অব্যক্ত ভালোবাসা পর্ব -২৭

#অব্যক্ত_ভালোবাসা
#লেখনীঃআরভি_আহিয়াদ_তিহু
#দ্বিতীয়_পরিচ্ছেদ
#পর্বঃ২৭

রাত 12:25

শান বুকে হাত গুজে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সামনেই রুশার বেডের পাশে রাখা একটা চেয়ারের উপর বসে রুশার এক হাত আকড়ে ধরে রেখেছে আয়াশ। আয়াশের চোখ থেকে টুপটাপ পানি গড়িয়ে পড়ছে। ‘ও’ নিঃশব্দে কান্না করছে আর একটু পরপর ফ‍্যাচ ফ‍্যাচ করে নাক টানছে। বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব দেখে যাচ্ছে শান। আয়াশ নিজের কান্না নিয়ে এতটাই ব‍্যস্ত যে ‘ও’ এখন পযর্ন্ত এই ঘরে শানের উপস্থিতি টেড়ই পায়নি।

ডাক্তার আর নার্সেরা নিচে ডিনার করতে যাচ্ছে দেখে শান রুশার কাছে আসার জন‍্যে উদ‍্যত হয়। রুমের সামনে এসে দেখে দরজাটা হালকা করে চাপানো আছে। ‘ও’ নিঃশব্দে দরজা ঠেলে ভিতরে আসতেই দেখতে পায় আয়াশ ওখানে বসে বসে কাঁদছে। তাই শান আর কোনো শব্দ না করেই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আয়াশের কার্যকলাপ লক্ষ্য করতে থাকে।

বেশ অনেকটা সময় চলে যাওয়ার পরেও আয়াশের কান্না গতি বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হচ্ছে না দেখে শান ফোশ করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। তারপর আয়াশকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে রাশভারী কণ্ঠে বলে উঠে,

–“দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আমার পাঁ ব‍্যাথা হয়ে গেল। কিন্তু তোমার কান্নার স্পিড কমার নামই নিচ্ছে না দেখছি। এত কান্নাকাটি করলে তোমার চোখের পানিতে এই রুম সমুদ্রে পরিনত হবে।”

পিছন থেকে আচমকা শানের কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসতেই আয়াশ চমকে উঠল। তড়িৎ গতিতে হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে পিছনে ঘুরে তাকাল। পিছনে শানকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
–“তুমি এখানে? কখন আসলে?”

শান খানিকটা দুষ্টুমি ভরা কণ্ঠে বলল,
–“যখন তুমি ফ‍্যাচফ‍্যাচ করে কান্নাকাটি শুরু করেছিলে তখন।”

শানের কথা শুনে আয়াশ বেশ বিরক্ত হলো। কণ্ঠে বিরক্তির রেশ টেনে বলল,
–“তোমার মধ‍্যে সাধারন সহবধ টুকুও নেই দেখছি। কারো রুমে ঢোকার আগে পারমিশন নিতে হয়, জানোনা?”

আয়াশের এমন কথায় শানের চেহারাটা মুহূর্তের মধ‍্যে সিরিয়াস হয়ে গেল। ‘ও’ খানিকটা ত‍্যাড়া গলায় বলে উঠল,

–“রুমটাও আমার আর বউটাও আমার। তাই পারমিশান নেওয়ার প্রয়োজন মনে করিনি।”

আয়াশের কপালে ভাঁজ পড়ল। ‘ও’ চোখে-মুখে সন্দেহের রেশ টেনে জিজ্ঞেস করল,
–“বউ মানে? কে তোমার বউ?”

শান বুক থেকে হাত নামিয়ে হাত দুটো ট্রাউজারের পকেটে ঢুকিয়ে সটান হয়ে দাড়াল। চেহারায় গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলল,
–“তুমি যার হাত ধরে বসে আছো, সে।”

আয়াশ একবার ওর হাতের মধ‍্যে থাকা রুশার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার রুশার চেহারার দিকে তাকাল। তারপর শানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভারী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
–“মানেহ? কি বলতে চাইছ তুমি?”

–“মানেহ খুবই পরিষ্কার। রুশা আমার আইনত বিয়ে করা বউ। আমার আর ওর রেজিস্ট্রি করে বিয়ে হয়েছে।”

শানের কথাটা আয়াশের কিছুতেই বিশ্বাস হলো না। ‘ও’ দৃঢ় গলায় বলল,
–“নেভার। এরকম টা হতেই পারে না। এরকম কিছু ঘটলে রুশা আমাকে অবশ‍্যই বলত।”

–“জানলে তো বলত। রুশা নিজেই এখনো এই ব‍্যাপারে কিছু জানে না।”

আয়াশ বলল,
–“তোমাদের বিয়ে হয়ে গেছে অথচ রুশা সেটা জানেই না? সেটা কীভাবে সম্ভব? ফাজলামি কোরো না শান। আমি ফাজলামির মুডে একদম নেই।”

আয়াশের কথার প্রতিউত্তরে শান কিছু বলল না। এগিয়ে গিয়ে কাবার্ডের সামনে দাড়াল। কাবার্ডের দরজা খুলে মধ‍্যের ছোট্ট একটা ড‍্রয়ার বের করে পাসওয়ার্ড বসিয়ে ড্রয়ার টা খুলে ফেলল। তারপর ড্রয়ার থেকে একটা পেপার বের করে নিয়ে এসে আয়াশের দিকে বাড়িয়ে দিল। আয়াশ ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করল,
–“কি এটা?”

শান স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
–“নিজেই দেখে নেও।”

আয়াশ পেপার টা হাতে নিয়ে চোখ বোলাতেই ওর কপালের রগ ফুলে উঠল। পেপারের উপরে বিয়ের তারিখটা দেখে ওর আর বুঝতে বাকি রইল না এই বিয়েটা কবে এবং কীভাবে হয়েছে। ‘ও’ বসা থেকে দাড়িয়ে শানের টি-শার্টের গলার অংশ চেপে ধরে দাঁতে দাঁত পিষ্ট করে বলল,

–“এইজন‍্যেই তুমি রুশাকে সেদিন কিডন‍্যাপ করেছিলে, তাইনা? বাট আমার কাছে এসবের কোনো ভ‍্যালু নেই। আর আমি এই বিয়েটাও মানি না।”

শান কঠিন দৃষ্টিতে আয়াশের দিকে তাকাল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–“তুমি বিয়েটা না মানলেই তো আর এই বিয়েটা মিথ‍্যা হয়ে যাবেনা, তাইনা?”

আয়াশ চটে গেল। আগের থেকেও আরো শক্ত করে শানের টি-শার্ট টা চেপে ধরল। তারপর রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

–“তোমার লজ্জা করছে না? সবকিছু জানার পরেও তুমি পুরনো একটা ব‍্যাপারকে টেনে এভাবে লম্বা করে আমার থেকে প্রতিশোধ নেওয়ার জন‍্যে রুশার লাইফটা নষ্ট চাইছ? কেমন মানুষ তুমি?”

আয়াশের কথা শুনে শান মুখ বাঁকিয়ে হাঁসল। ঠোঁটের কোনে বিদ্রুপের হাঁসিটুকু বজায় রেখেই বলল,

–“হৃদানের কি অবস্থা করেছি, দেখেছ? আমি এখন পযর্ন্ত যাদের যাদের থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি তাদের পরিনাম ঠিক এরকম-ই ভয়ংকর হয়েছে। তোমার থেকেও যদি প্রতিশোধ নিতে চাইতাম তাহলে তুমি আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমার কলার ধরার মতো অবস্থায় এখন থাকতে না। এতক্ষণে তোমার ক‍্যারিয়ার শেষ করে তোমাকে বাটি ধরিয়ে রাস্তায় বসিয়ে দিতাম। আর চাইলে সেটা এখনো করতে পারি। কিন্তু করব না। কজ আমাদের মধ‍্যে আগে যা যা হয়েছে সেই সব কিছুই আমি ভুলে গেছি।”

শানের কথা শুনে আয়াশের হাতটা আলগা হয়ে এলো। ‘ও’ শানের কলার থেকে হাত নামিয়ে পেপারটা শানের সামনে ধরে বলল,

–“সব যখন ভুলেই গেছো তখন এই পেপারটা রেখে দিয়েছ কেন? এটাকেও ছিড়ে ফেলতে।”

শান আয়াশের হাত থেকে পেপারটা টেনে নিজের হাতে নিয়ে নিল। তারপর রাশভারী গলায় বলল,

–“এটার পিছনে একটা কারন আছে। যেটা বলার জন‍্যেই তোমাকে পেপারটা দেখতে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন তোমাকে আমি কিচ্ছু বলব না।”

কথাটা বলে শান পেপারটা নিয়ে আবারও কাবার্ডে রেখে দিল। তারপর আয়াশকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে গটগট করে রুম থেকে বের হয়ে গেল। আয়াশ শানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে আবারও চেয়ারে বসে পড়ল। এই ছেলেটার মতিগতি বোঝা ওর পক্ষে অসম্ভব। মাঝে মাঝে এমন বিহেব করে মনে হয় আয়াশ ওর ভিষণ কাছের। আবার মাঝে মাঝে এমন কিছু কাজ করে যেটা দেখলে আয়াশের মনে হয় শান এখনো পুরনো রাগ ওর মনের মধ‍্যে পুষে রেখেছে।
_________________________

চার দিন পর…..

রুশা বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে আছে। পাশেই ডাক্তার বসে বসে ওর হাত থেকে ক‍্যানোলা খুলছে। আর রাহেলা রায়জাদার সাথে টুকিটাকি কথা বলছে। ডাক্তার নিজের কাজ শেষ করে ওনাদের যাবতীয় সব জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে যাওয়ার জন‍্যে উঠে দাড়াল। রাহেলা রায়জাদাও ওনাকে এগিয়ে দেওয়ার জন‍্যে ওনার পাশে এসে দাড়ালেন। ডাক্তার রুশাকে উদ্দ‍্যেশ‍্য করে বললেন,

–“একটু সাবধানে থাকবেন। আর গলায় প্রেশার টা একটু কম দিবেন। ভিতরের ক্ষতগুলো কিন্তু এখনো কাচা রয়ে গেছে। আর আপাতত দুই/তিন দিন হেবি টাইপ খাবার থেকে দূরে থাকবেন। যতটা সম্ভব লিকুইড টাইপ খাবার খাবেন।”

কথাটা বলে ডাক্তার রুশার থেকে বিদায় নিয়ে নার্সদের নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। ওনাদের সাথে রাহেলা রায়জাদাও বেড়িয়ে গেলেন। রুশা বেডের সাথে ভালো করে হেলান দিয়ে বসে ওর ফোনটা হাতে নিয়ে স্ক্রল করায় মনোযোগ দিল। কিছুক্ষণ পর দরজায় খটখট আওয়াজ আসার শব্দে রুশা ফোন থেকে চোখ উঠিয়ে সামনে তাকাল। দরজার সামনে শানকে বাঁটি হাতে দাড়িয়ে থাকতে দেখে ওর ভ্রু কুচকে এলো। শান ভিতরে ঢুকে এগিয়ে এসে রুশার বেডের পাশের ছোট্ট টেবিলটার উপরে বাঁটি টা রেখে দিল। রুশা বাটিটার দিকে তাকিয়ে নাক কুচকে ফেলল। বাটিতে সূপ আছে। লাস্ট আড়াই দিন ধরে সূপ আর স্ট‍্যু খেতে খেতে ওর মুখটা একদম বিষাদ হয়ে গেছে। কিন্তু আপাতত এসব খাওয়া ছাড়া ওর কাছে আর কোনো অপশন নেই। সুস্থ থাকতে হলে এখন এসবই খেতে হবে সেটা রুশা ভালো করেই জানে।

শান প্রতিদিনের মতো রুশার পাশে এসে বসল। টেবিল থেকে সূপের বাটিটা হাতে নিয়ে এক স্পুন সূপ রুশার দিকে বাড়িয়ে দিল। রুশা শানের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলে উঠল,

–“আমার হাত থেকে ক‍্যানোলা খুলে ফেলেছে। বাঁটি টা আমার হাতে দিন। আমি নিজে নিজেই খেয়ে নিচ্ছি।”

রুশা কথাটা বলে শানের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষা না করেই ওর হাত থেকে বাঁটি টা টেনে নিজের হাতে নিয়ে নিল। রুশার এমন কান্ডে শান বিরক্তির দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রুশা সেসবে তোয়াক্কা না করে চুপচাপ বসে বসে সূপ খাওয়ায় মনোযোগ দিল। শান স্থির দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর খাওয়া দেখতে লাগল। খেতে খেতে রুশা বলে উঠল,

–“আমার মেডিসিন আর ডাক্তারদের ফি সহ টোটাল কত টাকা খরচ হয়েছে?”

রুশার প্রশ্নের কোনো অ‍্যান্সার না দিয়ে শান ওকে পাল্টা প্রশ্ন করে বলল,
–“কেন? সেসব জেনে তুমি কি করবে?”

রুশা সোজাসাপ্টা ভাবেই জবাব দিল,
–“আপনার টাকা টা আপনাকে পরিশোধ করব। আপনি আমার জন‍্যে এতদিন যা যা করেছেন সেটাই অনেক। এরপর আপনার টাকা বাকি রেখে আমি ঋণের ভাগীদার হতে চাই না।”

রুশার কথায় শানের চোখে মুখে গাম্ভীর্য ফুটে উঠল। ‘ও’ রাশভারী স্বরে বলে উঠল,
–“মনে হচ্ছে তোমার কাছে প্রচুর টাকা আছে।”

–“উহুম, আপনার কাছে যত টাকা আছে তার দশ ভাগের এক ভাগও নেই। তবে যতটুকু আছে সেটা দিয়ে আমি আমার যাবতীয় সমস্ত খরচ বহন করতে সক্ষম।”

শান বলল,
–“গুড! ভেরি গুড। বাট তোমার ট্রিটমেন্টের দ্বায়ীত্বটা এবার আমি নিয়েছি। তাই এটার খরচ নিয়ে তোমাকে মাথা ঘামাতে হবে না।”

রুশা এতক্ষণে খাবারের বাঁটি থেকে চোখ উঠিয়ে শানের দিকে তাকাল। খানিকটা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,

–“কেন? কোন দুঃখে? আমার দ্বায়ীত্ব নেওয়ার কে আপনি? আপনি কি আমার রিলেটিভ না-কি গার্ডিয়ান? না-কি আমার বাবা-মা? আমার যতদূর মনে আছে তাতে আপনি আমার কেউ হন না। আপনার সাথে দূর দূরান্ত পযর্ন্ত আমার কোনো সম্পর্ক নেই। তাহলে আপনি আমার দ্বায়ীত্ব কেন নিবেন?”

রুশার কথায় শানের বুঁকের মধ‍্যে মোচড় দিয়ে উঠল। মেয়েটা কীভাবে মাত্র কয়েকটা শব্দ ব‍্যবহার করেই ওকে মুহূর্তের মধ‍্যে পর করে দিল। শান শান্ত দৃষ্টিতে রুশার দিকে তাকিয়ে শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,

–“আমি কি সত‍্যিই তোমার কেউ হই না? তোমার সাথে কি সত‍্যিই আমার কোনো সম্পর্ক নেই?”

শানের শীতল চাহনির দিকে তাকাতেই রুশা নিজের কয়েকটা হার্টবিট যেন মিস করে ফেলল। দ্রুত চোখ সরিয়ে নিয়ে সূপের বাঁটি থেকে অনবরত এক স্পুনের পর আরেক স্পুন সূপ মুখে ঢোকাতে ঢোকাতে বলে উঠল,
–“নাহ নেই।”

রুশার এমন সোজাসাপ্টা কথায় শান বিরক্ত হলো। চোখে মুখে স্পষ্ট বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বলল,
–“কথাটা আমার চোখের দিকে তাকিয়ে তারপর বলো।”

রুশা আগের মতো করেই গপাগপ করে খেতে খেতে ব‍্যস্ত গলায় জবাব দিল,
–“এখানে আবার চোখের দিকে তাকিয়ে বলার কি আছে? আপনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর আমাদের মধ‍্যে যা যা হয়েছে তারপর কোনো সম্পর্ক থাকার কথাও না।”

–“তারমানে তুমি আমাকে ভালোবাসো না, তাই তো?”

শান কথাটা বলার সাথে সাথে রুশার মুখের মধ‍্যে থাকা সূপটুকু ফুচ করে বের হয়ে বাঁটির মধ‍্যে পড়ে গেল। ‘ও’ বাঁটিটা সাইডের টেবিলে রেখে ফিক করে হেঁসে দিল। বিদ্রুপের ভঙ্গিতে হাঁসতে হাঁসতে বলে উঠল,

–“এরকম একটা অদ্ভুত প্রশ্ন আপনি আমাকে কীভাবে করতে পারলেন মিঃ রায়জাদা? আমার কি এতটা খারাপ সময় এসে গেছে যে দেশে এত ছেলে থাকতে আমি আপনার মতো একজনকে ভালোবাসবো?”

এতক্ষণ সব সহ‍্য করে নিলেও রুশার এত তাচ্ছিল‍্য ভরা কথাটা শানের কিছুতেই সহ‍্য হলো না। ওর মনে এতক্ষণের দমিয়ে রাখা রাগটা মুহূর্তের মধ‍্যে যেন দাউদাউ করে জ্বলে উঠল। ‘ও’ রুশার বাহু ধরে রুশাকে বেডের সাথে চেপে ধরল। আকষ্মিক ঘটনায় রুশা হতবম্ভ হয়ে গেল। শান রুশার গালের সাথে নিজের নাক ছুয়িয়ে দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

–“আমার সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই! আমি তোমার কেউ হই না! আমাকে তুমি ভালোবাসো না! এমনকি ভালোবাসার কথা ভাবতেও পারো না! অথচ আমার প্রান বাঁচানোর জন‍্যে তুমি তোমার মায়ের শেষ স্মৃতি পযর্ন্ত বিক্রি করে দিয়েছিলে। কেন দিয়েছিলে? আমাকে যখন এতই অপছন্দ করো তাহলে আমাকে মরতে দিলে না কেন সেদিন?”

শানের কথা শুনে রুশার বুঁকের মধ‍্যে ধক করে উঠল। ‘ও’ শুকনো ঢোক গিলে থম মেরে বসে রইল। শান এসব কীভাবে জানল? শানের তো এসব জানার কথা না। রুশা শুকনো গলায় থতমত খাওয়া কণ্ঠে বলল,

–“কী বলছেন আপনি এসব? আমি আবার আপনাকে কবে বাঁচালাম? উল্টোপাল্টা কিছু খেয়েছেন না-কি?”

কথাটা বলে রুশা শানের বুঁকে ধাক্কা দিল। শান রুশার হাতের বাহু আগের থেকেও আরো শক্ত করে চেপে ধরল। তারপর ধমকের স্বরে বলল,

–“শাটআপ! একদম ড্রামা করবে না। আমি সব জানি।”

রুশার গলাটা শুকিয়ে এলো। ওর এখন কি বলা উচিৎ ‘ও’ সেটাই বুঝে উঠতে পারল না। শানের থেকে ছাড়া পাওয়ার জন‍্যে হাশফাশ করতে শুরু করল। কিন্তু শানের মধ‍্যে কোনো ভাবান্তর হলো না। ‘ও’ আগের মতো করেই রুশাকে চেপে ধরে বসে রইল। এরমধ‍্যেই মিসেস রাহেলা রায়জাদা ফোনে কথা বলতে বলতে রুমের ভিতরে ঢুকলেন। ওনার কণ্ঠস্বর কানে আসতেই শান রুশাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে গেল। রাহেলা রায়জাদা ফোনে কথা বলতে ব‍্যস্ত থাকায় উনি ব‍্যাপারটা অতোটা খেয়াল করলেন না। উনি কথা বলতে বলতে এগিয়ে এসে রুশার অপর পাশে বসে পড়লেন। অসময়ে মায়ের এখানে আগমন হওয়ায় শান বের বিরক্ত হলো। ‘ও’ মুখ থেকে বিরক্তি সূচক ‘চ’ শব্দ উচ্চারণ করে গটগট করে হেঁটে রুম থেকে বের হয়ে গেল। রুশা একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। তারসাথে এসবের থেকে বাঁচার জন‍্যে মনে মনে কঠিন একটা ডিসিশনও নিয়ে নিল।
_________________________

সন্ধ‍্যা ছয়টা বাজে। সৃজা রুমে বসে বসে একটা ম‍্যাগাজিন উল্টেপাল্টে দেখছিল। তখনই ধীর পাঁয়ে রুশা এসে ওর রুমে প্রবেশ করল। রুশাকে দেখে সৃজা মুচকি হেঁসে ম‍্যাগাজিন টা সাইডে রেখে দিল। রুশা এগিয়ে এসে সৃজাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটা চেক ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,

–“সৃজা এই চেক টা তোমার ভাইয়া আসলে তাকে দিয়ে দিও। বলে দিও, আমার ট্রিটমেন্টে যেই টাকা খরচ হয়েছে সেই পরিমান এমাউন্ট চেকে বসিয়ে টাকাটা যাতে উনি ব‍্যাংক থেকে তুলে নেয়।”

রুশার কথায় সৃজা অবাক হলো। অবাক চোখে রুশার দিকে একবার তাকিয়ে চেক টা হাতে নিল। দেখল এটা রুশার সাইন করা একটা ব্লাঙ্ক চেক। সৃজা চোখে মুখে অবাকের রেশ ধরে রেখেই জিজ্ঞেস করল,

–“আপু, তুমি কি কোথাও যাচ্ছো?”

রুশা স্বাভাবিক কণ্ঠেই বলল,
–“হ‍্যাঁ, বাসায় চলে যাচ্ছি।”

–“বাসায় যাচ্ছো? কিন্তু কেন? তুমি তো এখনো অনেকটা অসুস্থ।”

রুশা মুচকি হেঁসে বলল,
–“এইটুকু অসুস্থতায় আমার কিছু হবে না। বাসায় গেলেই আমি আপনা আপনি সুস্থ হয়ে যাব। তুমি নিজের খেয়াল রেখো। ঠিকঠাক মতো মেডিসিন গুলো খেও। আর দৌড় ঝাপ একটু কম কোরো।”

রুশার কথায় সৃজা কাঁদো কাঁদো দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকাল। রুশা হাত বাড়িয়ে সৃজার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে একটা আদুরে মিশ্রিত হাঁসি দিল। সৃজা হুট করেই রুশার কোমড় জাপটে ধরে কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠল,

–“আর কয়েকটা দিন থাকো না আপু। অন্তত আমার সুস্থ হওয়া পযর্ন্ত এখানে থেকে যাও, প্লিজ।”

–“আমার ছুটি শেষ হয়ে গেছে সৃজা। কালকে থেকে আমায় হসপিটালে জয়েন করতে হবে। নাহলে আমি আরো কিছুদিন এখানে থেকে যেতে পারতাম।”

রুশা কথাটা বলতেই আয়াশ ব‍্যস্ত পাঁয়ে সৃজার রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠল,
–“রুশ ইয়ার, এতক্ষণ লাগে তোর আসতে? লেইট হয়ে যাচ্ছে তো। চল তাড়াতাড়ি।”

সৃজা রুশার কোমড় ছেড়ে দিয়ে আয়াশের দিকে তাকাল। তারপর অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,
–“আপনিও চলে যাচ্ছেন? কিন্তু কেন?”

আয়াশ সৃজার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলল,
–“কেন মানে? রুশের সাথে যখন এসেছি। তখন ওর সাথে যাব, এটাই স্বাভাবিক।”

আয়াশের কথা শুনে সৃজা ভ‍্যাঁ ভ‍্যাঁ করে কেঁদে দিল। কাঁদতে কাঁদতে বলল,
–“তোমরা সবাই কেন আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছো? তোমরা দেখছ না আমি কতটা অসুস্থ? তারপরেও আমাকে একা রেখে যাচ্ছো কেন?”

সৃজার এমন মরা কান্না দেখে আয়াশ বিরক্ত হলো। ‘ও’ রুশার দিকে তাকিয়ে বিরক্তির স্বরে বলল,
–“রুশ মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু। তুই আমার সাথে যাবি না-কি এখানে দাড়িয়ে দাড়িয়ে এসব নটাংকি দেখবি?”

আয়াশ কথাটা বলার সাথে সাথে সৃজা একটা বালিশ উঠিয়ে আয়াশের মুখের উপরে ছুড়ে মারল। তারপর চেঁচিয়ে বলল,

–“আপনি একটা খারাপ মানুষ। আমি জানি, আপনিই রুশা আপুকে জোর করে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ্ আপনার কোনোদিন ভালো করবে না। আপনার উপরে চৈত্র মাসের টাটকা ঠা*ডা পড়বে। আপনার গাড়ির সবগুলো চাকা একসাথে ব্লা*স্ট হয়ে যাবে। আপনি আর আপনার গাড়ি দুটোই একসাথে পচা ডোবায় গিয়ে পড়বেন। মিলিয়ে নিয়েন!”

–“বেয়াদব মেয়ে তোমার মুখ আমি ভেঙে দিব।”

কথাটা বলে আয়াশ রেগে বো’ম হয়ে সৃজার দিকে তেড়ে আসলো। অবস্থা বেগতিক দেখে রুশা টানতে টানতে আয়াশকে রুমের বাইরে নিয়ে চলে গেল। ওরা যেতেই সৃজা পিছন থেকে চিল্লিয়ে চিল্লিয়ে আয়াশকে কয়েকটা বকা দিয়ে ধপাস করে বেডের উপরে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ল। তারপর হাত-পাঁ ছুড়ে আবারও ভ‍্যাঁ ভ‍্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিল।

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here