অবুঝ বেলার তুমি পর্ব ৬

#অবুঝ বেলার তুমি
নিলান্তিকা ইসলাম
পর্ব ৬

বারবার গুঞ্জন কে বারণ করা হচ্ছে আজ যেনো কলেজ না যায়।কিন্তু গুঞ্জন কথাটা কানেই নিচ্ছে না।চারুলতার কথা শুনছে না বলে তিনি গুঞ্জনের বাবা অভিক রায় কে ডাকলেন।তিনি ও কড়া গলায় গুঞ্জন কে বারণ করে দিলেন বিকেলে পাত্রপক্ষের সাথে মিট করতে হবে তাই আপাতত যেনো ঘরে থাকে।কাল থেকে তো আবার কলেজ যাওয়া হচ্ছেই, একদিন মিস গেলে কি এমন সমস্যা।

গুঞ্জন দ্রুত পায়ে হেটে উপরে নিজের রুমে গেলো তারপর খুব জোরে দরজাটা লাগিয়ে দিলো।অভিক রায় বেশ অবাক হওয়ার সাথে রাগ ও ঝাড়লেন।এইটুকুন মেয়ে কিনা তার নিজের বাবাই এর সাথে বেয়াদবি করা শুরু করে দিয়েছে।কলেজ যেতেই তো বারণ করলো মাত্র,কি এমন বলে ফেলেছে যে এভাবে রাগ দেখাতে হবে।
তিনি এবার চারুলতাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন,
____গুঞ্জনের কি সমস্যা! তুমি কি কিছু বঝতে পেরেছো?
____হুম কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছি কিন্তু সমস্যা টা কোথায় ধরতে পারিনি।
____তিনি বিস্ময় নিয়ে বললেন,কি আন্দাজ করলে?
____অন্যমনষ্ক হয়ে থাকে।কিছু বললেই রাগ ঝাড়ে।তাছাড়া সেদিন ও এক প্রকার কলেজ থেকে ছুটতে ছুটতে বাড়ি ফিরলো।মনে হলো যেনো কেউ তাড়া করেছে নয়তো কারো কাছ থেকে পালিয়ে এসেছে।
____অভিক রায় এবার চিন্তায় পড়লেন।তবে কি তিনি মনে মনে যেটা আন্দাজ করছেন সেরকম কিছুই হবে।না, ন! তা কি করে হতে পারে,তাহলে যে খুব তাড়াতাড়ি গুঞ্জনের বিয়ের ডিসিশান টা ফাইনাল করতে হয়।

সেই মুহুর্তে গৌতম এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে।অভিক রায় ও গৌতম কে সামনের দিক দিয়ে টেনে নিয়ে এসে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।
গৌতম কে জিজ্ঞেস করলেন,
____ কি ব্যাপার গৌতম বাবু কি আজ স্কুল যেতে চাইছে না?
____গুঞ্জন দি কে ও তো যেতে দিচ্ছো না।তাহলে আমাকে কেনো যেতে বলছো?বুঝি আমি সব।এই মেয়েটা ন্যাকা কান্না করে বলে তার সাত খুন মাফ। এমনকি কলেজ যাওয়া টা ও মাফ বলেই মুখ ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো

অভিক রায় ছেলের রাগ ভাঙাতে সুড়সুড়ি দিতে লাগলেন আর গৌতম খিলখিলিয়ে এপাশ ওপাশ কাত হয়ে হাসতে লাগলো।অভিক রায় এবার গুঞ্জন কে ডাকতে লাগলেন।কিন্তু গুঞ্জনের কোন ও সাড়াশব্দ নেই।পরে খুব জোরে চেচিয়ে ডাকতেই গুঞ্জন দরজা খুলে বেরিয়ে এলো।অভিক রায় বললেন,
____সব সময়কার মতো কিসের এত জেদ ধরে বসে থাকো তুমি?আমি অবাক হচ্ছি গুঞ্জন তোমার কার্যকলাপ দেখে।ছোট বেলা থেকেই তুমি রগ চটা স্বভাবের।তাই বলে এখনও তো আর একই রকম থাকতে পারো না।ক দিন বাদে যখন শ্বশুর বাড়িতে যাবে কে মেনে নেবে তোমার এসব।তুমি কি আমার মাথা হেট করে দেয়ার অপেক্ষায় আছো গুঞ্জন!

গুঞ্জন কান্না করায় চোখ মুখ ফুলে আছে।নাকের আগা লাল হয়ে আছে,অভিক রায় ভালো করে গুঞ্জনের মুখের দিকে তাকাতেই বুঝতে পারলেন ব্যাপারটা।
তিনি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন,
____তুমি কি এখন কান্না করেছো গুঞ্জন?
গুঞ্জন নিচের দিকে তাকিয়ে এখন ও চুপ করে আছে।অভিক রায়ের রাগ আরো বাড়তে লাগলো,তিনি এবার আরো জোরে চেচালেন,
____আমি বুঝতে পারছি না!সত্যিই আমার মাথায় ধরছেনা ব্যাপারটা!একদিন কলেজ যেতে বারণ করেছি বলে কান্না করতে হবে কেনো?
কি এমন আছে কলেজে!

গুঞ্জন এবার ভয় পেয়ে উঠলো।আর বললো,
____আমি আরো পড়তে চাই বাবাই।এতো তাড়াতাড়ি কেনো বিয়ে দিতে হবে।আমি কি তোমাদের কাছে খুব বোঝা হয়ে গেছি!বলতেই গুঞ্জনের চোখ দিয়ে টুপটাপ করে অশ্রুর ফোঁটা ঝরতে লাগলো।
___গুঞ্জন, আমি না জেনে বুঝে তোমার লাইফের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না!তুমি বিয়ের পরেও পড়তে পারবে।পড়া নিয়ে কোন ওরকম সমস্যা হবে না।
____কিন্তু আমি এখন বিয়েটা করতে চাইছি না বাবাই।
____আমি তোমার কাছ থেকে অনুমতি নিচ্ছি না।জানিয়ে দিয়েছি ব্যাস।

গুঞ্জন আবার দৌড়ে উপরে চলে গেলো।খুব কান্না পাচ্ছে গুঞ্জনের।কি করে বিয়েটা করবে সে!কি করে!কোথায় তুমি বাবুন দা!গুঞ্জন প্রার্থনা কর‍তে লাগলো।
____শুনেছি মন থেকে তোমার কাছে চাইলেই সব পাওয়া যায় ঠাকুর।মনের ভক্তিই নাকি বড় ভক্তি।আমিতো সেই ছোটবেলা থেকেই অবুঝ ভাবে বাবুন দা কে চেয়ে যাচ্ছি।তাহলে কেনো অন্য কাউকে পেতে হচ্ছে।আমার মনের মন্দিরে যে আমি বাবুন দা কে ই বসিয়ে ফেলেছি।কি মরে সে জায়গাটা অন্যকারো নামে করে দিবো।

পাবোই না যখন তখন কেনো এই অবুঝ মনে বাবুন দা নামক ভালোবাসার মায়ায় জড়ালে।কেনো ভুলিয়ে দিলে না!কি জাত, কি ধর্ম কিছু না জেনেই কেনো তাকে মন দিয়ে বসে আছি বলতে পারো?তুমি তো সব জানতে ঠাকুর, সব বুঝতে, তবুও কেনো কষ্ট দেয়ার জন্য মনে ভালো করে গেথে দিলে।কি পাপ করেছিলাম আমি,তবে কি না বুঝে ভালোবাসাটাই ছিলো আমার অপরাধ!

অভিক রায় পড়লেন ভাবনায় কি করবেন এই মেয়েকে নিয়ে যদি বিয়ের পর বা বিয়ের দিন কোন ও সিনক্রিয়েট করে ফেলে।কিছু তো একটা লুকাচ্ছে গুঞ্জন।কে হতে পারে ছেলেটা যার জন্য এভাবে কষ্ট দিচ্ছে নিজেকে। কলেজের কেউ নয়তো!গৌতম আবার বলে উঠলো,
____দিলে এবার তোমার মেয়েটার ন্যাকা কান্না বাড়িয়ে।কেনো এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো দি ভাইকে।সবে তো তার লাভ কেইস শুরু হলো।তুমি তো দেখছি সেজুতির বাবা মায়ের মতোই ভিলেন হয়ে যাচ্ছো।
____অভিক রায় ছেলের মুখে এমন কথা শুনে হতভম্ব হয়ে গেলেন।তিনি গৌতম কে নিজের আরো কাছে টেনে নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
_____কিসের লাভ কেইস গৌতম!কিসের কথা বলছো তুমি?

আরে তুমি বোঝোনা কেনো,দেখছো না গুঞ্জন দি বিয়ে করবেনা বলে কেমন কান্না করে যাচ্ছে।এটাই তো লাভ কেইস।সে যে বিমল স্যারের মতো প্রায়ই এভাবে কান্না করে।
____অভিক রায় ছেলের কথার আগা মাথা ধরতে পারছেন না।তিনি কৌতূহল নিয়ে আবার বললেন,
কি বলছো গৌতম কিসের লাভ কেইস আর বিমল স্যারের সাথেই বা কি কানেকশান।
গৌতম আবার সেজুতির দি ভাই আর তার স্কুলের বিমল স্যারের লাভ স্টোরি টা শুনালো।

অভিক রায়ের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।তবে তিনি মনে মনে যা সন্দেহ করছিলেন সেটাই হলো।না না জল বেশিদূর গড়াবার আগেই তাকে এর বিহীত করতে হবে।তিনি যে কথা দিয়ে ফেলেছেন কি করে তার বরখেলাপ করবেন।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের ডেইট টা ফিক্সড করে ফেলতে হবে।

রেস্টুরেন্টে পৌছাতেই অঙ্কুরের বাবা কে দেখতে পেলো অভিক রায়।হেসে উঠে হ্যান্ড শেক করে নিলো।অঙ্কুরের মা আসতে পারেন নি।অঙ্কুর ও আসবে বলেছে কিন্তু এখনো অবদি আসার খবর নেই।এদিকে গুঞ্জনের মা ও আসেন নি।শুধু গুঞ্জন আর গৌতমকে নিয়ে এসেছেন অভিক রায়।
আর পাত্র পক্ষ থেকে বিহান আর তার বাবা।
সৌমিক সেন(অঙ্কুরের বাবা) এবার ঘামতে লাগলেন।কি জবাব দেবেন তিনি অভিক রায় কে যদি অঙ্কুর কে দেখতে চায়।উফফ!এই ছেলে টা সব সময় ওনাকে অপমান অপদস্ত করার ফন্দি নিয়ে বসে থাকে।

এদিকে বিহান ও তার পরিচিত কাউকে দেখে গেইটে দাড়িয়ে কথা বলছিলো।গুঞ্জন কে দেকেই সৌমিক সেন আলতো করে মাথায় হাত দিয়ে বললেন,
_____বাহ্। আমাদের সেই ছোট্র গুঞ্জন তো বেশ বড় হয়ে গেছে।আর দেখতে ও অনেক কিউট হয়ে গেছে।গুঞ্জন সেই যে চোখ দুটোকে নিচের দিকে নামিয়েছে আর উপরে তুলে নি।কি করে তুলবে তার চোখে যে অশ্রু ছলছল।কারো প্রতি তার এখন ধ্যান ধারনা নেই।তার মন প্রাণ সব পড়ে আছে বাবুন দার কাছে।

গৌতম কে নিয়ে অভিক রায় আর সৌমিক সেন মিষ্টি নিতে গেলেন।শত হোক বিয়ে বলে কথা মিষ্টি মুখ না করলে কি আর হয়।
এদিকে বিহান এসে গুঞ্জনের সামনে দাড়ালো।তারপর যখন কিছু একটা বলতে যাবে,ঠিক তখনই গুঞ্জন মাথা তুলে তাকাতেই, বিহান কে দেখতে পেয়ে বিস্ময়ে তাকালো।এত চিন্তা আর বিরক্তির রেখা কপালে ফুটে উঠলেও মুহূর্তেই ভালোলাগা এক সুখের আভাস পেয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো।

এমন মুহুর্তে বিহানকে পড়তে হলো বিহান না পারছে কিছু বলতে আর নাইবা দাড়াতে।এ যে সেই মেয়েটা।এখানে তো বাবা রা ছিলো আর তার ভাইয়ের হবু বউয়ের ফ্যামিলি থাকার কথা এ মেয়ে এলো কোত্থেকে!
গুঞ্জন বিহান বলে যেই কিছু বলতে যাবে বিহান পেছনে না তাকিয়ে দৌড়াতে লাগলো।আজ নিশ্চিত এই মেয়ে তাকে মারবে।একি মেয়েটা ও কেনো তার পিছন পিছন দৌড়ে আসছে।জয় মা!বলে বিহান আরো জোরে দৌড় লাগালো।যার কারণে গুঞ্জনের একটি কথার আওয়াজ ও বিহানের কানে পৌছাচ্ছে না।

গুঞ্জন কত করে ডেকে যাচ্ছে,বিহান!প্লিজ একবার শোন ভাই আমার।প্লিজ দাড়া না ভাইটা আমার।এরক করিস না প্লিজ!তোকে কত্ত খুজেছি আমি।কিন্তু বিহান ততক্ষনে গেইটের বাইরে চলে গেছে।
গুঞ্জন আবার আগের বারের ন্যায় মাটিতে বসে পড়ে কান্না করতে লাগলো।

এদিকে।হঠাৎ করে গুঞ্জনকে এভাবে দৌড়াতে দেখে আর এখন এভাবে বসে কাঁদতে দেখে সৌমিক সেন হতভম্ব হয়ে পড়লেন আর অভিক রায়ের রাগ গিয়ে আসমানে পৌঁছালো।এ মেয়ে আজ তার মাথা টা হেট করেই ছাড়লো।কি ভাবছেন এখন সৌমিক বাবু ঠাকুর ই ভালো জানেন।
অভিক রায় আমতা আমতা করে বললেন,
কি হয়েছে গুঞ্জন এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেনো আর কান্নাইবা কেনো করছিলে,মুখে হেসে হেসে কথাটা বললে ও চোখ দিয়ে পিষে ফেলছিলেন গুঞ্জন কে।

গুঞ্জন উঠে কান্না মুছতে মুছতে বললো,
আসলে কেউ একজন কে দেখে চেনা চেনা মনে হলো কিন্তু সে চলে যাচ্ছিলো দেখে দৌড়াচ্ছিলাম আর এখন পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেলাম তাই কান্না পাচ্ছে।
সৌমিক সেন বলে উঠলেন
____ইশ! অনেকখানি ব্যাথা পেয়েছে বোধ হয় মেয়েটা।তবে ওই কথাই রইলো অভিক দা।রাতে ফোনে কথা বলে ডেট জানিয়ে দেয়া হবে।আমার ছেলেটা ও বড্ড কাজ পাগল হয়ে গেছে দেখুন এত গুরুত্বপূর্ণ একটা দিন নিজের লাইফের অথচ সেই এলোনা।

অভিক রায় খুব একটা কথা বাড়ালেন না।তিনি তো ছোটবেলা থেকেই অঙ্কুর কে দেখে আসছেন।গুঞ্জনের কতটা খেয়াল রাখতো এখনক নিশ্চয়ই মাথায় করে রাখবে।আর তাছাড়া ছবি তো সৌমিক সেনের ফোনে দেখলোই।
এখন তার মেয়েটাই কোন ও অঘটন না ঘটালে হয়।
বাড়িতে গিয়েই গুঞ্জনের গায়ে হাত তুলতে।গিয়েও নামিয়ে ফেললেন অভিক রায়।কি করে এতো টা নির্লজ্জ হতে পারলো তার মেয়েটা তিনি সেটাই বুঝতে পারছেন না।পাত্রপক্ষ তাকে দেখার জন্য এলো যেখানে বিয়ের ডেট অবদি ফিক্সড হয়ে যাচ্ছে আর সেখানে তার মেয়েটা কিনা অন্য কোন ও ছেলের পেছনে দৌড়াচ্ছে! ব্যাপার টা ঠিক কতখানি লজ্জার হতে পারে!

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here