#এক_মুঠো_প্রেম
#Writer_Mahfuza_Akter
#পর্বঃ০৬
✨জীবনের নতুন মোড়✨
-আহির ভাইয়ের একটা পাঁচ বছরের ছেলে আছে। এ ব্যাপারে তোরা কিছু শুনেছিস?
ক্যাম্পাসের মাঠে সবুজ ঘাসের ওপর গোল হয়ে বসে আড্ডা দিচ্ছিলো আহান, নীড় আর প্রান্তি। হঠাৎ প্রান্তির আনমনে বলে ফেলা কথাটা শুনে নীড় আর আহান বকবক থামালো। কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকালো। নীড় অবাক কন্ঠে বললো,
-মানে? আহির ভাই না সেদিন বিয়ে করলো! দুই-তিন মাসের মধ্যে পাঁচ বছরের বাচ্চা কীভাবে ডাউনলোড হলো?
আহান বিরক্তিমিশ্রিত কন্ঠে বললো,
-আব্বে অফ যা তো! এই বা** টপিক নিয়া আর একটা কথাও তুলবি না। আর আহির ভাই, আহির ভাই করার কী আছে বে? ওয় আমাদের স্যার, শিক্ষক, টিচার। পিহুর সামনে ওর নাম উচ্চারণ করবি না কইয়া দিলাম তোগোরে!
আহানের ধমকি শুনে প্রান্তি অনেকটা চুপসে গেল। তবে মনে মনে তার জানার কৌতূহলটা কমলো না। নীড় আহানের কথায় সম্মতি জানিয়ে বললো,
-আহান ঠিকই বলেছে রে! ওনাকে ভালোবেসে পিহু কতটা কষ্ট পেয়েছে, দেখেছিস? এখন আগে-পিছে যাই ঘটুক না কেন! সত্য তো এটাই যে, আহির ভাই পিহুকে ঠকিয়ে অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলেছে।
ডিপার্টমেন্ট থেকে বের হতেই নীড়ের শেষোক্ত বাক্যটা আহিরের কর্ণকুহরে ঝংকার দিয়ে উঠলো। আজই ভার্সিটিতে শেষ দিন তার। অফিসিয়াল রিকোয়ার্মেন্ট গত দিনই শেষ করেছে। আজ পরিচিত সবার সাথে দেখা করতে এসেছে শেষ বারের মতো। খুব শীঘ্রই এব্রোড চলে যাচ্ছে আহির। সেটা শুঊু শিক্ষকমহলই জানে। বাইরের কেউ নয়।
আহির কথাটার উৎসের দিকে চোখ ঘুরিয়ে তাকায়। গলাটা আঁটকে আসছে তার। কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে। শার্টের কলারটা টেনে জোরে একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে স্বাভাবিক করলো আহির। ওদের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখলো স্পৃহা এখনো আসেনি। আহির যেন একটু স্বস্তি পেল। মেয়েটার অভিমানী চোখ দুটোর ঘৃণা ভরা চাহনি বড্ড অসহ্য লাগে।
আহিরের দিকে নজর যেতেই প্রান্তি মুখটা ঘুরিয়ে নিলো। আহান ফোনে ব্যস্ত বলে এখনো খেয়াল করেনি। নীড় কথার ফাঁকে পাশে ফিরতেই আহিরকে দেখে অবাক চোখে বললো,
-ভাই, আপনি?
আহান ফোন থেকে চোখ তুলে সামনে তাকালো। আহিরকে দেখে চেপে রাখা রাগটা তরতর করে বাড়ছে ওর। নীড়ের মাথায় চাটি মেরে বললো,
-শালা, ম্যানার্স শিখোস নাই? টিচারকে কেউ ভাই বলে? উনি তোর কোন কালের ভাই লাগে রে? স্যার বলবি! স্যার!
নীড় মাথায় হাত ঘষতে ঘষতে বললো,
-হুম, আসলে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে। তো, স্যার! কিছু কি বলবেন?
আহির ওদের তিনজনের কথাবার্তায় আর আচরণে বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে, সবাই তার ওপর রেগে আছে। রেগে থাকাই তো স্বাভাবিক! সে তো একটা নিরপরাধ মেয়েকে ঠকিয়েছে! তার অনুভূতি আর স্বপ্নগুলো নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। ভেবেই মুখে শ্লেষাত্মক হাসি ফুটিয়ে বললো,
-কেমন আছো, গাইস? এমনি দেখা করতে এলাম তোমাদের সাথে।
প্রান্তি এবার মুখ ফিরিয়ে তাকালো। গাঢ় গলায় বললো,
-এতক্ষণ ভালোই ছিলাম। এখন …
কথা শেষ হওয়ার আগেই স্পৃহা এসে সেখানে উপস্থিত হলো। অনেক তাড়াহুড়ো করে আহানের পাশে ধপ করে বসে বললো,
-আজ একটু লেইট হয়ে গেছে। আসলে বাসায় ব্রেকফাস্ট বানিয়ে সব গোছগাছ করে আসতে হয়েছে। স…
কথার মাঝে আহিরের দিকে চোখ পড়লো স্পৃহার। মুখের কথা আটকে গেল মুহূর্তে-ই। আগে এই ব্যক্তিটাকে দেখলেই ঠোঁটের কোণে হাসি খেলে যেত ওর। আর এখন চোখে পানি টলমল করে ওঠে। এদিক ওদিক তাকিয়ে চোখের পানিটুকু গড়িয়ে পড়তে বাঁধা দিলো স্পৃহা। মাথার ঘোমটাটা ভালো করে টেনে বললো,
-চল, লাইব্রেরিতে যাই। আমার কয়েকটা বই দেখার ছিল।
স্পৃহা দ্রুত সরে গেল জায়গাটা থেকে। পিছু পিছু তিন বন্ধুও ছুটলো। আহির ওদের চারজনের দিকে তাকিয়ে রইলো নির্নিমেষ দৃষ্টিতে।
নিজের গাড়িতে আনিলাকে বসে থাকতে দেখে বেশ অবাক হলো আহির। ভ্রু কুঁচকে বললো,
-তুমি? এই সময়ে এখানে কী করছো?
আনিলা ড্রাইভিং সিটে বসে বললো,
-মুড ভালো নেই তোমার। চেহারা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আমারও ভালো লাগছে না। চলো একটু মাইন্ড রিফ্রেশ করা যাক!
আহির গাড়িতে উঠে বললো,
-বাট কোথায় যাচ্ছি আমরা?
-শপিং করবো, রেস্টুরেন্টে একটু লাঞ্চ আর লেকের পাড়ে ফুরফুরে হাওয়া। তোমার আপত্তি নেই তো!
আহির দূর্বোধ্য হেসে বললো,
-আপত্তি নেই। কেউ একজনকে কথা দিয়েছিলাম তোমাকে আর আশফিকে ভালো রাখার চেষ্টা করবো সবসময়। সো, লেটস গো!
_________________________
গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে ক্লাস শেষ করে মাঠে আসতেই রোদের তাপে গা জ্বলে উঠছে স্পৃহার। আহানের দিকে তাকিয়ে বললো,
-চল, কোথাও গিয়ে বসি। এই গরমে এক মুহুর্তও থাকতে পারবো না আমি।
আহান দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
-চল আজকে একটু আয়েসী খাবার খাই, মামা। বহুত দিন চইলা গেছে, তোদের সাথে একসাথে লাঞ্চ হয় না আমার।
প্রান্তি এক্সাইটেড হয়ে বললো,
-আইডিয়া জোস লেগেছে আমার। চল যাই।
নীড় চকচকে চোখে তাকিয়ে বললো,
-ইয়াপ। অনেক দিন পর একটা জম্পেশ আহার হবে। সেই পুরোনো রেস্তোরাঁয়, পুরোনো বন্ধুগুলোর সাথে কিছু মুহুর্ত কাটানো যাক।
স্পৃহা দ্বিমত করলো না। এই বিতৃষ্ণা ঘেরা জীবনটায় একটু আনন্দ চাই তার। তার মন ভালো করার আয়োজন শুধু এই বন্ধু গুলোই করতে পারে। আহানের বাইকের পেছনে প্রান্তি আর নীড়ের বাইকের পেছনে স্পৃহা বসলো।
মাঝরাস্তায় ট্রাফিক সিগনালের জন্য আঁটকে গেছে ওরা চারজনেই। আহানের মুখ দিয়ে অনর্গল বাংলা।গালি-গালাজ ছুটছে। স্পৃহা ওড়নার শেষ মাথা দিয়ে কপালের ঘাম টুকু মুছলো। বিরক্তি নিয়ে পাশ ফিরে সামনে তাকাতেই চোখ আঁটকে গেল ওর। রাস্তার অপজিটে ফুলের দোকানের পাশে আহির আর আনিলা দাঁড়িয়ে। আনিলার চুলে বেলি ফুলের মালা গুঁজতে ব্যস্ত আহির। আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ঝলমলে এক হাসি দিলো আনিলা। সেই হাসিতে প্রাপ্তি ও আনন্দ স্পষ্ট। আহিরের ঠোঁটের কোণেও হাসি।
স্পৃহা সবটা বেশ মনযোগ সহকারে দেখলো। চোখের কোল ভেদ করে টসটসে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। রোদের ঝকমকে আলোয় চিকচিক করে উঠলো সেই অশ্রু কণাগুলো। আপনমনেই আওড়ালো সে,
-তার মানে আহির সত্যিই আমাকে কখনো ভালোবাসেনি!!!
রেস্টুরেন্টে পৌঁছে সেই পুরোনো টেবিলটা ফাঁকা দেখে বেশ খুশী হলো আহান। প্রান্তি, নীড় আর স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললো,
-দেখলি, দোস্ত? এটাকেই বলে আত্মার টান। আমরা ওরে ভুললে কী হইবো? টেবিলটায় আমাদের ভুলে নাই।
প্রান্তি বিরক্তি নিয়ে একটা চেয়ার টেনে বসলো। গাল ফুলিয়ে বললো,
-তোর বাকোয়াস শেষ হলে এখানে বসে পড়। নয়তো কয়েক সেকেন্ড পরেই দেখবি টেবিলের সব টান ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে আর এখানে অন্য কেউ বসে পড়বে।
প্রান্তির কথা শুনে নীড় কিটকিটিয়ে হেসে দিলো। স্পৃহার মুখে কোনো হাসি দেখা গেল না। মনের সকল আনন্দ কিছুক্ষণ আগেই কালো মেঘে ঢেকে গেছে ওর। সেটা বাকি তিনজন বেশ ভালো করেই খেয়াল করেছে।
চারজন চার চেয়ার টেনে বসতেই সবার খোশমেজাজি আড্ডা শুরু হলো। খাওয়ার মাঝে মাঝে সবার কথা আর উৎফুল্ল ও প্রাণবন্ত হাসির কারণে স্পৃহার মনখারাপটাও বেশিক্ষণ স্হায়ী হলো না। সে-ও নিজের অজান্তেই যোগ দিলো হাসাহাসিতে।
বকবকের মাঝেই নীড়ের চোখ গেল রেস্টুরেন্টের মেইন দরজার দিকে। কাঁচের দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকছে আহির আর আনিলা। নীড় আনিলাকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। বিরবির করে বললো,
-এটাই তাহলে আহির ভাইয়ের বউ!
নীড়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে স্পৃহাও সেদিকে তাকালো। আহিরকে এখানে দেখে সেও অবাক। আহির চেয়ার টেনে দিলে আনিলা সেটাতে বসে পড়লো। আহির গিয়ে ঠিক আনিলার অপজিটে বসলো। দুটো মুখোমুখি বসে থাকা কপোত-কপোতীকে বেশ মনযোগ সহকারে পর্যবেক্ষণ করছে স্পৃহা আর ওর তিন বন্ধু। আহান বিরক্তি নিয়ে বললো,
-শালার কপালটাই সকল ক্যাচালের মূল কারণ। এই দুইটায় কি অন্য কোনো জায়গা পায় না প্রেম করবার জন্য? দেশটা কি বহুত ছোট? ফাউল যত্তসব!!!
নীড় আর প্রান্তিও বিরক্ত। নাক-মুখ কুঁচকে নিজেদের খাওয়ায় মনযোগ দিলো। স্পৃহাকে উদ্দেশ্য করে নীড় বললো,
-বইন, তোর খাবার ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
স্পৃহা চোখ নামিয়ে ফেললো। খাওয়ায় মননিবেশ করলেও বেহায়া চোখ দুটো বারবার আহির আর আনিলার দিকেই ছুটে যাচ্ছে। ওদের দুজনের কেউ-ই স্পৃহাকে এখনো খেয়াল করেনি। কিন্তু স্পৃহা তো ওদের দিকে প্রতি মিনিটে একশোবার করে তাকাচ্ছে। হঠাৎ প্লেটের ওপর চলতে থাকা কাটা-চামচটা থেমে গেল স্পৃহার। মুখের ভেতর থাকা খাবার টুকুও গিলতে ভুলে গেল সে।
আহিরের আনিলার ঠোঁটের কোণে- সেটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে স্পৃহা। হয়তে লেগে থাকা খাবার মুছে দিচ্ছে। নিজের প্রিয় মানুষকে অন্য কোনো নারীর ঠোঁট স্পর্শ করতে দেখে স্পৃহার বুকের ভেতর মুচড়ে উঠলো। হাত থেকে চামচটাও প্লেটের ওপর পড়ে গেল। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে ওর। সবটা সহ্য হলেও এই দৃশ্য দেখে বুক ফেটে কান্না আসছে স্পৃহার। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় সে। হাত দিয়ে মুখ চেপে গটগট করে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।
পেছন থেকে আহান, নীড়, প্রান্তি সমস্বরে বলে উঠলো,
-পিহু, কোথায় যাচ্ছিস তুই? পিহু, দাঁড়া।
উপস্থিত সবাই ওদের তিনজনের দিকে তাকালো। আহির আর আনিলাও লক্ষ্য করলো। ওদের কথা শুনে মুহুর্তেই বিষয়টা আন্দাজ করতে পারলো আহির। কিন্তু কিছু বলার আগেই তিনজন দৌড়ে বেরিয়ে গেল রেস্টুরেন্ট থেকে।
___________________________
লেকের পানিতে পা ভিজিয়ে বসে আছে স্পৃহা। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে ওর। প্রান্তি, নীড় আর আহান ওর থেকে কিছুটা দুরে দাঁড়িয়ে আছে। প্রান্তি অসহায় গলায় বললো,
-ডু সামথিং, গাইস। এভাবে আর কতক্ষণ? বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামবে একটু পর! মেয়েটা তো বাসায় ফিরতেই চাইছে না!
আহান ক্ষ্যাপা কন্ঠে বললো,
-মেজাজটা চটে ভর্তা হইয়া গেছে বহুত আগেই। এই পিহুর বাচ্চারে খুন করবার মন চাইতাছে। এতো প্রেম আসে কোত্থেকে? আজাইরা!
নীড় কিছু একটা ভেবে বললো,
-পিহুর বরকে কল দিলে কেমন হয়? আমাদের কথা তো শুনছে না! ওনার কথা শুনতে পারে।
প্রস্তাবটা বেশ মনে ধরলো ওদের। প্রান্তি স্পৃহার ব্যাগ হাতড়ে ফোনটা বের করলো। ‘আদ্র’ নামের একটা নাম্বার থেকে বহুবার কল এসেছে। ওরা অনেকটা নিশ্চিত হলো, এটাই স্পৃহার বর। ভাবনার মাঝেই আবার ফোন ভাইব্রেট হওয়া শুরু করলো। প্রান্তি কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে উত্তেজিত পুরুষালি গলা ভেসে এলো,
-স্পৃহা, কোথায় তুমি? বিকেল হয়ে গেছে, এখনো ফিরলে না তুমি! ফোনটাও ধরছো না। টেনশনে …
-আমি স্পৃহা নই। ওর ফ্রেন্ড বলছি।……
প্রান্তি আদ্রকে সবটা সংক্ষেপে বুঝিয়ে বললো। আদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
-ওকে।
ফোন রাখতেই আহান উৎসাহী কন্ঠে বললো,
-কী বললো রে?
-কিছুই বলে নি। শুধু ‘ওকে’ বলেছে।
আহানের মুখটা ছোট হয়ে এলো। পনের-বিশ মিনিটের মাথায় আদ্রকে এদিকে ছুটে আসতে দেখে নীড় চোখ বড়বড় করে বললো,
-ঐ যে! ঐটাই তো পিহুর বর!
আহান আর প্রান্তিও অবাক হলো। আহান বিস্মিত চোখে তাকিয়ে বললো,
-আরে বাপ্রে! আকাশে উড়ে উড়ে এলো নাকি ঝড়ের গতিতে গাড়ি চালিয়ে এলো, গাইস!
এরই মধ্যে আদ্র ওদের কাছাকাছি চলে এলো। ওদের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তোমরা তিনজনই তো স্পৃহার ফ্রেন্ড! ওর সাথে দেখেছিলাম তোমাদের। কোথায় স্পৃহা?
প্রান্তি চোখ দিয়ে পাশে ইশারা করলো। আদ্র সেদিকে তাকিয়ে ওদের বললো,
-তোমরা বাসায় চলে যাও। আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি।
ওরা বাইক নিয়ে চলে গেল।
আদ্র ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে স্পৃহার কাঁধে হাত রাখলো। স্পৃহার মধ্যে কোনো ভাবান্তর নেই। ও একদৃষ্টিতে সামনে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়েও অবিশ্রান্তভাবে পানি ঝরছে। আদ্র ওর পাশে গা ঘেঁষে বসলো। ওর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-বাসায় চলো, স্পৃহা। আর কত কাঁদবে? তুমি যার জন্য কাঁদছো, সে তো সুখেই আছে! তোমার চোখের জল কি এতোই মূল্যহীন? তুমি মানতে না চাইলেও তোমার চোখের পানিগুলো আমার নিজস্ব ও ব্যক্তিগত সম্পদ। ওগুলোর অপচয় করো না।
স্পৃহা এবার চোখ ঘুরিয়ে আদ্রের দিকে তাকালো। অশ্রুপূর্ণ টলমলে রক্তিম চোখজোড়া একদম শান্ত। মুখটা গোধূলির হলুদাভ আলোয় মলিন লাগছে অনেক। হঠাৎ স্পৃহা এমন এক কাজ করে বসলো যে, আদ্র পুরোই পাথর হয়ে গেল।
স্পৃহা অগত্যা আদ্রের বুকে ঝাপিয়ে পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো। কান্নার তোড়ে আঁটকে যাওয়া গলায় বললো,
-আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই, আদ্র। আমি আপনাকে ভালোবাসতে চাই। আমার অস্তিত্বের প্রতিটা অংশজুড়ে আপনার নাম লিখতে চাই। আপনার সাথেই বাঁচতে চাই। আমার হবেন, আদ্র? একান্তই আমার নিজের হবেন।
-চলবে…