ঋণশোধ পর্ব ১৭+১৮+১৯

#ঋণশোধ
#পর্ব১৭
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

অথৈয়ের ঘুম খুব সকালে ভাঙলো, উঠে ই আবেগের কথা মনে পড়লো। রাতে কি আসেনি? না এলে কোথায় গেলো লোকটা।
বিছানা ছেড়ে উঠে বাথরুমে ঢুকতে গিয়ে মনে পড়লো প্রথম দিনের কথা। প্রথম দিন আবেগ ওকে যে বলেছিলো টয়লেট পরিস্কারের কথা। এবার মনে করে আর রাগ লাগলো না। ভীষণভাবে অস্থির হয়ে আছে সব টা জানার জন্য। অথৈয়ের কোনো কিছু জানার আগ্রহ জাগলে না জানা অব্দি কিছুতেই শান্তি পায় না। আবেগের কথা ভাবতে ভাবতে ব্রাশ করছিলো ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুলো কিন্তু আজকের ঠান্ডা টা কেনো জানি অনুভব হলো না। প্রতিদিন পানির সামনে এসে একটু পানি ধরলেই কাঁপাকাপি শুরু হয়ে যেতো।

ব্রাশ করে হাত মুখ ধুয়ে নিচে চলে গেলো। গিয়ে দেখলো শাশুড়ীর ঘরের দরজা এখনো চাপানো। তাই নিজেই রান্নাঘরে ঢুকে পড়লো ভাবলো ওই নাস্তা বানানো শুরু করে দিক। যেই ভাবা সেই কাজ, কিন্তু কোথায় কি রাখা এটা ভালো করে তো ও জানে না। আটা কোন বোয়ামে রাখা খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে খুঁজতে পেয়েও গেলো। পাওয়ার পর যেনো যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে এমন একটা ভাব নিয়ে হাসি দিলো। কিন্তু পরিমাণ টা আন্দাজ করতে পারলো না কতটা কি নিবে।
চুলায় পানি দিলো ফুটতে কিন্তু সেই পানিতে চারজন নয় ১৪ জনের রুটি হবে এমন পরিমাণে পানি দিয়ে ফেললো। আটা দিতে গিয়ে কনফিউশান এ পরে গেলো কতটা কি দিবে। এখন মনে হচ্ছে শাশুড়ী মা চলে এলেই বুঝি ভালো হতো। একটা গোলমাল করে ফেলবে বুঝতে পারছিলো। আটা দিবে নাকি দিবে না এই নিয়ে ভাবতে লাগলো।

কপাল এবারের মতো বুঝি সদয় হলো তাকিয়ে দেখলো দরজা খুলে শাশুড়ী মা বের হচ্ছেন, দেখে যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো অথৈ। অথৈকে রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি তাড়াহুরো করে রান্নাঘরে চলে এলেন আর এসেই বললেন,

“একি তুমি এখানে কি করছো এই শরীরে তুমি রান্নাঘরে ঢুকেছো কেনো। যাও সরো দেখি নাস্তা আমি করছি।”

শাশুড়ীর কথায় অথৈ একটু পাশে সরে গেলো। আর শাশুড়ির কথার জবাবে বললো,
“মা আপনি যতটা বলছেন অতটাও শরীর খারাপ না আমার। হাল্কা একটুখানি মাথা ব্যাথা করছে এই আরকি। ওটা আমার সব সময় ই হয়”

“সব সময় আর এখন হওয়াটা এক না বউমা”

“আপনি এখনও আপনার ছেলের কান্ডের জন্য গিল্ট ফিল করছেন মা! আমার টা ওর টার কাছে কিছু ই না। ওর দুটো বছর নষ্ট হয়েছে। আমার কিন্তু তেমন কিছু ই হয়নি।
আর যখন দোষ আমার ছিলো সুতরাং সব কিছু সমান সমান। তাই প্লিজ মা ভুলে যান আর গিল্ট ফিল করবেন না”

“আমার মনে হতো তুমি যা করেছিলে সেটা হয়তো জেনেবুঝে করো নি। ভুল করে করেছিলে, এখন তোমার কথায় তো পুরো নিশ্চিত হয়ে গেলাম যাই করেছো ভুল করে করেছো। কিন্তু ও যা করেছে জেনে-বুঝে ঠান্ডা মাথায় করেছে।”

“এসব চিন্তা বাদ দিন না মা। কে জেনে করলাম আর কে না জেনে সেটা তো এখন আর ম্যাটার করে না তাইনা? যা ঘটে গেছে সেইটা তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। এরপর যদি করে আবার তখন নাহয় আপনি আপনার ছেলেকে বকে দিবেন”

অথৈয়ের কথা তে মনোয়ারা বেগম সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। তিনি জানেন তার ছেলে আবারও করবে। এবার মাফ পেলে পরেরবার আরও বেশি কিছু না করে ফেলে।
তিনি চুপ করে আটা মেখে গোলা বানাতে থাকলেন আর কিছু বললেন না। তারপর রুটি বেলে দিলেন অথৈ সেটা ভাজতে লাগলো সেও আর কিছু বললো না।

খাবার টাইমে অনন্যা নামলো অনন্যাকে দেখে অথৈ একটু হতাশ হলো কিন্তু বেশিক্ষণ থাকতে হলোনা। অনন্যা এসে চেয়ারে বসার ৫ মিনিট পর ই আবেগ সিড়ি দিয়ে নিচে নামলো। অথৈয়ের কেনো জানি আবেগকে নামতে দেখে ভালো লাগছিলো। মনে হলো যেনো শত বছরের অপেক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু এলো কোথা থেকে? রুমে তো ছিলো না অথৈ ভালো করে রুম চেক করেছে তাহলে কই থেকে এসেছে!। আপাতত এসব চিন্তা মাথা থেকে বের করে খেতে দিলো। আজ অথৈই আবেগকে খেতে দিলো কিন্তু আবেগ টু শব্দও করলো না। ব্যাপার টা অথৈয়ের অদ্ভুত লাগলো। যদিও আজকে অনন্যাও কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে লাগলো।

অথৈ জোর করে শাশুড়ীকেও খেতে বসালো। তিনি চাইছিলেন অথৈ বসুক, আর অথৈ চাইছিলো মনোয়ারা বেগম বসুক। দুজনের একে অপরকে টানাটানি তে অথৈ জিতে যাওয়ায় মনোয়ারা বেগম খেতে বসলেন। আবেগ “মা” বলে একবার ডাক দিলো মনোয়ারা বেগম জবাব দিলেন না।
তারপর আবেগও আর কিছু বলে নি। খাওয়া শেষ করে উঠে অফিস চলে গেলো।
অফিস থেকে ফেরার পর আবেগ ওর মায়ের রুমে গিয়েছিলো কিছুক্ষণ পর মুখ টা আগের চেয়ে আরও বেশি গম্ভীর করে রুম থেকে অথৈ আবেগকে বেরুতে দেখলো।
পরবর্তী ১ সপ্তাহ এভাবে চলে গেলো চুপচাপ নিরবতা দিয়ে। অথৈয়ের ব্যাপার টা একদম ভালো লাগছিলো না। না আবেগকে এভাবে দেখতে না ওর শাশুড়ী কে। সেদিন থেকেই আবেগের মুড অফ। অথৈয়ের সাথে কথা বলে না, শাস্তিও দেয় না কিছু ই করেনা। রাতে অথৈ যতক্ষণ পর্যন্ত জেগে থাকে আবেগ রুমে আসেনা। আবার যখন জেগে উঠে তখনও রুমে দেখে না কিন্তু খাবার সময় ঠিকই উপর থেকে নামতে দেখে।
অথৈ মনে মনে ভাবতে লাগলো কিভাবে দুজনের মিল করানো যায়।

এজন্য অথৈ অনন্যার কাছে গেলো। মা আর ভাইয়ের এই মান অভিমানে অনন্যাটাও চুপচাপ হয়ে গেছে। অথৈ রুমে গেলে অনন্যা
কেমন মলিন করে হেসে বললো রুমে আসতে। অনন্যার এমন হাসি দেখে ওর ভালো লাগছিলো না। হাসিখুশি অনন্যাটাই অথৈয়ের কাছে বেস্ট। তো অনন্যার কাছে অথৈ জানতে চাইলো আবেগের দুর্বল পয়েন্ট গুলো কি সাথে ওর মায়ের কথাও জানতে চাইলো। আবেগের ব্যাপারে তেমন কিছু বলতে পারলো না কিন্তু ওর মায়ের ব্যাপারে বললো যে সে তার সন্তানদের কষ্ট কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। যত যাই হোক যেই ওরা কোনো ঝামেলা তে পরে উনি পাগল হয়ে যান। অনন্যা নিজের করা একটা ঘটনার বর্ণনা দিলো..

“একবার আমি এক্সাম এ কম মার্ক’স পাওয়াতে মা আমাকে বকা দিলেন। সেটা এমন আহামরি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা ছিলো না। তখন মেবি আমি নাইনে পড়ি আর পরিক্ষাটাও বুঝি ছিল ক্লাস টেস্ট তো সেটা নিয়ে ই বললো। সেটা নিয়ে দুজনের খুব তর্ক হলো। তার বক্তব্য হচ্ছে যেই পরীক্ষাই হোক তুই রেজাল্ট খারাপ করবি কেনো। আর আমার মেজাজ খারাপ লাগছে এটা ভেবে যে একটা সামান্য পরীক্ষা নিয়ে এত মাতামাতি কিসের? পরে আমি খুব রেখে গিয়ে বাসার বাইরে চলে গেলাম তো তখন এক পিচ্চি আমার ওড়না ধরে টেনে কিছু একটা বলছিলো। যেহেতু তখন প্রচুর রেগে ছিলাম তাই রাগ টা গিয়ে পড়লো ওই পিচ্চির উপর। আমি এমন জোরে ওড়না টেনে ওকে ধাক্কা মেরেছি যে ও গিয়ে পিলারে ধাক্কা খেয়েছে। এটা আবার আশেপাশের কারা জানি দেখে ফেলেছে তারা বাসায় জানালো ব্যস হয়ে গেছে আম্মা ফায়ার। মা খুব বেশি রেগে গেলে এমন করে যেমন টা ভাইয়ার সঙ্গে করছে। কথা বলে না চুপ করে থাকে।
সেবারও ঠিক এ-ই কাজ টাই করলো ওদের কাছে মাফ চেয়ে আমার সাথে কথা বলা অফ করে দিলো। ভাইয়া অনেক বোঝালো কিন্তু মা নাছোড়বান্দা কোনো অবস্থায় ভাইয়া তাকে মানাতে পারে নি। ভাইয়া বললো আমি ভুল করে করে ফেলছি এবারের মতো যেনো ছেড়ে দেয় আর মা বলতেছে আমি কেনো আমার রাগ একটা বাচ্চার উপরে দেখালাম। ওই বাচ্চার যদি সিরিয়াস কিছু হয়ে যেতো।”
#ঋণশোধ
#পর্ব১৮
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

“তারপর?”

“ভাইয়া মায়ের কথার জবাবে আর কিছু বলতে পারলো না৷ আর আমি ই বা কি বলতাম এমন কিছু হবে আমিও বুঝিনি, আমি ধাক্কা দিয়েছি ছেলেটা এমনি মাটিতে পড়ে গেলেও তো পারতো তা না পড়লো গিয়ে পিলারের উপরে । কপালের এক অংশ কেটে গেছে তবে অল্প। আমি ও রাগে আর কথা বলার চেষ্টা করিনি। আর কথা না বলায় আমি বেশ অনিয়ম করে খাওয়া ধাওয়া করে গেলাম এমনিতে আমার খেতে ভাল্লাগে না। সব সময় বকে ধমকে খাওয়ায়। তো তখন তো আর কিছু বলতে পারলো না তাই আমিও খাওয়া অফ করেছি। তো এমন করায় আমার শরীর দুর্বল হয়ে গেলো। আমি সিড়ি থেকে পড়ে গেলাম। পড়েই বেহুশ হয়ে গেছিলাম মনে হয় কারণ আমার মনে পড়লো আমি সিড়ি দিয়ে নামছিলাম তারপর দেখলাম আমি বিছানায়, পাশে বসে মা গুন গুন করে কাদঁছে। মাঝখানের কিছু মনে না-ই। হুস আসতে দেখেই মায়ের কান্না বেড়ে গেলো আর কেঁদে কেঁদে কি কি জানি বলছিলো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। শুধু এইটুকুই স্পষ্ট শুনলাম যে আর আমার সাথে রাগারাগি বকাবকি কখনও করবে না।তারপর থেকে আর কখনও করেও নি। প্রচুর ভয় পেয়ে গেছিলো। আর অত উপর থেকে পড়ে আমারও কপাল কেটেছিল এই যে দেখো ছোট একটা দাগ এখনও আছে।”

বলেই ডানপাশের কপাল থেকে চুল সরিয়ে অথৈকে দাগটা দেখালো। অথৈও উঁকি মেরে দেখলো ছোটো কালচে একটা দাগ রয়েছে। দূর থেকে অত ভালো করে দেখা যায় না, কাছে গেলে বোঝা যায় এমন। অথৈ অনন্যার গল্পটা শুনে বোঝার চেষ্টা করলো কি এমন করা যায় যাতে দুজনের মিল করানো যাবে। অনন্যা বলেছে আবেগ ঝাল খেতে একদমই পারেনা। এটা নিয়ে একটা চেষ্টা কি করে দেখবে? ফল পেতেও পারে নাও পেতে পারে। কিন্তু চেষ্টা করতে ক্ষতি কি? ক্ষতি অবশ্য একটা আছে আবেগ যে ঝাল খেয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে সেটা। কিন্তু এমন কিছু ই তো দরকার যাতে শাশুড়ী মার মন গলে। তাই অনন্যাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“অনন্যা শোনো”

“হু”

“তোমার কি মনে আছে বউ-ভাতের দিন তোমাকে আইডিয়া দিয়েছিলাম তোমার ভাইয়ের উপরে প্রতিশোধ নেয়ার?”

” হ্যাঁ আছে। কেনো?”

“প্রতিশোধ টা কি নিবে না?”

কথাটা অথৈ হাসি দিয়ে বলল। কিন্তু অনন্যা হাসলো না দেখে মনে হলো মন খারাপ লাগছে। মুখ কালো করে ই বললো,

“মা ভাইয়ার সাথে কথা বলে না এটাই তো ওর জন্য অনেক বড় শাস্তি। আমি আর কি শাস্তি দিবো। আমার কিছু ভালো লাগছে না।”

“তোমার যে কিছু ভালো লাগছে না সেটা গত কয়েকদিন ধরে ই দেখছি। আর ওই শাস্তি তো মা দিচ্ছে তোমার টা আলাদা হবে।”

” না ভাবি। আমি আর কিছু করতে চাইনা।”

অথৈ বুঝতে পারলো এভাবে বলে লাভ নেই।
পুরো টা বললে যদি রাজি হয় তাই জন্য ব্যাপার টা বিস্তারিত বলতে লাগলো।

“দেখো অনন্যা তোমার ভাইকে শাস্তি দিয়ে কিন্তু আমরা ওর উপকার ই করছি”

“সেটা কি করে?”

“তুমি বললে না তোমার ভাই ঝাল সহ্য করতে পারে না?”

“হ্যাঁ বলেছি। তাতে কি?”

“ওর খাবারে আমরা বেশি করে ঝাল দিবো ও সেটা খেয়ে অসুস্থ হয়ে যাবে তারপর মা কথা বলবে”

“আমি তোমার কথা বুঝতে পারছি না ভাবি এভাবে না বলে ক্লিয়ার করে বলো প্লিজ”

” আচ্ছা। তুমি কি বলেছো? তুমি বলেছো তোমার মা তার সন্তানদের কষ্ট সহ্য করতে পারেন না৷ তোমার ওই ঘটনার পরে সে ভেঙে পড়েছিলো”

“হু”

“আবার তোমার ভাইয়ের কথা কি বললে? বললে যে, সে একদম ই ঝাল সহ্য করতে পারে না”

“হুম”

“তো এবার দুটো কে এক করো। ধরো, তোমার ভাইয়াকে আমরা প্রচুর মরিচ খাওয়ালাম। তারপর সে ঝালে হাঁসফাঁস করে অসুস্থ হয়ে যাবে। এবার যেহেতু মা এটা কিছুতেই সহ্য করতে পারে যে তার ছেলে মেয়ে কষ্টে আছে সেহেতু সে কথা বলবেই।তাইনা?”

“হ্যাঁ”

অথৈয়ের কথা শুনে বুঝতে পারার পর আগ্রহে অনন্যার চোখ চকচক করতে লাগলো। অথৈয়ের হাত দুটো ধরে বললো,
“ভাবি আইডিয়া টা ভালো”।

অনন্যার এমন করা দেখে অথৈ হেসে দিলো। অনন্যা ই আবার বললো,

“কিন্তু ভাবি এটা তো তুমি একাই করতে পারো। আমাকে তো না বললেও হত”

“উহু। আমি একা পারব না বলেই আমি তোমাকে বলছি।”

“কেনো পারবে না?”

“কারণ যখন কাজটা করবো তখন যেনো শুধু ওই দুজনেই টেবিলে থাকে। এখন তোমাকে যদি আমি বলে না দিতাম তাহলে তো খাবার সময় তুমিও থাকতে আর যখনই ওর ঝাল লাগবে তুমি পানি এগিয়ে দিতে মা চুপচাপ থাকতেন৷ তাহলে ওকে কষ্ট দিয়ে করা প্ল্যান টা পুরো বিফলে যেতো। আর তোমার হেল্প ছাড়া একা আমি এটা এমনিতেও করতে পারতাম না। যাইহোক এখন তুমি বলো হেল্প করবে আমাকে? নাকি করবে না!”

“কি বলো তুমি ভাবি কেনো হেল্প করব না।
আর যেখানে মা আর ভাইয়ার মিল করানোর সুযোগ সেখানে আমি চুপ ই বা কেনো থাকবো। ১০০ বার হেল্প করব। আচ্ছা ভাবি একটা কথা ”

“হ্যাঁ বলো”

“তুমি ভাইয়ার সাথে কি করেছ?”

“মানে!”

” তুমি রাগ করো না ভাবি, আমি খারাপ কিছু মিন করে বলছি না। আসলে ওইদিন যখন তুমি অসুস্থ ছিলে তখন মা ভাইয়াকে অনেক কথা শুনাচ্ছিলো আর তার মধ্যে ই বলেছিলো যে তুমি ভাইয়ার সাথে যা করেছো সেটা ভুল করে ই হয়তো করছো কিন্তু ভাইয়া জেনেশুনে করেছে। তুমি কি করেছিলে আর ভাইয়াই বা কি করেছে ইচ্ছে করে?”

অথৈ অনন্যার কথার জবাবে কি বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। আবেগ কি করেছে সেটা বলা বোধহয় ঠিক হবে না। আর ও কি করেছিলো সেটা তো ও-ই জানে না। কিভাবে ই বা সেটা বলবে। তাই জন্য কথাটাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলো।
বললো,
“ওসব কথা আপাতত বাদ দাও। আমাদের প্ল্যান টাকে কিভাবে এক্সিকিউট করা যায় সেটা ভাবো সেটায় ফোকাস করো। এগুলো পরে জানলে বা না জানলেও চলবে।”

অনন্যাও ভাবলো যে হ্যাঁ যে করে ই হোক মা আর ভাইয়ের মিল করানো টাই জরুরি। তাই প্রশ্নগুলো নিয়ে আর মাথা ঘামালো না।
সেদিন রাতে কথা বলছিলো দুজনে সুতরাং প্ল্যানমতো কাজ করতে হলে আরেকটা রাত অপেক্ষা করতে হবে। আর আবেগ কই থাকে রাতে সেটাও অথৈয়ের জানতে হবে।
অথৈ একদম ই শিওর যে আবেগ ঘরে থাকে না। অথৈয়ের ঘুম এতটাও গাঢ় না যে একটা মানুষ ওর রুমে এসে থাকে আবার চলে যায় এটা ও টের পাবে না। তাই জন্য ভাবলো আজকে ঘুমের ভান করে পরে থাকবে দেখবে আবেগ আসে কি আসে না। আর না এলে কোথায় ই বা থাকে সেটাও দেখবে।
যথারীতি রাতের খাবার খেয়ে অথৈ রুমে চলে এলো। আর সেই দিনের পর থেকে প্রতিটি দিন ই রাতের খাবার খাওয়ার সময় অথৈ একটা জিনিস খেয়াল করে দেখেছে আবেগ খুব খুব খুব ই ধীরে ধীরে খাচ্ছে। অথৈ, অনন্যা, মনোয়ারা বেগম খেয়ে চলে যায় তারপরও ওর খাওয়া শেষ হয়না। মনোয়ারা বেগম তো কথা বলেন না তাই দেখেও কিছু বলেন না। আর অনন্যা রাতে মাত্র একটা রুটি খায় তাই সবার আগে খেয়ে ওই যায়। এজন্য দেখেও না আর জিজ্ঞেসও করে না।

অথৈয়ের মনের প্রশ্ন সংখ্যা যেনো এক এক করে বেড়েই যাচ্ছে। এক উত্তর জানার জন্য ই মরিয়া হয়ে আছে তারউপর আরও প্রশ্ন জমা হচ্ছে৷ চোখ অফ করে আবেগের কথা ই ভাবছিলো এরমধ্যেই শুনতে পেলো হাল্কা একটা শব্দ। শব্দ শুনেই একদম এমন করে বিছানায় সঙ্গে সেঁধিয়ে গেল যেনো পারলে ওর অস্তিত্বটাই চাপা দিয়ে দিতো যাতে যে এসেছে সে যেন না বুঝে রুমে কেউ আছে।
একটু পর আবার একটা আওয়াজ শোনা গেলো। অথৈয়ের মনে হলো আবেগ বাথরুমে ঢুকেছিলো সেখান থেকে বের হয়েছে। চোখ হাল্কা করে খুলে দেখার চেষ্টা করলো দেখলো আবেগ রুম থেকে বের হচ্ছে। যেদিকে যাচ্ছে যেতে দিলো দেখলো যাতে অথৈও সেখানে যেতে পারে। তাই ওর যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে লাগলো। আবেগকে দরজা থেকে বের হতে দেখার পর ই ও উঠে বসেছিলো। যেদিকে আবেগ গিয়েছে সেদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বসে রইলো। উঠে যাওয়ার কথা যেনো ভুলেই গেলো।
#ঋণশোধ
#পর্ব১৯
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

সকালে উঠে অথৈ তারাতাড়ি করে ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে গেলো। নিচে নেমে দেখলো শাশুড়ী মা সবে মাত্র রান্নাঘরে ঢুকেছেন। তাকে ঢুকতে দেখে অথৈও তাড়াহুড়ো করে ঢুকে গেলো। শাশুড়ীকে সাহায্য করে দিতে লাগলো আর সুযোগ খুঁজতে লাগলো কিভাবে ঝাল টা তরকারিতে দিবে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সুযোগ টা পেলো না।
নাস্তা রেডি করে টেবিলে পরিবেশন করে দিলো এমন সময় অনন্যা নিচে এলো এসে অথৈকে চোখের ইশারায় জিজ্ঞেস করলো কাজ হয়েছে কি-না। অথৈ না সুচক মাথা নেড়ে বললো পর অনন্যার মন খারাপ হয়ে গেলো। ও অনেক এক্সাইটেড হয়ে ছিলো ভেবেছিলো আজ বুঝি মিল হবে দুজনের কিন্তু সেটা আর হলোনা। মুখ কালো করে ই টেবিলে খেতে বসলো। অথৈ ওর কালো মুখ দেখে হাত চেপে ধরে স্বান্তনার ভঙ্গিতে বোঝালো মন খারাপ করো না পরের বার ঠিক হবে। অথৈয়ের ইশারায় জবাবে অনন্যা একটা মলিন হাসি দিলো।

একটু পর আবেগ নিচে নেমে এলো খেতে বসলো অথৈ খাবার দিলো চুপচাপ খেয়ে গেল টু শব্দ করলো না। গত কয়েকদিন ধরে অথৈ ই দিচ্ছে কিন্তু আবেগ সেই চুপ করে রইলো। হঠাৎ করে কেনো জানি অথৈয়ের ওর জন্য মায়া লাগলো। অথৈ এমনিতে নিজের কাছে শক্ত কিন্তু সামনের জনের কষ্ট ওর সহ্য হয় না। আবেগ ওর সঙ্গে যা করেছে বা করতে চেয়েছে সেটাকে ও আটকে দিতে চেষ্টা করেছে বা তেমন একটা কষ্ট পায় নি শুধু ওই ঠাণ্ডার মাঝে রাখার ঘটনা টায় পেয়েছে। কিন্তু তাও এভাবে হেনস্থা হতে দেখে ওর ভালো লাগছিলো না।
তাই মিশন টা যত জলদি কম্পিট করা যায় ততই ভালো আজকে করে ফেলতে পারলে আরও ভালো হয়। দুপুরে তো আবেগ বাসায় থাকে না রাতের খাবার খাওয়ার সময় একটা চান্স আছে। তাই অস্থির হয়ে রাতের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।

সন্ধ্যা পর পর ই আবেগ, অনন্যা ফিরে এলে অথৈ অনন্যার ঘরে গিয়ে অনন্যা কে বললো রাতে করার কথা। অনন্যা অথৈয়ের কথাতে মাথা নেড়ে সায় দিলো ঠিকই কিন্তু অতটা ভরসা রাখতে পারলো না। রাতের খাবার খাওয়ার সময় তো অনন্যা সব চেয়ে কম খায় তাই জন্য সকালের চেয়ে রাতের টায় ই সুবিধা হচ্ছিলো বেশি। শাশুড়ী কে আজকে আর অথৈ খেতে বসালো না। আজকে নিজেই খেতে বসলো, যদিও শাশুড়ি বলার পর। কিন্তু তার আগে আবেগের তরকারির বাটিতে মরিচ গুঁড়ো মিশিয়ে দিতে পেরেছিলো। অনন্যা হেল্প করাতে সহজ হয়েছে কাজটা। অনন্যা এনে বাটিটা আবেগের সামনে দিয়ে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলো। অথৈ অনন্যার দিকে তাকিয়ে হাসি দিলো সেটা আবেগ দেখে ফেললো। আর আবেগ যে ওকে হাসতে দেখে ফেলেছে সেটা আবার ও দেখে ফেললো। দেখে ফেলার সঙ্গে সঙ্গে হাসি থামিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে খেতে লাগলো। আর অনন্যা আবেগকে বললো,

“তোর জন্য আমি স্পেশাল বানিয়েছি ভাইয়া একটুও যেনো পড়ে না থাকে, সব টা খাবি।”

আবেগ কিছু টা আচ করতে পারলো যে কোনো একটা গন্ডগোল আছে। খেতে নিয়ে বুঝতে পারছিলো গন্ডগোল টা কোথায়। প্রথম বারেই টের পেয়ে খাওয়া থামিয়ে দিয়ে অথৈয়ের দিকে আগুন চোখে তাকালো। অথৈও আবেগ খাচ্ছে কি-না দেখার জন্য তাকিয়ে রইলো। আর অনন্যা আবেগকে মুখে দিতে দেখেই সেখান থেকে সরে গেলো।
অথৈ আবেগের চাওনি দেখে একটু ভয় পেয়ে গেলো। ও ভেবেছিলো এত দ্রুত বুঝতে পারবে না। কিন্তু চাওনি দেখে বুঝলো যে একবার খেয়েই আবেগ বুঝে গেছে। অথৈ কনফিউজড হয়ে গেলো এটা ভেবে যে আবেগ এখন কি করবে, খাবে? নাকি উঠে চলে যাবে। কিন্তু উঠে চলে গেলে তো হবে না। আর ঝাল দেয়া বোঝার পরেও কেনো ই বা খাবে৷ তবে চাওনি দেখে বুঝতে পারছিলো ওর খবর আছে। যা চেয়েছিলো সেটা হওয়ার পরে যদি আবেগ ওর খবর করতো তাহলে ও সহ্য করে নিতো। কিন্তু..

ওর সব কিন্তুর অবসান ঘটিয়ে আবেগ আবার খেতে লাগলো। দেখে মনে হলো যেনো রাগে জ্বলতে জ্বলতেই খাচ্ছে। অথৈ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো এটা ভেবে যে কাজ হওয়ার এখনও চান্স আছে। আবেগ খেয়ে ঝালে হোসাতে লাগলো। অথৈ সেটা দেখে মনে মনে বলল প্লিজ কষ্ট করে আরেকটুখানি খান। আরেকটু বেশি ঝাল লাগুক তারপর আমি মা কে ঢাকছি। আবেগ আরও একটু খাওয়ার পর অথৈ বেশ জোরে প্রায় চিৎকার করার মতো করে বললো,
“কি হয়েছে আপনার? এমন করছেন কেনো? ঝাল লেগেছে না-কি, নিন নিন পানি খান”।

পানি খাওয়ার কথা বলে অথৈ নিজেই পানি ঢেলে আবেগের দিকে এগিয়ে দিলো। কিন্তু আবেগ সেই পানি না নিয়ে জ্বলন্ত চোখে অথৈয়ের দিকে তাকালো। অথৈয়ের কিছু করার নেই তাই শাশুড়ী কে ডাক দিলো।
তিনি অবশ্য প্রথমে অথৈয়ের বলা কথা শুনেছিলেন কিন্তু পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছিলেন। অথৈয়ের ডাকে কিচেন থেকে বের হয়ে এসে দেখলো আবেগ লাল হয়ে গেছে। উনি তো ভালো করে ই জানতেন যে উনার ছেলের ঝাল খেলে অসুস্থ হয়ে যাবে। ঝালে এলার্জি আছে ওর, তখন ভেবেছিলেন অথৈ এমনিতেই বলছে কিন্তু চেহারা দেখে বুঝে ফেলেছেন। এরমধ্যে আবেগ জোরে জোরে শ্বাস নিতে আরম্ভ করে দিলো।

অথৈও ভয় পেয়ে গেলো। ও বুঝতে পারেনি ফলাফল এত খারাপ হবে। অনন্যা শুধু ওকে বলেছিলো আবেগ ঝাল খেয়ে পারেনা। কিন্তু ঝালে এলার্জি আছে এটা বলে নি। শাশুড়ী মা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“সর্বনাশ।”
এরপর ই অনন্যাকে ডাকতে শুরু করে দিলেন। মায়ের ডাক শুনে অনন্যা দৌড়ে নিচে নেমে এলো। ভাইয়ের অবস্থা দেখে অনন্যাও ভয় পেয়ে গেলো। ভয় নিয়ে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো অথৈয়ের মুখও ভয়ে সেধিয়ে গেছে। অনন্যাকে আসতে দেখে ওর মা বললো,
“তারাতাড়ি ডক্টর কে ফোন কর। আর বউমা তুমি আমাকে সাহায্য করো ওকে আমার ঘরে নিয়ে শুইয়ে দেই।”

শাশুড়ীর কথামতো অথৈ দ্রুত গিয়ে আবেগকে ধরলো। তার আগে বললো,
” মা এত ঝাল খেয়েছে। অন্তত কিছুটা পানি খাইয়ে তারপর নিয়ে যাই।”
অথৈয়ের কথা তে মনোয়ারা বেগমও সায় দিয়ে পানি ঢেলে আবেগকে খাইয়ে দিতে লাগলেন। কিন্তু আবেগ পানি মুখে নিবে না।
খাবে না এমন ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে গ্লাস সরিয়ে দিতে লাগলো। ওর এমন কান্ডে মনোয়ারা বেগম কেঁদে ফেললেন। কাঁদতে কাঁদতে ই বললেন, “পানি টা খা না বাবা। আমি আর তোদের কিছু বলবো না বকবো না ভুল হয়েছে আমার। যখনই তোদের সাথে কিছু একটা নিয়ে ঝামেলা হয় তোরা অসুস্থ হয়ে যাস৷ অনুটাকে যেবার বেশি বকলাম সেবার ও এমন হয়েছে। আমি আর কোনোদিন কিছু বলবো না তোদের। তাও পানি টা খেতে নে বাবা।”

আবেগও বুঝি এটাই চাইছিলো মনোয়ারা বেগম কথা বলুক। তাই কথা বলে যখন বললেন আর বকবেন না কিছু বলবেন না।
এই কথা বলার পর পানি টা খেলো।

অথৈয়ের এই সিচুয়েশনে হাসি পেলো। মনে মনে ভাবলো, “যাক যেই কারণে কষ্ট দিয়েছি সেটা তো সফল হয়েছে”।

চলবে🤥
চলবে
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here