ হয় তবে সেটা হবি তুই। নিলজ্জ আর বেহায়া তো তুই, তা না হলে তোকে এত অপমান করার পরেও কি এখানে পরে থাকতি নাকি।তোকে তো কোন দিনই আমি আমার স্ত্রী হিসেবে মেনে নেইনি।তবে কিসের পরকিয়ার কথা বলছিস্ তুই?কান্না বন্ধ করে আমার কথার উত্তর দে,কথা বল!
অদ্রিতার দুই চোখ দিয়ে অঝোরে পানি পড়ছে।সে কোন কথা বলতে পারছে না।অদ্রিতাকে এভাবে কান্না করতে দেখে সে আবার বললো,কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না নাকি।আমার সামনে এসব ন্যাকা কান্না করে কোন লাভ নেই। কান্না বন্ধ কর বলছি।অদ্রিতা কান্না থামায় না,সে কান্না করতে করতেই বলে আপনার সাথে ইসলামিক ভাবে সব নিয়ম কানুন মেনে কবুল বলে আমার বিয়ে হয়েছে।আমি আপনার স্ত্রী আর আপনি বলছেন আপনি আমাকে মেনে নেন নি।ওই দিন আপনি নিজ থেকে আমাকে আপনার কাছে টেনে নিয়েছেন আর এখন বলছেন আমাকে মেনে নেননি। তবে কেন আমাকে মিথ্যা স্বপ্ন দেখালেন?আমি কালো তাই বলে আমাকে আপনার পছন্দ না তবে আমাকে বিয়েটা কেন করতে গেলেন?আমাকে বিয়েটা না করলেই পারতেন। ওই নিলজ্জ, বেহায়া আর কারেক্টারনেস মেয়েকে বিয়ে করলেই পারতেন।এভাবে আমার জীবন নিয়ে কেনো খেললেন।আমার জীবন নিয়ে ছেলেখেলা না করলেই তো পারতেন।কেন দিনের পর দিন আমাকে এভাবে কষ্ট দিলেন? এভাবে আমার জীবন নষ্ট না করে ওই কারেক্টারনেস মেয়েকে আগেই বিয়ে করে নিতেন,তবে তো আমার জীবনটা এভাবে নষ্ট হতো না। না আমাকে এততা কষ্ট, অপমান আর অবহেলা সহ্য করতে হতো।
অদ্রিতা আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান তার গালে জোরে চর মারে।হঠাৎ চর মারায় সে তাল সামলাতে না পেরে নিচে পরে যায়।তার ঠোঁট কেটে রক্ত পরতে থাকে কিন্তু সেদিকে আরিয়ানের বিন্দু পরিমান খেয়াল নেই।অদ্রিতা নিচে পরে গেলে সে তার চুলে ধরে তাকে আবার টেনে তুলে রাগে চিল্লিয়েই বলে,
তোর সাহস তো কম নয় তুই আমার ভালোবাসা সম্পর্কে এমন কথা বলছিস্।কখনো নিজের সাথে ওকে তুলনা করতে যাবি না।তোর কোন যোগ্যতা নেই আমার বউ হওয়ার বুঝলি।আর ওই দিন তোর সাথে আমি যা করেছি সব ঘোরের মাঝে করেছি।আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল এটা।কি করে যে নিজের ওপর থেকে কন্টোল হারিয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারিনি।তোর মতো মেয়েকে ভালোবেসে কাছে টেনে নিবো তা ভাবলি কি করে।আর একদিন ঘোরে মাথায় তোকে কাছে টেনে নিয়েছি বলে ভুলেও এটা ভাবতে যাবি না আমি সারাজীবন তোকে বয়ে বেড়াবো।তোর মতো মেয়েকে আমি স্ত্রী অধিকার দিবো।ওই দিনের জন্য এখনো আমার আফসোস হয়।কি করে তোর মতো মেয়েকে নিজের কাছে টেনে নিয়েছি তা ভাবতেই নিজের উপর ঘৃণা হয়।তোর থেকে আমি মুক্তি চাই।তোর সাথে সংসার করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।তোকে ডিভোর্স দিয়ে আমি রাইশাকে বিয়ে করবো।শুনছিস তুই তোকে আমি ডিভোর্স দিবো।সে আর কিছু বলে না।অদ্রিতাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়,,,,,,
ওনার মুখ থেকে এই “ডিভোর্স” শব্দটি শুনে আমি স্তব্ধ হয়ে গেছি। আমার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না।আমার মাথায় শুধু একটাই কথা ঘুরপাক খাচ্ছে তা হলো “ডিভোর্স “।”ডিভোর্স ” এই একটি শব্দ আমাকে ভেতর থেকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে।এই শব্দটা শুনা মাত্রই আমার হাত- পা কাঁপতে লাগলো। আমার চোখ দিয়ে অঝোড়ে পানি পড়ছে।
আমার মনে ভিতরে বিভিন্ন কথা ঘুরপাক খাচ্ছে। এখন আমি কি করবো?কোন সম্পর্ক ভেঙে গেলে দোষ যারই হোক না কেন কথা সব সময় মেয়েদেরকেই কথা শুনতে হয়।এমন মনে করা হয় সম্পর্ক ভাঙার পেছনে সব দোষ মেয়েদের থাকে।ছেলেদের কোন দোষ সেখানে থাকে না।সমাজের মানুষ আমাকে নানা কথা বলবে।
বলবে এমনেতেই কালো তার উপরে ডিভোর্সী এমন মেয়েকে কে আবার দ্বিতীয় বার বিয়ে করবে।সারাজীবন বাবা আর ভাইয়ের গাড়ের বোঝা হয়ে থাকবে।নিশ্চয়ই মেয়ের কোন দোষ আছে নাহলে বিয়ের কয়েক মাস না যেতেই ডিভোর্স দিবে কেন।সবাই আমাকে দেখে ছিঃ ছিঃ করবে।কোন দোষ না করেও আমাকে এতকিছু সহ্য করতে হবে।তাছাড়া আমার ছোট বোনটার কি হবে?যদি জানে বড় বোন ডিভোর্সী তবে তার জন্য ভালো বিয়ের ঘর আসবে না।সে আর কিছু ভাবতে পারছে না।
“ডিভোর্স” এই একটা শুনে সে আরিয়ানের করা সব ভুল গুলো ভুলে গেছে।সে চাইছে সবকিছু আবার ঠিক করতে।একটা সম্পর্ক ভেঙে ফেলা অনেক সহজ কিন্তু গড়া খুব কঠিন।সে চাচ্ছে না কালেমা পড়ে কবুল বলে, বিয়ের মতো পবিত্র একটা সম্পর্ক এত সহজে ভেঙে যাক। তাই সে মনস্থির করে,যাই হোক সে একবার শেষ চেষ্টা করবেই।এত সহজে একটি সম্পর্ক ভেঙতে সে দিবে না।
আরিয়ান ওয়াশরুম থেকে বের হতেই অদ্রিতা সাথে সাথে তার কাছে যায়।আরিয়ানের দুই পা জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,
আপনি আমাকে ডিভোর্স দিলে আমার কি হবে।আমি তো মরেই যাবো। আমার মা- বাবা সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না।আমার ছোট বোনটার কি হবে।প্লিজ আপনি আমাকে এভাবে শাস্তি দিবেন না।আপনি যাকে খুশি বিয়ে করেন আমি আর কিছু বলবো না। আর কখনো আপনার সামনে আসবো না। আপনার বাড়িতে চাকরের মতো থাকবো তবুও প্লিজ আমাকে ডিভোর্স দিয়েন না।আজ থেকে আপনি যা বলবেন আমি তাই করবো।দরকার হলে আমি আপনার দাসীর মতো থাকবো তবুও প্লিজ আপনি আমাকে ডিভোর্স দিয়েন না।অদ্রিতা আর কোন কথা বলতে পারছে না।কান্নার জন্য সব কথা যেন গলার ভিতরে ধলা পাকিয়ে আছে। সে আর কিছু বলছে না শুধু আরিয়ানের পা ধরে অঝোরে কান্না করে যাচ্ছে,,,,,,,
অদ্রিতার কথাগুলো শুনে আরিয়ানের তার প্রতি বিন্দু পরিমাণ মায়া হলো না।উল্টো সে,,,,,,
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৬
অদ্রিতার কথাগুলো শুনে আরিয়ানের তার প্রতি বিন্দু পরিমাণ মায়া হলো না।উল্টো সে তার পা থেকে অদ্রিতাকে ছাড়িয়ে তাকে ধাক্কা মারে যার ফলে অদ্রিতার মাথা গিয়ে সুফার সাথে বারি খায়। তার মাথা ফেঁটে রক্ত পরতে থাকে।অদ্রিতা ব্যাথায় কুঁকড়িয়ে উঠে কিন্তু আরিয়ানের সেদিকে কোন খেয়াল নেই সে রাগে বলতে থাকে।তোকে কতবার বলছি আমাকে স্পর্শ করবি না, নিলজ্জ-বেহায়া মেয়ে কোথাকার। এক কথা তোর কানে যায় না।আর ভুলেও কোনদিন আমাকে স্পর্শ করবি না।তবে তার পরিনতি আরও খারাপ হবে।তোকে তো আমি ডিভোর্স দিবোই। তোকে যদি আমি ডিভোর্সটা না দেই তবে রাইশাকে কি করে আমি নিজের করে পাবো?কি করে তাকে আমি বিয়ে করবো? আর আমি রাইশাকে ভালোবাসি তাই তোকে ডিভোর্স দিয়ে তাকে আমি তাকে বিয়ে করবো।
সকালে উঠে যেন তোর এই অপয়া মুখ আমি আর না দেখি।যদি সামান্য পরিমাণ আত্মসম্মান বোধ থাকে তবে তুই তোর এই মুখ আমাকে আর কখনো দেখাবি না। আর ভালোয় ভালোয় ডিভোর্স পেপারে সাইন করে দিবি।
আরিয়ান অদ্রিতার দিকে না তাকিয়ে সোজা খাটে গিয়ে শুয়ে পরে,,,,,
অদ্রিতা আর কিছু বলে না।সে সুফার সাথে হেলান দিয়ে বসে থাকে।এখন জানুয়ারি মাস।প্রচন্ড শীত পরছে।অদ্রিতা ফ্লোরের উপরের বসে আছে। তার শরীর থরথর করে কাঁপছে।তার মাথা থেকে রক্ত পরছে কিন্তু সেদিকে তার বিন্দু পরিমাণ খেয়ালও নেই।তার শরীরের এই ব্যাথা বা ক্ষতগুলো তার মনের ক্ষতের তুলনায় কিছুই না।শরীরের বাহিরের ক্ষতগুলো তো সময়ে সাথে সাথে ভরে যাবে কিন্তু মনের ক্ষতগুলো তা কি কখনো ভরবে?তা তো কখনোই ঠিক হবে না।
এখন আমার কি করা উচিত আমার তা জানা নেই।এতদিন ওনার করা অপমান,অত্যাচার, অবহেলা এই সব কিছু মেনে নিয়েছি শুধু মনের ভিতর এইটুকু আশা ছিল আমার ভালোবাসা আর বিশ্বাস দিয়ে একদিন ঠিক ওনাকে আমি নিজের করে নেব।ওনী একদিন ঠিকই আমাকে ভালোবাসবে,একদিন সে আমার গায়ের রঙের জন্য আমাকে ঘৃণা করবে না বরং আমি যেমন সেভাবেই আমাকে মেনে নিবে কিন্তু আজ আমার মনে বিন্দু পরিমাণ আশা নেই। এখন সে বুঝতে পারছে আরিয়ানের মনে কখনো তার জন্য বিন্দু পরিমাণ ভালোবাসা জন্ম নিবে না।এখন সে কোথায় যাবে কিছুই বুঝছে না।ওনী তো বলেই দিয়েছে আমার এই অপয়া মুখ যাতে আর কখনো ওনাকে না দেখাই কিন্তু আমি কোথায় যাবো?আমার কি হবে তা একবারের জন্যও ভাবলেন না। মা- বাবার কাছে যাবো কিন্তু তারা কিছুতেই আমাকে এই অবস্থায় দেখে সহ্য করতে পারবে না।কত কষ্ট করে,কত আশা নিয়ে তারা আমার বিয়ে দিয়েছে।বিয়ের কয়েক মাস পরেই ডিভোর্সি হয়ে তাদের মাথার বোঝা হয়ে তাদের বাড়িতে যাবো এটা তারা কি করে মেনে নিবেন।আমার এই পরিনতির জন্য তারা নিজেদেরকে দোষারুপ করবে।অন্য কোথাও যাওয়ার কোন জায়গা নেই। রাস্তায় শিয়াল – কুকুরের অভাব নেই তারা আমাকে খুবলে খুবলে খাবে। তবে কি আত্নহত্যা করবো।হ্যা তাই করবো,এছাড়া তো আমার হাতে অন্য কোন অপশন নেই।আমি উঠে ফাস্ট এইড বক্স থেকে ব্লেড বের করে হাত কাটার চেষ্টা করবো তখন আমি আমার নিজের মাঝে ফিরে আসি।ছিঃ,,,, ছিঃ এ আমি কি করতে যাচ্ছিলাম।আত্নহত্যা করা কোন সমস্যার সমাধান হতে পারে না।মৃত্যুর পরে আমি কষ্টে থাকতে চাই না।আমাকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।সারাটা রাত সে দু চোখের পাতা এক করতে পারে নি।তার চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে কিন্তু আরিয়ান নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে,,,,,
~~~অন্যদিকে,,,,,ইন লন্ডন,,,,,,,,
আমার এমন অস্থির লাগছে কেন?কিছুতেই নিজের মনকে শান্ত করতে পারছি না।আমার এমন কেন মনে হচ্ছে আমার খুব কাছের কেউ কোন কষ্টে আছে বা হয়তো কোন পবলেমের মাঝে আছে কিন্তু আমার খুব কাছের বলে শুধু দুইজন মানুষ আছে এক আমার বাবা আর এক অদ্রিতা।বাবা তো সুস্থ আছে রাতেই তো বাবার সাথে কথা হয়েছে। তবে কি অদ্রিতা কোন পবলেমের মাঝে আছে। আমার কোন বারবার মনে হচ্ছে অদ্রিতা কষ্টে আছে কিন্তু সে তো বলেছিল আরিয়ানের সাথে সে অনেক ভালো আছে তবে আমার এমন কেন মনে হচ্ছে?আমি কি অদ্রিতাকে ফোন দিবো?এখন তো বাংলাদেশে মাঝ রাত। এত রাতে কি তাকে ফোন দেওয়া আমার ঠিক হবে?কিন্তু আমার অস্থিরতা তো কিছুতেই কমছে না,সকাল হওয়া পর্যন্ত আমি ওয়েট করতে পারবো না।একবার কল দিয়েই দেখি। সে আর বেশি কিছু না ভেবে অদ্রিতাকে কল দেয়।কল দিতেই দেখে অদ্রিতার ফোন সুইচঅফ। সে আরও ২-৩ বার কল দেয় বারবার একই কথা বলে।এখন তার অস্থিরতা আরও অনেক বেড়ে যায় একবার ভাবে আরিয়ানকে কল দিবে কিন্তু দেয় না।এতরাতে আরিয়ানকে কল দেওয়া ঠিক হবে না।তাছাড়া এত রাতে কল দিয়ে অদ্রিতার কথা জিজ্ঞেস করলে সে আবার অন্যকিছু ভাবতে পারে। আমি চাই না আমার জন্য তার বিবাহিত জীবনে কোন পবলেম হউক।
এখন আমি কি করবো কিছই বুঝছি না।আমার বারবার একই কথা মনে হচ্ছে অদ্রিতা কোন পবলেমের মাঝে আছে এবং এই সময় আমাকে তার প্রয়োজন।যদিও এটা যাস্ট আমার ফিলিং তবুও অদ্রিতাকে নিজের চোখে ভালো আছে না দেখলে কিছুতেই আমার অস্থিরতা কমবে না। আমি কালই দেশে চলে যাবো। সে একজনকে কল দেয় সাথে সাথেই সে ফোন রিসিভ করে,,,,,
আহিল তার পি.এ ফোন রিসিভ করে বলে,”হ্যালো স্যার।এই সময় কল দিলেন,কোন দরকার আছে নিশ্চয়ই?
নিলয় ব্যস্ত হয়ে বলে,” জ্বি,আমি সকালের ফ্লাইটেই বাংলাদেশে চলে আসতে চাই।আমার জন্য ইমিডিয়েট রিটার্ন টিকেট বুক করেন।”
কিন্তু স্যার, আপনার প্রোজেক্টের কাজ তো এখনো শেষ হয়নি।আরও ৩-৪ দিন লাগবে।প্রোজেক্টের কাজ কমপ্লিট না করলে তো আপনার অনেক লস হবে।তাছাড়া আর ৫ দিন পরে তো আপনার জন্য ফ্লাইটেই টিকেট বুক করাই আছে।
নিলয় কিছুটা রেগে বলে, আপনার মতামত আমি জানতে চাইনি।এই সব কিছু আমার জানা আছে।আপনাকে বলা হয়েছে আমার জন্য ফ্লাইটের টিকেট বুক করতে সো তাই করেন।আমি অন্য কিছু শুনতে চাই না।
আহিল নম্র স্বরে বলে,”সরি স্যার,আমি এখনি করছি। টিকেট আপনার রুমে পৌঁছে যাবে।”
নিলয় আর কিছু বলে না ফোন কেটে দেয়।মনে মনে বলে যাস্ট আর কয়েকটা ঘন্টা তার পরেই আমি তোমার কাছে পৌঁছে যাবো।শুধু একবারের জন্য এটা দেখতে তুমি ভালো আছো কি,,,না।
.#গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৭
নিলয় মনে মনে বলে,যাস্ট আর কয়েকটা ঘন্টা তার পরেই আমি তোমার কাছে পৌঁছে যাবো। শুধু একবারের জন্য এটা দেখতে তুমি ভালো আছো কি না।
তুমি ভালো থাকো এর থেকে বেশি আমি আর কিছু চাই না।
সারারাত অদ্রিতা দুই চোখের পাতা এক করতে পারেনি।কান্না করতে করতে মনে হয় তার চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে।তার কানে শুধু আরিয়ানের বলা কথাগুলো বাজছে।অনেক অপমান- অত্যাচার সহ্য করেছি আর নয়।আমি আর এখানে থাকবো না। আমি এখনি এখান থেকে চলে যাবো।সে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়, নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে শেষ বারের মতো আরিয়ানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
আরিয়ান এখনো ঘুমিয়ে আছে,ঘুমন্ত অবস্থায় সত্যিই ওনাকে অনেক নিষ্পাপ লাগছে।আপনি যা চান তাই হবে।আমি কখনো আমার এই মুখ আপনাকে দেখবো না।আপনি মুক্তি চান তো আমার কাছ থেকে, আজ থেকে আপনি মুক্ত। আমার সাথে যা করেছেন তার জন্য কখনো আপনাকে আমি দোষারোপ করবো না।আমি চাই আপনি সবসময় ভালো থাকেন,ওই মেয়েকে বিয়ে করে আপনি সুখী হন।আপনি যতটা অপমান,অবহেলা আর অত্যাচার আমাকে করেছেন আপনার সাথে ওই মেয়ে যাতে এমন না করে।ওই মেয়েকে বিয়ে করে আপনি সুখী হন।তার থেকে বেশি আমি আর কিছু চাই না।আপনি ভালো থাকবেন মনে মনে এই কথাগুলো বলে অদ্রিতা বাড়ি থেকে বের হয়ে যায়।এখন অনেক সকাল তাই কেউ এখনো উঠেনি তাই তাকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেও কেউ দেখেনি।
অনেকক্ষন ভাবার পর সে তার বাড়িতে যায়। এছাড়া আর কোথাইবা এখন সে যাবে।২-৩ বার কলিং বেল বাজাতেই তার মা দরজা খুলে দেয়।অদ্রিতার দিকে তাকাতেই তার চোখ দিয়ে পানি পরতে থাকে।
নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় দেখবে তা কখনো স্বপ্নেও ভাবেনি।অদ্রিতার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে কান্না করার ফলে চোখ মুখ ফোলে গেছে।ঠোঁটের কোনায় রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে গেছে।মাথায়ও রক্ত শুকিয়ে কালো হয়ে আছে।মাথায় যেখানে লেগেছে সেখানে অনেকটা ফোলে গেছে,গালে চরের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে তার মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হচ্ছে না।নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে ওনী সহ্য করতে পারছে না। কোন মাই পারবে না নিজের মেয়েকে এমন অবস্থায় দেখে সহ্য করতে।
অদ্রিতা ভিতরে ঢুকেই তার মাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তার মাও তাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দেন।কয়েক মিনিট পরে তিনি অদ্রিতা ছেড়ে দেন।
তার মা কান্না করতে করতে বলে,” তোর এই অবস্থা কেন কি হয়েছে তোর,বল আমাকে?আরিয়ান কি তোকে মেরেছে,কি হয়েছে বল?
অদ্রিতা কিছুই বলে না। সে কান্না করতে থাকে।তার মা চিৎকার করে তার বাবাকে ডাক দেন,চিৎকার করার ফলে তার বাবা, ভাই- বোন সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে আসে।তার বাবা আসতেই অদ্রিতা তার বাবাকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে করতে বলে,বাবা আমাকে ক্ষমা করে দাও।আমি পারলাম না আমার সম্পর্কটা রক্ষা করতে,আমি পারলাম না ওনার মনে আমার জন্য একটু জায়গা করে নিতে।আবারও তোমাদের মাথায় বোঝা হয়ে চলে এসেছি।সে এইসব বলছে আর কান্না করছে।
অদ্রিতার বাবা তার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,”এইসব তুই কি বলছিস্ মা।তুই আমাদের মাথায় বোঝা হতে যাবি কেন?তুই তো আমার মেয়ে।কি হয়েছে বল আমাকে,তোর বাবাকেও বলবি না কি হয়েছে?”
অদ্রিতা সবাইকে সব খোলে বলে,,,,,
অদ্রিতার কথা শুনে তার বাবার চোখ- মুখ রাগে লাল হয়ে যায়। চোখ দিয়ে যেন ওনার আগুনের ফুলকি ঝড়তে থাকে। তিনি গম্ভীর স্বরে বলে,” ওই আরিয়ানকে আমি ছাড়বো না।দিনের পর দিন আমার মেয়েকে কষ্ট দেওয়া ফল তাকে ভোগ করতেই হবে।তুই চল আমার সাথে এখনি আমি ওনাদের নামে পুলিশ কমপ্লেন করবো।আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলার ফল তাকে ভোগ করতেই হবে।”
অদ্রিতা কান্না করতে করতেই বলে,তুমি এমন কিছুই করবে না।আমার এই অবস্থার জন্য কেউ দায়ী না।আমি কারো নামে কোন অভিযোগ করতে চাই না।তুমি যদি আর একবার এই কথা বলো তবে আমি আর একমুহূর্তও এখানে থাকবো না।এই বলে সে কাঁদতে কাঁদতে তার রুমে চলে যায়।রুমে ঢুকেই সে দরজা লাগিয়ে দেয়।তার ভাই-বোন,বাবা-মা সবাই তার পিছনে ডাকতে ডাকতে তার রুমের সামনে যায়।তারা মনে মনে ভয় পাচ্ছে মেয়ে আবার ওল্টা- পাল্টা কিছু করে ফেলবে না তো,তারা তাকে ডাকতেই থাকে। অদ্রিতা বিরক্ত হয়ে বলে,আমি একটু একা থাকতে চাই।প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দাও।আর ভয় পেওনা আমি ভীতু নই যে নিজের কোন ক্ষতি করবো।শুধু আমার একটু সময় চাই,প্লিজ। অদ্রিতার কথা শুনে তারা আর কিছু বলে না,সেখান থেকে চলে যান।
অন্যদিকে আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি অদ্রিতা রুমে নেই।আমি কিছু না ভেবে বেড থেকে উঠে পরলাম।অফিসে আজ একটু তাড়াতাড়ি যেতে হবে,ইমপোর্টেন্ট একটা মিটিং আছে তা এটেন্ট করতে হবে।আমি উঠে আলমারি খুলে কাপড় নিতে গিয়ে পুরোই অবাক হলাম।আলমারির কোথাও অদ্রিতার কোন কাপড় নাই।তবে কি সে চলে গেছে। সে যেখানে খুশি যাক। সে চলে গেলেই তো আমি বেঁচে যাই। আর কিছু না ভেবে কাপড় নিয়ে রেডি হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়।রেডি হয়ে এসে নিচে নেমে যাই,খাবার টেবিলে বসতেই মা জিজ্ঞেস করলো অদ্রিতা কোথায়?
আমি মার দিকে একবার তাকিয়ে খালাকে বললাম, “আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে, আমাকে খাবার দেন।
তখনি বাবা বললেন,”তোমার মা তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করছে আগে তার উত্তর দাও, বউমা কোথায়?এত সকাল হয়ে গেছে সে এখনো নিচে নেমে আসেনি। ও তো কখনো এত বেলা করে ঘুমায় না।আজ রান্নাও সালমা করেছে,অদ্রিতা কোথায়?”
আরিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বলে,আমি জানি না ও কোথায় গেছে।আমাকে তো আর বলে যায়নি যে আমি জানবো কোথায় গেছে।এখন যদি মন চায় আমাকে খাবারটা তাড়াতাড়ি দাও,না হলে আমি যাচ্ছি।
তুই এভাবে কথা কেন বলছিস্?আর বউমার সাথে কি কোন বিষয় নিয়ে তোর ঝগড়া হয়েছে?
আরিয়ান চুপ করে থাকে,তার মা আরও কিছু বলতে যাবে অরিয়ানের বাবা তাকে ইশারায় চুপ থাকতে বলে আর সালমাকে বলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিতে।আরিয়ান খেয়ে অফিসে চলে যায়,,,,,,,,
আরিয়ানের বাবার খাওয়া শেষ হতেই তার স্ত্রী তাকে বলেন,তুমি তখন আমাকে চুপ থাকতে কেন বলছিলে?আর অদ্রিতা কোথায় আছো তা কি তুমি জানো?
আরিয়ানের বাবা শান্ত স্বরে বলে,”না আর আরিয়ানকে দেখে মনে হয়েছে অদ্রিতার সাথে কোন বিষয় নিয়ে রাগারাগি করেছে।তুমি তো জানোই আরিয়ান রাগ কন্টোল করতে পারে না।তাই তখন চুপ থাকতে বলেছি।রাগ কমে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি এখন বউমাকে কল দাও।
আরিয়ানের মা অদ্রিতাকে ৩-৪ বার কল দেয় কিন্তু প্রত্যেক বারই তার ফোন সুইচঅফ বলে তাই তিনি অদ্রিতার বাড়িতে ফোন দেন।২-৩ বার কল দেওয়ার পরে অদ্রিতার মা ফোন ধরে বলে,এখন কেন ফোন দিচ্ছেন?আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করেকি আপনাদের শান্তি হয়নি। নাকি আরও কিছু বাকি আছে।
আরিয়ানের মা অবাক হয়ে বলে,” আপনি কি বলছেন এইসব আমি তো কিছুই বুঝছি না?”
অদ্রিতার মা রাগে কর্কশ স্বরে বলে,”যখন জানতেনই আপনার ছেলের কালো মেয়ে পছন্দ না তবে জোড় করে অদ্রিতার সাথে তার বিয়ে না দিলেই তো পারতেন।তবে তো আমার মেয়েকে এতটা কষ্ট, অপমান আর অত্যাচার সহ্য করতে হতো না।যখন জানতেনই আপনার ছেলে অন্য কোন মেয়েকে ভালোবাসে সে কখনো অদ্রিতাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবে না তবে তার সাথে বিয়েটা আপনার কেন দিলেন?জানেন আজ যখন বলেছি আপনার ছেলের নামে পুলিশ কমপ্লেন করবো তখন সে না করে দিয়েছে,,,,,,
আরিয়ানের মা বিষন্ন হয়ে বলে,” আমি আপনার কথা বুঝছি না,প্লিজ একটু পরিষ্কার করে বলেন।”পরে ওনী সব কিছু খোলে বলে,ওনার কথা শুনে আমার হাত থেকে ফোনটা পরে গেল।এতদিন ধরে মেয়েটা এত কিছু সহ্য করেছে আর এক বাড়িতে থেকে আমরা কিছুই বুঝতে পরিনি।আমার নিজের অজান্তেই আমার চোখ দিয়ে পানি পরছে।কেমন মা হলাম! নিজের সন্তানকে মেয়েদের কি করে সম্মান করতে হয় তাই শিখাতে পারি নি।আরিয়ানের বাবারও এখন নিজের উপর রাগ হচ্ছে।তখন যদি আরিয়ানকে বিয়ের জন্য জোর না করতেন তবে হয়তো মেয়েটাকে এততা কষ্ট পেতে হতো না।আজ আরিয়ান বাড়িতে আসুক,সে যা করেছে অদ্রিতার কাছে তার জন্য ক্ষমা চেয়ে তাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
সকালের ফ্লাইটেই নিলয় দেশে চলে আসে,এয়ারপোর্ট থেকে সে সোজা আরিয়ানের বাড়িতে যাচ্ছে, অদ্রিতার সাথে দেখা করার জন্য।তার অস্থিরতা এখনো কমছে না।অদ্রিতা ভালো আছে দেখেই হয়তো তার অস্থিরতা কমবে।তাইতো ফ্লাইট থেকে নেমেসোজা অদ্রিতার সাথে দেখা করার জন্য যাচ্ছে,,,,,,,,,,
. #গল্প_অপূর্ণতা
#Ritu_Bonna
#পর্ব_৪৮
সকালের ফ্লাইটেই নিলয় দেশে চলে আসে।এয়ারপোর্ট থেকে সে সোজা আরিয়ানের বাড়িতে যাচ্ছে। অদ্রিতার সাথে দেখা করার জন্য। যতোই সে আরিয়ানের বাড়ির দিকে এগোচ্ছে ততোই তার অস্থিরতা আরও বাড়ছে। হয়তো অদ্রিতাকে নিজের চোখে ভালো আছে দেখলেই তার এই অস্থিরতা কমবে।সে আর দেরি না করে সোজা আরিয়ানের বাড়িতে যাচ্ছে,,,,,,
অন্যদিকে আরিয়ান তার নিজের কেবিনে চলে এসেছে। আজ তার ইমপোর্টেন্ট একটা মিটিং আছে তার জন্য সব কিছু রেডি করছেনমিটিং এর ফাইলগুলো আরিশার কাছে।তাই সে আরিশাকে ডাক দেয়।আরিশা এসে দরজায় নক করে বলে,,,,
আরিশাঃ May i come in sir,,,,,,
আরিয়ান শান্ত স্বরে বলে,”Yes,come in.তোমাকে যেই ফাইলগুলো দিয়েছিলাম তার কাজ কমপ্লিট করেছো?”
আরিশা নিচের দিকে তাকিয়ে বলে,”জ্বি স্যার,আমি এখনি ফাইলগুলো নিয়ে আসছি।”
ওকে আর মিটিং কয়টা সময় ঠিক হয়েছে।
আরিশাঃ ১১ টা সময়,,,,,
আরিয়ান ব্যস্ত হয়ে বলে,” ওহ,তবে তো টাইম খুব কম।আর মাত্র দুই ঘণ্টা, তুমি তাড়াতাড়ি ফাইলগুলো নিয়ে আসো।”
ওকে স্যার,,,,,
আরিশা আর দেরি না করে নিজের কেবিন থেকে ফাইলগুলো এনে আরিয়ানকে দিয়ে চলে যায়।আরিয়ান মনোযোগ দিয়ে ফাইলগুলো দেখতে থাকে এমন সময় দরজায় কেউ নক করে বলে, আসতে পারি?আরিয়ান নিচের দিকে তাকিয়ে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে,ভিতরে আসেন।
রাইশা ভিতরে ঢুকেই বলে,আমি মনে হয় তোমাকে ডিস্টার্ব করলাম।তুমি কাজ করো আমি পরে আসছি।
আরিয়ান রাইসাকে দেখে বলে,”আরে না,না।আমি খেয়াল করিনি তুমি এসেছো।ফাইলগুলো দেখছিলাম,তুমি বসো।
রাইশা চেয়ারে বসে পরে বলে,তবে কি ঠিক করলে?
আরিয়ান কিছুটা অবাক হয়ে বলে, কোন বিষয়ে?
এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে,ওকে আমিই বলছি।ওই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে আমাকে বিয়ে করার বিষয়ে।আমার হাতে কিন্তু বেশি সময় নেই। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনি নিতে হবে।তবে বলো, কি ডিসিশন নিয়েছো?
আরিয়ান শান্ত ভাবে বলে,ডিসিশন নেওয়া হয়ে গেছে।অদ্রিতা বাড়ি থেকে চলে গেছে।আর উকিলকে বলেছি ডিভোর্স পেপার তৈরি করতে।পেপার রেডি হলেই অদ্রিতাকে পাঠিয়ে দিবো।
পেপার রেডি,তুমি শুধু সাইন করে দাও।উকিলকে অদ্রিতার বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো।ও সাইন করে দিলেই উকিল পেপার কোর্টে সাবমিট করবে।আর এক সপ্তাহ পরেই কোর্টের তোমাদের ডাকা হবে।তোমাদের ডিভোর্স হতে কোন জামেলা থাকবে না।
রাইশার কথা শুনে আরিয়ান অনেকটা অবাক হয়ে বলে,তুমি আগে থেকেই এত কিছু ঠিক করে রেখেছো।তুমি কি করে জানলে আমি রাজি হবো তোমার প্রস্তাবে?
আমার মন বলেছে,তুমি ঠিক আমার প্রস্তাবে রাজি হবে।তাছাড়া তুমি তো আমাকেই পছন্দ করো তাই এটাই তো সবচেয়ে ভালো হলো।তোমাকে আর ওই মেয়ের সাথে থাকতে হবে না।ওই মেয়ে তোমার যোগ্য না,ওই মেয়েকে তো তোমার সাথে একদমই মানায় না।তাই না?একটু খুশি হয়ে,,ন্যাকামি করে রাইশা কথাগুলো বলে।
আরিয়ান মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলে,,,,,,
রাইশা আরিয়ানের হাতে একটি পেপার দিয়ে বলে,”এই ধরো ডিভোর্স পেপার।জলদি সাইন করে দাও তো। বাকি সব আমি দেখে নিবো।
ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিতেই আমার হার্ট দ্রুত বিট করতে লাগলো। কেন জানি পেপারটা দেখেই আমার অস্বস্তি লাগছে। ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে আমার হাত কাঁপছে।এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আমি তো কখনোই অদ্রিতাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারিনি।ও আমার যেন আমার থেকে দূরে থাকে তার জন্যই তো সব সময় শুধু তাকে অপমান, অবহেলা আর অত্যাচার করেছি।দিনের পর দিন শুধু তাকে কষ্ট দিয়েছি।বিয়ের এই কয়েক মাসে তার সাথে একবারের জন্যও ভালো করে কথা পর্যন্ত বলি নি।ও যাতে আমার থেকে দূরে থাকে সব সময় শুধু এটাই চেয়েছি আর আজ যখন চিরকালের জন্য ও আমার থেকে দূরে চলে যাচ্ছে তখন কেন আমি খুশি হতে পারছি না?আরিয়ান মনে মনেই কথাগুলো ভাবছে।
রাইশা আরিয়ানকে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকতে দেখে বলে,”এই তুমি কি ভাবছো?তাড়াতাড়ি সাইনটা করো। এত দেরি করছো কেন সাইন করতে?”
রাইশার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।বেশি কিছু না ভেবে ডিভোর্স পেপারে সাইনটা করে দিলাম।সাইন করতেই রাইশা পেপারটা নিয়ে চলে গেলো
অদ্রিতাকে দেওয়ার জন্য।এখন কেন জানি আমার মনে হচ্ছে আমি অনেক মূল্যবান কিছু হারিয়ে ফেলেছি।নিজেকে খুব একা একা লাগছে।কোন কাজেই মন বসাতে পারছি না।আমি বুঝতে পারছি না আমার এমন কেন লাগছে?আমাকে এতটা অস্থিরতা কেন ঘিরে ধরলো বুঝতে পারছি না ।আমার তো এখন অনেক খুশি হওয়ার কথা। নিজের মনের মতোন কাউকে বিয়ে করবো,যাকে আমি ভালোবাসি তাকে নিজের করে পাবো তবে এততা বিষন্ন কেন লাগছে।কেন সব কিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে,কেন এমন মনে হচ্ছে সব কিছু থাকতেও আমি সবকিছু হারিয়ে ফেলছি?নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু কেন এমন বিষাদময় লাগছে সবকিছু তা বুঝতে পারছি না।তবে কি আমি কোন ভুল করেছি অদ্রিতা ডিভোর্স দিয়ে।তবে কি অদ্রিতাকে ডিভোর্স দিয়ে রাইশাকে বিয়ে করা আমার ভুল হচ্ছে। না,না এ আমি কি ভাবছি?
অদ্রিতাকে বিয়ে করাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল আর আজ তা ঠিক করলাম। আর কিছু না ভেবে কাজে মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করলাম,,,,,,,,,,,
নিলয় আরিয়ানের বাড়িতে চলে আসে।কলিং বেল বাজাতেই সালমা খালা দরজা খুলে দেন।দরজা খুলে নিলয়কে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বলেন,
আপনি কে, আপনাকে তো চিনলাম না?
নিলয় কিছুটা ইস্তত করে বলে,” আমি আরিয়ানের বস।”
খালা সৌজন্যতা মূলক হাসি দিয়ে বলে,” ওহ আচ্ছা। কিন্তু ওনী তো অনেক আগেই অফিসে চলে গেছে।”
ওনার ওয়াইফকে ডেকে দিন,বলেন আমি ওনার সাথে দেখা করতে এসেছি।
বউমনিও তো বাড়িতে নেই।বড় স্যার- মেডামকে ডাক দিবো?
নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে,” না থাক।আপনার বউমনি কোথায় গেছে তা কি জানেন?”
ওনী হয়তো ওনার বাপের বাড়িতে গেছেন।সকালে মেডাম একবার বলেছিল এর থেকে বেশি কিছু আমি আর জানি না।
নিলয় সৌজন্যতা মূলক হেসে বলেন,”আপনাকে অনেক ধন্যবাদ,তবে আমি এখন যাই।এই বলে নিলয় আরিয়ানের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে আসে।অদ্রিতার বাড়িতে যাওয়ার জন্য বের হয় এমন সময় তার কল আসে ফোন বের করে দেখে আহিল কল করেছে,সে ফোন রিসিভ করে।
নিলয় ফোন রিসিভ করতেই আহিল বলে,”আপনাকে এখন অফিসে আসতে হবে,ক্লাইন্টরা আপনার সাথে দেখা করতে চাইছে।আপনার সাথে কথা না বলে তারা নাকি ডিলটা ফাইনাল করতে পারবে না।”
নিলয় বিরক্ত হয়ে বলে,” আরিয়ান তো অফিসেই আছে।ওনাকে বলেন ক্লাইন্টদের সাথে কথা বলতে,আমি এখন আসতে পারবো না।”
আরিয়ান স্যার অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছে কিন্তু কিছুতেই কোন কাজ হচ্ছে না।তারা আপনার সাথেই দেখা করতে চাইছে।এখন আপনি যদি না আসেন তবে কোম্পানির অনেক বড় লস হয়ে যাবে।
নিলয় গম্ভীর স্বরে বলে, ” ওকে,আমি আসছি। কিছুটা বিরক্ত বলে ফোন কেটে দেয়।মনে মনে বলে অদ্রিতা তো তার বাড়িতেই আছে।পবলেম নাই বিকালে গিয়ে তার সাথে দেখা করবো।সে গাড়ি ঘুরিয়ে অফিসের দিকে রওনা দেয়।”
অন্যদিকে উকিল অদ্রিতার বাড়িতে চলে গেছে ডিভোর্স পেপার নিয়ে। ২-৩ বার কলিং বের বাজাতেই তার ভাই এসে দরজা খোলে দেয় আর জিজ্ঞেস করে,আপনি কে?
উকিল শান্ত স্বরে বলে,”আমাকে আরিয়ান পাঠিয়েছে। এই নেন ডিভোর্স পেপার। মিসেস অদ্রিতাকে বলেন এখানে সাইন করে দিতে।এই বলে রোহিতের হাতে ডিভোর্স পেপারটা দেয়।”
রোহিত পেপারটা হাতে নিয়ে অদ্রিতাকে ডাক দেয়,তার ডাক শুনে বাড়ির সবাই চলে আসে।
তার মা বলে,”এভাবে চিল্লাচ্ছিস্ কেন,কি হয়েছে?”
রোহিত তার মার হাতে পেপারটা দেয়,পেপারটা খোলে দেখতেই ওনার হাত থেকে পেপারটা পরে যায়।
রোহিতের চিৎকারের শব্দ শুনে অদ্রিতা রুম থেকে বাহিরে বের হয়ে আসে।এসেই দেখে মার হাত থেকে কিসের একটা পেপার নিচের পরে গেছে।সে এসেই নিচ থেকে পেপারটা উঠিয়ে নেয়,,,
.
..
…
চলবে,,,,,,,,,
.