#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৪.
#WriterঃMousumi_Akter
পড়ন্ত বিকালে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রিয়াকে নিয়ে রওনা হলাম মামাদের বাসায়।এখনো রোদের আঁচ কমে নি।উত্তপ্ত রোদে ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ট জীবন।কিছুতেই যেতাম না কিন্তু ওই রাক্ষস এর ব্লাকমেইল এর জন্য যাচ্ছি।রিয়া ছাড়া কোথাও যাওয়ার অভ্যাস নেই আমার।তাতে আবার বিভা আপুর বিয়ে সেকারণে রিয়াকে নিয়ে যাওয়াটা আরো বেশী করে।যাওয়ার সময় আয়রা টা কাঁন্নাকাটি করছে বিহান ভাইয়াদের বাসায় যাবো বাধ্য হয়ে আয়রা কেও সাথে নেওয়া।বিহান অন্ত প্রাণ আয়রা।এই পিচ্চি আয়রা কে যত টুকু গুরুত্ব দেন আমাকে যদি তার ছিটাফোঁটা ও দিতেন নিজেকে ধন্য মনে করতাম।এক বিশাল বিরক্তি নিয়ে যাচ্ছি বিরক্তি হাউজে।
অটোতে গেলে পাঁচ মিনিট ও লাগে না মামাদের বাসা। জেলা পরিষদ এর সামনে চকচকা দো’তলা বিল্ডিং টা মামাদের।রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি এমন সময় আলিপ ভাইয়া কে দেখলাম রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে।আমাদের দেখেই নিজে থেকে দাঁড়িয়ে গেলো আলিপ ভাইয়া।স্বভাবসুলভ হাসি দিলেন আমাদের দেখে।
আলিপ ভাইয়া আমার মেজ কাকির বোনের ছেলে।আমার বাবারা তিন ভাই এক বোন।আমার বাবা বড়,মেজ কাকার এক এক ছেলে এক মেয়ে তোহা আর তিয়াস, মেজ কাকাদের সাথেই থাকে আলিপ ভাইয়া।ফুপ্পির এক মেয়ে মেহনুবা আপু।রিয়া আর আমরা একই বাড়িতে থাকি মেজ কাকিরা আলাদা বাড়িতেই থাকে।রিয়ার বাবা এখনো বাড়ি করে নি তাছাড়া বাবা বলেছেন যেহেতু ছেলে নেই তাই তড়িঘড়ি করে এক্ষুনি বাড়ি করার ও দরকার নেই।ছোট কাকু কুয়েত থাকে এই কারনে আরো বেশী করে রিয়া আর আমরা এক সাথেই থাকি।
আলিপ ভাইয়া আমাদের দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বলে,কি ব্যাপার কোথায় যাচ্ছো তোমরা।?রিয়া বরাবর একটু ফাজিল টাইপের বাড়ি থেকে দুই মিনিট না হাঁটলে অটো ও পাওয়া যাবে না।গা এলিয়ে দাঁত সব গুলো বেরিয়ে দিয়ে আলিপ ভাইয়া কে বলে জানেন আলিপ ভাইয়া আপনাকেই মিস করছিলো দিয়া।তাও ভীষণ মিস করছিলো জানেন।আমি আপনার নাম্বারে ফোন ও দিয়েছিলাম কিন্তু ফোন টা অফ পাচ্ছিলাম।
আলিপ ভাইয়া দৃষ্টিহীন ভাবে কয়েক বার চোখের পলক ফেলে বললো দিয়া আমায় মিস করছিলো এমাজিং ব্যাপার কিন্তু কেনো?..
এই যে ভারী ব্যাগ টা দিয়া ক্যারি করতে পারছিলো না।তাই যদি আপনি একটু হেল্প করতেন দিয়ার ভাল লাগতো খুব।
রিয়ার হাতে একটা চিমটি কেটে বললাম এসব কি বলছিস? রিয়া বিড় বিড় করে বললো একদম ই চুপ আগে ব্যাগ টা পাস করে নেই।বলদ মার্কা একটা হাসি দিয়ে বললাম আলিপ ভাইয়া “হেল্প আস”বলেই রিয়ার দিকে আরেক বিরক্তি নিয়ে তাকালাম।আলিপ ভাইয়া মারাত্মক একটা হাসি দিয়ে বললো দিয়া বললে একটা ব্যাগ ক্যানো তোমাদের ও মাথায় নিয়ে হাঁটতে পারবো।রিয়া বললো না না আলিপ ভাইয়া আমাদের নেওয়া লাগবে না আপাতত এই ব্যাগ টা নিন তাতেই আমরা হ্যাপি।আলিপ ভাইয়া বললো তা কোথায় যাচ্ছো তোমরা।আমি বললাম বিভা আপুর বিয়ে কাল গায়ে হলুদ আপনারা কাকিমনিদের সাথে চলে আসবেন কিন্তু।আলিপ ভাইয়া বললো দিয়া বিহান ভাই এসছেন কিন্তু সাবধান।আলিপ ভাইয়া কে বললাম,ওহ আচ্ছা উনিও এসেছেন তাতো জানতাম না।
অটো তে করে জেলা পরিষদ এর সামনে গিয়ে নামলাম।
“মামাদের বাড়িতে প্রবেশ করার সময় আয়রা ঘ্যান ঘ্যান করছে আমি কোলে উঠবো পায়ে ব্যাথা করছে।আমি আর হাঁটতে পারছি না।”
“আমি একটা ধমক দিয়ে বললাম এই তুই হাঁটলি কখন রে এলাম তো অটো করে তোর জন্য ত্রিশ টাকা খরচ হলো না হলে আমি আর রিয়া হাঁটতে হাঁটতে চলে আসতাম।”
“রিয়া বিরক্ত হয়ে বললো,, দিয়া আমি কিন্তু বিয়ে বাড়িতে ইনজয় করতে এসছি।আয়রার ঘ্যান ঘ্যান আমি সহ্য করতে পারবো না।তুই নিয়ে এসছিস তুই সামলা।ও কেমন ফাজিল তুই জেনে শুনেই এনেছিস কিন্তু।আমি আয়রার কোনো দায়িত্ব নিতে পারবো না বলে দিলাম”
এমনি তে টেনশন মাথায় নিয়ে জমের বাড়ি প্রবেশ করেছি।সকালে ব্রাশ নিয়ে আচ্ছা অপমানিত হয়ে বিকালেই আবার সে বাড়িতেই আসতে হচ্ছে।আয়না ঘ্যান ঘ্যান করেই যাচ্ছে জোর করেই হাঁটিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলাম।এই টাইমে সবাই হয়তো ঘুমিয়েই আছে।কাউকে দেখা যাচ্ছে না।হয়তো দুপুরে খেয়েই ঘুমিয়েছে সবাই।
রিয়া সোজা বিভা আপুর ফ্ল্যাটে গেলো।দুই মামার দুইটা বাড়ি এক সাথেই করা উঠান একটাই।দুই মামার ফ্যামিলিতে এত্ত মিল।কে কখন কার বাড়ি খাচ্ছে,ঘুমোচ্ছে কোনো কিছুর ই ঠিক নেই।
বিহান ভাই এর আম্মু আমাকে দেখেই হাত থেকে ব্যাগ টা নিয়ে বললো, “দিয়া তোর সাথে ভীষণ রাগ করেছি আমি।”
“আমি বললাম, ক্যানো মামি।?”
“এই যে সকালে না বলে চলে গেলি।পরে বিহান আমাকে হাজার বার অনুরোধ করেছে আম্মু প্লিজ দিয়াকে বুঝিয়ে নিয়ে এসো।আমি ও বলে দিয়েছি তুই ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস তুই যা।তুই দিয়াকে যদি আনতে পারিস তাহলে নিয়ে আয়।না হলে থাক।পরে দেখলাম তোদের বাসার দিকেই গেলো।”
“হ্যাঁ মামি তোমার ছেলের হুকুমের গোলাম আমি।আমাকে ছোট মানুষ পেয়ে যা ইচ্ছা তাই বলে।উনার অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য একটা রিক্সাওয়ালা দেখে পালিয়ে যেতে হবে।”
“তোর কপালে রিক্সাওয়ালা ছাড়া ভালো কিছু ডিজার্ভ করিস বুঝি।”
পেছনে তাকিয়ে দেখি,,ব্লু জিন্স আর এশ কালারের গেঞ্জি পরে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছেন বিহান ভাই।উনার কোলে আয়রা গলা জড়িয়ে ধরে আছেন।হঠাত উনাকে দেখে কথা বলা অফ হয়ে গেলো আমার।অসম্ভব সুন্দর আর স্নিগ্ধ লাগছে উনাকে।এর আগেও বহু বার ক্রাশ খেয়েছি উনাকে দেখে।এক বাইশ বছরের যুবক দাঁড়িয়ে আমার সামনে।উনার মাঝে কোনো কিছুর কমতি নেই না আছে ফর্সার কমতি,না আছে স্মার্টনেস এর,যেমন ব্রিলিয়ান্ট, তেমন রাগী, আবার এক মুহুর্তে মানুষের রাগ পানি করে দিতে পারেন।বিহান ভাই এর একটাই সমস্যা নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারেন।এমনি তে সবার সাথে হাসি,ঠাট্টা, ফান ভালোই করেন উনি তবে অতিরিক্ত না।কিন্তু উনি রেগে গেলে ভিন্ন কথা এক মহা তান্ডপ শুরু হয়।উনার সমস্যা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে উনার মনের কথা বুঝে নিতে হবে। সেটা না হলেই রেগে যাবেন মাঝে মাঝে মামা মামি হাঁপিয়ে যান কি নিয়ে রাগ হলো সেটা ভাবতে ভাবতে।রাগের কারণ কাউকেই বলেন না।পৃথিবীতে আমি একটা মাত্র মানুষ যাকে বিরক্ত আর রাগানোর জন্য হলেও টাইম নষ্ট করেন উনি।
“বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললাম,ক্যানো কি মনে হয় আপনার।”
“আমার মনে হয় তোর মতো অত্যাচারী কে দেখলে নিরীহ রিক্সাওয়ালা মামারা ভয় পাবে।এমন জালিম মেয়ে জেনে শুনে কে বিয়ে করবে শুনি।”
“মামা মানে!আপনার কি মনে হয় মামার বয়সী কেউ আমার কপালে জুটবে।”
“জীবনে প্রথম বার একটা জিনিস অতি সহজেই বুঝে গেলি।তোর ব্রেনের অনেক উন্নতি হয়েছে দিয়া।যাক ফুপ্পির মনের ইচ্ছা এইবার পূরণ হওয়ার মতো একটা চান্স আছে তুই ডাক্তারি তে চান্স পেলেও পেতে পারিস।তবে সব মামা হলেই যে বয়স্ক হবে সেটা নয়।যদই আদিম যুগে ফিরে যাস তাহলে দেখবি,মামা,ভাগ্নে সব একই বয়সী আছে”
“উনার বিরক্তিকর কথা অলরেডি শুরু হয়ে গিয়েছে।ক্রাশ ফ্রাস যা খেয়েছিলাম রাগে উড়ে গেলো।নিজেও খানিক বিরক্তি নিয়ে বললাম,আমি অত্যাচারী হলাম কিভাবে শুনি বিহান ভাই?”
“শুধু কি অত্যাচারী রাজাকার হয়েছিস তুই।১৯৭১ সালে রাজাকার রাও এতটা অত্যাচারী ছিলো না।তুই যেভাবে শিশু নির্যাতন করছিস। তোর নামে শিশু নির্যাতন মামলা দিতেই হবে।কি সংঘাতিক মহিলা তুই।তা না হলে এইভাবে এতটুক ফুটফুট বাচ্চার উপর কেউ নির্যাতন করে।”
“কোন বাচ্চা সাথে সাথে আয়রার দিকে চোখ গেলো আমার।এই আয়রা টা নির্ঘাত উল্টা পাল্টা নালিশ দিছে।চোখ দিয়েই আয়রাকে ভস্ম করতে ইচ্ছা হচ্ছিলো।আয়রার দিকে রাগি রাগি চোখ নিয়ে তাকাতেই বিহান ভাই বলেন,, তুই কি তোর বাপ দাদার মতো হয়েছিস নাকি।রাগ আর হুমকি দেখিয়ে প্রমান লোপাট করতে চাস।”
“কিসের প্রমাণ? ”
“তুই আয়রা কে সারাপথ হাঁটিয়ে নিয়ে এসছিস কেনো?”
“দাঁতে দাঁত চেপে বললাম আয়রা তুই ক’পা হেঁটেছিস। ডাহা মিথ্যা নালিশ দিয়েছিস কেনো?”
“ভাইয়া দেখেছো বকছে।”
“তোর দলের লোক এর মতোই হচ্ছিস তো আয়রা সকালে ডাক্তার দেখানো নিয়ে আম্মুকে মিথ্যা বলেছে আর তুই হাঁটা নিয়ে মিথ্যা বলছিস।মানিয়েছে ভালোই”
“দিয়া ডাক্তার না দেখিয়েও সত্য বলা যায়।আমি কি জানিনা তুই বাড়ি থেকে পালাচ্ছিলিস।তুই তার আগে বল আয়রা কে কোলে নিস নি কেনো”
“ওর ওজন ২০ কেজি আমি কিভাবে কোলে তুলবো।”
“তুই যে ছোট বেলায় হাতি ছিলি ভুলে গেছিস।সারাদিন আমার কোলে আর ঘাড়ে চড়তি।তোর মতো ভারী একটা শাকচুন্নি কোলে নিয়ে আমার হাইট এত কম নইলে আরো একটু লম্বা হতাম।।”
“৬ ফিটের পরেও আরো লম্বা হওয়ার ইচ্ছা আছে আপনার।লম্বা হওয়ার আফসোস মিটে নি আপনার”
“এর বেশী লম্বা হলে মেয়ে পাওয়া যেতো না তাহলে।এত লম্বা মেয়ে নেই কোথাও।সব আমার মতো ৫ ফিট ২ এর মেয়ে দেশে।।।”
“লম্বা ছেলেদের জন্ম হয়েছে খাটো মেয়েদের জন্য।সো মানিয়ে নিতে পারবো।”
মামি কখন বেরিয়ে গিয়েছে খেয়াল ও নেই।আমি উনার অসহ্য কথাগুলো না শুনে নিজেও বেরিয়ে গেলাম।
__________________________________
ছাদে গিয়ে বেত লাফাচ্ছি আমি। আমাকে দেখেই বিভা আপু,বিভোর ভাই,রিয়া আমার কাছে এগিয়ে এলো।বিভা আপু আর বিভোর ভাই খুব ই আদর করেন আমাকে।বিভা আপু বললো দিয়া আমি কিন্তু তোর হাতেই মেহেদী পরবো।আমি বেত লাফাতে লাফাতে বললাম আপু ডোন্ট ওরি আমি সব করবো বিয়েতে।
বিভা আপু রিয়াকে বললো,রিয়া তুই এত ফর্সা হচ্ছিস কিভাবে বলবি।এমনি ফর্সা মানুষ পুরা বিদেশি লাগছে।
বিভোর ভাই রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো রহিম চাচার দোকানে স্পেশাল নাইট ক্রিমের অর্ডার দিয়েছে রিয়া।রিয়া তো অলওয়েল নাইট ক্রিম মাখে।একটা বিজ্ঞাপন দেখতে না জামাইল্লার বউ এত ফর্সা হলো কেমনে।রিয়া সেই জামাইল্লার বউ এর থেকে ক্রিমের নাম শুনেছে।
রিয়া বিভোর ভাই এর দিকে তাকিয়ে বললো,ঠিক বলেছেন কালো মানুষ কি করবো।
বিভা আপু হেসে দিয়ে বললো তোরা এত ফাজিল ক্যানো?
রিয়া ছোট বেলা থেকেই অনেক ফর্সা বিভোর ভাই রাগাতেই এমন বলেছেন।গায়ের রং আমার ই চাপা।
আমাদের আড্ডার মাঝে এসে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।এক হাত পকেটে আরেক হাত দিয়ে ফোন স্ক্রল করছেন।উনার পূর্ণ দৃষ্টি ফোনের দিকে।
ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে একবার তাকালেন।ফোন প্যান্টের পকেটে রেখে বললেন, আবির আহমেদ শুভ কোথায়?
বিভোর ভাই বললেন সকালে আসবে বললো।
মেহনুবা আর শুভর মাঝে কি চক্কর চলে।
বিভোর ভাই বললেন ক্যানো?
মেহু শুভ কে ট্যাগ দিয়ে স্টাটাস দিছে ভালো হয়ে যাও মফিজ।আমি চিন্তিত আছি শুভ কতদিন ব্রাশ করে না সেটা নিয়ে।
আবির ভাইয়া কে মামা বাড়ির সবাই শুভ নামেই ডাকে।
দুনিয়ার সব মনে হয় বিহান ভাই এর চোখেই পড়ে।
নিচে থেকে মামি ডাকছে দিয়া একটু নুডুলস করতো মা আয়রার জন্য।আমি একটু কাজে ব্যাস্ত আছি।
নিচে গিয়ে নুডুলস করে আয়রা কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছি।আয়রা ছুটতে ছুটতে গিয়ে বিহান ভাই এর রুমে প্রবেশ করলো।আমিও আয়রার পেছনে পেছনে গেলাম।এমন সময় বিহান ভাই ও রুমে প্রবেশ করলেন।
“ঘরে ঢুকেই বললেন,,দেখি ঘরের বুয়া কেমন নুডুলস রান্না করতে পারে।”
“উনার দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,আমি ঘরের বুয়া।”
“সরি দেখি আমার ঘরের বউ কেমন রান্না করেছে।”
“কি বললেন।”
“দেখলি এইজন্য ঘরের বউ বলতে চাই নি।জানতাম তুই রেগে যাবি।রেগে না গেলে ঘরের বউ ই বলতাম।এলাউ কর রোজ বলবো।”
“একদম ই বাজে কথা বলবেন না।
আয়রা খাবি নাকি রেখে চলে যাবো।”
বিহান ভাই আমার দিকে ঝুকে এসে চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন,,
“তোমার আগুন চোখে তাকিয়েছি যতবার
ততবার পুড়েছি তোমার চোখের মায়ায়
তুমি আগুন নিয়ে খেলো
পুড়াও আমাকে তোমার চোখের মায়ায়।আমি পুড়তে রাজি সহস্র বার
তাইতো বারেবার তোমার চোখে আগুন ঝরানোর চেষ্টায় মেতে থাকি।”
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৫.
#WriterঃMousumi_Akter
খাঁনবংশে জন্ম গ্রহন করা টা বোধহয় মস্তবড় অন্যায় হয়েছে আমার। বংশের মানুষ একটু রগচটা টাইপের আছে।এখনো তারা পলিটিক্স এ জড়িত।মারামারি কাটাকাটি এগুলা তাদের নিত্যদিনের স্বভাব।বংশের নাম খাঁন বলেই রাজাকারের বংশের উপাধি দিয়েছেন বিহান ভাই।তার উপর আবার পলিটিক্স এ জড়িত উভয় মিলে আমাকে এই রাজাকার কথাটা শুনতে হয়।এখন অনেকেই ভাল হয়ে গিয়েছে কেউ আর এগুলা করে না।মামাদের বাবার সাথে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না এই মারামারির জন্য।নানা তো রিতীমতো বলেই দিছিলেন বিয়ে হলে ও থাকবে জেলে তোর আর এ জন্মে সংসার করা হবে না।বাবা বলেছিলো সে বিয়ের পর এগুলা ত্যাগ করবে তবুও নানা রাজি ছিলো না।পলিটিক্স এর জোরে ক্ষমতার জন্য আম্মুকে তুলে আনতে পেরেছিলো নানাদের টাকা থাকলেও এসব মারামারি পলিটিক্স এর দিকে আগ্রহ ছিলো না তাই বাবার বিরুদ্ধে স্টেপ নিলেও কিছু করতে পারে নি।তাছাড়া মা নিজের ইচ্ছাতে চলে এসছিলো।
মনে মনে ভাবছি ক্যানো যে এই বংশে জন্মগ্রহন করলাম।না আজ বিহান ভাই এসব বলতো না।
সন্ধ্যায় উঠানে বসে বিশাল আড্ডার আসর জমেছে।আত্মীয় রা বেশ অনেকেই চলে এসছে।তারা রান্নাঘরে রসুন পেয়াজ বাছাবাছি করছে।আমরা বসেছি আড্ডা দিতে।বিহান ভাই উনার রুমে দরজা লাগিয়ে পড়তে বসেছেন।উনার বরাবর ই আড্ডা তে এত মনোযোগ নেই।লেখাপড়ার নাকি কোনো শেষ নেই।তাই ভাগ্যক্রমে উনার মনে সায় দিলে তবেই উনি আসেন তা না হলে আসেন না।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন,,
“দিয়া তোর ক্লাসমেট কাজিন কিন্তু দিন দিন বিলাই হয়ে যাচ্ছে এত সাদা ক্যানো বল তো।ঘন্টায় ঘন্টায় ক্রাশ খাচ্ছি দেখে।তোর ক্লাস মেট কাজিন আমাকে পাত্তা দিচ্ছে না হুয়াই।”
“রিয়া বললো,,বিভোর ভাই আমাকে ছোট মানুষ পেয়ে ফ্লার্টিং করছেন তাইতো।আপনি না মেহু আপুকে প্রপোজ করেছেন।”
“এখন মেহু নেই তাই এখন তোমাকে ভালবাসি।আলাবু বেবি।”
“আলাবু কি বিভোর ভাই।”
“বিভা আপু বলে উঠলো,,ফ্লার্টিং এর স্মার্ট ল্যাঙ্গুয়েজ হলো আলাবু বেবি।রিয়া এই ফ্লার্টবাজ কে ভুলেও বিলিভ করিস না।আমার ভাই তাতে কি আমি তো জানি এরা কেমন।তবে আমার দুই ভাই এর মাঝে বিহান কিন্তু ভাল।যদি বিহান কারো সাথে লাইন মারে এক চান্সে রাজি হয়ে যাও জিতবা।।”
“বিভোর ভাই বললেন,,বিহানের আসায় কোনো মেয়ে থাকলে বুড়ি হয়ে যাবে নির্ঘাত।ওর মনে এসব প্রেম ভালবাসা বলে কিছুই নেই।অতিরিক্ত ভদ্র ছেলে।”
“রিয়া বললো,আমি বিয়ে করলে বিহান ভাই এর মতো ছেলেকেই করবো।কিছু না করলেও অন্য মেয়ের সাথে ফ্লার্ট তো আর করবে না।”
“বিভোর ভাই বললেন,এক্সকিউজ মি আমি আর বিহান দুই ভাই।কলিজার ভাই। এক রক্ত আমাদের শরীরে বয়ে চলেছে।তাই আমাকেও বিহান টু ভেবে নিতে পারো না।চাইলে ডাক্তারি ও পড়বো। ”
“রিয়া হেসে দিয়ে বললো,কিসের ডাক্তার হবে গরুর ডাক্তার হবেন নাকি।”
“বিভোর ভাই বিভা আপুকে বললো,আপু দুলাভাই কে কি কি বলি দেখো।তোমার জন্য রাস্তায় কত ছেলে আমাকে শালা শালা উপাধি দিয়েছে।এইদিকে তুমি আমার হবু প্রেমিকার সামনে মান সম্মান শেষ করে দিচ্ছো।”
“আমি চাই না বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের মন নিয়ে খেলা কর বুঝলি।তোর দুলাভাই কে কি বলবি হ্যাঁ।সে বুঝবে বউ সুন্দরী বলেই ছেলেরা উঁকি ঝুকি দিছে।এটা তে সে প্রাউড ফিল করবে।”
“আসলে মেয়ে মানেই প্যাঁচ বিশাল প্যাচ।কারো সাথেই পারবো না।”
রিয়া বলে উঠলো,এখানে বিহান ভাই নেই ভীষণ ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।এই দিয়া চল তো বিহান ভাই কে ডেকে নিয়ে আসি।আমি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম তোর এত দরদ হচ্ছে তুই যা।উনি এখানে আসুক আর আমাকে এক গাঁদা বাজে কথা বলুক তাইনা।আমার সুখ তো তোর সহ্য হয় না তাইনা রিয়া।একদম ওই খাবিস টাকে ডাকবি না।
এমন সময় ফোন কানে নিয়ে বিহান ভাই বাইরে বেরিয়ে এলেন।আমাদের সামনে দিয়ে ফোনে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেলেন।আমাদের দিকে একবার ঘুরেও দেখলেন না।এক হাত দিয়ে ফোন কানে আরেক হাত ট্রাউজারের পকেটে পোরা কোথায় যাচ্ছেন উনি।উঠান থেকে দেখা যাচ্ছে বিহান ভাই সামনের একটা বিকাশের দোকানে গেলেন।
বিভোর ভাই বলে উঠলেন দিয়া বিহান মনে হয় ওর ফ্রিল্যান্সিং এর পেমেন্ট পেয়েছে।
বিহান ভাই এর পেমেন্ট নাকি ব্যাংকে আসে।
ও তো একটা কাজ করে না অন লাইনের যাবতীয় কাজ করে।কিছু প্রেমেন্ট বিকাশেও আসে।দেখছিস না বিকাশের দোকানে ঢুকল নিশ্চয় ই পেমেন্ট তুলতে গেছে।চল একটু ফাউ খেয়ে আসি।
আমি তো বলেই দিলাম কিছুতেই যাবো না।কিন্তু বিভোর ভাই এর জোরাজুরিতে গেলাম।
বিহান ভাই দোকানের এক কর্নারে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছেন,
“দেখো মমো আই এম নট সিঙ্গেল। আই হ্যাভ এ গার্লফ্রেন্ড।প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। আই লাভ হার সো মাস।”
“ফোনের ওপাশ থেকে কি বলছে শোনা যাচ্ছে না।”
“বিহান ভাই বললেন,বিলিভ না করলে আই এম ভেরি সরি।আমি রিলেশন এ আছি জাস্ট এত টুকু বললাম।সে কে নাম কি কি করে এগুলা শেয়ার করতে আগ্রহী নয় আমি।এটা পারসোন ইস্যু।আশা করবো আমাকে আর এ ধরনের প্রস্তাব দিবে না।”
আমি, বিভোর ভাই আর রিয়া থমকে গেলাম। বলে কি বিহান ভাই এর গফ আছে।রীতিমতো শকড আমরা।মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো উনি রিলেশন এ আছেন।
ফোন কেটে দিয়ে বিহান ভাই আমাদের দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলেন,তোরা এখানে।
বিভোর ভাই বলেন,তুই চকবার খাওয়াবি তার জন্য এসেছি।
বিহান ভাই আয়রার হাতে একটা চকবার দিয়ে বলেন,আয়রা কাউকে দিবা না একা একা খাবা বলেই চলে গেলেন।
মুখের উপর অপমানের বিশাল এক ভান্ডার ছুড়ে দিয়ে চলে গেলেন।এইভাবে অপমান কেউ করে।
খাওয়ার চিন্তার থেকে আমরা গবেষনা শুরু করলাম বিহান ভাই এর গার্লফ্রেন্ড কে হতএ পারে।হঠাত বিভোর ভাই বলে উঠলেন,বিয়ে করলে ডাক্তার ছেলেকেই করবো তোহা স্টাটাস দিয়েছে আর বিহান লাভ রিয়্যাক্ট দিয়েছে তোহার পোস্ট এ।
কথাটা শুনেই মনের মাঝে জ্বলে উঠলো।বিহান ভাই তোহা আপুর সাথে। সিরিয়াসলি।না হলে বা লাভ রিয়্যাক্ট দিবে ক্যানো?একটা রিয়্যাক্ট দিতে তো অনেক সময় লাগে উনার কাছে।মানে উনি মনে করেন এটা অনেক টাইমের ব্যাপার।সেই মানুষ লাভ রিয়্যাক্ট দিছে।তাহলে কি তোহা আপুর সাথেই।আমরা তিনজন গভীর গবেষনায় লিপ্ত।মনের মাঝে চিন চিন ব্যাথা শুরু হলো আমার ক্যানো তা জানিনা।বিহান ভাই এর গফ আছে এটা আমি মেনে নিতে পারবো না।ইচ্ছা করছে কেঁদে দিতে।আবার এসে উঠানে বসলাম।
হঠাত দেখি,,বিহান ভাই মেসেজ করছেন দিয়া একটু আমার রুমে আসবি।কোনো রিপ্লে দিলাম না রাগে।কল ও দিচ্ছেন কেটে দিলাম কল।আমার কাজিনের সাথে প্রেম তাহলে আমাকে ডাকা হচ্ছে ক্যানো?যাবোই না উনার কাছে।
এরই মাঝে বিভা আপুর দুইটা ফ্রেন্ড এসছে।পাসেই তাদের বাসা।নিলয় আর আসিফ ভাইয়া।
আসিফ ভাইয়া বলে উঠলেন,,
দিয়া দিন দিন এত কিউট ছানা হচ্ছে ক্যানো?প্রেম টেম করো নাকি।
কই কিউট হচ্ছি আমি তো কালো।
এত ফর্সা শরীর নিয়ে নিজেকে কালো দাবি করলে পাপ হবে।
বিহান ভাই আবার মেসেজ দিয়েছেন,
“এক মিনিটে কফি নিয়ে উপরে আয়।”
“পারবো না।।”
“তোর সময় কিন্তু এক মিনিট নইলে কপালে কষ্ট আছে।”
“আমি আপনার রাখা কাজের বুয়া না হুকুম করলেই যেতে হবে।”
“সিন হলো কিন্তু আর রিপ্লে দিলো না।”
আবার মেসেজ দিলাম,,
“ভালোই তো ফেসবুকে মেয়েদের পোস্ট এ লাভ রিয়্যাক্ট দিচ্ছেন।”
ত্রিশ মিনিট হয়ে গেছে সিন ই করলেন না।
এইদিকে উনি মেসেজ সিন করছেন না সে নিয়ে রাগ হচ্ছে আবার উনি প্রেম করেন তা নিয়ে ও রাগ হচ্ছে।
নিজের কাজিন নিজের ক্রাশ কে প্রপোজ করেছে ভাবতেই কি একটা ফিলিংস হচ্ছে আমার।রাগে আচ্ছা মতো আয়রা কে মারলাম।আয়রা টা ভ্যা ভ্যা করে কাঁদছে।
দোতলায় তাকিয়ে দেখি ভয়ানক রাগি দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছেন বিহান ভাই।
কি নিয়ে রেগে গেলেন উনি।আমাকে ডেকেছে যায় নি তাই।আমি কি এতই ইমপরটেন্ট নাকি উনার কাছে।যে আমি না গেলে রাগ করবেন।নাকি অন্য কিছু হয়েছে।
ঘড়িতে রাত ৯ টা বাজে।সিদ্ধান্ত নিলাম কফি নিয়ে যাবো আর তোহা আপুর ব্যাপারে জানতে চাইবো।
মামির কাছ থেকে কফি নিয়ে উনার রুমে গেলাম।
টেবিলের উপর কফির মগ রাগে রাগে রাখতে গিয়ে উনার ল্যাপটপের উপর খানিকটা পড়ে গেলো।।আর ল্যাপটপের পাশে রাখা সব কাগজে লেগে গেলো।
বিহান ভাই চট করে উঠে,,
টি -টেবিলে জোরে একটা লাথি মেরে আমাকে আচ্ছা জোরে ধমক দিয়ে বললেন,একটা কাজ ঠিক ঠাক ভাবে করতে পারিস না তাহলে করতে যাস কেনো?তোর কোনো আইডিয়া আছে এই কাগজ গুলোতে ঠিক কি কি ইমপরটেন্ট জিনিস আছে।এখন আবার সারারাত বসে বসে আমাকে এগুলা করতে হবে।তুই কি এ বাড়ির কাজের মহিলা যে কফি নিয়ে এসছিস।তুই তো এ বাড়ির মেহমান মেহমান দের সাথে গল্প করতে এসেছিস।গেট আউট মাই রুম।আই সে গেট আউট মাই রুম।উনার ধমকে কেঁপে উঠে চোখের পানি ছেড়ে দিলাম আমি।
বিহান ভাই রেগে গেলেন কেনো পাঠক পাঠিকা অনুমান করুন।
চলবে,,