#ইংলিশ_টিচার
পর্ব : ১৩
…
বেশ কিছুদিন চলে গেলো আর শুভর যাওয়ার ডেট চলে আসলো।
সকাল থেকে শুভ অনেক নার্ভাস হয়ে যাচ্ছে এই ভেবে, মিলি আসবে তো শুভকে আটকাতে??
শুভ তো এই দেশ ছাড়তে চাচ্ছে না, শুভ তো মিলিকে নিয়ে এই দেশেই ভালো থাকতে চাচ্ছে।
শুভ তার মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলো তার রুমে।
শুভর এক হাতে পাসপোর্ট আরেক হাতে ব্যাগ দেখে শুভর মায়ের কেমন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিলো।
শুভর মা খুব অভিমান করে শুভকে জিজ্ঞাস করলো
-বাবা যাওয়া টা কি খুব জরুরি?
শুভ একরাশ হাসি দিয়ে বললো
-মা আমরা কি সব সময় সব জরুরি কাজ করি?
-শুভ এখনো তোর এসব বাঁকা কথা বন্ধ হচ্ছে না।
-মা বাঁকা কথা না, এসব তো সত্যি কথা।
মিলি যখন চলে গেলো এত্ত রাতে তখন কি ওর বাসায় একটা খুঁজ নেওয়া টা জরুরি ছিলো না?
-এখনো তোর মাথায় এই মিলি আর মিলির ভুত ঘুরে। যা বাবা তোর যেখানে যেতে ইচ্ছে হয়।আমি তোর কেউ না সবি এই মিলি।
শুভ নিজেও জানেনা তার মাকে আবার কবে দেখতে পারবে তাই এরকম বিদায় শুভ মেনে নিতে পারছেনা।
শুভ তার মাকে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে
-আচ্ছা মা মাফ করে দাও।আবার কবে দেখা হয় কে জানে।
-শুভ আমাকে প্রতিদিন কল দিবি কিন্তু আর হ্যাঁ ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি।
-আচ্ছা মা।
শুভ এবার যখন বাবাকে বিদায় দিতে গেলো গিয়ে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে আর তা হলো শুভর বাবা এমন ব্যবহার করছে যেন এইতো আবার ফিরে আসবে শুভ, কোথায় এমন যাচ্ছে যে এত্ত ভয় পেতে হবে।
শুভ সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এয়ারপোর্ট এ গেলো আর শুভর তখনো মনে হচ্ছিলো মিলি আসবে,আর এসে হাত ধরে বলব “প্লিজ শুভ তুমি যেওনা, তুমি চলে গেলে আমার কি হবে?”
কেউ একজন এসে কোনো কথা না বলে টান দিয়ে শুভকে জড়িয়ে ধরে কাঁদবে।
শুভ একজন কে দেখতে পেলো পিছনদিক দিয়ে মিলির মতোই মনে হচ্ছিলো,
কিন্তু সামনে ফিরতেই শুভ অনেক হতাশ হয়ে পরে, যাকে মিল ভেবেছিলো সে তো মিলি না, তাহলে মিলি কি আসবেনা? এমন প্রশ্নবোধক চিহ্ন কিন্তু শুভর মনে আসতেই থাকছে।
শুভর মন বারবার বলছিলো মিলি আসবে।
সবাই প্লেন এ উঠে গেলো কিন্তু শুভর কিছু ভালো লাগছে না।
বারবার কল মেসেজ, ফেইসবুক ইনবক্স চেক করছিলো শুভ কিন্তু মিলি শুভর সাথে যোগাযোগ করেনি।
শুভ এবার আর মিলির আশায় বসে থাকতে পারেনি, শুভ প্লেন এ উঠে গেছে আর তার সাথে সাথেই প্লেন ফ্লাই করেছে আর সেই সাথে শুভর নিজেকে আরো একা মনে হচ্ছিলো।
শুভ ইউএসএ তে ভালো একটা জব পেয়ে ফেলে খুব অল্প সময়ে। প্রথমদিকে শুভর ইউএসএ তে আরো একা একা লাগতো, মনে হতো এগুলো শুভর সেই পাপের ফসল।প্রতি রাতে শুভ মিলির জন্য মন খারাপ করতো আর মিলির ফোনে কল আর ফেইসবুক আইডি চেক করতো।
এভাবেই দিন যেতে লাগলো, দেখতে দেখতে চার বছর চলে গেলো।
হঠাৎ একদিন রাতে শুভ মিলির ফেইসবুক আইডি একটিভ দেখে।
শুভর এইটা দেখে এত্ত খুশি লাগছে মনে হচ্ছে এই বুঝি তার সব অপেক্ষা শেষ হচ্ছে।মিলি নিশ্চয় এত্তদিনে শুভকে মাফ করে দিতে পেরেছে।
মিলির প্রোফাইল চেক করতে গিয়ে শুভর চোখে মিলির রিসেন্ট স্ট্যাটাস টা চোখে পরে।
মিলির স্ট্যাটাসে লিখা ছিলো
“বিয়ে তে সবাইকে আসতে হবে, দাওয়াত দিলাম ”
শুভ এবার আবার বাচ্চাদের মতো কান্নাকাটি শুরু করছে, এত্তদিন অপেক্ষা করলো শুভ কিন্তু শেষ রক্ষা আর হয়নি এমনটাই ভেবে শুভ মন খারাপ করছে।এই ছেলেটা কে যাকে মিলি করবে আর এই ছেলে কি সেদিন মিলিকে বাসায় দিয়ে আসছে, মিলির কি আগে কারো সাথে রিলেশন ছিলো এসব ভেবে মিলি মন খারাপ করছে।
ঠিক সেই সময় শুভর মনে হলো মিলি তো তাহলে এটা জানেনা যে শুভ মিলিকে ডিভোর্স দেয়নি। যদি জানতো তাহলে তো আর মিলি আবার বিয়ে করার কথা চিন্তা করতো না।
শুভ মনে এবার খানিকটা জোর পেয়েছে তখন সিদ্ধান্ত নিলো মিলির বাসার এড্রেস দেওয়া আছে কিনা চেক করবে।
মিলির স্ট্যাটাস এ মিলি একটা কমিউনিটি সেন্টার এর নাম দিয়ে দিয়েছে এড্রেস হিসেবে।শুভ এবার এত্ত না ভেবে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্ত নিলো দেশে ফিরবে আর মিলির মুখোমুখি হবে।
এর ঠিক দুইদিন পর শুভ বাংলাদেশে চলে আসে।
শুভ বাসায় না গিয়ে সেই কমিউনিটি সেন্টার এ যায় আর সেখানে গিয়ে ৪ দিন পর যে বিয়ে সে সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে কার বিয়ে আর তার মোবাইল নাম্বার টা দেওয়া যাবে কিনা।
শুভকে সেখান থেকে একটা নাম্বার দিয়ে বলে পাত্রীর নাম সে এখনো জানেনা তবে পাত্রের নাম হলো আকাশ।
পাত্রীপক্ষ থেকে একটা নাম্বার দিয়েছে যেটা তাদের বাসার নাম্বার, শুভ চাইলে এই নাম্বার টা নিয়ে যেতে পারে।
শুভ নাম্বার টা নিয়ে বাসায় চলে আসে, আর তার মা দেখতে পেয়ে ছেলেকে ধরে সে কি কান্না!
অবশ্য কান্না করবেনাই বা কেন এই ছেলেকে সে চারটা বছর পরে দেখিতে পেয়েছে।
শুভর মা শুভকে বলছে
-আচ্ছা তুই না বলে আসলি যে? কোনো কাজ আছে নাকি?
-না মা,আসলে এমনি আসছি তেমন কিছুনা।
-আমি জানি তুই বলবি না।
-মা বলার মতো কিছু নেই তো।
-আচ্ছা যাক তুই এসেছিস এতেই আমি খুশি যেই কারণ হোক না কেন।
-এইতো আমার ভালো মা।
-জানিস কি হয়েছে
-কি হয়েছে?
-মিলি না মেডিকেল এ চ্যান্স পাইছে।
-কি বলো মা! তুমি কিভাবে জানলে?
-আরে আমাদের পাশের বাসার তোর মরজিনা আন্টি যে ছিলো তার মেয়ে নাকি মিলিকে দেখেছে কোনো এক সাইনবোর্ড এ ছবি বের হয়ছে আর তার সাথে লিখা ছিলো মেডিকেল স্টুডেন্ট।
-তোমার নিশ্চয় তখন বারবার বলতে ইচ্ছে করছিলো মিলি তো আমার ছেলের বউ ছিলো।
-না আসলে দেখ মেয়েটার কি জিদ।লাস্ট পর্যন্ত করে দেখিয়েছে।ছেলের বউ ছিলো মানে এখনো ছেলের বউ আছে।
আমার তো প্রথম বার শুনে বিশ্বাস হয়নি কিন্তু পরে যখন জানলাম এই মেয়ে এসএসসি তে ও জিপিএ ফাইভ পাইছে তখন আর কিছু অবিশ্বাস করার মতো নাই।
-কি? এসব কি বলছো?
মিলির রোল তো পিছনদিকে ছিলো তাহলে ওর রেজাল্ট এত্ত ভালো হয় কিভাবে?
শুভর সবকিছু কেমন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে।
চলবে,,,