এক আকাশ ভালোবাসি পর্ব ১৭+১৮

#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৭
#নিশাত_জাহান_নিশি

—-“এ্যা না হ্যা। জলদি দে। আমার তাড়া আছে।”

আমি বেশ হতবাক হয়ে বললাম,,,,,,

—-“আর ইউ সিরিয়াস মৃন্ময় ভাইয়া? তুমি সত্যি সত্যি মারুর বাড়ি যাবে?”

—-“আজব। এতো অবাক হওয়ার কি আছে? যেতেই পারি আমি মারুর বাড়ি। কাল থেকে কল করছি অথচ পিক করছে না। সো আমাকে ইগনোর করার ফল ওকে বুঝিয়ে দিয়ে আসব।”

আমি বাঁকা হেসে বললাম,,,,,

—-“কুচ কুচ হোতা হে, হে না?”

মৃন্ময় ভাইয়া আমার মাথায় গাড্ডা মেরে বলল,,,,,

—-“ভাসুড় হই আমি তোর। এতো বেহেয়াপনা মানায় না।”

আমি মুখটা বাঁকা করে নিজের সাথে বুঝা পড়ায় লেগে পড়লাম। আই থিংক মারু ইচ্ছে করে কল পিক করছে না। মৃন্ময় ভাইয়াকে নাকে দঁড়ি দিয়ে ঘুড়ানোর জন্য। সো এই মুহূর্তে আমার মারুকে সাথ দেওয়া উচিত। মারুর এড্রেসটা দিয়ে দেই। ইসস মারু তোর জন্য ধামাকা ওয়েট করছে। খুশিতে না আমি পাগল হয়ে যাই। পরে পাগল হবো আগে এড্রেসটা দিয়ে নেই। গলাটা ঝাঁকিয়ে আমি মৃন্ময় ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,

—–“ফার্স্টে নোয়াখালী যাবে, গ্রাম হচ্ছে কোম্পানীগঞ্জ, রোড নম্বর ৩, আব্বাস কটেজ। এই হলো মারুর এড্রেস।”

মৃন্ময় ভাইয়া শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে বলল,,,,,,,

—-“ফিরতে রাত হবে আজ। তোরা কেউ আমার জন্য ওয়েট করিস না। আসছি আমি।”

মৃন্ময় ভাইয়া বেশ ব্যস্ত ভাব নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। আমি মুখ চেঁপে হাসছি। দৌঁড়ে গিয়ে মুহিতের পকেট থেকে ফোনটা বের করে মারুর নাম্বারে কল করলাম। মুহিত আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আর ফিসফিস করে বলছে,,,,,

—–“রূপ রুমে চলো। রেডি হতে হবে। ডক্টরের সিরিয়াল ও নেওয়া হয় নি। কখন কি করব মাথায় ঢুকছে না।”

আমি মুহিতের কথায় পাওা না দিয়ে মারুর নাম্বারে কল করেই যাচ্ছি। প্রায় পাঁচ বার কল করা হয়ে গেছে অথচ মারু কলটাই পিক করছে না। রাগের পাশাপাশি ভয় ও হচ্ছে। মারু কখনো এমন করে না। ফার্স্ট কলেই অলওয়েজ পিক করে নেয়। ব্যস্ততার কারণে এমন করছে নাকি অন্য কিছু সঠিক বুঝতে পারছি না। আমি মুহিতের দিকে তাকিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললাম,,,,,,,

—-“মুহিত….মারু কল পিক করছে না। আমার বেশ টেনশান হচ্ছে।”

মুহিত আমার দু কাঁধে হাত রেখে বেশ শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—–“হয়তো ব্যস্ত আছে তাই পিক করছে না। এতে এতো টেনশান করার কিছু নেই রূপ। সব ঠিক আছে। খারাপ কিছু হলে মারু এটলিস্ট তোমাকে আগে জানাতো।”

আমি কিছুটা ভেবে চিন্তে বললাম,,,,,,,

—-“হুম তা ও ঠিক। খারাপ কিছু হলে মারু আমাকে আগেই জানাতো। হয়তো ব্যস্ত আছে বা ফোনের পাশে নেই তাই ফোনটা পিক করছে না। আমি খামোখাই টেনশান করছি।”

আচমকাই মুহিত আমাকে কোলে তুলে নিলো। মুহিত আমাকে কোলে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে হাঁটছে আর বলছে,,,,,,,

—-“ফ্রেন্ডকে নিয়ে অনেক ভাবনা চিন্তা হয়েছে। এবার নিজের শরীরটা নিয়ে এক্টু ভাবুন। একদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছেন। আপনাকে এভাবে দেখতে আমার একদমই ভালো লাগছে না।”

আমি কিছুটা আনমনা হয়ে মুহিতের চোখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,,,,,,,,

—–“তুমি ও তো অনেক শুকিয়ে গেছো মুহিত। ক্লান্তির ছাপ তোমার চোখে, মুখে ও স্পষ্ট। কিছুটা ব্যর্থতা ও আছে। কষ্টের পরিমান তো অনেক বেশি। হয়তো তা বিশ্লেষণ করতে পারব না। তুমি না খুব চাঁপা স্বভাবের। সহজে সব কিছু শেয়ার করতে চাও না। তাই তো, এই দুইদিনে এক্টাবার ও তুমি আমার কাছে লুকানো সত্যিটা শেয়ার করো নি।”

আমি কিছুটা থেমে আবার বললাম,,,,

—-“এটা আর করো না মুহিত। শেয়ার করলে কষ্ট কমে। মন ভালো হয়। মাথার চাপ কমে যায়। ডিপ্রেশন থেকে ও মুক্তি পাওয়া যায়। তুমি আমাকে ভরসা করতে পারো।”

মুহিত হালকা হেসে আমার নাকে নাক ঘঁষে বলল,,,,,,

—-“ইসসস আমার বউ দেখি অনেক বড় হয়ে গেছে। কতো চমৎকার ভাবে আমাকে বুঝাচ্ছে। আমি ও অনায়াসে সব বুঝে গেছি। এবার থেকে কোনো কিছুই আড়াল করব না। শুধু আমি না। তুমি ও কিছু আড়াল করবে না কেমন?”

আমি মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বুঝালাম। মুহিত আমাকে রুমে নিয়ে বেডের উপর বসিয়ে দিলো। আমার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মুহিত বারান্দায় চলে গেলো। হয়তো সিরিয়াল নিবে। আমি বসা থেকে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছি। শাড়ী পড়তে খুব মন চাইছে। কিন্তু এই বাড়িতে আমার এক্টা ও শাড়ী নেই। মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেলো। মুখ ফুলিয়ে চুল টা সেট করছি। ছেড়ে রাখব চুলটা। খোঁপা করব না।

প্রায় দশ মিনিট পর মুহিত এসে আমার পিছনে দাঁড়ালো। আয়নায় আমার প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে মুহিত বলল,,,,,,

—-“কি ব্যাপার? মুখটা ফুলিয়ে রেখেছ কেনো? কি হয়েছে?’

আমি গাল ফুলিয়ে বললাম,,,,,

—-“আজ তুমি আমাকে দু দুটো শাড়ী কিনে দিবে। এক্টা হলে কিন্তু হবে না।”

মুহিত মৃদ্যু হেসে আমাকে পেছন থেকে ঝাপটে ধরে বলল,,,,,,,,

—–“জাস্ট দুটো? আমি তো ভাবছি চার চারটে শাড়ী কিনে দিবো।”

আমি এক গাল হেসে বললাম,,,,,,

—-“আচ্ছা আচ্ছা চারটে কিনে দিবে। আজ আমরা অনেক শপিং করব কেমন?”

—-“তাই হবে রূপ। ডক্টরের সিরিয়াল নেওয়া হয়ে গেছে। এবার শুধু যাওয়ার পালা। তুমি তো রেডি। এবার আমাকে রেডি হতে হবে ”

মুহিত আমাকে ছেড়ে কাবার্ড থেকে প্যান্ট, শার্ট বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলো। আমি বেডের উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে আবারো মারুর নাম্বারে ট্রাই করছি। ফোনটা এবার সুইচ অফ বলছে। ভাল্লাগছে না কিছু। খুব টেনশান হচ্ছে। কি হলো মেয়েটার? খারাপ কিছু হয় নি তো? অজানা ভয়ে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে। এখন মৃন্ময় ভাইয়া ই লাস্ট ভরসা। নোয়াখালী পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেকটা সময় লাগবে। কিছুটা সময় আমাকে ওয়েট করতে হবে। মনটা বেশ কুহ গাইছে। মন বলছে কিছু এক্টা খারাপ হয়েছে। যা আমি আঁচ করতে পারছি না। কান্না পাচ্ছে খুব। মারুর সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না থাকলে ও আত্নার সম্পর্ক নিশ্চয়ই আছে। যা আমি বুঝি। আলাদা এক্টা টান অনুভব করি।

এর মাঝেই মুহিত ওয়াশরুম থেকে বের হলো। ঘড়িটা সকাল ১০:৩০ বাজছে। মুহিত খুব তাড়াহুড়ো করে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বাটন গুলো লাগিয়ে চুলটা সেট করছে আর আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে,,,,,,,,

—-“রূপ তুমি রেডি তো? ১১ টায় ডক্টরের সিরিয়াল।”

—-“হুম আমি রেডি।”

মুহিত আলমারী থেকে টাকা বের করে ওয়ালেটে পুড়ে নিলো। শেষ বারের মতো নিজেকে আয়নায় দেখে মুহিত আমার হাত ধরে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ড্রইং রুমটা পুরো ফাঁকা। বাড়ির সব ধ্বংস মহিলারা বেশ কষ্টে আছে। কারো পিছনে লাগতে পারছে না। এক্টু আগের ডোজটা খুব কড়া ছিলো। তাই হয়তো আধমরা হয়ে পড়ে আছে।

আমি আর মুহিত বাড়ি থেকে বের হয়ে গাড়িতে বসে পড়লাম। মুহিত ড্রাইভিং সিটে আর আমি ওর পাশের সিটে। মুহিত আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে হসপিটালের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো। আমি এখনো মারুর টেনশানে মরছি। কিছুতেই শান্তি পাচ্ছি না। বাড়িতে ফিরেই আগে মৃন্ময় ভাইয়াকে কল করব। মারুর হাল চাল জানতে হবে।

প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো হসপিটালের সামনে। আমি আর মুহিত গাড়ি থেকে নেমে সোজা হসপিটালের ভিতর ঢুকে গেলাম। দু তলায় উঠে ডক্টরের চেম্বারের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। সিরিয়াল অনুযায়ী আমার ডাক পড়েছে। মুহিত আমাকে নিয়ে ডক্টরের চেম্বারে প্রবেশ করল।

ডক্টর আমাকে চেইক আপ করে অনেকগুলো মেডিসিন লিখে দিলো সাথে ইনহেলার ও চেইন্জ্ঞ করে দিলো। প্রায় আধ ঘন্টার মধ্যেই আমরা ডক্টরের চেম্বার থেকে বের হয়ে সামনের ফার্মেসী থেকে মেডিসিন আর ইনহেলার কিনে গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়িতে উঠে আমি মুহিতকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,,,,,,,

—-“মুহিত…..এখন কোথায় যাবো আমরা?”

মুহিত গাড়ি স্টার্ট করছে আর বলছে,,,,,,,

—-“বাসা খুঁজতে যাবো। আমার অফিসের আশে পাশেই এক্টা ফ্ল্যাট আছে। দেখি কম ভাড়ার মধ্যে ছোট কোনো ফ্ল্যাট পাই কি না।”

—-“ওকে।”

প্রায় আধ ঘন্টা পর গাড়ি এসে পৌঁছে গেলো মুহিতের অফিসের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে আমরা অফিসের বিপরীত পাশের ফ্ল্যাটের উদ্দেশ্যে ছুটলাম। ফ্ল্যাটের ভিতর ঢুকে মুহিত ফ্ল্যাট মালিকের সাথে কথা বলছে। আর আমি পুরো ফ্ল্যাট টা ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছি। ফ্ল্যাট মালিকের ওয়াইফ এবং মেয়েরা খুব আন্তরিক আমার সাথে। বেশ হেসে হেসে কথা বলছে ওরা আমার সাথে। মুহিতকে উনারা সবাই খুব ভালো করে চিনে। তাই সবাই আমাদের সাথে বেশ বন্ধুসুলভ আচরণ করছে। মুহিতের ফিক্সড করা ফ্ল্যাট টা ছোট হলে ও খুব সুন্দর। দুই রুমে আমাদের অনায়াসে সব হয়ে যাবে।

এভাবে কেটে গেলে প্রায় দেড় ঘন্টা। দুপুর এক্টা ওভার হয়ে গেছে। আমরা এখনো ফ্ল্যাট থেকে বের হতে পারি নি। উনারা আমাদের লাঞ্চ না করিয়ে ছাড়বে না। তাই আমরা ও বাধ্য হয়ে বসে আছি। এতো কিছুর মাঝে ও মারুর কথাটা মাথা থেকে ঝাঁড়তে পারছি না। বেশ দুশ্চিন্তা হচ্ছে। ক্রমান্বয়ে ডিপ্রেশানে চলে যাচ্ছি। তবে মুহিতকে কিছু বুঝাচ্ছি না। এক্টু আঁচ করতে পারলেই আমাকে বকা ঝকা শুরু করবে। ফ্রেন্ডটা তো আমার তাই আমার খুব জ্বলছে। বাকি রা এর মর্ম কি বুঝবে?

অন্যদিকে,,,,,,,

মৃন্ময় অলরেডি মারুর এলাকায় পৌঁছে গেছে। গাড়ি নিয়ে মারুর বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর ঢুকার সাহস পাচ্ছে না। তবে মারুর বাড়িতে আজ অনেক মেহমানের আনাগোনা। কিছুক্ষন পর পর মানুষ আসা যাওয়া করছে। বাড়ির ভিতরটা ও সামান্য সাজানো গোছানো। মৃন্ময় গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতর উঁকি দিয়ে মারুকে খুঁজছে। না মারুকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তবে অনেক ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা নতুন ড্রেস পড়ে খেলছে, হাসছে। মৃন্ময়ের ব্যাপারটা খুব ঘটকা লাগছে। তাই সে হাত দিয়ে ইশারা করে এক্টা ছয় বছরের বাচ্চা মেয়েকে ওর কাছে ডাকল। মেয়েটা খিলখিল হেসে মৃন্ময়ের কাছে ছুটে এলো।

মৃন্ময় মেয়েটার গাল টেনে বেশ আহ্লাদি কন্ঠে বলল,,,,,

—-“হেই কিউটিপাই। হোয়াট’স ইউর নেইম?”

—-“মাই নেইম ইজ টায়রা। হোয়াট’স ইউর নেইম?”

—-“মাই নেইম ইজ মৃন্ময়। ইউর নেইম ইজ ভেরি বিউটিফুল।”

টায়রা কিছুটা লজ্জা পেয়ে বলল,,,,,

—-“থ্যাংকস মৃন্ময়। তুমি কি আমাকে কোনো দরকারে ডেকেছ?”

—-“হুম ডিয়ার। খুব আর্জেন্ট দরকার। আচ্ছা….. তুমি মারুকে চিনো?”

টায়রা এক ভ্রু উঁচু করে বলল,,,,,,

—-“মারুকে চিনি কিন্তু তোমাকে চিনি না। কে তুমি? আর কেনই বা আমার মারুকে খুঁজছ?”

মৃন্ময় গলাটা ঝাঁকিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,

—-“আমি মারুর ফ্রেন্ড বেবি। মারুর সাথে দেখা করতে চাই। বাই দ্যা ওয়ে তুমি মারুর কি হও?”

—-“মারু আমার ছোট খালামনি বুঝলে?”

—-“হুম বেবি বুঝেছি। আচ্ছা…. আজ কি তোমাদের বাড়িতে কোনো প্রোগ্রাম আছে?”

—-“হুম আছে তো। তাই তো আজ আমাদের বাড়িতে এতো মেহমান। দেখেছ, আজ আমাদের বাড়িটা কতো সুন্দর করে সাজানো হয়েছে?”

—-“হুম দেখছি তো। আচ্ছা বেবি তুমি কি আমাকে এক্টা হেল্প করতে পারবে?”

টায়রা মৃন্ময়ের গাল টেনে বলল,,,,,

—-“তুমি না অনেক কিউট এন্ড হ্যান্ডসাম। তাই আমি তোমাকে হেল্প করতে রাজি!”

মৃন্ময় এক গাল হেসে বলল,,,,,,

—-“বেবি তুমি কি আমাকে মারুর সাথে দেখা করিয়ে দিতে পারবে? বিনিময়ে আমি তোমাকে অনেকগুলো চকলেট কিনে দিবো।”

টায়রা জিভ কেটে বলল,,,,,,

—-“ইসসসস, আজ তো মারুকে দেখতে আসবে। দেখা করানো যাবে না। তুমি এক কাজ করো, চকলেট গুলো আমাকে ফ্রিতে দিয়ে দাও।”

মৃন্ময়ের মুখটা সাথে সাথে কালো হয়ে গেলো। চোখের কোণে পানি টলমল করছে। মৃন্ময় আর দেরি না টায়রাকে ঝাঁকিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমাকে মারুর রুম টা দেখিয়ে দিবে প্লিজ? ওর সাথে আমার আর্জেন্ট দরকার আছে।”

টায়রা মুখটা কালো করে বলল,,,,,

—-“নানুভাই আমাকে খুব বকবে। আমি পারব না ইয়াং ম্যান।”

মৃন্ময় টায়রাকে ক্রস করে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। পুরো বাড়িতে মহিলা আর পুরুষরা খোশ গল্প করছে। মৃন্ময় দৌঁড়ে বাড়ির ড্রইং রুমে ঢুকে গেলো। পুরো ড্রইং রুমে চোখ বুলিয়ে ও মুন্ময় মারুকে খুঁজে পেলো না। ড্রইং রুমে মারুর আম্মু, আব্বু, ভাই, বোন, ফুফু, খালামনিরা সবাই বসে আছে। মৃন্ময়কে দেখে উপস্থিত সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল। মারুর আব্বু আব্বাস আহমেদ চোখে, মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটিয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“কে আপনি? আমার বাড়িতে কি করছেন?”

মৃন্ময় চোখে জল নিয়ে চেঁচিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি মারুর সাথে দেখা করতে এসেছি। কেউ আমাকে বাঁধা দিতে আসবেন না ওকে?”

কথাটা বলেই মৃন্ময় সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেলো। প্রতিটা রুমে ঢুকে ঢুকে মৃন্ময় মারুকে খুঁজছে। ডান পাশের কর্ণারের রুমের দরজা খুলে মৃন্ময় মারুকে সাজ গোজ অবস্থায় দেখতে পেলো। লাল টুকটুকে শাড়ী পড়ে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে মারু। মারুর সাথে আরো তিনজন মেয়ে বসে আছে। রুমে কারো উপস্থিতি পেয়ে মারু চোখ তুলে সামনের দিকে তাকালো। মৃন্ময়কে দেখা মাএই মারুর চোখে জল চলে এলো। স্তব্ধ হয়ে বসে আছে মারু। মৃন্ময় ও চোখে একরাশ জল নিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মৃন্ময়ের চোখে এক ঝুলি প্রশ্নের আভাস দেখা যাচ্ছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সে তব্দা লেগে আছে।

আচমকাই আব্বাস আহমেদ দৌঁড়ে এসে পেছন থেকে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“এই যে মিঃ আপনার মধ্যে কি সামান্য তম ভদ্রতা নেই। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে আমার মেয়ের রুমে ঢুকে পড়লেন। এক্ষনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এক্টু পরেই ছেলে পক্ষরা চলে আসবে।”
#এক_আকাশ_ভালোবাসি
#পার্ট_১৮
#নিশাত_জাহান_নিশি

—“এই যে মিঃ আপনার মধ্যে কি সামান্য তম ভদ্রতা নেই। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে আমার মেয়ের রুমে ঢুকে পড়লেন। এক্ষনি আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এক্টু পরেই ছেলে পক্ষরা চলে আসবে।”

আব্বাস আহমেদের কথায় পাওা না দিয়ে মৃন্ময় দৌঁড়ে গিয়ে মারুর মুখোমুখি দাঁড়ালো। মারু এক দৃষ্টিতে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখ থেকে ওর টলটলিয়ে পানি পড়ছে। মৃন্ময় কান্না জড়িত কন্ঠে মারুকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,,

—-“এসব কি হচ্ছে মারু? তুমি এভাবে সং সেজে বসে আছো কেনো? আর তোমার বাবা ই বা এসব কি বলছে?”

মারু মৃন্ময়ের থেকে চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে গম্ভীর কন্ঠে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,,

—-“আব্বু যা বলছে ঠিক বলছে মৃন্ময়। আপনি এখনি এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।”

মৃন্ময় দাঁত কিড়মিড় করে জোরে চেঁচিয়ে বলল,,,,,

—-“আর ইউ ক্রেইজি মারু? আমি কিছুতেই এই বাড়ি থেকে বের হবো না। যদি বের হতে হয় তবে তোমাকে সাথে নিয়ে বের হবো।”

মারু বসা থেকে উঠে মৃন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল,,,,,,,

—-“প্লিজ মৃন্ময় আপনি বুঝার চেষ্টা করুন। আমি কিছুতেই আপনার সাথে কোথাও যেতে পারব না। এক্টু পর পাএ পক্ষ আমাকে দেখতে আসবে।”

মৃন্ময় ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,,,,,

—-“আসলে আসুক। আই জাস্ট ডোন্ট কেয়ার। আমি তোমাকে ছাড়া এই বাড়ি ছাড়ছি না। ওকে?”

আচমকাই তিনজন মাঝ বয়সী লোক মৃন্ময়ের দিকে তেড়ে এসে বলল,,,,,,

—-“এই কে আপনি? মারুর সাথেই বা আপনার কিসের কথা? এক্ষনি রুম থেকে বের হোন। আমরা কোনো ঝামেলা চাইছি না। ভালোয় ভালোয় রাস্তা মাপেন।”

মৃন্ময় চোয়াল শক্ত করে ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,,

—-“আগে বলুন আপনারা কে? আমার আর মারুর মাঝখানে আপনারা কেনো বাম হাত ঢুকাতে এসেছেন?”

লোক গুলো কিছু বলার আগেই মারু চেঁচিয়ে বলে উঠল,,,,,,,

—-“উনারা আমার জিজু মৃন্ময়। ওদের সাথে ঠিক ভাবে কথা বলুন প্লিজ।”

মৃন্ময় মারুর দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—-“আমি তো উনাদের সাথে ঠিক ভাবেই কথা বলছি মারু। উল্টে উনারা আমার সাথে রুড বিহেভ করছে। উনারা কেনো আমাকে রাস্তা মাপতে বলছে? কেনো আমাকে চলে যেতে বলছে?”

মারু চোখ জোড়া বন্ধ করে এক নিশ্বাসে বলে উঠল,,,,,,,

—-“বলছে কারণ এক্টু পর আমাকে দেখতে আসবে। পাএ পক্ষের কেউ আপনাকে আমার সাথে একই রুমে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। ওরা আমার বিয়েটা ভেঙ্গে দিবে।”

মৃন্ময় হতবাক হয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“এটা তো কথা ছিলো না মারু! তোমার উচিত ছিলো আমাকে একবার সুযোগ দেওয়া। সম্পর্ক তৈরীর আগেই তুমি শেষ করে দিচ্ছ? সামান্য বিয়ে ভেঙ্গে যাবে বলে তুমি আমাকে চলে যেতে বলছ? তাহলে কি তোমার ঐদিনের বলা প্রতিটা কথাই মিথ্যে ছিলো মারু?”

আব্বাস আহমেদ চোখ লাল করে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। সাথে মারুর জিজু রা ও। মারু সবার চোখের দিকে তাকিয়ে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে চোখের জল ছেড়ে বলল,,,,,,

—-“হুম মিথ্যে ছিলো। আমি আপনার সাথে মজা করেছি মৃন্ময়। প্লিজ ঐদিনের বলা সব কথা ভুলে যান। আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। প্লিজ লিভ মি।”

মৃন্ময় চোখে জল নিয়ে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। আব্বাস আহমেদ গলাটা ঝাঁকিয়ে পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা বাড়ির মহিলাদের উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“এই তোমরা মারুকে অন্য রুমে নিয়ে যাও। ছেলেটার সাথে আমরা কথা বলছি।”

মারুর আম্মু, দুজন বড় বোন, ফুফু আর খালামনি এসে মারুর হাত ধরে মারুকে রুম থেকে বের করছে। মারু কাঁদছে আর মৃন্ময়কে ফিরে ফিরে দেখছে। ওর অশ্রুসিক্ত চোখে অনেক না বলা কথাই ব্যক্ত আছে। মৃন্ময়ের দৃষ্টি কঠোর। সে কিছুতেই মারুর চোখের ভাষা বুঝতে চাইছে না। সে শুধু মুখের কথা শুনতে চাইছে। মারুর মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনতে চাইছে, মারুর হাত ধরে এই বাড়ি ছাড়তে চাইছে। মারুর হৃদয় ভাঙ্গা কথা গুলো মৃন্ময়কে দারুনভাবে ব্যথীত করছে। মারু সব বুঝতে পারছে কিন্তু সে নিজেকে গুটিয়ে রেখেছে। কিছুতেই যেনো নিজেকে মুক্ত করতে চাইছে না। হয়তো কোনো বাঁধা আছে নয়তো কোনো শর্ত আছে। মারুকে সবাই টানতে টানতে রুম থেকে বের করে নিচ তলার এক্টা রুমে বন্দী করে দিলো। বাইরে থেকে দরজা আটকে দিয়েছে। মারু দরজায় পিঠ ঠেঁকিয়ে ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে আর বলছে,,,,,

—-“আপনি চলে যান মৃন্ময়। এখানে থাকলে গ্রামের লোকরা আপনাকে মার ধর করবে। সাথে আমার ফ্যামিলি মেম্বাররা তো আছেই। আমার পরিবার আমাকে ঠকিয়েছে মৃন্ময়। মিথ্যে বলে আমাকে বাড়িতে ডেকেছে। আমাকে জোর করে বিয়ে দেওয়ার জন্য। বিয়ের প্রসঙ্গ উঠাতে আমি সবাইকে আপনার কথা বলেছি মৃন্ময়। কিন্তু ওরা সাথে সাথেই নাকোচ করে দেয়। আমাদের ফ্যামিলিতে ভালোবেসে বিয়ে করাটা অন্যায়, ঘোর অন্যায়। ওদের দৃষ্টিতে পাপ। শুধু আমার ফ্যামিলি না গ্রামের মানুষরা ও তাই মনে করে। গ্রামের চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করা হয়েছে। অনেক আগে থেকেই সবাই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। চেয়ারম্যানের ফ্যামিলি মেম্বাররা খুব বাজে আর নিকৃষ্ট। সাথে উনাদের ছেলে ও। ক্ষমতা পাওয়ার লোভে আমার বাবা আমাকে বেঁচে দিচ্ছে মৃন্ময়। আমি মুখ খুলতে পারছি না। মুখ খুললেই ওরা আপনাকে একা পেয়ে মেরে দিবে। এতোগুলো মানুষের সাথে আপনি একলা একা কিছুই করতে পারবেন না। আপনাকে হার মানতেই হবে। এর চেয়ে ভালো আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যান। আমাকে ভুলে অন্য কাউকে নিয়ে বাঁচুন। আমি না হয় আপনার সুখ দেখেই মন ভরিয়ে নিবো। আমি কখনো চাইব না আমার জন্য আমার ভালোবাসার মানুষটা কষ্ট পাক। আমার কথা চিন্তা করে আপনি এতো দূর ছুটে এসেছেন এতেই আমার শান্তি। এর চেয়ে বেশি কিছু আমার চাই না। জানি না আপনি আমাকে সত্যিই ভালোবাসেন কিনা। তবে মন বলছে, হি ইজ ফল ইন লাভ।”

মারু হাত পা ছুড়াছুড়ি করে কাঁদছে। কিছুতেই থামছে না। কান্নার মাঝখানেই কিছু এক্টা ভেবে মারু বসা থেকে উঠে বেডের পাশে দাঁড়িয়ে বালিশের তলা থেকে এক্টা ফোন করে খুব মনযোগ দিয়ে কারো নাম্বারে কয়েকটা ম্যাসেজ সেন্ড করল। কাজ শেষে আবার ম্যাসেজ গুলো ডিলেট করে মারু ফোনটা জায়গা মতো রেখে দিলো। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আবারো অঝড়ে কাঁদতে লাগল মারু।

অন্যদিকে, মৃন্ময়কে ঘিরে রেখেছে মারুর তিন জিজু আর আব্বু। এক প্রকার চেঁপে ধরে রেখেছে ওকে। হাত দুটো শক্ত করে ধরে আছে মারুর জিজুরা। মৃন্ময় থম মেরে দাঁড়িয়ে আছে। মারুর বলা প্রতিটা কথা মৃন্ময়ের কানে বাজে ভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। মৃন্ময় কিছুতেই মারুর বলা কথা গুলো বিশ্বাস করতে পারছে না। আব্বাস আহমেদ মৃন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“এক্ষনি তুই এই বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবি। আমার মেয়েকে আমি তোর কাছে বিয়ে দিবো না। ভদ্র ভাষায় বুঝিয়ে বলছি ওকে?”

মৃন্ময় গাঁয়ের জোর খাটিয়ে সবার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সামনের চুল গুলো টেনে নিজেকে কিছুটা কন্ট্রোল করে বলল,,,,,

—-“ওকে ফাইন। আমি এই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো। তবে এক্টা শর্তে।”

আব্বাস আহমেদ এক ভ্রু উঁচু করে বলল,,,,,

—–“কি শর্ত?”

—-“আমি মারুর সাথে আলাদা করে কথা বলতে চাই। জাস্ট পাঁচ মিনিটের জন্য।”

আব্বাস আহমেদ রাগী কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“কক্ষনো না। পার্সোনালী কোনো কথা হবে না। যা বলার আমাদের সামনে বলতে হবে।”

—-“আমার শর্ত মানতে হবে। না হয় আমি এখান থেকে এক চুল ও নড়ব না।”

—-“ভয়ে দেখাস না আমাদের। তোকে এখানে মেরে পুতে দিলে ও কেউ টের পাবে না। এটা আমার গ্রাম, আমার বাড়ি। তোকে মেরে দিলে ও কেউ আমাকে কিছু জিগ্যেস করতে আসবে না। এখানে শুধু আমার জোর খাটবে, তোর না।”

মৃন্ময় দাঁতে দাঁত চেঁপে সব অপমান সহ্য করে নিজেকে কিছুটা শান্ত করে বলল,,,,,,

—-“ওকে ফাইন। আমি আপনাদের সামনেই মারুর সাথে কথা বলব। প্লিজ আমাকে মারুর কাছে নিয়ে চলুন। কথা বলার সুযোগ দিন।”

আব্বাস আহমেদ উনার তিন মেয়ে জামাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ওকে নিয়ে নিচে চলো। হাত দুটো চেঁপে ধরো। যেনো কিছুতেই মারুর আশেপাশে ঘেঁষতে না পারে।”

আব্বাস আহমেদের কথা শেষ হতে না হতেই মারুর তিন জিজু মৃন্ময়ের হাত চেঁপে ধরল। মৃন্ময় এক্টা টু শব্দ ও করে নি। সে এক্টা ঘোরের মধ্যে আছে। নিজেকে কিছুতেই স্বাভাবিক করতে পারছে না। যা তা ঘটে যাচ্ছে ওর সাথে। মৃন্ময় পুরো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আছে।

সবাই মৃন্ময়কে টেনে হেছড়ে নিচ তলায় নিয়ে এলো। আব্বাস আহমেদ মারুর বড় বোন মিনাকে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—–“মিনা…..মারুকে রুম থেকে বের করো। ছেলেটা ওর সাথে কিছু কথা বলেই চলে যাবে।”

মিনা মাথা নাঁড়িয়ে রুমের দরজা খুলে মারুকে খাটে বসা অবস্থায় দেখতে পেলো। খাটে বসে বসে মারু ঢুকরে কাঁদছে। মিনা তেড়ে গিয়ে মারুর হাত ধরে মারুকে দরজার দিকে টেনে নিয়ে আসছে আর বলছে,,,,,,

—-“তোর আশিক তোর সাথে কথা বলবে। বেপাশ কথা মুখ থেকে বের করবি তো নিজের জীবনটা নিজেই খুইয়ে বসবি। আব্বুকে কিন্তু ভালো করে চিনিস তুই।”

মারু কেবল কেঁদেই যাচ্ছে আর বিড়বিড় করে বলছে,,,,,,

—–“মৃন্ময় আপনি এখনো কেনো এতো অপমান সহ্য করে পড়ে আছেন? কেনো আমার সাথে কথা বলতে চাইছেন? বার বার আপনার মন ভাঙ্গতে আমার একদম ভালো লাগছে না। ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে আসছে আমার। আমি জানতাম আপনি এতো সহজে এখান থেকে নড়বেন না। তাই তো মুহিত ভাইয়ার নম্বরে টেক্সট করে দিয়েছি আপনাকে এসে এখান থেকে নিয়ে যেতে। ওরা হয়তো আসছে ও।”

মিনা টেনে হেছড়ে মারুকে মৃন্ময়ের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিলো। মৃন্ময় মলিন হেসে মারুর দিকে তাকিয়ে আছে। মারু অশ্রুসিক্ত চোখে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আচমকাই মৃন্ময় মারুর হাত জোড়া চেঁপে ধরে কাঠ কাঠ গলায় বলল,,,,,

—-“মারু প্লিজ তুমি সবাইকে বলে দাও, তুমি আমাকে ভালোবাসো। বাকিটা আমি বুঝে নিবো। তোমার মতের বিরুদ্ধে কেউ তোমাকে বিয়ে দিতে পারবে না। আমি পুলিশ এন্ট্রি করব। তখন ওরা বাধ্য হবে তোমাকে আমার হাতে তুলে দিতে। তোমার উপর সককিছু ডিপেন্ড করছে মারু। প্লিজ একবার বলে দাও তুমি এই বিয়ে করবে না। তুমি আমাকে ভালোবাসো শুধু আমাকে।”

মারু এক ঝটকায় মৃন্ময়ের হাতটা সরিয়ে জোরে চিৎকার দিয়ে মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি আপনাকে ভালোবাসি না মৃন্ময়। আব্বুর ঠিক করা ছেলেকেই আমি বিয়ে করব। আপনি প্লিজ এই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আমি আপনার মুখটা ও দেখতে চাই না।”

মৃন্ময় কাতর কন্ঠে মারুর দিকে তাকিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি তোমাকে ভালোবাসি মারু। আই লাভ ইউ লট। তুমি চলে আসার পর আমি প্রতিটা মুহূূতে মুহূর্তে তোমাকে ফিল করেছি। তোমাকে এক্টাবার দেখার জন্য ছটফট করেছি। এর আগে বুঝি নি আমি তোমাকে ভালোবাসি। যখন বুঝেছি তখন তুমিই আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছ? প্লিজ এটা করো না মারু। তুমি সবাইকে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো, আমাকেই বিয়ে করতে চাও।”

মৃন্ময়কে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না মারুর জিজুরা। আব্বাস আহমেদের ইশারায় উনারা মৃন্ময়কে টানতে টানতে বাড়ি থেকে বের করছে। মৃন্ময় এরপর ও চেঁচিয়ে বলছে,,,,,,,

—-“মারু প্লিজ তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিও না। এখনো সুযোগ আছে, তুমি সত্যিটা স্বীকার করো। তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে আমি এতো এতো অপমান সহ্য করছি। আমি ভাইলেন্ট হলে কিন্তু তোমার ফ্যামিলির এক্টা মানুষ ও আস্ত থাকবে না। তুমি জাস্ট একবার হ্যাঁ বলো, বাকিটা আমি বুঝে নিবো।”

মারু ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ল। মারুর কানে শুধু এক্টা কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে, আমি তোমাকে ভালোবাসি মারু। আই লাভ ইউ লট। মারু কানে হাত দিয়ে চিল্লিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলল,,,,,,

—-“মৃন্ময় আমি ও আপনাকে ভালোবাসি। তিন তিনটে বছর ওয়েট করেছি আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শোনার জন্য। যখন শুনলাম তখন আপনি আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নিয়তি এতো নির্মম কেনো মৃন্ময়? কেনো আমাদের এক হতে দিচ্ছে না? কেনো?”

মারুর আব্বু রাগে গিজগিজ করে মারুকে টেনে হেছড়ে রুম বন্দি করে দিলো।

মৃন্ময়কে মারুর জিজুরা গেইটের বাইরে বের করে পেট বরাবর এক লাথি বসিয়ে দিলো। মৃন্ময় ওর গাড়ির সাথে ফিট হয়ে পড়ে আছে। ব্যাথায় কুঁকিয়ে উঠছে মৃন্ময়। মারুর জিজুরা ঝাঁঝালো কন্ঠে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“এটা আমাদের গ্রাম। এখানে তোর কোনো ক্ষমতা খাঁটবে না। নেহাত আমরা ভদ্রলোক বলে তোকে আস্ত রেখেছি। গ্রামের অন্য কেউ হলে তোকে মেরে পুঁতে দিতো। ভালোয় ভালোয় বাড়ি ফিরে যা। গাড়ি নিয়ে ফুট। পাঁচ মিনিটের মধ্যে দফা হ এখান থেকে।”

মৃন্ময় পেটে হাত দিয়ে মাথাটা নিঁচু করে রাগে ফুসছে। কিছু বলতে পারছে না সে। দু একজনের মাথা ও ফাঁটাতে পারছে না। মারুর পরিবার বলেই হয়তো এতো দুর্বলতা। যেখানে মারুর ই সম্মতি নেই সেখানে অন্যদের সাথে লড়াই করাটা বেকার। মৃন্ময় শরীরের চেয়ে ও মনে আঘাত পেয়েছে বেশি। মারুর প্রতি জমা রাগ, অভিমানে ওর ভালোবাসাটাকে অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছে। মৃন্ময় শেষ বারের মতো চোখ তুলে মারুর বাড়িটার দিকে তাকালো। এরপর চোখের জল গুলো মুছে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট করে দিলো। মারুর জিজুরা স্বস্তির শ্বাস ফেলে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। মৃন্ময় ড্রাইভ করে গাড়িটা মারুর বাড়ির সামনে থেকে সরিয়ে এক্টা শুনশান জায়গায় পার্ক করল। স্টিয়ারিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে মৃন্ময় মৃদ্যু চিৎকার দিয়ে বলল,,,,,,

—-“আমি হাল ছাড়ব না মারু। তোমাকে নিয়েই আমি ঢাকা ফিরব। আমি জানি তুমি বাধ্য হয়ে বিয়েটা করছ। তোমার চোখে আমি একরাশ ভালোবাসা দেখেছি। যার মালিক একমাএ আমি। আর কেউ না।”

কথাগুলো বলেই মৃন্ময় প্যান্টের পকেট থেকে ফোনটা বের করে মুহিতের নাম্বারে কল করল। সাথে সাথেই মুহিত কলটা পিক করে বেশ ব্যস্ত কন্ঠে বলল,,,,,,

—–“ভাইয়া তুই কই? আমরা আসছি তোর কাছে। আর এক ঘন্টা লাগবে পৌঁছাতে। আমরা নোয়াখালীর আশে পাশেই আছি।”

—–“হোয়াট? তোদের কে আসতে বলেছে?”

—-“মারু। তোকে নিয়ে ঢাকা ফিরতে বলেছে।”

—-“আমি একা যাবো না মুহিত। মারুকে সঙ্গে নিয়ে যাবো।”

—-“আমরা থোরাই না তোকে একা নিয়ে যাবো! সাথে ভাবীকে ও নিয়ে যাবো। প্ল্যান ইজ রেডি ওকে? জাস্ট চিল ব্রো!”

আচমকাই রূপসা ফোনটা কেড়ে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে মৃন্ময়কে উদ্দেশ্য করে বলল,,,,,,

—-“ভাইয়া তুমি প্লিজ মারুর মুখের কথা বিশ্বাস করো না। মারু সত্যি সত্যি তোমাকে ভালোবাসে। আমি জানি মারু তোমাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। ওর আব্বু খুব খারাপ একজন লোক। শুধু ওর আব্বু না ওদের গ্রামটাই খুব খারাপ। জোর করে মেয়েদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে বিয়ে দিয়ে দেয়। এটাই ওদের গ্রামের নিয়ম। সেই নিয়মে মারু ও আটকা পড়েছে। আমরা সবাই মিলে মারুকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করব। দেখতে আসলেই যে বিয়ে হয়ে যাবে এমন না। কয়েকটা দিন সময় লাগবে। এই সময়ে আমরা মারুকে ঐ বাড়ি থেকে বের করে আনব। তোমাদের কিছু করতে হবে না। সব আমি করব। মারুকে কিভাবে বাড়ি থেকে বের করতে হয় আমার খুব ভালো করে জানা আছে। আমাকে ওর পরিবারের সবাই খুব ভালো করেই চিনে। ওদের বাড়িতে আমি মারুর ফ্রেন্ড হিসেবে ঢুকে যাবো। তাহলে ওরা আমাকে সন্দেহ করবে না। মারুর সাথে থেকেই আমরা সব প্ল্যান করব। তুমি আর মুহিত ওদের গ্রামেই কোথাও এক্টা গাঁ ঢাকা দিয়ে থাকে যাবে। জাস্ট টাইমলী আমার সাথে কন্ট্রাক্ট করবে তাহলেই হবে। তুমি প্লিজ ভেঙ্গে পড়ো না ভাইয়া। আমাদের জাস্ট এক ঘন্টা সময় দাও।”

মৃন্ময় বাঁকা হেসে বলল,,,,,

—-“ওকে ডান। তোরা আসলেই মিশন শুরু হবে।”

#চলবে,,,,,,,,,,,

(আফনেগো নাইচ, নেক্সট দেইখতে দেইখতে আই কোমায় চলি যাইয়ের। আফনেগো কৃপা চাই। এট্টুসখানি গঠন মূলক মন্তব্য করিয়েন।)
#চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here