এক বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যা পর্ব ২+৩

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
২.
#WriterঃMousumi_AkTar

মানুষ মানুষকে এতটা অপমান কিভাবে করতে পারে তা ওই হৃদয়হীন মানুষ টাকে না দেখলে জানতাম না।আগে যদি জানতাম উনি বাড়িতে আসছেন তাহলে আমি কিছুতেই যেতাম না।উনি বাড়িতে নেই বলেই তো গেছিলাম।আমাকে বিরক্ত করতে না পারলে তো উনার পেটের ভাত ই হজম হয় না।সেই ঢাকা থেকে কি বিয়ে খেতে এসছে নাকি আমাকে বিরক্ত করতে এসছে।রাগে অপমানে ফুঁশতে ফুশতে বাড়িতে ঢুকলাম।

—মুখ পেচার মতো দেখে আম্মু বলে উঠলো কিরে সাজ সকালেই তুই।তোর মামিরা তোকে নিয়ে গিয়েছে তাদের বাড়িতে অনুষ্টান একটু হাতে হাতে সাহায্য করার জন্য আর তুই কিনা গিয়ে পড়ে পড়ে ঘুমিয়েছিস।এই ঘুমের জন্য জীবনে কিছুই করতে পারলি না।ঘুম আর টিভি দেখা ছাড়া তোর জীবনে আছে টা কি?ওদিকে আমার বিহান কে দেখেছো ছেলেটা বই পড়া ছাড়া কোনো দিকে মন নেই।এখনের যুগে আমার ভাতিজার মতো অমন ছেলে দেখা যায় না।লাখে একটাও পাওয়া যাবে না।ওর বয়সী ছেলেরা যা করে বেড়াচ্ছে তাছাড়া আমাদের বিহান দেখতে যেমন সুন্দর অন্য ছেলে পেলে হলে এতদিনে কত কেলেঙ্কারি ঘটাতো তার ঠিক নেই।বিহানের বয়সী পাশের বাসার ফয়সাল কার তার ফুফাতো বোন কে ভাগিয়ে নিয়ে এসছে।সেখানে আমার ভাতিজা একটা মেয়ের আশ পাশ ও ঘেষে না।

—মনে মনে বললাম মন বলে আছে নাকি কিছু তোমার ভাতিজার যে কারো সাথে ভাব ভালবাসা করবে।আর যে মেজাজ একটা মেয়ে ও টিকবে না গ্যারান্টি দিলাম।

—আম্মু আবার ও শুরু করলো,,তোরা দু ভাই বোন সারাদিন টাকা টাকা করিস।টাকা ছাড়া কিছুই চিনিস না।তোর ভাই কে কাল বাইক কিনে দিতে হবে।আগে যেটা ছিলো তাতে তার হবে না।।সব তোর বাবার আস্করাতে হয়েছে।ওই মানুষ টা ছেলে মেয়ে দুটোকে মানুষ করতে দিবে না।

—এমনি তে মেজাজ চরম বিগড়ে আছে আমার।এইদিকে আম্মু হয়েছে উনার জাতের মতোই।বিহান ভাই আর আম্মুর মাঝে কোনো তফাত নেই। রস কষ বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না।আচ্ছা বাবা আম্মুর সাথে এত দিন কাটালো কিভাবে সেটা ভেবেই সন্দেহ হয় আমার।আম্মু আর বিহান ভাই এর কথা সারাদিন বই পড়ো ফাউ আড্ডা দেওয়া যাবে না।এই বিহান ভাই আম্মুর ছেলে হয়ে আর আমি মামির মেয়ে হয়ে জন্ম নিলেই বাঁচতাম।কিভাবে যেনো সব উল্টে পাল্টে গিয়েছে।

–রাগ কন্ট্রোল করে বললাম, আম্মু আমরা কি এখন ইনকাম করি।এখন তোমাদের কাছে চাইবো না কি অন্য কারো কাছে চাইবো।

–ক্যানো বিহান যে ডাক্তারি পড়ে এত বড় জায়গা লেখাপড়া করছে কই সে তো বাড়ি থেকে টাকা নেই না।ক্লাস ওয়ান থেকে ফার্স্ট,ফাইভে বৃত্তি,এইটে বৃত্তি, এসএস সি তে জেলার মাঝে প্রথম হয়েছিলো এইস এস সি তে ও তাই।এক বারেই ঢাকা মেডিকেল এ চান্স পেয়েছে।বিহান নিজের খরচ নিজেই চালাই।লাখে অমন ছেলে নেই।তুই তো বিহানের পা ধোয়া পানি খাওয়ার ও যোগ্য না।

–আম্মু দয়াকরে তোমার ওই ভাতিজার গুনগান অফ করবা প্লিজ।শুধু লেখাপড়া শিখলেই তো হয় না মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করাও শিখতে হয়।

–একটা থাপ্পড় মারবো বেয়াদব মেয়ে। ছেলেটা তোর কত ভালো চায়।সারাক্ষণ ফোন দিয়ে এ ফুপ্পি দিয়াকে কিন্তু ডাক্তারি পড়াতে হবে।আমি চাই দিয়া ঢাকা মেডিকেল এ চান্স পাক।আর তুই তার ই বদনাম করছিস।সত্যি করে বল তো ঠিক কি অন্যায় করেছিস। নিশ্চয়ই এমন কিছু করেছিস আর বিহান বকা দিয়েছে।

–দেখো আম্মু আমি কিছুই করি নি।

–এমন সময় বাবা এসে আমার মাথাটা তার বুকের সাথে নিয়ে বলেন,,দেখো সানজিদা আমার দিয়া মা কে একটু ও বকা ঝকা করবা না।আমার মেয়ের যত টাকা লাগে নিবে খরচ করবে।

–হ্যাঁ তুমি তো আদর দিয়ে বাদর করেছো।শোনো আমার একটাই মেয়ে আর ওকে ডাক্তারি পড়ানো আমার স্বপ্ন।তোমার আদরে তা আমি নষ্ট হতে দিবো না।

–বাবা আমাকে বলেন মা তোমার বিহান ভাই যা বলে তোমার ভালোর জন্যই বলে।বড়রা একটু আধটু শাষণ করেই থাকে।
______________________________

দোতলায় দাঁড়িয়ে সব গুলো দাঁত বের করে হাসছে রিয়া।ওর হাসি দেখে মেজাজ চরম পর্যায়ে পৌছে গেলো আমার।আজ ব্রাশের গুষ্টি উদ্ধার করবো এমন পণ করলাম।আচ্ছা এই রিয়াটার এমন উদ্ভট হাসি দেওয়ার কারন কি?আমাকে কি জোকার লাগছে অসহ্য।ঘরে গিয়ে জোরে দরজা টা লাগিয়ে দিলাম দিয়ে সুয়ে রইলাম।আম্মু ডাকাডাকির পর ও উঠলাম না।অবশেষে আম্মু এসে জোর করে খাবার মুখে গুজে দিলো।দুনিয়ার এই আরেক টা অসহ্য কাজ সেটা হলো খাবার খাওয়া যা আমার একদম ই পছন্দ নয়।খাবার খাওয়ার পর ই বমি হয়।যার জন্য অলওয়েজ সুপারি খাওয়া শুরু করেছি। এটা যদি গ্রেট বিহান ভাই জানতে পারে না জানি কত গুলো বাজে কথা শুনাবে।

“সকাল দশটার দিকে বিভোর ভাই আমাদের বাড়িতে এলেন।রিয়া আর আমি দুজনে আমার রুমে সুয়ে সুয়ে গেম খেলছিলাম।হঠাত বিভোর ভাই কে দেখে অবাক হয়ে গেলাম।”

“কিরে দিয়ে কাউকে কিছু না বলে চলে এলি যে বোন।”

“দেখুন বিভোর ভাই আমি আর জীবনেও আপনাদের বাড়িতে যাবো না।আর উনাকেও বলে দিবেন আমাদের বাড়িতে যেনো না আসে।আমাদের ত্রিসীমানায় যেনো উনাকে না দেখি।”

“বিহানের বিরুদ্ধে আমরা যুদ্ধ ঘোষণা করবো।তবুও তুই রাগ করিস না।”

“রিয়া বলে উঠলো বিভোর ভাই আপনি নিজেই তো বিহান ভাই কে দেখে তো তো করেন।আপনি আর দিয়া যে বিহান ভাই এর নামে আজেবাজে কথা বলছেন আমি তা ভিডিও রেকর্ড করছি।এইগুলা বিহান ভাই এর সামনে বলতে পারবেন।”

“বিহান কে কি আমরা দুই ভাই বোন ভয় পাই নাকি।দেশ টা কূটনীতিকদের বসবাস হয়ে গিয়েছে দিয়া।”

“বিভোর ভাই আমাকে বললেন তো আজ বিহান ভাই এর দরবারে নালিশ নিয়ে যাবো।”

“রিয়া চুল কেটে ন্যাড়া বানিয়ে দিবো কিন্তু।”

” বিভোর ভাই বললেন,দিয়া দেখ তোর জন্য কি এনেছি।”

“কি এনেছেন বিভোর ভাই।”

“বিভোর ভাই একটা মেজেন্টা কালারের নেলপালিশ আর লিপিস্টিক আমার হাতে দিয়ে বললো এই নে।এটা দিয়ে সাজুগুজু কর দেখবি মন ভালো হয়ে গিয়েছে।”

আমি লাফিয়ে উঠে বললাম

বিভোর ভাই ইউ আর গ্রেট আমি এই নেলপালিশ টার ই অর্ডার দিয়েছিলাম অন লাইনে।কিন্তু তারা বললো এই কালার নাকি শেষ।

হাতে পায়ের সব আঙুলে মেজেন্টা কালারের নেল পালিশ পরলাম।ঠোঁটে লিপিস্টিক পরেই সাথে সাথে হাত পায়ের সুন্দর পিক তুলে ফেসবুকে পোস্ট করে দিলাম।আর তাতে সাথে সাথে হাহা রিয়্যাক্ট মেরে দিলেন বিহান ভাই।আর বিদিগিস্থা কমেন্ট করলেন।যে কমেন্ট এ একশ টা হাহা রিয়াক্ট দিয়েছে পাব্লিক।অথচ আমার কোনো পোস্ট এই একশ রিয়্যাক্ট হয় না।

“এমন জঘন্য কালারের নেলপালিশ পরে ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়ে সব সুন্দরীদের অপমান করার অধিকার তোর নেই।সব সুন্দরীদের পক্ষ থেকে আমি বিদ্রোহ ঘোষণা করলাম।প্রতিবন্ধিদের মতো হাতের নখ সব গুলো ব্যাকা ক্যা? নখের ময়লা ঢাকতেই কি নেলপালিশ পরেছিস।ও হ্যাঁ কেনার নাম নিয়ে দোকানে গিয়ে কি এটাই ফ্রি তে পরে এসছিস।এইভাবে ধান্দাবাজি করে আর কত মানুষ ঠকাবি।কিনবি না ভালো কথা রোজ বিভিন্ন দোকান থেকে নেলপালিশ পরে আসার কি দরকার।ধান্দাবাজ এর বংশ।লিপিস্টিক ও কি ফ্রি তে নিয়েছিস।”

আচ্ছা আমাকে উনার বাড়ি থেকে মান অপমান করে শান্তি হয় নি।এখন পাব্লিক প্লেসে এসে প্রেজটিজ নষ্ট না করলে হচ্ছে না।রাগে ছবি গুলোই ডিলিট দিয়ে দিলাম।

এইদিকে রিয়া হেসেই যাচ্ছে।হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে খেতে বললো,,

“দিয়া জানিস আজ বাসায় একজন আসছে। ”

“কে আসছে”

“বিহান ভাই তোর ক্রাশ।”

“বিহান ভাই আমার কোন জন্মের ক্রাশ ছিলো রিয়া।”

“আমি কি আর তা বুঝি না।ভয় পাও বলে প্রকাশ করতে পারো না আবার মনে মনে ক্রাশ খেয়ে একাকার অবস্থা। উনি আসছেন রেডি থাক তোর কপালে কি আছে সেটা এই মুহুর্তে বলা যাচ্ছে না।”

“তোকে কে বললো।”

“কাকিমনি আসতে বলেছে।অনেক দিন পর বিহান ভাই আসছেন আহা কি আনন্দ।”

বিহান ভাই আসছেন উনি যতটুকু টাইম বাড়িতে থাকবেন আমি বাড়িতে থাকবো না।আম্মুকে গিয়ে বললাম,,

“আম্মু আমি একটু ডাক্তারের কাছি যাচ্ছি গিয়েই চলে আসবো।”

“আম্মু কপালে হাত দিয়ে বললো কই দেখি আবার জ্বর এসছে কিনা।নাতো জ্বর নেই।
কোনো সমস্যা হলে বিহান কে দেখা।।।”

“আম্মু প্রথমত সে এখনো ডাক্তার হয় নি।তাছাড়া আমার হার্টে প্রব্লেম নেই।”

“তোর বাবা আসলে বাবার সাথে যাস।”

“আম্মু হুমায়ুন কাকার কাছে যাচ্ছি, মাথায় পেইনের ওষুধ নিয়েই চলে আসবো।৫ মিনিটের ই তো ব্যাপার।”

“যাওয়ার সময় রিয়া কে সাথে নিয়েই যাস।”

রিয়া কে না নিয়ে একাই রওনা দিলাম।পাশেই মেহনুবা আপুদের বাসা আজ ওদের ওখানে থেকে আসবো ভাবছি।

হুট করেই আমার পেছন থেকে ভূতের মতো বলো উঠলো,,

“রাজাকারের বংশধর এই ভর দুপুরে কোথায় যাচ্ছিস?”

“কথাটা শুনেই চমকে গেলাম আবার বিহান ভাই।হাজার রাগ হলেও উনার সামনে প্রকাশ করার সাহস আমার নেই।
তাই শান্ত কন্ঠেই বললাম,,
দেখুন বিহান ভাই বংশ নিয়ে কিছু বলবেন না।।”

“ওহ বাবা তা যাওয়া হচ্ছে কোথায় শুনি বেয়াদব মহিলা।”

“আমি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি।আর বেয়াদবির কি করলাম।”

“আজকাল বড় দের দেখে সালাম দেওয়া কি ভুলে গিয়েছিস।আমি যে তোর বড় মুরব্বি আমাকে দেখে একটা সালাম তো দিতে পারিস।”

“আশ্চর্য উনি কি ভুলে গিয়েছেন আজ আমার সাথে কি কি করেছেন।বরাবর ই উনি এ স্বভাবের আমাকে যা বলেন সেটা নাকি সিম্পল ব্যাপার।আর আমি রাগ করলে নাকি সেটা মহা অন্যায়।”

“কিছু না বলে হাঁটতে শুরু করলাম।উনি আমার পেছন পেছন হাঁটতে বললেন,
তোকে দেখে তো একটুও অসুস্থ মনে হচ্ছে না।এভাবে সেজেগুজে আটা ময়দা মেখে কি ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিস নাকি ডাক্তারের হার্ট ফেইল করাতে যাচ্ছিস।”

“কোথায় আমি মেকাপ করেছি।সামান্য একটু লিপিস্টিক আর নেলপালিশ লাগিয়েছি তাও এটা বিভোর ভাই আমাকে কিনে দিয়েছে।আপনার মতো হাড়কিপ্টা তো আর কেউ না।জীবনে কিচ্ছু দিয়েছেন আমায়।”

“মেকাপ করিস নি তাহলে মুখে এগুলা সাদা সাদা কি ভেষে উঠেছে।ঠিক ভাবে মেকাপ করতে পারিস না তাহলে মেকাপ করতে যাস কেনো?”

“দেখুন তাতে কি আপনার কোনো সমস্যা।”

“হ্যাঁ তোকে দেখে আমি ভয় পেয়েছি।দিন দুপুরে চোখের সামনে দিয়ে পেত্নি সেজে গেলে তো ভয় পাবোই।এলাকার বাচ্চা কাচ্চা দেখলে নির্ঘাত ভয় পেতো।তোর জন্য পুরা খুলনা বিভাগের অলিতে গলিতে কবিরাজ এর আসর বসবে।খুলনার ছেলে হয়ে আমার বিভাগের এত বড় ক্ষতি আমি হতে দিতে পারি না।এ দেশে কুঃসস্কার ছড়িয়ে দিতে চাস নাকি।”

“রাগি রাগি চোখে বিহান ভাই এর দিকে তাকিয়ে রইলাম।এই অসহ্য মানুষ কে কেনো আমার সামনেই বারেবার আসতে হয়।কি থেকে কোথায় নিয়ে গেলো।”

“বিহান ভাই আমার চুল টেনে ধরে বলেন আমার টাকার দাম আছে বুঝলি এইসব হাবি জাবি জিনিস কিনে টাকা নষ্ট করতে আমি পারবো না।তবে পেত্নিদের দেখার শখ থেকেই বিভোরের কাছে পুরা ঢাকা শহর খুজে মেজেন্টা কালারের লিপিস্টিক আর নেল পালিশ খুজে এনে দিয়েছিলাম।সে যে অন লাইন জগত দিয়ে এগুলো খুজে বেড়াচ্ছিলো ভেবেই নিজেকে অপরাধী লাগছিলো।তাকে এই সামান্য জিনিস দিতেই ঢাকা থেকে আমার আট ঘন্টা জার্নি করে নড়াইলে আসা।তাকে মেজেন্টা কালারের লিপিস্টিক এ এত টা যাদুকরী না লাগলেও পারতো।তার রূপ সাগরে আমাকে ডুবিয়ে না মারলেও পারতো।তার হাত পায়ের নখ এ অপরূপ সৌন্দর্য্যের সমাহার দেখে ছেলেদের এত প্রশংসা আমার ঠিক হজম হচ্ছিলো না।তাই তাকে রাগিয়ে দিয়ে ফেসবুক থেকে পোস্ট টা ডিলিট দেওয়া”

উনার দিকে তাকিয়ে দেখি সাদা টি-শার্ট, কালো জিন্স, হাতে ঘড়ি,পায়ে স্লিপার, এই ফর্সা সুন্দর স্মার্ট ছেলেটা এক রাশ স্নিগ্ধতা নিয়ে হাঁটছেন আমার পাশ দিয়ে।সত্যি কথা বলতে এই নিয়ে বহুবার ক্রাশ খেয়েছি উনাকে দেখে।কিন্তু এ কথা জানলে কি আস্ত রাখবেন আমায়।

#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা
৩.
#WriterঃMousumi_Akter

যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত পোহায় যার ভয়ে আম্মুকে বলে ডাক্তার দেখানোর নামে মিথ্যা বুলি আওড়ালাম সেই বিহান ভাই এর সাথেই রাস্তায় দেখা।বাধ্য হয়ে আবার ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরেই এলাম।আমার জীবনের সব থেকে বড় সমস্যার নাম বিহান ভাই যাকে মনে মনে সহস্রবার গালি বকা দিয়েছি অথচ সে আমার সামনে এলে আমার রিতীমত হাঁটু কাঁপাকাপি শুরু হয়।সেই ছোট বেলা থেকে এই যন্ত্রণা নিয়ে বেড়ে উঠেছি।বিহান ভাই এর এটিটিউড কি বাবাহ কেউ উনার ইগোতে আঘাত করতে আর জীবনে তার সাথে কথা বলেন না।আগ বাড়িয়ে কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে যান না। সোস্যাল মিডিয়াতে এক্টিভ না।আর এক্টিভ থাকলেও একান্তই নিজের পারসোনাল কাজে।ফ্রেন্ড লিস্টে আজাইরা কেউ নেই।উনার লিস্টে এড থাকা জনগন উনাকে কোনো পাব্লিক গ্রুপ বা মেসেঞ্জার গ্রুপে এড দিলে সাথে সাথে ব্লক, উনার মেসেঞ্জারে অযাচিত কল দেওয়া যাবে না মোট কথা উনি মানুষ টায় অদ্ভুত। কিন্তু উনার সমস্যা আমাকে নিয়ে আমাকে বিরক্ত করাটা কে উনার জন্মগত অধিকার বলে মনে করেন।আমাদের কাজিন গুষ্টির সবাই বিহান ভাই এর বিশাল বড় ফ্যান।বিহান ভাই এর হ্যা তে হ্যা মিলাবে না তে না মেলাবে।

বাসায় ঢুকে দেখি আম্মুর রান্না প্রায় শেষ, বিভোর ভাই, রিয়া, রিয়ার পিচ্চি একটা বোন আছে আমাদের সবার আদুরে আয়রা তিনজনে টিভি দেখছে।আয়রা সারাদিন পাকা পাকা কথার বুলি আওড়াতে থাকে।বিহান ভাই এর ভীষণ ভালবাসার একটা অংশ জুড়ে আছে আয়রা।আয়রা ছুটে গিয়ে বিহান ভাই কে জড়িয়ে ধরলো। বিহান ভাই আয়রা কে কোলে তুলে নিয়ে একটা চকলেট দিলো হাতে।

আমি বাসায় ঢুকতেই আম্মু বলে কিরে দিয়া ডাক্তার দেখিয়েছিস।রিয়া যায় নি দেখে আমি বিহান কে বলেছিলাম আসার সময় তোকে যেনো নিয়ে আসে আর সাথে করেই যেনো ডাক্তার দেখিয়ে নিয়ে আসে।কারণ তুই তো নিজের সমস্যা ঠিক ভাবে গুছিয়ে বলতে পারিস না।

বিহান ভাই আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ফুপ্পি তোমার মেয়ের যে অসুখ সেটা এসব ছোট খাটো ডাক্তারে সারবে না।

ক্যানো বিহান দিয়ার কি হয়েছে?

ফুপ্পি তোমার মেয়ে বই না পড়ার অজুহাতে অসুখের ভান ধরেছে।ডাক্তার বলেছে ওর কিছুই হয় নি।

আম্মু বলে আমার ও সন্দেহ হচ্ছিলো হঠাত ওর অসুখ অসময়ে কিভাবে এলো।

ডাক্তার না দেখিয়েই আম্মুকে ডাহা মিথ্যা বলে দিলো বিহান ভাই।মিথ্যা বলে মিটমিট করে হাসছেন।উনার হাসিতে তো আবার কোনো সাউন্ড নেই।

রাগ করে নিজের রুমে গিয়ে ইচ্ছা করছিলো সব ভেঙে ফেলি।কিন্তু কিছু ভাঙলে বিহান ভাই কি আস্ত রাখবেন আমায়।কিভাবে রাগ মেটানো যায়। এই মুহুর্তে আমাকে কিছু একটা করতেই হবে।হঠাত বিহান ভাই এর দেওয়া নেলপালিশ এর দিকে নজর গেলো।রিমোভার না পেয়ে ব্লেড দিয়ে নেলপালিশ তোলার চেষ্টা করলাম।উনার প্রতি রাগ উনার জিনিস তুলেই শোধ নিবো।

হঠাত করে সো সো গতিতে রুমে প্রবেশ করলেন বিহান ভাই।উনার পা থেকে মাথা পর্যন্ত ভাল ভাবে দেখলাম আমি।রুমের মাঝ বরাবর এসে দাঁড়িয়েছেন।উনার পারফিউম থেকে অসম্ভব সুন্দর ঘ্রান আসছে।উনার সব পারফিউম ইউনিক থাকে।কোথাও গেলে নিজেকে ভীষণ পরিপাটি ভাবে করে নিয়ে যান।মানুষ টাই পরিপাটি আর গোছানো।

দুই প্যান্টের পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন।কপালে কয়েক টা ভাজ পড়ে গিয়েছে। ভ্রু বাকিয়ে বলেন,’কি করছিস।’

মাথা নিচু করে বললাম,”বিশ্রি হাতে এত সুন্দর কালার ঠিক মানাচ্ছে না তাই।

‘নেলপালিশ তোর বাপ দাদার সম্পত্তি বেঁচে কেনা না বুঝলি।আমার জমানো টাকা থেকে কিনেছি।আমার টাকা মানে হালাল টাকা।তোর বংশের মতো সুদ, ঘুষের বাটপারির টাকা নয়।তাই যদি নেল পালিশ তুলিস তাহলে আঙুল গুলো রাখার দরকার নেই।ক্যান আই হেল্প ইউ।তোর এই মুরগীর বাচ্চার মতো নরম তুলতুলে আঙুল ব্লেড দিয়ে কুঁপিয়ে ও কেটে ফেলা যাবে।’

উনার মুখ থেকে কথাটা বেরোতেই পিলে চমকে উঠলো আমার।এখানে এসছেন নিশ্চয়ই কোনো মতলবে এসছেন।ব্লেড টা দ্রুত জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম।কারণ রাগের বশে হাত কেটেও দিতে পারে বলা যায় না।

উনার কথার উত্তর না দিয়ে বিরক্ত ভাব নিয়ে তাকালাম।

উনি এবার খানিক টা এগিয়ে এসে আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে বললেন,,

নীল পরী নীলাঞ্জনা নামের আইডির স্ট্যাটাসের অত্যাচারে ফেসবুকে তো প্রবেশ করা যাচ্ছে না দিয়া।”১৭ বছর কাটিয়ে দিলাম সিঙ্গেল অবস্হায় আমি কি নোবেল পাবো না।”
আইডির মালিক কে কি সত্যি নোবেল দিতে হবে।এত মহৎ একটা কাজ করেছে নোবেল রবীন্দ্রনাথ নয় তাকেই দিতে হবে কি বলিস।রবীন্দ্রনাথ বেঁচে থাকলে তার থেকে গুন সম্পন্ন ব্যাক্তিকে দেখতে পেতেন আর নোবেল টা উৎস্বর্গ করতেন।

শুধু এটুকু না আরো আছে দিয়া

“বালক এই চোখে তাকিও না সর্বনাশ হয়ে যাবে।”
আইডির মালিকের যে এত ভয়ানক প্রেম তৃষ্ণা পেয়েছে তার ফ্যামিলির কেউ কি জানে।সেই তথাকথিত পোস্ট এ আবার তোর ক্লাসমেট নেহাল কমেন্ট করেছে এক কাজল চোখের মাইয়া তীর মারলো কলিজায়।আচ্ছা এই আইডির মালিক কি তাহলে কলিজায় তীর মারছে।নেহাল এর নাম্বার যেনো কি দিয়া,ওয়েট কল দিয়ে শুনি আইডি টা কার।আমার এলাকার ছেলের কলিজায় তীর মারলো কে সে মহৌয়সী নারী।

আমার দিকে ঝুঁকে আমার মুখের উপর মুখ রেখে বিহান ভাই কথা বলছেন।ঠোঁট কাঁপছে আমার।ভয়ে কাঁপাকাঁপা ঠোঁট নিয়ে বললাম, নেহাল এর নাম্বার নেই।

বিহান ভাই আবার ও ভ্রু কুচকে বললেন,আচ্ছা দিয়া আমার যদি ভুল না হয় আমি কি গেজ করবো আইডি টা কার।বলেই পকেট থেকে ফোন বের করে উনার ফেসবুক ব্রাউজারে দেখালেন আইডি টা উনার ফোনেই লগ ইন।

হৃদপিন্ড চমকে উঠলো আমার উনি আমার ফেইক আইডির নাম কিভাবে জানলেন।ভয়ে ভীতহরিনীর মতো কাঁপছি তাহলে কি সব কমেন্ট ও পড়েছেন।আমি এখনি কেঁদে দিবো দিবো ভাব।উনি আমার আইডি হ্যাক করলেন কিভাবে।বিহান ভাই আমাকে মেরেই ফেলবেন। চোখ বন্ধ করে যত সূরা,দোয়া মনে মনে পড়ছি এ বারের মতো যেনো বেঁচে যায়।

বিহান ভাই রেগে আছেন কিন্তু প্রকাশ করছেন না,আবার বললেন,,

“আমি পনেরো দিন পরে ফেসবুকে প্রবেশ করে দেখি এই আইডি মাত্র পনেরো দিনে ৮ হাজার ফলোয়ার।আমি অবাক হয়েছি আমার আট বছরের আইডি তে আট টা ফলোয়ার নেই আর পনেরো দিনে ৮ হাজার ফলোয়ার।এমাজিং ব্যাপার তাইনা দিয়া।
আবার সানি লিওনির পেজে লাইক দেওয়া।কি রুচি।সেখানে বিভিন্ন কমেন্ট করে ব্লা ব্লা ব্লা।আইডির মালিক এর আম্মুর কাছে খবর টা পৌছাতেই হচ্ছে।তার মেয়ে এখন মডেল হিসাবে সানি লিওনিকে ফলো করছে।”

আম্মু জানলে আমাকে মেরে ফেলবে।বিহান ভাই এর মতিগতি ভাল মনে হচ্ছে না।

“ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিয়ে বললাম বিহান ভাই সরি আমি আর কোনদিন ফেইক আইডি খুলবো না।প্লিজ! আমাকে মাফ করে দিন প্লিজ।ভয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম।”

“উনি আরো ঝুঁকে বললেন,কি ভয় লাগে তাইনা? খুব ভয়।”

“আমি কেঁদেই যাচ্ছি।”

“এত ভয় যখন তোর নির্দিষ্ট আইডি থাকতে আরেক টা ফেইক আইডি খুলেছিস কেনো?”

“আ আ আপনি কিভাবে জানলেন আমার আইডি।”

“তোর ফোন নাম্বার আমার ল্যাপটপে কন্ট্রোল এ থাকে।ফোন নাম্বার দিয়ে কখন কি করছিস অল নটিফিকেশন আমার কাছে চলে যায় বুঝলি।এর জন্য আমাকে আলাদা কষ্ট করা লাগে নি।ইউ নো দিয়া ফেসবুক থেকে একটা একাউন্ট রিমুভ করা কোনো ব্যাপার নাহ।এই আইডি রিমুভ হয়ে যাবে কিন্তু তোকে তো শাস্তি দিতে হবে।”

“কি শাস্তি। ”

“যে কদিন আমি বাড়িতে থাকবো তুই আমাদের বাড়ি থাকবি আমার যাবতীয় কাজ গুলো তুই করবি তা না হলে ফুপ্পি কে এখুনি বলবো।”

“চোখ মুখ কালো করে বসে রইলাম।এই মুহুর্তে উনার কথায় মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় নেই”

বিহান ভাই এখনো আইডি নিয়ে শান্ত হন নি।

“আচ্ছা দিয়া সানি লিওনির ফেভারিট গান কোনটা তোর।”

“লীলা মুভির গান।”

“আই সি আমার তো মনে হয় অন্য কিছু।”

“কি।”

“এটা কানে কানে বলতে হবে।”

“ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।”

“বিহান ভাই কানে মুখ দিয়ে এক ভয়ানক গানের কথা বললো।যেটা আদেও কোনো গান কিনা আমি জানিনা।সেটা নাকি আবার সানি লিওনি স্পেশাল গান।মানুষ এত অশ্লিল কথা কিভাবে বলতে পারে।উনার কথা শুনে রিতীমত ভড়কে গেলাম।এই মানুষ টা এত ভয়ানক কথা কিভাবে বললো।”

“আমি বিহান ভাই কে বললাম,মোটেও না। আমার নামে অপবাদ দিচ্ছেন।”

“গান টা কি গেয়ে শুনাবো।”

“ওটা আবার গাওয়া যায় নাকি।”

“হ্যাঁ যায় তো, তোর শুনতে ইচ্ছা করছে জানি দিয়া।”

“মোটেও না আপনার গাইতে হবে না।”

“ওকে গান আমি গাইলাম না,তবে এটা বল তুই তোর এই ঠক বাজ বংশের মতো মানুষ ঠকানো কবে শিখলি।”

“আমি কিভাবে মানুষ ঠকালাম।”

“এই যে তুই সিঙ্গেল না হয়েও, ফেইক আইডি খুলে ইয়াং ছেলেদের হার্ট ভেঙে দিচ্ছিস।এটা তো মানুষ ঠকানো।রিতীমতো দূর্নিতী।”

“আমি সিঙ্গেল না তাইলে কি আমি?”

“তুই নিজে নিজেকে সিঙ্গেল ভাবলেও আমি তো আর তোকে সিঙ্গেল ভাবি না।”

“তাহলে কি ভাবেন আমাকে?বিবাহিতা। ”

এবার বিহান ভাই ঝুঁকে থাকা থেকে উঠে দাঁড়ালেন,বিছানায় চিৎ হয়ে সুয়ে পড়লেন বালিস ছাড়া।

সুয়ে সুয়ে ঝুলন্ত ফ্যানের দিকেএ তাকিয়ে বলেন,

“সেটা মন্দ বলিস নি,তুই তো সাংঘাতিক মহিলা।সাংঘাতিক আকারের ভয়ানক মহিলা।”

“আবার কি করলাম আমি।”

“ভয়ানক না হলে আম্মুর এই হ্যান্ডসাম ছেলেকে ঠকাতে পারিস।”

“দেখুন একটা ফেইক আইডির জন্য কত কি বলছেন।একটা ফেইক আইডির জন্য কত সমস্যার কথা বলছেন।”

“সমস্যা আইডি তে নয় দিয়া তোর ওই সিঙ্গেল সিঙ্গেল স্ট্যাটাস এ।”

” তাতে আপনার বউ বা শ্বশুরের কোনো সমস্যা।”

“এইবার মেইন পয়েন্টে এসেছিস।সমস্যা এখানেই।শ্বশুরের মেয়ে তার জামাই কে রেখে ছেলেদের বুকে তীর মারছে এটা একটা সমস্যা।দ্বীতীয় সমস্যা বউ তার জামাই কে রেখে ছেলেদের বুকে তীর মারছে সমস্যা কিন্ত এই একটায়।দু দিকেই লস আমার ই”

“উনার কথার আগা মাথা না বুঝে বললাম, এত ঘুরিয়ে বলেন কেনো কথা।উনার কথা যদি বিশ্লেষণ করতে যায় আবার কথা ঘুরিয়ে দিবেন”

“সহযে বললে আমাকে সহযে পেয়ে যাবি।আমি কি তোর গুষ্টির মতো সস্তা।আমি বিহান মনে রাখিস।আমাকে বুঝতে হলে তোর এই ছোট মাথা বড় করতএ হবে। বলেই আমার রুম ত্যাগ করলেন।

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here