#এক_ফাগুনের_গল্প
#পর্বঃ-০৮
– মোহনা তুমি এখানে? তোমার মা আর আমি ভাবি যে তুমি এখনো ছাঁদে যাচ্ছ না কেন?
– বাবা যেতে চাচ্ছিলাম হঠাৎ করে ভাবলাম নতুন মানুষ এসেছে তার একটু খবর নিয়ে যাই, আর এসে তো গল্পের মাঝে পরে গেলাম।
– আচ্ছা তুমি যাও তোমার মা ডাকছেন।
– ঠিক আছে যাচ্ছি বাবা।
– মোহনা বেরিয়ে গেল, স্যার আমার খাটের উপর বসতে বসতে বললেন, ” আশা করি তোমার কোন অসুবিধা হবে না আর তাছাড়া আমার বাড়িতে কোন অশান্তি নেই। আল্লাহর পরম কৃপায় অনেক ভালো আছি আমরা, আলহামদুলিল্লাহ। ”
– জ্বি স্যার, এতটুকু সময়ের মধ্যে যা বুঝতে পেরেছি তাতে বোঝা যাচ্ছে আপনি অনেক সুখী মানুষ। তবে এটাও বোঝা যাচ্ছে আপনি অনেক পরিশ্রম করে আজ এতটা এসেছেন।
– আমি একটু সময় মেনে কাজ করি তাই আমার ঘুমের সময় হয়ে গেছে। তুমি আগামীকাল সকালে আমার সাথে করে গাড়িতে যেতে পারো, আর যদি চাও তবে নিউমার্কেট থেকে একটা স্টাফ গাড়ি যায় আমাদের অফিসের সেটাতেও যেতে পারো। তবে অফিসের গাড়ি খুব সকালে যায় তাই সকাল বেলা তোমাকে একটু তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।
– সমস্যা নেই আমি সঠিক সময়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করবো স্যার।
– শুভ রাত্রি।
– শুভ রাত্রি।
★★
নতুন করে একটা বিপদ আগমন করেছে, অফিসের মধ্যে কানাঘুষা শুরু হয়েছে আমাকে নিয়ে। স্যারের সাথে এত ঘনিষ্ঠতা আর এখন সরাসরি তার বাসায় স্থান করে নেওয়া অনেকে সহ্য করতে পারে নাই।
স্যারের বাসায় যাবার মাস খানিক পেরিয়ে গেছে, মোহনার ব্যবহার অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিছু কিছু বলতে চায় হয়তো সাহস করে না অর্পিতার নামটা জানার জন্য। আমি আমার মতো করে চলি তবুও তাকে বারবার এড়িয়ে চলতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ। তবে বেশি ভালো লাগে তার যত্নগুলো, আমি তাদের বাসায় যাবার সপ্তাহ খানিকের মধ্যে সে আমার সব পছন্দ অপছন্দ জেনে গেছে। সকাল বেলা কথা ছিল করলার জুস কিন্তু তার পরিবর্তে আমার পছন্দের খাবারটা তৈরি থাকে। তবুও এতকিছুর মাঝেও আমি অর্পিতার কথা ভুলতে পারি না, গভীর রাতে তার নাম্বার আর পুরাতন মেসেজ গুলো পড়ি। মেসেঞ্জারে আট মাসের মতো যতগুলো মেসেজ ছিল সবগুলো পড়ি।
অফিসে কাজ করছি।
লান্সের পরে স্যার আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন, আমি কিঞ্চিৎ ভয়ার্ত অবস্থায় গেলাম। কারণ এখন সবাই যেভাবে বলাবলি করছে তাতে করে স্যারের বাসায় থাকা কিংবা এই অফিস থেকে চাকরি চলে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। সকলের দোষ দিয়ে লাভ নেই কারণ মোহনার দোষ আছে, মাঝে মাঝে হুট করে সে অফিসে চলে আসে। আমার কেবিনে এসে বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করে, মাঝে মাঝে বাসা থেকে তৈরি হয়ে এসে আমাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। এসব দেখে মানুষের সন্দেহ হবে সেটাই স্বাভাবিক কিন্তু আমি তো পরিস্থিতির স্বীকার।
– স্যার বললেন, কি খবর সজীব? সবকিছু ঠিক আছে তো?
– জ্বি স্যার।
– কিছু কথা বলার জন্য ডাকলাম।
– বলেন স্যার।
– তুমি নিশ্চয়ই শুনে থাকবে যে অফিসে তোমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু বলে।
– ( আমার গলা শুকিয়ে গেল কারণ মনে হচ্ছে এখন স্যার আমাকে বলবে তোমার চাকরি নেই।) তবুও আমি বললাম, জ্বি স্যার কিছুটা।
– আমার বিশ্বাস তুমি ওসব তুচ্ছ কথা কানে না নিয়ে নিজের মতো করে এগিয়ে যাবে।
– জ্বী স্যার চেষ্টা করবো।
– এমন অনেক মানুষ অনেক কিছু বলে তাই বলে কিন্তু নিজেকে আড়াল করা যাবে না।
– হ্যাঁ সেটাই।
– আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো মনের মধ্যে জড়তা নিয়ে কাজ করছো তাই তোমাকে ডেকে সামান্য হালকা করার চেষ্টা করলাম।
– মেলা মেলা ধন্যবাদ স্যার।
– যাও মনোযোগ দিয়ে কাজ করো।
★★
দিন তিনেক পরে রাতে ডিনার করে ছাঁদে বসে আছি, মোহনা পিছন থেকে এসেছে খেয়াল করিনি। আমার সামনে এসে বললোঃ-
– কি সমস্যা আপনার?
– কোন সমস্যা নেই তো, কেন কি হইছে?
– আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছেন?
– তেমনটা না।
– তাহলে?
– অফিসে ব্যস্ততা যাচ্ছে তাছাড়া বাসায় ফিরে তোমার ছোট ভাইকে পড়াতে বসে আর সময় পাই না গল্প করার জন্য।
– আপনি কি এখনো অর্পিতার জন্য কান্না করেন?
– কেন?
– যে চলে গেছে তাকে ভুলে যান প্লিজ, নতুন করে জীবন সাজিয়ে তুলুন।
– সেরকম ইচ্ছে নেই আর আমি জানি অর্পিতা কোন একসময় আমার জীবনে ফিরে আসবে। আমি তার জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অপেক্ষা করবো।
– তবুও যদি সে না আসে? তখন কি চাইলে নতুন করে বাঁচতে পারবেন?
– তুমি আসলে কি বলতে চাও? এত তর্ক করন করে যাচ্ছ আমার সাথে?
– আপনি কি জানেন না কেন তর্ক করি?
– না।
– মিথ্যা বলছেন কেন?
– সত্যি বলছি আমি কিছু জানিনা।
– আমি অর্পিতার ফেলে দেওয়া বুকের জমিটা চাই, সেখানে মনের মতো করে একটা ভালবাসার বাগান তৈরি করবো।
– সেটা সম্ভব না।
– কেন?
– অনেক কারণ আছে আর তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে অর্পিতা ফিরে এলে কি বলবো?
– তারমানে আপনি আমার ভালবাসা বুঝতে পারেন কিন্তু অর্পিতা ফিরে আসবে সেই জন্য স্থান দিতে ভয় পাচ্ছেন। তাই না?
– জানিনা।
– আমি যদি অর্পিতার বিষয় পরিষ্কার করে দেই তবে আমাকে আর আমার ভালবাসা গ্রহণ করতে কোন সমস্যা আছে?
– মানে?
– কথা দিচ্ছি, কোনদিন যদি অর্পিতা ফিরে আসে তাহলে চলে যাবো তোমার জীবন থেকে। সেদিন থাকবো না তোমার জীবনের কাটা হয়ে, তবুও আমি তোমাকে চাই। যদি সে ফিরে আসে তাহলে তার কাছে চলে যেও, আটকাবো না। আর যদি না আসে তাহলে আমি সারাজীবন ওই ভাঙ্গা আয়নায় নিজের চেহারা দেখে সাজতে চাই।
– আমি চুপচাপ।
– আজকে রাতে সবাই ঘুমিয়ে গেলে আমি আপনার রুমে যাবো, দরজাটা খোলা রাখবেন। অনেক কিছু বলার আছে আর উত্তরটা সাজিয়ে রাখবেন। এ কথা বলে মোহনা ছাঁদ থেকে নেমে গেল, আমি তার পায়ের শব্দ শুনতে পাচ্ছি।
আরো কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আমিও ছাঁদ থেকে নেমে যাবার জন্য পা বাড়ালাম ঠিক তখনই স্যার ছাঁদে প্রবেশ করলো। তার সাথে আন্টি নেই তাই আমাকেই আবার তার সাথে থাকতে হলো।
– কি হইছে সজীব? মন খারাপ?
– না স্যার এমনি চুপচাপ।
– তুমি মনে হয় কাউকে অনেক বেশি ভালবেসেছ তাই না সজীব? তোমার চেহারার মাঝে সবসময়ই একটা লুক্কায়িত তপ্তব্যথা দেখা যায়। সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করো কিন্তু মনের মধ্যে যেন কত গভীর ঝড় তাই না?
– তেমন কিছু না স্যার।
– তুচ্ছ কারণে মিথ্যা কথা বলে পাপ কামাই করো কেন সজীব? এটা খুব সাধারণ বিষয় কিন্তু সেটা নিয়ে মিথ্যা বলে পাপ হবে।
– সরি স্যার।
– তুমি কিন্তু এখন প্রতিষ্ঠিত একটা ছেলে তাই নতুন করে বিয়ে করে জীবন আরম্ভ করো। কত সুন্দর বিচিত্র আমাদের পৃথিবী, আর সেই পৃথিবীর সমস্ত কিছু মাত্র একটা মানুষের জন্য নষ্ট করার কোন মানে আছে?
– চুপচাপ।
– যে তোমার জীবন থেকে হারিয়ে গেছে তাকে মনে হয় সৃষ্টিকর্তা তোমার জন্য সৃষ্টি করে নাই। তাই তুমি তাকে পাও নাই, হয়তো তোমার জন্য তোমার সামনে এমন কেউ অপেক্ষা করবে যে তোমার পুরো জীবন বদলে দিবে।
– আপনি স্যার মানুষটা খুব অদ্ভুত, অফিসের বস হিসেবে আপনাকে কখনো মনে হয় না। মনে হয় ভালো একজন বন্ধু, আমার মনে হয় এমন স্যার সবাই পায় না।
– একটা বাস্তব গল্প বলবো, শুনবে?
– হ্যাঁ।
– একটা ছেলে ভার্সিটিতে পড়ার সময় একজনকে ভালবাসতো, ভিষন ভালবাসতো। কিন্তু হঠাৎ করে সেই ভালবাসা হারিয়ে গেছে, তারপর ওই ছেলে ঠিক তোমার মতোই ভেঙ্গে পরে। সবকিছু বাদ দিয়ে শুধু তার ভালবাসার মানুষের জন্য কষ্ট পেতো। তবে তাকে তাদের ভার্সিটির আরেকটা মেয়ে খুব পছন্দ করতো অনেক আগে থেকে। তবে সেই ভেঙ্গে পরা দিনে সেই মেয়ে তার পাশে এসে দাঁড়ায়, আস্তে আস্তে তাকে স্বাভাবিক করে। সেই ছেলেটাও তখন ওই মেয়ের ভালবাসা অনুভব করা আরম্ভ করে। সে তার মাঝে নতুন করে ভালবাসার বীজ বোনে এবং তারা নতুন করে প্রেমে পড়ে।
– বাহহ ইন্টারেস্টিং।
– হ্যাঁ সত্যি সত্যি ইন্টারেস্টিং, আজ তাহলে ঘুমাতে গেলাম। তুমি কি আরো কিছুক্ষণ থাকবে? আচ্ছা থাকো তাহলে কিন্তু আমি গেলাম।
– আচ্ছা ঠিক আছে।
– আরেকটা কথা, তোমার ছাত্র পড়াশোনা কেমন করে? ঠিকমতো পরে তো?
– হ্যাঁ স্যার পড়াশোনা চলছে আলহামদুলিল্লাহ।
– আচ্ছা ঠিক আছে, শুভ রাত্রি।
– স্যার একটা কথা ছিল।
– বলো?
– আপনার বাস্তব সেই গল্পের ছেলে মেয়ে পরবর্তীতে কি হইছে? তারা কি বিয়ে করেছিলো?
– স্যার একটা হাসি দিয়ে বললো, ভার্সিটির সেই ছেঁকা খাওয়া ছেলেটা হলাম আমি। আর আমার জীবন নতুন করে তৈরী করা সেই মানুষটা হচ্ছে তোমার আন্টি মানে মোহনা আর ফাহিমের আম্মু।
(সকলের প্রতি অনুরোধ রইল, সবাই একটু সুন্দর করে মন্তব্য করে নিজের অনুভুতি প্রকাশ করুন।)
চলবে….
লেখাঃ-
মোঃ সাইফুল ইসলাম (সজীব)