#অপ্রিয়।
#তিতিশ্মা_মুসাররাত_কুহু।
#পর্ব_১০(শেষ)
এখন তো আটকাবার মত কেউ নেই।
এবার চলো তবে পালাইইইই…
-হা হা হা।
-হি হি হি।
-এবার সবার পালানো বন্ধ।
-তাইতো মনে হচ্ছে।
আমরা বোধয় সাক্সেস,তাইনা দুলাভাই?
-দেখা যাক কি হয়।
ওই দিকে দিহান আর রত্না আপু কথা বলছে।
-আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই দিহান।
-আমিও তোমাকে কিছু বলতে চাই।
-বলো তাহলে,
-না তুমিই বলো আগে।
-আরে বলো তুমি সমস্যা নেই।
-আমি জানিনা কথা গুলো শুনে তুমি কেমন রিয়েক্ট করবে,তবে কথা গুলো আমার তোমাকে জানাতেই হবে আজ।
-নিঃসংকোচে বলো কি বলতে চাও।
-রত্না,আমি তোমাকে নিয়ে পালাতে পারবোনা।
জানি তুমি আমাকে খুব ভালবাসো।আর আমিও তোমাকে খুব ভালবেসেছি এবং চেয়েছি।
কিন্তু এখন আমাদের জীবনে দুজন নতুন মানুষ এর আগমন ঘটেছে।
আমরা চাইলেই ওদের আঘাত করতে পারিনা।
-কিন্তু ওরা দুজনই তো এক সাথে পালানোর প্ল্যান করেছে।তাইনা?
তাহলে তো আমাদের সমস্যা থাকার কোন কারণ তো দেখিনা।
-হয়তো করেছে প্ল্যান,পালিয়ে তো আর যায়নি।
আমরাও তো করেছিলাম প্যান।পালিয়ে গেছি কি?
-দিহান,
-হুম।
-ওদের আঘাত দিতে চাওনা এটাই কি মেইন রিজন?
-কেন তোমার কি ওই মানুষ টাকে আঘাত করতে ভালো লাগবে?
-কথা ঘুরাচ্ছো কেন?
-দেখো, আমরা আমাদের নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে পরিবারের এত গুলো মানুষ কে হার্ট করতে পারিনা।
-দিহান প্লিজ, আমাকে ভুলভাল বুঝিয়ে কোন লাভ নেই।
আমি শুধু মেইন রিজন টা জানতে চাই,
কেন তুমি মুসাররাত কে ছেড়ে আমার সাথে ঘর বাধতে চাচ্ছোনা?
-ওকে লিসেন,তুমি কারণ জানতে চাও তো তবে শোনো।
আমি মুসাররাতকে তোমার বরের আশেপাশে দেখলে আমার গা জ্বালা করছে।
যখন তোমার বর মুসাররাতের জন্য শাড়ী সিলেক্ট করেছে তখন ইচ্ছে করছিলো ওই শাড়ী দিয়ে তোমার বরের গলায় ফাঁস দেই।
সকালে যখন আমি মুসাররাতকে ফোনে কথা বলতে শুনি,আর শুনি যে ওরা পালিয়ে যাবে,তখন আমার বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছিলো।
আর যখন ওদের সামনে গিয়ে দেখি ওরা দুজন দুজনের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে তখন বিশ্বাস করো আমার তোমার বরকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো।
-কেন লাগছিলো তোমার এমন?
কেন এমন ফীল করছিলে তুমি?
উত্তর জানা আছে কি?
-না,জানিনা।কিচ্ছু জানিনা আমি।
-একটা জিনিষ খেয়াল করেছো দিহান?
-কি?
-তুমি আজ ওই মানুষ টাকে হনুমান বলোনি।
-ওহ।
-কি বলেছো জানো?
আমার বর।
আর যেই মুহূর্তে তুমি তাকে আমার বর বলে সম্বোধন করেছো সেই মুহূর্তেই আমি বুঝে গেছি তুমি মেনেই নিয়েছো আমি আর তোমার নই।
আমি শুধু তার।
-প্লিজ আমাকে ভুল বুঝোনা রত্না
-নাহ্!ভুল আমি একদমই বুঝিনি তোমায়।বরং খুশি হয়েছি যে তুমি আমার বোন টাকে ভালবাসতে শুরু করেছো।
-মানে?
-মানে খুব সোজা,তুমি মুসাররাত কে ভালবেসে ফেলেছো।
আর মানুষ তার সব কিছুর ভাগ দিতে পারলেও তার ভালবাসার মানুষটার ভাগ কাউকে দিতে পারেনা।কক্ষণোই না।
যেমন টা আমি পারবোনা দিতে।
-ঠিক বুঝলাম না।
-আমিও পারবোনা আমার বরের ভাগ কাউকে দিতে।এমন কি আমার বোন কেও না।
তোমার যেমন আমার বরকে মেরে ফেলতে ইচ্ছে হয়েছে মুসাররাতের হাত ধরা দেখে।তেমনি আমারো ইচ্ছে হয়েছে মুসাররাতকে মেরে ফেলতে আমার বরের হাত ধরা দেখে।
তোমার যেমন শাড়ী দিয়ে ফাঁস দিতে ইচ্ছে করেছে আমার বরকে।আমারো ইচ্ছে করেছে মুসাররাতকে ফাঁস দিতে।
এগুলা কেন হয়েছে আমাদের মাঝে জানো?জেলাসী থেকে।
আর এটাই সত্যি,আমরা আমাদের বর এবং স্ত্রী কে ভালবাসতে শুরু করেছি।
আর এটাই হচ্ছে কারণ,যে কারণে আমরা ওদের ছেড়ে যেতে পারবোনা।আর আমার সাথে আমার বরের,আর তোমার সাথে মুসাররাতের এখন যেই সম্পর্কটা চলমান।এটা হচ্ছে পবিত্র সম্পর্ক।তাই অল্প ক’দিনেই আমরা মায়ায় আটকা পড়ে গেছি।আল্লাহর রহমত এটা।
আমিও সেইম এই কথা গুলোই তোমাকে বলতে চেয়েছিলাম।
যে আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও।আমি পারবোনা আমার বরকে ছেড়ে তোমার সাথে পালিয়ে যেতে।
-রত্না।
-হুম সত্যি বলছি।
-থ্যাংক ইউ রত্না,থ্যাংক ইউ।
-থাক থাক,এত থ্যাংক ইউ বলতে হবেনা।
চলো দেখি ওরা কই,
আবার আমাদের ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো কিনা।
-হা হা হা
-আর একটা কথা,মুসাররাত কিন্তু খুবই ভালো একটা মেয়ে,ওকে কখনো কষ্ট দিওনা।
-আর তোমার বরও খুব ভালো।ওকে কখনো দুঃখ দিওনা।
উহুম উহুম।
-তোমরা?
-হ্যাঁ আমরা।
-সব শুনে নিয়েছো?
-হুম সব শুনে নিয়েছি।
-আসলে হয়েছে কি,
-কিচ্ছু বলতে হবেনা,এখন আমরা বলছি তোমরা শোনো।
-কি বলবে তোমরা?
-আমরা যেহেতু সাক্সেস হয়েই গেছি আমাদের প্ল্যানে তাহলে সব বলে দেয়াই তো ভালো,তাইনা মুসাররাত?
-কারেক্ট দুলাভাই।
-তো শোনো তোমরা,
-আমরা যেদিন প্রথম ঘুরতে বের হই তুমি আর দিহান নাগরদোলায় চড়েছিলে আমাদের রেখে,মনে আছে?
-হুম মনে থাকবেনা কেন?তাছাড়া তোমরাই তো উঠোনি।
-হুম,সেদিন আমি আর মুসাররাত হাঁটতে হাঁটতে কিছু দূর গিয়ে আইসক্রিম খাই।
আর আমি ওকে জিজ্ঞেস করি কেমন চলছে বিবাহিত জীবন?
ও কিছুটা আড়াল করার চেষ্টা করে তখন নিজেকে।
তাই ও যেন ইজি ভাবে ওর কষ্ট কিংবা আক্ষেপ গুলো আমার কাছে শেয়ার করে হালকা হতে পারে সেই জন্য আমিও আমার কষ্ট গুলো ওকে বলে নিজেও হালকা হই।
তোমার অবহেলার কথা গুলো ওকে জানাই।এক পর্যায় ও আমার চোখে জলও দেখতে পায়।আর তখনই আমাকে ও আমাকে জানায়,
তোমার আর দিহানের সম্পর্কের কথা।
আর ওদের বিয়েটা কিভাবে হয় সেই কথা।
আর আমাকে বলে,কিভাবে কি করা যায়।এমন কিছু করা উচিৎ আমাদের যাতে আমরা সবাই ভালো থাকি।
ওর সব কথা শুনে মনে হলো আমরা চার জনের কেউই ভালো নেই।
তাই মুসাররাত আর আমি প্ল্যান করি আমরা তোমাদের প্ল্যানটাই কাজে লাগাবো।
দুজনই পরের দিন ভোর হতেই মোবাইলে জোড়ে সাউন্ড করে পালিয়ে যাবার কথা উল্লেখ করবো।যাতে দিহান আর তুমি শুনতে পাও।
আর এর পর যদি তোমাদের মনে আমাদের জন্য বিন্দু মাত্রও ভালবাসা বা মায়া জন্ম নিয়ে থাকে তাহলে তোমরা আমাদের আটকাবে।
আর যদি না আটকাও তবে আমরা দুজন চেষ্টা করবো তোমাদের এক করে দিতে।
কারণ আমাদের ভালবাসার মানুষ গুলো আমাদের সাথে থেকে কষ্ট পাবে তা আমরা কিভাবে হতে দেই।
-ভালবাসার মানুষ?
-জ্বী ম্যাডাম,আপনারা যেমন আমাদের ভালবাসতে শুরু করেছেন তেমনি আমরাও আপনাদের..
-দুলাভায়ায়াই,
-আচ্ছা আমি চুপ।
-তাহলে এসব তোমাদের প্ল্যান ছিলো মুসাররাত?
-জ্বী ভাই আমাদের প্ল্যান ছিলো।
-মুসাররাত তুমি কেন কোন কথা বলছোনা?
-সরিইইই।
-সরি না?তবে রে…
আমি তাড়াতাড়ি করে আমার দু হাত দিয়ে দু গাল আটকালাম।
দিহান চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কি হলো?
-যদি থাপ্পড় দিয়ে গাল ফাটিয়ে দেন তাই আরকি।
সবাই হেসে দিলো।
-থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাই,আপনার জন্যই আমি মুসাররাতকে আপন করে পেলাম।
-ধন্যবাদ তো আপনার বউ এর পাওনা,
ওর জন্যই আমিও আমার বউকে আপন করে পেলাম।
-যাইহোক এত ধন্যবাদ টন্যবাদ দেয়া লাগবেনা।
চলুন এবার বাসায় চলুন সবাই।
তারপর দিহান আমাকে একটা শাড়ী কিনে দিয়ে বলে,
-এটা কি আপনি নিবেন নাকি আপনার দুলাভাই পছন্দ করে দিবে?
আমি চোখ বড় বড় করে দিহানের দিকে তাকাই।
-ঠিকাছে ঠিকাছে আর ভয় দেখাতে হবেনা।
দুলাভাইও আপুকে একটা শাড়ী কিনে দেন।
তারপর আমরা সবাই বাসায় চলে আসি।
রাতে আমি দিহানকে সারপ্রাইজ দিতে দিহানের পছন্দ করে কিনে দেয়া শাড়ীটা পরি।
দিহান দরজায় নক করছে।
আজ ওর নকের আওয়াজে সারা শরীর শিউরে উঠছে।
আবার ভয়ও হচ্ছে কিছুটা।লজ্জা তো আছেই।
-আসবো?
-জ্বী আসতে পারেন।
দিহান আমাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে ধীরেধীরে আমার দিকে হেঁটে আসতে থাকে।
আর আমি পেছনের দিকে যেতে থাকি,
আজো যখন আমি দেয়ালের সাথে লেপ্টে যাই তখন দিহান ওর ঠোঁট দুটো আমার দিকে এগিয়ে আনতে থাকে।
আর আমি চোখ বন্ধ করে ফেলি,
আর তখনই ও আমার রোমান্টিকতার ১২ টা বাজিয়ে দিয়ে কানে মুখে ফিসফিস করে বলে,
আঁচল টা যদি সামলাতে না ই পারো তাহলে শাড়ী পরার কি দরকার?
আমি চোখ খুলে দিহান কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,
আঁচল টা যদি সারাজীবন তুলে দিতে না ই পারো,তাহলে প্রিয় হবার কি দরকার?
অপ্রিয় ই থাকো।
আমি রাগ করে চলে যাচ্ছিলাম আর দিহান হেঁচকা টানে আমাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে,
-ও প্রিয়ারে,
আমি কি হয়েছি নাকি তোর প্রিয় রে?
আমি দিহানের বুকে মুখ লুকিয়ে বললাম,
-অপ্রিয় রে,তুই হয়ে গেছিস আজ থেকে আমার প্রিয় রে।
(সমাপ্ত)