ঋণশোধ পর্ব ১৫+১৬

#ঋণশোধ
#পর্ব১৫
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

ঘন্টাখানেক ছাদে থেকে ওরা নিচে চলে গেলো। অথৈয়ের আরও থাকতে ইচ্ছে করছিলো কিন্তু অনন্যা জোর করে নিচে নিয়ে গেলো। খাবার খাওয়ার সময় হয়ে আসছে দেখে। দুপুরের খাবার খেয়ে অথৈ রুমে গেলে অনন্যাও ওর পিছনে পিছনে গেল। অনন্যাকে এই সময় আসতে দেখে অথৈ জিজ্ঞেস করলো “কি ব্যাপার এসময় তুমি আমার ঘরে”। কারণ অনন্যা রোজ এ সময় প্রাইভেট নাহয় কোচিং এ থাকে।

অথৈয়ের কথার জবাবে অনন্যা বললো,

“আজকে কোথায় যাবো না। আমি আজকে সারাক্ষণ তোমার সাথে থাকবো।”

অথৈ জিজ্ঞেস করলো, “কেনো যাবে না?”

“তুমি আজকে অসুস্থ সেজন্য”

“কিন্তু আমি তো এখন সুস্থ আছি। শুধু শুধু কোচিং অফ দিচ্ছো কেনো”

“ও তুমি বুঝবে না”

অথৈয়ের মনে পড়লো কাল রাতের বলা আবেগের কথাগুলো। আবেগ বলেছিলো অনন্যার থেকে যেনো অথৈ দূরে থাকে।
সেটা মনে করে আর অনন্যার করা এই কাজ মানে কোচিং অফ দেয়ার বিষয় টা মিলিয়ে ভেবে দেখলো ওর জন্য অনন্যার ক্ষতি ই হচ্ছে। অনন্যা যে ওকে পছন্দ করে এজন্যই কলেজ, কোচিং অফ করে রয়েছে এটা বুঝতে অথৈয়ের অসুবিধা হলোনা। কারণ একসময় অথৈ নিজেও এমন ছিলো।
আবেগের কথা মেনে নাহলেও অনন্যার ভালোর জন্যই অথৈকে ওর কাছ থেকে দূরে থাকা উচিৎ তাই না চাইতেও জোর করে অনন্যাকে রুম থেকে তাড়িয়ে দিলো। অনন্যাকে বললো, “আমি এখন একটু রেস্ট নিবো তুমি প্লিজ নিজের রুমে চলে যাও”
অথৈ তাকিয়ে দেখলো ওর কথাতে অনন্যার মুখটা কালো হয়ে গেছে। মনে হলো ওর কথা শুনেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে “আচ্ছা” বলে উঠে চলে গেলো। ওর মুখ দেখে অথৈয়ের ই খারাপ লাগছে। অনন্যা চলে গেলে আস্তে আস্তে বিড়বিড় করে বললো, “সরি অনন্যা তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে সরালাম। কারোর সঙ্গে যত বেশি এটাচড হবে অতবেশি কষ্ট পাবে।”

অনন্যা চলে গেলে অথৈ সত্যি সত্যি ঘুমিয়ে গেল। মাগরিবের আজানের শব্দে ঘুম ভাঙলো। উঠে বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নামাজ পড়ে নিচে গেলো। এই সময়টায় সন্ধ্যার নাস্তা করে ওরা। সেজন্য নিচে চলে গেলো। হুস আসায় পর থেকে একটা জিনিস খেয়াল করলো আবেগকে কোথাও দেখেনি। কিন্তু ওর তো থাকার কথা। অথৈ যে সত্যি সত্যি ওর দেয়া শাস্তিতে ঘায়েল হয়ে গেছে সেটা দেখে ওর খুশি হওয়ার কথা কিন্তু কোথাও নেই কেনো? তাহলে কি ওকে বিছানা অব্দি দিয়ে অফিস চলে গেলো? এটাই হবে হয়তো। কিন্তু এই সময় তো ওর ফেরার সময় কিন্তু ফিরছে না যে..।

এসব চিন্তার মধ্যে ই ওর শাশুড়ী রুম থেকে বের হয়ে এসে দেখলো ও দাড়িয়ে আছে। তিনি তাড়াহুড়ো করে বললেন,
” বউমা এই শরীরে তুমি দাড়িয়ে আছ কেনো বসো। আমি নাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি খেয়ে তারপর গিয়ে রেস্ট নাও।”

অথৈ দুহাত নেড়ে বললো,
“না না আমি এখন একদম সুস্থ আছি। কোনো রেস্ট লাগবে না। চলুন না একসাথে নাস্তা বানাই”।

মনোয়ারা বেগম অথৈয়ের অসুস্থতার কথা তুলে বাধা দিতে চাইলেন অথৈ শুনলোনা।
অথৈয়ের এসব আচরণ দেখে ওনার অপরাধবোধ হতে লাগলো। কোনোভাবে মনেই হয়না তার যে এই মেয়ে কারোর খারাপ করতে পারে। কিন্তু না চাইলেও মানতে হবে এই মেয়ের জন্য তার ছেলের দুটো বছর নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু তার শাস্তিও মেয়েটা পেয়ে গেছে, মরতে মরতে বেঁচেছে।
মনোয়ারা বেগম চুলোয় চায়ের কেতলি বসিয়ে দিয়ে এসব ভাবছিলেন। অথৈয়ের কথাতে ধ্যান ভাঙলো।

” আপনার চা টা খুব ভালো হয়। আমার মা চা একদম ই বানাতে পারেনা। মায়ের চা খেলে মনে হয় গরম পানিতে রঙ আর চিনি দিয়ে শরবত খাচ্ছি”।

অথৈয়ের এই কথায় মনোয়ারা বেগম কোনো জবাব দিলেন না। কয়েকসেকেন্ড পর অথৈয়ের হাত ধরে বললেন,

“আমাকে মাফ করে দিও বউমা।”

শাশুড়ির এমন কান্ডে অথৈ অবাক হলো। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“কি জন্য মাফ চাইছেন মা আপনি?”

” বিয়ের পর আমি তোমাকে বলেছিলাম মানিয়ে নিতে, মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেলে সেখান থেকে বের হওয়া যেমন সহজ কথা না তেমনই সমাজের মানুষের নানান কথা শুনতে হয়। এজন্যই আমি তোমাকে আটকে ছিলাম। এখন মনে হচ্ছে ভুল করেছি। জীবনের চেয়ে সমাজ বড় নয় মা। আমি ভাবিইনি আমার ছেলেটা এমন উচ্ছন্নে গেছে। যার মানুষ খুন করতেও হাত কাপে না।”
এ অব্দি বলে ই মনোয়ারা বেগম কেঁদে ফেললেন। অথৈ বললো,
“আপনি কাঁদছেন কেনো মা। আর আপনি তো কিছু ভুল করেন নি বা ভুল বলেনও নি যে আপনার আমার কাছে মাফ চাইতে হবে।”

“আমার নিজের রক্ত তো করেছে। আরেকটু হলেই তো মেরে ফেলছিলো…। এমন ছেলে জন্ম দিয়েও মনে হচ্ছে পাপ করে ফেলছি। আমার ছেলেটা এমন ছিলো না। কিভাবে ওর এই অধোপতন হলো জানিনা আমি। যা করে ফেলেছে সেটা তো আর ফিরাতে পারবো না পারবো শুধু মাফ চেয়ে নিজের ভুল শুধরে নিতে। পারলে আমার ছেলেটাকে মাফ করে দিও মা। আর তুমি বাপের বাড়ি চলে যাও। এখানে থাকলে আবার…. ” এইটুকু বলে মুখে আঁচল দিয়ে কাঁদতে লাগলেন।

“না মা আপনার মাফ চাওয়ার মতো কিছু হয়নি। আর আপনার ছেলেও উচ্ছন্নে যায় নি। আপনার ছেলের আমার সাথে কিসের জানি শত্রুতা আছে তাই ওইরকম করে শাস্তি দিতে চেয়েছে।”

“জানি আমি। তোমার জন্য ওর দুটো বছর নষ্ট হয়েছে। কিন্তু তাই বলে ওর এত নিচে নামতে হবে?”

শাশুড়ির কথায় অথৈ অবাক হলো ওর জন্য আবেগের দুটো বছর নষ্ট হয়েছে! কিন্তু কেনো? কি করেছে ও? ওর তো এমন কিছু মনে পড়ছে না আর আবেগ কে তো এর আগে অথৈ চিনতোও না। অথৈ অবাক হয়ে শাশুড়ীকে জিজ্ঞেস করলো,

“আমার জন্য আপনার ছেলের দুটো বছর নষ্ট হয়েছে! কিভাবে মা? আমার এমন কিছু ই তো মনে পড়লো না। আপনি জানেন কিছু মা?”

” কি করেছিলে সেটা আমাকে কখনও বলে নি। তখন আমরা ঢাকায় থাকতাম না। সেবার আবেগ ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়তো। হঠাৎ একদিন এসে বললো আর পড়বে না।
ও অনেক ভালো স্টুডেন্ট ছিলো। এস,এস,সি তে গোল্ডেন এ প্লাস, ক্লাস ফাইভ, এইটে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।
হঠাৎ সেই ছেলে এসে বলতেছে সে আর পড়বে না। ওর বাবা আমি দুজনেই জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে কেনো পড়বে না। কিন্তু ছেলে নাছোড়বান্দা কোনো জবাব দেয়নি।
বারবার ওই এক কথা বলে গেছে। ওর বাবা এক পর্যায়ে ধমক দিয়ে বললেন বেশি বাড়াবাড়ি না করে পড়তে বসতে। ছেলেও বাবার ধমক শুনে রুমে চলে গেলো কিন্তু পড়তে আর বসলো না৷ ফাস্ট ইয়ার থেকে সেকেন্ড ইয়ার এ উঠার পরীক্ষায় বাংলা ইংরেজি বাদে গ্রুপের সব সাব্জেক্ট এ ফেল করলো। ওর বাবা ডেকে অনেক বকা দিলেন ছেলে চুপচাপ শুনে চলে গেলো একটা কথাও কানে নিলো বলে মনে হলো না৷ ছেলেটার প্রচুর জেদ ছিলো কোনো কিছু ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা যেতো না। তাই বকে ধমকেও কোনো কাজ হলো না। এরপর প্রি টেস্ট পরীক্ষা দিলোই না, সেটা বাসায় আমরা কেউ জানতাম না। যখন টেস্ট পরীক্ষাতে সব সাব্জেক্ট এ ফেল করলো পর কলেজ থেকে ডাক এলো তখন ওর বাবা কলেজ গিয়ে জানতে পারেন যে তার ছেলে ক্লাস পরীক্ষা কিছুতেই ঠিক ঠাক যায় নি এরপর বুঝি ছেলের বাবার টনক নড়লো। তিনি ছেলেকে ডেকে নরম সুরে জানতে চাইলেন যে কি চায় এমন কেনো করছে। আবেগ তখন চুপ করে রইলো কিছু বললো না। ওর বাবা ওকে সময় দিলেন কথা বলার জন্য তখন মুখ ফুটে শুধু একটা কথা ই বললো এখানে আর থাকতে চায় না। এই খান থেকে যেনো ওকে দূরে কোথাও পাঠিয়ে দেয়। ”
#ঋণশোধ
#পর্ব১৬
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা
অথৈ আগ্রহ নিয়ে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিলো।
ওদিকে যে চায়ের পানি ফুটতেছে সেদিকে দুজনের কারোর ই নজর নেই। মনোয়ারা বেগম না থেমে বলে যেতে থাকলেন,

“ছেলের কথা শুনে ওর বাবা বুঝতে পারলো যে গুরুতর কিছু ঘটে গেছে কিন্তু ছেলেটা বলতে না চাইলে কখনও জোর করে বলাতে পারবেনা তাই বৃথা চেষ্টা না করে বললেন যে ওখান থেকে ওকে নিয়ে ঢাকায় আসবে কিন্তু ওকে কথা দিতে হবে ও ঠিক করে পড়াশোনা টা কম্পিট করবে। ছেলেটার যেন ওখান থেকে চলে যেতে পারলেই শান্তি লাগবে তাই বাবার কথায় এককথায় রাজি হয়ে গেলো। ওই বছর আর পরীক্ষা তে বসে নি পরের বছর পরীক্ষা দিয়ে কোনো মতে এ গ্রেড আনলো। যে ছেলের থেকে গোল্ডেন আশা করতাম সে কোনো মতে এ গ্রেড পেলো এটা মানতে কষ্ট হলেও ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে মানতে হলো। ছেলেটার দিকে তখন তাকানো যাচ্ছিলো না কেমন যেনো একটা হয়ে গিয়েছিল। চেহারায় সৌন্দর্য টা হারিয়ে কালসেটে হয়ে গেছিলো। চোখের নিচে গাঢ় করে যেন কাজলের কালি লেপ্টে দেয়া।”

এইটুকু বলে ডুকরে কেঁদে উঠলেন। অথৈ কি করেছে এখনও কিছু বুঝতে পারছিলো না, আর না কিছু মনে করতে পারছিলো। কিন্তু কথাগুলো শুনে ওর ভীষণ অপরাধবোধ কাজ করতে লাগলো। কি করেছে ও জানে না কিন্তু এখন এটা তো জানে যে যাই করেছে তার ফলাফল খারাপ ছিলো। আবেগের লাইফ নষ্ট হয়ে যাচ্ছিলো।
আপাতত ওর চুপ করে সব শোনা ছাড়া আর উপায়ও নেই। মনোয়ারা বেগম নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আবার বলতে লাগলো, “এরপর ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার সময় হঠাৎ করে ওর বাবা মারা গেলো”।
এটা বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলতে লাগলেন,

” উনি এমনিতে বেশ শক্ত সামর্থ্য ছিলেন।আগে শত ঝড় ঝাপটাতেও কখনও ভেঙে যেতে দেখিনি কিন্তু তার বড় সাধের ছেলের অবস্থা দেখে যেনো একদম মুষড়ে গেলেন। তারপর একদম চুপচাপ শান্তির দেশে চলে গেলেন আমার উপরে তার ভাঙাচুরা ছেলেটাকে রেখে। অনুটাকে ওর মামার বাড়িতে রেখে এসেছিলাম ওখানেই স্কুলে পড়তো। তারপর হুট করে ছেলেটার উপর সংসার সামলানোর ভার এসে পড়লো। বাপ যেমন ছেলের শোকে গেলেন ছেলেটাও বাপকে হঠাৎ এভাবে চলে যেতে দেখে আরও ভেঙে গেলো। সেই ভাঙাচুরা ছেলেটার ঘাড়ে পড়লো আবার সংসারের দ্বায়িত্ব। বিপদ এলে যেন চতুর দিক থেকে আসে, অনুকেও ওর মামারা ফিরিয়ে দিয়ে গেলো বললো ওর দায়িত্ব আর নিতে পারবে না। এতদিন আমার স্বামীর পয়সায় ওদের সংসার চলতো সে চলে যাওয়াতে ওরাও অচল প্রায়। তাই ওদের দোষ না দিয়ে কপালের দোষ ই দিতে লাগলাম। এই বাড়িটা ছিলো বলে থাকার জায়গা ছিলো। কিছুদিন ওর বাবার পেনশনের টাকায় চলেছে সংসার। এরপর কিভাবে কিভাবে করে একটা চাকরি জোগাড় করে ফেলেছে তারপর আস্তে আস্তে স্বাভাবিক জীবনযাপন শুরু করলাম। আবেগকেও দেখলাম স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে, আসলে কাজের এত চাপ থাকতো তখন ছেলেটার তাই অন্যকিছু ভাবার সময় পেতো না। কিন্তু হঠাৎ তোমাকে আবার দেখার পর থেকে আবার পাগলামি শুরু। এবার তো নতুন পাগলামি যে তোমাকে বিয়ে করবে। আর তারপর ই এসব….”

এতটুকু বলে থামলেন। তারপর বললেন,

“সব কিছু ই তো শুনলে মা এবার যদি মাফ করে দিতে তাহলে বড্ড হাল্কা লাগতো নিজেকে। আমি ওকে বার‍ণ করেছিলাম শোনে নি আমার কথা, বড্ড বেশি জেদি।”

অথৈ কি বলবে ঠিক ভেবে পেলো না। ওর জন্য এতকিছু হয়ে গেছে। না জেনে করলেও তো করেছে। এখন ওর না চাইলেও এবারের মতো আবেগকে মাফ করে দেয়া উচিত। তাই জন্য ই শাশুড়িকে আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“চিন্তা করবেন না মা। আমি আপনার ছেলেকে মাফ করে দিয়েছি। আমি জানি না আমি কি এমন করেছিলাম যার জন্য আপনার ছেলের এমন পরিনতি হয়েছিলো। কিন্তু যা-ই করে থাকি সেটার শাস্তি ই তো আপনার ছেলে দিয়েছে, সুতরাং হিসাব বরাবর। আমি তো আর আপনার ছেলের সেই হারানো সময় ফিরিয়ে দিয়ে পারব না।
তাই নাহয় মাফ করে ই দিলাম।”

এটা বলে অথৈ শাশুড়ীর দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসি দিলো। উনি কৃতজ্ঞতার হাসি হেসে অথৈয়ের দুহাত ধরে বললেন,

“বড্ড বাঁচান বাঁচালে মা। এবার আমি কি বলি তুমি বাড়ি ফিরে যাও। এখানে আর থেকোনা। ওর মাথা গেছে আবার কখন কি করে বসে তার ঠিক নেই। এরপর এর থেকেও খারাপ কিছু হলে তখন কি করবো।”

অথৈ শাশুড়ীর কথাতে দ্বিমত পোষণ করে বললো,
“না মা এটা অসম্ভব।”

অথৈয়ের কথাতে উনার হাল্কা বিস্ময় লাগলো। তিনি প্রশ্ন করে বললেন, “কেনো বউমা। অসম্ভব কেনো?”

“আপনি কি জানেন মা আমি কি করেছিলাম?”

“না। এ বিষয় কিছু ই বলে নি আমাকে আমি শুধু ওর পরিনতি ই দেখেছি।”

বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। অথৈ তখন জিজ্ঞেস করলো,
“ওহ আচ্ছা তাহলে এটা কবে থেকে জানতেন যে আমি আপনার ছেলের লাইফ নষ্টের কারণ?”

“তোমাকে দেখে আসার পর আমাকে এসে বললো একটা মেয়ে পছন্দ হয়েছে তাকেই বিয়ে করতে চায়। তখন তো গেলাম প্রস্তাব নিয়ে তুমি রাজি হলে না। কিন্তু ছেলে আমার মরিয়া হয়ে গেলো কিছুতেই মানতে চাইলো না। বিয়ে তোমাকেই করবে তখন দুজনের তর্ক বির্তকের মাঝে হুট করে কথা টা বলে ফেলে। আমি তখন বার‍ণ করলাম কিন্তু ছেলে সেই চার/পাঁচ বছর আগের মতোই অবাধ্য হয়ে গেলো। আমি আর কিছু বলতে পারিনি।
চুপচাপ মেনে নিলাম”।

” বুঝতে পারছি আপনি কিছু জানে না। কিন্তু আমি কি করেছিলাম সেটা না জেনে আমি এ বাড়ি থেকে যেতে পারব না। আমার জন্য একটা মানুষ আজ এমন হয়ে গেছে সেটা জেনেশুনে আমি এভাবে চলে যেতে পারিনা।”

শাশুড়ী অনেক বোঝাতে চেষ্টা করলো কিন্তু কিছু করে উঠতে পারলো না, অথৈ নাছোড়বান্দা। তিনি কয়েক সেকেন্ড অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন মেয়েটাও কম জেদি না। অথৈ যে তার কথা আর শুনবে না সেটা বুঝে তিনি হাল ছেড়ে দিলেন। ঘুরে চুলার দিকে তাকিয়ে দেখলেন পানি ফুটে বাস্প হয়ে কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। তিনি আবার নতুন করে পানি ঢেলে দিয়ে বললেন,
“দেখেছো কথা বলতে বলতে চা এর পানির কথা ভুলে ই গেছি।”

তখনই অনন্যা চোখ ঢলতে ঢলতে রান্নাঘরে এসে বললো,
“শাশুড়ী বউমা দুজন মিলে কি শলা পরামর্শ করছেন”
অনন্যাকে দেখে ওর মা জিজ্ঞেস করলো,
“তুই ঘুমিয়েছিলি?”

একটা হাই তুলে বললো, “হুম”

“কোচিং যাস নি কেন?”

” এমনিতেই”

“এমনিতেই কেন? অকারণে অফ দিবি কেন”

দুজনের তর্ক, বির্তকে পৌঁছে যাওয়ার আগেই অথৈ থামিয়ে দিয়ে বলল,

“মা আমার জন্য যায়নি, আমি অসুস্থ ছিলাম তাই খেয়াল রাখবে বলে রয়ে গেছে”।

সেজন্য কোচিং অফ দেয়ার কি দরকার আছে এই কথাটা বলতে চেয়েও থেমে গেলেন। ভাবলেন এরপর আর কিছু বলা সাজে না, বললে অথৈ হয়তো ভাববে ওর জন্য অনন্যার কেয়ার টা উনি অপছন্দ করছেন। তাই আর কিছু বললেন না। এবারের চা ঠিকঠাক মতো হলো সবাই মিলে সন্ধ্যায় নাস্তা করে যে যার রুমে চলে গেলো।
নাস্তা করার সময় অথৈয়ের চোখ দুটো আবেগ কে খুঁজেতেছিলো। এত লেট করে ফিরতে তো আর একদিনও দেখে নি। এতটা সময় পেরিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আবেগের দেখা নেই।

রুমে গিয়েও আবেগের কথা ভাবতে লাগলো কিভাবে কি করে আবেগের থেকে কথাগুলো বের করতে পারবে সেটা ভাবতে লাগলো আর বারবার রুমের দরজার দিকে
তাকাতে লাগলো কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হতে লাগলো। রাতের খাবার খেয়ে এসে শুয়েও বারবার তাকাতে লাগলো কিন্তু তখনও আবেগের দেখা নেই। এমন করে করে একটা সময় ঘুমিয়ে গেল।

অথৈ ঘুমিয়ে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পরে আবেগ রুমে এলো। ঘুমন্ত অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কয়েক মুহূর্ত। আজকে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে ওর কাছে অথৈয়ের মুখ টা নিঃস্পাপ মনে হলো। এতদিন রাগ আর ঘৃণা নিয়ে তাকালো বলে ই বুঝি এমন মনে হয় নি। হাটু গেড়ে অথৈয়ের মাথার পাশে ফ্লোরে বসে পরে আরও কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো। তারপর ” সরি অথৈ” বলে উঠে রুম থেকে চলে গেলো।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here