#অপ্রেমের_প্রিয়_অধ্যায়
#পর্ব_২৭ (অপ্রেম)
#লেখনীতে_নবনীতা_শেখ
—“জীবনের মতো রুমটাও এলোমেলো করার জন্য, স্যরি। দুটোই গুছিয়ে নেবেন।
~ইমতিয়াজ তালুকদার শুদ্ধ”
তনুজার বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো। সে খুব ভালো করে বুঝতে পারছে—এখানটায় শুদ্ধর আগমন ঘটেছিল। লক খুলল কী করে, এড্রেস পেল কী করে, এসেছিলই বা কেন—কোনো প্রশ্নে মাথা ঘাটাল না। এগিয়ে গিয়ে বিছানায় রাখা র্যাপিংয়ে মোড়ানো বক্সটা হাতে নিল। বেশ বড়ো-সড়ো বক্স। উপরে কালো পেপারের আবরনটা মিনিটের ব্যবধানে খুলে ফেলল। অনাবৃত বক্স থেকে অতি সন্তর্পণে বেরিয়ে এলো তনুজার ব্যবহৃত বেশ কিছু সামগ্রী। সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট। হলুদ চিরকুট। তনুজা দেখল, খুব মন দিয়ে দেখল। তারপর পাশে রেখে দিলো।
এখানকার প্রতিটি জিনিসই তনুজা হারিয়ে ফেলেছিল। হেয়ার ক্লিপস, চুড়ি, এয়াররিংস, ঝুমকো, পায়েল, স্কার্ফ, রুমাল.. আরও অনেক কিছু। সেখানটায় শুদ্ধর একটা শার্টও আছে। হুট করেই তনুজার মনে পড়ে গেল সেই বিকেলের কথা। এক বিকেলে শুদ্ধর বাইকে বসে ফেরার সময়, মনের অসংলগ্ন কর্মের নিদর্শন সামনে বসা ব্যক্তিটির পিঠের উপর, তার শার্টে লেগে গিয়েছিল। বিপরীত ব্যক্তিটি হয়তো বুঝতে পেরেছিল—তনুজার অসাবধানতার প্রতীক। তবে জানতে পারেনি কখনই যে, সেটা এক তনুশ্রীর ইচ্ছাকৃত কাজ ছিল, মনের পিছলে যাওয়ার নমুনা ছিল। সে ধরতেই পারেনি—এক নারীর মন-কেমনের গল্পগুলোর অনেকাংশ জুড়ে সে ছিল।
তনুজা তড়িঘড়ি করে পরনের শাড়ি খুলে মেঝেতে ফেলে দিলো। শার্টটা গায়ে জড়িয়ে চোখ বন্ধ করল। ডান হাত উঁচিয়ে কর্লারটা টেনে লম্বা করে শ্বাস টানল। পুরুষালি ঝাঁঝালো স্মেল আসছে। এই স্মেলটা এক শুদ্ধপুরুষের। তৃপ্ত হলো এতে তনুজা। ভালোমতো শার্টটা আঁকড়ে ধরল। এমন ভাবে ধরল, যেন শার্টের ভেতরে সে একা নয়, শুদ্ধও আছে। ছেলেটা চুপ করে আছে, মাঝে মাঝে বুক ভরে শ্বাস টানছে। তনুজার বোধ হচ্ছে—প্রিয় নারীর সুবাস এই টেনে নেওয়া সমীরের সাথে মিশে থাকার জন্যই শুদ্ধর এমন শান্ত-স্থির অবস্থা।
বেশ অনেকক্ষণ অতিক্রম হওয়ার পর তনুজার খেয়াল হলো—এখানটায় সে ছাড়া কেউ নেই। যাকে জড়িয়ে ধরে আছে, সে এক অদৃশ্য মিছে মায়া। বুকটা কেঁপে উঠল। সবকিছু এলোমেলো লাগল। ঠিক সেদিনের মতো, যেদিন সিদ্দিক বিয়ে করে নিয়েছিল। সারাটারাত উদ্ভ্রান্তের মতো কেঁদেছে সে। আজও তেমনই লাগছে। প্রচুর কান্না পাচ্ছে। চিৎকার দিয়ে কেঁদে উঠতে ইচ্ছে করছে। আশ্চর্য! চোখের জলেরা নাই হয়ে গেল কেন?
তনুজার বিক্ষিপ্ত নজর গেল বক্সের কোনায় সেলোটেপ দিয়ে লাগানো একটি খামের দিকে। এলোমেলো ভাবে হাতটি এগিয়ে অতিশয় অস্থির ভঙ্গিতে টেনে নিল, একমুহূর্তের দেরিও যেন তার সয় না। বড্ড যত্নের একটি চিঠি। মনের মণিকোঠা থেকে কেউ যেন তনুজার শোধন কাটল, “শেষচিঠি!”
আদতেই কি শেষ? কে যেন বলেছিল—কোনো এক ধ্বংসযোগ্য থেকেই গোটা ধরনীর জন্ম। তবে শেষ হয় কী করে, যেখানে সমাপ্তিই সূচনার উৎস! বিবেচিত মনের উথাল-পাতালের মাঝেই প্রকৃতি নৈঃশব্দ্যে বলে উঠল, “এই কাহিনির প্রারম্ভ তো এখন হবে; হয়তো বা এই গল্পে, নয়তো বা অন্য কারোতে।”
তনুজা অশান্ত ভঙ্গিতে খামটি খুলল, বেরিয়ে এলো রঙ-চটা একটি কাগজ। বেশ বুঝতে পারল—লেখার সময় এতে কেবল কলমের কালিই নয়, পত্রদাতার চোখের জলও এঁটেছে। অনুভব করতে পারল শুদ্ধর কাঁদতে কাঁদতে লেখাটা। তারপর পড়া শুরু করল।
“প্রিয় অনুশোচনা,
আপনাকে আমি ভালোবাসি না। হাসছেন? মনকে এই বলেই তো স্বান্তনা দিচ্ছি। ভালোবাসি বলার চেয়ে বোধহয় ভালোবেসেও ‘ভালোবাসি না’ বলাটা বেশি পোড়ায়। অথচ, প্রতিনিয়ত আমাকে পুড়তেই হচ্ছে। আচ্ছা, কেন আপনার প্রেমে পড়লাম—বলুন তো? আমি তো অতটা ইমম্যাচিউর না যে, নিচেরই শিক্ষককে ভালোবেসে বসব। তবে কেন হলো এরকমটা? আমি সত্যিই দুঃখিত। ক্ষমা হবে?
জানেন? আপনিহীনা এই ছয়টা মাসের এমন কোনো মুহূর্ত আমার জীবনে আসেনি, যেই মুহূর্তে আপনি ছিলেন না। আপনি সর্বত্র ছেয়ে ছিলেন। খেতে গেলে মনে হতো—কেউ দুম করে এসে আমার পাশের চেয়ারটায় বসে পড়ল। তাকিয়ে দেখলাম অদৃশ্য আপনাকে। আপনি ভ্রু-কুঁচকে বললেন, ‘শুদ্ধ! এত শুদ্ধভাবে কেউ খায়? দেখি! একটু মুখে লেপটে খাও তো! আমি টিস্যু হাতে নিয়ে বসলাম, মুছে দেবো।’
আমি অন্যমনস্কভাবেই হেসে উঠতাম। কোথায় গেলে মনে হতো, কেউ সর্বশক্তি দিয়ে আমার বাঁ হাতটা আঁকড়ে ধরে রেখেছে, যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে ফেলবে আমায়। তার চোখে আমাকে হারিয়ে ফেলার ভয় দেখে আমারই হাসি পেত। আজিব না? তাকে হারিয়েই এমন অবস্থা আমার, আর এই অবস্থার মাঝে দেখছি—সে আমায় হারানোর ভয়ে এলোমেলো হয়ে আছে।
রাতে ঘুমোনোর সময় খেয়াল করতাম, এই হাড়কাঁপানো শীতে কেউ উষ্ণতা খুঁজতে স্বয়ং ষদুষ্ণ হয়ে আমার বুকে মিশে যাচ্ছে। আমার যে কী খুশি! দু’হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিতাম অস্তিত্বহীন সেই নারীকে। জানেন? প্রিয় নারীর ওষ্ঠের কোণ ঘেঁষানো একটা হাসিই প্রিয়তমের রক্তে মাতুনি ধরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, অথচ আপনাতে আমি নির্বিকার থাকি। আপনার বেলায় আমার পৌরুষ কখনই বাকি আট-দশজন পুরুষের মতো নয়। আপনাকে দেখলে আমার রক্ত গরম হয় না, শান্তির পরসে চোখ বন্ধ হয়ে আসে। কী শান্তি পাই আপনাতে! এত শান্তি! এই অপার্থিব শান্তির উৎস একমাত্র আপনিই।
অনেক সময় লেগেছে নিজেকে শান্ত করতে। ছয় মাস! ছয় মাস তো কম নয়, না? আমার কী যে কষ্ট হতো! বার বার মনে হতো, ছুটে যাই আপনার কাছে। একটু দেখা হোক আমাদের! অথচ, আপনি আমার কাছে দূরত্ব চেয়েছেন।
অলকানন্দা! আমি আপনাকে ভালোবাসি না; তবে কারও ভালোবাসার গল্পের শ্রোতা হওয়া মাত্রই কল্পনায় আপনার বিচরণ হয়।
আমি আপনাকে ভালোবাসি না; অথচ রাস্তায় চলতে থাকা জোড়াদের হাতের ভাঁজে যে ভালোবাসা থাকে, তাতে আপনাকে দেখতে পাই।
আমি আপনাকে ভালোবাসি না; তবুও কেউ কারও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে, আপনার নামের অশ্রু আমার চোখ গলে পড়ে।
আমি আপনাকে মোটেও ভালোবাসি না; কিন্তু হুড খোলা রিকশায় একমাত্র আপনার কারণে একাকিত্ব অনুভব করি।
আমি তো আপনাকে ভালোই বাসি না; তাই যখনই সুখ খুঁজতে যাই, বারেবারে আমি আপনাকে খুঁজে পাই।
আমি আপনাকে বিন্দুমাত্র ভালোবাসি না; সে কারণেই অবসরে বারান্দায় বসে আকাশের মেঘেদের মাঝে আপনাকে আঁকি।
আমি আপনাকে ভালোবাসি না; এজন্যই আপনার পরনের বস্ত্রের উপরও আমার হিংসে হয়। ওরা নির্জীবতায় আপনাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে, অথচ আমি সৃষ্টির সেরা জীব হয়েও আপনার দর্শন পাচ্ছি না।
হ্যাঁ, আমি আপনাকে কোনোদিনও ভালোবাসিনি; ঠিক তাই। তাই-ই আপনাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখেছিলাম! ভালো তো বাসিইনি। হুম… ভালোবাসিনি, একটুও না…
আচ্ছা, এই-যে আপনাকে আমি ভালোবাসি না—এতে কী রাগ করলেন? করাটাই স্বাভাবিক। মেয়েরা তাদের পিছে কুকুরের মতো ঘুরতে থাকা ছেলেদেরকে অন্যদের পিছে ঘুরতে দেখলেও জ্বলে ওঠে। আমি অন্যদের পিছে ঘুরছি না, আবার আপনাকে ভালোওবাসছি না। এজন্য রাগটা একটু কমের দিকে আশা করছি।
আজ আমার মন ভালো। কেন ভালো জানেন? কারণ, আজ আমি সব দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে যাচ্ছি। আপনার সব স্মৃতি আর আমার মাঝে এক পৃথিবী সমান দূরত্ব তৈরি করেছি। তাই সবকিছু ফিরিয়ে দিয়ে গেলাম।
রুমটা খুব এলোমেলো করে ফেলেছি—না? কী করব? এইখানে এসে, কতদিন বাদে আপনার শরীরের ঘ্রাণ পেলাম! আমার বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠছিল। আপনার ব্যবহৃত সবকিছু বের করলাম, সব! এরপর তা নিজের বুকে জড়িয়ে পুরোটা সকাল বসে ছিলাম। বিগত ছয় মাসের সব শান্তি আমি আপনার ভাঁজখোলা শাড়িতে মেশানো নূতনত্বহীন ঘ্রাণে খুঁজে পেলাম। প্রাণভরে শুষে নিলাম, যাতে এই ঘ্রাণ আমার বাদবাকি জীবনের কখনও না ভুলে যাই। রক্তে-রন্ধ্রে মিশে থাকুক।
আচ্ছা, আমাদের আর দেখা হবে না, না? না হোক! আমি তো ভালোবাসি না। আমার কোনো সমস্যা নেই। আপনিও ভালোবাসেন না। আপনারও সমস্যা নেই। কারো কোনো সমস্যা না থাকলেও সমস্যার বিশাল বড়ো আস্তানা তৈরি করে রেখেছে স্বয়ং প্রকৃতি। চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে যেন বলছে, ‘প্রাণপ্রিয়াকে ভুলে যাওয়া তো শুদ্ধ পুরুষের ব্যক্তিত্বের বাইরে।’
আমি থমকে যাই, দীর্ঘশ্বাস ফেলতেও ভুলে যাই। আপনার জন্য না বুকটা খুব পোড়ে আমার! অনুশোচনায় দগ্ধ হৃদয়টা চুপিচুপি নিজেরেই শাপ দেয়, ‘তুই আজীবন মরতে থাকবি; এই মরন একেবারে হওয়ার নয়। একটু একটু করে, সম্পূর্ণ যন্ত্রণা নিয়ে, বারেবারে মরবি।’
মাঝে-মাঝে নিজেকে শুধাই, ‘কেন এ বিচার? এ তো অবিচার বই কিছুই নয়।’
স্বীয় মন থেকে উত্তর পাই না। অথচ প্রিয়, আমার জানামতে আপনি ছাড়া আমার দ্বিতীয় কোনো ভুল ছিল না…
শুনছেন, অলকানন্দা? আপনি আমার মধ্য রাতের, কার্নিশ বেয়ে গড়ানো দুয়েক ফোঁটা বিক্ষিপ্ত অশ্রু।
আপনি আমার হেসে-খেলে কথা বলার মাঝখানেতে হুট করেই থমকে যাওয়ার বিশারদ ব্যাখ্যা। আপনি আমার আনন্দময় চরিতে, আনন্দ বাড়িয়ে দেওয়ার মতোই এক ঝঁঝাটে ব্যাথা।
আপনি আমার সাদরে গ্রহণ করা বিস্তীর্ণ অন্যায়।
আপনি আমার প্রেমময়ী জীবনে, এক অপ্রেমের প্রিয় অধ্যায়।
ইতি
অশুদ্ধ পুরুষ
পুনশ্চঃ শুদ্ধ পুরুষ আপনার অবহেলায় অশুদ্ধ হয়ে গেছে।”
পাষাণ তনুজা চিঠি পড়ে পাথর হয়ে গেছে। আস্তে ধীরে পরনের শার্টটা খুলে ফেলল। সবকিছু রুমের একপাশে সরিয়ে রেখে শুদ্ধর দেওয়া জিনিসগুলো নিয়ে কাবার্ডে ঢোকাল। পরনে তার ব্লাউজ আর পেটিকোট। মেঝেতে লুটিয়ে পরা শাড়িটা তুলে গায়ে জড়ানোতে আলস্যবোধ করল। সেভাবেই ফেলে বিছানায় উবু হয়ে শুয়ে পড়ল। অসাবধানতাবশত হলুদ চিরকুটটি বাতাসে উড়ে বারান্দায়, এরপর বাইরে চলে গেল। হয়তো অগ্নিসখেরা ইতোমধ্যে পড়াও শুরু করে দিয়েছে সেই চিরকুটের লেখা।
যেখানটায় কোনো এক অপ্রেমিক লিখেছিল, “আমাদের প্রেম তো হওয়ারই ছিল না। প্রেমনিবেদন করেছিলাম যে চন্দ্রমল্লিকা দিয়ে। ভুলেই গেছিলাম—চন্দ্রমল্লিকা শোকের প্রতীক।”
_____
শুদ্ধ পড়াশোনা প্রায় বাদই দিয়ে ফেলেছে। এখন পুরোপুরি ব্যবসায় মন দিয়েছে। পরীক্ষায় সময় শুধু পরীক্ষাটা দেয়, এভাবেই চলছে। রাতে তাদের সিলেটের ব্রাঞ্চ থেকে ফিরে আর খাওয়ার পরিশ্রম করল না। সোজা নিজের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হওয়াটাও যেন ভারি কষ্টের। বারান্দায় বসে আকাশ দেখতে লাগল।
সুভা বেগম রুমে প্রবেশ করে দেখলেন, পরিপাটি ভাবটা। তার ছেলে তো খুব এলোমেলো ছিল, এত গুছিয়ে.. গুটিয়ে গেল কার জন্য? সে জানে না। শুদ্ধর কাছে সেই মেয়ের খোঁজ পায়নি। শুদ্ধর বন্ধুরাও এই নিয়ে কিছু বলতে নারাজ। বিষয়টা তার দাদা-বাবা খেয়াল করলেও, অতটা গুরত্বপূর্ণ ভাবেনি। অথচ, সুভা বেগম চিন্তায় এই কয়মাসে শুকিয়ে গেছেন।
উনি সোজা বারান্দায় চলে গেলেন। শুদ্ধকে আনমনে বিরবির করতে দেখে এগিয়ে গেলেন। কাঁধে হাত রেখে শুধালেন, “কী হয়েছে তোর?”
শুদ্ধ শান্ত, বড্ড স্থির নয়নে তাকাল। আলতো করে হেসে বলল, “কী হবে?”
“তার নাম কি বলবি না আমায়?”
“সে কে?”
“শুদ্ধ! তুই জানিস আমি কার কথা বলছি।”
“জেনেও যেহেতু না জানার ভান ধরছি, তোমারও উচিত এতে আমার সহায়তা করা।”
শুদ্ধর হাসিমুখে বলা এই কথাতে সুভা বেগম আর এই নিয়ে কিছু বলতে পারলেন না। আকাশ সমান ব্যাথা নিয়ে শুধালেন, “ওই গিটারটা তোর কি দোষ করেছিল? তোর না কত শখের ছিল? ছয় মাস হলো, ছুঁয়ে দেখিস না!”
হাসিমুখে শুদ্ধ বলল, “সব প্রিয়র সাথে একত্রে দূরত্ব বানাচ্ছি। মনের সুর যেখানে নেই, গানের সুর কীই-বা করবে সেখানে?”
“আমি ওকে এনে দেবো তোর কাছে।”
“আমি ওঁকে চাই না।”
“কেন?”
“বুঝলে মা? একটা অপ্রেমের খুব শখ ছিল। ভেবেছিলাম সুখকর হবে। তারপর দেখলাম, শখ আমার সুখ না হয়ে, শোক হয়ে গেল।”
হাসতে থাকল শুদ্ধ। পাগলের মতো হাসতে লাগল। সহ্য করতে না পেরে সুভা বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে প্রস্থান ঘটালেন। জীবনে কিছু মুহূর্তে এসে মানুষ খেই হারিয়ে ফেলে। তারপর অথৈজলে ডুবে যাই। কেউ আঁটাকাতে পারে না। আঁটকাতে গেলে সে-ও নিশ্চিত ডুববে। শুদ্ধর এখন সেই সময় চলছে, কূলহীন সময়, জলময় সময়। আচ্ছা! জলের জায়গায় যদি যন্ত্রণা ব্যবহার করি, ভাবার্থটা বোধহয় তবেই মিলবে!
চলবে..
শব্দসংখ্যা-১৬২৯