#আমার_অভিমান_তোমাকে_নিয়ে(34)
সকাল থেকেই বেশ উশখুশ করছে অরুনিকা। কোনোমতেই কাব্যের প্ল্যানে মন সায় দিচ্ছেনা। এদিকে আদাভানকেও জোর করে কিছু বলা যাচ্ছেনা। রুমের মধ্যে পায়চারি করতে করতে হুট করে আদাভান সামনে এসে পড়ায় থেমে যায়।
“পাগল হয়ে গেছো?”
“বলছিলাম কি আজকে না গেলে হয়না?”
বিরক্তিতে এবার মেজাজ চরমে আদাভানের। কপাল কুঁচকে বিরক্তিকর চাহনিতে তাকায় অরুনিকার দিকে।
“সকাল থেকে এই একই কথা নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করে যাচ্ছ কেনো তুমি? সমস্যা কি তোমার? তোমার সাথে এক ছাদের তলায় বাধ্য হয়েই থাকতে হচ্ছে। নাহলে কবেই…”
আদাভানের কথায় এতক্ষনের চিন্তা ভুলে অবাক হয়ে তাকায় অরুনিকা। যাকে ভালোবাসা যায় তাকে কি ঘৃণা করা যায়? তবে আদাভানের কথার মাঝে এত ঘৃনা কেনো? কি এমন কারণ যার জন্য এতো অবহেলার পরও না বদলানো মানুষটা হুট করেই বদলে গেলো।
আদাভান বেরিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ছটফটানি আরো বেড়ে গেছে অরুনিকার। আদাভানের সাথে আজ ছোটো মতো অ্যাক্সিডেন্ট হবে এটা জানে, তবে কখন কিভাবে কিছুই জানেনা সে। ভাবনার মাঝে হন্তদন্ত পায়ে এগিয়ে আসা প্রাপ্তিকে দেখে ভয়টা আরো বেড়ে যায়।
“ভাবি ভাবি, ভাইয়া”
“প্রাপ্তি শান্ত হও। কি হয়েছে ভাইয়ার?”
“ভাইয়ার অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। অনেক খারাপ অবস্থা।”
এটুকু শুনেই থমকে যায় অরুনিকা। দাড়িয়ে থাকার মতো ক্ষমতাও অবশিষ্ট নেই তার মাঝে। ধপ করে বসে পড়ে মেঝেতে। চোখের কোন বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুধারা।
“এমনতো কথা ছিলোনা। কাব্য ভাইয়া তো বলেছিল অল্প একটু চোট পাবে। তাহলে এসব কি হয়ে গেলো।”
মনে মনে কথাগুলো বলে ছুটে বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। রাস্তায় এসে একটা রিক্সা করে বেরিয়ে পড়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে।
“তুমি জানতে সবকিছু তাইনা?”
আদাভানের কথায় চমকে ওঠে অরুনিকা। ছিটকে কয়েক হাত সরে যেতেই উচ্চস্বরে হেসে ওঠে আদাভান।
“আমার ভালোবাসার প্রতিদানে ফেরালে একবুক ঘৃনা, আমার আগলে রাখার পরিবর্তে করলে আমায় পথহারা।”
“কল্পনাতেও ভাবিনি আমি তোমার হাতে আঘাত পাবো। বিশ্বাস করো এখন মনে হচ্ছে কেনো বেঁচে ফিরলাম। ওখানেই মরে গেলে অন্তত এই কঠিন সত্যির মুখোমুখি তো হতে হতো না। আমি তো এমনিতেই মরে গেছি তোমার বিশ্বাসঘাতকতায়। সবকিছু যেনো কোনো দুঃস্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। একটু পরেই ঘুম ভেংগে যাবে আর দেখবো তুমি আমার বুকের মাঝে। কিন্তু আফসোস, এটা সত্য, চরম বাস্তব। ছল চাতুরির আড়ালে লুকানো সত্যি চেহারা এটাই। কেনো করলে অরু? কেনো এতো আঘাত দিলে? উহু আমি আমার শরীরের আঘাতের কথা বলিনি, আমার মনের ক্ষতর কথা বলছি। দেখতে পাচ্ছো? এই দেখো এই বুকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। আরে এই মাথার ক্ষত, এই হাতের ক্ষত এগুলো তো কয়েকদিনেই সেরে যাবে। ওষুধে সব সেরে যাবে, শুধু সারবেনা অন্তরের ক্ষত। আমার কি মনে হচ্ছে জানো? কেউ তলোয়ার নিয়ে বারবার এই বুকের মধ্যে গেঁথে দিচ্ছে আর বের করছে। আবার সেই ক্ষততে মলমের বদলে ফুটন্ত পানি ঢেলে দিচ্ছে। কি ভীষণ যে জ্বালা পোড়া, উফ্! বোঝাতে পারবোনা তোমাকে প্রাণপাখি। এসব ক্ষত তো তার কাছে কিছুই না।”
কথা বলে শেষ করে এক এক করে হাতের মাথার ব্যান্ডেজ খুলে ফেলছে। আদাভানকে উন্মাদের মতো আচরণ করতে দেখে এগিয়ে আসে অরুনিকা। কান্না করতে করতে জড়িয়ে ধরে আদাভানকে।
“প্লীজ একটু শান্ত হোন। আমি জানতাম শুধু একটু আঘাত পাবেন আপনি, এত বড় কিছু হয়ে যাবে ভাবতেও পারিনা আমি। বিশ্বাস করুন, আমি কখনও আপনার কিছু হলে ভালো থাকতে পারবনা। আমি এসব করিনি বিশ্বাস করুন। আমি জানি আপনার অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্লীজ নিজের ক্ষতি করিয়েন না।”
“দূরে সরো। আমি বলছি দূরে সরে যাও আমার থেকে। তোমার কোনো কথাই আমি আর বিশ্বাস করিনা। আমি ভেবেছিলাম আমার ভালোবাসার রঙে রাঙিয়ে দেবো তোমাকে। তোমার মনেও আমার জন্য ভালোবাসা জন্মাবে, আমাদেরও সুন্দর একটা সংসার হবে। কিন্তু তুমি, ছি! আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। এতই যখন ঐ কাব্যকে ভালোবাসো তাহলে কেনো এসেছিলে আমার কাছে? আমি নাহয় জোর করে বিয়ে করেছিলাম, থাকতে তো আর বাধ্য করিনি। কেনো আমার কাছাকাছি এলে? কেনো দিনের পর দিন ভালোবাসার নাটক করে গেলে? দিনশেষে তোমার ঐ কাব্যকেই প্রয়োজন পরে তো।”
“আদাভান”
“একদম চেঁচাবেনা। এই প্রাণপাখি! ফিরে এসোনা আমার কাছে। আমি অনেক ভালো রাখবো তোমাকে। ওই কাব্যের থেকেও বেশি ভালোবাসবো। যা চাইবে তাই এনে দেবো। সব সুখ এনে রাখবো তোমার পায়ের কাছে। প্লীজ ফিরে এসো, আমার হয়ে থাকো।”
“আপনি এসব কি বলছেন আদাভান? কাব্য ভাইয়া আমার কাছে নিজের ভাইয়ের মতো। ঠিক যেমন আপনার কাছে প্রাপ্তি। ওনার সম্পর্কে এই খারাপ কথাগুলো ভাবতে আপনার একটুও রুচিতে বাঁধলনা?”
“হা হা হা হাসালে তুমি। প্রাপ্তির আর আমার এমন ছবি দেখেছো কখনো?”
সামনে ধরা আদাভানের ফোনের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অরুনিকা। কিছুই মাথায় ঢুকছেনা। প্রতিটা ছবি এমনভাবে তোলা হয়েছে যার ভাষা আদাভানের কথার সাথে মিলে যায়। কোনোটাতে কাব্য অরুনিকার কোমর ডান হাতে ধরে বেডে ঝুঁকে পরে আছে। অরুনিকার মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা, মাথা ঘুরে পড়ে যাচ্ছিল অরুনিকা। তাই কাব্য কোলে করে এনে বেডে শুইয়ে দেয়। কিন্তু ছবিটা যেভাবে তোলা যেকেউ দেখলে ভুল বুঝবে।
“বিশ্বাস করুন, এসব মিথ্যে। কোনোটাই সত্যি না। ছবিগুলোতে যেমন দেখছেন একদমই তেমন না। কেউ ইচ্ছে করে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”
আদাভান কিছু বলতে গেলে আনিকা আহসানকে দেখে থেমে যায়। গভীর ভাবে অরুনিকাকে একবার পরখ করে চোখ সরিয়ে নেয়।
“এসব কিভাবে হলো আদাভান। এতো অসাবধান কেনো তুই বলতো? খবরটা পেয়ে আমাদের কি অবস্থা হয়েছিল জানিস তুই? কিভাবে হলো বল।”
” ইশ আম্মু কাঁদতে কাঁদতে চেহারার কি অবস্থা বানিয়েছো দেখো। আমি একদম ঠিক আছি তো দেখো। এবার কান্না বন্ধ করো তো দেখি।”
দুজনের কথোপকথনের মাঝেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরুনিকা। সবকিছু মিলিয়ে কেমন যেনো থম মেরে গেছে। একদিকে আদাভানের গুরুতর অ্যাক্সিডেন্ট অপরদিকে কাব্যের সাথে ঐ ছবিগুলো। কোনোকিছু মাথায় ঢুকছেনা। আদাভান যে খুব বাজে ভাবে ভুল বুঝেছে সেটা বুঝতে আর বাকি নেই অরুনিকার। সব মিলিয়ে মাথা যন্ত্রনায় ঢলে পড়তে দেখে এগিয়ে আসেন একজন ডক্টর।
“আপনি ঠিক আছেন?”
“….……….”
“একি আপনাকে তো অনেক দুর্বল লাগছে। দেখি আমার সাথে আসুন ”
অরুনিকাকে নিজের সাথে কেবিনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গিয়েই অজ্ঞান হয়ে যায় পথিমধ্যে।
আধো আধো চোখে চারিদিকে তাকিয়ে কোথায় আছে মনে করতেই কারোর আওয়াজে সেদিকে তাকায় অরুনিকা।
“কংগ্রেচুলেশন মিসেস। আপনি মা হতে চলেছেন। এই সময়ে নিজের প্রতি এত অবহেলা চলে নাকি? নিজের জন্য না হলেও আগত বেবির জন্য নিজের খেয়াল রাখতে হবে আপনাকে।”
________________
“আরে হিয়া যে, আসো আসো।”
দুপুরের খাবারের জন্য সবাই বসেছে মাত্র সেসময়ে হিয়াকে দেখে অবাক হলেও তেমন গুরুত্ব দেয়না আদিল। তবে নূরের অনেক জোরাজোরিতে সবার সাথে খেতে বসতে বাধ্য হয় হিয়া।
“হিয়া আই অ্যাম সরি। আমি কোনোভাবে তোকে অপমান করতে চাইনি। কিন্তু করে ফেলেছি। প্লীজ আমার কথায় কিছু মনে করিসনা। এট লিষ্ট তুই অন্তত আমাকে বুঝবি আমি জানি।”
“ইটস ওকে।”
” তোর প্রতি আমাদের কারোর কখনও অভিযোগ ছিলোনা, তোর যখন ইচ্ছে এখানে আসবি, থাকবি। এটা তোরও বাড়ি।”
“আমি অনেক লাকি, নাহলে তোর মত ফ্রেন্ড পেতাম না। এতকিছুর পরও আমাকে তুই এই বাড়িতে আসার কথা বলছিস এজন্যই আমি কৃতজ্ঞ। নাহলে আম্মুর ব্যবহারে কোথাও মুখ দেখাতে পারছিলাম না।”
সবার খাওয়া শেষ হতেই নূর বলে ওঠে,
“আজকে আম্মু স্পেশাল পায়েস বানিয়েছে। আমি নিয়ে আসছি সবার জন্য দাড়াও।”
“নূর দাড়াও আমি সাইডে আছি, আমিই নিয়ে আসছি।”
হিয়ার কথায় হাল্কা হেসে সায় জানায় নূর। হিয়াও সৌজন্যমূলক হেসে এগিয়ে যায় কিচেনের দিকে।
“আদিল, আদিল কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেনো? আম্মু, আব্বু তাড়াতাড়ি এসো।”
“কি হয়েছে হিয়া, এভাবে চেচাচ্ছে কেনো?”
“আম্মু আদিল কেমন করছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছেনা। ছটফট করছে। আমাদের এখুনি হসপিটালে নিয়ে যেতে হবে ওকে। আব্বুকে গাড়ি বের করতে বলুন প্লিজ।”
চলবে?
#Fiza Siddique
কয়েকদিন গ্যাপের জন্য রেসপন্স এত কম যাবে ভাবিনি।🙂
যাইহোক পেজের রিচ কমে গেছে। সবাই একটু বেশি বেশি কমেন্ট করবেন। আর কেমন লাগছে সেটাও অবশ্যই জানাবেন।