#এই_রাত_তোমার_আমার
#সানজিদা_ইসলাম
#৪র্থ_পর্ব
(পেইজের রিচ অনেক কমে গেছে বেশি বেশি লাইক কমেন্ট করো)
ফিমা বাড়ি থেকে বের হয়ে কোচিংয়ে যাওয়ার সময় ইয়াসিরের সাথে দেখা হয়। সাধারণত ইয়াসির প্রায়ই ফিমার জন্য এই রাস্তায় অপেক্ষা করে তারপর বাকি রাস্তা তার সাথে সাথে যায় কিন্তু কোনো কথা বলে না তাই ফিমাও শুধু শুধু তার সাথে ভেজাল করে না। কিন্তু সে বোঝে না সে তার সংসার কাজ কর্ম ফেলে এখনো কেনো তার পিছনে পরে আছে?যেখানে তার কাছে ফিরে যাওয়ার আশা শূন্য। তবুও কি সুখ পায় এ সব পাগলামি করে।এইসব কথা ভাবতে ভাবতেই পেছন থেকে কেউ তাকে ডাক দেয়,
—ফিমা…ফিমা দাঁড়াও, তোমার সাথে আমার কথা আছে।
সে থামে না বরং হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেয় এই কন্ঠ তার খুব চেনা। আপাতত তার সাথে কোনো কথা বলতে চাচ্ছে না।সে দ্রুত সেখান থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না ইয়াসির তার পথ আগলে ধরলো,
সে হাঁপাতে হাঁপাতে বললো,
—এমন দৌড়ে যাচ্ছো কেনো তোমাকে ধরতেই আমার জান অর্ধেক শেষ। আর কতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছো না তুমি?
—কেনো ডাকছিলে? আমার মনে হয় না তোমার কথার শোনার মত বা তোমার ডাকে সাড়া দেয়ার মত সম্পর্ক আমাদের মধ্যে আছে।
—আমাদের মধ্যে এমন সম্পর্ক কি আদোও ছিলো না?
—ছিলো আর আছের মধ্যে অনেক তফাৎ ইয়াস। তখন আমাদের মধ্যে একটা পবিত্র সম্পর্ক ছিল আর এখন তোমার আমার মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই।বাদ দাও বলো কি বলতে চাও?
—তুমি চাইলেই আমরা স্বাভাবিক হতে পারি আবার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারি শুধু একটা সুযোগ দাও।
ইয়াসির এর কথা শুনে ফিমা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে তার আর একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে বললো,
—ওই যে তোমাকে একটু আগে বললাম না আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। সত্যিই আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই আর যদি থেকেও থাকে তা শুধু ঘৃণার। তোমার সাথে এই যে এখন দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছি না ঘৃণায় আমার গা জ্বলে যাচ্ছে।আর তুমি আমাকে বলছো তোমার সাথে আবার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে? সম্পর্কটা শুধু আমার কাছেই পবিত্র ছিল তোমার কাছে কখনোই পবিত্র ছিল না। তুমি তো তাকে অপবিত্র করতে বরং এক বিন্দু কৃপণতা করেনি তোমার সাথে নতুন কোন সম্পর্ক গড়ার চেয়ে আমার মৃত্যুও ভালো। এখন রাস্তা ছাড়ো আমার মনে হয় না তোমার সাথে আমার আর কোন কথা আছে।
ইয়াসির রাস্তা ছাড়লো না বরং তার হাত ধরে টেনে একপাশে নিয়ে আসলো।আর কোনো এক অজানা কারণে ফিমা তাকে বাধা দিতে পারলো না।
—শুনলাম তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে?
ফিমা অকপটে স্বীকার করলো,
—হ্যা
—শুনলাম ঐ লোকের আগের স্ত্রীও আছে তাহলে আমাকে বিয়ে করতে কি সমস্যা?সে খানে তোমাকে সতীনের সংসার করতে হবে স্বামীর ভালবাসার ভাগ দিতে হবে। তার চেয়ে তুমি আমাকে বিয়ে করে নাও তুমি একবার রাজি হলে আমি ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেবো আর আমি প্রমিস করছি আর কখনো ঐ সবে জড়াবো না। শুধু আমি আর তুমি থাকবো।আমাদের আলাদা একটা সংসার হবে।আমি তোমাকে ভুলতে পারিনি ফিমা আমি এখনো তোমাকে খুব ভালোবাসি।প্লিজ রাজী হয়ে যাও।
ফিমা কিছু বলছে না কি বলবে তার কাছে যে উত্তর নেই।সে নিজে একটা কাঠপুতুল মাএ তাকে যে যেভাবে নাচাবে সে সেভাবেই নাচবে।
—কথা বলো ফিমা,নাকি টাকার জন্য বিয়ে করছো?আমি জানি তুমি এমন মেয়ে না যে অন্যের সংসার দখল করবে নিশ্চয়ই এই বিয়ের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে। তোমার টাকার দরকার তো আমাকে কিছুদিন সময় দাও আমি তোমাকে টাকা দিবো। কিন্তু প্লিজ তুমি এই বিয়ে করো না। আমি তোমাকে অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারবো না।কত টাকা লাগবে তোমার এক লাখ,দু লাখ, পাঁচ লাখ? আমি ম্যানেজ করবো। শুধু কিছু দিন সময় দাও। আমার শুধু তোমাকে চাই যে কোনো কিছুর বিনিময়ে শুধু তোমাকে চাই
ফিমার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না কি বলবে সে? কিন্তু সে চায় না ইয়াসিরের সংসার তার জন্য নষ্ট হোক,
—আমার জীবনটা কত অদ্ভুত তাইনা ইয়াস?সবাই আমাকে কিনতে চায়। তুমি কিনতে চাও ঐ ভদ্রলোকের মা কিনতে চায় আর আমার আপন মা বাবা আমাকে বিক্রি করতে চায়। এতদিন আমি নিজেকে সস্তা পণ্য ভাবতাম আর এখন আমি সত্যি সত্যি পণ্য হয়ে গেছি যে কেউ চাইলেই আমাকে কেনা বেচা করতে পারবে। আমি যে একটা মানুষ আমার যে একটা মন আছে আমার দুঃখ কষ্ট অনুভূতি আছে তা কারো চোখে পড়ে না।যেমন আমার মা-বাবা বলে তারা আমাকে ভালোবাসে আমার ভালো চায় তাই আমাকে বিয়ে দিচ্ছে কিন্তু সত্যি বলতে তারাও অন্ধ হয়ে আছে অন্য কারো সুখ নষ্ট করে কারো মনে কষ্ট দিয়ে কখনোই নিজেকে সুখি করা যায় না তা তারা বুঝতে পারছে না কিন্তু একদিন বুঝবে তখন খুব দেরি হয়ে যাবে প্রায়শ্চিত্ত করার সুযোগ পাবে না। আবার এই যে তুমি বললে আমাকে ভালোবাসো সত্যি কি জানো? ভালোবাসলে তুমি কখনো আমাকে আবার বিয়ে করতে চাইতে না যে কেন উপায় আমাকে পেতে চাইতে না বরং আমার ভালো থাকাকে প্রধাণ্য দিতে।আর যদি সত্যি আমাকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমার পিছু ছেড়ে দাও আমাকে আমার হালে থাকতে দাও নিজের সংসার নিয়ে সুখী থাকো যেই মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছো সে খুব আশা নিয়ে তোমার ঘরে প্রবেশ করেছে অন্ততপক্ষে তাকে ঠকিও না নইলে দেখবে দিনশেষে তুমি শূন্য হাতে বসে আছো এ কুল ও কুল সবই তুমি হারাবে। ভালো থেকো।
বলে ফিমা একটা রিক্সা ডেকে তৎক্ষণাৎ তাতে উঠে গেল এবং বাড়ির দিকে রওনা দিল আজ তার আর ক্লাসে যাওয়া হবেনা শরীরে বিন্দু পরিমান শক্তি অবশিষ্ট নেই।
।
।
।
সকালে চোখে মুখে পানির ঝাপটা পড়তেই মাহিয়াতের ঘুম হালকা হয়ে গেলো কিন্তু সে মোটেও বিরক্ত হলো না বরং চোখ বন্ধ করে বিন্দু বিন্দু জল গুলো অনুভব করতে লাগলো এ যে তার নিত্য দিনের অভ্যাস। সে হালকা করে চোখ খুললো যদিও রাতে দেরী করে ঘুমানোর কারণে ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি কিন্তু পরবর্তী দৃশ্য দেখার লোভ সামলাতে পারলো না।
সদ্যস্নাত এক রমনী চুলে গামছা প্যাচিয়ে খোপা করেছে। পরনে তার সবুজ ও কালো রঙের মিশালো শাড়ি। নারী তার হাতের ভেজা তোয়ালে শুকাতে দিয়ে মেলে দিলো ভেজা চুল। যা অবাধ্য হয়ে খেলা করছে রমনীর কোমরের দিকে। টুপটুপ করে ঝরে যাওয়া পানিগুলো মুক্তর মত লাগছিলো মাহিয়াতের কাছে।গায়ের উপর থেকে চাদরটা নিয়ে কোনো রকম কমড়ে পেঁচিয়ে নিলো সে অর্ধ ঘুমন্ত অবস্থায় পেছন থেকে জড়িয়ে নিলো নুহাকে চোখ বন্ধ করেই ঘাড়ে মাথা রাখলো সে।চুল থেকে এক মোহনীয় ঘ্রাণ বের হচ্ছে যা তার ভেতরটাকে আবার এলোমেলো করে দিচ্ছে বড় কষ্টে চোখ খুললো সে তারপর ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,
—সবুজ শাড়ি ভেজা চুল এসব কি সকাল সকাল আমাকে পাগল করে দেবার ধান্দা হুম।এমনেতেই তো আমি তোমার জন্য অর্ধেক পাগল আর এখন তো তোমার এই আবেদনময়ী রূপ আমিকে ভস্ম করে দিচ্ছে এমনিতেও আজ অফিসে যাওয়া হলো না।তবে হবে নাকি আরেক দফা?
মাহিয়াতের গরম নিঃশ্বাস তার ঘাড়ে পরছে আর এক হাত নুহার ঠান্ডা পেটের উপর বিচরণ করতেই সে শিউরে উঠলো সাথে সাথে চোখ বন্ধ করে উপভোগ করতে লাগল মাহিয়াতের ছোট ছোট আদর গুলো ঘোরের মাঝেই জিজ্ঞেস করে বসলো,
—আচ্ছা ঐ মেয়ে কি আমার থেকে সুন্দর? তাকে বিয়ে করে কি তুমি তার রুপেও এমন মুগ্ধ হবে? এমন করে কি তাকেও আদর করবে? ভালোবাসার অন্য ভূবনে নিয়ে যাবে যেভাবে আমাকে নিয়ে যাও।
মাহিয়াত সাথে সাথে নুহাকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল। মাহিয়াতের ধাক্কায় নুহার হুস ফিরল কি বলে ফেলেছে সে তার মাহিকে। নিশ্চয়ই সে অনেক কষ্ট পেয়েছে আর সেতো বিয়ে করতে চাইছে না বরং নুহাই জোর করছে। আর সেই তাকে এত বড় একটা কথা বলে দিল?বিয়ের 9 বছরে কখনো মাহিয়াত মুহার গায়ে হাত তুলেনি না জোর গলায় কথা বলেছে। রাগ উঠলে সে বেশিরভাগ সময় চুপচাপ ও একা থাকতে পছন্দ করে রাগ কমলে আবার স্বাভাবিক হয়ে যায় কিন্তু এই প্রথম সে তাকে এত জোরে ধাক্কা দিল।নুহার খুব অভিমান হলো কিন্তু দোষ তো তারই সে কেনো তাকে এমন একটা প্রশ্ন করতে গেল? সে কি জানে না মাহি তাকে কতটুকু ভালবাসে এখন কিভাবে তার রাগ ভাঙ্গাবে?
মাহিয়াত প্রায় আধঘণ্টা শাওয়ার নিয়ে একটা তোয়ালে পেঁচিয়ে বের হলো।ঘরে এসে কাপড় পরা আরম্ভ করলো।এর মধ্যে নুহা অনেক বার সরি বলেছে বারবার কথা বলার চেষ্টা করছে কিন্তু সে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে না আর না তার দিকে তাকাচ্ছে সে তার মত কাপড়চোপড় পরে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে নিলেই নুহা এসে তাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল,
—আ’ম সরি মাহি,আ’ম রেলি ভেরি সরি।বিশ্বাস করো আমি এমনটা বলতে চাইনি কিভাবে যেন মুখ দিয়ে বের হয়ে গেছে সারাদিন শুধু মাথায় এক কথাই ঘুরপাক খেতে থাকে আমার খুব কষ্ট হয় মাহি তাই হয়তো বলে ফেলেছি আর কখনো এমন হবে না প্লিজ তুমি আমার সাথে রাগ করে থেকো না কথা বলো আমার সাথে।
মাহিয়াত দম নিলো সে জানে নুহা কথাগুলো মনের অজান্তেই বলেছে এতটুকু চিনে সে নুহাকে তাই শুধু শুধু রাগ করে থাকার কোনো মানেই হয় না।সে ঘুরে নুহাকে নিজের বাহুবন্ধনে জড়িয়ে নিলো।
—আমি রাগ করে নেই।কিন্তু সত্যি কষ্ট পেয়েছিলাম।আমি তোমাকে ভালোবাসি নুহা আমার চোখে তোমার চেয়ে সুন্দর কেউ না।দেখো এখনো বিয়েটা হয়নি তাতেই তুমি ইনসিকিউর ফিল করছো আমাকে হারানোর ভয় করছো কষ্ট পাচ্ছ।বিয়ে করলে এইসব জিনিস আরো কয়েক হাজার গুণ বেড়ে যাবে তারপর এক বছর পর যদি তাকে আমি ছেড়েও দিই আমাদের সম্পর্কটা আগের মত থাকবে না কেমন জানি একটা জরতা চলে আসবে প্লিজ নুহা তুমি বোঝার চেষ্টা করো। আমার সাথে বাড়িতে চলো দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।
নুহা মাহিয়াতের কথা এরিয়ে গেলো,
—অফিসে চলে যাও মাহি একদিন একটু লেট হলে কিছু হবে না নইলে পরবর্তীতে আবার ছুটি নিতে সমস্যা হবে।আর একটা কথা আমাকে কথা দাও প্রতিদিন একবার হলেও আমার সাথে দেখা করতে আসবে।
মাহিয়াতের যা বোঝার তা বুঝে গেছে এখন শুধু মাত্র একটাই আশা আছে তা হলো নুহার মা-বাবা।আর তার জন্যেও বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে সিড়ি দিয়ে নামার সময় তাদের সবাইকে ডাইনিং রুমে পেয়ে গেলো।সকলে বসে নাস্তা করছে।মাহিয়াতকে নামতে দেখে সবাই খুশী হয়ে গেলো শুধু নুহার বাবা আনোয়ার হোসেন আর মা নয়ন বাদে।নুহার বড় ভাই তাকে দেখে অর্ধেক খাবার খেয়ে বাইরে চলে গেল তার বড়মা খুশি হয়ে তাকে আপ্যায়ন করতে লাগলো তাকে নাস্তা দিলো তার ছোট ভাই আর বোনেরা দুলাভাইকে দেখে খুব খুশি হলো। কিন্তু তার মা বাবা চুপ ছিল।নাস্তা শেষে নয়ন জরুরী কথা আছে বলে বাচ্চাদের ঘরে চলে যেতে বললো।মেয়ে তাকে যা খুশি বলুক এগুলো ধরে রাখলে চলবে না যেভাবেই হোক মেয়ের বিয়ে হয়েছে একটা সমস্যা হয়েছে তার সমাধানও আছে কিন্তু তাই বলে আরেকটা বিয়ে সে কখনোই সমর্থন করে না। সে নিজে বুঝতে পারে সতীনের সংসার কেমন। যদিও সবাই জানে নুহার বাবা তার আয়ত্তে থাকে কিন্তু সত্যি কি তার আয়ত্তে থাকে? থাকে না। মানুষের শরীরকে আটকে রাখা যায়,কিন্তু মনকে না।আনোয়ার সাহেব প্রথম থেকেই তার প্রথম স্ত্রীকে ভালোবাসতো আর সে ছিল তার কিছুদিনের মোহ মাত্র যা বছর গড়াতেই কেটে গেছে কিন্তু দায়িত্ববোধের কারণে তাকে ছাড়তে পারে নি আর না পেরেছে লজ্জায় তার প্রথম স্ত্রী আমেনাকে আপন করে নিতে। কিন্তু নয়ন? সে তো সত্যিই ভালোবেসেছিলো তাহলে সে কেনো কষ্ট পাবে?তাইতো সারাজীবন আনোয়ার সাহেবকে নিজের মুঠোয় রেখেছে তার ভালোবাসা থেকে তাকে দূরে রেখেছে।সে যেমন ভালোবাসা পায়নি তাকেও তার ভালোবাসার থেকে দূর করে দিয়েছে এতেই তার শান্তি ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও ভালোবাসা না পাওয়ার যে কষ্ট কেমন তা বুঝুক সে। কিন্তু এতকিছুর মধ্যে যে আরো কয়েকজন কে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে তা সে বোঝেনি।সে বোঝেনি তার জেদের কারণে একজন সন্তান বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে একজন স্ত্রী স্বামীর কর্তব্য স্বামীর হক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আজ যখন সবকিছু তার মেয়ের উপর এসে পড়ল আসল যন্ত্রণাটা সে উপলব্ধি করতে পারল।
সে অনুতপ্ত সে যদি জেদ ধরে না থেকে আগেই তার স্বামীর জীবন থেকে সরে আসতে তাহলে হয়তো আজকে একটা পরিবার সুখে শান্তিতে থাকতে পারতো নিজেরও একটা ভালোবাসার সংসার হতো। সবাই জানে তার স্বামী তাকে খুবই ভালোবাসে কিন্তু আসল রহস্য তো বন্ধ ঘরের চার দেয়ালে জানে দুজন মানুষের ভেতরকার হাহাকার। সে চায় না তার মেয়ের জীবনে এমন হোক তাই আজ একটা সমাধান করেই ছাড়বে।
।
।
।
।
ফিমা বাড়িতে গিয়ে সরাসরি দরজা বন্ধ করে মায়ের ঘর থেকে আনা একটা লো পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ খেয়ে শুয়ে পড়ল। জীবনে এত ঝামেলা আর ভালো লাগে না তার মাঝে মাঝে মরে যেতে ইচ্ছে করে।কারো উপর বোঝা হয়ে থাকার চাইতে মরে যাওয়াই মনে হয় ভালো। আত্মহত্যা যদি মহাপাপ না হতো তাহলে সে কবেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতো। সবার উপর থেকে একটা বোঝা কমে যেত সে ও শান্তিতে থাকতো সাথে সবাই।
ঔষধ খাওয়ার ঘন্টা খানেকের মধ্যে সে গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলো।এক মাত্র ঘুমনোর সময় সে একটু শান্তি পায় কোনো দুশ্চিন্তা ভয় কাজ করে না কিন্তু এখন বেশিরভাগ রাত নির্ঘুম কাটে তাই মায়ের ঔষধি তার এক মাত্র ভরসা। এদিকে ফিমা ঘুমিয়ে পড়ার কিছুক্ষণ পরেই বাসায় ইয়াসির এসে হাজির হলো সে ফিমার মায়ের কাছে প্রথমে পূর্বের কৃত কর্মের জন্য ক্ষমা চাইল তারপর ফিমাকে আবার বিয়ে করার প্রস্তাব দিল বিনিময় সে টাকা দিতেও রাজি সে এও প্রতিশ্রুতি দিল প্রয়োজন পড়লে ফিমাকে বিয়ে করার আগে সে তার বর্তমান স্ত্রী কে ডিভোর্স দিবে।সে আরো বোঝালো সে তাকে যতটুকু সুখে রাখতে পারবে মাহিয়াত তাকে ততটুকু সুখে রাখতে পারবে না সেখানে সতীনের সংসার করতে হবে আরো নানান উপায়ে তাকে রাজি করানোর চেষ্টা করল কিন্তু ফিমার মা তার কথায় অনর সে কোন ভাবেই ফিমাকে তার কাছে ফেরত পাঠাবে না। দরকার হলে নদীর জলে ভাসিয়ে দিবে। পরবর্তীতে ফিমার বাবা এসে ইয়াসির কে ঘর থেকে বের করে দেয়। তবুও ইয়াসির বারবার বলছিল তাকে একটা সুযোগ দিতে কিন্তু কেউ তার কথা শুনল না।
ঘরে এত বড় একটা কান্ড হয়ে গেলো যা সম্পূর্ণ ফিমার অজানা থেকে গেলো যার কারনে তার মায়ের একদিকে দুশ্চিন্তা কম হলেও আরেকদিকে বেড়ে গেল সে জানে ইয়াসের ছেলেটা বড়ই বেহায়া স্বভাবে এত অপমানের পরেও সে বারবার আসবে বিভিন্ন ঝামেলা করতে তাই যত তাড়াতাড়ি তাদের বিয়েটা দেয়া সম্ভব ততোই ভালো হয় কিন্তু সে মেয়ের মা হয়ে কীভাবে এই কথা বলবে মাহিয়াতের মায়ের কাছে?
কিন্তু তার মনো বাসনা যে খুব জলদিই পূর্ণ হতে যাচ্ছে তা সে কল্পনাও করেনি…
চলবে…