ঋণশোধ পর্ব ১৩+১৪

#ঋণশোধ
#পর্ব১৩
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

সময় যেনো কাটতেই চাইছে না। কিছুক্ষন পর পর ভয়ে আর ঠান্ডায় কেঁপে উঠতে লাগলো। একটা সময় অচেতন হয়ে গেলো।
আর হুস রইলো না। বেহুশ হওয়ার আগেও বিড়বিড় করে মাকে ডাকছিলো।

আবেগ অথৈকে বারান্দায় রেখে এসেই শুয়ে পড়লো। আর মনে মনে এটা ভেবে খুশি হলো এবারে অথৈকে জব্দ করতে পেরেছে।
অথৈকে যাতে ভালো করে জব্দ করতে পারে সেজন্যই ওর দুর্বল পয়েন্ট গুলো জেনে নিয়েছিলো। মনে মনে বলল,
“যন্ত্রণা হলে কেমন ফিল হয় সেটা তুমি এবার ফিল করবে অথৈ। আমার প্রতিটা যন্ত্রণাময় কাটানো দিনের হিসেব আমি নেবো তোমার থেকে, যেটা আমার সাথে করেছো সেটা তুমি এবার ফেরত পাবে।”

এসব ভাবতে ভাবতে ই আবেগ ঘুমিয়ে পড়লো। সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে খেতে চলে গেলো। অথৈ যে বারান্দায় রয়ে গেছে এটা ওর মাথা থেকে বেরিয়ে গেলো।
ভাবলো প্রতিদিনের মতো ই বুঝি উঠে নিচে গেছে। তাই গিয়ে খেতে বসলো। আজকে আবেগ আগে এসে খেতে বসলো অনন্যা তখনও আসেনি। আবেগ বসতেই ওর মা ওকে খেতে দিলেন আর জিজ্ঞেস করলেন রাতে কি হয়েছিলো। আবেগ পরোটাতে ভাজি নিয়ে মুখে পুরে চিবুতে চিবুতে বললো,
“কিছু হয়নি মা”।
তখন আবেগের মা বললো, “কিছু না হলে অতরাতে মেয়েটা চেঁচাচ্ছিলো কেনো?”
“চেঁচানো ওর স্বভাব মা,তুমি প্রথমবার শুনেছিলে দেখে এমন লাগছে।”

মনোয়ারা বেগম দাড়িয়ে ছিলেন। একটা চেয়ার টেনে ছেলের মুখোমুখি বসে বললেন,
“আমি মেয়েটাকে একবারে ভালো করে না চিনলেও এতটুকু চিনেছি যে অকারণে কিছু করবে না৷ তুই যে কিছু একটা করেছিস সেটা বেশ বুঝতে পারছি।”
আবেগ আর কিছু না বলে চুপচাপ নিচে তাকিয়ে খাচ্ছিলো এরমধ্যে অনন্যা নিচে এলো। অনন্যাকে দেখে ওর মা বললো,

“বউমা কই আজকে তোর সাথে এলো না যে”

“ভাবি নিচে আসেনি?”

“না তো”

“আমি তো ভাব্লাম ভাবি নিচে চলে এসেছে রুমে খুঁজে দেখছিলাম দেখলাম নেই। বাথরুমের দরজাও খোলা”

“গেলো কই মেয়েটা”

অনন্যার এই কথা শোনার পরে আবেগের মনে পড়লো আর তক্ষুণি গলায় খাবার আটকে গেলো আর সাথে খুক খুক করে কেশে ফেললো। ছেলের অবস্থা দেখে মনোয়ারা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে পানি ঢেলে এগিয়ে দিতে দিতে বললেন, “তোর আবার কি হলো হঠাৎ!”

আবেগ উত্তর না দিয়ে পানি খেতে লাগলো তারপর মনে পড়লো ও তো দরজা খুলেও দিয়ে আসেনি। না খুললে তো অথৈ বের হতে পারবে না। আর ও নিজে না খুলে দিলে কেউ খুঁজেও পাবে না। একবার ভাবলো যে, থাক অফিস থেকে এসে বের করবে তারপর ভাবলো এতটা সময় পেরিয়ে গেলে ঝামেলা শুরু হয়ে যেতে পারে। ওর মা টেনশনে পরে যাবেন তখন। তাই খুলে দিয়েই অফিস যাবে ভাবলো। খাবার টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে মাকে বললো আর খাবে না। আবেগ কখনও এভাবে খাবার ছেড়ে উঠে যায় না তাই জিজ্ঞেস করলেন, “খাবি না কেনো?”

আবেগ জবাব না দিয়ে দৌড়ে উপরে উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো। ভেবেছিলো হয়তো অথৈ ঘুম থেকে উঠে দরজা ধাক্কাবে কিন্তু ওকে গুটিশুটি মেরে থাকতে দেখে বুঝলো উঠেই নি। তখন হাল্কা একটা ধাক্কা দিয়ে বললো,

“উঠেন পাটরানি অনেক ঘুমিয়েছেন। আপনার হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে বেশ আরামের ঘুম ঘুমিয়েছেন। উঠার নাম ই নেই
উঠুন এবার।”

দেখলো অথৈয়ের কোনো রেস্পন্স নেই, নড়ছেও না৷ আর আবেগ জানে, অথৈয়ের ঘুম গাঢ় নয়৷ দুই একটা ডাকেই উঠে যায়।
তখন আরেকটু জোরে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“অথৈ”। কিন্তু এবারেও সাড়া নেই। গতরাতে অন্যান্য দিনের চেয়ে একটু বেশিই ঠান্ডা ছিলো, এখনও আছে। অথচ এই ঠান্ডায়ও অথৈ কাঁপছে না। আবেগ দুইমিনিট হয়ে গেছে মাত্র যে ও বারান্দায় এসেছে তাতেই ও ঠান্ডা তে জমে যাওয়ার অবস্থা আর অথৈ কাপছেই না। এটা তো সম্ভব না খটকা লাগলো ওর তখন জোরে ধাক্কা দিয়ে ই ডাকতে লাগলো কোনো সাড়া নেই। এরপর বারান্দা থেকে কোলে করে তুলে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শোয়াতে গেলো এরমধ্যে দেখলো ওর মা রুমে ঢুকেছেন। দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। আবেগ আপাতত সেটাকে উপেক্ষা করে অথৈকে বিছানায় শুইয়ে দিলো আর কম্বল টেনে গায়ে দিয়ে দিলো।

মনোয়ারা বেগম কঠিন গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “কি করেছিস মেয়েটার সাথে?”

আবেগ সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে ডক্টরকে কল করতে লাগলো। মনোয়ারা বেগম অথৈয়ের কপালে হাত দিলেন দেখলেন ঠান্ডা। হাত ধরলেন দেখলেন সেটাও ঠান্ডা হয়ে আছে। তারপর বিড়বিড় করে বললেন,
“মেরে ফেললো মেয়েটাকে”।
উনি অথৈয়ের হাত ঢলতে ঢলতে দোয়া দুরুদ পড়তে লাগলেন। আর মনে মনে নিজেকে দোষ দিতে লাগলেন।

অনন্যা খাওয়া শেষ করে আবার উপরে উঠে এলো ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। যেহেতু রুম দুটো সামনাসামনি তাই সিড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে ওইদিকে চোখ গেলো। তাকিয়ে দেখলো ওর মা বিছানায় বসে আছে। এটা দেখে রুমের দিকে এগুলো অনন্যা। আরেকটু এগিয়ে বুঝতে পারলো বিছানায় অথৈ শোয়া। এটা দেখেই ও দৌড়ে রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো, ” ভাবির কি হয়েছে মা?”

মনোয়ারা বেগম দোয়া দুরুদ পড়তে থাকলেন উত্তর দিলেন না। সেটা দেখে অনন্যা আবার জিজ্ঞেস করলো তখন কঠিন গলায় বললেন,
“মরে গেছে। আমি একটা পরিবার শেষ করে দিলাম, বাবা মায়ের কোল খালি করে দিলাম। বিয়ে দিয়ে শশুরবাড়ি পাঠাতে না পাঠাতেই তাদের মেয়ে লাশ হয়ে গেছে”।

মনোয়ারা বেগম এর বলার ধরনে অনন্যা কেঁদে ফেললো। কান্নামাখা গলায় বললো,
“এসব কি বলছো মা”।

” ঠিকই বলছি। জেনেশুনে আমি মেয়েটাকে একটা জল্লাদের হাতে তুলে দিয়েছি। বিয়ের গন্ধ যেতে পারেনি তার আগেই মরে গেছে।”

আবেগ কল করে ডক্টর আসার অপেক্ষা তে দাঁড়িয়ে ছিলো। ব্যাপার টা বড্ড বাড়াবাড়ি করে ফেলছে এখন বুঝতে পারলো। কিন্তু এভাবে ওর মায়ের বারবার “মরে গেছে” এই কথাটা ওর কলিজায় লাগছিলো। প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে ভুলেই গিয়েছিল অথৈয়ের ওর কি! তাই অথৈ মরে গেছে শুনে আবেগের বুকে চিনচিনে ব্যথা করছিলো। অপরাধীর গলায় বললো, “প্লিজ মা এভাবে বলো না।”

আবেগ ঠিক যতটা নরম হয়ে বললো মনোয়ারা বেগম ঠিক ততটাই কঠিন গলায় বললেন, “আমি কোনো খুনির মা নই। আমার ছেলেকে আমি এই শিক্ষা দেই নি। আমার ছেলে এই কাজ করে আমার মাথাটা এভাবে নিচু করতে পারেনা। ”

মায়ের কথাতে আবেগের অপরাধবোধ বাড়তে লাগলো। এই কথার পর দুইজন ই চুপ হয়ে গেলো। অনন্যা কিছু বুঝতে না পেরে চুপচাপ দাড়িয়ে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকলো। আবেগ ঘরময় পায়চারি করতে লাগলো ডক্টর এখনো কেনো আসছে না। আর না পেরে নিচে চলে গেলো দেখতে যে ডক্টর আসছে কি-না।
নিচে যাওয়ার ১০ মিনিট এর মাথায় ডক্টর এলো। ডক্টরকে সাথে নিয়ে দ্রুত রুমে ঢুকলো। ঢুকে দেখলো ওর মা অথৈয়ের হাত ঘসছেন আর অনন্যা পা। ডক্টরকে দেখে অনন্যা সরে গেলো।

ডক্টর চেক করে বললেন,
“অতিরিক্ত ঠাণ্ডা আর ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে। আর দেখে মনে হচ্ছে অনেকটা সময় ঠান্ডার মধ্যে ছিলো। শরীর ঠান্ডায় টানটান হয়ে আছে। শরীর উষ্ণ করতে হবে তাহলে এই টানটান ভাব যাবে ঠান্ডাও যাবে। কিন্তু এত সময় ঠান্ডার মধ্যে ছিলো কেনো?”
ডক্টরের কথায় আবেগ কোনো জবাব দিতে পারলো না। ওর মা বললো,
“মেয়েটার কপাল খারাপ ভাই তাই”। বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে হাসি হাসি ভাব আনলেন। উনার কথার মানে ডক্টর না বুঝতে পারায় কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে রইলেন। তারপর আর কিছু না বলে নিজের কাজ করে চলে গেলেন। আবেগ গেলো ডক্টরকে দরজা অব্দি এগিয়ে দিতে।
#ঋণশোধ
#পর্ব১৪
#লেখাঃসাদিয়া_আফরিন_ইভা

ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে আবার রুমে চলে এলো। রুমে এসে মাকে বললো নিচে চলে যেতে আর অনন্যাকে বললো কলেজ চলে যেতে। কিন্তু দুজনের কেউ-ই নড়লো না উত্তরও দিলোনা। আবেগ আবার বললো তোমরা যাও আমি আছি ওর কাছে তখন ওর মা বললো,
“আমি ওকে আর একা একটা খুনির ভরসায় এখানে ফেলে যেতে পারবো না”

“মা”

“আমাকে মা বলে না ডাকলে খুশি হবো। বলেইছি তো আমি খুনির মা নই”

“এভাবে বলো না প্লিজ মা তুমি তো জানো ই”

“তাহলে কিভাবে বলবো?? তোকে আমি বারণ করিনি? এই মেয়েটাকে বিয়ে করিস না। মেয়েটা যা করেছিলো সেটা যেকোনো মেয়েই করতে পারে ইচ্ছে করে বা ভুল করে। কিন্তু তুই যেটা করছিস বা যা করেছিস সব কিছু জেনে-বুঝেই করছিস ঠান্ডা মাথায়। তোর তো মানুষ খুন করতে হাত কাপঁবে না রে,তুই তো ঠান্ডা মাথার খুনি। ছিঃ ছিঃ এমন ছেলেকে জন্ম দিয়েও তো পাপ করে ফেলেছি। একবার মেয়েটা সুস্থ হোক আমি ওর পা ধরে ক্ষমা চাইবো বলবো আমাকে মাফ করে দিস তোকে আমি ভুলভাল বুঝিয়ে একটা জল্লাদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম। যেখান থেকে এসেছে সেখানেই যেনো চলে যায়। এখানে থাকলে তো মরে যাবে, তারপর একটা খুনির মা হয়ে সেই কলঙ্ক নিয়ে আমাকে বেঁচে হবে। তুই আমার সামনে থেকে যা তো। ”

আবেগ আর ওর মায়ের কথার উপরে কিছু ই বলতে পারলো না। চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। যেহেতু অনন্যা কিছু জানেনা তাই ওর মায়ের বলা কথার মানে কিছুই বুঝতে পারছিল না। তাই মাকে জিজ্ঞেস করলো,
“এগুলো কি কথা বলছিলে তুমি মা, কার কথা বলছিলে?”

আবেগের উপরের রাগটা রয়ে যাওয়াতে অনন্যার কথার জবাব তিনি ঝাঝালো কন্ঠে দিলেন।বললেন,
“তুই ছোট মানুষ ছোট মানুষের মত থাক বড়দের কথায় একদম নাক গলাস না”।
মায়ের থেকে এমন ব্যবহার খুব কম পেয়েছে তাই চুপসে গেলো আর কিছু বললো না।

ডক্টর দেখে যাওয়ার আধ ঘন্টা পর অথৈয়ের হুস আসতে লাগলো। অথৈয়ের হুস আসতে দেখে মনোয়ারা বেগম স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। অনন্যাকে অথৈয়ের পাশে বসিয়ে রেখে মনোয়ারা বেগম নিচে চলে গেলেন। যাবার সময় দেখলেন আবেগ রুমের বাহিরে দাড়িয়ে আছে। ছেলের সঙ্গে কোনো কিছু না বলে চুপচাপ নিচে নেমে অথৈয়ের জন্য খাবার নিয়ে আবার উপরে উঠে এলেন। দেখলেন আবেগ ঠিক আগের যায়গাতেই দাড়িয়ে আছে। সাহস করে আর রুমে ঢুকতে পারেনি। এবারও কিছু না বলে পাশ কাটিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন। গিয়ে দেখলেন অথৈ মাথা তুলতে চেষ্টা করছে আর অনন্যা বাধা দিতে চেষ্টা করছে। মনোয়ারা বেগম অথৈকে বললেন ওঠার চেষ্টা না করতে বললেন,
” উঠো না। তোমার শরীর এখন দুর্বল হয়ে আছে। আগে কিছু খেয়ে নাও তারপর আস্তে আস্তে উঠতে চেষ্টা করবে।”

অথৈয়ের মাথা ব্যাথা করছে, সারারাত ধরে ফ্লোরে শুয়ে থাকায় এই ব্যাথা টা করছে। আর কেনো ব্যাথা করছে সবাই ওর পাশে কেনো কিছু ই বুঝতে পারছে না। হুস এলেও ব্রেন কাজ করতে শুরু করে নি তাই চুপ করে রইলো। মনোয়ারা বেগম অথৈকে খাইয়ে দিতে লাগলেন অথৈ চুপচাপ খেয়ে গেল। অনন্যাকে বললো ওর মা যেনো কলেজ চলে যায়। অনন্যা বললো যে আজকে ও কলেজ যাবে না। অথৈয়ের কাছে ই থাকবে। উনি আর জোরাজোরি করলেন না ভাবলেন থাকলে ভালো ই হয়।
অনন্যা অথৈয়ের পাশে থাকবে আর উনি গিয়ে ঘরের কাজ রান্না-বান্না এসব করবেন।
অথৈকে খাইয়ে দিয়ে উনি রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। এবার আর রুমের বাহিরে আবেগ নেই। নিচে নেমেও পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে দেখলেন নেই কোথাও। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজ করতে গেলেন।

আবেগ আর ঘরে থাকতে না পেরে বাইরে চলে গেলো। ওর ভীষণ ভীষণ ভীষণ গিল্ট ফিল হচ্ছিলো। রাগের মাথায় আর প্রতিশোধের নেশায় কি একটা কাজ করে ফেলেছে। সত্যি সত্যি যদি অথৈয়ের কিছু হয়ে যেতো? তখন কি করে নিজেকে ক্ষমা করতো। ওর মা তো ঠিকই বলেছে অথৈয়ের ভুল টা সামান্য ই ছিলো। ফলাফল টা ভয়াবহ হবে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেনি। কিন্তু আবেগ যা করছিলো সেটা তো জেনেশুনেই ইচ্ছে করে করছিলো। অথৈয়ের করা অন্যায় এর শাস্তি দিচ্ছিলো। আর সেটা দিতে গিয়ে ওকে….! আর ভাবতে পারলো না।

অথৈ আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে উঠে বসলো। অনন্যা বাধা দিতে গেলে অথৈ হাত দিয়ে ইশারায় থামিয়ে দিয়ে উঠে বসতে বসতে অনন্যাকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি হয়েছিলো আমার?”

অনন্যা তো আগাগোড়া কিছু জানেনা। ও তো যখন এসে চেক করে গেছে তখন কোথাও অথৈকে পায়নি। পরে যখন আবার এলো তখন দেখলো অথৈ অসুস্থ হয়ে বিছানার শুয়ে আছে তাই বললো,

” কিভাবে কি হয়েছে জানিনা ভাবি। আমি এসে দেখি তুমি বেহুশ হয়ে শুয়ে ছিলে আর মা তোমার পাশে বসে তোমার হাত ঘসছিল।
তারপর ডক্টর আংকেল এসে বললেন তুমি ভয় পেয়ে আর ঠাণ্ডায় বেহুশ হয়ে গিয়েছো।
আমি তোমার পা মালিশ করে দিয়েছিলাম কি যে ঠান্ডা ছিলো বরফের মতো”।

অথৈ ঠান্ডায় বেহুশ হয়ে শক্ত হয়ে ছিলো দেখে তো শীত অনুভব করে নি। কিন্তু এখন হুস আসায় ওর অনেক শীত করতে লাগলো। আর অনন্যার বলার পর ওর মনে পড়লো গত রাতের কথা,বারান্দায় কাটানো সেই দুর্বিষহ রাতের কথা। মনে পড়তেই হঠাৎ কেঁপে উঠলো। অথৈকে কাঁপতে দেখে ফেললো অনন্যা। আর অথৈয়ের হুস এসে স্বাভাবিক হতে হতে প্রায় ১২টার কাছাকাছি চলে গেলো। তাই ওভাবে কাপতে দেখে অনন্যা জিজ্ঞেস করলো,
” ভাবি তুমি কি হাটতে পারবে?”

“মনে হয় পারবো। কেনো?”

“তাহলে চলো ছাদে যাই৷ তোমার তো দেখছি অনেক শীত লাগছে। ছাদে এই সময় কটকটে রোদ থাকে দেখবা তোমার কাঁপাকাঁপি অফ হয়ে গেছে।”

“আচ্ছা। এসে তোমাদের বাসার ছাদে ই যাওয়া হয়নি এখনও”

অনন্যা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“আমাদের বাসার ছাদ?”

“হ্যাঁ। তাছাড়া কাদের হবে?”

“তোমার কিছু না?”

অনন্যার এই কথা তে অথৈ হেসে ফেললো বললো,
“এখনও আমি নতুন তাই এখন কিছু ই নিজের বলে দাবি করতে পারছি না। আমার আবার সময় লাগে সব কিছু নিজের করতে যাইহোক চলো যাই”

“ওকে ভাবি চলো”

ছাদে উঠে দেখলো পুরো ছাদ রোদে ঝলমল করছে। ছাদের রেলিঙের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ লাগানো। গোলাপ, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, ক্যালেন্ডুলা। চন্দ্রমল্লিকা গাছগুলোতে ফুল ফুটে আছে। এই ফুল অথৈয়ের ভীষণ পছন্দের। পুরো ছাদে চোখ ভোলালো পরিবেশ টা দেখে অথৈয়ের মনে হলো এমন একটা জায়গা দেখলে যার খুব মন খারাপ তার মনও ভালো হয়ে যাবে। অথৈয়ের ভালো লাগছিলো পরিবেশ টা।

অনন্যা জিজ্ঞেস করলো,
“এখন কেমন লাগছে ভাবি?”

অথৈ কার্ণিশ এর কাছে দাড়িয়ে নিচের দিকে দেখছিলো, অনন্যার কথাতে ওর দিকে ফিরে হাসি দিয়ে বলল, “অনেক ভালো লাগছে। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।”

“ধন্যবাদ দিচ্ছ কেন? আমি কি তোমার পর?”

“কেনো ধন্যবাদ কি শুধু পর কেই দেয়?”

” কি জানি। আমি তো এমন ই শুনছিলাম।
আর তোমার সাথে আমার সরি থ্যাঙ্কিউ এর সম্পর্ক তো না,হুহ। আর আমি না আনলে কি? ভাইয়া ঠিকই আনতো। এই ছাদ তো তোমার জন্য ই এত সুন্দর করে সাজিয়েছে ভাইয়া।”

অনন্যার কথা শুনে অথৈ অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো,
“কি? এই ছাদ বাগান আমার জন্য করেছে তোদের ভাইয়া?”

“হ্যাঁ।”

“কবে করেছে?”

” যেদিন তোমাকে বিয়ে করবে বলে মাকে জানায় সেদিন দেখলাম কতগুলো ফুল গাছ কিনে এনে লাগাচ্ছে। ওর কাজ দেখে তো আমি অবাক। ও আর ফুল গাছ, ওকে আমি ছাদে খুব কম আসতে দেখেছি ইন ফ্যাক্ট শখ করে আমি একবার ফুল গাছ কিনে এনে লাগাই ও সেগুলো ফেলে দেয় জঞ্জাল বলে..। ওই জঞ্জালে ছাদ নষ্ট হয়ে যাবে দেখে। এরপর থেকে দেখলাম প্রতিদিন সকালে বিকেলে ছাদে উঠে গাছের পরিচর্যা করে।”

“আমার জন্য ই এসব করছে সেটা কি ও নিজে বলেছে?”

“উহু।”

“তাহলে?”

“আমি বুঝে ফেলেছি। আগে যে ফুল গাছ সহ্য করতে পারতো না তার হঠাৎ এই পরিবর্তন দেখে ই বুঝেছি। আর তুমি জিজ্ঞেস করে ই দেখ না।”

অথৈ মনে মনে বলল হ্যাঁ তোমার ভাই তো আমাকে বলার জন্য বসে আছে।

চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here