আবেগময় সম্পর্ক পর্ব -২৭+২৮

#আবেগময়_সম্পর্ক
#২৭তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল সকালের খাবার রান্না করে সকলকে খেতে ডাকে। গত কাল কোন রকমে মায়ানের জন্মদিনটা পালিত হয়েছে। মায়ানের মন খুব খারাপ। আজ সে অভিমান করে ঘরে শুয়ে আছে। মেহুল আকাশকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। একটু পরেই সে অফিসে চলে যাবে। পিহু, আশিক ওরাও রেডি হয়েছে। আশিকের অফিস থেকে এক দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিল তাই এবার ওকে ফিরতে হবে। খাবার খেতে বসে সবাই চুপচাপ খেয়ে নেয়। এরপর চলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এলে পিহু মেহুলকে যাওয়ার আগে বলে যায়,“আপি তুই সব কিছু ভালো করে সামলানোর চেষ্টা করিস। আবার দেখিস রায়ানকে কথা ভাবতে নিতে গিয়ে মায়ানের অযত্ন যেন না হয়। ছোট বাচ্চাদের উপর এসবের বাজে প্রভাব পড়তে পারে।”

মেহুল তখন বলে, “আমি এক জন মা হিসেবে নিজের সব সন্তান দের কে সমান চোখে দেখব। তাদের সমান যত্ন নেওয়ার চেষ্টা করব। কারো যাতে অবহেলা না হয় সেটা আমিই দেখব।”

পিহু,আশিক এবং আকাশ সবাই চলে যায়।
____________________________
মেহুল আজ এসেছে মায়ানের সাথে তার স্কুলে। এই স্কুলে রায়ানও পড়ে। মেহুল স্কুলে আসলে একজন শিক্ষক তাকে বলে, “আপনি রায়ানের মা তাইনা?”

মেহুল বলে, “জ্বি, কেন কোন সমস্যা হয়েছে রায়ানের?”

শিক্ষক বলেন,“প্রিন্সিপাল ম্যাডাম আপনাকে রুমে ডাকছে। কি যেন জরুরি কথা আছে আপনার সাথে।”

মেহুল প্রিন্সিপালের রুমের দিকে অগ্রসর হয়। রুমের বাইরে এসে বলে,“মে আই কাম ইন?”

প্রিন্সিপাল ম্যাডাম বলেন কাঠখোট্টা গলায় বলেন,“ইয়েস কাম।”

মেহুল ভেতরে প্রবেশ করে। প্রিন্সিপাল বলে, “হ্যাভ আ সিট।”

মেহুল বসে পড়ে। প্রিন্সিপাল ম্যাডাম মেহুলের হাতে একটা রেজাল্ট কার্ড তুলে দিয়ে বলে, “এই হলো আপনার ছেলে রায়ানের রেজাল্ট। আমি সত্যিই খুব অবাক হয়ে যাচ্ছি। সেই ছেলে আগে প্রত্যেকটা ক্লাসে টপ করত এখন সে তিনটে সাবজেক্টে ফেইল করেছে। আর ইদানীং ওর নামে অনেক কমপ্লেইন্টও পাচ্ছি আমি। ক্লাসে ও একেবারেই অমনোযোগী। আর অনেক দুষ্টুমিও করে। মূলত এই জন্যই আমি আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছি। আপনি রায়ানকে একটু শাসন করুন। নাহলে কিন্তু ও দিনে দিনে আরো বখে যাবে।”

প্রিন্সিপাল ম্যাডামের কথা শুনে মেহুল বলে, “ঠিক আছে, আমি দেখছি এই ব্যাপারে।”

এরপর মেহুল উঠে বাইরে চলে আসে। রায়ানের উপর খুব রাগ হয় মেহুলের। তার রেজাল্ট এবার অনেক খারাপ হয়েছে। তাই মেহুল সিদ্ধান্ত নেয় এবার রায়ানকে শাসন করবে।

❤️
দুপুরে স্কুল থেকে ফিরে রায়ান ফোন নিয়ে গেমস খেলতে বসে পড়ে। এমন সময় মেহুল এসে রায়ানের হাত থেকে ফোন কেড়ে নেয়। রায়ান বিরক্ত হয়ে বলে,“আমার ফোন নিলে কেন? দাও আমার ফোন।”

মেহুল রাগ দেখিয়ে বলে,“চুপ আর একটা কথাও বলবে না তুমি। সারা দিন খালি ফোন আর ফোন। এই ফোনই যত নষ্টের মূল। তোমার রেজাল্ট কি হয়েছে দেখেছ? তুমি না ডাক্তার হতে চাও। এই রেজাল্ট দিয়ে ডাক্তা হবে? গণিতে ৫, ইংরেজিতে ৮ এসব কি নাম্বার?”

রায়ান বলে, “সেসব নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমার ফোন টা দাও তো।”

মেহুল এপর্যায়ে নিজেকে সামলাতে না পেরে রায়ানের ফোনটা আ★ছাড় দিয়ে ভেংগে দেয়। চিৎকার করে বলে,“কোন ফোন চলবে না। আজ থেকে তুমি শুধু পড়বে। বুঝতে পেরেছ? শাসন না করে করে মাথায় উঠে গেছ।”

রায়ান নিজের ফোন ভেঙ্গে যেতে দেখে কাঁদতে শুরু করে দেয়। বলে, “এটা কি করলে তুমি? আমার ফোন..তুমি খারাপ অনেক বেশি খারাপ। আই জাস্ট হেইট ইউ।”

মেহুল নিজের ক্রোধ সম্বরণ করতে না পেরে রায়ানকে মা★রতে উদ্যত হয় এবং বলে, “হ্যাঁ খুব খারাপ আমি৷ তোমার ভালোর জন্য যদি আমাকে খারাপ হতে হয় তাহলে তাই হবো।”

এমন সময় আকাশ এসে মেহুলের হাত ধরে ফেলে। মেহুল আকাশকে দেখে চমকে যায়। নিজের হয়ে কিছু বলার আগেই আকাশ মেহুলকে থা★প্পড় দেয়। মেহুল অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আকাশের দিকে।

আকাশ মেহুলকে হুংকার দিয়ে বলে,“কোন সাহসে তুমি আমার ছেলের গায়ে হাত তুলতে যাও? এত সাহস তোমাকে কে দিয়েছে!”

মেহুল বলে ওঠে, “তুমি আমায় মা*রলে? এই প্রথম তুমি আমার গায়ে হাত তুললে। আর কি বললে তোমার ছেলে…রায়ান কি আমার কেউ নয়?”

আকাশ রাগী গলায় বলে, “না কেউ নয়৷ যদি তুমি রায়ানকে নিজের ছেলে ভাবতে তাহলে ওর গায়ে হাত তুলরে না। আসলে সবাই ঠিক বলে সৎ মা কখনো আপন হয়না। সৎ সৎই হয়। তুমিই সেটা প্রমাণ করে দিলে। তোমাকে বিয়ে করাই আমার ভুল হয়েছে। সৎ মা কখনো আসল মায়ের জায়গা নিতে পারে না সেটা আমার বোঝা উচিৎ ছিল।”

মেহুল নিজের চোখের জল মুছে বলে,“তুমি ভুলে যেও না আমি আসার আগে রায়ানের অবস্থা কত করুণ ছিল। তোমরা কেউ রায়ানকে ভালোবাসতে না। কারণ তোমরা ভাবতে রায়ান অন্তরা এবং ওর বয়ফ্রেন্ডের ছেলে। আমিই সেই ছিলাম যে এসে রায়ানকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসা দিয়েছি। আর কত কি করেছি ওর জন্য । যদি ওকে সৎ ভাবতাম তাহলে এত কিছু করতাম না। হাহ, এসব বলে আর লাভ নেই। কারণ ঐ যে কথায় আছে না, তুমি হাজারটা ভালো কাজ করো কেউ সেটা মনে রাখবে না কিন্তু একটা ভুল করো ব্যাস দেখবে সবাই তোমার আগের সব অবদান ভুলে যাবে৷ আজ আমি রাগের মাথায় রায়ানকে মা*রতে গেলাম জন্যই খারাপ হয়ে গেলাম তাইতো? তুমি একবারো জানতে চেয়েছ আমি রায়ানকে কেন মা*রতে চেয়েছি?”

মেহুল রায়ানের রেজাল্ট কার্ড আকাশের হাতে দিয়ে বলে, “এই দেখ এটা রায়ানের রেজাল্ট। আগে ও পড়ালেখায় কত ভালো ছিল আর এখন.. আজ যদি আমি রায়ানের আসল মা হতাম তাহলে তুমি নিশ্চয়ই আমাকে কিছু বলতে না। রায়ানকে শাসন করলেও কিছু হতো না৷ কিন্তু সৎ মা জন্যই ভালোর জন্য শাসন করলেও সেটা খারাপই মনে হয়। ঠিক আছে, আমি আর রায়ানকে নিয়ে কিছু বলব না। তোমার ছেলেকে তুমিই সামলাও।”

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে মেহুল কাঁদতে কাঁদতে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আকাশ আফসোস করতে থাকে মেহুলের গায়ে হাত তোলার জন্য এবং তার পেছনে ছুটে যায়।

রায়ান বলতে থাকে,“আমি জানি কেউ আমাকে ভালো বাসে না। আমার কোন দাম নেই কারো কাছে।”

মেহুল নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে কান্না করতে থাকে৷ মায়ান মেহুলকে কান্না করতে দেখে বলে, “তুমি দেদোনা(কেঁদোনা) আম্মু। আমি আর দুশতুমি করব না।”

মেহুল মায়ানকে আকড়ে ধরে কাঁদতে থাকে। আজ মেহুলের মনে হচ্ছে সে এত দিন যাদের আপন ভেবেছে তারা কেউই তাকে আপন ভাবে নি। শুধু নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। যাদের সাথে তার আবেগময় সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তাদের কাছে সে শুধু ছিল প্রয়োজনে প্রিয়জন!

#চলবে

(গল্পে নতুন মোড় আসতে চলেছে৷ খুব শীঘ্রই গল্পের কাহিনি ২০ বছর এগিয়ে যাবে মানে ২০ বছরের লিপ আসতে চলেছে গল্পে। পরবর্তী প্রজন্মের গল্প আরো সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করব। এবার তো তেমন রোম্যান্টিক কিছু ছিল না কিন্তু সামনে অনেক বেশি রোম্যান্টিক হতে চলেছে। )#আবেগময়_সম্পর্ক
#২৮তম_পর্ব
#লেখিনীতে_মৃদু_সুপ্রিয়া

মেহুল ঘরে বসে ছিল এমন সময় তার কাছে পিহুর ফোন কল আসে৷ মেহুল ফোনটা রিসিভ করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পিহুকে সব কিছু খুলে বলে। সব শুনে পিহু বলে, “তুই কাঁদিস না আপি৷ আমি আসছি ওখানে৷ তোর সাথে যা হয়েছে খুব অন্যায়। আমি এর শে*ষ দেখে ছাড়ব।”

মেহুল সারা রাত বেলকনিতেই কাটিয়ে দেয়। আকাশও লজ্জা এবং নিজের উপর রাগ থেকে মেহুলের সাথে কথা বলে না। সকালে উঠে আকাশ অফিসে চলে যায়। যাওয়ার আগে মেহুলকে সরিও বলে যায় কিন্তু মেহুল কোন রেসপন্স করে না।

মেহুল মায়ানকে তৈরি করে নিয়ে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে চলে আসে। বাড়িতে এসে সে টিভিতে নিউজ দেখে আজ অনেক ভাড়ী বৃষ্টিপাত হওয়ার আশংকা আছে। এই নিউজ দেখে মেহুল ভয় পেয়ে যায়৷ কারণ মায়ানকে স্কুল থেকে আনতে যেতে হবে। তাই মেহুল দ্রুত তৈরি হয়ে ছাতা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মায়ানকে নিয়ে চলে আসতে নেবে তখন রায়ানকে দেখতে পায়। মেহুল শুধু এক বার রায়ানকে জিজ্ঞাসা করে সে তার সাথে আসতে চায় কিনা। কিন্তু রায়ান নিজের তেজ দেখিয়ে বলে, “আমি ছোট বাচ্চা নই। আমি একাই যেতে পারব।”

গতকালের তিক্ত অভিজ্ঞতার পর মেহুলের আর কিছু বলার ইচ্ছা ছিল না৷ তাই মেহুল একাই মায়ানকে নিয়ে চলে আসে। রায়ান তার কিছু বন্ধু দের নিয়ে ক্রিকেট খেলা খেলতে মাঠে যায়। মাঠে গিয়ে তারা ক্রিকেট খেলতে শুরু করে।
____________________
মেহুল বাড়ি ফিরতে ফিরতে মৃদু মৃদু বৃষ্টি পড়তে শুরু করে দিয়েছে। মেহুল ও মায়ান আসার সময় অল্প ভিজে গেছে। মেহুল প্রথমেই মায়ানের গা মুছে দেয়। এরপর নিজের শরীরও মুছে নেয়। এরপর মেহুল সোফায় বসে পড়ে। সে ভাবতে থাকে কিভাবে ধীরে ধীরে তার সাজানো সংসারটা ধ্বংসের দিকে চলে গেলো। এসব ভেবেই মেহুল একটা ডায়েরি বের করল। এরপর সেই ডায়রিতে লিখতে শুরু করে দিল,“আমার জীবন অনেক বৈচিত্রময় হয়ে গেছে৷ জীবনে সব থেকে বড় সার্থকতাই বুঝি কারো অনেক কাছের হওয়া। কারো আপন হওয়া৷ কিন্তু আমার দূভার্গ্য আমি যাদের আপন ভেবেছি তারা কেউই আমাকে আপন ভাবে নি। এই আফসোস আমার থেকেই যাবে। যেই রায়ানকে নিজের ছেলের মতো মানুষ করেছি তার কাছে আজ আমি সৎ মা। যেই আকাশের জন্য আমি এত কিছু করলাম সে পর্যন্ত আমার গায়ে হাত তুলেছে৷ এসব কিছুর পর আমার নিজেকে সব থেকে বেশি অসহ্য লাগছে। জীবনটাকে অনেক বেশি টক্সিক মনে হচ্ছে। খুব ভালো হতো যদি এই জীবন থেকে মুক্তি পেতাম। কিন্তু আমার নিজের ছেলে আমার মায়ানের জন্য আমাকে বাঁচতে হবে। আমি চাই মায়ানকে মানুষের মতো মানুষ করতে। ব্যাস আমার আর কোন চাওয়া নেই এই জীবনে।”

ডায়েরির পাতায় এতটুকু লিখেই দীর্ঘ শ্বাস নিলো মেহুল। তার চোখের কার্নিশে জলও জমেছে অল্প অল্প। প্রকৃতিতে যেমন বর্ষণ চলছে তেমনি তার চোখ দিয়েও গড়িয়ে চলছে জলের ধারা।

মেহুল একটু ফ্রেশ হয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াতেই দেখতে পেল বৃষ্টির বেগ বৃদ্ধি পেয়েছে। মেহুলের এবার একটু টেনশন হয়। সে রায়ানের কথা ভাবে।এখনো রায়ান বাড়ি ফেরেনি। এই বৃষ্টিতে রায়ানের আবার কোন বিপদ হলো কিনা সেটাই ভাবছিল মেহুল। এমন সময় খুব জোরে বর্জ্যপাত হলো। মেহুল কেপে উঠল। তার মনে পড়ে যায় রায়ান বর্জ্যপাতে খুব ভয় পায়।

মেহুল আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারল না। মায়ানকে বিছানায় শুইয়ে দিল। আর বলল, “তুমি এখানেই থাকো। বাইরে যেও না। আমি তোমার ভাইয়াকে নিয়ে আসছি।”

মায়ান বলে, “বাইলে তো অনেক বৃট্টি(বৃষ্টি) হততে আম্মু। তুমি দেওনা(যেওনা)”

মেহুল মায়ানের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, “কোন চিন্তা করো না। আমি এই যাবো আর এই আসবো।”

“তুমি থত্তি(সত্যি) আথবে তো?”

“হুম”

বলে মেহুল মায়ানকে ঘরে রেখে চলে যায়। যাওয়ার আগে তাদের পাশের বাড়ির আনোয়ারা বেগমকে একটু মায়ানের পাশে থাকতে বলে। আনোয়ারা বেগম মায়ানকে নিজের নাতির মতোই দেখে। তার দুই ছেলেই বিদেশে থাকে। দেশে নিজের স্বামীর সাথে একাই থাকেন তিনি। তাই মেহুল যখন আবেদন করে তখন তিনি জানান তিনি থাকবেন।

আনোয়ারা বেগমকে মায়ানের পাশে রেখে মেহুল রওনা দেয় রায়ানকে খুঁজতে। কিছু দূর আসার পর মেহুল দেখতে পায় রায়ান রাস্তা দিয়ে ছুটে ছুটে আসছে। খুব বর্জ্যপাত হচ্ছে তাই হয়তো রায়ান ভয় পাচ্ছে। মেহুল একটু জোরে চিৎকার করে বলে, “রায়ান ধীরে আসো।”

কিন্তু রায়ান দ্রুত আসার চেষ্টা করে। অতর্কিতে রাস্তা পার হতে ধরে রায়ান। এমন সময় একটি গাড়ি সেদিকেই আসতে থাকে। মেহুলের নজর যায় সেদিকে। মেহুল রায়ানকে সরে যেতে বলে কিন্তু রায়ান জোরে ছুটে আসছিল। মেহুল কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত ছুটে যায়। রায়ানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু নিজে গাড়ির সাথে ধাক্কা খায়। মুহুর্তেই মেহুলের রক্তাক্ত দেহ রাস্তার মধ্যে ছিটকে পড়ে। রায়ান এটা দেখে চিৎকার করে বলে ওঠে, “নতুন মা..”
মেহুলের শ্বাস দ্রুত পড়ছিল। রায়ান মেহুলের কাছে এসে বলে, “তুমি কেন আমাকে বাঁচানোর জন্য এত বড় রিস্ক নিলে নতুন মা? আমি তোমাকে কত ভুল বুঝেছি কত অপমান করেছি আর তুমি…তুমি চিন্তা করো না আমি তোমার কিছু হতে দেবো না।”

মেহুল রায়ানের হাত ধরে বলে, “আমার কাছে আর বেশি সময় নেই রায়ান। আমি তোমাকে সব সময় নিজের ছেলেই ভেবেছি। তোমাকে শুধু একটাই অনুরোধ করব আমার মায়ানকে মানে তোমার ভাইকে দেখে রেখ। ওর কোন অযত্ন হতে দিও না।”

রায়ান কান্না করতে করতে বলে,“না তোমার কিছু হবে না।”

রায়ান পাগলের মতো এদিকে ওদিকে ছুটতে থাকে। কিন্তু বৃষ্টির দিন হওয়ায় রাস্তা প্রায় ফাঁকা। মেহুলকে যেই গাড়িটা ধাক্কা দিয়েছে সেটাও পালিয়ে গেছে।

রায়ান অনেক কষ্টে দুই তিনজন মানুষকে খুঁজে নিয়ে আসে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মেহুল মারা গেছে। রায়ান মেহুলের কাছে এসে তাকে জড়িয়ে বলতে থাকে,“কি হয়েছে তোমার নতুন মা? কথা বলো আমার সাথে। আমাকে শাসন করো, মা★রো যাই করো না কেন প্লিজ ফিরে আসো। আমি আর কখনো তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করব না। প্লিজ আমাকে এত বড় শাস্তি দিওনা।”

রায়ান মেহুলের সাথে কা★টানো তার সমস্ত মুহুর্ত মনে করতে থাকে। সেই প্রথম বিয়ের দিন মেহুল যখন রায়ানকে নিজের ছেলে করে আগলে নেয়। তখন থেকে রায়ানকে কতো আদর ভালোবাসা দিয়েছে। রায়ানের প্রতি সব অবদান মনে করে। আসলে একটা কথা ঠিক দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্যাদা দেয় না,কিন্তু হারালে ঠিকই আফসোস করে। তাই এখন রায়ান কান্না করতে করতে বলে,“নতুন মা, তুমি প্লিজ চোখ খোল। তাকাও আমার দিকে।”

রায়ানের সাথে আসা লোকেরা এসে তাকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। মেহুলের পালস চেক করে আর নিঃশ্বাস পড়ছেনা দেখে একজন বলে,“ইনি তো মা★রা গেছেন।”

কথাটা শুনে রায়ান স্তব্ধ হয়ে যায়। একজন তাকে বলে, “ইনি কি তোমার মা? তোমার পরিবারের কারো নাম্বার দাও। ইনি মারা গেছেন। তোমার পরিবারকে তো জানাতে হবে।”

রায়ান ভাবলেশহীন ভাবে আকাশের নাম্বারটা বলে। তারপর মেহুলের নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে, “তুমি আমার উপর অভিমান করে চলে গেলে নতুন মা। এই অপরাধবোধ নিয়ে আমি সারাজীবন কিভাবে বাঁচবো? আমাকে তুমি অপরাধী বানিয়ে চলে গেলে।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here