আমার সংসার পর্ব ৩২

#আমার_সংসার
.
.
Part:32
.
.
Writer:Mollika Moly
.
.
সিনহা ওর মায়ের সাথে কথা বলে বাড়ি চলে এলো।সারা রাস্তা খুব কষ্টে চোখের পানি আটকিয়েছে সে।কোন ভুলে কি হয়ে গেলো বুঝতেও পারলো না।এতোটা বছর ভুল বুঝে তারা একে অপরের থেকে দুরে থেকেছি।কতো কষ্ট পেয়েছে সে সিফাতও পেয়েছে এটা ভাবতেই গা শিউরে উঠলো তার।সিফাত কে সুখী করতে গিয়ে সে সিফাত বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।সেদিন চলে যাওয়াতে সিফাত অনেক কষ্ট পেয়েছে আর তার মেয়েটিও মায়ের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হয়েছে।কিন্তু কিইবা করার ছিলো তার সেদিন।সিফাত তো সেদিনও বলেনি সে জারা কে নয় আমাকে ভালবাসে।একবারের জন্যও তো বলেনি সিনহা আমরা আলাদা হবো না।আমাদের সন্তান কে নিয়ে সংসার গড়ে তুলবো।যদি সেদিন সে বলতো তাহলে এমনটা হতো না।এতোগুলো বছর দুজনে এভাবে কষ্ট পেতাম না। কথাগুলো ভেবে প্রচুর কান্না করছে সিনহা।
.
এদিকে আজ সিনহা অফিসে না আসায় সিফাতের কিছু ভালো লাগছে না।কাজেও মন বসছে না।নিজের কেবিনে জানালার পাশে দাড়িয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছে সে।আর জানালায় দিয়ে দেখছে ব্যস্ত নগরী।এই শহর প্রচুর ব্যস্ত।জিবিকা নির্বাহে সবাই ছুটে চলেছে অনবরত। এখানে সবাই কাঙাল।কেউ বা দু মুঠো ভাতে।আবার কেউ বা এক চিলতে ভালোবাসার।এই এক চিলতে ভালবাসার জন্য মানুষ কতো কিই না করে।তবুও অনেকের ভাগ্যে জোটে না ভালবাসা টা।যেমন সিফাত নিজেই।কতোকিছু করছে সে একটু সুখে থাকতে,সিনহার ভালবাসায় কিন্তু সে পারছেই না।তার বেকামির জন্য আজ তারা এই পরিস্থিতিতে দাড়িয়ে।যেখানে দুজনের প্রতি দুজনের তীব্র ভালবাসা থাকা সত্বেও ফিরছে না কেউ কারো কাছে।ফিরতে পারছে না।এতোগুলো বছরের অভিমানের দেয়াল তাদের মাঝখানে বিরাট আকার ধারন করেছে।এই অভিমান গুলো কি আর ভাংবে কখনো। ফিরবে কি সে আবার সেই চেনা নীড়ে।নাকি সারাজিবন অধরাই থেকে যাবে।একমনে ভাবছে আর কফিতে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎই মনে হলো কি জানি ঝরের বেগে এসে সিফাত কে পিছনে থেকে এসে জড়িয়ে ধরলো।ঘটনার আকস্মিকতায় সে খানিকক্ষণ থমকে গেলো।পাশ ফিরে দেখে তার চোখ চরকগাছ।সে সামনে ঘুরতেই তার বুকের সাথে মিশে গেলো দেহখানি।আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরলো সিফাত কে।সিফাত অবাক হলো বটে তবুও তার মুখের হাসির রেখা ফুটলো।বিজয়ের রেখা।সে ভাবতে পারছে না সে ফিরেছে এভাবে। কতোদিন পর সে আবারো তাকে বুকের মাঝে পেয়েছে।সিফাত সিনহা কে জড়িয়ে ধরলো।দুজনেই মনে হয় পরম শান্তিতে আছে এর চেয়ে সুখ আর কোথাও পাবে না এই দুটি মনের মানুষ।এদের দেখে বোঝায় যায় একে অপরকে কতোটা ভালবাসে।দুজনের মাঝে শান্তি আর নীরবতা বিরাজমান।মাঝে মাঝো ফুপিয়ে কান্না আর হিচকির আওয়াজ আসছে সিনহার গলা থেকে।
.
অনেকটা সময় জড়িয়ে থাকার পর সিনহা নিজেই কিল,ঘুষি দিতে লাগলো সিফাতের বুকে।আর বকতে লাগলো ন্যাকাসুরে।
– “বোকা,হাবলু,ক্যবলাকান্ত,গর্ধব আমায় এতো কষ্ট কেন দিলে তুমি?
– ” বা রে কস্ট কি শুধু আমিই দিলাম নিজে মনে হয় দাওনি।তুমিই সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছো আমায়।
– “নিজের দোষে কষ্ট পেয়েছো,তুমি যদি আমায় ভালবাসি বলতে তবে কি আমি ছেড়ে যেতাম নাকি।ঠোঁট উল্টিয়ে বললো সিনহা।
– ” আমিতো তোমায় সারপ্রাইজ দিবো ভেবে ছিলাম।কিন্তু তোমায় সারপ্রাইজ দিতে এসে আমি নিজেই সারপ্রাইজড হয়ে গেছি সেদিন।
– “সরি,,,! মাথা টা নিচু করলো সিনহা।
– ” সরি,,,! বলে সিনহার চিবুকে হাত দিয়ে মুখ টা উঁচু করিয়ে সিফাত সিনহার কপালে চুমু একে দিলো।
– “তোমার হাসবেন্ডের কি হবে এবার?
সিফাত সব টা জানে সিনহার মা ফোনে ওকে সব বলেছে।সে সিনহা কে জ্বালানোর জন্য বললো কথাটি।
– “মানে কিসের বর?
– ” ঐ যে যার সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেছিলে আমায় ধোকা দিয়ে তার কথা বললাম,তাকেও কি আমার মতো ধোকা দিচ্ছো এবার?
কথাটি শোনা মাত্রই সিনহা রেগে গেলো। ওহ তাই না আমি তোমায় ধোকা দিয়েছি এখনো এটাই ভাবো তুমি নিজে কিছু করোনি।আমার আসাই ভুল হয়েছে থাকো তুমি আমি যাচ্ছি ফিরবো না আর তোমার কাছে।তুমি একটা যা তা।বলে রাগ করে চলে যেতে লাগছিলো সিনহা।তখুনি সিফাত হাত ধরে জোরে টান দিলো সিনহাকে।সিনহা সোজা এসে পড়লো সিফাতের বুকে।চুলগুলো এলোমেলো হয়ে পড়লো সিনহার মুখে।সিফাত সিনহার কোমড়ে ধরে আচমকা আরো কাছে জড়িয়ে নিলো।মিশে নিলো নিজের শরীরের সাথে সিনহাকে।সিনহার মুখের ওপর এলোমেলো হয়ে থাকা চুলগুলো ধীরে ধীরে তার হাতের আলতো ছোয়াই সড়াতে লাগলো।চুলগুলো কানের পিছনে গুজে দিয়ে নিজের ঠোঁট দুটো সিনহার দিকে এগিয়ে নিয়ে গেলো।গালে একটা চুমু দিলো।সিনহা পুরো বরফ হয়ে যাচ্ছে। কতোদিন পর আবারো সেই চেনা ছোঁয়া । সিনহা কে ঘোর লাগিয়ে দিচ্ছে। সিনহা কে পিছন দিকে ঘোরালো সিফাত।পিছন থেকে জরিয়ে ওর চুলে নাক ডুবিয়ে ঘ্রান নিতে লাগলো।গভীর নিশ্বাসে চুলের ঘ্রান নিচ্ছে সে।আর সিনহার শরীর বয়ে শিহরন বয়ে যাচ্ছে। সিফাত সিনহার পেটে হাত দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে আছে কাধে মাথা রেখে।
– ” সিনহা,,?
– “হু,,সিনহার নিঃশ্বাস ভার হয়ে এসেছে।
– ” কখনো ছেড়ে যাবে আর?
– “উঁহু,,!
– ” প্রমিস,,?
– “হু,,!
– ” কি হু হু বলছো,মনে থাকে যেনো,এবার গেলে আমায় আর ফিরে পাবে না আমি মরেই যাবো।কথাটি বলা মাত্রই সিনহা পিছন থেকে সামনে ফিরে সিফাত কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
– “পাগলী কাঁদছো কেনো?
– ” তুমি এভাবে কেনো বলো,তোমার ছাড়া কিভাবে থাকবো আমি?
– “এতোদিন কিভাবে ছিলে?
– ” তুমি বলো কিভাবে ছিলে আমিও সেভাবে ছিলাম।
– “জানি আমার মতো তুমিও কষ্টে ছিলে।আর না সিনহা।এখানেই আমাদের কষ্টের পরিসমাপ্তি হোক।
– ” হুম,আর কখনো ছেড়ে যাবো না তোমায়।
সিফাত সিনহার কপালে চোখের পাতায় চুমু দিয়ে বুকে জড়িয়ে রাখলো।
.
সাইরি পাত্রীর সাজে বসে আছে ফাহিমের সামনে।ফাহিমও মাথা নিচু করে আছে।লজ্জায় তাকাচ্ছে না।ফাহিম বেশি লজ্জা পায়।ফাহিমের পরিবারের তো কেউ নেই।সিনহার খুব ভালো বন্ধু সে।তাই ফাহিমের নিজের বলতে সে সিনহা কেই মানে তারা নিজেদের মাঝে আলোচনা করে বিয়ে দিন ঠিক করে ফেললেন।সিফাত আর সিনহা দুজনে মিলে ফাহিম আর সাইরির বিয়ে দিচ্ছে।
.
সাইরি আর ফাহিমের ফোনালাপ
– “বুদ্ধু একটা,গাধা ক্যবলা কান্ত, এই আপনি কল দিয়েছেন কেনো বলুনতো?
বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আজকেই ফাহিমের প্রথম ফোন কল।অনেকদিন আগে বিয়ে ঠিক হয়েছে অথচ ফাহিম একবারো কল করেনি,বিয়ে মাত্র দুদিন পর তখন সে কল করছে কিন্তু প্রয়োজনের তাগিতে একটু ভালো কথা বলে সময় কাটানোর জনয় না।আর ফোন বা করাই সাইরি প্রচুর রেগে আছে।মনে মনে ভাবে এটা কোন গর্দভের সাথে বিয়ে করছি কে জানে।সে নাকি ভালবাসে অথচ একবারো ফোন করে না।বিয়ে হোক আগে তারপরই বুঝবা চান্দু সাইরি কি।
– “আসলে কল করেছিলাম একটা কথা জানার জন্য?
– ” হ্যাঁ কি বলবেন,বলে উদ্ধার করুন আমায়?
– “বলছিলাম যে আগামীকাল শপিংয়ে যাবেন আমার সাথে বিয়ের কেনাকেটার জন্য আপনার কেমন পছন্দ আমিতো জানি না।এই কথাটাও শালা ফাহিম বলদ বলতো না,যদি না সিনহা ওকে শিখিয়ে দিতো।
শপিংয়ে যাবে ফাহিমের সাথে কথাটি শুনে সাইরির নাচ তে ইচ্ছে করছে মনে মনে অনেক খুশি সে।কিন্তু মুখে প্রকাশ না করে গম্ভীর ভাবে বললো,,
– “আমি কোথাও যাবো না আপনি একাই গিয়ে শপিং করুন।
– ” আসলে সিনহা আপনাকে নিয়ে যেতে বলেছে।
– “ওহ আপু বলেছে জন্যই আপনি বলছেন তাই না,নিজের ইচ্ছে ই না,চুলোয় যান আপনি,যাবো না আমি আপনার সাথে।
– ” শুধু সিনহা বলার জন্যও না আমি মেয়েদের জিনিষ কেনাকাটা র বিষয়ে বুঝিনা পারিও না কিনতে আপনি গেলে ভালো হতো।
– “ওহ বুঝলাম।
– ” কি বুঝলেন?
– “আমার মাথা আর আপনার মুন্ডু।
কথাটি শুনে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ফাহিম,আবারো প্রশ্ন করলো।
– “যাবেন,?শান্ত গলায় বললো ফাহিম
– ” হ্যাঁ যাবো।
কথাটি শুনে ফাহিমের মনে এক দুই তিন,না চার টা লাড্ডু ফটাস করে ফেটে গেছে।খুশিতে গদ গদ হয়ে সে বললো।
– “আচ্ছা কাল বিকেলে রেডি থাকবেন আমি আপনার বাড়ি গিয়ে নিয়ে আসবো।
– ” আচ্ছা। বলার সাথেই ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিছে।রাগে সাইরির শরীর জ্বলে যাচ্ছে। কি মাথা মোটা রে বাবা। প্রয়োজনের কথা শেষ আর কেটে দিলো।আনরোমান্টিক আবুল একটা।এরে দিয়ে কিছু হবে না।ধ্যাত বলে ফোন টা বিছানার ওপর ফেলে দিলো সাইরি।
.
আর ফাহিম ফোন কেটে খুশি তে হাসছে।সাইরির সাথে সে কাল দেখা করবে।কালকেই সে তাকে প্রপোজ করবে।বিয়ে ঠিক হয়েছে তাদের অথচ ভালবাসার কথাটিই এখনো বলতে পারেনি সে কালকেই বলবে ভাবছে।তাই ফোন করে সবকিছুর এরেঞ্জমেন্ট করতে বললো সে।
.
বিকেলে ফাহিম গাড়ি নিয়ে দাড়িয়ে আছে সাইরি দের বাড়ির সামনে। সাইরি এখনো আসছে না ওকে এখনো দেখতে না পেয়ে ফাহিমের মন রা আনচান করছে।কখন সে দেখা পাবে তার মায়াপরীর।অপেক্ষা যেনো শেষ হচ্ছে না।অনেক টা সময় পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে সাইরি বেড হয়ে এলো।আজ সে শাড়ী পড়েছে।চুলগুলো খোলা রেখেছে।কালো রংয়ের জর্জেট শাড়ী,চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপষ্টিক,খোলা চুল সবকিছু মিলিয়ে অপ্সরীর মতো লাগছে তাকে।ফাহিম এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে সাইরির দিকে।সাইরি সৌন্দর্য্যে তার ডুব দিতে ইচ্ছে করছে।সাইরি সামনে এসে বললো।
– “গাড়ি নিয়ে এসেছেন কেনো?
– ” মানে যাবেন না,যাবেন জনয় গাড়ি নিয়ে এসেছি।
– “যাবো তো বটেই,তবে গাড়িতে নয়।
– ” তাহলে কিসে হেঁটে যাবেন নাকি?
– “আরে না, রিক্সায় যাবো রিক্সা ডাকুন?
– ” আচ্ছা। বলে রিক্সা নিয়ে এলো ফাহিম।দুজনেই রিক্সায় উঠে বসলো।
.
to be continue……..
Note :আশা করি পরের পর্বে শেষ হয়ে যাবে।চমৎকার সব গল্প পেতে নিয়মিত ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানায়

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here