আড়ালে অনুভবে পর্ব ৪

#আড়ালে_অনুভবে🌼
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৪
রাস্তা দিয়ে এলোমেলো ভাবে হেটে যাছে প্রভা।পায়ে যেনো কোনো প্রকার জোড় পাচ্ছে না।একে তো কাল রাতে কিছু খায়নি তার উপর সকালেও না খেয়ে বেড়িয়েছে। আসলে ও মিথ্যে কথা বলেছিলো,আজ নিশাত বা সুপ্তি কেউ ই আসে নি কোচিং এ। নিশার এর বাসায় গেস্ট আর সুপ্তি গেছে তার সো কল্ড বয়ফ্রেন্ড এর সঙ্গে দেখা করতে।
একটাও রিক্সা পাচ্ছে না রাস্তায়।মনে হচ্ছে এই বুঝি মাথা ঘুড়ে পরে যাবে।গলাটা প্রচণ্ড আকাড়ে শুকিয়ে গেছে।ব্যাগ চেক করতেই দেখে পানির বোতল টাও আনেনি আজ।বাধ্য হয়ে আবারো এলোমেলো পায়ে হাটা শুরু করে।
মিনিট পাঁচেক হাটার পর তার শরীর আর সজ্য করতে পারে না।চোখের সামনের দিকটা ঝাপসা হয়ে আসে।

______☁️
গায়ে টি শার্ট এর উপর সাদা এপ্রোন,সঙ্গে গলায় স্টেথোস্কোপ ঝুলিয়ে ওয়ার্ড ভিজিট এ ব্যাস্ত নিরব।ইন্টার্নশিপ এর স্টুডেন্ট সে।বাহির থেকে অনেকটা রাগী স্বভাবের হলেও পেশেন্ট দের ক্ষেত্রে তার উল্টোটা।অল টাইম কলেজ এ টপ স্টুডেন্ট হওয়ায় ইতিমধ্যেই কলেজ এ অনেক সুনাম তার এবং অনেকেই চেনে তাকে।
ওয়ার্ড এর লাস্ট বেডের পেশেন্ট এর রিপোর্টস চেক করার সময় ই তার চোখ পরে দড়জার দিকে।সেখানে কাউকে খেয়াল করে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বেড়িয়ে পরে ওয়ার্ড থেকে।
দড়জা থেকে বাহিরে বেড়িয়েই সামনে থাকা ছেলেটির উদ্দেশ্যে বলে,
–যেটা বলেছিলাম এনেছিস?(নিরব)
নিরব এর কথায় আহান ব্যাগ থেকে একটা ফাইল বের করে সামনে দিয়ে বললো,
–হুম,এই নে মেয়েটার অল বায়োডাটা আছে এখানে। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারছিনা দা গ্রেট সৈকত আহমেদ নিরব একটি মেয়ের বায়োডাটা দিয়ে কি করবে?প্রেমে ট্রেমে পড়লি নাকি ভাই? (আহান)

–আমি আর প্রেম?হাহ,নাইস জোকস।বাই দা ওয়ে,আমি কেনো ওর বায়োডাটা চেয়েছি সেটা নাহয় পড়েই বলবো।এখনো উপযুক্ত সময় আসেনি। (নিরব)

–তোর মাথায় যে কখন কি চলে আসলেই বোঝা মুশকিল।ওকে,আমি এখন আসছি।ওটি তে যেতে হবেম।বায়। (আহান)

–হুম
কথাটা বলেই নিরব ফাইল থেকে প্রভার একটা ছবি বের করে চোখের সামনে ধরলো।ঠোঁটের কোণে রহস্যময় বাকা হাসি ফুটিয়ে বললো,
–এবার তোমাকে আমার হাত থেকে কে বাঁচাবে মিস প্রতিভা? (বিড়বির করে বললো নিরব)
ঠিক তখনি নিরব এর ফোন টা বেজে ওঠে।ছবিটা ফাইল এ ঢুকিয়ে ফোন টা হাতে নিতেই অঙ্কিত এর ছবি স্ক্রিনে ভেসে ওঠে।মুচকি হেসে ফোন টা রিসিভ করে।
–কিরে ভাই?হঠাত আমার কথা মনে পড়লো?তুই তো আজকাল আমাকে ভুলেই গেছিস।কেমন আছিস বল?দেশে কবে ফিরছিস? (নিরব)

–ফ্লাইট ল্যান্ড করলো মাত্র।এয়ারপোর্ট এ দাঁড়িয়ে আছি। (অঙ্কিত)

–হোয়াট?আর ইউ জোকিং ইয়ার? (নিরব)

–বর্তমানে আমি কোনো প্রকার মজা করছিনা। আর হ্যা,বাড়িতেও কাউকে কিচ্ছু জানাই নি।একটা বিশাল সারপ্রাইজ দিবো সবাইকে।এখন বল,মিট করতে পারবি? (অঙ্কিত)

–কেনো রে?ভাবির সাথে দেখা করতে যাবি বুঝি? (নিরব)

–শালা তোর ৫ নম্বর বাংলাদেশি ভাবির সাথে তো আরো ২ মাস আগেই ব্রেকাপ হইছে।এবার ভাবছি ওসব টাইমপাস বাদ দিয়ে দিবো।মনের মতো মেয়ে পেলে সোজা কাজি অফিস এ নিয়ে বিয়ে করে ফেলবো।এখন বল আসতে পারবি? (অঙ্কিত)

–আব আচ্ছা তুই ওয়েট কর আমি আসছি। (নিরব)

______
বর্তমান🌼

নদীর পারে পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছি আমি আর উজ্জ্বল।অমাবস্যা হওয়ায় আজ সারা পৃথিবী আধার এ ছেয়ে গেছে।শুধুমাত্র আকাশের তারাগুলোর আলোয় সামান্য আলোর আভা রয়েছে চারিপাশে।
সকাল বেলা বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর হসপিটাল থেকে কল আসায় আমাকে আর উজ্জ্বল কে সেখানে যেতে হয়েছিলো।যার ফলস্বরুপ বিকেলে ঘুরতে বের হই।বিভিন্ন যায়গায় ঘোড়াফেরা শেষে উজ্জ্বল আমাকে এখানে নিয়ে আসে।বেশ কিছুক্ষণ ধরেই দুজনের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।এবার উজ্জ্বল নিরবতা ভেঙে বলে উঠলো,
–জানো তো ইশা?এই জায়গা টার সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে।এখানে আসলেই সমস্ত স্মৃতি ঘিড়ে ধরে আমায়।তাই তো বিডি তে আসার পর এখানে একবারো আসিনি।আজ তুমি সঙ্গে আছো বলে এলাম এখানে। (উজ্জ্বল)

সামনের দিকে তাকিয়েই কথা টা বললো উজ্জ্বল। আমি অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালাম।উজ্জ্বল কে এই পাচ বছরে কখনো এমন মলীন কণ্ঠে কথা বলতে শুনিনি আমি।
উজ্জ্বল এবার তার দৃষ্টি সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
–কিসের স্মৃতি জিজ্ঞেস করবে না? (উজ্জ্বল)
আমি মুচকি হেসে বললাম,
–আমার ও তো একটা অতীত আছে।কিন্তু তুমি তো কখনো আমায় বলার জন্য জোড় করোনি। বলতে গেলে তুমি আমার জীবনদাতা।আমাকে নতুন করে বাচতে দিয়েছো তুমি,বন্ধু হয়ে জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্তে কোন স্বার্থ ছাড়াই আমার পাশে দাঁড়িয়েছো।তাই তোমাকে কোনো প্রশ্ন করার ইচ্ছে বা স্পর্ধা কোনোটাই আমার নেই উজ্জ্বল।

–হাহ,তুমি সত্যি ই আমায় এখনো বন্ধু ভাবতে পারোনি ইশা। (উজ্জ্বল)

–উজ্জ্বল,তেমন টা নয়.. (আমি)

–হুম বুঝেছি।তবে তুমি না জিজ্ঞেস করলেও আমি বলতে চাই।শুনবে? (উজ্জ্বল)
আমি মাথা নেড়ে হ্যা জানান দিলাম।উজ্জ্বল এবার আবারো সামনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
–একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতাম আমি। জানো তো ইশা?মেয়েটাকে না দেখেই ওকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম।কি করে?কখন? কিছু জানি না আমি।

–মেয়েটাও তোমায় ভালোবাসতো? (আমি)

–আজ এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর আমার কাছে নেই।হয়তো বাসতো আবার হয়তো না।তবে ওকে দেখে আমার একটিবারের জন্য ও মনে হয়নি ওর ভালোবাসা মিথ্যে।তবে আমার বিশ্বাস কে ভেঙে দিলো ও.. (শেষের কথাটা খুব কষ্টের সঙ্গে বললো উজ্জ্বল)

–মেয়েটার নাম কি? (আমি)

–ওর নাম…
আর কিছু বলার আগেই আমার ফোন টা বেজে উঠলো।ফোন টা হাতে নিতেই দেখলাম হসপিটাল এর একজন এসিস্টেন্ট ডক্টর কল দিয়েছে।আমি কল টা রিসিভ করতেই সে বলতে লাগলো,
–হ্যা ম্যাম! (তৃষা)

–হ্যা বলো তৃষা।কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর এমন লাগছে কেনো? (আমি)

–আপনাকে ইমারজেন্সি হসপিটাল এ আসতে হবে ম্যাম। (তৃষা)

–কি হয়েছে?এনি প্রবলেম? (আমি)

–ম্যাম,আপনি যার অপারেশন এর জন্য এসেছেন। স্যার হঠাত করে সেন্সলেস হয়ে গেছে। আমরা যতটুকু বুঝতে পারছি ব্রেইন এ অতিরিক্ত প্রেশার ক্রিয়েট হওয়ার ফলে এমনটা হয়েছে।আপনি যদি একটু তারাতারি আসতেন। (তৃষা)

–আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসছি।কিন্তু ওনার নাম টা কি? (আমি)

–জি ম্যাম, ডঃ সৈকত আহমেদ নিরব। (তৃষা)

–হ্যালো!হ্যালো তৃষা তোমার কথা শুনতে পারছিনা। (আমি)

–হ্যালো,হ্যালো ম্যাম.. (তৃষা)
ফোন টা কেটে গেলো।যাহ,নামটা শুনতেই পারলামনা।
–কি হয়েছে তৃষা? (উজ্জ্বল)

–আমাদের ইমিডিয়েটলি হসপিটাল এ যেতে হবে। (আমি)

#চলবে

[রিচেইক করা হয়নি।ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
হ্যাপি রিডিং❤️]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here