এক জীবনে অনেক জীবন পর্ব ৭

#এক_জীবনে_অনেক_জীবন(৭)
********************************

ছেলেকে কয়দিন ধরে বাসায় থাকতে দেখে নিলুফার বেশ চিন্তায় পড়ে গেছেন । মাত্রই চাকরি পেয়েছে ছেলেটা আর এর মধ্যেই কেন যে অফিস যাওয়া ছেড়ে দিলো বুঝতে পারছেন না তিনি । কয়েকবার জিজ্ঞেস করার পরও সাদাত কী সব বললো তাকে, ঠিক বুঝতে পারেননি তিনি । বেলের শরবত নিয়ে সাদাতে’র রুমে এসে দেখলেন খুব মনোযোগ দিয়ে ক্যালকুলেটরে হিসাব করছে সাদাত । শরবতের গ্লাসটা টেবিলে রেখে ছেলের পাশে বসে নিলুফার জিজ্ঞেস করলেন –

কী রে তাবাসসুমের বাড়িতে গিয়ে কী করলি বললি না তো ? এখন তো শাফিনও নেই । কার সাথে গল্প করলি, জারা ছিল বাড়িতে ?

হুম ছিল, ছোট খালা আর জারা ছিল । খালুর সাথে দেখা হয়নি । জানো মা এই প্রথম ছোট খালার বাড়িতে যেয়ে আমার ভিষণ মন খারাপ হয়েছে । শাফিন ছাড়া বাড়িটা যেন কেমন ফাঁকা লাগলো । শাফিনের রুমটায় বসে আমার এতো কান্না পাচ্ছিল মা, কী বলবো তোমাকে । খুব খারাপ লেগেছে ।

আমি যাইনি বলে তাবাসসুম ফোন করে খুব রাগ করলো আমার ওপর ।

তোমাকে তো বললাম আমার সাথে যেতে, তুমিই তো গেলে না ।

এর পরেরবার নিয়ে যাস আমাদের । আচ্ছা কয়দিন ধরে তোর চাকরি নিয়ে কী বলছিস আমি তো বুঝতে পারছি না । তোর অফিসে কী হয়েছে ? চাকরি চলে যায়নি তো আবার ?

ছোট খালা তাকে বলেছে চাকরি যাওয়ার কথাটা এখন মা’র কাছে না বলতে । খালুর অফিসে হয়তো এ সপ্তাহের মধ্যে কিছু একটা হয়ে যাবে । সাদাত তাই গোপন করে গেল কথাটা । বললো –

না মা, চাকরি কেন যাবে ? অফিসে কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে মালিকানা নিয়ে, তাই অফিস আপাততঃ বন্ধ রেখেছে ।

আর খুলবে না ? যদি না খোলে নতুন আরেকটা চাকরি কী পাবি বাবা ?

আরে মা এগুলো তো সাময়িক ঝামেলা, মিটে যাবে তাড়াতাড়ি । কেন আমি যে কয়দিন ধরে তোমার কাছে কাছে থাকছি, তোমার ভালো লাগছে না বুঝি ?

আরে না তা কেন ? তোরা চোখের সামনে থাকলে খুব শান্তি লাগে আমার । চাকরিটা পাওয়াতে খুব নিশ্চিন্ত হয়েছিলাম রে ।

তুমি নিশ্চিন্তই থাকো মা, আমার চাকরির কিছু হয়নি ।

সানজিদার ভর্তির টাইম চলে আসছে ।

হঠাৎ সাদাতে’র মনে পড়লো অফিস থেকে যে টাকা পেয়েছিল সেটা এখনো মা’কে দেয়াই হয়নি । সে তাড়াতাড়ি উঠে যেয়ে আলমারিটা খুলে খামটা বের করলো । পুরো দু মাসের টাকা দিলে মা সন্দেহ করতে পারে তাই এক মাসের বেতন ড্রয়ারে রেখে বাকি এক মাসের বেতন এনে মা’র হাতে দিয়ে বললো –

তোমাকে তো দিতে ভুলেই গিয়েছিলাম মা , এই নাও এ মাসের বেতনের টাকাটা রাখো ।

নিলুফার খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন –

মাস তো এখনো শেষ হয়নি, বেতন দিয়ে দিলো এতো তাড়াতাড়ি !

হুম, এ মাসে যদি ঝামেলা না মেটে তাই বেতনটা আগেই দিয়ে দিলো ।

কী আশ্চর্য ব্যাপার বল তো, এতো ভালো মানুষ আছে এখনো দুনিয়ায় ?

হ্যাঁ মা এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে এই দুনিয়ায় । তাঁদের কারণেই তো টিকে আছে পৃথিবী । এখন আর খামোখা টেনশন কোরো না তো মা । তুমি যদি এভাবে টেনশন করো তাহলে কাল থেকে কিন্তু অফিস টাইমে বাসা থেকে বেরিয়ে যাবো ।

কোথায় যাবি ?

ঘুরে বেড়াবো রাস্তায় রাস্তায় । আমি বাসায় থাকলেই তো তোমার টেনশন বাড়ে ।

আমি কী তাই বললাম? এই কথাটাই তো আমাকে আগে বললে পারতিস । কী কী বলছিলি আমি তো বুঝতেই পারছিলাম না । নে খা, শরবতটা খেয়ে নে ।

মা রুম থেকে বেরিয়ে যেতে সাদাত হাঁপ ছেড়ে বাঁচলো । এই ক’দিন ধরে বুঝতে পারছিলো না কী বলে মা’কে বুঝাবে । মা’র সাথে সে কখনোই মিথ্যে বলতে পারে না । বিষয়টা ম্যানেজ করতে পেরে এখন সত্যিই একটু নির্ভার লাগছে । খালুর অফিসে চাকরিটা হয়ে গেলে সে নিজেও এই টেনশন থেকে রেহাই পায় ।
.
.

শাফিনের আজ জন্মদিন । সকাল থেকেই তাবাসসুমের মনটা ভিষণ রকমের খারাপ । একটু পর পর চোখ ভরে উঠছে জলে । ছেলের সাথে কথা বলার পর থেকে তাঁর মন খারাপের মাত্রাটা আরো বেড়ে গেছে । তিনি যখন ফোন করলেন ছেলে তখন মিল্ক শেক আর ফ্রুট সালাদ তৈরি করছে । বাড়ির সবাই কোথায় জিজ্ঞেস করতেই শাফিন বললো –

চাচারা কয়েক বন্ধুর ফ্যামিলি মিলে উইকএন্ড স্পেশাল পার্টিতে গেছে । আমাকেও খুব জোরাজোরি করেছিলো যাওয়ার জন্য কিন্তু আমার যেতে ইচ্ছে করেনি তাই বাসায় রয়ে গেছি ।

তুমি সালাদ খাচ্ছো কেন ! বাসায় কোনো খাবার নেই ?

ফ্রিজ ভরা খাবার আছে মা । চাচী বিরিয়ানিও করে রেখে গেছে কিন্তু ওগুলো এখন খেতে ইচ্ছে করছে না । মন চাইলে পরে খাবো । তুমি কী করেছো তাই বলো ? আমাদের জন্মদিন আসলেই তো তোমার টেবিলের এমাথা-ওমাথা ভরে যায় খাবারে । আজ কিছু করোনি মা ?

ছেলের কথা শুনে বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো তাবাসসুমের । কান্না আটকে বললেন –

করেছি তো, টেবিল ভরে ফেলিনি কিন্তু তোমার পছন্দের বিফ ভুনা আর কাশ্মীরি পোলাও করেছি । রোজা এসেছে কেক নিয়ে ।

শাফিন বুঝতে পারে মা কথা বলতে বলতে চোখের পানি মুছছে । কপট রাগ দেখিয়ে সে বললো –

ফোন করলেই যদি তুমি এমন মন খারাপ করো তাহলে কিন্তু সবকিছু ছেড়েছুড়ে এখনই চলে আসবো দেশে । আমি কিন্তু সত্যি বলছি মা ।

থমথমে কন্ঠে তাবাসসুম বললেন –

তাড়াতাড়ি পড়া শেষ করে চলে এসো ।

তুমি এমন মন খারাপ করে থাকলে আমার পড়াতেও মন বসবে না মা । প্লিজ একটু হাসো । এমনিতেই আজকে মনটা খারাপ তোমাদের থেকে এতো দূরে আছি বলে । তুমি আরো মন খারাপ করে দিও না মা ।

তাবাসসুম নিজের কষ্টটাকে চাপা দিয়ে জোর করে হেসে বললেন –

সাদাত এসেছিল সেদিন । প্যাকেটগুলো সব দিয়ে দিয়েছি । কী এতো রাখা ছিল ওগুলোর ভেতর?

নতুন কতোগুলো শার্ট, গেঞ্জি আর কিছু গল্পের বই রেখেছিলাম ওর জন্য । আমার ল্যাপটপটাও দিয়েছি ওকে । কথা হয়েছে কাল রাতে ওর সাথে । ঠিক আছে মা রাখছি এখন । আপু কেক নিয়ে এলে ভিডিও কল দিও । তখন সবার সাথে কথা বলবো ।

রোজা আসতেই তাবাসসুম মেয়েকে বললেন জারা’র সাথে কথা বলে আদিত্যর বিষয়টা ভালো করে জেনে নিতে । সম্পর্কটা এখনো আছে না শেষ করেছে সেটা নিশ্চিত হওয়া দরকার । কায়সারের অফিসের যে ছেলেটাকে আদিত্যর খোঁজ নেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সে একেকবার একেক রকম ইনফরমেশন এনে দিয়েছে । বাইরের লোকের ওপর ডিপেন্ড করার চেয়ে নিজের মেয়েকে এই পথ থেকে ফিরিয়ে আনাটা ঠিক মনে হচ্ছে তাঁর কাছে ।

রোজা জারা’র রুমে এসে দেখলো জারা ফোনে কথা বলছে । বোনকে দেখেই কথা শেষ করে ছুটে এসে রোজাকে জড়িয়ে ধরলো সে ।

রোজা জিজ্ঞেস করলো –

কার সাথে কথা বলছিলে ?

নওশিনের সাথে আপু ।

বিছানায় বসে রোজা বললো –

শাফিনের সাথে কথা হয়েছে ?

হ্যাঁ আপু, রাতে কথা বলেছি ।

আজকে ক্লাস নেই তো ।

উহু ।

বিকেলে বড় খালার বাসায় যাই চলো ।

ঠিক আছে ।

জারাকে চুপ করে বসে মোবাইল ঘাটতে দেখে রোজা বললো –

সারাক্ষণ এতো মোবাইল ঘাটতে থাকো কেন ? একটা কথা জিজ্ঞেস করবো জারা ?

কী কথা আপু বলো ।

সত্যি বলবে কিন্তু……

আমি তোমার সাথে মিথ্যা বলেছি কখনো ?

আমি জানি তুমি মিথ্যা বলবে না । আচ্ছা বলো তো ঐ ছেলেটার সাথে রিলেশন শেষ করেছো তুমি ?

আমি তো মা’কে বলেছি ওর সাথে আর কোনো যোগাযোগ নেই আমার ।

আমাকেও বলো । আমার কাছে লুকিয়ো না জারা ।

সত্যি বলছি আপু । আচ্ছা ভুল করে একটা রিলেশনে জড়িয়েছিলাম, এখন ব্রেকআপ করে ফেলেছি তো ।

আব্বু, মা কিন্তু সত্যিই খুব টেনশনে আছেন তোমাকে নিয়ে । এতো বোকা তুমি, ভালো খারাপটাও বুঝতে পারো না ঠিকমতো । আচ্ছা একটা কথা বলো তো জারা, এমন অপরিচিত একটা ছেলের সাথে কীভাবে জড়িয়ে গেলে তুমি ? এমনিতেই জানতে চাইছি ।

জারা ঠিক করেছিল বোনের সাথে মনের কথা শেয়ার করবে সে কিন্তু এখন খুব সাবধান হয়ে গেল । আপুর সাথে কোনো কথাই শেয়ার করা যাবে না । আপু যেয়ে সব বলে দেবে মা’র কাছে । যেন একদম ফালতু একটা বিষয় এমন ভাব করে রোজাকে বললো –

আরে মাঝে মাঝে টাইম পাস করতে যেয়ে একটু এদিক ওদিক হয়ে যায় না, ঐ রকমই ছিল ব্যাপারটা । আচ্ছা আপু আমি যদি এতো সিরিয়াস হতাম তাহলে তোমাকে তো জানাতাম, তাই না ? এটা একদমই ফানি একটা ম্যাটার ।

ঠিক তো ?

আপু ! এবার কিন্তু আমি খুব রাগ করবো তোমার ওপর । এতোবার বলার পরেও তুমি আমার কথাটা বিশ্বাস করছো না ?

রোজার মনে হলো, তাই তো, সে একই কথা বারবার কোন বলে যাচ্ছে জারাকে ? একটু বেশি বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে এবার । সে হাসতে হাসতে বোনের হাত ধরে বললো –

আমি একটু দুষ্টামি করছিলাম তোমার সাথে । আচ্ছা বাদ দাও এসব, এই চ্যাপ্টার সব সময়ের জন্য ক্লোজ, ঠিক আছে ?

প্রমিজ?

জারা রোজার হাত ধরে বললো – প্রমিজ ।

.
.

সাদাত ভাবতেও পারেনি এতো তাড়াতাড়ি তার চাকরিটা হয়ে যাবে । জয়েনিং লেটারটা হাতে নিয়ে কায়সারের সাথে দেখা করতে আসলো সে । ওয়েটিং এ পাঁচ মিনিট অপেক্ষার পর তার ডাক আসলো । দরজা ঠেলে সাদাতকে রুমে ঢুকতে দেখে কায়সার বললেন –

এসো এসো , জয়েনিং লেটারটা হাতে পেয়েছো ?

জ্বি খালু ।

দেখি কী অবস্থা ?

লেটারটা কায়সারের দিকে এগিয়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সাদাত । কায়সার তাকে বসতে বলে কাগজটায় চোখ বুলিয়ে নিলেন একবার । তারপর বললেন –

তুমি সব নিয়ম মেনে সমস্ত রকম পরীক্ষার পরেই কিন্তু সিলেক্ট হয়েছো । তুমি আবার ভেবো না যে তোমার চাকরির পেছনে আমার কোনো হাত আছে । তোমার সাথে কথা কথা বলে চেয়ারম্যান স্যার সন্তুষ্ট হয়েছেন । আমাকে কালকে বলছিলেন যে, আজকাল অনেক ছেলেপেলেরা অযথা স্মার্টনেস দেখাতে চায় । একটা প্রশ্ন করা হলে সেটা না বুঝেই উল্টোপাল্টা উত্তর দিয়ে বসে । তোমার মধ্যের এই ধীরস্থির ভাবটা স্যারের পছন্দ হয়েছে ভিষণ । স্যার বললেন, সব রকম লোক নিয়েই আসলে কাজ করা দরকার । যারা শুধু নিজের ক্যারিয়ারটাকে ভালোবাসবে, তাদের পাশাপাশি যারা কাজকে ভালোবাসে তেমন ছেলেমেয়েই কিন্তু এবার বেশি সুযোগ পেয়েছে আমাদের অফিসে । যা-ই হোক, মন দিয়ে কাজ করো, এখানে তোমার হুট করে চাকরি চলে যাওয়ার ভয় নেই । আপাকে জানিয়েছো চাকরি কনফার্ম হওয়ার খবরটা ?

জ্বি না খালু, আপনার কাছেই আসলাম আগে ।

ঠিক আছে তুমি তাহলে বাসায় চলে যাও আজকে । কাল জয়েন করো ।

জ্বি ।

আর বাসায় এসো । অনেকদিন ধরে তো আসো না বাসায় ।

জ্বি আসবো ।

কায়সারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা দিলো সাদাত । খুশিতে অস্থির লাগছে । কখন মা’র কাছে যাবে আর কখন চাকরির খবরটা মা’কে জানিয়ে মা’র প্রতিক্রিয়া দেখবে, আর যেন তর সইছে না তার । এতো কিছুর মধ্যেও হঠাৎ একটা মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে , জারা’র মুখ । নিজের ওপর খুব বিরক্ত লাগলো সাদাতের । কেন বারবার জারা তার কল্পনায় চলে আসে ? এটা ঠিক না । এটা কোনোভাবে মেলে না । বারবার মনটাকে অন্যদিকে ঘোরাতে চাইলেও মনটা কেন যেন বারবার জারা’র দিকেই ছুটে আসে তীব্র এক আকর্ষণে ।

.
.

মা’র চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল রফিকের । মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল তার । বিছানায় শুয়ে শুয়েই বুঝতে চেষ্টা করলো মা কী নিয়ে চিৎকার করছে । কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বুঝতে পারলো, সেই পুরোনো ক্যাচাল, টাকাপয়সা, টাকাপয়সা । এই টাকাপয়সার হাউকাউ শুনতে তার একদম ভালো লাগে না । মাঝে মাঝে নিজের কপালের ওপর ভিষণ রাগ হয় তার, বড়লোকের ছেলে হয়ে জন্ম নিলে কার কী এমন ক্ষতি হয়ে যেতো ? প্রতিদিনের এই ফকিন্নির মতো মরে মরে বেঁচে থাকতে তো হতো না । তার কতো বন্ধু আছে যাদের ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো চিন্তাই করতে হয় না । বাপের সম্পত্তি নিয়ে আরাম করে দিন পার করে দেবে ওরা । মানুষের তো কতো লটারি লেগে ভাগ্য পাল্টে যায়, তার সাথে তো তেমন কিছুও হলো না কোনোদিন । মা’র গলার আওয়াজ তার রুমের দিকে আসতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো রফিক । তার এখন কোনো ইচ্ছে নেই মা’র একগাদা লেকচার শোনার । সকালের আরামের ঘুমটাই মাটি হয়ে গেল ।

রুমে ঢুকে সুফিয়া ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন –

পড়ে পড়ে নবাবজাদার মতো ঘুমালে দিন চলবে ? বারোটা বাজে তবুও তোর সকাল হয় না ? সারারাত জেগে জেগে কী করিস বল তো ? তোর বাপের মেজাজ দেখবো আবার তোদেরও মেজাজ দেখবো না-কি আমি ? তিনি এক গান গেয়েই যাচ্ছেন, ছেলেকে চাকরিতে পাঠাও, চাকরিতে পাঠাও । আরে আমি কেমন করে পাঠাবো ? আমার কথা শুনলে তো কাজই হয়ে যেতো । সারাদিন কীসের ধ্যানে থাকিস, কোন আলাদীনের চেরাগ এসে তোকে বড়লোক করে দিয়ে যাবে তুই ই জানিস । তোর মতো শুয়ে শুয়ে স্বপ্ন দেখলে তো আর সংসার চলবে না । সংসার চালাতে তো টাকা লাগে , সেই টাকাটা কোত্থেকে আসবে শুনি ?

রফিক দাঁতে দাঁত চেপে চুপ করে পড়ে থাকলো । মা’র প্যাচালের উত্তর দিতে গেলে কাজের কাজ তো কিছুই হবে না, মাঝখান দিয়ে মেজাজটা আউলা হয়ে যাবে । যা খুশি বলুক । বলা শেষ হয়ে গেলে এমনিতে চলে যাবে রুম থেকে ।

এতো কথা, এতো চিৎকারেও ছেলের কোনো ভাবান্তর না দেখে সুফিয়া কেঁদেই ফেললেন । বললেন –

এতোদিন আশায় ছিলাম, ছেলে বড় হলে আমাদের কষ্টের দিন শেষ হবে । মানুষের ছেলেমেয়েরা বড় হলে বাপ-মা’র কষ্ট কমে, টেনশন কমে আর আমার টেনশন শুধু বাড়তেই থাকে দিনকে দিন । তোর কী কোনো দায়িত্ব নেই সংসারের প্রতি ?

এতো কথায়ও যখন ছেলের কোনো ভাবান্তর নেই, সুফিয়া থেমে একটু দম নিলেন । নিজের কপালের শাপশাপান্ত করতে করতে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন তিনি ।

মা চলে গেলে রফিক চোখ খুললো । মা’র ওপর একটু মায়াও হলো তার । আহারে বেচারি সারাজীবন শুধু টানাটানির মধ্যেই পার করলো । তারও মন চায় মা’কে একটু আরাম দিতে, মা’র হাতে এত্তো এত্তো টাকা তুলে দিতে । মা’র যেন কোনো অভাব আর অনুযোগ না থাকে কিন্তু তাই বলে ঐ পিয়ন, দারোয়ান টাইপ চাকরি সে করবে না-কি ! তার জন্য বড় কিছু অপেক্ষা করে আছে । বড় কিছু পেতে হলে তো একটু ধৈর্য্য ধরতেই হয় । এই কথাটা মা’কে কে বুঝাবে ?………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here