#আড়ালে_অনুভবে🌼
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৩
ভোরের স্নিগ্ধ আলো ঘরে প্রবেশ করতেই হুট করে ঘুমটা ভেঙে যায় প্রভার।পিটিপিট করে চোখ খুলে চারপাশে তাকাতেই বুঝতে পারে অনেকটা বেলা হয়ে গেছে।সে সচরাচর দেড়ি করে ঘুম থেকে ওঠেনা।
কাল রাতে কাদতে কাদতেই ঘুমিয়ে পরেছিলো সে।তাই ঘুম টা ভাঙতে দেড়ি হয়ে গেলো।শুয়ে থাকা অবস্থাতেই ঘড়ির দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে প্রভা।সঙ্গে সঙ্গেই চোখ মারবেল এর আকার ধারণ করে,সে এতো বেলা অবধি ঘুমিয়েছে? তাড়াহুড়ো করে বিছানা থেকে উঠতে চেয়েও পারলো না।মাথাটা প্রচণ্ড ভার হয়ে আছে, অতিরিক্ত কাদাঁর ফলেই এমনটা হচ্ছে।তবে এখন জোড়পূর্বক হলেও উঠতেই হবে।নইলে আবারো তার মা কথা শোনাবে,যা সজ্য করার ক্ষমতা এখন আর অবশিষ্ট নেই।
জোড়পূর্বক বিছানা থেকে উঠে কাবার্ড থেকে জামা নিয়ে ওয়াশরুম এ ঢুকে যায় প্রভা,এখন শাওয়ার না নিলে মাথাটা কিছুতেই ছাড়বে না।
,,
ডাইনিং টেবিল এ বসে আছে মুনতাহা সিদ্দিকা(প্রভার মা) এবং জিনিয়া সুলতানা(প্রথার মা)। বরাবরের মতোই মুনতাহার মুখে গম্ভিরতার আভা বিদ্যমান।
সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো প্রথা,সে বরাবরেই দেড়িতে ওঠে।মানে খুব বেশি দেড়িনা আবার খুব তাড়াতাড়ি ও না।ফোন এ চোখ ডুবিয়েই ডাইনিং টেবিল এর সামনে চেয়ার এ বসে পরলো প্রথা।তখন ই খেয়াল করলো প্রভা এখনো আসেনি।ও তো এতো দেড়ি করেনা কখনো।মনের মাঝে অজান্তেই আজেবাজে চিন্তা উদয় হতে লাগলো। পরে নিজের মনকে বুঝ দিয়ে বললো,
–আম্মু,আপু কোথায়?এখনো এলো না যে?
–সত্যি ই তো,আমি তো খেয়াল ই করিনি।মেয়েটা তো কখনো এতো বেলা করে ঘুম থেকে ওঠেনা।শরীর টরির খারাপ করলো না তো আবার? (মুখে বেশ খানিকটা চিন্তার আবেশ নিয়ে বললেন জিনিয়া)
–নিয়ম কানুন ধীরেধীরে সবটা খেয়ে ফেলছে।দেড়ি করে ঘুমিয়েছে হয়তো,নইলে এতো বেলা হবে কেনো। (অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে বিরক্তির স্বরে বললেন মুনতাহা)
–কাকিমুনি,তোমার কি মনে হয় না তুমি পুড়োই বাজে কথা বলছো?আচ্ছা,তোমার কি একটুও, মানে জাস্ট এতটুকুও চিন্তা হয় না তোমার মেয়ের জন্য?অবশ্য তোমাকে এসব কথা বলাই বৃথা।তুমি কখনোই বুঝবে না। (প্রথা)
–আহ প্রথা,তুই এসব কথা ছেড়ে আগে গিয়ে দেখ প্রভা ঠিক আছে কিনা? (জিনিয়া)
–হ্যা যাচ্ছি (প্রথা)
কথাটা বলে যেই চেয়ার থেকে উঠতে যাবে তখন ই দেখো প্রভা তাড়াহুড়ো করে সিড়ি দিয়ে নামছে। সস্তির নিশ্বাস ছাড়লো প্রথা,সে জানে প্রভা শত কষ্ট পেলেও কোনো উল্টোপাল্টা কাজ করবে না,তবুও ভাবনা কে কি করে আটকাবে।
প্রভা তাড়াহুড়ো করে টেবিল এর সামনে এসে দাড়াতেই জিনিয়া চেয়ার থেকে উঠে প্রভার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–কি হয়েছে মা?মুখটা এমন শুকনো লাগছে কেনো?শরীর ঠিক আছে তোর?এতো বেলা করে উঠলি যে? (জিনিয়া)
প্রভার হৃদয় শান্তির হাওয়া বয়ে গেলো।কাকিমুনির এই দুটি লাইন ই যে তার জন্য অনেক কিছু।যা নিজের মায়ের থেকে পাওয়ার কথা ছিলো তার যথাসাধ্য কাকিমুনিই দিয়েছে।এই মানুষটির আদর পেলেই যেনো মায়ের করা অবহেলার ভুলে থাকতে সক্ষম হয় প্রভা।
ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলতে নেয়,
–কাকিমুনি,আসলে…
–বড্ড অবাধ্য হয়ে যাচ্ছো তুমি দিনদিন।কাল ই এতগুলো কথা বললাম তবুও গায়ে লাগলো না? এটা ভদ্রলোকের বাড়ি,তুমি যেমন খুশি চলবে, যখন খুশি ঘুমোবে আর ঘুম থেকে উঠবে।আর এসব আমি মেনে নেবো?তুমি যদি তা ভেবে থাকো তাহলে সেই ভাবনা ঝেড়ে ফেলো। যতদিন এ বাড়িতে আছো আমার কথামতোই চলতে হবে তোমায়।বিয়ের পর শশুর বাড়ি গিয়ে যা খুশি করো,আমি নাক গলাতে যাবো না। (প্রভার কথার মাঝেই বলে উঠলো মুনতাহা)
সাময়িক আনন্দিত হওয়া হৃদয়খানা যেনো আবারো বিষাদময় হয়ে উঠলো প্রভার।চোখের কার্নিশে নোনা জল এসে ভির জমালো তবে তা এখন বিষর্জন দেওয়া যাবেনা নইলে “ঢঙ্গি” উপাধি দিতেও দু বার ভাববেনা তার মা।
প্রথা অতি কষ্টে নিজের রাগ সংযত করে রেখেছে।মুনতাহার সাথে খুব বেশি কথাও বলে না সে।তবে চোখের সামনে বোন কে এভাবে অপমানিত হতে দেখলে প্রতিবাদ না করে থাকতে পারে না।
–আহহ ভাবি,তুমি কি দিয়ে তৈরি বলতে পারো? আরে রাস্তার কুকুরের জন্য ও তো সামান্য চিন্তা থাকে,আর তোমার তো নিজের পেটের মেয়ের জন্য সেটুকুও চিন্তা নেই।প্রভা মা,তুই কিছু মনে করিস না।তুই তো জানিস ই তোর মা কেমন।আয় মা খেয়ে নে এবার। (জিনিয়া)
প্রভা অতি কষ্টে মুচকি হেসে বললো,
–বিশ্বাস করো কাকিমুনি।আমার একটুও খিদে নেই।তার উপর কোচিং এও লেট হয়ে যাচ্ছে।সুপ্তি আর নিশু আমার জন্য অপেক্ষা করছে।আমি বাহিরে কোথাও খেয়ে নেবো তুমি চিন্তা করোনা। (প্রভা)
–আপু তুই.. (প্রথা)
–আসছি বোন।টাটা। (প্রথার গাল আলতো টেনে মুচকি হেসে বেড়িয়ে এলো প্রথা)
–ইনাফ কাকিমুনি,তুমি কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করে ফেলছো।কাল রাতে এতোগুলো কথা শুনিয়েও কি মন ভরেনি যে এখন আবারো বলতে হলো? (প্রথা)
–ওকে বলে কোনো লাভ নেই প্রথা।পাথর এর গায়ে শত পানি ঢাললেও তা গলানো যায় না। (জিনিয়া)
মুনতাহা কোনো কথার প্রতিউত্তর করলেন না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে গেলেন।
বর্তমান–
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে হালকা কমলা রঙের শাড়ি পরে তৈরি হচ্ছি আমি।সকালে ঘুম ভাঙতেই উজ্জ্বল ফোন দিয়ে বলে দিয়েছে,
“ইশা,জলদি রেডি হয়ে নাও আমরা ঘুড়তে বের হবো।তারপর সেখান থেকে হসপিটাল যাওয়া যাবে।”
যদিও আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে ছিলোনা তবুও মানা করতে পারিনি।বিডিতে ফেরার পর আজ প্রথম বাহিরে বেড় হচ্ছি।মনের মধ্যে অজানা ভয় দলা পেকে যাচ্ছে।এই বুঝি সব পুড়োনো মানুষ গুলো সামনে এসে দাঁড়াবে।
এসব যত ভাববো ততই ভাবনা বারবে।তাই আর কিছু না ভেবে পার্স টা নিয়ে বেড়িয়ে এলাম কোয়াটার থেকে।এটা হসপিটাল এর নামি দামি ডক্টর দের জন্য।তাই আমি আর উজ্জ্বল ও যে কদিন আছি এখানেই থাকবো।আমাদের জন্য আরো ভি আইপি রুম দিতে চেয়েছিলো তবে আমি ই আপত্তি জানাই।
_______☁️
এক দৃষ্টিতে হাতে থাকা ছবির দিকে তাকিয়ে আছে এক যুবক।যেনো সারাজীবন পার করে দিতে পারবে এই ছবির দিকে তাকিয়ে।সে তো চেয়েছিলো এই মানুষটিকে চোখের সামনে বাস্তবে দেখে জীবন পার করবে।তবে সব ইচ্ছে কি আর পূরণ হয়?
–স্যার,আপনার ডিনার এর টাইম হয়ে গেছে। (সিরাজ)
সিরাজ এর কথায় দ্যান ভাঙলো যুবকটির।ছবিটি পিছনে লুকিয়ে বললো,
–আমার খিদে নেই,যাও এখান থেকে।
–কিন্তু স্যার,আপনার শরীর খারাপ করবে।(সিরাজ)
–আহহ,আমি বললাম তো চলে যেতে।গেট আউট ফ্রম হেয়ার,রাইট নাও।
যুবকটির কথায় কেপে ওঠে সিরাজ।বাধ্য হয়ে রুম থেকে প্রস্থান করে সে।
,,
একটি মেয়ের হাস্যজ্বল মুখশ্রীর ছবি বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে ব্যালকনি তে এসে দাঁড়ায় যুবকটি। যেন পারলে ছবিটি হৃদয়ের মাঝে লুকিয়ে রাখতো।হাতের বাধন আলগা করলেই যেনো হারিয়ে যাবে ছবিতে থাকা মেয়েটি।ছবিটি আরো শক্ত করে আঁকড়ে ধরে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
“খুব সুখে আছিস আমায় কষ্টে রেখে,তাই না?কিন্তু আমি ভালো নেই।তুই হারিয়ে দিলি আমায়।প্রতি বারের মতো এবারো জিতে গেলি তুই।হাজারো সপ্ন তো দেখেছিলাম তোকে নিয়ে,ভালো তো বেসেছিলাম শুধু তোকে,হ্যা শুধু তোকে।তুই বুঝলি না আমায়,যেই তোকে নিয়ে গড়ে তোলা সব সপ্ন পূরণ করার জন্য এতো কিছু করলাম। সেই তুই ই সব সপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।তবুও আমি কিন্তু হারিনি।হেরে গিয়েও জিতে আছি আমি।because I feel you.প্রতি মুহূর্তে তোকে অনুভব করি আমি।হ্যা,হয়তো সম্মুখে অনুভব করতে পারিনা।তবে তাতে কি,আমি তো তোকে হাজার মাইল দূড় থেকেও অনুভব করতে পারি। তাই তুই নাহয় আমার আড়ালে অনুভবে হয়েই রয়ে যা।”
মাথায় অতিরিক্ত চাপ পড়ার ফলে অসহনীয় ব্যাথা শুরু হয়।যুবকটি এক হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে।মুখ থেকে কাপা কাপা গলায় “আহহ” শব্দ বেড়িয়ে আসে।
যুবকটির আওয়াজ পেয়ে দোড়ে রুমে ঢোকে সিরাজ।বারান্দায় মাথায় হাত দেওয়া অবস্থায় যুবকটিকে দেখে দৌড়ে সেখানে যায়।
–স স্যার কি হয়েছে আপনার? (সিরাজ)
অসহনীয় ব্যাথা সজ্য করতে না পেরে ছবিটি শক্ত করে চেপে ধরে মুচকি হেসে মাটিতে লুটিয়ে পরে যুবকটি।
#চলবে
[