আমার সংসার পর্ব ১৩

# আমার_সংসার
.
.
Part:13
.
.
Writer :Mollika Moly
.
.
.
জারা রাগ করে ফোন কেটে দেওয়ার পরই সিফাত আর কল ব্যাক না করে সোজা রুমে চলে গেলো।
রুমে ঢুকেই সিফাত যা দেখলো মোটেই তারজন্য প্রস্তুত ছিলো না।সিনহা ফ্লোরে পড়ে আছে,বমি করে চারপাশ টা মেখে ফেলেছে।একদম সেন্সলেস হয়ে গেছে সে।এমতাবস্থায় সে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।অচেনা জায়গা অপরিচিত মুখ,কে তাকে হেল্প করবে,সে সিনহা কে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে হোষ্টেল কর্তৃপক্ষের হেল্প নিয়ে হসপিটালে নিয়ে গেলো সিনহা কে।
.
সিনহা কে টেষ্ট করানোর জন্য নিয়ে গিয়েছে, বাহিরে সিফাত বসে আছে,চোখ মুখে তার চিন্তার ছাপ,কি হলো সিনহার,সিনহা কে সে ভাল না বাসলেও একটা মায়া পড়ে গেছে,এখন জারার সাথে তেমন কথা বলে না সিফাত সবসময় সিনহার সাথেই থাকে,জারা কে ভালবাসা সত্বেও একবারের জন্যও জারা কে সে মনে পরে না অথচ সারাদিন সিফাতের সিনহার সাথে কাটাতে একটু ভালো লাগে না।আসলে কোন টা ভালবাসা আর কোন টা এট্রাকশন সেটা সিফাত বুঝতে পারছে না,সে আসলে সিনহা কেই ভালোবেসে ফেলেছে কিন্তু এটা সে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না কারন সে জারা কে মনে গেথে রেখে দিয়েছে,আজ সিনহার প্রতি ভালবাসা বসা সত্ত্বেও সে মেনে নিতে পারছে না, কারন ভালবাসা টা সে শুধুই জারার এটা মনে প্রানে বিশ্বাস করে এসেছে।
.
বেশ কয়েকটা টেষ্ট করে ডক্টর বের হয়ে আসলো।সিফাত তাৎক্ষণিক ডক্টরের কাছে ছুটে গেলো,,
.
– “ডক্টর সিনহা কেমন আছে, কি হয়েছে ওর?
– ” কি হয়েছো নয় কি হয়নি সেটা বলুন,?
– “মানে বলুন ডক্টর কি হয়েছে ওর?
– ” কে হয় উনি আপনার ওয়াইফ?
– “হ্যাঁ।
– ” তাহলে আর দেরী কিসের মিষ্টি খাওয়ান,আপনি বাবা হচ্ছেন , আপনার স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। আপনি তার কাছে কৃতজ্ঞ কেনো না ছোট্ট একটা নতুন অতিথি আসছে আপনাদের মাঝে আপনাকে বাবা ডাকার জন্য।যান আপনার স্ত্রী র কাছে,উনাকে বলেছি এই খুশির খবর টা।
কথাটি বলেই ডক্টর চলে গেলো।সিফাত দাড়ানো আবস্থায় বসে পড়লো,থমকে গেছে সে,কি হলো এটা,বুঝতে পারছে না,এটা ভেবে সে খুশি যে সে বাবা হচ্ছে , বাবা ডাক শুনবে সে নিজের সন্তানের মুখে, কিন্তু সেটা সিনহার সন্তানের এটা সে মেনে নিগে পারছে না।সে চায় তার সন্তান জারা আর ওকে বাবা,মা বলবে, কারন সে স্ত্রী হিসেবে শুধুই জারা কে মানে অন্য কাউকে না।আর সে সিনহার এতো বড় সর্বনাশ করলো, এই সন্তানের জন্য তো সিনহা কে ওর ভালবাসার মানুষ আর মেনে নিবে না, তাহলে কি হবে।ওর জিবন টা নষ্ট হয়ে যাবে,ওকে আমি ডিভোর্স দেওয়ার পর তো ও ওর ভালবাসার মানুষটির কাছেই চলে যাবে,কিন্তু সে যদি না মানে এই সন্তানের জন্য।আর জারা এইসব শুনলে তো আরো রেগে যাবে,এটা কি হলো,এই সন্তান না পারছি রাখতে না পারছি ছাড়তে,এব্রোশন করাবো সিনহা কে,নাকি না না এটা কি ভাবি আমার সন্তান কে আমি নষ্ট করতে দিবো না,কিন্তু কি করবো আমি মাথায় কিছু আসছে না আমার,সিফাত নিজের মাথার চুল নিজে ছিড়তে লাগলো এইসব ভেবে।
.
অনেকটা সময় পর সিফাত কেবিনে গেলো সিনহার কাছে,সিনহার দিকে তাকিয়ে দেখে সিনহার চোখমুখ লাল হয়ে গেছে কাঁদছে সে খুব।দেখে বোঝা যাচ্ছে। একটা টুল টেনে নিয়ে ওর পাশে বসে ওর হাতটা ধরলো সিফাত,সিনহা তখন আশ্বাস পেয়ে শক্ত করে সিফাতের হাত টা ধরে কেঁদে দিলো।
.
– “বিশ্বাস করুন আপনি আমি বুঝতে পারিনি এমন টা হবে,সত্যিই আমি বুঝতে পারিনি প্লিজ ভুল বুঝবেন না,আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি,প্লিজ বেবি টাকে নষ্ট করতে বলবেন না আপনি,আমি পারবো না এটা করতে।
অনেক কেঁদে বললো সিনহা কথাগুলো সিফাত কে।সিফাত সিনহার চোখের জল মুছে দিলো।
– “আরে ধুর পাগলি কাঁদছো কেনো,আমি কি কিছু বলেছি তোমায়, ভুল টা আমার আমি যদি সেদিন নেশার ঘোড়ে নিজেকে কন্ট্রোল করতাম তাহলে আজ এমন দিন দেখতে হতো না।আর তুমি যে বেবি টা রাখতে চাইছো আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাওয়ার পর তোমার ভালবাসার মানুষটি এই বেবীর জন্য তোমায় যদি অস্বীকার করে,আমি সত্যি অনেক ভুল করে ফেলেছি সিনহা,তোমার অনেক বড় ক্ষতি করে দিলাম।
সিফাতের মুখে এমন কথা শুনে সিনহা চমকে উঠে সিফাতের হাত টা ছেড়ে দিলো। এটা কি বললো সিফাত এতোকিছুর পরও সে ডিভোর্সের কথা বলে কিভাবে,সিনহা ওর সন্তানের মা,সে ভেবেছিলো সন্তানের কথা ভেবে হয়তো সিনহা কে মেনে নিবে কিন্তু নাহ,সিফাত তার পুর্বের মতামতে অটল,কার হাত ধরেছিলো একটু আগে সিনহা,ভেবেছিলো এটা ভরসার হাত,তার আর তার অনাগত সন্তানের জন্য,কিন্তু না,এটা সেই ভরসার হাত না,কি পরিচয়ে বাঁচবে তার সন্তান,বাবার আদর থেকে বঞ্চিত হবে সে,এটা কি হলো সিনহার সাথে কেনো হলো,তার নিজের জিবন নষ্ট হোক দুঃখ নেই কিন্তু তার অনাগত সন্তান,জম্নের আগেই তার বাবা কে হারিয়ে ফেলবে,বাবা মায়ের একত্রিত ভালবাসা পাবে না,বাবা মা উভয়ের ভালবাসা থেকে যে বঞ্চিত সে মনে হয় জান্নাতের সুখ থেকে তার মতো দুঃখী আর কেউ নেই পৃথিবীতে, এগুলো আনমনে ভাবতে লাগলো সিনহা।
.
– “সিনহা তুমি কি ভাবছো আমি বুঝতে পারছি,চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে,আমি সব ঠিক করে দিবো।
সিনহা একটা ভেবে কষ্ট পাচ্ছে আর সিফাত ভেবেছে সিনহা তার ভালবাসার মানুষটির জন্য কষ্ট পাচ্ছে।সিফাতের ভাবনাও সঠিক কিন্তু সে এটা বুঝতে পারছে না সিনহার ভালবাসার মানুষ আর কেউই না সিফাত নিজেই।
.
– “চলো ফিরা যাক,আজকেই ঢাকায় ব্যাক করবো,একটু পর।
– “হুম চলুন।
.
অতঃপর তারা দুজনে হোস্টেলে এসে সব গুছিয়ে ঢাকায় ব্যাক করলো।
.
– “সিফাতের বাবা সিনহা বাড়িতে কটা দিন হলো নেই মনে হচ্ছে অনেকদিন হলো নেই বাড়ি টা কেমন ফাকা ফাকা লাগে তাই না?
– ” হুম তা যা বলেছে,মেয়েটা অনেক মিশুক, কয়েকমাসেই আমাদের নিজের বাবা, মায়ের জায়গা দিয়েছে।
-“হুম আমি এমন একটা বউই চেয়েছিলাম আমার ছেলের জন্য,মনের আশা পুরন হয়েছে এইবার নাতী,নাতনীর মুখ দেখলেই সব প্রাপ্তি পুর্ন হবে।
– “হুম আমাদের দাদুভাই চাই এখন,ওরা আসলে বলিও কথা টা।
কথাটি বলতেই কলিংবেল বেজে উঠলো।
– “এই সুবর্ণ দেখতো কে এলো।
– ” দেখছি খালা,
বলেই সুবর্ণ গিয়ে দরজা খুলে দিয়েই ভাবী বলে জড়িয়ে ধরলো সিনহা কে।
– “ছাড় ওকে সুবর্ণ ভিতরে যেতে দে আগে ওর শরীর টা ভালো না।
-” কেনো কি হয়েছে ভাইয়া, ভাবীর?
.
কথাটি বলতেই
– “কে এসছেরে সুবর্ণ?
বলে সিফাতের মা এগিয়ে এসে দেখে দরজায় সিনহা আর সিফাত দাড়িয়ে আছে, সিনহা কে দেখে উনির মুখ টা মলিন হয়ে গেলো,ছুটে গিয়ে ওকে বুকে জরিয়ে নিলো।
– “কি হয়েছে মা তোর,কদিনে চেহেরার একি হাল করেছিস, চোখের নিচে কালো দাগ পড়েছে,শুকিয়ে গিয়েছিস, কি হয়েছে কথাটি পুরোপুরো শেষ না হতেই সিনহা মুখে হাত দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেলো।সিনহার এমন অবস্থা দেখে পিছু পিছু ওর শাশুড়ি গিয়ে দেখে সিনহা বমি করছে,কিছু একটা ভেবে সিনহার ওর মায়ের চোখদুটে খুশিতে চিক চিক করে উঠলো,সিনহা হাত মুখে পানি ছিটিয়ে বের হতে যাবে তখনি দেখে ওর শাশুড়ি মা দরজায় দাড়িয়ে।
– কি হয়েছে সিনহা মা তোর?
কথাটি শুনেই সিনহা ওর শাশুড়ির বুকে ঝাপিয়ে পড়ে কান্না শুরু করে দিলো
– “দেখি দেখি কাদছিস কেন তুই বল আমায় কি হয়েছে?
– সিনহা কিছুই বলছে না শুধু কেদেই যাচ্ছে।
– ” আরে পাগলী কান্না থামিয়ে বল না বললে বুঝবো কিভাবে,আচ্ছা বল তো আমি যেটা ভাবছি সেটা কি সত্যি নাকি অন্যকিছু?
– “কি ভাবছো তুমি?
– ” কি আর ভাববো, এটাই যে আমি দাদা দাদী ডাক শুনতে পাবো তাই না?
– “হু কেঁদে বললো।
-” আরে পাগলী এতে কাঁদার কি আছে খুব ভয় করছে তাই না?
– “কিচ্ছু হবে না চিন্তা করিস না,আমি আছি না,প্রথমবার একটু ভয় লাগেই প্রত্যেকেটা মেয়ে,কিছু হবে না দেখেনিস।
– ” হুম চল।
বলে দুজনে চলে এলো,হ্যা সিনহা সত্যিই ভয় পাচ্ছে কিন্তু সেটা শুধুই প্রেগন্যান্সির জন্য না,আরো অনেক কারন আছে তার ভয় পাওয়ার।
.
এদিকে সিফাত কে তার বাবা একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে আর সিফাত চুপচাপ শুনে যাচ্ছে কিছু বলছে না।
.
– “কি হলো সিফাত চুপ করে আছো কেন,বলো এতো তারাতারি ফিরে আসলে কেনো তোমাদের তো আরো ৪ দিন থাকার কথা ছিলো?
– ” আরে ওকে বকছে কেনো খুশির সংবাদ আছে তাই ওরা চলে এসেছে মনে হয়।
– “তো কি খুশির সংবাদ শুনি?
– ” আমরা দাদা দাদী হবো মনে হয়।
– “কি বললে সত্যি,তাহলে তো মিষ্টি মুখ করতে হয়।
সিনহার শ্বশুর সোজা ফ্রিজ থেকে মিষ্টি বের করে নিয়ে এলো।শ্বশুরের হাতে মিষ্টি দেখে সিনহা চোখ বড় বড় করে বললো,,
.
– ” বাবা তোমার না ডায়বেটিস আবার মিষ্টিতে হাত দিয়েছো?
– “একদিন খেলে কিছুই হবে না,আর এই খুশির সংবাদে মিষ্টি খাবো না বলছিস,আমার দাদুভাই আসছে,এই নে আগে তুই খা বলে সিনহার মুখে ওর বাবা একটা মিষ্টি পুরে দিলো তারপর সিফাতের, তারপর ওর মাকে দিয়ে সবাই সুবর্নকে দিয়ে সবাই মিষ্টি মুখ করলো।আরো নানা রকম খুশি কথা বলতে লাগলো ওর শ্বশুর শাশুড়ি, নাতি কে নিয়ে ফিউচার প্লান শুরু করে দিয়েছে,সিনহা লজ্জা পেয়ে রুমে চলে গেলো।সেই সাথে সিফাতও।
.
to be continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here