আমার সংসার পর্ব ১২

আমার_সংসার
.
.
Part:12
.
.
Writer :Mollika Moly
.
.
.
খুব সকালে সিনহা ঘুম থেকে উঠে ফজরেরে নামাজ আদায় করে নিলো।সিফাতের দিকে তাকালো গায়ে কম্বল মুড়িয়ে সে ঘুমিয়ে আছে।খানিক টা সময় পলকহীন ভাবে সিনহা সিফাতের দিকে তাকিয়ে থাকলো,নিষ্পাপ লাগছে ওর মুখ খানি,অনেক ভালো লাগছে সিনহার সিফাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে।ইচ্ছে করছে কপালে আলতো ভালবাসার ছোঁয়া দিতে কিন্তু নাহ এটা সে পারবে না,সিফাতের ওপর আইনগত অধিকার থাকলেও ব্যক্তিগত অধিকার তার নেই,সিফাত দেয়নি সেই অধিকার সিনহা কে,সিনহা অপারক,ওর ইচ্ছা সত্বেও অনেক কিছু করতে পারবেনা সে।
.
সিফাতের ঘুম ভেংগেছে, চোখ খুলে দেখে সিনহা ওর দিকে তাকিয়ে আছে,সিফাতের চোখ খুলা দেখে সিনহা দ্রুত ওর চোখ সড়িয়ে নিলো ওর দিক থেকে,কিছু টা লজ্জা পেয়েছে সে।কি না কি ভাবলো সিফাত এটা ভাবছে।বিষয় টা ঘোরানোর জন্য সিনহা নিজে থেকে বলে উঠলো,,,,
.
– “শুভ সকাল।আজ এতো সকাল সকাল ঘুম ভাংলো আপনার?
– ” শুভ সকাল।হুম ভাংলো কেনো বলোতো অনেক বেলা হয়েছে নাকি?
– “আরে না বেলা হতে যাবে কেনো মাত্র ৫ঃ৩০।আপনি তো এতো সকালে উঠেন না তাই আর কি বললাম।
– ” ওহ,আমিতো এখন বাড়িতে নেই,এখানে হানিমুন করতে এসেছি, এতো ঘুমালে চলবে,কথাটি বলে খানিক মৃদু হাসলো সিফাত।
আর সিনহা লজ্জায় মাথা নিচু করলো।
– “তবে আমরা হানিমুনে আসলেও সত্যিকারে হানিমুনে আসিনি তাই না কি বলো পিচ্চি?
– ” হুম একদমই তাই।
– “আমরা এখানে ঘুড়তে এসেছি, সারাদিন খাবো আর ঘুরবো ওকে?
– ” হুম ওকে তার আগে এখন উঠুন যান ফ্রেশ হয়ে নামাজ টা পড়ে নিন,দেরী হয়ে যাবে।
– “ওকে ওকে যাচ্ছি পিচ্চি।
বলেই সিফাত ফ্রেশ হতে চলে গেলো।
.
ফ্রেশ হয়ে নামাজ আদায় করে নিলো সিফাত।তারপর দুজনে সকালের ব্রেকফাস্ট করে ঘুরতে বের হলো।স্নিগ্ধ সকালের নির্মল পরিবেশে পাশাপাশি হাটছে দুজন সমুদ্রের পাড়ে।অনেক ভালো লাগছে সকালের প্রানবন্ত সতেজ হাওয়া গায়ে এসে লাগছে তাদের।সকাল টা খুব ফাকা সমুদ্রের পাড়।এতো সকালে কেউ আসেনি তাই ভিড় কম,কিন্তু বেলা বাড়ার সাথে সাথে ভিড়ও বেড়ে যাবে।তখন খুশির আবেশ বেশি হলেও ক্যাপলদের জন্য সেটা খুব একটা উপকারী নয়।প্রায় সকালেই আর সন্ধ্যার আগে এখানে আসা ক্যাপলদের পক্ষে উপযুক্ত সময়,কারন এসময় তারা একটু নিরালায় একাকিত্বে সময় কাটাতে পারবে,কোনো রকম বিরক্তিকর পরিবেশে সামনে আসবে না।একদমই একাকিত্ব পাবে তারা।
.
পাশাপাশি দুজনে হেটে চলেছে অনেকটা পথ,দুজনের হাতের সাথে একটু করে হাতের ছোয়া লাগছে আর সিনহা বৈদ্যুতিক শক লাগছে এমনবস্থা।সিনহার ইচ্ছে করছে খপ করে সিফাতের হাতদুটো ধরতে,আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে দিতে,শরীরের সাথে মিশে কাধে মাথা রেখে হাটতে, কিন্তু সে কিছুই পাড়ছে না তারপরো ভালো লাগছে ওর এটা ভেবে সিফাতের সাথে একাকিত্বে সময় কাটাতে পেরে।
.
হাটতে হাটতে আচমকা সিফাত সিনহার হাতটা ধরে আঙুলে আঙুল ডুবিয়ে দিলো।সিনহা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সিফাতের দিকে।
.
– “বন্ধু না এটুকু ধরায় যায়?
সিনহা মাথা নিচু করে রইলো।
সিফাত হাত টা ছেড়ে দিলো হয়তো সিনহা বাজে ভাবছে এটা ভেবে।কিন্তু সিনহা মাথা নিচু করে হাত টা বাড়িয়ে থাকলো,সিফাত সামনে হাটছে, পিছন ফিরে দেখে সিনহা সেই আগের অবস্থাতেই দাড়িয়ে আছে,সিফাতের আর বুঝতে বাকি রইলো না সিনহা হাত ধরতে বলছে,সিফাত ফিরে ওর হাতটা আবারো শক্ত করে ধরে সমুদ্রের পাড় দিয়ে হাঁটতে লাগলো।
.
পশ্চিমাকাশে ভোরেরে সুর্যোদয় হচ্ছে। চারদিক লালচে আভায় ভরে গিয়ে।সিনহা আর সিফাত দুজন দাড়িয়ে সুর্যোদয় দেখছে একসাথে,আজকের সকালের সুর্যোদয় সিনহার জিবনে সুখের সুর্যোদয়, কারন সে ভালবাসার মানুষটির সাথে হাতে হাত ডুবিয়ে একসাথে ভোরের সুর্যোদয় দেখছে।সিনহার মন চাইছে তার জিবনের সুর্যোদয় যদি রোজ এমন হতে তাহলে কতোই না ভালো হতো,কিন্তু নাহ তার জিবনের সুর্যোদয় এমন হবে না।সিফাতের সাথে তো ওর আর থাকা হবে না।ওদের তো ডিভোর্স হয়ে যাবে আর তিন মাস পর।তখন জারা থাকবে ওর সংসারে,জারা দেখবে সকালের সুর্যোদয়। এই সংসার আমার নয় জারার,শুধু কদিনের অতিথি আমি।কথাগুলো ভেবে চোখদুটো ছল ছল করে উঠলো সিনহার।সে ছল ছল চোখে তাকালো সিফাতের দিকে,ওর চোখদুটোয় খুশির ছাপ দেখা যাচ্ছে। সুর্যোদয় দেখে।সিনহা সিফাতের দিকে তাকিয়ে আবারো মাথাটা নিচু করে ফেললো।টপ করে চোখের জল পড়লো সিনহার।আঁচল দিয়ে জল মুছে নিজেকে সামলে নিলো।
.
– “সিনহা চলো ফেরা যাক?
– ” হুম চলেন।
অতঃপর দুজনে ফিরে এলো,রুমে।সিফাত বিছানায় গা এলিয়ে ম্যাগাজিন পড়তে বসলো।সিনহাও বসে রইলো বিছানার একপাশে।সিনহা মনে মনে হাসছে, এটা তাচ্ছিল্যের হাসি।হানিমুন এমন হয় বুঝি জানা ছিলো না,আজ জানলাম এটাকেই হানিমুন বলে,অভিজ্ঞতা হলো।আসলেই কি হানিমুন এমন মনে হয় না,আমার জায়গাতে জারা থাকলে হয়তো অন্যরকম হতো সবকিছু। কারন উনি তো জারা কে ভালোবাসে।আনমনে ভাবতে লাগলো সিনহা এইসব।
.
– “কেমন লাগছে এখানে এসে?
সিফাত সিনহা কে প্রশ্ন করলো।
– “মোটামুটি ভালো””!
– ” মোটামুটি ভালো,খুব বেশি ভালো লাগছে না তোমার?
– “না তা ঠিক না ভালো লাগছে কিন্তু,,,,!
– ” কিন্তু কি?
– “বাড়ির কথা খুব মনে পড়ছে,বাবা,মা একা আছে,হাতের পা কোমড়েের ব্যথা নিয়ে কি করছে কে জানে?
– ” তুমি চিন্তা করো না সুবর্ণ তো আছেই সে দেখে রাখবে।
– “হুম সুবর্নের ওপর আমার ভরসা আছে।
– ” তাহলে এমন মন খারাপ না করে উপভোগ করো,এই কটা দিন বুঝলে পিচ্চি ।
বলে সিফাত আলতো করে সিনহার গাল টেনে দিলো।সিনহা অনিচ্ছাতেই মিথ্যা একটা মৃদু হাসি দিলো।
.
– “আচ্ছা আর কদিন থাকবো এখানে?
– ” কেনো আবার কি হলো?
– “বাড়ি যেতে ইচ্ছে করছে।
– ” খুব বেশি না আর ৪-৫ দিন থাকবো।
– “ওহ একটু তারাতারি গেলে হয় না?
– ” কেনো সিনহা এতো তাড়াহুড়ো করছো কেন,তোমার কি ভালো লাগছে না এখানে?
– “না না সেটা না আসলে বলতে চাইছিলাম যে আমি বাড়ি ছেড়ে কখনো কোথাও এতোদিন থাকিনিতো তাই।
– ” আরে কিছু হবে না,থাকোনিতো কি হয়েছে অভ্যাস করো,?
সিফাতের কথাটি শুনেই সিনহা সিফাতের দিকে অবাক চোখে তাকালো অভ্যাস, হ্যাঁ উনি ঠিকই বলেছেন আমার অভ্যাস করতে হবে একা থাকার অভ্যাস,ওনাকে ছেড়ে মা,বাবা,কে ছেড়ে আমার একা থাকার অভ্যাস করতে হবে।সিনহা তারাতারি বাড়ি যেতে চাইলো কারন তার শরীর ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে, কি হয়েছে সেটা সে বুঝতে পারছে না,কিন্তু তার মনে হচ্ছে খুব তারাতারি সে অসুস্থ হয়ে পড়বে কিন্তু এখানে সে তেমন কিছু হোক চাইছে না কারন,সিফাত একা,টেনশনে পরে যাবে।
.
– “এই যে ভাবনাপরী,আবার কোন ভাবনার রাজ্যে হারিয়ে গেলে?
– ” হুম বলুন?
– “বলছিলাম কি নাম তার?
– ” কার?
– “ঐ তো তুমি যাকে ভালবাসো?
– ” সেটা না হয় অজানায় থাক?
– “বলতে না চাইলে জোর করবো না,তো কতদিন আগে থেকে ভালোবাসো?
– ” জানি না দিন,ক্ষন,মাস হিসেব করে তাকে ভালবাসিনি,হঠাৎই একদিন তার প্রতি ভালবাসা চলে আসছে।
– “বাহ বেশ তো।তো আমায় কেন বিয়ে করলে তাকে ছেড়ে,তোমার ভালবাসার মানুষটাকে ছেড়ে শুধু বাবা,মায়ের কথায় আমায় বিয়ে করলে কেনো বলতো,এইটা তুমি মস্ত বড় ভুল করেছো, তোমার এই একটা ভুলের জন্য ৪ টা জিবন নষ্ট হচ্ছে, আমার তোমার,জারার,আর তার।জানো তুমি?
সিনহা চুপ করে আছে বলতে পারছেনা যে আমি যাকে ভালবাসি সে আপনিই অন্য কেউ নয়,আর আমি জানতাম না আপনি অতীত টাকে আজো আকড়ে ধরে আছেন,জানলে কখনোই বিয়ে করতাৃ না,মেরে ফেললেও না,কারো সুখে বাধা সৃষ্টি করার অধিকার আমার নেই।আমি সত্যিই ভুল করেছি আপনার আর জারার মাঝে এসে,থাকবো না আমি আপনাদের মাঝে।চলে যাবো অনেকদূর যেখানে আমার সন্ধান কেউ পাবে না।মুক্ত করে দিবো আমি আপনাকে,ছেড়ে দিবো আমার সংসার।মুক্ত আকাশে উড়িয়ে দিবো আমি আপনাকে ডানা পেলে উরার জন্য।মনে মনে কথাগুলো ভাবছে সিনহা।
.
হঠাৎ সিফাতের ফোনটা বেজে উঠলো।ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখে জারা ফোন দিয়েছে,তাই সে খুব তারাতারি ফোন হাতে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়,সিনহার আর বুঝতে বাকি রইলো না কে ফোন করেছে।সিফাত বের হয়ে যাওয়ার পর সিনহা আর নিজেকে আটকাতে পারলো না,অনেকদিনের চাপা কষ্ট আজ মস্ত বড় পাহাড় আকার ধারন করেছে,যেটা আর সে বয়ে বেড়াতে পারছে না।সে ইচ্ছামতো কাদতে লাগলো। আজ যেনো তার চোখের জল বাধা মানছে না।অঝড় ধারায় ঝড়ে যাচ্ছে।
.
সিফাত বাহিরে এসে ফোন রিসিভ করার সাথেই ওপাশ থেকে জারা বলে উঠলো,,,
– “কি ব্যাপার বউয়ের সাথে হানিমুন বেশ ভালো জমেছে দেখছি,কি রোমান্সে মেতে আছে মনে হয় তাই আমায় ফোন দেওয়ার সময়টুকুও পাও না?
– ” জারা অযথা কি আবোল তাবোল বলো তুমি?
– “ঐ নোংরা মেয়ে টা কি তোমায় বশ করে নিয়েছে,নিকের রুপ যৌবন দেখিয়ে যে আমায় ভুলে ওর প্রতি ভালবাসা এসেছে তোমার?
– ” জারা ,সিনহার নামে আর একটা বাজে কথা বলবে না ভালো হবে না কিন্তু।
– “ওয়াও ঐ মেয়ে কে বলছি জন্য খুব গায়ে লাগছে তোমার তাই না,বাজে কি বলেছি আমি,ঐ মেয়ে নোংরা তো নোংরা বলবো না,বাজে দুশ্চরিত্রা মেয়ে রাস্তার মেয়ে সে।
– ” জারা জ্যাষ্ট সেটাপ,সিনহার নামে আর একটা বাজে কথা বললে তার পরিমান ভালো হবে না বলে দিলাম?
– “শোন তুমি আমায় থ্রেট দাও,সেটাও ঐ থার্ড ক্লাস গাইয়া মেয়েটার জন্য?
– ” জারা সিনহার বিষয়ে বাজে কথা বলতে বারন করেছি।
– “ওহ রিয়েলি তুমি আমায় বারন করো ধমক দাও ঐ মেয়ের জন্য,থাকো ঐ মেয়ের সাথে তুমি,আমার আশা ছেড়ে দাও।
বলেই জারা ফোন টা কেটে দিলো।সিফাতও আট কল ব্যাক না দিয়ে রুমে চলে গেলো।
.
To be continue……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here