#অবুজ_পাখি
#নাম_না_জানা_পথিক
পাট:২১
বাড়িতে এখন সবাই পরিকে নিয়ে ব্যস্ত। পরি প্রেগনেন্ট শোনার পর দাদিও পরিকে মেনে নিয়েছে। বাড়িতে এখন একটা উৎসবের আবেশ। কিন্তু রিফাতের উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সব প্যারা আর সকল প্যারা দিয়ে যাচ্ছে পরি। পরির প্রেগনেন্টের সময় বাড়ার সাথে পরির আবদারও বেড়ে চলছে। এই ঐদিনের কান্ড পরি রাত ৩ টা বাজে রিফাতকে বলে সে আইস-ক্রিম খাবে। বাড়িতে আইস-ক্রিম ছিলো না কিন্তু পরির আইস-ক্রিম লাগবেই। রিফাত এই রাত ৩টা বাজে সব ঘুরে একটা শপ থেকে আইস-ক্রিম এনে দেখে পরি আচার খাচ্ছে এখন আর সে আইস-ক্রিম খাবে না। রিফাত পরিকে না পারছে কিছু বলতে না পারছি সহ্য করতে ছেলেটার যায় যায় অবস্থা। পরির এখন ৮ মাস চলে পরির শরীর অনেক ভারী হয়ে গেছে। রিফাত পরিকে ১ সেকেন্ডের জন্যও একা ছাড়ে না।
রিফাত পরিকে খায়িয়ে দিচ্ছে। পরি হটাৎ করে রিফাতের উপর বমি করে রিফাতকে পুরো মেখে ফেলে। রিফাতের পুরো শরীর বমিতে মেখে গেছে। রিফাত পারছে না পরিকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে। পরি রিফাতে এই অবস্থা দেখে খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।
পরি: দাভাই ছি কি গন্ধ বলেই হাসতে লাগলো।
রিফাত: পরির দিকে রাগি চোখে তাকায়
পরি: পেটে হাত দিয়ে এরকম কেউ করে দেখ তো বাবার কি অবস্থা করলি।
রিফাত আর কিছু না বলে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
পরি জানে রিফাতকে বেবির কথা বললে রিফাত আর পরিকে কিছু বলবেনা তাই যখনই রিফাত পরির উপর রাগ করে পরি বাচ্চার কথা বলে রিফাতও চুপ হয়ে যায়।
সবই ঠিক চলতেছিল সুখেই ছিলো তাদের সংসার। কিন্তু কথা আছে বেশি সুখে থাকলে সয়তানের নজর রাখে। পরির অবস্থাও ঠিক সেই রকম হয়। রিফাতের একটা জরুরী ফোন আসে রিফাত ছাদে যায়। পরির খুব পানি পিপাসা পায়। কিন্তু ঘরে পানি ছিলো না। রিফাত কখন আসবে এসে পানি আনতে যাবে এতক্ষন পরি অপেক্ষা করতে পারবেনা। তাই সে ঠিক করলো সে নিজেই যাবে পানি খেতে। পরি সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হটাৎ করে পড়ে যায়। জোরে দাভাই বলে চিৎকার দেয়। পরির চিৎকার শুনে রিফাত ছাদ থেকে দৌড়ে নিচে আসে। এসে দেখে পরি ফ্লোরে পড়ে আছে সারা ফ্লোর রক্ত ভেসে যাচ্ছে। রিফাত পরির পাশে বসে পরির মাথাটা তার কোলে নিল।
রিফাত: ঐ পাখি কথা বল তোকে না বলছি একা কিছু করতে যাবি না। তুই কেনো একা নিচে নামতে গেলি। ঐ কথা বল রিফাত চিৎকার করে বলতে লাগলো।
পরি: ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে বললো দাভাই আমার বাচ্চাকে বাঁচাও প্লিজ।
ইমন: রিফাত এটা বসে থাকার সময় না আমি গাড়ি বের করতেছি তুই পরিকে নিয়ে আয়। বলে ইমন ভাইয়া বাহিরে চলে গেলো।
রিফাত পরিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে সোজা গাড়িতে বসিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আরেকটা গাড়িতে পিছনে পিছনে সবাই হাসপাতালে আসে। রুকু আগেই হাসপাতালে ফোন দিয়ে বলে দিয়েছি অপারেশন থিয়েটার ঠিক করে রাখতে।হসপিটালে পৌঁছে রিফাত গাড়ি থেকে নেমে পরিকে কোলে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। ডাক্তার এসে দেখে পরির অবস্থা ভালো না তাই সাথে সাথে পরিকে অপারেশন থিয়াটারে নিয়ে যায়।
রুকু: ভাইয়া তুমি চিন্তা করো না ভাবির কিছুই হবে না। আমি আছি তো তুমি চিন্তা করো না বলে রুকুও অপারেশন থিয়াটারে ঢুকলো।
রিফাত একটা চেয়ারে বসে অবিরাম চোখের পানি ফেলতেছে আর আল্লাহকে ডাকতেছে। তার একটা ভুলের জন্য আজ পরির এই অবস্থা সে যদি কলটা ধরতে ছাদে না যেতো তাহলে আর কিছুই হতো না।
আম্মু: রিফাত কান্না করিস না। আল্লাহ সব ঠিক করে দিবে।
রিফাত: আম্মু পরির পেটে আমার বাচ্চা এরকম সময় ওর এই অবস্থা কিভাবে নিজেকে শান্ত রাখবো।
কিছুক্ষন পর ডাক্তার বেরিয়ে আসলো।
ডাক্তার: রোগির অবস্থা ভালো না। এর আগেও মাথায় আঘাত পাওয়ার কারনে অবস্থা খুব খারাপ। তার টুইন বেবি ছিলো ছেলে বেবিটা On the spot মারা গেছে। মেয়ে বেবিটারও অবস্থা ভালো না। আমরা মা মেয়ে থেকে যে কেনো একজনকে বাঁচাতে পারবো।
রিফাত: ডাক্তার আমার স্ত্রীকে বাঁচান আমার আর কিছু চাই না।
দাদি: না যদি বাচ্চা না থাকে তাহলে পরিরও বাঁচার কোনো দরকার নাই।
রিফাত: দাদি তুমি এ কি বলতাছো।
দাদি: আমি যা বলতেছি ভেবে চিন্তা করেই বলতেছি এই বিষয়ে আর কোনো কথা না। রুকু দাদিকে সব বলছে পরি যে বাচ্চা নষ্ট করতে গেছিলো সব ঘটনা। বাচ্চার এই ঘটনার পর থেকে রিফাত আর পরির মধ্যে অনেক দূরত্ব তৈরি হয়েছে যা আর কারোর চোখে না পড়লেও ঠিকই দাদির চোখে পড়ছে। এখন যদি বাচ্চা না থাকে তাহলে পরি জ্যান্ত লাশ হয়ে যাবে। এই কষ্ট থেকে একবারে মরে যাওয়াই ভালো। মেয়েটা তো আর জীবনে কম কষ্ট পায় নাই। এই তো মেয়েটার শেষ সম্বল তাই দাদি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
(আমার মাথায় ২টি প্রশ্ন ঘুরতেছে। ১টা পরি কি তাহলে মারা যায় এখানেই রিফাত আর পরির কাহিনীর সমাপ্ত ঘটবে?? আরেকটা পরিকে পড়ে যায় নাকি কেউ পরিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় উফফ কিছুই বুঝতাছি না কি হবে পরি আপু কি আর বাঁচবে না)
চলবে….