#এক_মুঠো_প্রেম
#Writer_Mahfuza_Akter
#পর্বঃ০৯
স্পৃহাকে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আদ্র ভ্রু উঁচিয়ে বললো,
-হোয়াট? ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন?
স্পৃহা একইভাবে তাকিয়ে থেকে বললো,
-আপনি কী বললেন?
আদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
-কী বললাম আবার? দুই বছরের জন্য বাড়ির বাইরে যাবো না আমি। সত্যিই যাবো না! টেন মান্থস তোমায় সঙ্গ দেব, আর বাকি সময়গুলো আ…
আদ্রের কথার মাঝে স্পৃহা হঠাৎ চাপা চিৎকার দিয়ে বললো,
-চুপ করুন।
আদ্র থেমে গিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। বিস্ময় নিয়ে বললো,
-কী হলো?
স্পৃহা আমতা আমতা করে বললো,
-কিছু না। চলুন, ডিনার করবেন।
-এই সন্ধ্যায় কেউ ডিনার করে না।
স্পৃহা হকচকিয়ে গিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে, সত্যিই এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হয়েছে মাত্র। এখন ডিনারের কথা বলাটা অযৌক্তিক। নিজের বোকামির কথা ভেবে আদ্রের দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক একটা হাসি দিলো স্পৃহা। হাতে হাত ঘষে বললো,
-তাহলে আমি কফি এনে দিচ্ছি। আপনি ফ্রেশ হোন।
স্পৃহা পা ঘুরিয়ে কয়েক কদম এগোতেই ওড়নায় টান পড়লো। স্পৃহার হাত পা যেন অবশ হয়ে আসছে, গলা শুকিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে ঘাড় ঘুরিয়ে পিছে তাকালো সে। আদ্র ওর ওড়নার শেষ প্রান্ত বার কয়েক ঘুরিয়ে হাতের মুঠোয় পেচিয়ে নিল। শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আমার একটা বেবি চাই, স্পৃহা!
স্পৃহা বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। আদ্র যে এমন একটা আবদার করবে, সেটটা কল্পনাও করতে পারেনি স্পৃহা। হতবিহ্বল হয়ে বললো,
-মানে?
-মানে না বোঝার মতো বয়সী তুমি নও, স্পৃহা।
আদ্রের কাটকাট জবাবের শিকার হয়ে নিজেকে অনেক অসহায় মনে হচ্ছে স্পৃহার। কম্পিত কণ্ঠে বললো,
-আপনি আমার ব্যাপারে সবটা জানেন, আদ্র৷ এই মুহুর্তে আপনার কাছে থেকে এসব কথা আমি এক্সপেক্ট করিনি।
আদ্রের মলিন হাসলো। আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করতে করতে বললো,
-বিয়ের প্রথম রাতে তুমি আমায় যা বলেছিলে, সেই কথাগুলোও কিন্তু তোমার কাছ থেকে এক্সপেক্টেড ছিল না। স্টিল, আমি মেনে নিয়েছিলাম।
-কী বলতে চাইছেন আপনি?
আদ্র স্পৃহাকে কাছে টেনে এনে চোখে চোখ রেখে বললো,
-কবে আমার হবে তুমি, স্পৃহা? একান্তই আমার নিজের হবে কবে?
স্পৃহা নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে দূরে সরে দাঁড়ালো। শক্ত কন্ঠে বললো,
-সব কিছু জোর করে হয় না, আদ্র। এতো ডেস্পারেট কেন হচ্ছেন আপনি? আমি নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। একটু সময় তো আমায় দিতেই পারেন!
আদ্র ঠোঁট গোল করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। শুকনো হেসে ধীর গতিতে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। নিঃশ্বাসের সাথে শুধু একটা কথাই কানে ভেসে এলো স্পৃহার,
-ওকে, টেইক ইয়র টাইম!
_______________________
ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে কাটা পড়ে গেছে একমাসেরও বেশি কিছু সময়। স্পৃহা এখন নিজের জীবন নিয়ে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে, অতীত নিয়ে ভাবার অবসর টুকুও তার নেই। পড়াশোনার চাপ, সংসারের সব দায়িত্ব শেষে রাতের বেলা যেটুকু সময় পায়, সেটা নিজের পড়া গোছাতে গোছাতে-ই ফুরিয়ে যায়। ঘুমোনোর সময়ও আদ্রের সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়ে সে। আদ্র সেই ঘুমন্ত মায়াবী মুখটার দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেও ঘুমের দেশে পাড়ি জমায়।
-কী রে ছেরি? তোর সেলিব্রিটি ভাইটারে এখন দেখি না ক্যান রে? একলাই ভার্সিটিতে আসোস কেন?
আহানের মুখের দিকে তাকিয়ে প্রান্তি দাঁত কেলিয়ে হাসলো। চুইংগাম চিবোতে চিবোতে বললো,
-ভাইয়া এখানে এসে কী করবে? এমনিতেই অনেক ব্যস্ত আছে এখন। তার ওপর হট্টগোল তার একদমই পছন্দ না।
আহান মুখ বাকিয়ে বললো,
-তোর ভাই তো হিরো! আমি তো ভুলেই গেছিলাম!
প্রান্তি রেগে কিছু বলতে যাবে, তার আগেই নীড় মুখ দিয়ে বিরক্তি সূচক শব্দ বের করে বললো,
-থামবি তোরা! আর আহান, শোন! প্রণব ভাইয়ের গান তোর নিজেরও অনেক পছন্দ। কালও বলেছিলি। সো, এখন প্রান্তিকে ক্ষ্যাপানো অফ কর।
প্রান্তি আহানের দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকালো। আহান থতমত খেয়ে বললো,
-এই পিহু! তোর বর এখন আসেনা কেন রে?
স্পৃহা বই থেকে নজর সরিয়ে ওদের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। গাঢ় গলায় বললো,
-নিজের প্যাঁচের মধ্যে আমাকে একদম টানবি না! এমনি সবকিছুর চাপায় পড়ে আমি অর্ধেক হয়ে গেছি।
আহান গাল ফুলিয়ে বললো,
-একদম ঠিক হইসে। তোরে এখন বিয়া করতে কইসে কে?
স্পৃহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আমার বিয়ে আমি করেছি। তাতে তোর কী? হোয়াট ইজ দ্যাট টু ইউ?
আহান হতাশ গলায় দুঃখী দুঃখী মুখ করে বললো,
-আমারই তো লস হইলো! ভাবছিলাম তোরে বান্ধবী থেইকা বউ বানামু। এমনিতেই মাইয়া পটে না। তার ওপর তোর এই ছ্যাঁকা তো আমায় দেবদাস বানাইয়া ছাড়লো! এখন আমার এই দুই টুকরা হার্ট নিয়া আমি কই যামু?
প্রান্তি আর নীড় আহানের অভিনয় দেখে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। স্পৃহা হাতের বইটা আহানের দিকে ছুড়ে মেরে নাক ফুলিয়ে ওদের দিকে তাকালো। পরমুহূর্তেই হেসে আহানের হাতে কিল লাগালো।
প্রান্তি হাসি থামিয়ে এদিক সেদিক তাকাতে তাকাতে বললো,
-ভালে কথা মনে করেছিস তো! অনেক দিন ধরে আহির ভাইকে ভার্সিটিতে দেখি না। সেদিনই লাস্ট দেখেছিলাম বোধ হয়।
স্পৃহা হাসি থামিয়ে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বসে রইলো। বিষয়টা তাকেও ভাবাচ্ছে। সেদিনের পর থেকে আহিরকে আর দেখা যায়নি। আহান কটমট চোখে প্রান্তির দিকে তাকিয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দেব। দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-কইছিলাম না তোরে ঐটাকে ভাই না বলতে? আর ওর কথা ক্যান তুললি এখানে? ফাজিল মাইয়া!
প্রান্তি মুখ ছোট করে স্পৃহার দিকে আড়চোখে তাকালো। সে ভুলেই গিয়েছিল। কিন্তু স্পৃহার তেমন কোনো হেলদোল না দেখে অবাক হলো বেশ। মনে মনে বললো,
-পিহুকে আহির ভাইয়ের ছেলের কথাটা বলতে হবে। এর পেছনে রহস্যটা কী?
____________________________
ঘড়ির কাটা বারোটার ঘর ছুঁইছুঁই। স্পৃহা বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর হাতে হাত কচলে ঘরময় পায়চারি করছে। এতোরাত হয়ে গেল, আদ্র এখনো বাড়ি ফিরলো না। এতো দেরি তো সে কখনো করে না! কতোবার কল লাগালো, আদ্র একবারও রিসিভ করেনি। আদ্রের মা-বাবা নিজেদের মতো খেয়েদেয়ে ঘুমোতে চলে গেছে অনেক আগেই। স্পৃহা বেশ অবাক হয়েছে। নিজেদের ছেলে এখনো বাড়ি ফিরলো না, অথচ তাদের মধ্যে চিন্তার লেশমাত্র নেই! স্পৃহা তো টেনশনের তোড়ে খেতেই পারছে না।
ফোনটা আবার হাতে তুলে নিতেই কেউ ধাম করে ঘরের দরজা খুলে ফেললো। স্পৃহা চমকে পেছন ঘুরতেই দেখলো, আদ্র দূর্বল পায়ে ভেতরে ঢুকছে। স্পৃহার যেন এবার প্রাণ ফিরে এলো। এগিয়ে এসে ব্যস্ত স্বরে বললো,
-এতো দেরি কেন হলো আপনার? কোথায় ছিলেন?
আদ্র মুখ ঘুরিয়ে তাকালো স্পৃহার দিকে। ভালো করে তাকাতে পারছেনা ও। আদ্রের লাল লাল চোখ দুটো দেখে স্পৃহা অবাক হয়ে গেল। কয়েকটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
-আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন, আদ্র? অসুস্থ আপনি?
আদ্র হাসলো। ঘাড় কাত করে ঢুলতে ঢুলতে বললো,
-স্ স্পৃহাআআ!! ত্ তুমি অন্নেক সুন্দর! আ ভেরি ভেরি ভেরি বিউটিফুল গার্ল!!!
স্পৃহা হতভম্ব হয়ে বললো,
-আপনার গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? আপনি তো…
হঠাৎ-ই আদ্রের মুখের হাসিটা মিলিয়ে গেল। সেখানে এসে ভর করলো একরাশ আক্রোশ। রাগী দৃষ্টি তাকিয়ে স্পৃহার দিকে এগোতে লাগলো সে। ক্রোধান্বিত স্বরে বললো,
-আমার গলাও এখন তোমার ভালো লাগছে না, তাই না? তোমার তো… তোমার তো শুধু আহিরকে ভালো লাগে, রাইট? আমি কি তোমার যোগ্য নই, স্পৃহা? আমার বউ হয়েও তোমার মনে অন্য কোনো পুরুষের স্থান কেন থাকবে? হোয়াই? আনসার মি!!!
-চলবে…