#আড়ালে_অনুভবে🌼
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৫
চোখ খুলে সামনে তাকাতেই আবারো মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার মতো অবস্থা প্রভার।এক লাফে শোয়া থেকে উঠে বসে দুহাত দিয়ে চোখ টা আবারো কচলে নেয় সে।তবুও চোখের সামনে সেই একই মুখশ্রী দেখে হা হয়ে তাকিয়ে থাকে।কারণ সামনে বসে আছে তার চাচাতো ভাই অঙ্কিত অর্থাৎ সিনথিয়ার (প্রথার সম্পূর্ন নাম সিনথিয়া আফরিন প্রথা) বড় ভাই।যে কিনা প্রায় সাত বছর যাবত বিদেশে থাকে।অঙ্কিত যখন বিদেশে চলে যায় তখন প্রভা সবে মাত্র ক্লাস ফাইভ এ পরে আর প্রথা পড়ে ফোর এ।অঙ্কিত দুজনকেই খুব ভালোবাসতো আর এরাও ওদের ভাইয়াকে জান দিয়ে ভালোবাসতো।বলতে গেলে ভাইয়া বলতে পাগল ছিলো দুজন।
প্রভা এখনো ওভাবে হা করে তাকিয়ে আছে তখনি দড়জার সামনে থেকে কেউ বলে ওঠে,
–এভাবে হা করে থাকলে মুখে মশা ঢুকে যাবে।
দড়জার দিকে তাকাতেই যেনো প্রভার হার্টএট্যাক করার ন্যায় অবস্থা।কারণ তার সামনে নিরব অর্থাৎ সেদিনের ঐ লোকটিই দাঁড়িয়ে আছে।সেদিন ওভাবে পাগল এর মতো কথা বলে সরে আসার পর নিশাত ওনার পরিচয় দিয়েছিলো।কেউ নাকি ওনার সামনে গলা তুলে কথা বলার পর্যন্ত সাহস পায় না।উনি নাকি কারোর উপর রেগে গেলে তার ছত্রিশ টা না বাজিয়ে ছাড়ে না। কিন্তু উনি এখানে কি করে এলেন সেটাই ভেবে পাচ্ছে না প্রভা।আবার ওকে শাস্তি দিতে এলোনা তো!ভয়ে হাত পা কাঁপছে প্রভার।
পরমুহূর্তেই অঙ্কিত এর কথা মনে পড়তে তার দিকে তাকিয়ে বেশ জোড়ে বলে ওঠে,
–ভাইয়ায়ায়ায়ায়া তুইইইইইইইই!
–ওমাগো,কান টা গেলো।এই তোর চিৎকার করার স্বভাবটা গেলো না তাই না? (অঙ্কিত)
প্রভা এবার অনেকটা ইমোশনাল হয়ে যায়।কতোদিন পর ভাইকে দেখছে।বিছানা থেকে উঠেই জড়িয়ে ধরে অঙ্কিত কে।অঙ্কিত ওর পাশেই বসে ছিলো।
–ভাইয়া তুই কবে এলি?একবার জানালি ও না? (প্রভা)
–ভেবেছিলাম তোদের সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো।কিন্তু তুই ই তো আমাকে সারপ্রাইজ দিয়ে দিলি। (অঙ্কিত)
–মানে?আমি আবার কি সারপ্রাইজ দিলাম?আর আমি বাড়িতেই বা এলাম কি করে?আমি তো… (প্রভা)
–খাওয়া দাওয়া করো না কদিন ধরে? (বেড এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলে নিরব)
–আ আপনি এখানে ক কি করে? (প্রভা)
–ওয়েট ওয়েট,তুই কি ওকে চিনিস নাকি প্রভা? (অঙ্কিত)
–আজব,ও আবার আমাকে কি করে চিনবে? আমি তো ওকে এই প্রথম দেখলাম। (নিরব)
প্রভা চোখ বড়বড় করে নিরব এর দিকে তাকায়।
–ওহ।তো প্রভা,মিট মাই বেস্ট ফ্রেন্ড সৈকত আহমেদ নিরব।মেডিকেল এর ইন্টার্নিশিপ এ আছে প্রেজেন্ট এ।আজকে দেশে আসার পর প্রথম এ ওর সাথেই দেখা করতে গিয়েছিলাম। ও আর আমি গাড়িতে চড়ে আসার সময় ই দেখি তুই রাস্তায়।ভাবলাম তোকে সারপ্রাইজ দেওয়া যাক। কিন্তু তখন ই তুই সেন্সলেস হয়ে গেলি। (অঙ্কিত)
–এসে গেছি এসে গেছি।গরম দুধ হাজির।নে আপু,এটা খেয়ে নে তো। (দড়জা থেকে দুধের গ্লাস নিয়ে এসে বললো প্রথা)
–তা নাহয় খাবে তার আগে একটা ইনজেকশন দিতে হবে। (নিরব)
–নেহিইইইইইইই,ও ভাইয়া গো,ও সিনথু রে আমাকে বাচা।আমি ইনজেকশন নিবো না।এএএএএ। (প্রভা)
–খাওয়া দাওয়ায় অনিয়ম করার আগে এ কথা মনে ছিলোনা? (নিরব)
প্রভা এবার চুপ করে মাথা নুইয়ে নেয়।নিরব এসে একটা ইনজেকশন পুশ করে প্রভার হাতে।প্রভা চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়।সিনথু এবার প্রভার পাশে বসে বলে,
–অনেক হয়েছে,সম্পূর্ন বেড রেস্ট এ থাকবি এবার।জানিস তোর প্রেশার এতোই লো যে সেন্সলেস হয়ে গেছিলিস। (সিনথিয়া)
তখন ই মুনতাহা রুমে এসে প্রভার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই প্রথা ওনার সামনে দাঁড়িয়ে বলে ওঠে,
–প্লিজ,একটু দয়া করো?অনেক তো বললে, এখনো কি মন ভরেনি?নাকি আবারো আপুকে হাজার টা কথা শোনাতে এসেছো?(প্রথা)
–সিনথু তু.. (প্রভা)
–আপু প্লিজ,অনেক চুপ করে থেকেছি এখন আর নিষেধ করিস না।হ্যা তো তোমাকে বলছি,দয়া করে এখান থেকে চলে যাও।আমার মুখে আরো খারাপ ব্যাবহার না শুনতে চাইলে চলে যাও এখান থেকে।আপু তোমাকে কোনো প্রয়োজন নেই।আপুর জন্য আমি আছি,আম্মু আছে,আর এখন তো ভাইয়াও আছে।তাই ভালো ভাবে বলছি চলে যাও এখান থেকে। (প্রথা)
আম্মু এবার মাথা নিচু করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। আজকে যেনো আম্মুকে অন্যরকম দেখাচ্ছিলো।
সিনথু তখনি বারবার দড়জার দিকে তাকিয়ে কাউকে খুজতে লাগে।
–এই,তুই আবার কাকে খুজছিস? (অঙ্কিত)
–ভাবি কে খুজছি। (প্রথা)
–হোয়াট! (অঙ্কিত)
–বারে!তুই বিদেশ থেকে বিয়ে না করে এসেছিস?এটাও আমি বিশ্বাস করবো?মোটেই না।বল বল কোথায় রেখেছিস ভাবি কে? (প্রথা)
–এটা কিন্তু আমারো প্রশ্ন।এবার বল ভাই,তুই বিয়ে করলিনা কেনো? (নিরব)
–তেমন কোনো মেয়ে পাইনি তাই। (অঙ্কিত)
–সোহা আপুর মতো বুঝি আর কাউকে ভালোবাসতে পারোনি? (প্রভা)
অঙ্কিত এর মুখের হাসি মুহূর্তেই মিলিয়ে যায়।প্রভার হুশ ফিরতেই নিজেকে শত গালি দিতে থাকে।না চাইতেও কষ্ট দিয়ে ফেললো তার ভাইয়াকে।
–আব ভাইয়া প্লিজ কিছু মনে করোনা।আসলে আমি কি বলতে কি বলেছ..আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। (প্রভা)
–ইটস ওকে বোন।আমি কিছুই মনে করিনি। (মুচকি হেসেই কথাটা বলে বেড়িয়ে যায় অঙ্কিত)
দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে প্রভা।অন্যদিকে নিরব ভ্রু কুচকে সবটা পর্যবেক্ষণ করছে।
–এই সোহা টা কে? (নিরব)
–নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড এর জীবনের এতো মূল্যবান একটা বিষয় সম্পর্কেই জানেন না আপনি? (প্রভা)
–আমি সত্যি ই কিছু জানিনা।অঙ্কিত কখনো এই ব্যাপারে কিছু বলেনি তো। (নিরব)
–যেহেতু জানেন না তাহলে বরং না জানাই থাক। অনেক বিষয় না জানাই ভালো। (প্রভা)
______🌥️
জানালার গ্রীল ধরে আকাশে সাদা মেঘগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সুপ্তি।মনটা আজ বড্ড খারাপ তার।চোখের কার্নিশে নোনাজল এসে ভীর জমিয়েছে।চোখ বন্ধ করে নিতেই গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে অশ্রুকণা।দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আপনমনে বলে ওঠে,
“পৃথিবীটা এমন কেনো?ভালোবাসার যন্ত্রণা কেনো এতটা গভীর?জ্ঞান হওয়ার পর থেকে যাকে মন প্রাণ দিয়ে আড়ালে ভালোবেসে গেলাম সেই মানুষ টার মন পেলো অন্য একজন।নিজের অনুভুতি কে গুটিয়ে নিলাম সেই মানুষটির সুখের কথা চিন্তা করে।তবুও তো সে সুখ পেলো না!কেনো পৃথিবীতে প্রকৃত ভালোবাসার জুতিগুলোর উপর এতোটা হিংসে স্মৃষ্টিকর্তার?কেনো সবসময় আলাদা করে দেয় মানুষগুলোকে।
তবে আমার ভালোবাসা টা নাহয় বরাবরের মতো একতরফা ই থেকে গেলো।হয়তো বা কখনো তাকে জানাতেও পারবো না,তাকে কতটা..”
_______🌥️
বর্তমান—
গাড়ি নিয়ে হসপিটাল এর দিকে ছুটে চলেছি উজ্জল আর আমি।এই রোগীর চিকিৎসার জন্য আমরা নিউইয়র্ক থেকে বিডি তে এসেছি।শুনেছি ইনি নাকি দেশের টপ লিস্ট এর কার্ডিওলজিস্ট দের মধ্যে একজন।ব্রেন টিউমার এ আক্রান্ত তিনি। অপারেশন এও প্রচুর রিস্ক আছে।৫০/৫০ চান্স।যদিও ওনার নাম টা আমি এখনো শুনিনি।হসপিটাল থেকে কল আসার পর থেকেই মন টা কেমন যেনো কু ডাকছে আমার।বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটতে চলেছে।
#চলবে
[